ভালোবাসি বুঝে নাও পর্ব-১২

0
5277

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও🍁🍁
#পর্ব_১২
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
.
গলা পানিতে দাড়িয়ে আছি,, এতো পানির নিচে দাড়িয়ে থেকে যতটা না ভয় লাগছে তার থেকে বেশি ভয় লাগছে মেহরাব ভাইয়াকে দেখে ওনি ঠিক আমার সামনে পুকুর ঘাটের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে,, আর ওনার পিছনে ইশিতা আপু রকি রাকিব দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে,,, আমার এতো পানির মধ্যে দাড়িয়ে থাকতে হেব্বি ভয় লাগছে যেনো মনে হচ্ছে এখনি কিছু এসে পানির নিচে থেকে আমার পা টেনে ধরে নিয়ে যাবে, উফফ ভয়ে কিছু বলতেও পারছি না। আসোলে তখন মীরা আপু ওভাবে ডাক দিয়াই আমি তাল সামলাতে না পেরে পানিতে পরে যায়,,, আর পানি অনেকটা শুকিয়ে যাওয়াই বেশি দূর যায়নি তবুও মনে হচ্ছিল যেন ডুবে যাচ্ছি সাহস করে পা নামিয়ে দেখি যে গলা পানিতে পরেছি ভাগিস্য আর একটু দূরে পরেনি তাহলে তো একদম পানির তলদেশ চলে যেতাম আর পানি খেয়ে একদম ঢোল হয়ে যেতাম,।

আমি ওখানে দাড়িয়েই ইশিতা আপুদের ডাক দিলাম ওরা আমার ডাক শুনে পাড়ে এসে আমায় তুলতে গেলেই তখনি কোথা থেকে মেহরাব ভাই এসে সবাইকে পুকুর থেকে উঠায়ে দিয়ে আমাকে এভাবে গলা পযন্ত পানিতে দাড় করিয়ে রেখেছে। এসব ভাবছিলাম তখনি ভাইয়ার কথায় আমার ধ্যান ভাঙলো।

কিরে কি হলো দাড়িয়ে আছিস কেনো?? গোসল কর তোর না পুকুরে গোসল করার অনেক ইচ্ছে তো কর (মেহরাব)

পানি খাওয়ার জন্য কলপাড়ে আসতেই দেখি মাহি গামছা মাথায় দিয়ে চুপিচুপি পুকুর ঘাটের দিকে যাচ্ছে আমি তখনি ওকে ডাকতাম কিন্তু তখনি ছোট কাকু আমায় ডাক দিলো আর আমি আসতে পারলাম না তারপর কাজ সেরে পুকুর ঘাটে গিয়ে দেখি মেড্যাম গলা পানিতে দাড়িয়ে আছে আর সবাই ওনাকে উঠাচ্ছে (মেহরাব)

আমার অনেক ভয় লাগছে ভাইয়া, মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার পা পানির নিচে থেকে টানছে(ভয়ে ভয়ে বলল মাহি)

তাই বুঝি?? কে টানবে?? কেউ নেই তুই গোসল কর আমরা যাচ্ছি ওকে,,আর আপনারা এভাবে ভিজা গায়ে দাড়িয়ে আছেন কেনো যান বাড়ির ভিতর যান(ইশিতাদের উদ্দেশ্য করে) তারপর মেহরাবরা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলে যাচ্ছিলো,, আমি তা দেখে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে বললাম।

আমি ও যাবো আমায় নিয়ে যান প্লিজ আমার অনেক ভয় করছে আমি উঠতে পারছি না,,, আর এমন করবো না সত্যি (কেঁদে কেঁদে বলল মাহি)

এর আগেও বলেছিলি যে আর এমন করবি না, আমায় না বলে কোথাও যাবি না,, তাহলে আমি নিষেধ করা সত্বেও এখানে আসলি কেনো??(মেহরাব)

ভুল হয়ে গেছে আমার আর করবো না সত্যি এই শেষ বার প্লিজ উঠান আমায়(কেঁদে)

সত্যি তো??

