ভালোবাসি বুঝে নাও ২ পর্ব-৪১+৪২+৪৩

0
357

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৪১_পর্ব

.
কথায় বলে সময় ও স্রোত কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না, সময় তার নিজ গতিতে যেতে থাকে,, অনেকগুলো দিন হাসি মজাই কেটে গেলো, আর দেখতে দেখতে মাহির পরিক্ষা ও শেষ হয়ে গেলো,, পরিক্ষার কয়দিন মেহরাব মাহিকে সব সময় দৌড় এর উপর রেখেছে ঘুম কি সেটা এতো দিনে প্রায় ভুলতে বসেছে,, আজকে মাহির পরিক্ষা শেষ,, মেহরাব মাহিকে বলেছে পরিক্ষা শেষে দাঁড়িয়ে থাকতে তারপর মেহরাব এসে ওকে নিয়ে ঘুরতে যাবে যেহেতু আজকেই পরিক্ষা শেষ এই জন্য,, আর ঘুরা শেষে মাহি বাড়িতে গিয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিবে।

সেই কখন থেকে মাহি দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু মেহরাব এর আসার কোনো খবরই নেই, সবাই চলে গেছে, ওর কাছে ফোনও নেই যে মেহরাব কে কল করবে,,, অবশেষে ওর এক ফ্রেন্ড এর থেকে ফোন নিয়ে মেহরাব কে কল করল, কিন্তু ফোনটা কেউ ধরল না পরপর তিনবার কল দেওয়ার পর ফোনটা রিসিভ করল একটা মেয়ে।

হ্যালো কে আপনি.

আপনি কে আর আপনি কেনো ফোন ধরেছেন??(মাহি)

তো ফোন বাজলে ফোন ধরবো না??

মাহি ভাবল হয়ত ভুল করে অন্য কাউকে কল দিয়েছে তাই ফোন কেটে ভালো করে নাম্বার তুলে আবার কল দিলোব,কিন্তু মাহিকে নিরাশ করে আবারও একটা মেয়ে ফোন রিসিভ করল।

আপনি কে বলুন তো বার বার এভাবে কল দিয়ে বিরক্ত করছেন কেনো??

আপনি কে আর এটা তো মেহরাব ভাই এর নাম্বার তাহলে আপনি কে?? এখনি ফোনটা ওনাকে দিন বলুন যে মাহি কল দিয়েছে।

সরি পারবো না স্যার একটা মিটিং এ আছে আর বলেছে কেউ যেন ওনাকে বিরক্ত না করে, আর আপনি কে যে আপনার কথা স্যার কে বলতে যাবো ফোন রাখুন তো যত্তসব (এই বলে মেয়েটা ফোন কেটে দিলো)

রাগে দুঃখে মাহির কান্না পাচ্ছে অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে ফোনটা দিয়ে ভাবলো মেহরাব এর অফিসে যাবে যেই ভাবা সেই কাজ মাহি মেহরাব এর অফিসের দিকে যেতে লাগল,, এর আগে একবার মেহরাব ওর অফিস মাহিকে দেখিয়েছিলো তাই চিনতে পারে এখন,,, মাহি এতোটাই রেগে যে ও রিক্সা না নিয়ে হাঁটা শুরু করেছে। মাহির কলেজ থেকে মেহরাব এর অফিস বেশি দূরে নয় আবার কাছেও বলা যায় না, বড় বড় পা ফেলে হাঁটতে লাগল।

অবশেষে মিটিং শেষ হলো, ক্লান্ত শরীল নিয়ে মেহরাব নিজের কেবিনে এসে চেয়ারে হাত পা ছড়ায়ে বসলো,,, কাজ করতে করতে শেষ একদম,, তখনি ওর পিএ রিনি নক করল।

স্যার আসতে পারি??

আসুন,, (সোজা হয়ে বসে বলল মেহরাব)

স্যার সব কিছু একদম ভালো হয়েছে মিষ্টার সেন আমাদের সাথে ডিল করতে রাজি হয়েছে আপনার মিটিং সাকসেসফুল হয়েছে।

আমি জানি,, আর কিছু বলার না থাকলে আসতে পারেন।

ওকে স্যার,, এই বলে রিনি বেরোতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল,,স্যার আপনাকে বলতে ভুলেই গিছিলাম,, আপনি যখন মিটিং এ ছিলেন তখন আপনার ফোনে বার বার কে যেনো কল দিচ্ছিলো বাধ্য হয়ে আমি ফোনটা ধরি,, মাহি নামে কেউ কল দিছিলো আর ফোন আপনাকে দিতে বলছিলো, আমি ওনাকে বকে কল কেটে দিয়েছি ঠিক করেনি স্যার??

