ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব-১২+১৩

0
269

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_১২
#লেখক_দিগন্ত
মাহিনের কথা শুনে বিদিশা অনেক অবাক হয়। মাহিন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল রাস্তার বিপরীত দিকে। বিদিশা মাহিনের হাতে স্পর্শ করে হাত ঝাকিয়ে বলে,
-“এই তুমি কাকে এভাবে ভাবি বলছ? এখানে কে তোমার ভাবি?”

বিদিশার কথা শুনে মাহিন অপ্রস্তুত হয়ে যায়। রাস্তার দিকে আরেকবার ভালো করে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে বলে,
-“না কিছু না। মনে হয়েছিল চেনা কাউকে দেখেছি। হয়তো আমার দেখার ভুল। আচ্ছা তুমি চলো এখন। এই টাইমে এখানে থাকা নিরাপদ না।”

বিদিশা আর কিছু বলল না। যদিও অনেক কিছুই বলতে চেয়েছিল। তবুও নিজের বলার সব ইচ্ছে দমিয়ে রেখে মাহিনের সাথে যেতে লাগল। মাহিন এখনো ভাবছে সে যেটা দেখল সেটা কি ঠিক? তার কেন জানি বারবার মনে হচ্ছে সে ঠিকই দেখেছে। কিন্তু এটা আদৌ কি সম্ভব? যেই মানুষটাকে সে দেখল তার তো এখানে থাকার কথা না। সে এখানে কিভাবে থাকতে পারে? মাহিন বারবার এই বিষয়টা নিয়েই ভাবছিল। তার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে বিদিশা বলে,
-“কি ভাবছ এত? তোমার ব্যবহার আমার ঠিক লাগছে না। একটু আগে কাকে দেখলে বলো তো? এক্স গার্লফ্রেন্ডকে দেখেছ নাকি?”

-“তোমার মাথা ঠিক আছে তো বিদি? আমার গার্লফ্রেন্ড আবার কোথা থেকে আসবে?”

-“মজা করছিলাম। আমি তো জানি আমি ছাড়া আর কেউ তোমাকে পাত্তা দেয়নি।”

-“কি বললে তুমি?”

-“কই কিছু বলিনি তো। চলো এখন।”
__________
মিরা লাবণীর সাথে ভার্সিটিতে আসে। মিরার খুব ভালো লাগছিল। কারণ আজ সে ঠিক করে নিয়েছে সাগরকে দেখিয়ে দেবে যে তাকে ছাড়াও সে ভালো থাকতে পারে। সাগরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য অনেক ভালো প্ল্যানও করে রেখেছে মিরা। নিজের প্ল্যানটা ভেবে নিজের বুদ্ধিকেই বাহবা দিয়ে বলে,
-“এবার সাগর বুঝবে মিরা তাকে ছাড়াও ভালো আছে।”

যেই ভাবা সেই কাজ। মিরা ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। এলিনার সাথে দেখা করার উদ্দ্যেশ্যে সাগর যখন ভার্সিটিতে আসে মিরা দূর থেকে সেটা দেখে নেয়। এই জন্যই তো মিরা এতক্ষণ অপেক্ষা করছিল। সাগর কাছে আসতেই মিরা তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে লাবণীকে বলে,
-“জানিস দোস্ত আমার না অনেক হ্যান্ডসাম একটা ছেলের সাথে রিলেশন হয়েছে। ছেলেটা এত হ্যান্ডসাম যে কি বলব। একবার যে দেখবে সেই ক্রাশ খেয়ে যাবে। ছেলেটার রূপের আ*গুনে আমি নিজেও দগ্ধ হয়েছি। ছেলেটার ব্যাপারে যতোই বলি কম হয়ে যাবে। ৬ ফিট লম্বা, ধপধপে ফর্সা গায়ের রং, সিক্স প্যাক করা বডি। এরকম ছেলেকে দেখে যে কেউ ক্রাশ খেতে বাধ্য। তুই দেখলে মনে হয় আর সিঙ্গেল থাকতে চাইবি না।”

লাবণী তো এটাই বুঝতে পারছিল না যে এই মিরা হঠাৎ করে এরকম কথা কেন বলছে। লাবণীর ব্যাপারটা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হয়।

