ভালোবাসি বুঝে নাও ২ পর্ব-১১+১২+১৩

0
395

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#১১_পর্ব
.
সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না, কখন যে সময় সময়ের গতিতে চলে যাই আমরা বুঝতেই পারি না,, দেখতে দেখতে সাতদিন কেটে গেলো, এই সাত দিন মেঘলার খুবি খারাপ গেছে কেননা ও মেঘকে ভীষণ মিস করেছে, শুধু দিনগুনেছে যে কবে এই সাত দিন পাড় হবে,, কেননা মেঘলা এই সাত দিনে খুব ভালো ভাবেই বুঝে গেছে যে ও মেঘকে আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলেছে।
আসোলে মেঘ যখন প্রথম মেহরাব এর সাথে ওদের বাড়িতে আসলো সেদিনই মেঘকে ভালোলেগেছিলো কিন্তু ভালোবেসেছিলো না।

মেঘকে ভীষণ ভয় পেতো কেননা মেঘ পুলিশ এই জন্য, আবার ভাইয়ের বন্ধুও তাই এই ভালো লাগাটা আর প্রকাশ করেনি নিজের মধ্যেই চেপে রেখেছিলো,, কিন্তু সেদিন যখন মেঘ নিজে থেকে ওর দিকে পা বাড়ালো তখন ও কেনো থেমে থাকবে ও এককদম বাড়ালো।

ভার্সিটীর রাস্তার সামনে দাড়িয়ে আছে মেঘলা শুধু মেঘকে এক পলক দেখার আশায় কেননা গতকালই মেঘ বাড়ি ফিরেছে,, মেহরাব এর থেকে শুনেছে,, মেহরাব ফোনে মেঘের সাথে কথা বলার সময়ই শুনেছে,, তাই আজকে এখানে দাঁড়িয়ে আছে,,,
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল তবুও মেঘের দেখা পেলো না ওদিকে আবার ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে কি যে করি,,
আরো কিছুসময় অপেক্ষা করার পর হতাশ হয়ে এক বুক কষ্ট নিয়ে যখনি ভার্সিটীর গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতে যাবে তখনি দেখলো দূরে মেঘের গাড়ি দেখা যাচ্ছে,, বুকের ভিতর ধুকপুক শুরু হয়ে গেলো,, কতদিন পরে দেখবো ওনাকে,, ইস কত লজ্জা লাগছে। মেঘলা যখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলো তখনি মেঘের গাড়ি মেঘলাকে ক্রস করে চলে গেলো,, মেঘলার ভীষণ খারাপ লাগল যার জন্য এতো কষ্ট করে এতোক্ষণ ধরে এখানে দাঁড়িয়ে থাকলাম সেই এমন করল।
মেঘলা হতাশ হয়ে মেঘের চলে যাওয়া গাড়ির দিকে তাকিয়ে রইল তখনি পিছন থেকে কেউ বলল।

চলে গেলো?? অনেক খারাপ তাই না?? (লোকটি)

হুম অনেক নিষ্ঠুর একটুও তাকালো না পযন্ত আমার দিকে (আনমনে বলল মেঘলা)

সত্যি খুবি খারাপ এমন টা কেউ করে??

হুম সত্যি ওনি,,,,মেঘলা আর কিছু না বলে ভাবল যে ও এতোক্ষণ কার সাথে কথা বলছে এই ভেবে পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো মেঘলা।পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখে,,,

আপনি???। (অবাক হয়ে বলল মেঘলা).

,,,, মেহরাব অফিসে এসে একটা প্রজেক্ট নিয়ে অনেকক্ষণ লেকচার দেওয়ার পর সবাইকে বুঝিয়ে কেবলি নিজের কেবিনে এসে চেয়ারে বসল,, তখনি ওর ফোনটা বিকট শব্দ করে বেজে উঠল। মেহরাব বিরক্ত হয়ে ফোনের দিকে তাকালো কাজের সময় আবার ফোন দিলো কে, এই ভেবে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো মা ফোন দিয়েছে,,

এই সময় মা কেনো ফোন দিলো , কোনো সম্যসা হয়নি তো আবার,,এই ভেবে মেহরাব ফোনটা রিসিভ করে বলল।

হ্যাঁ মা বলো, এখন ফোন দিলে যে কিছু হয়েছে?? বাবা ঠিক আছে তো??