হোয়াট কে কল দিছিলো?? (চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল মেহরাব)

মাহি,, কেনো স্যার?? এনি প্রবলেম??

মেহরাব যলদি করে নিজের ফোন টা দেখলো,, আননোন নাম্বার মাহির কাছে ফোন নেই এজন্য হয়ত অন্য কারো ফোন থেকে কল দিয়েছে,,, আর আজকে তো মাহির পরিক্ষা শেষ,,, ওহ শিট এটা বলে মেহরাব চেয়ারে বসে পড়ল।

কি হয়েছে স্যার??

আপনাকে কে বলেছিলো আমার ফোন ধরতে আমি বলেছিলাম??(রেগে বলল মেহরাব)

আ,,আসোলে স্যার ফোনটা বার বার বাজতে ছিলো তাই (ভয়ে ভয়ে বলল রিনি)

তাই জন্য আপনি আমার এতো বড় ক্ষতি টা করলেন, এর পর থেকে আর কখনো আমার ফোন ধরবেন না,, আমারি ভুল হয়েছে, আমি কীভাবে যে ভুলে গেলাম,,, এই বলে মেহরাব যেই কেবিন থেকে বেরোতে যাবে তখনি বাইরে থেকে চেঁচামেঁচির আওয়াজ আসল।

বাইরে কি হচ্ছে??

জ,,জানি না স্যার দেখতে হবে।

তো এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো যান।

আরে আপনাকে কতবার বলবো যে এভাবে কোনো অফিসে ঢুকা যায় না,, আপনার আইডি কার্ড দেখান, আর আপনি কোন পোস্টে আছেন সেটা বলুন আমি সব জেনে তারপর আপনাকে ভিতরে ঢুকতে দেবো নয়ত না। (দারোয়ান)

আমাকে ভিতরে ঢুকতে দিবেন না তাইতো?? (মাহি)

হুম তাই,, এভাবে অচেনা কাউকে অফিসে যেতে দেওয়া যাবে না।

ইস সেদিন যদি দূর থেকে না দেখে মেহরাব ভাই এর সাথে ভিতরে আসতাম তাহলে ভালো হতো,,, মনে মনে এটা ভেবে মাহি দারোয়ান কে বলল ওই দেখুন আপনাকে কেউ ডাকছে।

মাহির কথা শুনে দারোয়ান পিছনে তাকাতেই মাহি ফুরুত করে দৌড়ে ভিতরে ঢুকে গেলো।

আরে এই মেয়ে দাঁড়াও,, বলছি, (এই বলে দারোয়ান ও মাহির পিছনে যেতে লাগলো)

মাহি জানে না মেহরাব কোথায় এতোবড় অফিস এতো মানুষ মাহি তবুও সামনে দৌড়ে যাচ্ছে হঠাৎই রিনির সাথে ধাক্কা খেলো।

আরে এই মেয়ে তুমি কে আর এভাবে অফিসের মধ্যে ঢুকে পরেছো, দারোয়ান,কোথায় যে থাকে এরা,,

মাহি হাঁফাচ্ছে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে,, রোদে মুখটাও লাল টকটকে হয়েছে কান্না করার ফলে চোখটাও একটু ফুলে গেছে, সব মিলিয়ে ওকে এক প্রকার পাগল পাগল লাগছে এতো দূর থেকে হেঁটে এসেছে তারপর আবার দৌড়ানিতে, কথাই বলতে পারছে না। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বা হাতে নিজের জামা শক্ত করে ধরে আর ডান হাতে ফাইল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

আম সরি ম্যাম আমি একে অনেক বার নিষেধ করেছি তবুও এনি চলে এসেছে,,, আমি একে এক্ষুনি নিয়ে যাচ্ছি,, এই চলো (দারোয়ান)

মাহি চুপ করে কাঁদো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে,, তখনি মেহরাব বলতে বলতে আসলো।

কি হয়েছে এতো গন্ডগোল কিসের??

