ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-০৯

0
336

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব৯
#Raiha_Zubair_Ripte

শহর থেকে অনেক টা দূরে কাঁচা রাস্তার এঁকেবেঁকে যাওয়া মেঠোপথ দিয়ে হেঁটে চলছে সুহাসিনী আর রুদ্র। কলেজ ছুটির পর রুদ্র এসেছিল সুহাসিনী কে নিতে। সুহাসিনী কলেজের বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল রুদ্রর জন্য। রুদ্র পকেট থেকে বেলি ফুলের মালা সুহাসিনীর হাতে পড়িয়ে দেয়। আর গোলাপ ফুলটা পকেটেই রেখে দেয়। সুহাসিনী বেলি ফুলে হাত বুলিয়ে বলে,,

” গোলাপ ফুল আনেন নি?

রুদ্র স্মিত হাসে। না জানিয়ে সুহাসিনী কে বাইকে উঠতে বলে। সুহাসিনী কিছুটা মন খারাপ নিয়ে বাইকে উঠে। রুদ্র বাইক চালিয়ে যখন বাড়ির উল্টো রাস্তায় যাচ্ছিল তখন সুহাসিনী জিজ্ঞেস করে,,

” কোথায় যাচ্ছেন বাড়ি রাস্তা তো ওটা?

” চুপ হয়ে বসে থাকো আমরা একটা জায়গায় যাচ্ছি।

” কোন জায়গায়?

” আহা চুপ থাকো তো মেয়ে গেলেই দেখতে পারবে।

সুহাসিনী আর টু শব্দ ও করে নি। চুপচাপ বাইকে বসে ছিল।

মিনিট ত্রিশের মধ্যে একটা গ্রাম্য পরিবেশে নিয়ে হাজির হয় রুদ্র। চারিদিকে বর্ষার পানি থইথই করছে আর পানির মাঝখান দিয়ে বেয়ে গেছে আঁকাবাকা মেঠোপথ। পানিতে কি সুন্দর পদ্মফুল ফুটে আছে। সুহাসিনীর ইচ্ছে করছে টুকুস করে কয়েকটা পদ্ম ফুল নিয়ে আসতে। ইশ কি শীতল ঠান্ডা হাওয়া। মাটি থেকে সুন্দর ঘ্রাণ ভেসে আসছে। শহরতলি তে এমন সুন্দর দৃশ্য পাওয়া মুশকিল। সুহাসিনী হেঁটে পানির কিনারায় দাঁড়ায় দু হাত মিলে চোখ বন্ধ করে। প্রাণ ভরে শ্বাস নেয়। এমন দৃশ্য কোথাও কি চাইলেই পাওয়া যাবে নাকি?

রুদ্র পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে ফোন করে আসতে বলে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে দশ বছরের একটা ছেলে নৌকা বাইতে বাইতে চলে আসে। সুহাসিনী পেছন ঘুরে থাকায় দেখে নি। পিচ্চি ছেলেটা নৌকা থেকে নেমে রুদ্রর কাছে এগিয়ে আসে।

” ভাইয়া বড় ভাই আমারে নৌকা দিয়া পাঠায় দিছে আপনারে দিতে কইছে আর নৌকা দিয়া ঘুইরা নৌকা টা এইখানে রাইখা যাইয়েন।

রুদ্র হেসে পকেট থেকে দুশো টাকার নোট বের করে দিতে চাইলে পিচ্চি ছেলেটি না নিয়ে চলে যায়।

তপ্ত শ্বাস ফেলে সুহাসিনীর দিকে এগিয়ে যায় রুদ্র।

” সুন্দর না জায়গা টা?

সুহাসিনী চোখ বন্ধ রেখে জবাব দেয়,,

” সত্যি জায়গা টা অসম্ভব সুন্দর। আমাকে এখানে আনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

” পদ্ম ফুল তুলবে সুহা?

সহসা চোখ খুলে তাকায় সুহাসিনী। মন খারাপ করে সুধায়,,

” কিভাবে? পদ্ম ফুল তো পানিতে আনবো কি করে।

” কেনো নৌকায় করে। ঐ যে নৌকা।

হাতের ইশারায় দেখায় রুদ্র। সুহাসিনী ঘাড় কাত করে সামনে পেছনে তাকিয়ে দেখে একটা ছোট নৌকা। কিন্তু মাঝি নেই। রুদ্র সুহাসিনীর থেকে সরে গিয়ে নৌকায় উঠে পড়ে। সুহাসিনী কোমরে হাত গুঁজে বলে,,

” নৌকা চালাবে কে?

