ভালোবাসি বুঝে নাও ৩ পর্ব-২২+২৩+২৪

0
354

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_২২
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
মেহরাব ভাই এর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। মনে মনে ভীষণ করে রাগ করার চেষ্টা করছি কিন্তু রাগটা ঠিকমত আসছে নাহ। আমি চাইনা ওনার সামনে গিয়ে ভয়ে ভিতষ্ট হয়ে পড়ি আর আমার কথা গুলো না বলায় থেকে যাক। মন কে জোর করে বোঝালাম যে আমার রাগ করা উচিত অনেক করে রাগ করা উচিত রাগে একদম ফেঁটে চৌচির হয়ে যেতে হবে। অবশেষে মনকে ভুলভাল বুঝিয়ে ওনার রুমের দিকে উঁকি দিলাম ওনি কি করছে সেটা দেখার জন্য। দেখলাম ওনি হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে আছে। মাথাটা বালিশের উপর দিয়ে মুখের উপর হাত দিয়ে রেখেছে। প্রথমত উনার রুমে নক দিলাম কয়েকবার নক দেওয়ার পরের ও ওনি কোনো সাড়া শব্দ করলো নাহ। শুধু মাথাটা একটু উঁচু করে কে নক করছে সেটা দেখে আবার শুয়ে পড়ল। এতে যেনো আমার দমে থাকা রাগটা ধপ করে জ্বলে উঠল ওনি কে আমাকে ইগনোর করার। রাগে ওনার থেকে অনুমতি না নিয়েই ধপধপ পায়ে ভিতরে চলে গেলাম ওনার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে নীর্ভিক কন্ঠে জিগাস করলাম।

কি হয়েছে এভাবে দেবদাশ হয়ে আছেন কেনো? আর আপনার তো এখন চিল মুডে থাকা উচিত নতুন নতুন প্রেম করছেন। এভাবে শুয়ে আসেন কেনো? মীরা আপু ছেক্যা দিয়েছে বুঝি? তা কই ওনি চলে গেছেন নাকি? ও এবার বুঝেছি এই জন্যই এভাবে সেন্টু মেরে পড়ে আছেন। বহু কষ্টে এতোগুলো কথা বললাম মনে তো চাইছিলো গলাটা টিপে দিই কিন্তু সেই সাহসটা আর করলাম নাহ। যতই হোক বড় ভাই বলে কথা কিন্তু ওনি এভাবে পড়ে আছেন কেনো? কোনো হেলদুল নেই ঘুমায় গেলো নাকি? আমি এতো কষ্টে এতোগুলো কথা বললাম ওনি যদি নাই শুনেন তাহলে তো আমার এতোসব কষ্ট সব বৃথা হয়ে যাবে। ওনি সত্যি সত্যি ঘুমায় আছে নাকি সেটা দেখতে আমি একটু নিচু হয়ে ওনার অবস্থা বোঝার চেষ্টা করলাম। তখনি ওনি উঠে আমাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার গলাটা চেপে ধরল। কি খুব সাহস বেড়ে গেছে তোর? চুপ করে আছি বলে যা নয় তাই বলে যাচ্ছিস। তোর সাহস হয় কি করে আমার সাথে এভাবে কথা বলার? দেবো গলাটা টিপে?

হঠাৎ করে ওনি এতোটা রেগে যাবে ভাবিনি গলাটাও অনেক জোরেই চেপে ধরে আছে। যেনো মনে হচ্ছে এই বুঝি আমার প্রাণ পাখিটা উড়াল দেবে। হাত নাড়িয়ে ওনার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু ওনি যা আমার সব চেষ্টায় মনে হচ্ছে ব্যার্থ হবে। ওনার থেকে ছাড়া পাবার আশায় হাঁস ফাঁস করছি আমাকে এমন করতে দেখে ওনি আরেকটু জোরে চেপে ধরে বলল, কি এখন এমন করছিস কেনো? আগে মনে ছিলো না ভবিষ্যতে আমার সাথে এমন ব্যবহার করার আগে শতবার ভাববি। আর তখন কি যেনো বলছিলি পর্ষ্ট করে বল কি সব ব্যান ব্যান করে বলিস বুঝতে পারিনা। বড় হয়েছিস অথচ এখনো স্পষ্ট করে কথা বলতে শিখলি নাহ।

ওনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে পাশেই খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসলো। আমি ছাড়া পেয়ে তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিলাম। পাশেই টেবিলে বোতলে পানি রাখা ছিলো ঢকঢক করে পুরো হাফ বতল পানি শেষ করে মুখটা মুছে করুন চোখে ওনার দিকে তাকালাম যেনো কিছু না করেও ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে আমায়।