মেহরাব এর গলা পেয়ে মাহি যেনো জানে প্রাণ ফিরে পেলো, , দারোয়ান যেই মাহির হাত ধরতে যাবে ওমনি দৌড়ে মেহরাব এর কাছে যেতে গেলো তখনি রিনি মাহিকে ধরে ফেলল।

এই মেয়ে তোমার তো দেখছি খুব সাহস।

মেহরাব বাইরে এসে মাহিকে এই অবস্থায় দেখে যেনো বুকের ভিতর ব্যাথা করে উঠল,, কি অবস্থা হয়েছে,, রিনিকে মাহির হাত ধরতে দেখে রেগে চিৎকার করে বলল।

হাউ ডেয়ার ইউ, আপনার সাহস কি করে হলো ওর হাত ধরার ছাড়ুন ওর হাত।

মেহরাব এর চিৎকারে সবাই ভয় পেয়ে গেলো রিনি ভয় পেয়ে যলদি মাহির হাত ছেড়ে দিলো,, মাহিও হাত ছাড়া পেয়ে দৌড়ে গিয়ে মেহরাব এর বুকের সাথে মিশে গেলো,, মেহরাব ও শক্ত করে মাহিকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো,,, তারপর সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলল।

এরপর থেকে এই ভুল আর কেউ করবে না তোমাদের সাহস কি করে হলো মাহি কে আটকানোর তোমার জানো ও কে?? ও আমার ওয়াইফ যাকে বাংলায় বলে বউ বুঝলে?? যাও সবাই (রেগে বলল মেহরাব)

মেহরাব এর ধমকে সবাই যে যার কাজে চলে গেলো,,, মেহরাব মাহির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল সরি বউ আসলে,,, মেহরাব কে আর বলতে না দিয়ে মাহি মেহরাব কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে চোখ মুছে,, একবার মেহরাব এর দিকে তাকিয়ে চলে যেতে লাগল।

মাহি দাঁড়াও শোনো, মেহরাব জানে তার বউ তার উপর ভীষণ অভিমান করেছে আর আজকে নিজের অজান্তেই মাহি কে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে,, মেহরাব ও মাহির পিছনে গেলো।

রাস্তা দিয়ে হাঁটছে মাহি আর কিছুক্ষণ পর পর চোখ মুছতেছে,, আজকে অনেক খারাপ ভাবে অপমানি হয়েছে ও,, আর এই সব কিছুর জন্য দায়ী মেহরাব উনাকে এর শাস্তি পেতেই হবে, খুব খারাপ ওনি, এসব বলছে আর চোখের পানি মুছতে মুছতে হেঁটে যাচ্ছে মাহি,, তখনি মেহরাব দৌড়ে এসে মাহির পাশাপাশি হাঁটতে লাগল।

আচ্ছা তুই কি আমার উপর রাগ করে আছিস??(যদিও জানি তবুও জিগাস করলাম)

,,,,,,,,,,,,,

রাগটা কি খুব বেশী?? কোনো ভাবে আমায় মাফ করা যায় না??

,,,,,,,,,,,,

মাহি মেহরাব এর কথার কোনো জবাব না দিয়ে নিজের মতো করে হাঁটতে লাগল তখনি মেহরাব মাহিকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে লাগল।

যাহ আজকে আর গাড়ি নিয়ে নয় আজকে আমি আমার বউকে এভাবে কোলে নিয়েই ঘুরবো তারপর বাড়ি যাবো,,, অন্য সময় হলে মাহি ছটফট ছুটাছুটি করতো কিন্তু আজকে একদম চুপ করে আছে,, আজকে অনেক বেশি রেগে আছে।

দেখেছিস?? তুই মুখটা কালো করে রেখেছিস বলে আকাশেও কেমন কালো মেঘ জমেছে হঠাৎ করে। (মাহিকে কোলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল মেহরাব)

আমি কি ছোট মানুষ যে ওনি যা বলবেন আমি তাই বিশ্বাস করবো,,, এখন বৃষ্টির সময়,, এই দেখবা কাঁঠফাটা রোদ তো এই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, আর ওনি কি না বলছে আমার মন খারাপ বলে আকাশে কালো মেঘ জমেছে, সবি ঢপের চপ আমি জানি (মনে মনে বলল মাহি)

মেহরাব এর কথা শেষ হতে না হতেই এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে একদম ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।

,,আজকে আমার প্রেয়সী কান্না করেছে বলে, মেঘ তার সাথে তাল মিলিয়ে মুখ ভার করে ছিলো,, কিন্তু অবশেষে সেও কান্না করে দিলো,,,,

চলবে,,,,???