না কিচ্ছু ঠিক নেই তুই যলদি সিটি হাসপাতালে চলে আয় মাহি এ্যাকসিডেন্ট করেছে আমরা ওকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি তুই যলদি আয়৷

কথাটা শুনে মেহরাব এর মনে হলো এক মুহূর্তের জন্য ও অন্য দুনিয়ায় চলে গেছে, বুকের ভিতর কেমন মুচড় দিয়ে উঠল,, কিছু সময়ের জন্য শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল,,, মায়ের কথায় হুস ফিরল।

কিরে আসছিস তো নাকি??

হ,,হা, হুম আ,,আসছি এখনি আসছি (কাঁপা গলায় বলল মেহরাব)

ফোন রেখে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেলো মেহরাব, ম্যানেজার কে কোনো রকম বুঝিয়ে এসেছে,,, এতো জোরে গাড়ি চালাচ্ছে তবুও যেনো রাস্তা শেষ হচ্ছে না,, এই জন্যই বুঝি বলে বিপদে রাস্তা বাড়ে।
অবশেষে হসপিটাল এ পৌঁছালো গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে গিয়ে রিসিপশনে কিছু বলতে যাবে তখনি দেখলো মনির হাতে চিপস নিয়ে খাচ্ছে আর হাটাহাটি করছে,, মেহরাব দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে জিগাস করল।

এই মাহি কোথায়??(হাঁফাচ্ছে আর জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে মেহরাব)

কে আপু?? আসো আমার সাথে আমি নিয়ে যাচ্ছি,,

মেহরাব মনির এর পিছন পিছন গেলো তারপর মনির দেখিয়ে দিলো মাহির কেবিন, মেহরাব কাঁপা কাঁপা পায়ে আস্তে আস্তে কেবিনের দরজা খুললো,, খুলে ভিতরের অবস্থা দেখে মেহরাব এর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।হাত অটোমেটিক বুকের বা পাশে চলে গেলো।

কেননা ভিতরে মাহি বেডের উপর বসে আছে বা হাতটা প্লাস্টার করে গলায় ঝুলানো, মাথায় একটা ওয়ান টাইম বান্ডেজ হয়ত মুখ থুবরে পরেছিলো এই জন্য ঠোঁট টা ফুলে তিনটা হয়ে গেছে, এমন টাইপ,, ডান গালেও ছোট খাটো একটা বান্ডেজ,,, বসে বসে ডান হাত দিয়ে চিপস খাচ্ছে,, ঠোঁটে বেথ্যা তাই ভালো মতো হা করতে পারছে না, মুখটা বাকিয়ে হা করে খাচ্ছে।
আর মাহির চারপাশে ওর মা আর মাহির মা বসে আছে,,,, ফুপি মাহির জন্য জুস বানাচ্ছে আর আম্মু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

মায়ের উপর রাগ হচ্ছে এভাবে কেউ বলে?? ফোনে এমন ভাবে বলল আমি ভাবলাম কি না কি,, প্রাণ পাখিটা খাঁচা ছেড়ে পালিয়ে যাবো যাবো অবস্থা হয়ে গিছিলো। সব শেষে মাহি ঠিক আছে এটা দেখে ভালো লাগছে। মেহরাব দরজা ঠেলে ভিতরে গেলো।

এসেছিস দ্যাখ কি অবস্থা হয়েছে মেয়েটার আহারে কার যে নজর লাগলো আমার মেয়েটার উপর আল্লাহ জানে (মেহরাব এর আম্মু)

মেহরাব এর মায়ের কথা শুনে মাহি ফুলে যাওয়া ঠোঁটটা আরো একটু ফুলিয়ে বলল।

ঠিল বলেচো মামি আমাল উপর কালো নজল লাগছে (ঠোঁট ফোলা তাই ভালো করে কথা বলতে পারছে না)

মাহির কথাশুনে মেহরাব হু হা করে হেসে উঠল। মেহরাব এর হাসি দেখে মেহরাব এর মা ওর হাতে মেরে বলল।

এই পাজি ছেলে এমন হাসসিস কেনো??

দেখেছো মা একেই বলে কাউকে কিছু নিয়ে বেশি ক্ষেপালে তারও সেই অবস্থা হয়,, খুব তো আমাকে তোতলা বলছিলি এখন দ্যাখ কে তোতলা (মেহরাব)

মাহি রেগে মেহরাব এর মা কে বলল।

দেখেলে মামি তোমাল ছেলে আমাল নিয়ে মজা কলছে (কান্নার অভিনয় করে)

এই মেহরাব আমার মেয়েকে নিয়ে একদম মজা করবি না বলছি..