এভাবে তাকিয়ে না থেকে কি বলতে এসেছিস সেটা বলে বিদায় হও।

এখানে আসার আগে বহু কষ্টে যে রাগটা সঞ্চয় করেছিলাম সেটা এখন ভয়ে একদম ভেজা বিড়াল হয়ে গেছে তাই মানে মানে এখান থেকে কেটে পড়ায় ভালো। কেবলি দরজার দিকে পা বাড়াবো তখনি ওনি পিছন থেকে গম্ভীর আওয়াজ তুলে বলল, পুরো কাহিনীটা না বলে এখান থেকে এক পাও বাড়ালে পা কেটে ঘরে বসিয়ে রাখব।

ব্যাস ওনার এই একটা কথায় আমার পা জায়গায় ফ্রিজ হয়ে গেলো ভয়ে কোনো মতে ওনার দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম। নে এখন বলা শুরু কর গ্রামের বাড়ি আমার কি এমন মহা ভুল খুঁজে পেলি যে এখন পযন্ত সেটা মাফ করতে পারছিস নাহ। আর তোর মাফ না করার সাইড ইফেক্ট আমার উপর এতো খারাপ ভাবে পড়ছে। সাফ সাফ সবটা বলবি শরীলটা ভালো লাগছে না যলদি বল।

আপনার কি বেশি শরীল খারাপ লাগছে জ্বরটা মনে হয় বেড়েছে আপনি বরং শুয়ে পড়ুন আমি মামী মণি কে বলে মাথায় পানি দেওয়ার ব্যাবস্হা করি।

এখন এতো দরদ দেখাতে হবে না যেটা করার সেটা তো এই কয়দিনে করেই ফেলেছিস। এখন কথা না বাড়ায়ে আসল কথা বল।

ওনার শুনে আর কিছু বললাম নাহ মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকিয়ে সেদিন রাতে দেখা সবটা গড়গড় করে বলে দিলাম। কিন্তু সামনে থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে মাথাটা উঁচু করে তাকিয়ে দেখি ওনি চোখ বড় বড় করে রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি শেষ এবার মনে হয় একটা মার ও মাটিতে পরবে নাহ আমি ভয়ে ভয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। আর ওনি ওনার অসুস্থ শরীল নিয়ে বিছানা থেকে উঠে হেলেদুলে আমার সামনে আসলো৷ আমিতো চড় খাওয়ার জন্য একদম রেডি হয়ে আছি আচমকা ওনি আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। এতোটাই শক্ত করে ধরেছে যে মনে হচ্ছে আমি এখনি ওনার বুক চিড়ে ওনার বুকের মধ্যে ঢুকে যাবো৷ আর ওনার শরীল অনেক গরম হয়ত জ্বরটা বেড়েছে।

মাঝে মাঝে কি মনে হয় জানিস? মন চাই তোকে এভাবে ঠেসে শক্ত করে বুকের সাথে জরিয়ে রাখি। না না একদম বুকের ভিতর ঢুকিয়ে রাখি আর তারপর মাঝে মাঝে বুক থেকে বের করে ঠাটিয়ে তোর দুগালে সমানে কষে চড় মারি। তাহলে যদি তোর মাথায় বুদ্ধির উদয় হয়। হ্যাঁ কেননা এমন না করলে তো তুই বুঝতেই পারবি নাহ। এতোদিন জানতাম তুই গাধী কিন্তু এখনতো দেখছি তুই গাধীর সাথে রাতকানাও।

ওনি আমাকে ছেড়ে দিয়েছে তাই আমি একটা জোরে সরে লম্বা শ্বাস নিয়ে ওনাকে প্রশ্ন করলাম মানে?

আমার প্রশ্নটা যেনো ওনার কাছে ডাল ভাত কোনো প্রকার উত্তর দেওয়ার কোনো আগ্রহই নেই। পাশে রাখা বিন ব্যাগটাই ধপাস করে বসে গাটা এলিয়ে দিয়ে বলল, তুই যদি রাতকানাই না হবি তাহলে এতো আলো থাকা সত্ত্বেও তুই এটা দেখলি না যে মীরা হয়ত আমার কাঁধে হাত রেখেছিলো কিন্তু আমি মোটেও ওকে স্পর্শ করিনি। আমি নিচু হয়ে ওকে আমার উপর পড়া থেকে বাঁচাতে দুই হাতে নারিকেল গাছ ধরে ছিলাম।

মানে ঠিক বুঝলাম না।

তোর মাথায় বুদ্ধি থাকলে তো বুঝবি পানির বোতলটা এদিকে দে পানি খাই মাথাটা বেথ্যা করছে। ওনার কথা অনুযায়ী আমি ভালো মেয়ের মতো পানির বতলটা ওনার দিকে এগিয়ে দিলাম ওনি ঢকঢক করে আমার রাখা অর্ধেক পানিটা শেষ করে বতলটার মুখ আটকিয়ে পাশেই রেখে দিলো৷ আর এদিকে আমি পুরো কথাটা শুনার আশায় অধীর আগ্রহ নিয়ে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি চাতক পাখীর মতো৷