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৪২_পর্ব

.
মাহি পণ করেছে যে যায় হয়ে যাক না কেনো ও কখনোই মেহরাব এর সাথে কথা বলবেনা কেননা মেহরাব এর জন্যই ওকে কষ্ট পেতে হয়েছে,,, আজ তিনদিন হলো মাহি মেহরাব এর সাথে কথা বলে নাহ পড়াশুনা নেই শুধু ঘুম আর খাওয়া, আর মাহির জন্য ঘুম খাওয়া আর মেহরাব এর সাথে কথা না বলা মেহরাব অনেক চেষ্টা করেছে অনেকবার সরি বলেছে তবুও মাহি মানতে নারাজ সে কিছুতেই কথা বলবে না সব কিছু করবেন কিন্তু কথা সে বলবে না।

সন্ধ্যার সময় সোফার উপর সটান হয়ে শুয়ে হাতে রিমোট নিয়ে আরামসে টিভি দেখছে মাহি, যেনো এর থেকে জরুরি কাজ আর এখন বর্তমানে নেই,, আর ওদিকে রান্নাঘর থেকে মাহির মা মাহিকে এক নাগাড়ে বকেই যাচ্ছে।

এতোবড় একটা মেয়ে যে কিনা এই ভর সন্ধেবেলা পায়ের উপর পা তুলে টিভি দেখছে, আরে টিভি দেখার ও তো একটা সময় আাছে, পরিক্ষা টা শেষ হয়েছে কি তার শুরু হয়ে গেছে বইয়ের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে তিনি মহা আনন্দে আছে।

মাহির মায়ের কথার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠল,, রান্না ঘর থেকে মাহির মা মাহিকে উদ্দেশ্য করে বলল।

এই যে কানে কি কম শুনিস নাকি?? গিয়ে দরজাটা খুলে দিতে পারছিস না আমি কাজ করছি।

কিন্তু মাহি এতো আরামে শুয়ে থেকে উঠতে নারাজ,, তবুও মায়ের বকুনির ঠেলায় উঠে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতে গেলো মনে মনে দরজার উপারের থাকা লোকটাকে ভিষণ বকা দিচ্ছে আসার আর সময় পেলো না,, এই বলে দরজা খুলে দিলো দেখলো মেহরাব দাঁড়িয়ে আছে।

কি চাই??

কিরে কে আসলো?? (রান্না ঘর থেকে জিগাস করলো মাহির মা)

তোমার একমাএ ভাইয়ের একমাএ ছেলে (কথাটা বলে দরজার ওখান থেকে সরে সোফায় গিয়ে বসল মাহি)

দেখেছো মেয়ের কথার কি ধরন দুদিন পর যে ওর বর হবে তার সাথে কীভাবে কথা বলছে এ মেয়ে আর ঠিক হবে না।

কাকে কি বলছো ফুপি গাধাকে যতই পিটাও সে কি কখনো ঘোড়া হয় নাকি (মাহির পাশে বসতে বসতে বলল মেহরাব)

কি আমি গাধা??(রেগে বলল মাহি)

ওহ গাধা বলেছি বলে রাগ করেছিস আচ্ছা সরি আমারি ভুল হয়েছে তোকে গাধা বলে আসলে তুই তো গাধা নয় গাধী (হাসতে হাসতে বলল মেহরাব)

আপনি একটা উল্লুক,, রেগে দাঁত কিড়মিড় করে বলল মাহি..