মিরা চোখের ইশারা করার পর লাবণ্য বুঝতে পারে। মিরার তালে তাল মিলিয়ে বলে ,
-“তাই নাকি দোস্ত? বাহ তোর ভাগ্যের প্রশংসা করতেই হচ্ছে। সব হ্যান্ডসাম ছেলেরা তোর উপরেই ক্রাশ খায়। আর এদিকে আমাকে দেখ। আমাকে কেউ পাত্তাই দেয়না। আমিও তো অনেক সুন্দরী”

-“চিন্তা করিসনা দোস্ত৷ দেখবি তোরও হয়ে যাবে।” আই মিন রিলেশন।

-“দেখি কি হয়।”

মিরা লাবণীর কথাগুলো শুনে সাগর বাইরে থেকে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকে। কিন্তু ভেতর ভেতর সে ঠিকই জ্ব*লে পু*ড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল।

এলিনাও ওদের সব কথোপকথন শুনে ফেলে৷ এলিনা এত সহজে সবকিছু হজম করার মেয়ে নয়। এলিনা গিয়ে মিরার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“কাল আমরা একটা পার্টির আয়োজন করছি। এই পার্টিতে অনেকেই আসবে। তুমিও তোমার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এসো কেমন। দেখব তোমার বয়ফ্রেন্ড কতোটা হ্যান্ডসাম।”

এলিনার কথা শুনে মিরা লাবণীর দিকে অসহায়ভাবে তাকায়। লাবণী কি বলবে বুঝতে পারছিল না। মিরা অনেক ভেবে চিন্তে বলে,
-“আসলে ও অনেক বিজি মানুষ তো। তবুও আমি বলে দেখব। যদি টাইম পায় তাহলে আসবে।”

এলিনা মিরার কথা শুনে রেগে যায়। দাঁত কটমট করে বলে,
-“দেখা যাবে তোমার বয়ফ্রেন্ড কত ভালো।”

সাগরের সাথে হাটা লাগায় এলিনা। মিরা ওদের যাওয়ার পানেই তাকিয়ে থাকে। মিরাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লাবণী বলে,
-“এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। ত্যি একটা না একটা কান্ড না করে শান্তি পাস না। এখন কি করবি বল।”

-“অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।”

-“মানে?”

-“কিছু না। চল এখন যাই আমরা। কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।”
_________
বেশ রাত করে ঘুমানোয় বিদিশার বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছিল না। মাহিন বিদিশাকে টেনে ঘুম থেকে তোলে। বিদিশা চোখ কচলাতে কচলাতে বলে,
-“এখন উঠে কি করব। সূর্য তো এখন উদয় হয়নি।”

-“এখান থেকে যেতে তো সময় লাগবে তাইনা? তাছাড়া কুয়াকাটায় সূর্যদয়ের সৌন্দর্য দেখতে অনেক মানুষের ভিড় হয়। চলো এখন।”

বিদিশা আর কিছু বলতে পারে না। বললেও মাহিন হয়তো শুনবে না। তাই বিদিশা উঠে পড়ে। ফ্রেশ হয়ে একসাথে যায় সূর্যদয় দেখতে। মাহিন বলে,
-“আজ তাহলে আমরা সূর্যদয় তথা উত্থানের দৃশ্য দেখব। গতকাল পতন দেখেছিলাম। আর আজ দেখব উত্থান।”

-“ও।”

-“আর তারপর কিন্তু তোমার জন্য অনেক সুন্দর উপহার আছে?”

বিদিশা জিজ্ঞাসা করে,
-“কিসের উপহার?”

-“সেটা সময় হলে ঠিকই জানতে পারবে ”

কথা বলতে বলতে বিদিশা ও মাহিন কুয়াকাটাএ তীরে এসে উপস্থিত হয়। একটু পরেই সূর্যদয় হবে। নিজের চোখে এই সুন্দর দৃশ্য দেখতে আশেপাশে অনেক মানুষ এসে উপস্থিত হয়েছে। তাদের সকলের উদ্দ্যেশ্য একই সূর্যদয় দেখা।