তুই রুমে যাওয়ার পর পরই মীরা দৌড়ে এলো ও হয়ত আমাকে তোর সাথে দেখেছিলো তাই এসে জিগাস করছিলো তুই আমার সাথে কি করছিলি। আমি ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই তাই ওকে ধমক দিয়ে বললাম রুমে যেতে। বেচারি ভয়ে তাড়াহুরো করে যেতে গিয়ে গাছের শিকরে বেঁধে আমার উপর পরছিলো তাই আমি নিচু হয়ে গাছটাকে ধরে নিজেকে বাঁচায় আর ও আমার কাঁধে হাত রেখে ওর পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাই। আর তুই মীরার পিছন থেকে শুধু মীরা আমার কাঁধে হাত দিয়ে রেখেছে এটা দেখে নিজের মন মতো কাহিনী বানিয়ে বসে আছিস গাধী কোথাকায়।

সত্যি নিজের উপর অনেক রাগ হচ্ছে কেনো যে সেদিন এগিয়ে গিয়ে পুরোটা দেখলাম নাহ। শুধু শুধু ওনাকে এতোটা কষ্ট দিলাম আর নিজেও কেঁদে কেটে নদী বানালাম। তবে এটা ভেবেও খুশি লাগছে যে ওনি আমি ছাড়া আর কোনো মেয়েকে পাত্তা দেয় নাহ। ওনি বসা থেকে ওঠে এসে আমার পিছনে দাঁড়িয়ে ওনার গরম হাত দিয়ে আমার ঠান্ডা বরফ শীতল হাতটা স্পর্শ করে হালকা করে জড়িয়ে ধরল তারপর কানে কানে বলল, এর থেকেও আরো বেশি কিছু করার আগেই এখান থেকে চলে যা নয়ত জ্বরের ঘোরে কি করবো নিজেও জানি না পরে কিছু হলে কিন্তু আমাকে দায়ী করতে পারবি নাহ।

ওনার কথা শুনতেই আমার কান দিয়ে যেনো গরম ধোয়া বের হচ্ছে কোনো রকমে ওনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। সত্যি ওনি দিন দিন বড়ই অসভ্য য়ে যাছে।
,,,,
সেদিনের পর মাঝে আরো কয়েকটা দিন চলে গেছে আর সপ্তাহ খানিক পরেই আমার এইচএসসি পরীক্ষা সেই জন্য একেবারে দিন রাত এক করে আমি পড়তে বসেছি। এমন ভাব যেনো আমি আজকেই সব বই পড়ে একদম মুখস্থ থেকে ঠুথস্থ করে ফেলবো৷ পড়া শেষ করে কেবলি গা একটু বিছানায় এলিয়ে দিয়েছি তখনি আম্মুর একটা কথায় বাজ পরার মতো শব্দ করে যেনো আমার উপর পড়ল মেঘলা আপুর নাকি আজকে দেখতে আসবে। এটা কোনো কথা? আমি ধপ করে শোয়া থেকে উঠে বসে বললাম। আম্মু কি বললে আবার বলো তো ঠিক শুনতে পাইনি।

কানে কি ইদানীং কম শোনা ধরেছিস নাকি? কতবার বলবো মেঘলাকে আজ দেখতে আসবে আর যদি পছন্দ হয় তাহলে আংটি পরিয়ে যাবে আর তারপর দুই পক্ষ বসে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবে। এবার শুনেছিস কি বললাম? আর হ্যাঁ আমি তোর মামাদের বাসায় যাচ্ছি মনির আগেই চলে গেছে তুই যদি যাস তাহলে দরজায় তালা মেরে রেখে যাবি। কিরে কি বললাম শুনেছিস তো?

আম্মু কি বলছে সেটা যেনো আমার কানেই ঢুকছে না আমি শুধু ভাবছি একমাস আগে শুনলাম মেঘ ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এখন আবার শুনছি মেঘলা আপুকে দেখতে আসবে তাহলে কেমনে কি। মেঘ ভাইয়া তো বলেছিলো একমাস পর ভাইয়ার ছোট ভাই নেহাল না বেহাল সে আসলেই বিয়ে৷ একমাস তো হয়ে গেছে তারপর ওদিকে মেঘ ভাইয়ার বিয়ে আবার এদিকে মেঘলা আপুরও দেখতে আসছে। আবার আমার এক সপ্তাহ পরেই পরিক্ষা তাহলে আমি কোন দিকে যাবো? একেই বুঝি বলে গোঁদের উপর বিষফোঁড়া মানে বিপদের উপর বিপদ। লও ঠেলা।