এতো পড়াশোনা করে কি করলি,, এখনো কোথায় কি বলতে হয় তাও শিখলি না, আরে উল্লুক বলে কি কোনো প্রাণী আছে নাকি?? বুদ্ধি না থাকলে যা হয় আর কি

মাহি কিছু বলতে যাবে তখনি মাহির মা রান্না ঘর থেকে হাত মুছতে মুছতে রেরিয়ে এসে বলল।

তা এই ভর সন্ধেবেলা আসলি যে কোনো সম্যসা হয়েছে নাকি?? মনে তো হচ্ছে অফিস থেকে সোজা এখানে চলে এসেছিস।

হ্যাঁ ফুপি তোমাদের কালকে আমাদের বাসায় দাওয়াত মেঘলা রাও আসবে,, মেঘলা নাকি সবাইকে কি একটা বলবে তাই সবাইকে আসতে বলেছে।

এই কথাটা ফোনে বললেই তো হতো এতো ঢং করে এখানে আসার কি দরকার আপনি তো আবার মহা ব্যাস্ত মানুষ (তাচ্ছিল্য করে বলল মাহি)

এখানে যে কেনো আসি সেটা তুই ভালো করেই জানিস,,, এখানে বার বার ছুটে আসি আমার যত্নে রাখা ফুলটাকে দেখতে, কবে যে ফুলটাকে এখান থেকে তুলে আমার মনের ফুলদানি তে সাজাবো কে জানে (ফিসফিস করে বলল মেহরাব)

মাহি কিছু না বুঝে মেহরাব এর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকল।

আচ্ছা ফুপি আমি তাহলে আসি, (উঠতে উঠতে বলল মেহরাব)

সেকিরে এখনি চলে যাবি কিছু খেয়ে যা

নাহ আমার কি আর সে কপাল আছে নাকি দেখছো না তোমার মেয়ে কেমন হা করে তাকিয়ে আছে যেনো এখনি টুপ করে আমায় খেয়ে নেবে।

মেহরাব এর কথা শুনে মাহি নিজেকে ঠিক করে বসল,,,, আরে ওর কথা বাদ দে তুই বস।

না ফুপি আমাকে যেতে হবে,,, এই বলে মাহির দিকে একবার তাকিয়ে মেহরাব চলে গেলো।

কি ভাব খারাপ লোক একটা এতো বড় একটা কাজ করে এখন পযন্ত ভালো করে আমাকে সরি ও বললো না,, আমিও কথা বলবো না দেখি ওনি কতদিন এভাবে থাকতে পারে হু??(রেগে মনে মনে বলল মাহি)

,,,সকালে,,,,,

মেহরাব দের বাড়ির ডয়িং রুমে সবাই বসে আছে মাহি ওর মায়ের কাছে বসে শাড়ির এককোণা হাতের আঙুলের সাথে পেঁচাচ্ছে আর মাহির অপর পাশের সোফায় মেহরাব আরাম করে বসে আপেল খাচ্ছে,, মাহি আড় চোখে মেহরাব এর দিকে তাকাতেই মেহরাব মাহিকে চোখ মেরে দিলো মাহি হকচকিয়ে গিয়ে, মেহরাব এর থেকে চোখ ফিরিয়ে বিরবির করে বলল।

বদ লোক একটা, লম্বার উপর খাম্বা,,

তা এখন তো বল সবাইকে এভাবে ডাকার মানে কি??(মেহরাব এর বাবা)

হা যলদি বল আমার তো এবার রীতিমতো টেনশন হচ্ছে (মেহরাব এর মা)

আসলো মা আমি চাইছিলাম যে আমরা বাড়ির সবাই মিলে যদি আজকে একটা ছোটখাটো পিকনিক করি তাহলে কেমন হবে,, আর মাহির পরিক্ষা ও শেষ আবার আজকে শুক্রবার কারো অফিস ও নেই তারপর আবার (মেঘলা আর বলল না লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো)

তারপর আবার কি?? বল??

তারপর আবার আপনাদের এই বয়সে খেলার একজন সঙ্গে আসছে (মেঘ)

মানে??(সবাই বুঝতে না পেরে বলল)

মানে হলো বাবা আপনি নানু হচ্ছেন।

মেঘের কথা শুনে কেউ কিছু বলার আগেই মাহি বলে উঠল।

মানে?? এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে হলো??