মাহিন বিদিশার হাতটা শক্ত করে ধরে৷ কুয়াকাটায় সূর্য উঁকি দেয়। মনে হচ্ছে যেন কাল যেভাবে সূর্য সাগরে ডুব দিয়েছিল আজ সেভাবেই সূর্য সাগর থেকে মাথা তুলছে। এই সুন্দর দৃশ্য দেখে সবার দুচোখ জুড়িয়ে যায়। বিদিশা মাহিনের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“এইজন্যই এখানে আসতে চেয়েছিলাম। দেখেছ কত সুন্দর দৃশ্য।”

মাহিন মুচকি হেসে বলে,
-“এটা আমার দেখা সেরা দৃশ্য। তাও পছন্দের মানুষের সাথে। এই সূর্যকে সাক্ষী রেখে আজ আমি তোমায় বলছি, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি বিদি। #ভালোবাসি_তোমায়_বেশ।'”

বিদিশা যেন মুহুর্তেই ফ্রিজ হয়ে যায়। মাহিনের কথা শুনে নড়াচড়া করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে।

বিদিশার এমন অবস্থা দেখে মাহিন বলে,
-“এখনই এত অবাক হয়োনা। তোমার জন্য আরো অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে। চলো ঐদিকে।”

মাহিন বিদিশাকে নিয়ে যায় দক্ষিণ দিকে। একটি ফুলের দোকানের সামনে এসে গোলাপের তোড়া নিয়ে বিদিশার হাতে দিয়ে বলে,
-“আমি তো তোমাকে সবার সামনে প্রপোজ করেছি। জানি তোমার সেই সাহস নেই। তুমি তো আমার লজ্জাবতী লতা। তাই এখন এখানে চুপিচুপি আমাকে নিজের মনের কথা বলো।”

বিদিশা কাপা কাপা হাতে ফুলটা নিয়ে মাহিনের দিকে বাড়িয়ে দেয়। মুচকি হেসে বলে, #ভালোবাসি_তোমায়_বেশ।
(চলবে)

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_১৩
#লেখক_দিগন্ত
মাহিন বিদিশাকে নিয়ে হোটেলে নিজেদের রুমে গিয়ে ওঠে। বিদিশা ক্লান্ত থাকায় বিছানায় শুয়ে তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের কোলে ঢোলে পড়ে৷

মাহিন এখনো তার ভাবির ব্যাপারে ভাবছে। মিরাজ ভার্সিটি পড়াকালীন রেবা নামের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আব্দুল্লাহ চৌধুরী এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। কারণ তিনি চেয়েছিলেন নিজের বন্ধুর মেয়ে সামায়রায় সাথে মিরাজের বিয়ে দিতে।

রেবাকে মেনে নেওয়ায় তার অসম্মত্তির একমাত্র কারণ রেবার পরিবার ধনী ছিলনা। মিরাজ এসবের তোয়াক্কা করত না। তাই পরিবারের যাউক কিছু না জানিয়ে গোপনে রেবাকে বিয়ে করে নেয়। তাদের বিয়েতে মিরাজের পরিবারের হয়ে একমাত্র সাক্ষী ছিল মাহিন। মিরাজ ও মাহিনের সম্পর্ক ছোটবেলা থেকেই অনেক ভালো। দুই ভাই ছোটবেলা থেকেই সবকিছু একে অপরের সাথে শেয়ার করে। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। মিরাজ পরিবার থেকে বিছিন্ন হয়ে রেবার সাথে সংসার করতে শুরু করে। রেবা দেখতে ছিল অত্যন্ত সুন্দরী।

এই সৌন্দর্যই যেন রেবার জীবনে কাল হয়ে গেল। একদিন রাতে শপিং করে ফেরার পথে কে বা কারা রাস্তায় রেবাকে নিজেদের গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায়। মিরাজ অনেক খোঁজ করেছিল কিন্তু কোন লাভ হয়নি। রেবাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। রেবাকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে যায় মিরাজ।

পরিবারের সবাইকে বিশেষ করে আব্দুল্লাহ চৌধুরীকে দোষারোপ করে এসবের জন্য। একসময় পরিবারের কাউকে সহ্য করতে পারত না। মানসিকভাবে অনেক অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল সে। তারপর ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরে। কিন্তু তার জীবনটা বে-রঙিনই রয়ে গেছে।