মেহরাব তো ঠিকি বলছে ভাবি, খুবতো ওকে নিয়ে মজা করছিলি এখন দ্যাখ (মাহির মা)

মায়ের কথা শুনে মাহি কান্নার অভিনয় করতে লাগল।

এ কখনো শুধরাবে না (মনে মনে বলল মেহরাব)

মেহরাব আমরা এখন বাড়ি বাড়ি যাবো তুই মাহিকে কোলে নিয়ে গাড়ি অবধি দিয়ে আায়(রুপালি)

কি বলো আম্মু ওর তো হাত ভেঙ্গেছে পা নয় ও তো হাঁটতে পারছে তাহলে কোলে নেওয়ার দরকার কি,,(মেহরাব)

বেশি কথা না বলে যা বলছি কর।

ওকে কি আর করার আম্মাজান এর অর্ডার বলে কথা,, মেহরাব গিয়ে মাহিকে কোলে তুলে নিলো।

মাহি ফোলা ঠোঁটেই মেহরাব দিকে তাকিয়ে হাসলো যেনো হাসি দিয়ে বলছে,, দেখ কেমন লাগে।

মেহরাব ও বিরবির করে বলল,, তোতলা একটা।

আপনি এখানে তাহলে গাড়ি কে চালাচ্ছে?? (অবাক হয়ে বলল মেঘলা)

কেনো গাড়ি ড্রাইভার চালাচ্ছে,, প্রেমে পড়ে কি সব বুদ্ধি গরু চড়াতে গেছে??(মজা করে বলল মেঘ)

মেঘলার নিজের উপর রাগ হচ্ছে ওনার সামনে আসলেই সব ভুলভাল কথা বলি শুধু,, তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল।

কে প্রেমে পড়েছে।

কেনো তুমি।

মোটেও না।

তাই নাকি,, যাক ভাবলাম ফিরে এসে তোমাকে বিয়ে করবো, কিন্তু তা আর হলো না তুমি তো আর আমাকে ভালো বাসো না?? (মেঘ)

মেঘের কথা শুনে মেঘলা ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো।

চলবে,,,,,?

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#১২_পর্ব
.
তাই নাকি,, যাক ভাবলাম ফিরে এসে তোমাকে বিয়ে করবো, কিন্তু তা আর হলো না তুমি তো আর আমাকে ভালো বাসো না?? (মেঘ)

মেঘের কথা শুনে মেঘলা ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো।

ওলে বাবা বেবি কাঁদে না, আমি আর কাউকে বিয়ে করবো না শুধু তোমাকেই বিয়ে করবো হয়েছে?? এবার কান্না অফ করো (মেঘ দুহাত দিয়ে আলতো করে মেঘলা কে জরিয়ে ধরে বলল)

ছাড়ুন আমায় আপনি খুব খারাপ প্রথমত আমাকে কষ্ট দিয়ে এখন আবার প্রেম দেখানো হচ্ছে পচা লোক একটা (মেঘের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নাক টেনে বলল মেঘলা)

না ছাড়বো না আমার তো শুধু মন চাই তোমায় সারাদিন এভাবেই জড়িয়ে রাখি আহ (দুষ্টমি করে বলল মেঘ)

ছি মুখের কি ভাষা ফাজিল লোক একটা,, (এই বলে মেঘলা চলে যেতে লাগল,,)

ওহে সুন্দরী এই অধম কে রেখে যেও না তাহলে যে সে তোমার বিরহে দেবদাশ হয়ে যাবে (মেঘলার পিছন পিছন যেতে যেতে বলল মেঘ)

মাহিকে নিয়ে বাড়ি পৌঁছানোর পর মেহরাব আগে গাড়ি থেকে নেমে তারপর মাহিকে কোলে নিয়ে মাহির রুমে চলে গেলো।

মেহরাব তুই মাহিকে রুমে দিয়ে আয়, আমি তোর আব্বুকে ফোন করে জানিয়ে দিই নয়ত আবার চিন্তা করবে।(রুপালি)

ওকে মা,,, এই বলে মেহরাব মাহিকে নিয়ে চলে গেলো।রুমে গিয়ে মাহিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে মেহরাব সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল।

কত খাস তুই ইস বাবাগো আমার হাত বেথ্যা হয়ে গেছে কত ভারি তুই যেনো আস্ত একটা হাতি (মেহরাব)

মাহি কিছু বলছে না শুধু শুনছে আর রাগে ফুসছে,, কেননা ও কিছু বললেই মেহরাব ওকে নিয়ে মজা করবে তাই চুপচাপ বসে আছে।

আচ্ছা বাদদে আগে বলতো তুই এ্যাকসিডেন্ট করলি কীভাবে??