চলবে……

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_২৩
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
আম্মু যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমিও ছুটলাম আম্মুর পিছু পিছু কেননা এভাবে বসে থাকা যাবে নাহ। কি হচ্ছে ব্যাপারটা দেখতেই হবে। ওড়নাটা ভালো করে মাথায় দিয়ে চললাম আজকে সূর্যের তাপটা এতোটাও বেশি নয় আকাশটাও কেমন মেঘলা মেঘলা। মেহরাব ভাইদের বাড়ির গেট পেরিয়ে দরজার কাছে যেতেই দেখি দরজা হাট করে খোলা। আর ভিতরে সবাই ব্যাস্ত আম্মু অল্প সময়ের মধ্যে এসেই কাজে লেগে গেছে। যতই হোক বাড়ির একমাত্র মেয়েকে দেখতে আসছে বলে কথা। তবে এতো কিছুর মাঝে কোথাও মেহরাব ভাই কে দেখতে পেলাম নাহ হয়ত ভীষণ ব্যাস্ত। আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মামী মণি তড়িঘড়ি করে আমার কাছে এলেন ওনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওনি ভীষণ ব্যাস্ত।ডান হাত থাকে খুন্তি আর শাড়ির আঁচল টা কমরে গুজে রেখেছে বাম হাত দিতে কপালের ঘামটা মুছতে মুছতে বলল, তুই এসে ভালো করেছিস একটু যা না মা উপরে গিয়ে দেখতো মেঘলাটা কি করছে বিকেলের দিকেই ওরা চলে আসবে তুই গিয়ে ওকে একটু রেডি করা। আমার হাতে ভীষণ কাজ। কথাটা বলতেই রান্না ঘরের ভিতর থেকে আম্মুর গলার স্বর ভেসে আসলো মামী মণি কে ডাকছে। মামী মণিও আর দেরি না করে দ্রুত পায়ে আবার রান্না ঘরে চলে গেলো। আমি আর কি করবো একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে উপরে চলে গেলাম মেঘলা আপুর রুমে যাওয়ার আগে মেহরাব ভাই এর রুমে উঁকি দিলাম কিন্তু ভিতরে কেউ নেই হয়ত বাইরে গেছে।

মেঘলা আপুর রুমে গিয়ে দেখি বিছানায় সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শাড়ি গয়না আরো অনেক কিছু। আপু জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে হয়ত একটু আগেই গোসল করেছে তাই চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে। আমি গিয়ে আপুর পিছনে দাঁড়ালাম। চুলটা ভালো করে মুছোনি কেনো আপু দেখো কেমন পানি পরছে এভাবে পানি পরলে তো তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।

কথাটা বলেই আমি পাশের চেয়ারে রাখা তোয়ালে টা দিয়ে আপুর চুলটা মুছে দিতে গেলেই আপু পিছন ফিরে আমাকে জাপটে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল। আমি অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে আপুর মাথায় হাত রেখে বললাম, কি হয়েছে আপু এভাবে কাঁদছো কেনো? বলো আমায়।

আমি এই বিয়ে করতে পারবো না মাহি প্লিজ তুই কিছু কর আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে রে আমিতো মেঘকে ভালোবাসি তাহলে অন্য কাউকে কীভাবে বিয়ে করবো বল?

অতিরিক্ত কান্নার জন্য কান্নার আপুর কথা ভালো ভাবে বোঝা যাচ্ছে নাহ। তবে যতটুকু বুঝলাম আপু এই বিয়েতে মোটেও রাজি নয় আমি আপুকে সামনে এনে দাঁড় করালাম৷ কান্না করে চোখ মুখ একদম লাল করে ফেলছে৷ আচ্ছা বুঝলাম যে তুমি এই বিয়েতে রাজি নয় তাহলে তুমি কাউকে বলছো না কেনো? আর মেহরাব ভাই ওনাকে তো বলতে পারতে।

কিভাবে বলবো ভাইয়াই তো বিয়েটা ঠিক করেছে এই বিয়েতে ভাইয়া অনেক খুশি আমি কি করে ভাইয়ার খুশি নষ্ট করবো বল। আমি মেঘ কেও কল দিছিলাম কিন্তু কিছু বলতে পারিনি শুধু বলেছি আমাকে আজকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।

তো মেঘ ভাইয়া কি বলল?

