ভালোবাসি বুঝে নাও ২ পর্ব-৮+৯+১০

0
397

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৮_পর্ব
.
এতো সুন্দর করে সাজুগুজু করে মেহরাবদের বাসায় গেলাম যাতে মেহরাব এর সাথে ভার্সটিতে যেতে পারি কিন্তু ও কি করলো আমাকে রেখেই চলে গেলো,, ধূর ভালো লাগে না,, রাগে আমার মাথা ছিড়ে যাচ্ছে একা একাই রাস্ত দিয়ে বকবক করতে করতে যাচ্ছিলাম তখনি এক খবিশ আমার পুরো ড্রেস নষ্ট করে দিলো।(মীরা)

আমি সত্যি দেখতে পাইনি আম রিয়েলি সরি(নীহাল)

মীরা কিছু বলছেনা শুধু বুকের সাথে দুহাত গুজে ভ্রু কুঁচকে নেহাল এর দিকে তাকিয়ে আছে।

কি?? ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?? আমি সরি বলছি তো (নেহাল)

মীরা কিছু না বলে সোজা নেহাল কে জোরে ধাক্কা দিলো আর নেহাল৷ তাল সামলাতে না পেরে কাঁদার মধ্যে পরে গেলো,(আসোলে আচমকায় ধাক্কা মারায় নেহাল পরে গেছে, নয়ত একটা শক্ত সাম্যর্থ ছেলেকে ফেলে দেওয়া তো দূর নড়ানোও কষ্ট)

নেহাল ভাবতেও পারিনী মীরা এমন করবে,,, তাই রেগে বলল।

আর ইউ ম্যাড?? কি করলেন এটা??(রেগে বলল নেহাল)

ওহ সো সরি আমি কি করলাম এটা, আমি তো আপনার পুরো ড্রেস নষ্ট করে দিলাম, সত্যি খুব খারাপ এটা (তাচ্ছিল্য করে বলল মীর) কী কেমন লাগছে?? আমারো ঠিক এমনি লাগছে।

মানে???

মানে হলো রাস্তা দিয়ে চলার সময় এখন থেকে দেখে চলবেন নয়ত পরবর্তী তে এর থেকেও খুব খারাপ কিছু হবে, বুঝেছেন বেটা খবিশ একটা(এই বলে মীরা চলে যেতে লাগল)

এদিকে নেহাল তো রেগে পুরাই বোম হয়ে আছে, রাস্তায় বসেই, দুহাত ভর্তি কাঁদাপানি নিয়ে ওটা মীরার গায়ে ছুঁড়ে মারলো,, পিছন থেকে মারাই মীরা চুলে প্লাস পিছ টাই একদম কাঁদায় মাখামাখি হয়ে গেলো।

এটা কি হলো??(মীরা থেমে নেহাল এর কাছে এসে রেগে বলল)

যা হওয়ার তাই হলো,, সমান সমান আপনি দেখতে যতটা ভালো আপনার ব্যবহার ততটাই খারাপ(নেহাল উঠে দাড়িয়ে বলল)

আপনাকে তো আমি,, এই বলে মীরা নেহাল এর দিকে তেড়ে আসতে গেলে পা পিছলে নেহাল এর উপর পড়ে গেলো, আর নেহাল মীরাকে নিয়ে কাঁদা পানি তে পরে গেলো,, দুজনেই কাঁদায় একেবারে ভূত হয়ে গেছে,রাস্তায় পথচারী মানুষ ওদের দিকে তাকিয়ে আবার যে যার কাজে চলে যাচ্ছে ,দুজনেই রাস্তায় কাঁদা পানির মধ্যে ওঠে বসে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলল কেননা দুজনকেই একদম কাঁদার ভূত মনে হচ্ছে।

তখনি আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি এলো,,যাকে বলে ঝুম বৃষ্টি,,, নেহাল মীরা দুজনেই দুহাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি দিয়ে নিজেদের গায়ের কাঁদা ধূতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।

,,,,,,,

কী বেপার ভাই আজকে এতো জরুরি তলব করলেন যে, কোনো দরকারী কথা আছে নাকি??(মাহির বাবা)

কেনো দরকারী কথা ছাড়া কি ডাকতে পারি না???(মেহরাব এর বাবা)

