ভালোবাসি বুঝে নাও ২ পর্ব-৩৮+৩৯+৪০

0
325

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৩৮_পর্ব
.
মেহরাব ভাই,,, চিৎকার করে বলল মাহি।

আহ কি হচ্ছে কি মাহি একটু আস্তে চেঁচা এমন ভাবে চিল্লানি দিলি যেনো মনে হচ্ছে কি না কি (তেড়ে আসা ছেলেটার লাঠি একহাতে ধরে বলল মেহরাব)

যেখানে আছিস সেখানেই থাকবি ওখান থেকে এক পা নড়লে আমি এসে তোর পা ভেঙে রেখে দেবো,

মেহরাব এর হুমকি শুনে মাহি ওখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগল,, আর মেহরাব এদিকে সবগুলো কে দুমদাম পিঠিয়ে অবস্থা খারাপ করে দিলো,, একেকটা একেক ভাবে মাটিতে পড়ে আসে,,, মেহরাব হাত ঝাড়তে ঝাড়তে মাহির কাছে গিয়ে মাহির কাঁধে হাত রাখতেই মাহি ভয়ে কেঁপে পিছনে তাকালো।

আরে আমি,, আর কারো সাহস আছে নাকি তোকে ছোঁয়ার।

মেহরাব কে দেখে মাহি শক্ত করে মেহরাব কে জড়িয়ে ধরল,, এতো শক্ত করে যেনো এখনি টুপ করে মেহরাব এর বুকের ভিতর ঢুকে যাবে।

আরে আস্তে ধর পরে যাবো তো আর এমন ভাবে ধরলি যেনো মনে হচ্ছে আমি বহু বছর পর যুদ্ধ শেষ করে ফিরলাম। (মেহরাব ও মাহিকে জড়িয়ে ধরে বলল)

আ,,আপনার হাত, একি এখনো রক্ত পড়ছে তো, কতখানি কেটে গেছে, এখন কি হবে,, কেঁদে বলল মাহি।

কি আর হবে সিনেমার নায়িকাদের মতো উড়না থেকে কাপড় চিড়ে আমার হাত বেঁধে দিবি।

মেহরাব ভাই এটা মোটেও মজা করার সময় নয়, চলুন তো দেখি কোনো ডাক্তারের দোকান খোলা আছে নাকি,, সব দোষ আমার কেনো যে ফুচকা খেতে আসলাম।

শোন বাড়িতে এ বেপারে কাউকে কিছু বলবি না কিন্তু,, আর কান্না থামা।

ক,,কেনো বলবো না, , আমার তো মন চাইছে আমি এখনি দৌড়ে গিয়ে মামি মণি কে বলে আসি।

যা বলছি তাই করবি এতো বেশি কথা বলিস কেনো?

মেহরাব মাহিকে নিয়ে চলে গেলো,, মেহরাব এর হাত ব্যান্ডেজ করে ওরা বাড়ি ফিরে গেলো,, মেহেরাব মাহিকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজেও বাড়ি ফিরে গেলো, মাহি অবশ্য যেতে চাইনি মেহরাব ওকে জোর করে দিয়ে এসেছে।

সকালে,,,,,,

ডয়িং রুম ভর্তি মানুষ একটু পর মেঘলা রাও চলে আসবে,, মেহরাব মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে আর রুপালি একদিকে কাঁদছে আবার মেহরাব এর হাতটা উল্টে পাল্টে দেখছে।

আহ মা সকাল সকাল কি শুরু করলে বলোতো এমন কিছুই হয়নি একটু কেটে গেছে এই আর কি।

একটু কেটে গেছে?? আমি সব জানি তোর ডাক্তার আঙ্কেল নিজে দেখেছে তোকে ডাক্তারের দোকানে ঢুকতে পরে ওখানে গিয়ে জিগেস ও করেছে যে তোর কি হয়েছে,, ওনারা বলেছে অনেকটা কেটে গেছে তিনতিনটা শিলায় দেওয়া হয়েছে, আর তুই বলছিস কিছুই হয়নি (কেঁদে বলল রুপালি)

ভ্যাগিস আঙ্কেল মাহিকে দেখিনি তাহলে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যেতো। (মনে মনে বলল মেহরাব)

এই তুই না মাহিকে নিয়ে বাইরে গেলি তাহলে হাত কাটলো কি করে??

