ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-০৪

0
396

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব৪
#Raiha_Zubair_Ripte

রুদ্র সুহাসিনীর পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে আর বারবার বলছে সুহাসিনী দাঁড়াও কিন্তু সুহাসিনী তো সুহাসিনী ভয়ের রাণী আস্ত হাবা সে তো দাঁড়ালোই না উল্টো রুদ্রকে হাতে লাঠি নিয়ে তার পেছন দৌড়ে আসতে দেখে দৌড়ের গতি আরো বাড়িয়ে দিলো সুহাসিনী। পেছন থেকে রবিন চিৎকার করে বলছে,,

” রুদ্র লাঠি টা ফেলে দিয়ে তারপর ভাবির পেছন দৌড়া। রুদ্রর কান অব্দি সে কথা ঠিকমতো এসে পৌঁছালো না। কানে আসলেও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে না।

রুদ্র এবার রাগ নিয়েই বলল,,

” এই সুহাসিনী দাড়াচ্ছো না কেনো।

সুহাসিনী পেছন ঘুরে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বলে,,

” আপনি লাঠি নিয়ে আসছেন কেনো? মা’রবেন আমাকে? দেখুন আমি বাসায় গিয়ে বাবা কে বলে দিবো আপনার মতো গু’ন্ডা ছেলেকে আমি বিয়ে করবো……

কথাটা আর শেষ করতে পারলো না সুহাসিনী। সামনে থেকে আসা এক লোকের সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপাস করে পড়ে যায় মাটিতক। লোকটার মাথায় থাকা মাটির হাঁড়ি গুলো থেকে কয়েকটা হাঁড়ি সুহাসিনীর উপর পড়ে যায়। ব্যাথায় আহ্ শব্দ করে উঠে। রুদ্র তড়িঘড়ি করো আসে দৌড়ে সুহাসিনীর কাছে। পাশে থাকা লোকটা এক এক করে সব গুলো হাঁড়ি পড়ে ভাঙতে দেখে চেচামেচি করতে আরম্ভ করলো। সুহাসিনীর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,,

” এই অন্ধ মেয়ে দেখে চলতে পারো না। তোমার জন্য আমার হাঁড়ি গুলো ভেঙে গেলো। এখন আমার সংসার চলবে কি করে, বলো।

রুদ্র সুহাসিনী কে দাঁড় করায়। পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের লোকটার হাতে দিয়ে বলে,,

” এই ধরুন আপনার ক্ষতিপূরণ। এটায় নিশ্চয়ই হবে। আর একটাও কথা বাড়াবেন না দেখছেন একটা মেয়ে আপনার হাঁড়ি গুলোর তলে পড়ে গেছে কোথায় তাকে সাহায্য করবেন তা না করে এসব বলছেন?

লোকটা মুখ টা কাচুমাচু করে টাকা নিয়ে চলে গেলো। রুদ্র ঘুরে সুহাসিনীর দিকে তাকায়। রুদ্র মাটি থেকে লাঠি টা তুলে নিয়ে উঁচু করে। সুহাসিনী ভয়ে ব্যাথাযুক্ত শরীর নিয়েই দু পা পিছিয়ে যায়। রুদ্র সেটা দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,

” পেছনো যাচ্ছো কেনো ইডিয়ট তোমায় মা’রবো না। এই হাঁড়ি গুলো কে আরো ফাটাবো।

কথাটা বলে আস্ত থাকা হাঁড়ি গুলো লাঠি দিয়ে ভেঙে ফেললো। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে লাঠিটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে বলে,,

” এবার ভালো হয়েছে না আরো দৌড়াও আরো ছোটো। মাজায় ব্যাথা পাইছো না?

সুহাসিনী মাথা নাড়ায়, যার অর্থ হ্যাঁ মাজায় ব্যাথা পেয়েছে। রুদ্র এবার রাগ নিয়ে বলে,,

” দাঁত টা কেনো ভা’ঙলো না বলো তো?

সুহাসিনী রুদ্রর দিকে তাকায়।

” কেনো ভাঙলো না?