মাহি তাও চুপ করে আছে আর মনে মনে বলছে,,,ওরে গাধা আমি যদি স্পষ্টভাবে বলতেই পারতাম তাহলে কি এতোক্ষণ বসে বসে তোর গা জ্বালানো কথাশুলো শুনতাম??

ওহ আচ্ছা তুই তো আবার তোতলা হয়ে গেছিস ভালো করে কিছু বলতেও পারবি না,,, আহারে বাচ্চাটা। তবে তোর ঠোঁট গুলা কিন্তু সেই লাগছে, কেমন ফুলে ঢোপা ঢোপা হয়ে গেছে,, (হেসে বলল মেহরাব)

বলেন বলেন যদি খুশি বলেন, এ দিন দিননা আমারও দিন আসবে তখন দেখাবো মজা (মনে মনে বলল মাহি)

কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাহি বলল।পালি(পানি) দেন তো, (আসোলে তখন চিপস খাইছি পানি খাওয়া হয়নি এখন গলা কেমন শুকিয়ে গেছে তাই বাধ্য হয়ে ওনার কাছে চাইলাম নয়ত কে ওনার কাছে পানি চাইবে)

কিহ?? পালি?? পালি আবার কি??(যদিও জানি যে ও পানি চাচ্ছে তবুও একটু ক্ষেপাতে দোষ কোথায় হিহিহি)

এই শুরু হয়ে গেলো ধুর,, আরে পালি দেন পা,,,,,,,লি (মাহি)

কি বলিস ভালো করে বল।

মন চাচ্ছে একটা হাতুড়ি দিয়ে ওনার মাথাটা ফাটিয়ে দিই কত্ত বড় ফাজিল লোক।

মালিমনি (মামিমণি) ও মালিমণি (মাকে ডাকলে মা নির্ঘাত এই ফাজিলটার পক্ষে কথা বলবে,, উল্টো আরো আমাকে বকা দিবে, এই জন্যই মামিমণিকে ডাকছি, কিন্তু ছাতার মাথা ভালো করে ডাকতেও পারছি না)

আরে আম্মু কে ডাকছিস কেনো?? আর যদিও ডাকছিস তবে আমার মাকে সোজা মালি বানাই দিলি কি অবস্থা।

পালি (জোরে বললাম)

কিহ বলিস বুঝি নাহ। (না বোঝার ভান করে বলল মেহরাব)

এবার আমার রাগ পুরা মাথা থেকে চুলে উঠে গেছে,,, ডান হাত দিয়ে ওনার চুল ধরে টান দিলাম।

আরে চুল ধরে টানাটানি করছিস কেনো??

ওহ বুঝেছি পানি খাবি আরে এটা আগে বলবি তো (এই বলে মেহরাব পানি এনে দিলো মাহিকে)

,,,,,,রাতে,,,,,

কিরে মাহি এসব কীভাবে হলো,, আমি তো কিছুই জানি না ভার্সিটী থেকে আসার পর আম্মুর কাছে শুনলাম তখনি আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু তখন আর আসা হলো না এখন ভাইয়া অফিস থেকে আসার সাথে সাথেই চলে আসলাম (মেঘলা মাহির কাছে বসে বলল)

রাস্তা দিয়ে ভালোভাবে হাঁটলে তো আর এ্যাকসিডেন্ট হয় না তিরিং বিরিং করলে তো এ্যাকসিডেন্ট হবেই (সোফায় বসতে বসতে বলল মেহরাব)

মাহি তো রেগে কটমট করে মেহরাব এর দিকে তাকিয়ে আছে।

আহ ভাইয়া যেটা জানিস না সেটা নিয়ে বলবি না,,, আমাদের মাহি দুষ্ট হতে পারে তাই বলে ও রাস্তা দিয়ে তিরিং বিরিং করতে করতে যায় না, ভালো ভাবেই যায় (মেঘলা)