মেহবার কেবলি আপেল এ কাঁমড় দিবে মাহির কথা শুনে আপেলে কাঁমড় না দিয়ে আপেল মুখে নিয়ে মাহির দিকে তাকিয়ে আছে,, মেহরাব এর সাথে সবাই হা করে মাহির দিকে তাকালো।

সবার তাকানো দেখে মাহি বুঝতে পারলো যে ও ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে তাই নিজেকে ঠিক করে বলল।

আব ইয়ে ম,,,মানে ব,,বলছিলাম কি যে এখনো তো ১ বছর হয়নি তাই আর কি (আল্লাহ বাঁচাও কি বলতে কি বলে ফেললাম,, কি লজ্জা)

সেটা কি তোকে বলতে হবে,, ওরা কি তোকে বলে বেবি নেবে?? আর বছর হতে আর দেরিও নেই ইডিয়ট (দাঁতে দাঁত চেপে বলল মেহরাব)

ওহ আচ্ছা,,, কাঁপা গলায় বলল মাহি।

আচ্ছা বাদ দাও তো তাহলে চলো পিকনিক এর ব্যবস্হা করা যাক,, আর তার আগে সবাইকে মিস্টি খাওয়াতে হবে তো।

সবাই হাসাহাসি করছে আর মাহি আড় চোখে মেহরাব এর দিকে তাকালো দেখলো মেহরাব রেগে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে,, যেনো চোখ দিয়েই বলছে কোথায় কি বলতে হয় এখনো শিখলি না আর কয়দিন পরতো নিজেই একটা বাচ্চার মা হয়ে যাবি,, একবার হাতের কাছে পাই তখন বুঝিয়ে দেবো কোথায় কি বলতে হয়।

চলবে,,,,,??

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৪৩_পর্ব

.
বাগানে মাটিতে চুলা কেটে ওতে রান্না করা হচ্ছে,, আজকে সব ছেলেরা রান্না করবে আর মেয়েরা বসে বসে শুধু তদারকি করবে,,, মেহরাব ভাই আর মামু রান্না করছে মামু মাথায় গামছা তো নেই তাই টাওয়াল বেঁধে রেখেছে আর মেহরাব ভাই কমরে টাওয়াল বেঁধে দুই বাপ বেটা মিলে রান্না করছে আর আব্বু সবজি কাটছে মাছ রাঁধবে বলে,, আর ওদিকে মেঘ ভাইয়া কে মাছ কাটার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কিন্তু ওনি তো মাছ কাটা তো দূর ধরতেই পারছে না,,,, মামী মণি আম্মু আর মেঘলা আপু পাশেই চেয়ারে বসে সবাইকে বলছে কীভাবে কি করতে হবে আর আমি দোলনায় বসে দোল খাচ্ছি আর আপেল খাচ্ছি, সেই আপেলটা যেটা মেহরাব ভাই অর্ধেক খেয়ে বাকিটা আমাকে দিয়ে গেছে। তখনি বাইরের গেটে চেঁচা মেঁচি শুনে আমি ওদিকে গেলাম, গিয়েই দেখি কি অবস্থা।

সব দোষ আপনার সেই প্রথম থেকে ধাক্কা দিয়ে আসছেন,, সুযোগ পেলেই শুধু ধাক্কা দেন আর এখনো?? এত্তো বড় একটা গেট তবুও আপনার জায়গা হয় না সেই আমার সাথেই ধাক্কা খেতে হবে। (মীরা)

হুম তুমি বোঝো না তোমার সাথে ধাক্কা না খেলে তো আমার ঘুমই আসে না,, যত্তসব আমার বয়েই গেছে তোমার সাথে ধাক্কা খেতে তুমি কোন দেশের রানি হুমম (নেহাল)

আমি হা করে ওনাদের ঝগড়া দেখছি,, যখন থেকে ওনাদের দেখেছি ওনার ঝগড়াই করে যায় আচ্ছা ওনাদের যদি ধরে বিয়ে দিয়ে দিই ওনারা কি বাসর ঘরে ও ঝগড়া করবে???(দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলাম তখনি নেহাল বলল)

এই পিচ্চি ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে বিচার করে দিয়ে যাও,,

এই যে শুনুন আমি মোটেও পিচ্চি নই, আর দোষ তো আপনার কেননা মেয়ে দেখলে ছেলেরা বেশি পাট নেয় তাই সব দোষ আপনার (মাহি)