” গর্দভ আমিই তো জিজ্ঞেস করছি কেনো ভাঙলো না? দাঁত গুলো ভা’ঙলে বেশ হতো। এই দাঁত গুলো ব্যাবহার করেই তো বলছিলে আঙ্কেল কে বলবে তুমি আমায় বিয়ে করবে না তাই তো? এই দাঁত গুলো তোমার মুখে থাকাই উচিত না। মীরজাফর দাঁত তোমার। আসো লাঠি দিয়ে ভে’ঙে দেই।

সুহাসিনী চুপ রইলো কিছু বললো না। রুদ্র সুহাসিনী কে ফের প্রশ্ন করল,,

” তুমি দৌড়ে আসছিলে কেনো?

” আমি বাসায় যাবো।

” আমি আগে যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটা বলো।

” আপনি লোকটাকে এলো’পাতাড়ি মা’রছিলেন কেনো?

” দোষ করেছিলো তাই।

” তাই বলে ওভাবে মা’রবেন।

” তাই মা’র কম হয়ে গিয়েছে। তুমি না আসলে আরো মা’রতাম। তুমি ছুটলে কেনো সেটা বলো।

” আমি তো বাবাকে বলার জ…

সহসা সুহাসিনী থেমে যায়। রুদ্র সুহাসিনীর থামা দেখে বলে,,

” বাবাকে বলার জ,,, কি?

” না কিছু না আপনি লাঠি নিয়ে কেনো আসলেন আমার পেছন। তার জন্যই তো আমার এ অবস্থা হলো।

” আশ্চর্য লাঠি হাতে ছিলো তাই সেটা নিয়েই দৌড় দিছি ফেলার কথা খেয়াল ছিলো না। আর তোমায় এখানে আসতে কে বলছে? কার সাথো এসেছো?

” ছেলেটা কি করছিলো?

” আগে বলো কার সাথে এসেছো?

” নীলার সাথে এসেছি।

রুদ্র চারদিকে চোখ বুলিয়ে নেয়।

” কোথায় আশেপাশে তো নীলা কে দেখছি না?

” সন্দেহ করছেন।

” না।

” তাহলে বলছেন না কেনো ছেলেটা কি করেছিলো?

রুদ্র তপ্ত শ্বাস ফেললো। ছোট থেকে বাবা মা এতো কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের মানুষ করে। নিজে না খেয়ে না পড়ে ছেলে মেয়েদের খাওয়ায়। আর ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে সেই বাবা মা কে কষ্ট দেয়। তাদের দেখভাল করে না। ভাত কাপড় দেয় না। তার উপর ভুলিয়ে ভালিয়ে মায়ের শেষ সম্বল জমিটাও নিজের নামে করে মাকে ঘর থেকে বের করে দিছে।

” ছেলেটা তার মায়ের জমি নিজের নামে করে নিয়ে তার মা কে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তাই ওভাবে মে’রেছি। সাহস কত বড় ওর কলি’জা টে’নে ছিঁ’ড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। তুমি এসে তো দিছো সব বানচাল করে।

সুহাসিনী মাথা নিচু করে বলে,,

” আমাকে একটু রেস্টুরেন্টে অব্দি দিয়ে আসুন না হাঁটতে পারছি না।

” রেস্টুরেন্টে কেনো? খিদে পেয়েছে? এই সামান্য দৌড়ানোর জন্য খিদেও পেয়ে গেলো বাহ!

” না খিদে পায় নি নীলা রেস্টুরেন্টে আছে।

সহসা রুদ্র পাঁজা কোলে তুলে নেয় সুহাসিনী কে। ভরকে যায় মনে মনে বলে,,এ ছেলে কি আবার উপর থেকে ঠাস করে ফেলে দিবো নাকি আমায়।

” আরে কো,, কোলে ক,,কেনো নিলেন।

” এই যে উপর থেকে ঠাস করে ফে’লে দিবো তাই।

” না এমনিতেই সারা শরীর ব্যাথা হয়ে গেছে ফে’লে দিয়েন না এবার তাহলে আর উঠে দাঁড়াতেও পারবো না।

” ইডিয়ট। এতোদিন জানতাম এ মেয়ে শুধু চুপচাপ এখন তো দেখি আস্ত গা’ধা।

শেষের কথাটা আস্তে বলে রুদ্র। সুহাসিনীর কানে গেলেও স্পষ্ট শুনতে পেলো না। রুদ্র সুহাসিনী কে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। নিজে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলো।

” সিট বেল্ট লাগাও সুহাসিনী।

সুহাসিনী সিট বেল্ট টা লাগিয়ে নিলো।

” কোন রেস্টুরেন্টে?