হুম জানি জানি কে কীভাবে যায়।

,,,,,,,,,৭ দিন পর,,,,,,,

এই কয়দিনে মেঘলা আর মেঘের প্রেম জমে মাখো মাখো হয়ে গেছে,, আর ওদিকে নেহাল আর মীরার ঝগড়াও থেমে নেই আগে যেমন ছিলো আরো প্রোমোশন হয়েছে।

মাহির ঠোঁট ফুলা অনেকটাই কমে গেছে এখন ভালো ভাবেই কথা বলতে পারে তবে হাত এখনো ভালো করে সাড়িনী এখনো হাত গলার সাথেই ঝুলানো আছে,, আরো কয়েকদিন এভাবে রাখতে হবে।

বিকেলে,,,মাহি নিজের রুমে বসে বসে ভাবছে কীভাবে মেহরাব কে জব্দ করা যায়,, তখনি হুরমুর করে মেঘলা মাহির রুমে ঢুকলো।

আরে মেঘলা আপু তুমি এসময় কিছু হয়েছে??(মাহি)

হুম হয়েছে তো অনেক কিছুই, তবে কি যে করবো বুঝতেছি না।

কেনো কি হয়েছে আমাকে বলো দেখি আমি কিছু করতে পারি কি না।

না করতে পারলেও তোকেই করতে হবে,, তুই এখন আমার শেষ আশার আলো।

মানে?? কি হয়েছে খুলে বলবে তো।

আসোলে আমি না,, ইয়ে মানে আমি একজনকে ভালোবেসে ফেলেছি (আমতা আমতা করে বলল মেঘলা)

কিহ?? সত্যি বলছো?? বাহ এটা তো ভালো কথা তা ছেলেটা কে মেঘ ভাইয়া বুঝি??

তুই বুঝলি কীভাবে??

আরে আমি আগেই বুঝে গিছিলাম,, তা তোমাদের মাঝে এখন আবার আমার কি দরকার??

তোকেই তো বেশি করে দরকার,, মেঘ যদি অন্য কেউ হতো তাহলে সম্যসা ছিলো না, কিন্তু।

কিন্তু কি আপু।

আরে গাধী মেঘ তো ভাইয়ার বন্ধু এটাই তো বড় সম্যসা, ভাইয়া যদি না মানে।

আরে কি বলো মেঘ ভাইয়া বেকার নাকি যে মেহরাব ভাই মানবে না, আর তাছাড়া ওনি তো দেখতেও ভালো তাহলে সম্যসা কোথায়??

তবুও আমার ভয় লাগছে যদি না মানে তখন কি হবে।

আরে মানবে মানবে এতো চিন্তা করো না,, এখন যে করেই হোক মেহরাব ভাই কে তোমাদের বিষয়টা বলো।

হুম বলবো তো, কিন্তু আমি না,, আমার আর মেঘের প্রেম + বিয়ের কথাটা বলবি তুই,, ভাইয়া একবার রাজি হয়ে গেলে আর কোনো সম্যসা থাকবে না। এখন তুই আমার সাথে যাবি আর ভাইয়া কে বলবি।

কিহ আমি???(চিৎকার করে বলল মাহি)

হুম তুই,, প্লিজ বোন ভালো না করিস না।

মেঘলা আপু তুমি কি চাও, যে আমার যে হাতটা ভালো আছে সে হাতও গলায় ঝুলুক??

মানে??

মানে বোঝো না, তোমার যে লম্বার উপর খাম্বা মার্কা ভাই,, আমি যদি এ কথা বলি তাহলে হয়ত মেরে আমার এ হাতও গলায় বুঝিয়ে দিবে (কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলল মাহি)

কেনো তুই তো বললি ভাইয়া মেঘকে মেনে নিবে কোনো সম্যসা নেই,, এখন তুই বলবি ভাইয়াকে চল আমার সাথে।

তুমি কেনো আমার মতো মাসুম একটা হাত ভাঙ্গা বাচ্চা কে এভাবে ফাঁসাচ্ছো আপু??

চলবে,,,,,??