আরে আমি ওকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার পর বাড়ি ফিরার সময় কিছু বখাটে ছেলেদের সাথে ঝামেলা হয়ে গিছিলো (ডাহা মিথ্যা কথা)

আজ থেকে আর মাহিকে পৌঁছে দেওয়া লাগবে না ও রাতে এখানেই থাকবে,, আর তুই ছেলেগুলোর মুখ দেখেছিস তো ভালো করে মেঘ আসলে ওকে বলবি সব কটাকে জেলে ঢুকাবো আমার ছেলের গায়ে হাত।

কিহ তুমি এর মধ্যে মেঘ কেও বলে দিয়েছো?? মা আমার কিছু হয়নি তুমি শুধু শুধু মেঘকে বলতে গেলে।

কি হয়ছে ভাইয়া একি এতো দেখছি ইয়াবড় ব্যান্ডেজ করা (মেঘলা)

হ্যাঁ এখন তুইও মায়ের মতো শুরু কর।

মেঘ আপনি একটা কেও ছাড়বেন না সব কটাকে ধরে জেলে পুরে দেবেন।কত বড় সাহস আমার ভাইকে মেরেছে(মেঘলা)

ধরবোই বা কি আমি জানি যারা মেহরাব কে মেরেছে তারা এতোক্ষণে একটাও আস্তো নেই সব কটাকে মেরে মেহরাব ছাতু বানিয়ে দিয়েছে, তাহলে আমি আর ধরে কি করবো,, আহারে এই প্রথম আমার কোনো আসামীর জন্য মায়া হচ্ছে (মেঘ মেহরাব এর দিকে তাকিয়ে মনে মনে কথা গুলো বলল)

সারারাত মাহির একটুও ঘুম হয়নি মেহরাব এর চিন্তায় কতটা কেটে গেছে যদি ইনফেকশন হয়ে যায়,,তাই সকাল সকাল উঠেই মাহি মেহরাব দের বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়েছে,, বাড়ির কাছে আসতেই মাহির জান বার হওয়ার উপক্রম এতো মানুষ কেনো মেহরাব ভাই এর কিছু হয়নি তো,, এই ভেবে মাহি ভয়ে ভয়ে ভিতরে গেলো।

মাহিকে দেখেই রুপালি মাহিকে ডেকে বলল।

তুইও আসছিস দেখ মা দেখ আমার ছেলেটার কি অবস্থা,, যার জন্য এমন হয়েছে তাকে আমি মোটেও ছাড়বো না।

রুপালির কথা শুনে মাহি ঢোক গিলে মেহরাব এর দিকে তাকালো,এই জন্যই মেহরাব ভাই আমায় কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করেছিলো,, আসোলে সব দোষ আমার, কেননা এতোসব তো আমার জন্যই হয়েছে, আমি যদি ফুচকা না খেতে চাইতাম তাহলে তো এমন হতো না,,, মাহির তাকানো দেখে মেহরাব মুচকি হাসি দিয়ে বলল

কিরে ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো আয় এখানে বস।

মাহি চোরের মতো এককোণে দাঁড়িয়ে আছে।

মেঘ আস্তে করে মাহির কাছে গিয়ে ফিসফিস করে জিগাস করলো।

কেসটা কি বলোতো আমি জানি তুমি সব কিছু জানো বেপারটা আমায় খুলে বলো তো।

মাহি ঢোক গিলে মেঘকে সব বলল।সব শুনে মেঘ একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল।

একথা যদি আমার শাশুড়ী জানতে পারে তাহলে কি হবে বুঝতে পারছো তো?? সোজা ফাঁসি তার এতো আদরের ছেলে তাও দশটা না পাঁচ টা না একটা মাএ ছেলে।

কেনো ভয় দেখাচ্ছেন ভাইয়া,, এভাবে বলবেন না তাহলে কিন্তু আমি ফাঁসির আগেই ধুম করে পড়ে মরে যাবো।

তা ওই ছেলেগুলোর কি অবস্থা?? শেষ??