একদম ঠিক সব দোষ আপনার (মীরা)

একি রে, এতো দেখি আমে দুধে মিশে গেলো আর আমি আঁটি হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছি,, এই যে শুনো মিস কাঁদা সুন্দরী আমার না তোমার থেকেও সুন্দর গার্ল ফ্রেন্ড আছে ওকে তাই তোমার সাথে ধাক্কা খাওয়ার আমার কোনো ইচ্ছেই নেই (কোনো গার্ল ফ্রেন্ড নেই ভাব নেওয়ার জন্য বললাম হিহিহি)

গার্ল ফ্রেন্ড এর কথা শুনে মীরার হাসি হাসি মুখটা নিমেষেই চুপসে গেলো,, আমি গেলাম,, এই বলে মীরা চলে গেলো।

এর আবার হঠাৎ কি হলো,, কি জানি মেয়েদের মন বোঝা নয়তো খুব সোজা,, এই পিচ্চি চলো আমরাও যায়।

আপনিই যান ঢেঁড়স একটা,, (এই বলে মাহি ও চলে গেলো)

লে এর আবার কি হলো, আমি করলাম টা কি??(নেহাল)

সব রান্না শেষে এখন খাওয়ার পালা,সবাই একসাথে ডাইনিং টেবিলে বসেছে, মেহরাব এর মা একটু খানি মুখে দিয়ে বলল।

হুমম ভালোই হয়েছে তবে ঝাল একটু বেশিই হয়েছে।

একদম ফোঁড়ন কাটবে না বলছি অনেক কষ্ট করে রান্না করেছি,, আমি জানি রান্না অনেক ভালো হয়েছে,, তুমি আমার নাম করবে না বলে তাই এমন বলছো, হিংসুটে মহিলা একটা (মেহরাব এর বাবা)

এই একদম ঝগড়া করতে আসবা না বলে দিলাম, আমার কাছে যেমন লেগেছে সেটাই বললাম।

আচ্ছা চুপ চুপ সবাই চুপ, আম্মু তুমি কিন্তু একটু বেশি বলছো আজকের রান্না ভালোই হয়েছে (মেহরাব)

হ্যাঁ মামী মণি আজকে রান্নাটা ভালোই হয়েছে (মাহি)

খাওয়া শেষ করে সবাই হাত ধুতে গেলো, মীরা কেবলি হাত ধুয়ে এসে সোফায় বসল তখনি দেখলো নেহাল এর ফোন বাজছে মীরা কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো সাথী নামের কোনো মেয়ে কল দিয়েছে,, সাথে আর একটা মেসেজ ও এসেছ,,,, মেসেজ টা হলো।

কি হলো ফোন ধরছো না কেনো পাশে কেউ আছে নাকি?? ও বুঝেছি নিশ্চয়ই মীরা আপু আছে ওকে পরে কল দিও…

সাথী হলো আমার এক ক্লাস নিচে পরে আমি চিনি, তারমানে সাথীই ওনার গার্ল ফ্রেন্ড,, ফোনটা নিচে রাখল মীরা বুকের ভিতর ভিষণ বেথ্যা করছে আচ্ছা আমার সাথেই কেনো এমন হয় যাকে ভালোবাসি সেই কেনো এভাবে অন্যের হয়ে যায়,, সত্যি সবার কপালে ভালোবাসা থাকে না এই বলে মীরা চোখটা মুছে নিলো।

ছোটরা মিলে সবাই রুমে আড্ডা দিচ্ছে আর বড়রা নিচে ডয়িং রুমে বসে মাহি আর মেহরাব এর বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে,, মেঘলার রুমে, মেঘলা মাহি মেঘ বসে আছে রাত হয়ে গেছে একটু পরেই ওরা চলে যাবে,,, মীরা এসে কেবলি বিছানায় বসতে যাবে তখনি সেই জায়গায় নেহাল এসে বসে পড়ল,,, অন্য সময় হলে মীরা ঝগড়া করে জোর করে হলেও নেহালকে উঠিয়ে দিয়ে নিজে বসত কিন্তু এখন আর সেই মুড নেই কেননা সে তো অন্য কারো তাই দূরে থাকাই ভালো,, মীরা কোনো কথা না বলে অন্য জায়গায় বসে পড়ল।