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও-2🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী( writer)
#১৩_পর্ব
.
সেই রাতেই মেঘলা আপু আমাকে নিয়ে এসেছে,, আম্মুর কাছে বলে যদিও আব্বু বলেছিলো সকালে যেতে কিন্তু আপু শোনেনি আমার ভাঙ্গা হাত গলায় ঝুলিয়েই আপুর সাথে ড্যাং ড্যাং করে চলে এসেছি,,আব্বু অবশ্য আগায় দিছিলো নয়ত রাতের বেলা দুটো মেয়েকে এভাবে ছাড়া ঠিক না, তার উপর আবার আমার হাত ভাঙ্গা 😜😜।

বর্তমানে আমি এখন মেহরাব ভাই এর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ভিতরে উঁকি দিচ্ছি মূলত দেখার চেষ্টা করছি ভাইয়া কি করছে আর এখন ওনার মুড কেমন, আর আমার ঘাড়ের উপর মেঘলা আপু।

কি করো আপু ঘাড়ে চড়ে বসবা নাকি??

ওহ সরি,, এই শোননা আমার না খুব টেনশন হচ্ছে (হাত কামড়ে বলল মেঘলা)

আরে টেনশন করো না, মেহরাব ভাই মেঘ ভাইয়ার কিছুই করবে না।

আরে আমি থুরি মেঘের জন্য টেনশন করছি। আমার তো তোর জন্য টেনশন হচ্ছে।

কেনো শুধু শুধু ভয় দেখাচ্ছো আপু(ঢোক গিলে বলল মাহি)

কিন্তু ভাইয়া কোথায়?? রুমে তো মনে হয় নেই আর আসার সময় নিচেও দেখলাম না তাহলে গেলো কই??(মেঘলা)

আরে বাথরুমে হবে হয়ত,, অপেক্ষা করো।

এই বলে মাহি আরো একটু ঝুঁকে মেহরাব এর রুমের ভিতর দেখতে লাগল,,, তখনি মেঘলা পিছনে তাকিয়ে দেখলো মেহরাব নিচে থেকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের রুমেই আসছে, তা দেখে মেঘলা মাহির ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল।

এই মাহি এই চল চলে যায়। (ভয়ে ভয়ে বলল মেঘলা)

ধুত আপু বিরক্ত করো না তো কাজ করতে দাও (মেহরাব এর রুমের ভিতরে তাকিয়ে বলল)

আরে একবার পিছে তো দ্যাখ।

সময় নেই গো, তোমার দেখার তুমিই দ্যাখো।

এই মেয়ে নির্ঘাত বকা খাবে আজকে আমি পালাই বাবা,, এই বলে মেঘলা দৌড়ে মেহরাব এর রুমের পাশের রুমে চলে গেলো।

বাড়ি ফিরে আবারো একটা কাজে বাইরে যেতে হলো ধূর ভালো লাগে না, বড্ড ক্লান্ত লাগছে,,, তখনি মেহরাব সামনে মাহিকে দেখলো।

আরে ওটা মাহি না?? কিন্তু ও এতো রাতে এখানে কি করছে,, আর এই অবস্থায় এবাড়ি আসলো কখন?? দেখি তো।

এই বলে মেহরাব মাহির পিছনে গিয়ে মাহির ঘাড়ে হাত দিয়ে ডাকতে লাগল।

আরে মেঘলা আপু বিরক্ত করো না তো (পিছনে না তাকিয়ে বলল মাহি)

আরে গাধী পিছনে একবার তাকা ওটা আমি না ওটা তোর জোম (দূরে দাঁড়িয়ে বলল মেঘলা)

মাহির কথা শোনে মেহরাব ভ্রু কুঁচকে,, আবারও মাহির মাথায় টুকা মেরে ডাকলো।

আজকে তো আমি এই মেঘলা আপু কে মেরেই ছাড়বো,, বিয়ের আগেই মেঘ ভাইয়া কে বউ হারা করবো,, কাজের সময় খালি বিরক্ত করা,,, এই বলে মাহি পিছনে ফিরে যেই কিছু বলবে তখনি।

মেঘলা আ,,,আআআআআআআআআআ(চিৎকার করে)

ওদিকে মাহির চিৎকার শুনে মেঘলা ওরে বাবাগো বলে এক দৌড়ে নিচে।

আ,,আ,,,আপনি??(ভয় পেয়ে)

ওমন চিৎকার করলি কেনো?? আর এতো রাতে তুই এবাড়ি?? আর এখানে কি করছিস একা একা?? (ভ্রুঁ কুচকে বলল মেহরাব)

ইয়ে না মানে (সালার মেঘলার বাচ্চা আমাকে এখানে ফাঁসিয়ে দিয়ে চলে গেলো)

কি ইয়ে মানে যা বলার সরাসরি বল।

ক,,,কিছু নাহ ভাইয়া আমি যাই (এই বলে যেই মাহি চলে যেতে লাগল তখনি মেহরাব)

এই কোথাও যাবি না,, এখানে কেনো দাঁড়িয়ে আমার রুমে উঁকি ঝুকি মারছিস বল??

