ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-০৮

0
354

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব৮
#Raiha_Zubair_Ripte

দ্বিতীয় সাক্ষাৎ হতে খুব একটা সময় লাগে নি । ভাগ্যক্রমে রুদ্রর ভাই অভ্রর জন্য যেই মেয়েটি দেখা হয়েছিল সেটি সুহাসিনীর বড় বোন সুভাষিণী। বিয়ে বাড়িতে দ্বিতীয় সাক্ষাৎ হয় তাদের তাও সেটা সুহাসিনী কে ধমক দিয়ে। রুদ্র হেঁটে যাচ্ছিল আর সুহাসিনী জুশের গ্লাস নিয়ে দৌড়ে আসছিল। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কায় খাওয়ায় আর শরীরের তরল পদার্থ দেখে মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায় রুদ্রর। সামনে থাকা মানুষ টাকে না দেখেই এক রামধমক দিয়ে বলে উঠল,,

” চোখে দেখতে পারেন না অন্ধ নাকি দিলেন তো আমার পোষাক নষ্ট করে।

সুহাসিনী সিঁটিয়ে যায় ভয়ে। অপরাধীর ন্যায় বলে,,

” দুঃখিত আসলে আমি বুঝতে পারি নি আপনি সামনে চলে আসবেন আর এভাবে ধাক্কা লেগে জুশ আপনার শরীরে পড়ে যাবে।

কন্ঠে কিছুটা মাদকতা ছিলো রুদ্র চোখ তুলে তাকায়। সামনে সুহাসিনী আর সে কি না এতোক্ষণ হন্নে হয়ে এই মেয়েটাকে খুঁজছিল! বে’য়াদপ মেয়ে আসার পর থেকে এক ঝলক দেখা দিয়েই উধাও হয়ে গিয়েছিল। রুদ্র কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,

” ওয়াশরুম টা দেখিয়ে দিন। আর নেক্সট টাইম দেখেশুনে চলবেন।

সুহাসিনী মাথা নাড়ায় রুদ্র কে নিয়ে ওয়াশরুম দেখিয়ে চলে আসে। এরপর আস্তে আস্তে তাদের দেখা সাক্ষাৎ হতো কিন্তু রুদ্র বা সুহাসিনী কেউ সেভাবে কথা বলতো না কারো সাথে। সুহাসিনী সেদিন ধমক খেয়ে বুঝে গেছে এ ছেলে রাগী টাইপের।

রুদ্র এনজয় করতো বিষয় টা। মেয়েটা তাকে ভয় পায়। পিচ্চি মেয়ে বয়সে তো ছয় কি সাত বছরের ছোট হবেই। রুদ্র কখনই সুহাসিনীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক করতে চায় নি তাই সময় নিয়েছে। সুহাসিনী আরেকটু বড় হলে বাবা কে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে ততোদিনে সুহাসিনী বুঝদার হবে। কিন্তু এখন তো আরো পরিস্থিতি বেঁকে গেছে। এই মেয়ে বুঝতেই চায় না রুদ্র তাকে কতো টা ভালোবাসে। সবসময় শুধু পালাই পালাই করে।

সুহাসিনী কলেজ ড্রেস পড়ে ব্রেকফাস্ট করে বাসা থেকে বের হয়। নীলয় ছাঁদে ছিল সুহাসিনী কে দেখে নীলয় দ্রুত গতিতে নিচে নেমে সুহার সামনে দাঁড়ায়। সুহা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

” কলেজ যাচ্ছিস চল এগিয়ে দিয়ে আসি।

” না ভাইয়া আমি যেতে পারবো। নীলা কি চলে গেছে?

” হ্যাঁ কিছুক্ষণ আগেই চলে গেল।

নীলা আর সুহাসিনী ভিন্ন কলেজে পড়ে দুজনেই ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। নীলার পয়েন্ট কম থাকায় সুহাসিনীর কলেজে এডমিট হতে পারে নি।
সুহাসিনী ওহ্ বলে হাঁটা লাগায়। নীলয় সুহার পেছন পেছন হাঁটে। সুহা পেছন ফিরে তাকায় হেঁসে বলে,,

” আসতে হবে না আমি চলে যেতে পারবো।

” খানিক টা যাই তারপরেও চলে আসবো।

সুহাসিনী মাথা নাড়ায়। পাশাপাশি হাঁটে দু’জন।

” তোদের এক্সাম কবে?

” এইচএসসি?