কি বলবে আবার বলল এটা তো ভালো খবর ওনার ও নাকি সামনে বিয়ে তাই বলল দুজনের একি মাসে বিয়ে হবে৷ খুশির খবর ওনি নাকি আমার বিয়েতে আসতে পারবে না কেননা ওনারও বিয়ে তাই। আরো কতো কিছু বলল তারপর এই বলে ফোন কেটে দিলো আমার মনে হয় আমার বিয়েতে ওনার কিছুই যায় আসে নাহ।

আপুর কথায় বুঝতে পারলাম এই সবের মেন নাটের গুরু হলো মেহরাব ভাই ওনাকেই ধরতে হবে তাহলে বিয়েটা আটকানো যেতে পারে।তাই আপুকে বললাম, দেখি এতো কান্না করতে হবে না আর দেখতে আসলেই তো বিয়ে হয়ে যাবে নাহ বলো। তুমি বরং রেডি হয়ে নাও আমি দেখছি মেহরাব ভাই কোথায়।

আপুর রুম থেকে বেরিয়ে এসে মেহরাব ভাই এর রুমে ঢুকলাম কিন্তু ওনি এখনো আসিনি তাই আমি ওনার রুমে বসে ওনার জন্য অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষণ পর ওনি রুমে আসলো সারা শরীল ঘেমে গেছে। গায়ে জামা ভিজে বসে গেছে কপালের উপর পরে থাকা চুলগুলোও ঘেমে ভিজে গেছে দেখেই মনে হচ্ছে বাইরে থাকে আসল। হয়ত দকারি জিনিস আনতে গিছিলো ওনি এসে রুমে ঢুকে রুমের দরজাটা আলতো করে ভিড়িয়ে দিয়ে আমার কাছে এসে আমার ওড়নার এক কোণা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল, তুই এখনি এখানে এসেছিস কেনো পড়া নেই? আচ্ছা এসেছিস যখন একটু পরেই আবার চলে যাবি সামনে পরিক্ষা পরতে বসতে হবে৷

মেহরাব ভাই আপনার সাথে আমার কথা আছে শুনুন নাহ।

নাহ এখন আমার হাতে মোটেও সময় নেই ওবাড়ি থেকে ফোন দিয়েছিলো ওরা নাকি বেরিয়ে পরেছে। আমি এখন ফ্রেশ হয়ে রেডি হবো তুইও বরং মেঘলা কে রেডি করিয়ে রেডি হয়েনে।

কি বললেন আমি রেডি হবো?

হ্যাঁ রেডি হয়ে মেঘলাকে নিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে যাবি। নইলে মেঘলা একা ঘাবড়ে যাবে না? কথাটা বলে মেহরাব ওয়াশরুমে চলে গেলো আর আমি হ্যাঁ করে ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি৷ যে কিনা আমি এমনি কোনো ছেলের সামনে বা বাইরের মানুষের সামনে গেলে রেগে পারলে আমায় আছাড় মারবে আজ সেই কিনা বলছে রেডি হতে তাও আবার সোজা পাত্রপক্ষের সামনে যেতে। হঠাৎ করে ওনার আবার কি হলো? আজব।
,,,,,,,
আপুকে রেডি করায়ে আমিও রেডি হয়ে নিলাম নিচে পাত্রপক্ষ চলে আসছে আপুতো কিছুতেই ওনাদের সামনে যাবে নাহ। তবুও বহু কষ্টে আপুকে নিয়ে নিচে গেলাম একটা সোফায় মামা বসে আছে আর মামার পাশেই মেহরাব ভাই দাঁড়িয়ে আছে। আজকে ওনি পাঞ্জাবি পরেছে মনে হয় গোসল করেছে তখন এই জন্য ওনাকে এখন দেখতে ফ্রেশ লাগছে। ওনি দাঁড়িয়ে সবার সাথে কথা বলছে আর আরেকটা সোফায় একজন ভদ্র মহিলা আর ভদ্র লোক বসে আছে। মূলত মেহরাব ভাই ওনাদের সাথেই আলাপ করছে আমি মেহরাব ভাই এর দিকে তাকিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে একটুর জন্য পরতে গিয়ে পড়েনি৷ আপুকে নিয়ে ওনাদের সামনের সোফায় বসায়ে দিয়ে আমি পাশে দাঁড়ালাম।

মেহরাব কে তো আমরা অনেক আগে থেকেই চিনি আমার ছেলের মতোই ওকে ভালোবাসি। কিন্তু ওর যে এতো মিষ্টি একটা বোন আছে সেটা তো মেঘ না বললে জানতেই পারতাম নাহ। আর মেহরাব তুমিও তো কখনো বলোনি যে তোমার এমন পরির মতো একটা বোন আছে৷

ভদ্র মহিলার কথায় মেহরাব ভাই কিছু বললো না শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তবে আমি এখনো একটা জিনিস বুঝতে পারছি না ওনারা কি মেঘ ভাইয়াকে চেনে? তাহলে কি মেঘ ভাইয়া ওনাদের মেঘলা আপুর কথা বলেছে তারপর ওনারা আপুকে দেখতে এসেছে? আমার মতো হয়ত আপুও অনেক বেশিই অবাক হয়েছে তবে কিছু বলতে পারছে নাহ। ওনারা আরো অনেক কথায় বলছে কথার এক পর্যায়ে ভদ্র মহিলাটা আমার দিকে তাকিয়ে জিগাস করলো আমি কে?