একদম আবার জিগায়,, মনে হয় না ছয় মাসের আগে বেড থেকে উঠতে পারবে।

ও আমি আগেই জানতাম এমনটাই হবে,, ছেলেগুলো তো আর জানে না ওরা কার সাথে পাঙ্গা নিতে আসছিলো,,, তাহলে আর কি এখন তুমিও সাজা পাওয়ার জন্য রেডী হও আমি গেলাম,,, (এই বলে মেঘ সবাই কে বলে চলে গেলো)

মাহি চুপ করে এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলো তখনি রুপালি বলল।

কিরে তুই ওখানে ওভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে রান্না ঘর থেকে এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে আয়৷

জ,,জি মামনি যাচ্ছি।

না মাহি তোকে কোথাও যেতে হবে না, আর মা তুমিও পাগল হয়ে গেছো আমার কিছুই হয়নি,, আমি রুমে যাচ্ছি ফ্রেশ হবো আর মাহি তুই বই গুলো নিয়ে বাড়ি যা (এই বলে মেহরাব উপরে চলে গেলো)

মেহরাব যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই মাহিও মেহরাব এর রুমে গেলো বই আনতে, গিয়ে দেখলো মেহরাব নেই নিশ্চয়ই বাথরুমে মাহি মাথানিচু করে বিছানার উপর বসল।

কিছুক্ষণ পর মেহরাব এসে দেখলো মাহি মাথা নিচু করে বসে আছে আর কেমন যেনো কেঁপে কেঁপে উঠছে।

মেহরাব মাহির কাছে গিয়ে ওর পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখে বলল।কিরে কি হয়েছে?? এভাবে বসে আছিস কেনো??

মেহরাব এর কথা শুনে মাহি মেহরাব কে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে কেঁদে বলল,

আম সরি মেহরাব ভাই,, সব আমার জন্য হয়েছে আমি যদি তখন না বলতাম তাহলে এতো সব কিছু হতো না আম রিয়েলি সরি মেহরাব ভাই (কেঁদে বলল মাহি)

তুইও কি মায়ের মতো পাগল হয়ে গেছিস দেখি মুখটা দেখি কেঁদে কেটে একদম যাচ্ছে তাই করে ফেলছে পাগলি টা,,,, যেটা হওয়ার সেটা হবেই এতে কারো হাত থাকে না, আর তোর এতো চিন্তা করতে বলছে কে হম?? আর তোর না পরিক্ষা যা পরতে বস।

মেহরাব ভাই আপনি এখনো একথা বলছেন??

হুম বলছি,,

আপনি তো দেখছি বাসর ঘরেও বলবেন এই মাহি এখানে ঘোমটা দিয়ে কি করছিস যা পরতে বস,, আনরোমান্টিক এর বস্তা একটা (এই বলে মাহি বইগুলো নিয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো)

কি বলে গেলো মেয়েটা?? বাসর ঘর?? পাগলি একটা।

চলবে,,,,,,,???

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৩৯_পর্ব

.

দেখতে দেখতে কীভাবে যে ১ মাস কেটে গেলো বোঝায় গেলো না, আর মাএ দুই মাস পর মাহির পরিক্ষা,,, আর এ কদিনে মেহরাব মাহিকে যেনো একদম পড়ার সমুদ্রে ডুবিয়ে রেখেছে,, পড়তে পড়তে জীবন শেষ,, যাকে বলে পড়াময় জীবন।
মাহি দুপুরের দিকে পড়তে বসেছে এখন ঘুমানোর সময় কিন্তু মেহরাব ভাই বলেছে নো ঘুমানো অনলি পড়া আবার সন্ধ্যাই ওনাদের বাসায় যেতে হবে আহ কি কষ্ট এসব ভাবছিলাম আর পরছিলাম তখনি আম্মু এসে আমার পাশে বসে বলল।

এই শোন না আমার না অনেক খুশি খুশি লাগছে আহ কি যে করি, মন টা একদম ফুরফুরে লাগছে।

কেনো আম্মু তোমার এতো খুশি লাগছে কেনো??ওহ বুঝতে পেরেছি,, তাহলে কি আমার কোনো ভাই বা বোন আসতে চলেছে?(খুশি হয়ে বলল মাহি)

শোনো মেয়ের কথা মেরে একদম গাল লাল করে দিবো এতো বড় হলো অথচ বুদ্ধি নামানে ছাইও হলো না, আমি বলি কি এ বোঝে কি।

তাহলে কি হয়েছে?? তোমার এতো খুশির কারণ কি??