বেপারটা কি হলে,, কাঁদা সুন্দরী কিছু বললো না কেনো,, তখন আমার বলা কথায় কি মাইন্ড করলো নাকি(মনে মনে বলল নেহাল)

সব শেষে এটাই ফাইনাল করা হলো যে সামনের মাসের প্রথমে বিয়ে অনেক দেরিও নেই আবার বেশি কাছেও নেই,, এখন থেকেই সব কিছু শুরু করতে হবে,, বিয়ে আরো কদিন পরে হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু মেহরাব আর ধৈর্য ধরতে পারবে না স্রেভ বলে দিয়েছে যে মাহির ভর্তির আগেই যেনো বিয়ে টা হয়ে যায় তাই এই আয়োজন।

আলোচনা শেষ হতে অনেক রাত হয়ে গেলো,, এখন বাড়ি ফিরার পালা,, সবাই নিচে নেমে গেছে মাহি কেবলি ব্যাগ নিয়ে নিচে নামতে যাবে তখনি কেউ ওর হাত ধরে রুমে নিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল।

আচমকা এভাবে ধরায় মাহি ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো তারপর আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখলো সামনে আর কেউ না মেহরাব দাঁড়িয়ে আছে,,, ক,,,কি করছেন ছাড়ুন আমায় (নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল মাহি)

কি হয়েছে হমম?? এমন করছিস কেনো আমি বলছিতো আমার ভুল হয়েছে তাই বলে কি এমন করতে হবে? আমি না তোর বর (মাহির মুখের সামনে থেকে চুল সরাতে সরাতে বলল মেহরাব)

সরুন কথা বলবো না আপনার সাথে (অভিমানী সরে বলল মাহি)

ওলে বাবা আমার বউটা দেখি এখনো অভিমান করে আছে,, নিচে কিসের আলোচনা হলো জানিস আমাদের বিয়ের, সামনে মাসের প্রথমেই বিয়ে,, আজকেই বাসর করে রাগ ভাঙিয়ে দেবো নাকি কি বলিস হুমম(দুষ্ট হেসে বলল মেহরাব)

ছিঃওনি কি সব বলছে লজ্জা নেই নাকি, আমাকে তো লজ্জায় একদম চুবিয়ে মারছে বদ লোক একটা (মনে মনে বলল মাহি)

কি হলো কিছু বলছিস না কেনো, ওমা আমার পিচ্চি বউ টা দেখি লজ্জা পেয়েছে, লজ্জায় একদম গালটা লাল হয়ে গেছে দেখি দেখি (এই বলে মেহরাব মাহির মুখটা তুলে ওর গালে একটা চুমো দিয়ে দিলো)

মাহি তো লজ্জায় মরি মরি অবস্থা কোনো রকমে মেহরাব কে সরিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো,, গালে হাত দিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে।

কিরে তোর এতোক্ষণে আসার সময় হলো, কত রাত হয়েছে সেদিকে খেয়াল আছে?? সুহান তো ঘুমে একদম বেহুশ হয়ে গেছে এখন ওকে নিয়ে যেতে হবে,, চল তোর আব্বু বাইরে অপেক্ষা করছে.

আরে ফুপি চলো আমিও যাচ্ছি তোমাদের সাথে (সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল মেহরাব)

সেকিরে তুই এখন যাবি আবার আসতে পারবি তো,

আসার কি দরকার আজকে না হয় হবু শুশুর বাড়িতে থেকেই যাবো, কি বলিস (মাহিকে চোখ টিপ দিয়ে বলল মেহরাব)

মাহি লজ্জায় মাথা নিচে করে মুচকি হাসলো।

তাহলে নেহাল তুই বরং মীরাকে পৌঁছে দিয়ে বাইক নিয়ে চলে আয় আমি মেঘলা কে নিয়ে যাচ্ছি। (মেঘ)

না ভাইয়া আমি একাই যেতে পারবো।

তা ভাবীর খালাত বোন কি আমাকে ভয় পাচ্ছে?? ভয় নেই আমি ঠিকঠাক ভাবেই পৌঁছে দেবো আপনি নিশ্চিত ভাবে আসতে পারেন.

মীরা কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ নেহাল এর সাথে চলে গেলো।

চলবে,,,,,,,??