কীভাবে যে বলি ওহ আল্লাহ ভয়ে তো আমার সব শুকিয়ে যাচ্ছে,, ইয়ে মানে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে এই আর কি।

আচ্ছা শোন আমি বড্ড বেশি ক্লান্ত তুই আমার রুমে গিয়ে বিছানায় বস আমি ফ্রেশ হয়ে এসে শুনবো কেনো তুই এখানে দাঁড়িয়ে ছিলি ওকে। আর হ্যাঁ পালানোর কথা মাথায় ও আনবি না ঠিক আছে??

ঠিক আছে (হয়ে গেলো,, মনে মনে বলল মাহি)

তারপর মেহরাব রুমে গিয়ে বাথরুমে চলে গেলো ফ্রেস হতে,, আর মাহি কোনো উপায় না পেয়ে শেষ মেষ বিছানায় গিয়ে বসে পড়ল।বেশ কিছুক্ষণ পর মেহরাব মাথা মুছতে মুছতে বাইরে এলো।

এখন বল কাহিনীটা কি??

ক,,,কিসের কাহিনী কোনো কাহিনী টাহিনী নেই আমি গেলাম।

না কোথাও যাবি না,, আগে বল এতো রাতে তুই আমার রুমের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলি কেনো?? কারণ তো একটা আছেই নয়ত তুই তো শুধু শুধু আর দাঁড়িয়ে থাকবি না, এখন বল কি বেপার।

আরে মাহি এতো ভয় পাওয়ার কি আছে চোখ বন্ধ করে বলে দিলেই তো হয়,,, এই বলে মাহি বলল।

আসোলে ইয়ে মানে বলছিলাম কি।

কি কখন থেকে ইয়ে মানে না মানে করছিস বল যলদি আমার কাজ আছে।

ব,,বলছিলাম কি আমি মেঘ ভাইয়া কে ভালোবাসি(মাহি)

কিহ??(মেহরাব)

এই না না,, মেঘ ভাইয়া আমায় ভালোবাসে।

এ্যা??

ধূত কি যে বলি,,, আসোলে মেঘলা আপু আর মেঘ ভাইয়া একে অপরকে ভালোবাসে। (চোখ বন্ধ করে বলল মাহি)

উপার থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আস্তে করে চোখ খুলে দেখল মেহরাব ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে।

এটা কি হলো আমি কি ভুল করে অন্য কারো নাম বললাম,, কোনো রিআ্যাকশন নেই।

বলছিলাম কি (মাহি)

অনেক রাত হয়েছে তুই এখন এই ঘর থেকে যা।

আমার কথাটা,

আমি যেতে বলেছি তো,।আচ্ছা শোন (এই বলে মেহরাব বসা থেকে উঠে আলমারির কাছে গিয়ে এক ডজন লাল কাঁচের চুড়ি এনে মাহিকে দিয়ে বলল)

রাস্তায় আসতে আসতে এটা দেখে পছন্দ হয়নি তাই নিয়ে এলাম ধর। (মাহির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে)

এ্যা?? পছন্দ হয়নি তাহলে কিনেছেন কেনো??

আমার ইচ্ছে এখন এটা নে আর সামনে থেকে সর।

মাহি কিছু বলতে গিয়েও না বলে,, মেহরাব এর কথামত চলে গেলো চুড়ি গুলো নিয়ে

,,,,,সকালে,,,,

মেঘ পেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে,, কেননা মেহরাব ওর পেটে একটা পাঞ্চ মেরেছে।
সকাল সকাল ফোন দিয়ে মেঘকে দেখা করতে বলে মেহরাব ও ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে।
আর সেই তখন থেকে মাহি আর মেঘলা টেনশনে নিজের নখ কামড়ে আঙুল টাই খেয়ে ফেলার জোগাড়।

তোর কি মনে হয়,, ভাইয়া মানবে???

কি জানি,, তবে আমার মনে হয় না মেহরাব ভাই মেঘ ভাইয়া কে কিছু করবে,, তবুও দেখি কি হয়।

চলবে,,,,??