আসলে ও হলো মাহি আমার বোনের একমাত্র মেয়ে । মামার কথা শুনে ভদ্র মহিলা বলল, বাহ দেখতে তো ভারি মিষ্টি ভাবছি মেঘ এর বিয়েটা দিয়ে আমার নেহাল এর জন্য ওনাকে আর বলতে না দিয়ে মেহরাব ভাই বলল, আন্টি মেঘ এখনো আসলো না কেনো? এতো দেরি করছে কেনো? আর মাহি এখনো অনেক ছোট আমরা আপাতত ওর টপিকটা বাদ দিয়ে সামনে আগায় কি বলেন?

হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি ঠিকি বলেছো মেহরাব আর সবি তো ঠিকি আছে এখন শুধু মেঘ এসে আংটিটা পরালেই হবে। কিন্তু ও এখনো আসছে না কেনো সেটাই বুঝতে পারছি নাহ।

ওনাদের কথা শুনে আমার চোখ কপালে উঠে গেছে মেঘ ভাইয়া এসে আংটি পরাবে মানে? আমার মাথার মধ্যে সবকিছু কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। না জানি মেঘলা আপুর কি অবস্থা। আমি নিচু হয়ে আপুর দিকে তাকাতেই দেখি বেচারি মাথায় হাত রেখে বসে আছে হয়ত এতোকিছু হজম করতে পারছে নাহ। সবাই কথা বলছিলো তখনি দরজা দিয়ে মেঘ ভাইয়া ঢুকতে ঢুকতে বলল, আম সরি গাইজ আমার আসতে একটু লেট হয়ে গেলো আসলে শেষ মুহুর্তে একটা কাজ পরে গিছিলো তাই আসতে এতো দেরি হলো।

মেঘ ভাইয়া ইউনিফর্ম পরেই এসেছে জীবনের প্রথম আমি দেখলাম কোনো ছেলে ইউনিফর্ম পরেই মেয়ে দেখতে এসেছে। এনি মেয়ে দেখতে এসেছে নাকি মেয়েকে এরেস্ট করে জেলে নেওয়ার জন্য এসেছে কে জানে। আপুর দিকে তাকাতেই দেখি আপু চোখ বড়বড় করে মেঘ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে৷ তার কিছুক্ষণ পরই আপু হঠাৎ করে অঙ্গান হয়ে আমার আমার গায়ে ঢলে পড়ল। সত্যি অঙ্গান হওয়ারই কথা আমারি মাথা ভোঁ ভোঁ করছে তার আপুকে কি বলবো বেচারি এতো কিছু হজম করতে না পেরে ডাইরেক্ট বদহজম হয়ে গেলো।

চলবে…..

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_২৪
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
মাহি এসব হচ্ছে কি তুই এখনো ছোট আছিস? এভাবে পাঞ্জাবি ধরে টানাটানি করছিস কেনো? ছিঁড়ে গেলে কি তোর বাপ কিনে দেবে? আর তোর না সামনে সপ্তাহে পরিক্ষা তুই এখনো এখানে কি করছিস? মেহমানরা তো চলে গেছে আর ফুপি রাতে যাবে তুই এখন গিয়ে পড়তে বসবি।

আজব তো আপনার পাঞ্জাবি ছিঁড়ে গেলে তা আমার আব্বু কিনে দেবে কেনো? আপনার নতুন পাঞ্জাবি কেনার টাকা নাই নাকি? আর আমি মোটেও টানাটানি করছি না। আর আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর টা দিয়ে দেন আমি চলে যাচ্ছি।

মাহির কথা শুনে মেহরাব মাহির দিকে ফিরে মাহির হাত থেকে নিজের পাঞ্জাবির কোনা ছাড়িয়ে সোফায় বসে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে বল তোর কি প্রশ্ন।

মেঘলা আপুর বিয়ে মেঘ ভাইয়ার সাথে ঠিক হয়েছে এটা আপনি আমায় আগে বলেননি কেনো? আর গ্রামের বাড়িতে যখন সবাই বলল যে মেঘ ভাইয়ার বিয়ে তখন ও তো আপনি বললেন না যে আপির সাথেই বিয়েটা হবে।