কি যে বলেন ভাই আপনার যখন ইচ্ছে আপনি তখনি ডাকতে পারেন আমায়।

আচ্ছা কাজের কথায় আাসা যাক তাহলে,, মেহরাব তো এখন কাজ করছে, পুরো অফিস টাও সামলাই আমি ভালছিলাম এখন সময় হয়েছে ওদের চার হাত এক করে দেওয়ার,, তুমি কি বলো।

আমি আর কি বলবো এটা তো সেই কবেই ঠিক করা রয়েছে, তবে মাহি এখন ছোট কেবল ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে,, আমি বলছি কি ও এইচএসসি টা শেষ করে না হয়,,

হুম তুমি ঠিকই বলেছো,, বিয়েটা না হয় আরো ২ বছর পরে হবে তবে আমি চাচ্ছি ওদের বিয়েটা এখন পরায়ে রাখি মানে কাবিন করে রাখি তারপর ২বছর পরে অনুষ্ঠান করে মাহি কে ঘরে তুলবো,, এর আগে ও মন দিয়ে পড়াশুনা করুক।

জি ভাই আমি আপনার সাথে একমত,,

আচ্ছা তাহলে এই কথায় থাকলো।

হুম, এখন তাহলে আমি উঠি??

না আগে খেয়ে তারপর যাবে।

কিন্তু।

কোনো কিন্তু নয়,, আসুন তো শুধু যায় যায় করেন (রুপালি)

রাতে,,,,

কিহ,,,কিহ,,কিহ,,,বিয়ে?? নাহ আমি কিছুতেই এ বিয়ে করতে পারবো না, তোমরা কীভাবে পারলে মা আমার সাথে এমন টা করতে, এখন আমি কি করবো (কান্নার এ্যাকটিং করে বলল মাহি)

ওভার এ্যাকটিং কম কর,, আর এখানে চুপ করে বস(মাহির মা)

ধরা পরে যাওয়াই মাহি চুপ করে গিয়ে মায়ের পাশে বসে পরল,,,

আরে এখনই তো আর বিয়ে হচ্ছে না,, ভাইয়া বলছে তোর এইচএসসি পরীক্ষার পর বিয়ে হবে এখন শুধু কাবিন করে রাখা হবে,, মেহরাব ও তাই চাই (মাহির মা)

মেহরাব ভাই ও তাই চাই মানে?? ওনি চাইলে কি আর না চাইলেই বা কি আমি কি ওনার কথা মতো বিয়ে করবো নাকি??(মাহি)

না ওর কথামতো বিয়ে করবি না শুধু বিয়ের পর ওর কথামতো চললেই হবে।

কেনো আমি ওনার কথা শুনবো কেনো,, আমি আমার বরের কথা শুনবো৷ (মাহি)

আরে গাধী ওই তো তোর বর,, ওর সাথেই তো বিয়ে ঠিক করা হয়েছে।

মাহির মায়ের কথাশুনে মাহি চোখ বড় বড় করে লাফ দিয়ে বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো আর মনে মনে বলল।

শুধু গাল টিপেছি বলেই আমাকে বিয়ে করতে চাইছে যদি কৌতুহল বসত একটা চুমো খেতাম তাহলে কি করতো আল্লাহ জানে শুকনো একটা ঢোক গিলে।

কিরে ওমন দাঁড়িয়ে গেলি কেনো?? মনে হচ্ছে তুই আজকে জানলি,,, অবশ্য তোকে আর কি বলবো তুই তো জানতিসই না,,

আচ্ছা মা তোমরা হঠাৎ করে ওনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলে কেনো??(বসে বলল মাহি)

আরে হঠাৎ করে ঠিক করবো কেনো,, এটা তো সেই কবে ঠিক করা রয়েছে,, সবাই জানে শুধু তুই ছাড়া।

কিহ?? তারমানে মেহরাব ভাই ও জানে??

হুম জানে তো।

কিহ খারাপ লোক একেবারে ছোপা রুস্তম সব জেনেও আমাকে কিছুই বললো না??(মনে মনে বলল মাহি)

আচ্ছা বস এখানে এতো রাগ করছিস কেনো মেহরাব কী খারাপ ছেলে নাকি?? কত্ত ভালো ছেলে,,,কিন্তু আমি বুঝি না যে ছেলে ছোট বেলায় এত্ত দুষ্ট ছিলো সে বড় হয়ে এতো শান্ত হয়ে গেলো??(মাহির মা)

কি বলো মা মেহরাব ভাই দুষ্ট ছিলো?? কই দেখে তো মনে হয় না(মাহি ওর মায়ের কাছ ঘেঁষে বসে বলল)