আজ অনেকদিন পর রেবাকে দেখে তাই মাহিনের মনে আশার সঞ্চার হয়। যদি সে আজ ঠিক দেখে থাকে তাহলে হয়তো মিরাজের জীবন আবার রঙিন হবে। মাহিন ঠিক করে নেয় সে খোঁজ লাগাবে সবকিছুর।
_________________
মিরা লাবণীর সাথে মিলে এলিনার পার্টিতে এসেছে। লাবণী তাকে ভরসা দিয়ে বলেছে,
-“আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। তোর নকল বয়ফ্রেন্ড ঠিক সময়মতো চলে আসবে। তুই কোন টেনশন নিস না। চিল।”

লাবণীর ভরসায় মিরা এখন ভাবছে এলিনা, সাগরকে উচিৎ জবাব দিবে। এলিনা সাগর একসাথে ডান্স করছিলো। মিরার মধ্যে একটু খারাপ লাগা কাজ করে। যতই হোক সে তো সাগরকে পছন্দ করতো। তাই সাগরের পাশে এভাবে এলিনাকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।

নাচ থামিয়ে সাগর এগিয়ে আসে মিরার কাছে। হালকা কেশে বলে,
-“কোথায় তোমার বয়ফ্রেন্ড। তোমার মুখে তার প্রশংসা শুনে তাকে দেখার আশা আমি যে আর দমাতে পারছি না।”

মিরা এদিক ওদিক তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-“চলে আসবে একটু পরেই।”

-“আসব না এসে গেছি।”

কারো গলা কানে ভেসে আসতেই পেছনে তাকায় মিরা। পেছনে তাকিয়েই অবাক হয়ে যায়। নিহান এসেছে!

নিহানকে দেখে মিরার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে যায়। রাগী দৃষ্টিতে লাবণীর দিকে তাকায় সে। লাবণী বুঝতে পারে না মিরা রেগে যাচ্ছে কেন। সাগর উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। মিরাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
-“এই তোমার হ্যান্ডসাম বয়ফ্রেন্ড! কি বলেছিলে তুমি? ৬ ফিট লম্বা, ধপধপে ফর্সা গায়ের রং, সিক্স প্যাক করা বডি। কোনটাই তো মিলছে না। হ্যা লম্বা আছে তবে ৬ ফিট না। গায়ের রং তো শ্যামলা। সিক্স প্যাকও তো নেই। তোমার সব মিথ্যা ধরা পড়ে গেলো। আহারে বেচারি। কত আশা করে ছিল আমাদের সামনে নাটক করবে আর আমরাও সেসব বিশ্বাস করব। হুহ।”

লজ্জায় অপমানে মিরার চোখে জল চলে আসে। লাবণী মিরার কাছে আসে। মিরাকে কাঁদতে দেখে বেশ অবাক হয়। বলে,
-“আমি বুঝতে পারছিনা তুই কাঁদছিস কেন? তোর সমস্যার তো সমাধান আমি করেই দিয়েছি। গতকাল এলিনার সাথে তোর কথাবার্তা সব নিহান স্যার শুনে ফেলে। সব শুনে উনি নিজে থেকে আমাদের সাহায্য করতে চান। তাই তো আমি পার্টির ঠিকানাটা দিয়ে দেই।”

লাবণীর কথা শেষ হতেই ঠা*স করে থা*প্পড় মা*রে মিরা। অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-“তোর সাহস কি করে হলো আমার সাথে এমন করার? কি ভেবেছিলি তুই এই কাইল্লা ভূতকে আমার সামনে বয়ফ্রেন্ড সাজিয়ে আনলে আমি খুব খুশি হবো? তোর কি মনে হয় আমার চয়েজ এতই খারাপ। আমাকে দেখ ভালো করে। কত সুন্দরী আমি। আমার পাশে কোন দিক দিয়ে এই লোকটাকে মানায়।”

মিরার কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনছিল নিহান। লজ্জায়, অপমানে তার মাথা হেট হয়ে যাচ্ছিল। জীবনে কোনদিন এতটা অপমান হতে হয়নি নিহানকে। প্রথমবার যখন মাহিনদের বাড়িতে মিরাকে দেখেছিল তখনই তাকে ভালো লেগে যায়। ভার্সিটিতে ক্লাসে এসে মিরাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছিল নিহান।