আরে আমার না আগের কথা খুব মনে পড়ছে,, মেঘলার বিয়েতে তোরা কত্ত মজা করলি, আমিও তোদের মতো মজা করেছিলাম ভাইয়ার বিয়ের সময়,, কি কি করিনি বল,, ভাইয়ার বন্ধুদের নাকানি চোবানি খাইয়ে ছিলাম আবার ভাইয়ার বাসর ঘরে আড়িও পেতে ছিলাম আমরা কয় বান্ধবী মিলে।

সত্যি?? তুমি এতো দুষ্ট ছিলে?? এই জন্যই মনে হয় আমি এতো দুষ্ট হয়েছি, আচ্ছা এখন বলো আগের মামার বিয়ের কথা এখন তোমার এতো মনে পড়ছে কেনো??

আরে কালকে তো ভাইয়ার বিবাহ বাষির্কী কতগুলো দিন কেটে গেলো,, আমার এখনো মনে পড়ে এই তো কদিন আগেই মেহরাব গুটিগুটি পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে আমায় ফুপি ফুপি বলে ডাকছে,,, আমার বিয়ের দিন সেকি কান্না ছাড়বেই না, আর মেঘলা তখন খুব ছোট,,,

ইস মামার বিয়ের আগে যদি তোমার বিয়ে হতো তাহলে আজকে আমি মেহরাব ভাই এর বড় হতাম তখন বোঝাতাম মজা বেটা কে।

আগে বিয়ে দিলেও তুই বড় হতি না,

কেনো কেনো??

কেননা আমার বিয়ের তিন বছর পর তুই হয়েছিস,, আসলে কি বলতো, আমি দুষ্ট হলেও তোর বাবাকে দেখে ভয় পেতাম কেমন গম্ভীর হয়ে থাকত, তোর বাবার সাথে তো কথায় বলতাম না তেমন,,,

আরে ব্যাস এতো দেখি বিয়ের পর প্রেম আহ,,,

পাজি মেয়ে,,,, শোননা আমারও না তোদের মতো মজা করতে ইচ্ছে করছে,, জানি সেদিন গুলি আর ফিরে আসবে না তবুও মন টা তো আর বুড়ো হয় না।

তাহলে এক কাজ করি চলো কাল তো মামা মামির বিবাহ বাষীর্কি তাই আমি ভাবছি কালকে মামা মামি কে আবার বিয়ে দেবো, আর তুমি মজা করবে,,আগের মতো করে বাসর ঘর ও সাজাবো আর রাতে তুমি আড়ি পাতবে কেমন হবে বলো।

সত্যি? তাহলে তো অনেক মজা হবে,, কিন্তু ভাই ভাবি রাজি হলেও মেহরাব রাজি হবে না ও এসব পছন্দ করে না,, কোনো দিন টিন পালনে বিশ্বাস করে না,,, কাল দেখবি ঠিকি ভাইয়া ভাবির জন্য উপহার আনবে কিন্তু এসব দিন উৎযাপন করে না,,।

আরে আম্মু তুমি টেনশন করো না তোমার ভাইয়ের ছেলেকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার তুমি আড়ি পাতার জন্য রেডি থাকো।

রাতে,,,,,

মাহি মেহরাব এর রুমে বসে মেহরাব এর জন্য অপেক্ষা করছে,, আজকে সারা দুপুর বিকেল ধরে মেহরাব এর দেওয়া পড়াগুলি সব শেষ করেছে শুধু মাএ মেহরাব কে ইমপ্রেস করার জন্য,, মাহি আজকে ভালো মেয়ে হয়ে গেছে,, চুপ করে পড়ার টেবিলে বসে আছে,, টেবিল থেকে মেহরাব এর চশমা (যেটা চোখে দিয়ে মেহরাব রাতে ল্যাপটপে কাজ করে) টা চোখে দিয়ে নাকের মাথায় রেখে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে, তখনি মেহরাব রুমে ঢুকল, রুমে ঢুকেই মাহির এভাবে অস্বাভাবিক ভাবে বদলে যাওয়া দেখে একটু অবাক হলো।