হুম দুষ্ট ছিলো তো,, আর তুই ছিলি একেবারেই আলাভুলা মানে নরম আর কি।

আম্মু (কিঞ্চিৎ রেগে বলল মাহি)

আরে রাগ করছিস কেনো,,মেহরাব ছোট বেলায় দুষ্ট ছিলো এখন বড় হয়ে শান্ত ভদ্র হয়েছে আর তুই ছোট বেলায় নরম ছিলি আর বড় হয়ে দুষ্টর রানী হয়েছিস,,,, তবে ছোট বেলায় তুই কিন্তু মেহরাব এর নেওটে ছিলি,, সব সময় ওর পিছে ঘুরঘুর করতি আর মেহরাব শুধু তোকে কাঁদাতো,,ও যা বলত তুই তাই করতি।

কি বলো মা সত্যি??

হুম সত্যি তো, একবার কি হয়েছিলো বলত,,

চলবে,,,,,,,?

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#৯_পর্ব
.
একবার কি হয়েছিলো বলত,, তুই তখন খুব ছোট আর মেহরাব একটু বড় তো একদিন আমি মেহরাব কে মুড়ি মাখিয়ে দিয়েছিলাম ঝাল পিয়াজ দিয়ে, তখন তো আমরা গ্রামে থাকতাম, আমি ভাবী সবাই একসাথে আর তোর মামা আর তোর আব্বু শহরে কাজের জন্য থাকত, তোর আব্বুর যেহেতু মামা বাবা ছিলো না আর ওর কোনো ভাই বোনও ছিলো না তাই তোর নানু আমাকে আর তোকে তার কাছেই রেখেছিলো,,, তো মেহরাব চেয়ারে বসে মুড়ি মাখা খাচ্ছিলো আর তুই তো অনেক ছোট ছিলি তো তুই মেহরাব এর সামনে গিয়ে দু হাত পেতে বলছিলি।

মেহলাব(মেহরাব) বাই (ভাই) মেহলাব বাই আমাক এত্তটু মুলি দাও।

তো মেহরাব তখন কি করেছিলো বলত??

কি করেছিলো আম্মু??

মেহরাব অনেকগুলো মরিচ মুড়ি মাখার ভিতর থেকে খুঁজে ওগুলো নিচে দিয়ে উপরে অল্পকিছু মুড়ি দিয়ে তোকে দিয়েছিলো আর তুই সেটা খেয়ে সেকি কান্না তবুও তুই বাড়ির মধ্যে কাঁদিস নাই যদি আমি বকি সেই ভয়ে মুখ চেপে ধরে রাস্তায় গিয়ে চিল্লায়ে কেঁদেছিলি পরে অবশ্য মেহরাব তোকে অনেকগুলো চকলেট ও কিনে দিছিলো (হাসতে হাসতে বলল মাহির মা)

কিহ?? ওনি ছোট বেলায় আমায় এতো জালিয়েছে?? আমি ছোট ছিলাম বলে কিছু বলিনি কিন্তু এখন এর সব হিসেব গুণে গুণে তুলবো,, আপনাকে এমন জব্দ করবো না কেঁদেও কুল পাবেন না (মনে মনে বলল মাহি)

তুই যখন আমার পেটে ছিলি তখন মেহরাব কি বলত জানিস??

কি বলত??

বলত ফুপি তোমার যদি ছেলে হয় তাহলে মেঘুর সাথে বিয়ে দেবো আর মেয়ে হলে আমিই বিয়ে করবো।

কিহ?? ওই বয়সে এই কথা বলত?? কি অবস্থা (মাহি)

ও আমায় খুব ভালোবাসত সব সময় তো আমার কাছেই থাকত,, আর যখন জ্বর আসত তখন জ্বরের ঘোরে বলল,, ওলে ফুপি লে আমি আল পানিতে নামবো না ওরে আমি আর গোসল কলবো না রে ওরে,, আমার নাক বন্ধ হয়ে গেলো লে… জ্বরে আবুল তাবুল বকত,, পরে যদি ওকে এসব বলতাম তাহলে জীবনে বিশ্বাস করত না৷

মাহির মায়ের কথা শুনে মাহি সোফার উপর হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে,,, কি বলো মা ওনি এভাবে বলত??(হাসতে হাসতে)

হুমম,,,আচ্ছা অনেক গল্প হয়েছে এখন সর আমায় রান্না করতে হবে, সন্ধ্যা বেলায় আবার ও বাড়ির সবাই আসবে (এই বলে মাহির মা চলে গেলো)