গতকাল যখন এলিনার সাথে মিরার কথোপকথন শুনল তখন তার মিরার জন্য খারাপ লাগে। সেই জন্য যেচে সাহায্য করতে এসেছিল। বিনিময়ে মিলল তিরস্কার। আর চুপ থাকতে পারে না নিহান। এগিয়ে এসে মিরার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“ঠিক বলেছ তুমি মিস ওয়াল্ড। তুমি অনেক সুন্দরী। দুধে আলতা গায়ের রং তোমার। তুমি হলে পূর্ণিমার চাঁদ। আর আমি অমানিশার চাঁদ। তোমার পাশে বড্ড বেমানান আমি। তবে কি বলো তো মানুষের রূপটাই সব না। আজ এখানে এসে জীবনে অনেক বড় একটা শিক্ষা পেলাম। কেউ দেখতে সুন্দর হলেই তার মনটা সুন্দর হয়না। আমাকে আজ যেভাবে তুমি সবার সামনে যেভাবে অপমান করলে সেটা আমার চিরকাল মনে থাকবে। তুমি চিরকাল বোধহয় রূপ দেখে মানুষকে বিচার করো। ভালো নিজের এই ভাবনাটা বজায় করো। আমি হলফ করে বলতে পারি একদিন তুমি আফসোস করবে। কিন্তু সেদিন অনেক দেরি হয়ে যাবে। ”

কথাটা বলেই নিহান সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। লাবণীও কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসে। মিরাকে সবসময় নিজের বান্ধবীর থেকে বেশি বোন ভেবেছে সে। আর আজ সেই মিরা এভাবে এতগুলো মানুষের সামনে তাকে…লাবণী ঠিক করে নিয়েছে এরজন্য সে জীবনে মিরাকে ক্ষমা করবে না।

সবাই বেরিয়ে আসার পর এলিনা সাগর সবাই মিলে পার্টিতে মনযোগ দেয়। এলিনা এসে মিরাকে কিছু অপমানজনক কথা বলে। মিরা আর সহ্য করতে না পেরে বেরিয়ে আসে। লাবণীকে থা*প্পড় মা*রার জন্য ভীষণ অনুশোচনা হয়। লাবণীকে কল করে কিন্তু সে ফোনটা রিসিভই করেনা। মিরা বুঝতে পারে সে কাজটা ঠিক করেনি। লাবণী সবসময় বিপদে আপদে তার পাশে থেকেছে। আর সে…
______________
মাহিন হোটেল থেকে বেরিয়ে একটু চারপাশটা ঘুরে দেখতে থাকে। বিদিশা এখনো ঘুমিয়ে আছে তাই আর তাকে বিরক্ত করে নি।

কুয়াকাটার তীরে এলোমেলো হয়ে হাটছিল মাহিন। হঠাৎ তার নজর থমকে যায়। আবার সেই চেনা মুখ। না এইবার আর ভুল হয়নি। ভুল একবার হয় বারবার নয়।

মাহিন দৌড়ে আসে রেবার সামনে। রেবা হঠাৎ করে মাহিনকে দেখে ঘাবড়ে যায়। মাহিন বলে,
-“ভাবি তুমি…তুমি কোথায় ছিলে এতদিন? জানো মিরাজ ভাইয়া কত খুঁজেছে তোমায়। আমরা তো তোমাকে ফিরে পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। তুমি এখানে এই অবস্থায় ভালো আছো। তোমাকে ফিরে পেলে যে ভাইয়া ঠিক কতটা খুশি হবে সেটা বলে বোঝাতে পারব না।”

রেবা চোখমুখ স্বাভাবিক করে। মাহিনকে অচেনার ভান করে বলে,
-“কে আপনি? আমাকে ভাবি বলছেন কেন? আমি তো আপনাকে চিনি না। আগে কখনো দেখিও নি।”

-“তুমি আমায় চিনতে পারছ না ভাবি? আমি মাহিন, মিরাজের ছোট ভাইয়া।”

-“আমি কোন মাহিন বা মিরাজকে চিনি না। আমার কাজ আছে আমাকে যেতে হবে।”

রেবা আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে সেখান থেকে চলে যায়।
(চলবে)