” কেনো আমি।

সুহাসিনী অবাক হয়ে বলে,,

” আপনি নৌকা চালাতে পারবেন?

” অবশ্যই বেগম সাহেবা বসে তো দেখুন।

সুহাসিনী নৌকায় চড়ে বসে আর রুদ্র নৌকা বাইতে থাকে। হাতের কাছে আসা পদ্মগুলো সযত্নে উঠিয়ে নেয় সুহাসিনী। রুদ্র পকেট থেকে ফোন বের করে কয়েক টা ছবি তুলে নেয় সুহাসিনীর। ফোনের স্কিনে তুলা সুহাসিনীর ছবি দেখে আপন মনে বিরবির করে বলে,,

❝ তুমি আমার অনেক শখের সুহা রাণী, পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য ও ফিকে মনে হবে তোমার রূপের কাছে বিশেষ করে তোমার হাসির। সুহাসিনী নামের অর্থ তো যে নারীর হাসি সুন্দর। নামটা কি তাহলে তোমার জন্যই এসেছে?❞

” বাসায় যাবেন না বিকেল হয়ে আসছে তো?

হঠাৎ সুহাসিনীর কথায় ঘোর কাটে রুদ্রর। রুদ্র মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানিয়ে নৌকা ঘুরিয়ে পাড়ে এনে ভিড়িয়ে নেমে পড়ে। বাইকে উঠে সুহাসিনী কে জিজ্ঞেস করে রুদ্র,,

” গোলাপের জন্য কি এখনও মন খারাপ?

” উহু। পদ্ম গুলো ভীষণ সুন্দর।

” আমার ব্যাক্তিগত পদ্মের তুলনায় খুবই কম।

_______________

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নেয় সুহাসিনী রুদ্র রাস্তার মোড়ে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। বাসায় আসতে বলেছিল কিন্তু রুদ্র না করেছে বলেছে পরে আসবে।সুভাষিণী বোনের দিকে তাকিয়ে বলে,

” রুদ্র আসলো না যে?

” পরে আসবে বলেছে।

” ওহ্।

” হুম খাবার খাইছো?

” হ্যাঁ তোর ভাই যাওয়ার আগে শাসিয়ে খাইয়ে দিয়ে গেছে।

” আজ আসবে না?

” না তার মতে এতো ঘনঘন শশুর বাড়ি আসা ভালো না । লোকে মন্দ কথা বলে।

” আচ্ছা আপু তোমার কয় মাস?

” এই তো চার মাস।

” আপু কেমন লাগে অস্বস্তি হয় না।

” অস্বস্তি হবে কেনো?

” এই যে তোমার শরীরে একটা প্রাণ আছে ভারী লাগে না নিজেকে?

” ধূর পাগল ভারি লাগে না। বরং সুন্দর সুন্দর অনুভূতির সাথে পরিচয় পাওয়া যায়। এখন তো বেবি অনেক ছোট এখন তেমন কিছু বুঝা যাবে না। আস্তে আস্তে বুঝা যাবে সামনে পা দিয়ে কিক মা’রবে পেটে।

” তখন ব্যাথা পাবে না?

” না রে তুই মা হ তাহলে বুঝবি।

” বেবি হবার সময় ও তো পেইন হয় আপু সহ্য করবা কেমনে?

” আমার মা যেভাবে সহ্য করেছে অন্যান্য মহিলারা যেভাবে সহ্য করেছে সেভাবে।

” ইশ মেয়েদের কত কষ্ট করতে হয় আপু।

” কিছু পেতে হলে তো কষ্ট করতেই হবে বোন। এক্সাম টা তারাতাড়ি হোক তারপর বিয়ে টা হোক তখন তোর কোলেও আসবে পিচ্চি বাবু। রুদ্র বাচ্চা খুব পছন্দ করে।

” উনি বাচ্চা পছন্দ করে খুব। কথাটা বলে টেবিল থেকে বোতল নিয়ে পানি খায় সুহাসিনী

” হুমম। আমাকে তো একবার বলেছিল বিয়ের পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাচ্চা নিবে।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই বিষম খায় সুহাসিনী। মুখ ফসকে পানি বেরিয়ে আসে। মনে মনে বলে,,

” এ ছেলে কি সত্যি বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বেবি নিবে?

#চলবে?