এবার দেখবেন মেহরাব বাবু এই মাহি কি জিনিস, আমাকে জ্বালানো না?? এবার বোঝাবো মজা (একটা শয়তানি হাসি দিয়ে)

,,,,,সন্ধ্যার সময়,,৷

ধুর ভালো লাগে না ওনি এখনো আসছে না কেনো, কতদিন দেখিনা ওনাকে, (বিছানায় শুয়ে একা একাই বলছিলো মেঘলা তারপর নিজেই নিজের মাথায় একটা চাটি মেরে বলল)

আমিও না পুরাই একটা পাগলা ওনি কালকেই কেবল গেলো আর এরি মধ্যে আমি ওনাকে মিস করা শুরু করেছি??(মনে মনে বলল মেঘলা)

কিরে এই ভর সন্ধ্যে বেলায় এমন গাপটি মেরে শুয়ে আছিস কেনো?? তোর কি কোনো কান্ড ঙ্গান নেই?? যখন তখন শুয়ে পরিস একটু তো খেয়াল রাখা উচিত যে আমি কোন টাইমে শুয়েছি, এই সন্ধ্যা বেলায় কেউ শুয়ে থাকে?? বিয়ের পর শুশুর বাড়ি গিয়ে কি করবি?? এখন উঠ উঠে রেডি হয়ে নে ও বাড়ি যেতে হবে (আরো কিছু কথা বলে রুপালি চলে গেলো)

আর মেঘলা বিছানার উপর বসে এখনো ঝিমাচ্ছে আর বিরবির করে বলছে।

বলো বলো এখনি বলে নাও বিয়ের পর তো আর বলতে পারবে না যতই হোক পুলিশের বউ বলে কথা,, ধ্যাত কি সব বলছি আমি (এই বলে বাথরুমে চলে গেলো)

সবাই মুটামুটি চলে আসছে শুধু মেহরাব বাদে ওর আসতে একটু দেরি হবে,,, সবাই ডয়িং রুমে বসে গল্প করছিলো তখনি কলিং বেল বেজে উঠল।

ওই যে মেহরাব আসলো বুঝি, মাহি যা তো দরজাটা খুলে দিয়ে আয় (মাহির মা)

মাহি যেনো এই অপেক্ষায় ছিলো দৌড়ে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ালো তারপর একটু ভাব নিয়ে দরজা খুলে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,

কিরে ওমন হ্যাবলার মতো সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে সামনে থেকে সর (মেহরাব)

মাহি মেহরাব কে ক্ষেপানোর জন্য ছোট বেলায় মেহরাব জ্বর আসলে যেভাবে কথা বলত সেভাবে বলল।

কেনো লে ওলে ফুপি লে আমি আল গোসল কলবো না লে ওলে,, তোতলা একটা (এই বলে মাহি হাসতে হাসতে দৌড়ে চলে গেলো)

মেহরাব মাহির কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো মাহির দিকে তারপর ধপধপ পা ফেলে ভিতরে গিয়ে সোজা রান্নাঘরে গিয়ে মাহির মা কে বলল।

তুমি এমনটা কি করে করতে পারলে ফুপি?? আমার সাথে এটা না করলেও পারতে (মেহরাব)

মাহির মা মেহরাব এর কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না তাই বলল।

মানে?? আমি আবার কি করলাম??

কি করোনি তাই বলো, তুমি মাহি কে কি বলেছো?? ছোট বেলায় সবাই ওভাবে কথা বলে তাই হয়ত আমিও বলেছি তাই তুমি ওগুলো মাহিকে বলেছো ও এখন আমার পেস্টিজ পানচার করে দিচ্ছে,, সবাই কে এখন এসব বলে বেড়াবে আর আমার মান সম্মানের ফালুদা বানাবে,, তুমি আমার নিজের ফুপি হয়ে আমার সাথে এমন মীর জাফর গীরি করতে পারলে(হতাশার সুরে বলল মেহরাব)

মেহরাব এর কথা শুনে মাহির মা একটু হেসে বলল

আরে ওটাতো আমি কথায় কথায় বলে ফেলেছি,, এখন ওটা নিয়ে যে মাহি তোকে ক্ষেপাবে তা তো আর আমি জানতাম না। আর ক্ষেপালেই বা কি তোরই তো বউ।