” এই যে সামনের মোড়ে যেই রেস্টুরেন্টে সেটায়।

রুদ্র গাড়ি চালিয়ে রেস্টুরেন্টের সামনে আসে। গাড়ি থেকে বের হয়ে সুহাসিনী কে গাড়ি থেকে বের হতে না বলে রেস্টুরেন্টের পাশে থাকা ফার্মেসি থেকে ব্যাথার মেডিসিন নিয়ে আসে। সুহাসিনীর সামনে ধরে বলে,,

” বাসায় গিয়ে মেডিসিন টা লাগায় নিবা যেখানে যেখানে ব্যাথা পেয়েছো সেখানে সেখানে।

সুহাসিনী মাথা নাড়ায়। সুহাসিনী কে ধরে রেস্টুরেন্টে ভেতর ঢুকে। সামনে বসা নীলা কে চিনতে অসুবিধা হয় নি রুদ্রর। নীলার পাশে থাকা ছেলেটাকে দেখে রুদ্র ভ্রুকুটি করে বলে,,

” ছেলে টা কে?

হঠাৎ এমন প্রশ্নে ভরকে যায় সুহাসিনী।

” কোন ছেলে?

” ঐ যে নীলার পাশে।

” নীলার বয়ফ্রেন্ড।

” তুমি তাহলে এসবের জন্য এখানে এসেছো বাহ! দাঁড়াও আঙ্কেল কে আমি বলে দিবে। তার মেয়ে বোনের বয়ফ্রেন্ডর সাথে ডেটে এসেছে।

সুহাসিনী ভয় পেয়ে যায় যদি তার বাবার কানে এসব যায় তার বাবা কথা না শুনিয়ে ছাড়বে না নিশ্চয়ই? অবশ্যই কথা শুনাবে।

” প্লিজ বাবাকে বলবেন না। বাবা বকবে।

” আসার আগে মনে ছিলো না আঙ্কেল বকবে?

” আমি কি জানতাম আপনার সাথে দেখা হবে আমার।

” দেখা হয়ে বিরাট বড় ভুল হয়ে গেলো তাই না? দাঁড়াও আঙ্কেল কে ফোন দিতেছি।

কথাটা বলে রুদ্র পকেট থেকে ফোন বের করে। নাম্বার বের করে ফোন লাগায়। সুহাসিনী রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,,

” আর আসবো না প্লিজ বাবা কে জানিয়েন না। ট্রাস্ট মি আর কখনো নীলার সাথে আসবো না। প্লিজ ফোন কেটে দিন।

ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হতেই রুদ্র বলে উঠে,,

” হ্যালো রবিন ছেলেটাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দে। কাল দেখা করিস সকালে।

কথাটা বলে রুদ্র ফোন কে’টে দেয়। এদিকে সুহাসিনী ভেবেছিলে তার বাবা কে ফোন দিছে রুদ্র এখন দেখছে তাকে ভয় দেখানোর জন্য ওমন করলো।

” এবারের মতো আঙ্কেল কে বললাম না। আমার কথা না শুনলে আঙ্কেল কে বলে দিবো।

সুহাসিনী মাথা নাড়ায়। সে রুদ্রর কথা শুনবে। রুদ্র সুহাসিনীর হাত ধরে নীলার কাছে নিয়ে গিয়ে বলে,,

” শালিকা বয়ফ্রেন্ড পেয়ে বোনের খোঁজ রাখা ভুলে গেছো নাকি? তোমার বোন যে এক্সি”ডেন্ট করে বসে আছে সে খেয়াল আছে তোমার?

হঠাৎ শালিকা ডাক শুনে চমকে যায় নীলা। সামনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে রুদ্র সুহাসিনীর হাত ধরে নিয়ে আসছে। সুহাসিনী খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে। নীলা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। সুহাসিনীর দিকে এগিয়ে এসে সুহাসিনী কে ধরে বলে,,

” এই সুহা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিস কেনো? কি হয়েছে?