অন্যদিন তো আমার সারা রুমের বারোটা বাজিয়ে রাখে আজকে এতো ভদ্র হলো কীভাবে, হমম নিশ্চয়ই কোনো গোলমাল আছে (মনে মনে বলল মেহরাব)

মেহরাব রুমে এসে ব্যাগ আর ল্যাপটপ টা বিছানায় রাখতেই মাহি দৌড়ে এসে ব্যাগ আর ল্যাপটপটা হাতে নিয়ে বলল।

আরে আপনি এতো কষ্ট করে এটা এখানে রাখছেন কেনো, আমাকে দিন আমি ভালো করে রেখে দিচ্ছি।

মাহির কাজে তো মেহরাব এর হ্যার্ট এটাক হওয়ার উপক্রম চোখ বড় বড় করে মাহির দিকে তাকিয়ে মাহির কপালে হাত রেখে বলল।

তোর কি শরীল খারাপ নাকি??

কই নাতো।

তাহলে,, এটা কেমনে সম্ভব,,,হুম নিশ্চয়ই কোনো মতলব আছে, তা কাহিনীটা কী?? (কমরে হাত রেখে বলল মেহরাব)

ক,,,কীসের কাহীনি কোনো কাহিনি টাহিনি নেই আপনি যান ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি আপনার জন্য চা আনছি, আর হ্যাঁ আমি আপনার দেওয়া সব পড়া শেষ করে ফেলছি,,, এখন আমি গেলাম চা নিয়ে আসি আমার সুন্দর স্বামী ।

মাহির কথায় মেহরাব এবার সত্যি সত্যি হার্ট এর্টাক হয়ে যাবে, স্বামী?? কেসটা কি হঠাৎ এতো পরিবর্তন।

রাতে মেহরাব মাহিকে পড়াচ্ছিলো আর মাহি সমানে দুহাত কচলে যাচ্ছে ।

কিরে কিছু বলবি??

ইয়ে হ্যাঁ মানে না,

কি না না করছিস কি বলবি বল,, সময় নষ্ট করিস না,,

আসোলে কি বলেন তো মেহরাব ভাই কালকে না মামণি আর মামার বিবাহ বাষীর্কি।

তো??

কি তো তো করছেন, আমি বলছিলাম কি কালকে যদি আবার মামা আর মামনি কে বিয়ে দেওয়া হয় তাহলে কেমন হবে হুমম বলেন বলেন।

ভালো হবে, কিন্তু সেটা করা যাবে না,, ওকে, আব্বু আম্মুর বিয়ে হয়ে গেছে আর আমিও হয়ে গেছি আর নতুন করে বিয়ে দেওয়া লাগবে না, আর তোর না সামনে পরিক্ষা ভালো করে মন দিয়ে পড় (ধমকে বলল মেহরাব)

মেহরাব এর কথা শুনে মাহি বলল,,, কি হবে না হবে একশো বার হবে, এটা করার জন্য আমি এতো কস্ট করে পড়াগুলি কম্পলিট করলাম আপনার সাথে এতো ভালো করে কথা বললাম আর আপনি কি না আমার সব প্লান নষ্ট করে দেবার ধান্দায় আছেন??(রেগে বলল মাহি)

হুমম এবার বুঝলাম তোর এতো খাতির দারির মানে কি,, তাই তো বলি এতো যত্ন কেনো, এবার লাইনে আসছো বাবু।

মেহরাব এর কথায় মাহির ঢোক গিলে মনে মনে বলল।ইস রাগের মাথায় সব বলে দিলাম আসোলে আমিও না আস্তে একটা গাধা।

হুম ঠিক ধরেছিস তবে ওটা গাধা নয় গাধী হব।

প্লিজ মেহরাব ভাই এমন করেন কেনো,, একটু আনন্দ করলে কি হয়,, ওকে আমি সব পড়া শেষ করে তবে আসবো আর বাইরের কাউকে বলবো না শুধু আমরা আমরাই ঘরের মানুষ আর মেঘ ভাইয়া মেঘলা আপু প্লিজ।