মেহরাব কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বলল,, হুম ঠিকি বলেছো ফুপি আমারি তো বউ।

,,,সেদিন সন্ধ্যাই ছোট খাটো একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাহি আর মেহরাব এর কাবিন হয়ে গেলো, তবে কাবিন হওয়ার আগে যে যেমন ছিলো এখনও তেমনি থাকবে একেবারে দুবছর পর বড় অনুষ্ঠান করে মাহিকে ঘরে তুলবে মেহরাব এমনি কথা হলো।

,,,সকালে,,

কি বলো মা এতো কিছু হয়ে গেলো আর তুমি আমায় এখন বলছো?? কেনো?? (রেগে চিৎকার করে বলল মীরা)

আরে বেবি কুল আমিও তো জানতাম না সকালে মেহরাব এর মা ফোন দিয়ে আমাকে জানালো,, তবে তুমি চিন্তা করো না আমি দেখছি কি করা যায়,৷ শুধু কাবিন হয়েছে তো কি ওটা ভাঙ্গাতে বেশি সময় লাগবে না (মীরার মা)

তবুও মা আমি ভাবতে পারছি না ওই ছোট্ট মেয়েটার কাছে আমি এভাবে হেরে গেলাম??

নো বেবি তুমি হারোনি আসল খেলাতো এখনো বাকি, তুমি বেশি টেনশন করো না, যাও ভার্সিটীতে যাও (মীরার মা)

মীরা কোনো কথা না বলে রেগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো।

,,মেহরাব পরম সুখে বিছানায় শুয়ে ঘুমাচ্ছিলো তখনি মনে হলো যেনো গায়ে বৃষ্টি পরছে কিন্তু কীভাবে?? তাই ধরফরিয়ে উঠে বসে ঘুমের ঘোরেই বলল।

এই কে লে (আসোলে হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠেছে তো তাই কথা একটু বেঁধে গেছে)

মাহি মেহরাব কে জ্বালাবে বলে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এ বাড়ি চলে এসেছে তারপর মেহরাব এর রুমের সামনে গিয়ে দেখলো রুমের দরজা খোলা তাই চুপিচুপি গ্লাসে পানি নিয়ে মেহরাব এর গায়ে ছিটিয়ে দিলো। পরে মেহরাব এর ওমন কথা বলা শুনে মাহিও মজা করে বলল।

এই আমি লে, কেনো লে কিছু বলবেন নাকি লে(হাসতে হাসতে বলল মাহি)

তুই?? তোকে তো আজকে আমি (এই বলে মেহরাব বিছানা থেকে নেমে মাহিকে তাড়া করলো মাহিও দৌড়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল)

ওলে বাবা লে, বাঁচাও লে,,

চলবে,,,,,,,??

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও🍁🍁
#পর্ব_১০
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
.
মাহি গিয়ে দেখলো ওর সখের ফুলগুলো নিচে পড়ে আছে আর তার উপর পা দিয়ে মীরা দাঁড়িয়ে আছে।

অ!সো সরি মাহি আমি দেখতে পাইনি,,, এখানে আমার ব্যাগটা রাখতে গিয়ে পড়ে গেছে(আসোলে মেহরাব মীরাকে রুম থেকে চলে যেতে বলার পর মীরা দরজার সামনে কান পেতে ওদের কথা শুনছিলো আর যখনি ফুলগুলোর কথা শুনলো তখনি রুমে এসে ফুলগুলো ইচ্ছে করে নষ্ট করে দিলো যাতে মাহির মন খারাপ হয়,,, পারলে তো তোর হাতের ওই চুড়ি গুলোও আমি মরমর করে ভেঙে দিই,, মনে মনে বলল মীরা)

তুই এই ঘরে কি করছিস??(মেহরাব)

তুমিই তো বললে আমায় এরুমে থাকতে তাই চলে আসলাম।

তুই বলছিস তুই ইচ্ছে করে ফুলগুলো ফেলিসনি ভুল বসত পরে গেছে তাহলে ফুলগুলো ওমন থেতলে গেলো কি করে মনে হচ্ছে কেউ পা দিয়ে ফুলগুলো মারিয়েছে (মেহরাব)

মেহরাব এর কথাশুনে মীরা থতমত খেয়ে গেলো কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না৷।।

আ,,,আসোলে কি বলো তো আমি এটা পরার আওয়াজে ভয় পেয়ে গিছিলাম তাই লাফাই উঠছিলাম তখনি মনে হয় ফুল গুলো পায়ের নিচে পরে ছিলো আমি দেখীনি(উফ বাঁচলাম মনে মনে)