” কি আর হবে শালিকা তোমার বোন উল্টেপাল্টে উষ্ঠা খেয়ে হাঁড়ির উপর পড়ে মাজা ভে’ঙেছে সাথে পা ও।

নীলা অবাক হয় শালিকা ডাক শুনে তার উপর হতবিহ্বল হয় রুদ্রর এমন পেঁচানো গোচানো কথা শুনে।

” শালিকা শুনো নেক্সট টাইম বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরবে ভালো কথা আমায় জানাবে না। সুহাসিনী তোমাদের মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে টিকতে না পেরে বাহিরে ছুটোছুটি করছিলো। আমাকে জানালে আমি এসে সুহাসিনী কে টাইম দিতাম তাহলে বোর হতো না তোমাদের মাঝে থেকে।

” আপনাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়েছিলাম এক্সসেপ্ট করেন নি জানাবে কেমনে? আর আপনি আমায় শালিকা বলছেন কেনো? ক্রাশের মুখে শালিকা ডাক শুনতে বুক ফেটে যাচ্ছে।

” ইশ তাহলে আপু ডাকবো।

” নো নীলা বলে ডাকেন। এই রাতুল দেখো আমার ক্রাশ রুদ্র মাহতাব। যার কথা তোমায় বলেছিলাম আমার ক্রাশ।

রুদ্র সুহাসিনীর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,,

” বাহ আমি কারো ক্রাশ! সেলিব্রেটি ফিল পাচ্ছি।

সুহাসিনীর নীলার মা’থা ফা’টা’তে ইচ্ছে করছে। কোথায় তাকে ধরবে তা না করে বকবক করে চলছে। সুহাসিনী নীলার হাত ধরে বলে,,

” নীলা হয়েছে তো চল এখন বাসায় যাই। দেখছিস তো আমার অবস্থা কেমন।

রাতুল রুদ্রর সাথে কুশল বিনিময় করলো। রুদ্র সুহাসিনীর দিকে তাকিয়ে নীলাকে বলে,,

” নীলা এখন বাসায় যাও সুহাসিনী কে নিয়ে দেখতে পারছো তো ওর অবস্থা। চলো আমি পৌঁছে দিচ্ছি।

নীলা মাথা নাড়ায়। রাতুলের থেকে বিদায় নিয়ে সুহাসিনী কে ধরে গাড়িতে বসে। রুদ্র নিজেও গাড়িতে এসে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করে। লুকিং গ্লাসে বারবার সুহাসিনী কে দেখছে। ইশ মেয়েটা ভালোই ব্যাথা পেয়েছে। কে বলেছে পিছন ঘুরে তাকিয়ে কথা বলতে বলতে দৌড়াতে? তাহলে তো এমন টা হতো না। শরীরের কোথাও ছিলে গেছে নাকি তাও তে বোঝা যাচ্ছে না। ভীতু সুহা রাণী আমার এতো ভয় পেলে চলে বলো?

কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই সুহাসিনী দের বাসার কাছে চলে আসলো। নীলা গাড়ি থেকে নেমে সুহাসিনী কে নামায়। রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,,

” হেই ক্রাশ বাসায় চলুন।

” না আজ না তোমরা যাও অন্য দিন যাবো। আর শুনো সুহাসিনীর হাতে থাকা মেডিসিন গুলো সুন্দর মতো ওর ব্যাথাযুক্ত স্থানে লাগিয়ে দিবে।

নীলা মাথা নাড়ায়। রুদ্র কে বিদায় জানিয়ে সুহাসিনী কে নিয়ে বাসার ভেতরে আসে। সুহাসিনী একবার পেছন ঘুরে তাকিয়ে ছিলো রুদ্রর দিকে রুদ্রর দৃষ্টি সুহাসিনীর দিকেই ছিলো। চোখাচোখি হয় দুজনের সুহাসিনী সামনে তাকিয়ে ফেলে। রুদ্র তখনও সুহাসিনীর দিকে তাকিয়ে ছিলো। সুহাসিনী বাসার ভের ঢুকতেই রুদ্র সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে বলে,,

“ পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে তোমারেই আমার পড়ে মনে। তবুও তুমি থাকো নীরব! কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী,,আমার ভীতু রাণী সুহাসিনী। কবে বুঝবে তোমায় আমি ঠিক কতটা ভালোবাসি? ”

#চলবে?