না, এতো বকবক না করে পড়তে বস।

আমার পড়া হয়ে গেছে আমি বাড়ি যাচ্ছি (রেগে কথাগুলো বলে মাহি উঠে চলে আসতে নিলেই মেহরাব হাত ধরে বলল)

এতো রাগ?? আচ্ছা ঠিক আছে আনন্দ কর তবে পড়া সব শেষ করে,, আর বেশি লাফালাফি করবি না।

থাক লাগবে না,, দরকার নেই (অভিমানের সরে বলল মাহি)

মেহরাব পিছন থেকে মাহিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমো দিয়ে বলল।

এতো অভিমান কেনো আমার বউটার হুমম,,, আমি তো বলছি কালকে আমি নিজে আব্বু আম্মু কে আবার বিয়ে দেবো ভাবা যায় এই বয়সে ছেলে হয়ে বাবা মার বিয়ে দেখবো আহ।

মেহরাব এর কথায় মাহি হেসে পিছন ঘুরে মেহরাব এর গাল দুটো টিপে দিয়ে বলল।

আপনি তো একটা কিউট বর,, তবে রাগি আর লম্বার উপর খাম্বাও হিহিহি এটা বলেই মাহি এক দৌড়ে চলে গেলো।

এই কি বললি দাঁড়া বজ্জাত মেয়ে,

চলবে,,,,,,???

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৪০_পর্ব

.
সকাল সকাল মেঘলা চলে আসছে, মেঘের একটু কাজ আছে তাই আটকে গেছে পরে আসবে,, সারা বাড়ি গোছানো হচ্ছে,, আর কিছু ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে সবাই যে যার মতো কাজ করছে আর ডয়িং রুমের সোফায় মেহরাব গালে হাত রেখে বসে সবটা দেখছে,, আর মাঝে মাঝে ল্যাপটপ দেখছে, আজকে ওর মা কে দেখতে আসবে, মানে মাহির মা যেহেতু মেহরাব এর বাবার এক মাএ বোন তাই আজকে বর পক্ষ থেকে মেহরাব এর বাবা সহ মাহির মা বাবা মাহি আর সুহান মিলে মেহরাব এর মা কে দেখতে আসবে,, সবাই খুব এক্সাইটেড,,,,।

কিরে ভাইয়া তুই এখনো বসে আছিস কেনো যা তৈরি হয়ে নে ওরা তো এখুনি চলে আসবে।

ওরা কারা??

আরে বরের বাড়ি থেকে তো সবাই চলে আসবে।

তাতে কি আর ওরা কি পর নাকি সবাই তো চেনা লোক এতে আবার নতুন করে তৈরি হওয়ার কি আছে।

তুই তো দেখছি কিছুই বুঝিস না, আমার তো হেব্বি খুশি লাগছে এই সবটা মাহির জন্য সম্ভব হয়েছে ওফ ভাবা যায় আমরা মা বাবার বিয়ে দেখবো আহ,, এই তোর এক্সাইডেট লাগছে না?? আমার তো হেব্বি আনন্দ লাগছে।

সবার মতো তোরও মাথাটা গেছে,, আর আমার মোটেও এক্সাইটেড লাগছে না।

তোর লাগা লাগবেও না, যা তো যলদি তৈরি হয়ে নে।

কপাল, আমার ফুল ফ্যামিলি পাগল হয়ে গেছে, একটা বাচ্চা মেয়ের কথায় সবাই তাল দিচ্ছে,, ওদের আর কি বলব আমি নিজেই তো ওর কথা শুনছি, কি আর করার,,, কথা গুলো বলে মেহরাব উপরে চলে গেলো।

বেশ কিছুক্ষণ পর, মাহি মাহির মা মাহির বাবা আর মেহরাব এর বাবা আসলো।

আরে আসুন আসুন বসুন, তা আসতে কোনো সম্যসা হয়নি তো??(মেঘলা)

না না কোনো সম্যসা হয়নি তা তুমি কে মা??(মাহির মা)