” হ্যাঁ।

” মাস দুয়েকের মধ্যে।

” ওহ্।

বাড়ির সামনের রাস্তার মোড়ে এসে সুহাসিনী নীলয় কে চলে যেতে বলে। নীলয় চলে যায়। সুহাসিনী তপ্ত শ্বাস ফেলে রুদ্র আসবে বলেছে। নীলয় থাকলে আবার কথা শোনাতো। সামনে আরেকটু হাঁটতেই দেখে রুদ্র বাইক নিয়ে আসছে। সময়ের তুলনায় আজ অন্যান্ন দিনের চাইতে একটু আগেই বাসা থেকে বের হয়েছে সুহাসিনী। রুদ্র সুহাসিনী কে দেখে বাইক থামিয়ে মুচকি হাসি দেয়। সুহাসিনী ও হাসে। ইশারায় বাইকে বসতে বলে। সুহাসিনী চুপচাপ বাইকে বসে। রুদ্র অবাক হয় তবে সেসব কে পাত্তা না দিয়ে সুহাসিনী কে নিয়ে কলেজে গেল। এর মধ্যে আর কোনো কথা হয় নি তাদের মাঝে। সুহাসিনী কে কলেজের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে আসতে নিলে পেছন থেকে সুহাসিনী ডেকে উঠে রুদ্র কে। রুদ্র পেছন ফিরে তাকায়। চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে,,

” কি?

সুহাসিনী খানিকটা এগিয়ে এসে বলে,,

” দুপুরে আমাকে নিতে আসবেন?

রুদ্র সুহাসিনীর আগাগোড়া ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বলে,,

” হুম আসবো নিতে।

সুহাসিনী জিহ্বা দিয়ে শুঁখনো ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে বলে,,

” তাহলে আসার পথে আমার জন্য একটা লাল গোলাপ আর বেলি ফুলের মালা নিয়ে আসবেন।

রুদ্র অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে যায়। মেয়েটার কি হলো আজ হঠাৎ এমন বিহেভিয়ার করছে কেনো?মাথা নাড়ায় রুদ্র সে আনবে তার সুহা রাণীর জন্য গোলাপ আর বেলি ফুলের মালা।

” আর কিছু?

সুহাসিনী মাথা ডানে বামে ঘুরায়। আর কিছু লাগবে না। রুদ্র একপলক সুহাসিনীর দিকে তাকিয়ে বাইকে উঠে চলে যায়। সুহাসিনী রুদ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসে।

কাল রাতে হঠাৎ করে সুভাষিণী আসে সুহাসিনীর ঘরে রুমের লাইট জ্বলতে দেখে। রুমে ঢুকে বেলকনিতে সুহা কে দেখে এগিয়ে গিয়ে কাঁধে হাত রাখে সুভা। চমকে উঠেছিল সুহা। পেছন ঘুরে বোন কে দেখে ভয় টা কেটে যায়।

” কিরে না ঘুমিয়ে বেলকনিতে যে?

সুহাসিনী আকাশে থাকা চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” এমনি আপু ঘুম ধরছিল না তাই বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছি।

” রুদ্রর সাথে কথা বলেছিস?

” হুমম।

” একটু বোঝার চেষ্টা করিস ছেলেটাকে। রুদ্র কে সময় দে তার সাথে মিশ দেখবি রুদ্রর সাথে কথা বলতে কম্ফোর্ট জোন পেয়ে যাবি। ভয়টা দূর হবে বিয়েটা কিন্তু রুদ্রর সাথেই হবে তোর সে কথা মাথায় রাখিস। তাই আগে থেকেই সম্পর্কটাকে সহজ করে নে।

সুহাসিনী বোনের কথা শুনে হাসে। সুভাষিণী সুহার হাসি দেখে ভ্রুকুটি করে বলে,,

” হাসছিস যে? হাসার মতো কিছু বলেছি।

সুহাসিনী হাসি থামিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” বুঝবে না। রাত হয়েছে গিয়ে ঘুমাও।

সুভাষিণী আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। সুহাসিনী বেলকনির রেলিঙে দু হাত দিয়ে কপাল ঠেকিয়ে বলে,,

❝ আপনি বড্ড নেশালো রুদ্র যা আমাকে প্রতিনিয়ত টানে আপনার দিকে। যেখানে একটা ছেলে আড় চোখে তাকালেও একটা মেয়ে বুঝে যায় ছেলেটি কোন নজরে তার দিকে তাকিয়েছে আর আপনার সেদিনের মুগ্ধ হয়ে তাকানোর দৃষ্টির মানে আমি বুঝবো না? আর একটু এই বোকা সুহাসিনী কে সহ্য করুন অনেক ধমকিয়েছেন তার শোধ কি আমি নিবো না। আপনার ফিলিংস বুঝেও না বোঝার ভান করবো।❞

#চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। হ্যাপি রিডিং)