মেহরাব এর সামনে দাঁড়িয়ে এক ডালি অভিমান নিয়ে বললাম কথাটা। ওনি আমার কথা শুনে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবি ঝেড়ে সোজা করে হাতা কনুই থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল, আজব তো তুই কি কখনো জিগাস করেছিস নাকি আমায় যে মেঘ এর কার সাথে বিয়ে? আর আমিও জানতাম না মেঘ এর সাথে মেঘলার বিয়ে ঠিক হবে। মেঘই আগে এসে আমায় বলেছিলো ও আমার কাছে কিছু চাই তো আমিও জিগাস করলাম কি চাই। ও বললো মেঘলাকে ওর ভালো লাগে ওকে বিয়ে করতে চাই। আর আমি মেঘকে চিনি অন্য কোনো ছেলে হলে হয়ত মেঘলাকে প্রপোজ করতো প্রেম করতো কিন্তু মেঘ তেমন নয় ও সরাসরি আমার কাছে মেঘলাকে চেয়েছে। মেঘ আর আমার বন্ধুত্ব অনেক বছরের মেঘ এর পা থেকে মাথা অবধি আমার চেনা তাই আমি নিশ্চিন্তে মেঘলাকে মেঘ এর হাতে তুলে দিতে পারবো৷ কেননা মেঘ আমার মতোই মেঘকে আগলে রাখবে বুঝলি এবার? এখন সর সামনে থেকে।

সত্যিতো আমিতো কখনো ওনার কাছে জিগাস করেনি যে মেঘ ভাইয়ার কার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে। শুধু তো মেঘলা আপু মেঘ ভাইয়া কে পছন্দ করে এটা ভেবেই আর জিগাসা করা হয়নি। নিজের মাথায় নিজেরই গাট্টা মারতে ইচ্ছে হচ্ছে যদি আগেই জিগাস করতাম তাহলে আপুর ও আর এতো কষ্ট সয্য করতে হতো না আর আমারও এতো টেনশন করতে হতো নাহ। আকাশ পাতাল ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসতেই মেহরাব ভাই বলল, কিরে এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? এখন কি আমার চেঞ্জ করা দেখে তারপর যাবি? ওকে আমার কোনো সমস্যা নেই।

ছিঃ এসব কি বলছেন ওনি এসব লাগাম ছাড়া কথা বার্তা কেউ বলে? আচ্ছা তুই যখন যাবি না ঠিক করেছিস তখন আমি এখানেই চেঞ্জ করছি। কথাটা বলতে দেরি না ওনি পাঞ্জাবি খুলা শুরু করে দিয়েছে। আমি বুঝে গেছি আমার এখানে থাকা মোটেও উচিত হবে নাহ তাই চোখের উপর হাত রেখে রুমের বাইরে চলে গেলাম। কেননা ওনার কোনো ভরসা নেই সত্যিই দেখা যাবে সবকিছু খুলে বসে আছে মানে পাঞ্জাবি। এবার মেঘলা আপুর সাথে দেখা করেই চলে যাবো গিয়ে আবার পরতে বসতে হবে। আপুর রুমে গিয়ে দেখি আপু বিছানায় মনমরা হয়ে বসে আছে আমি গুটি গুটি পায়ে আপুর পাশে বসে বললাম, কি বিয়ে কণে এভাবে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে কেনে? এখন তো তেমার ডিজে গান ছেড়ে নাচানাচি করার সময়। আহা যাকে ভালোবাসো তার সাথেই বিয়ে হচ্ছে। এখন তো শুধু মজাই মজা।

আমি এই বিয়েটা করবো নাহ।

মেঘলার এই একটা কথায় আমার মাথার মধ্যের সবকিছু এলোমেলো করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আপুর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি আচমকা ক্যারেন্ট শর্ক খাই নইলে যেনো আমার উপর এখন ঠাডা পড়ে। লে নিজের তো এতোক্ষণ মেঘ ভাইয়ার জন্য হা হুতাশ করছিলে। কান্না কাটি করে নদী বানিয়ে ফেলছিলে আর এখন যখন ওনার সাথেই বিয়ে ঠিক হলো। তখন একেতো অঙ্গান হয়ে শশুর শাশুড়ির সামনে প্রমাণ করলে আমার মামা মামী তোমায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়াই না। আবার এখন বলছো বিয়েটাই করবে নাহ কেনো শুনি?