আমি হলাম কণের মেয়ে।

ওহ আচ্ছা,, তারপর সবাই সোফায় বসল আর অপর সোফায় মেঘলা আর রুপালি বসে আছে কিছুক্ষণ পর মেহরাব এসে রুপালির সোফার হাতার উপর বসল।

তা এনি কে??(মেহরাব কে উদ্দেশ্য করে বলল মাহি)

জি আমার ছেলে।

ওহ বাহ ভালো তো,, তা হবু মামির দেখি রেডিমেট মেয়ের সাথে রেডিমেট ছেলেও আছে (মাহি)

মাহির কথায় সবাই মুচকি মুচকি হাসতেছে, আর মেহরাব ভ্রু কুঁচকে মাহির দিকে তাকিয়ে আছে,, তখনি মেঘ দরজার সামনে এসে বলল।

ভিতরে আসতে পারি??

এনি কে?(মাহি)

জি আমার বর(মেঘলা)

বাবা হবু মামির রেডিমেট মেয়ের বরও আছে দেখছি। (মাহির কথা শুনে মেঘ চোখ বড় বড় করে মাহির দিকে তাকিয়ে আছে আর ওদিকে মেঘলার হাসতে হাসতে জান যায় যায় অবস্থা)

মেয়েটা পারেও বটে,,।

আচ্ছা বলছি কি আপনাদের ওয়াশরুম টা কোথায় একটু বলবেন (মাহি)

হ্যাঁ আমি বলছি.. (মেঘলা)

না না তোকে এতো কষ্ট করতে হবে না তুই বরং মায়ের কাছে থাক আমি ওনাকে নিয়ে যাচ্ছি, আসুন আপনি আমার সাথে আসুন (মেহরাব)

তারপর মাহি মেহরাব এর পিছন পিছন চলে গেলো,, মেহরাব ওর রুমে ঢুকেই মাহিকে সামনে থেকে কমর জরিয়ে ধরলো।

একি হবু মামির রেডিমেট ছেলে এসব কি করছেন, এভাবে একটা অচেনা অজানা মেয়েকে জরিয়ে ধরেছেন কেনো?? আপনি তো দেখছি বড়ই অসভ্য ।

আসোলে কি বলুন তো আমার না, আপনার মতো এমন কিউট গুলুমুলু আর পিচ্চি মেয়ে দেখলেই নিজের উপর কন্টোল থাকে না শুধু জরিয়ে ধরে চুমো দিতে ইচ্ছে করে (মাহির গালে চুমো দিয়ে বলল মেহরাব)

আরে হবু মামির রেডিমেট ছেলের অভ্যাস দেখি বড়ই খারাপ, না না এখানে সম্বন্ধ করা যাবে না,, যে কোনো সময় আমার সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে (মজা করে বলল মাহি)

এখানে যদি সম্বন্ধ না করা হয় না?? তাহলে হবু বাবার রেডিমেট ভাগ্নি কে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবো (মাহিকে আরো শক্ত করে ধরে দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে বলল)

আরো এতো দেখি রীতিমতো হুমকি দিচ্ছে, এতো বড় সাহস হবু মামির রেডিমেট ছেলের??

হুমম তাইতো সাহসের দেখেছেন কি,, দেখাবো নাকি সাহস??

হুম আমিও দেখি, হবু মামির রেডিমেট ছেলের কত সাহস।

মাহির কথা শুনে মেহরাব মাহির কে ছেড়ে দিয়ে দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে বা হাত কমরে দিয়ে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ডান হাতটা মাথার পিছনে দিয়ে ওকে নিজের দিকে নিয়ে নিলাম।

একি করছেন হবু মামির রেডিমেট ছেলে (কাঁপা কাঁপা গলায় বলল মাহি)

উমম সাহস দেখাচ্ছি,, এই বলে মাহিকে আরো কাছে এনে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলাম। সাথে সাথে মাহি মেহরাব এর পিছনের শার্ট শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বড় বড় করে ফেলল।

আমি ভাবতেও পারিনি ওনি এমনটা করবেন, ওনি খুব সফলি ভাবে আমায় কিস করছেন আমি আবেশে যখনি চোখটা বন্ধ করতে যাবো তখনি মেঘ ভাইয়া দরজার ওপাশ থেকে বলল।

কিরে মেহরাব আমার হবু শশুরের রেডিমেট ভাগ্নির সাথে একি রুমে এতোক্ষণ ধরে কি করছিস??