মেহরাব কিছু বলতে যাবে তখনি দেখলো মাহি একমনে ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে এখনি কত খুশি ছিলো মেয়েটা কত হাসতেছিলো আর এরি মাঝে কি হয়ে গেলো। কত সখের ফুলগুলো এই ফুলগুলোর জন্য কতকিছু করল আর শেষ মেষ কি হলো। মাহি রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। মেহরাব ও কিছুক্ষণ মীরার দিকে রেগে তাকিয়ে চলে গেলো।

ঠিক এভাবেই তোর সখের জিনিস গুলো আমি নষ্ট করে দেবো তোর প্রিয় জিনিস গুলোও তোর কাছ থেকে কেরে নেবো মিলিয়ে নিস (মনে মনে বলে ফুলগুলো পা দিয়ে আরো বেশি করে মারিয়ে দিলো)

বারান্দার এক কোনে চুপচাপ মন খারাপ করে বসে আছে মাহি তখনি পিছন থেকে কেউ ওর কাঁধে হাত রাখল,, পিছনে তাকিয়ে দেখল ওর মা।

কি হয়েছে আমার মায়ের এমন মন খারাপ করে বসে আছে কেনো??(মাহির পাশে বসে)

আম্মু (মাকে জরিয়ে ধরে) আমরা বাড়ি যাবো কবে??

সেকিরে তুই তো এখানে এসে কত খুশি ছিলি এই বিয়ে নিয়ে কত মজা করবি বললি আর এরি মাঝে কি হলো??(আম্মু)

কিছু না ভালো লাগছে না,,, তুমি তো এখানে এসে আমার কথা ভুলেই গেছো সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ (মাহি)

সত্যি এখানে আসার পর থেকে মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকানোর সময়ই পাইনি ছেলেটা তো ওর বাবার সাথে,,, (মনে মনে বলে মাহির মা বলল)

তাই,, আচ্ছা মুখটা এমন শুকনো শুকনো লাগছে কেনো?? সকাল থেকে কিচ্ছু খাসনি নাকি?? বস এখানে আমি খাবার নিয়ে আসছি,,,, এই বলে মাহির মা খাবার আনতে চলে গেলো৷ আর মাহি ওখানেই মন খারাপ করে বসে থাকলো৷ আর এই সব কিছু দূর থেকে মেহরাব দেখলো। কিছুক্ষণ পরই মাহির মা খাবার নিয়ে এসে নিজে হাতে মেয়েকে খাইয়ে দিলো,,,, তারপর বাকি সারাদিন মাহি মায়ের পিছন পিছনই থাকলো। মেহরাব ও আর ডাকিনি ওকে।

,,,,রাতে,,,,

দূরে বাগানের চড়াটের উপর মেঘলা আর মেঘ বসে আছে,,, মেঘলার কোলের উপরে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে মেঘ৷

আরে কি করছেন?? কেউ দেখে ফেললে কি ভাববে??(মেঘলা)

কি ভাববে আবার?? ভাববে যে আমি তোমার সাথে প্রেম করছি এটাই(মেঘ)

তাই বলে এখানে?? বাড়ি ভর্তি লোকজন কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে লজ্জাই পড়ে যাবো।

ধূত চুপ করো তো কিছুই হবে না,, এখন চুপচাপ আমার দিকে মন দাও।

সবাই ওঠানে মাদুর বিছিয়ে বসে গল্প করছে পাশেই মুনির ওর বয়সী গ্রামের কিছু ছেলে মেয়েদের শহরের গল্প শুনাচ্ছে,,,,, আর সুহান এককোনে বসে চুপচাপ ফোন দেখছে,,,,
গ্রামের মহিলারা অনেকেই এসেছে বড় বাড়ির বিয়ে বলে কথা বিয়ে ১সপ্তাহ আগে থেকেই বিশাল আয়োজন,,, সবাই বসে পান খাচ্ছে আবার কেউ কেউ একসাথে হয়ে গীত গাইছে। আর ইশিতা এই ফাঁকে ওর রুমে গিয়ে ওর বয়ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছে। এখানে বাড়ির সবাই আছে সবাই সবার সাথে মজা করছে নেই কেবল একজন আর সে হলো মাহি।