কেনো বিয়ে করবে ওনাকে তুইই বল আমি যখন ওনাকে ফোন দিলাম তখন একবারের জন্যও বললো না যে ওনার সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়ছে। আবার বলে এনজয় করো খাটাশ লোক। আর আমার ভাইকে দেখ আস্তো একটা মীরজাফর সবকিছু জেনেও আমাকে কিছুই জানালো না। তাই আমি ঠিক করেছি যে মেঘকে বিয়ে করবো নাহ ওনাকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার।

আপুর কথা শুনে তো আমার মাথার মধ্যে ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে এতোবড় একটা মেয়ে তবুও কেমন বাচ্চাদের মতো কথা বলছে। আরে আপু মেঘ ভাইয়া কে শিক্ষা দিতে চাইলে ওনাকে বিয়ে না করার কী কারণ বরং ওনাকে বিয়ে করলে তুমি আরো ভালো করে ভাইয়াকে শিক্ষা দিতে পারবে।

কিভাবে ঠিক বুঝলাম নাহ।

শোনো তুমি যদি এখন বিয়েটা ভেঙ্গে দাও তাহলে মেহরাব মামা মামী সবার মান সম্মান থাকবে? তুমি মেঘ ভাইয়া কে শিক্ষা দিতে গিয়ে সবাইকে কষ্ট দিয়ে ফেলবে আর মেঘ ভাইয়ার কি হবে ওনি দুইদিন পর তো আবার অন্য কাউকে বিয়ে করবে তখন?

ঠিকি তো আমিতো এভাবে ভেবে দেখিনি তহলে এখন উপায়?

তারচেয়ে তুমি বরং মেঘ ভাইয়া কে বিয়ে করে ফেলো তারপর তো সারাজীবন পরেই আছে ওনাকে জ্বালানো জন্য। নিশ্চিন্তে জ্বালাতে পারবে বুঝলে আর ভাইয়া কিছু বলতেও পারবে নাহ।

আরেহ আমিতো এভাবে ভাবিইনি একদম ঠিক কথা বলেছিস তুই ওনাকে শিক্ষা দিতেই হবে। আর একজন কেউ তো মজা দেখাতে হবে সেও তো আমায় কষ্ট দিয়েছে তাকেও শাস্তি পেতে হবে আর তাকে শাস্তি দিবি তুই।

আমি? কে বলোত?

কে আবার আমার গুনধর ভাই ওকে তো মজা দেখাতেই হবে। আর আমি জানি আমার ভাইয়ের দুর্বল স্হান হলো তুই তাই তুই ওকে শাস্তি দিবি। আমার সাথে এমন করার বদলা তোকে নিতেই হবে মাহি।

আপুর কথা শুনে আমার মাথার সব চুল মনে হচ্ছে একসাথে দাঁড়িয়ে গেছে৷ এ কিরে একদম নিজের ভাইয়ের মতো যেমন ভাই তার তেমন বোন দুটোই আমায় জ্বালিয়ে মারে। এখন আবার আমায় অকালে মারার নতুন ফন্দি আটছে। বলছি কি যে আপু আমার না পরিক্ষা আমি বরং যাই ওকে আবার পরে দেখা হবে। কথাটা বলে ওখান থেকে কোনো মতে কেটে পরবো তখনি আপু হাত ধরে বলল, এই পালানোর চিন্তা বাদদে যেটা বললাম সেটা মাথায় থাকে যেনো।

আপু তুমি কি পাগল হইছো? তুমি জানো নাহ তোমার ভাই কেমন আমি ভুলভাল কিছু করলে আমায় বিনা টিকিটে উপরে তুলে দিবে।তারচেয়ে বরং আমি যাই আমি এইসব এর মধ্যে নাই বাপু আমায় ছেড়ে দাও।

না তোকে তো ছাড়া যাবে না কাজটা তোকে করতেই হবে। শোন এখন গিয়ে পড়তে বস তোকে কি করতে হবে সেটা আমি পরে বলে দেবো।

তুমি কি গো আপু নিজের বরের আর ভাইয়ের থেকেও বদলা নেবে? নেবে তো ভালো কথা শুধু শুধু আমার মতো একটা নিরীহ মেয়েকে কেনো ফাঁসাচ্চো? এই প্রথমবার আমার মেঘ ভাইয়ার জন্য মায়া হচ্ছে আহারে বেচারার কি কপাল এমন একটা দজ্জাল বউ পাবে। সারাদিন বাইরে চোর গুন্ডাদের পিটাবে আর রুমে আসলে বউয়ের হাতে নিজে না পিঠুনি খাই।

এই তুই কি বললি দাঁড়া ওখানে তোর হচ্ছে পাকা পাকা কথা বলা বার করছি। কে শোনে কার কথা ওখানে আর থাকলে তো এক দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলাম। বাইরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে সাথে এলোমেলো বাতাস ধূলো গুলোও উড়াউড়ির কারণে ভালো চোখে দেখা যাচ্ছে নাহ। ওরনা মাথায় ভালো করে পেঁচিয়ে দৌড়ে কোনো মতে বাড়ির সামনে আসলাম। চাবি দিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে ভিতরে গিয়ে জোরে নিশ্বাস নিলাম মনে হয় রাতে ঝড় হবে বাড়িতেও কেউ নেই ঝড় হলে যে কীভাবে থাকবো কে জানে।

চলবে….