হুম সত্যি(একবার এখান থেকে উঠি তারপর আবার করবো এমন আপনার কথা শুনতে আমার বয়েই গেছে নির্ঘাত ভয় পাই তাই,, মনে মনে বলল মাহি)

এখন এমন করে বলছে আমি জানি এ আবার একটা না একটা ভুল করবেই এ কখনো শুধরাবে না (মনে মনে বলে মেহরাব পানিতে নেমে মাহিকে তুলে আনলো).

,,,রাতে,,,,

কারেন্ট চলে গেছে তাই আমরা সবাই উঠানে বসে গল্প করছি আর বড়রা সবাই অন্যদিকে বসে গল্প করছে,,, একটা বড় মাদুর বিছিয়ে আমি মেঘলা আপু আর ইশিতা আপু বসে আছি আর আমাদের পাশেই একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে মীরা বসে ফোন দেখছে। আমরা গল্প করছি তখনি মেহরাব ভাই মেঘ ভাইয়া সোহান রকি রাকিব আর মুনির আসলো।

কি হচ্ছে এখানে??(মেঘ)

আমরা তো এখানে এমনি গল্প করছি কালকে কি করবো তা নিয়ে (মাহি)

ওহ তাই নাকি তাহলে তো আমাদের ও শুনতে হয়(এই বলে মেঘ ভাইয়ারা সবাই আমাদের সামনে আরেকটা মাদুরে বসে পড়ল,,, ওনাদের বসা দেখে মীরা আপু সাথে সাথে চেয়ার থেকে নেমে মেহরাব ভাই এর কাছে বসতে গেলো তখনি মেহরাব বলল)

কিরে তুই এখানে আসছিস কেনো?? এতো ছেলেদের মাঝে যা ওদের সাথে গিয়ে বস(ধমকে বলল মেহরাব)

আমরা বলেছিলাম বসতে ওর নাকি মাদুরে বসতে পারে না তাই চেয়ারে বসেছে (মেঘলা)

আচ্ছা তাহলে তুই চেয়ারেই বসে থাক ওকে(মেহরাব)

মীরা মুখ বাকা করে গিয়ে আবার চেয়ারে বসে পড়ল।

জানেন তো ভাইয়া আমরা মেয়েরা অনেক কিছু পারি এই জন্যই তো সবাই বলে লেডিস ফাস্ট আর ছেলেরা তো কিচ্ছু পারে না একেবারে অকর্মার ঢেঁকি (ইশিতা)

এই অকর্মার ঢেঁকি মানে কি?? জানি না তবে ইশিতা আপু যখন বলেছে তখন হবে হয়ত ছেলে নিয়ে কিছু (এটা মনে মনে ভেবে মাহি বলল)

হ্যাঁ আপু তুমি একেবারে ঠিক বলেছো (মাহি)

কিহ এতো বড় অপমান?? না না ছেলেরা এটা কিছুতেই মানবে না এর কিছু একটা বিহিত করতেই হবে, কিরে মেহরাব কিছু বল তুই(মেঘ)

হুম তাহলে কাল মেঘলার হলুদ সন্ধ্যায় একটা প্রতিযোগিতা হয়ে যাক ছেলে vs মেয়ে দেখি কারা জেতে (মেহরাব)

হুম হুম হোক প্রতিযোগিতা আমরা রাজি কি বলো আপুরা (মাহি)

হ্যাঁ আমরাও রাজি,, এবার প্রমান হয়ে যাবে কারা বেশি কাজের (মেঘলা +ইশিতা)

তবে তবে,, যে পক্ষ জিতবে সে পক্ষ অপর পক্ষকে যা করতে বলবে সেটাই কিন্তু করতে হবে,, কি রাজী?(মেহরাব)

হুম আমরা রাজী (সবাই)

আমি কিন্তু মেহরাব এর দলে (মীরা)

হ্যাঁ তুমি তো ছেলে পক্ষ হবেই তোমাকে তো দেখতে ছেলে ছেলেই আমার তো সন্দেহ হয় তুমি আদৌও মেয়ে কিনা (এটা বলে ইশিতা ফিক করে হেসে দিলো সাথে সবাই)

কি বললে তুমি??(রেগে বলল মীরা)

এই চুপ সবাই,, মেয়েরা একদিকে আর ছেলেরা একদিকে সো না ছেলেদের মাঝে কোনো মেয়ে আসবে আর না মেয়েদের মাঝে কোনো ছেলে যাবে ওকে (মেহরাব)