মেহরাব পুরো বাড়ি খুঁজেছে সব রুম গুলোও দেখেছে কিন্তু কোথাও মাহিকে পাইনি,,, শেষে বাগানে খুঁজতে গিয়ে বেশ লজ্জাই পেয়েছে,, কেননা সেখানে মেঘ আর মেঘলা প্রেম করছে। এখন শুধু একটা জায়গাই বাকি আছে আর সেটা হলো ছাদ।। মেহরাব আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো দেখলো মাহি ছাদের মাঝে বসে চাঁদের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে।

বাবা আমার ভিতু রানি দেখছি এতো রাতে একা একা ছাদে বসে আছে ভয় করছে না??(মাহির পাশে বসতে বসতে বলল মেহরাব)

মাহি কিছু বললো না শুধু মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে হয়ে বসল।

আরে আমার সাথে কথা বলছিস না কেনো আমি আবার কি করলাম (মেহরাব)

মীরা আপু ইচ্ছে করে আমার ফুলগুলো নষ্ট করেছে আমি জানি,, ওনি তো আমায় পছন্দই করে না,,,, আপনি ওখানে ছিলেন তবুও ওনাকে কিছু বলেন নি,,, (মুখ ফুলিয়ে বলল মাহি)

ওহ এই জন্যই তাহলে মেডাম আমার উপর অভিমান করে বসে আছে (মনে মনে বলল)

আচ্ছা শোন দেখি আমার দিকে ঘোর (মাহির মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে মুখের দুপাশে হাত রেখে বলল মেহরাব)

মীরা অনেক ন্যাকা টাইপ মেয়ে ওকে তখন কিছু বললে ও কাঁদতে কাঁদতে খালা মনির কাছে গিয়ে উল্টো পাল্টা বলত, আর খালামনি আবার সেটাকে ইস্যু করে অনেক বড় অশান্তি করত।একেতে বিয়ে বাড়ি তার উপর গ্রামের বাড়ি এখানে কিছু হলে দাদুর সম্মান টা থাকতো??? আর তাছাড়া মেঘলার কথাটা একবার ভাব ও কত খুশি এতো অপেক্ষা করার পর নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকতে পারছে এখন যদি এখানে কোনো সম্যসা হয় তাহলে ওর মন খারাপ হবে না??? আর আমি জানি আমার মাহি তো তা হতেই দেবে না কেননা আমার মাহি অবুঝ হলেও সব বোঝে সে কখনো কাউকে কষ্ট দিবে না আর তার মেঘলা আপুকে তো নয়ই,,, কি তাই তো (মেহরাব)

হুম। (মাহি)

এই তো গুড গার্ল,,, তাহলে এখন এমন মন খারাপ করে না থেকে একটু হাস তো। তোকে সব সময় হাসিতেই বেশি মানায় আর তাছাড়া আমার মাহি তো এই বিয়ের ম্যানেজার তার কত কাজ তার কি এখন এখানে মন খারাপ করে বসে থাকলে হবে?? সারা বাড়ি ছুটোছুটি করতে হবে তো সবাইকে মাতিয়ে রাখতে হবে তো তাইনা???

হুম তাই তো,, দেখেছেন আমি তো ভুলেই গেছি আমার কত কাজ,, আপুকে মেহেন্দি পরানো তারপর সাজানো তারপর (মেঘলা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনি মেহরাব বলল)

আরে এগুলো এখনো দেরি আছে,, এখন একটু হাসতো,,, যদি না হাসিস তাহলে কিন্তু কাতুকুতু দিবো।

এই না আমার কিন্তু অনেক কাতুকুতু আর আমিও জানি আপনার ও কাতুকুতু আছে (হেসে বলল মাহি)

কি নিষ্পাপ আমার মাহি কতটা সরল,,, এত সখের ফুলগুলো নষ্ট হয়ে গেলো তাও কেমন একটু ভালো কথা বলায় সেটাও ভুলে গেলো। এত ভালো কেনো তুই মন চাই সব সময় বুকের সাথে একেবারে চেপে ধরে রাখি,,, আমি তো আমার মাহির এই হাসি মুখটাই এতক্ষণ মিস করছিলাম,,,, অনেক ভালোবাসি তোকে অনেক বেশি ভালোবাসি,, কবে যে তুই বুঝবি (মনে মনে বলল মেহরাব)

ও ভাইয়া কই হারিয়ে গেলেন??