মেঘের গলা পেতেই ওনি তড়িত গতিতে আমাকে ছেড়ে দূরে দাঁড়িয়ে একবার আমার দিকে তাকিয়ে ওনার বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে আমার ঠোঁট টা মুছে সেই একি আঙুল দিয়ে নিজের ঠোঁট টা আঙুল দিয়ে মুছে দরজা খুলে দিলো।

ওদিকে বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো আর তোরা এখানে কি করছিস??

আসোলে হবু বাবার রেডিমেট ভাগ্নিকে বিয়ে কি আর বাসর কি সেটা বোঝাচ্ছিলাম।

শুধু বোঝাচ্ছিলি নাকি হাতে কলমে করিয়ে দেখাচ্ছিলি।

তার আর সময় পেলাম কোথায়,, তখনি তো তুই কাবাব মে হাড্ডি হয়ে চলে আসলি।

৷সত্যি এদুই বন্ধুর একদম লজ্জা নেই নির্লজ্জ দুজনেই,, ওনাদের দুজনের কথায় আমার তো লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে,, কোনো রকমে ওনাদের বলে নিচে চলে আসলাম।

সন্ধ্যাই বিয়ে হয়ে গেলো আজকে রাতে আমরা সবাই এখানেই থাকবো, মানে মা বাবা আমি সুহান মেঘলা আপু মেঘ ভাইয়া সবাই।

রাতে,,,

আর ইউ সিরিয়াস ফুপি তুমি এই বয়সে বাবা মার রুমে আড়ি পাতবে?? তোমার বয়স কমছে নাকি বাঁড়ছে?? আর কয়দিন পর তুমি শাশুড়ী হবে (,মেহরাব)

ধুর বাদদে তো তুই এসবের কি বুঝবি সবাই কি তোর মতো কাষ্ঠা নাকি,, কি কপাল আমার,, তোর মতো একটা কাষ্টা জামাই হবে, এখন সর তো আমাকে আমার কাজ করতে দে।

আমিও তোমার সাথে যাবো মা আমি ও আড়ি পাতবো (মাহি)

একদম না, তুই এখন পড়তে বসবি সারাদিন অনেক পাকনামি হয়ছে এখন আর কোনো কথা নয় চল আমার সাথে আর মেঘ তোর বউকে নিয়ে যা একটু কাজ টাজ করা দিনদিন কেমন মুটকি হয়ে যাচ্ছে (মেহরাব)

ভাইয়া আমি মোটেও মুটকি হচ্ছি না ওকে আর আমার শাশুড়ী অনেক ভালো আমায় তেমন কাজই করতে দেয় না,, ভাবছি আমি কয়দিন এখানেই থাকবো, কেবল বাবা মায়ের বিয়ে হলো আরো কয়েক দিন মজা করি (মেঘলা)

এই মেঘ তোর বউকে নিয়ে সকালে বাড়ি যাবি,, কাজ কর্ম নেই শুধু আড্ডা আর তার সাথে এটা হয়েছে, চল পড়তে বসতে হবে, এই বলে মেহরাব মাহিকে নিয়ে চলে গেলো।

এই যে আপনিও চলেন,, আপনার ভাই তো খুব বড়বড় কথা বলল যে আমি বউকে শাসন করতে পারি না,,, ওনি নিজে বউ দেখে ভয় পাই আবার আমাকে বলছে,, আরে আমি হলাম বীর পুরুষ হা হা হা। (কথাটা বলে মেঘ পাশে তাকিয়ে দেখলো মেঘলা মুখ চেপে হাসছে আর মাহির মা হা করে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে)

আরে রে আমি তো ভুলেই গিছিলাম, এখানে ফুপি শাশুড়ী আছে,, আব ইয়ে ম,,মেঘলা আমি রুমে যাচ্ছি, (এই বলে মেঘ চলে গেলো,, আর মেঘলাও হাসতে হাসতে চলে গেলো)

চলবে,,,,,??