হুম ওকে।

এবার তাহলে হারার জন্য প্রস্তুত হও আমার অবুঝ পরী(মাহিকে উদ্দেশ্য করে বলল মেহরাব)

হম?? দেখা যাবে কারা জেতে আর কারা হারে, জিতবো তো আমরাই (মাহি)

হুম?? দেখা যাবে হারার পর যেনো আবার কেউ ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে না কাঁদে (মাহিকে উদ্দেশ্য করে বলল)

মাহিও চোখ কটমট করে তাকালো মেহরাব এর দিকে।

,,,,সকালে,,,

সকালে উঠেই সবাই ছুটাছুটি করছে বিয়ে বাড়ি বলে কথা কত কাজ সবার,, আবার এরি মাঝে ১০ টা বেজে গেছে সময় যেনো দৌড়ে চলে যাচ্ছে।

আপু আমিও উটবো প্লিজ আমাকেও উঠাও (মাহি)

হ্যাঁ তোকে গাছে উঠাই আর মেহরাব ভাই আমায় সপাং সপাং করে চড় মারুক তাই না?? না বাবা দরকার নাই তুই বরং নিচে থেকেই পাতাগুলো গোছা।(ইশিতা)

আসোলে আজকে মেঘলার গায়ে হলুদ তো তাই ইশিতা মাহি আর রকি রাকিব গেছে গাছ থেকে নিম পাতা পারতে তারপর হলুদ উঠাতে হবে তারপর ওগুলো বেটে মেঘলার গায়ে লাগাবে,, তো ইশিতা আর রকি রাকিব গাছে উঠে নিম পাতা পারছে আর মাহি নিচে দাঁড়িয়ে আছে ও উঠতে চাইছিলো কিন্তু ইশিতাই উঠাইনি, কেননা মেহরাব এর কড়া নিষেধ আছে।

তারপর ওরা নিমপাতা পেরে আর বাগান থেকে হলুদ তুলে বাড়ি ফিরে গেলো,, তারপর বড়দের কাছে দিয়ে দিলো ওনারা ভলো করে ধুয়ে ওগুলো একএে বেটে একটা বাটিতে নিয়ে মেঘলাকে নিয়ে পুকুর ঘাটে গেলো এটা মেয়েলি অনুষ্ঠান তাই ছেলেরা কেউ নেই, অন্যদিকে মেঘকে আগে হলুদ লাগিয়ে বসিয়ে রেখে তারপর সেই হলুদ নিয়ে এবার মেঘলাকে লাগাবে তারপর বাকিটা সবাই সবাইকে মাখাবে।

চারজন চারপাশে একটা কাপড় উঁচু করে ধরে আছে আর তার নিচে মেঘলাকে বসিয়ে রেখে ওর গায়ে হলুদ মাখাচ্ছে,, মাহি দূরে দাড়িয়ে দেখছে আর হাসছে তখনি কেউ ওর হাত টেনে নিয়ে গেলো, মাহি তো ভয় পেয়ে গিছিলো তারপর তাকিয়ে দেখে মেহরাব।

একি মেহরাব ভাই আপনার মুখের এই অবস্থা কেনো??(মেহরাব এর সারা মুখে হলুদ মেখে একদম ভূতের মতো দেখাচ্ছে)

আরে আর বলিস না মেঘ এমন করেছে।

আরে আমাকে নিয়ে এখানে আসলেন কেনো??

তোকে একটা জিনিস দেবো তাই।

কি জিনিস দেন দেন।

আগে চোখ বন্ধ কর তারপর দেবো।

মাহির তো গিফট পেতে হেব্বি লাগে তাই মেহরাব এর বলার সাথে সাথেই টপাটপ করে চোখ বন্ধ করে ফেললো।আর তখনি মেহরাব নিজের মুখটা মাহির মুখের সাথে ঘষে নিজের মুখের হলুদ টা ওর মুখে দিয়ে চলে গেলো। আর মাহি তো ওখানেই চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে রইলো কি হলো কিছুই বুঝলো না কিন্তু বুকের মধ্যে কেমন যেনো একটা ভালো লাগার বাতাস বয়ে গেলো।

,,,,চলবে,,,,?