মাহির কথায় হুস ফেরে।। না না কোথাও না, এই তো আমাদের মাহি হাসছে,, ওমমম এই হাসির জন্য তো তোকে কিছু একটা দিতে হয় কি দিই বলতো ওমমম (একটু ভেবে) দাড়া (তারপর মেহরাব কাউকে ফোন করল,, তার কিছুক্ষণ পরই মেঘ পিছনে কিছু নিয়ে ছাদে আসলো)

এই তো মাহির গিফট চলে এসেছে (মেঘ)

গিফট?? কি গিফট??(মাহি)

ওমম সেটা আমি বলছি,,, তারপর মেহরাব গিয়ে মেঘের পিছন থেকে তিনটা শাপলা ফুল বের করে মাহির সামনে ধরলো।

সেদিন সব তুলে আনছিলাম তো তাই আজকে আর বেশি ফোটেনি এই গুলোই ছিলো,, দয়া করে আপনি এগুলো গ্রহন করে আমায় ধন্য করুন রানী সাহেবা (মেহরাব)

মাহি তো ফুল গুলো দেখে সেই খুশি এতোক্ষণের সব মন খারাপ যেনো উধাও এক লাফে ফুলগুলো নিজের হাতে নিয়ে।

ইয়ে আমার ফুল,, কত্ত সুন্দর থ্যাংকু ভাইয়া ওহ কত খুশি লাগেরে ইয়ে (বলে লাফাতে লাগলো।)

বারে আমিও তো ফুলগুলো আনলাম তাহলে খালি মেহরাব কেই থ্যাংকু বললে আমাকে কেনো বললে না (মেঘ)

ওহ আপনাকেও থ্যাংকু মেঘ ভাইয়া গাড়ি গাড়ি থ্যাংকু (এই বলে মাহি লাফাতে লাফাতে চলে গেলো,, আর মেহরাব মাহির যাওয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো,, তখনি মেঘ ওর মাথায় গাট্টা মেরে বলল)

এই সালা তাহলে এই জন্যই তুই ওই দুপুরে আমায় ঘুম থেকে টেনে তুলে ওই রোদের মধ্যে মাঠে নিয়ে গেলি তাও আবার সাপের বাড়িতে। এখন বুঝলাম আপনি কেনো ওখানে সাপ আছে যেনেও ফুলগুলো তুললেন (মেঘ)

হুম (একটা কথা বলি মেঘ আর মেহরাব দুজন বন্ধু একিসাথে পড়ত,,,)

কে যেনো আমায় বলেছিলো প্রেম করা ভালো নয় আর বয়সে ছোট্ট মেয়ের সাথে তো একেবারেই নয়(মেহরাবকে উদ্দেশ্য করে বলল মেঘ)

ভাই কেনো পুরানো কথা বলে লজ্জা দিচ্ছিস,, তখন তো আর জানতাম না যে আমিও কোনো এক বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পড়ে যাবো। আর আমি তো তোর মতো না,, তুই তো আমাকে দিয়ে আমার বোনকে লাভ লেটার পাঠাতে চাইছিলি (মেহরাব)

আরে আমি কি তখন জানতাম যে মেঘলা তোর বোন।।। আচ্ছা বাদ দে তা তুই কি মাহিকে বলেছিস??? যে তুই ওকে ভালোবাসিস??(মেঘ)

না বলিনী তবে বোঝার চেষ্টা করছি ও আদেও আমায় পছন্দ করে কি না(মেহরাব)

তাহলে এক কাজ কর তুই মাহিকে দেখিয়ে অন্য মেয়ের সাথে প্রেমের অভিনয় কর যদি ও জেলাস হয় তখন বুঝবি যে ও তোকে ভালোবাসে (মেঘ)

না আমি এটা কখনোই করবো না,,, আমি আমাদের মধ্যে কখনোই কোনো থার্ড পার্সন কে আনবো না,, এতে সম্পর্কে একটা খারাপ প্রভাব পড়ে হোক সেটা অভিনয় তবুওও।।আমি চাই মাহি আমাকে বুঝুক আমার থেকেও অনেক বেশি করে আমাকে চিনুক,, ওর নিজের মতো করে আমাকে ঝুকে নিক আমি কখনোই বলবো না আমি তোমাকে ভালোবাসি,, ওকে বুঝে নিতে হবে, মানছি ও অবুঝ তবুও ওকে আমার ভালোবাসা বুঝে নিতেই হবে হবেই #বুঝে_নাও_ভালোবাসি। অনেক বেশিই ভালোবাসি।

চলবে,,,,,,,