ভালোবাসি বুঝে নাও ৩ পর্ব-১৯+২০+২১

0
373

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_১৯
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
কি এখন মুখটা এমন হা হয়ে গেলো কেনো হুম? এতোক্ষণ তো খুব বকবক করছিলে বলো এখন কি হলো কথা বলছো না কেনো? মাহি মেঘলাকে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে বলল।

ওনি এখানে কি করছে? কোনো ভাবে কি ভাইয়া ওনাকে এখানে আসতে বলেছে নাকি? কই আমরা তো জানি না ওনি কীভাবে জানলো আমরা গ্রামে এসেছি। মেঘলা মনে মনে এসব ভাবছিলো তখনি মাহি বলল, থাক তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবে নাহ এখন চলো ওখানে যায়। মেঘলা তো মেঘকে দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে মাহির সাথে হেঁটে যাচ্ছে। মাহি মেঘলার হাত ধরে মেহরাবদের কাছে এসে বলল, আরে মেঘ ভাইয়া আপনি এখানে?

হ্যাঁ পাশের গ্রামে একটা কাজ ছিলো সেটা শেষ করেই বাড়ি ফিরছিলাম তখনি তোমাদের সাথে দেখা হয়ে গেলো। মেঘলার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল মেঘ।

মেঘ এর কথা শুনে রিফাত বলল, আরে ভাবি এখন আর মেঘ ভাইয়াকে মেঘ ভাইয়া বলা লাগবে না মেঘ বর বলেন।

রিফাত এর কথা বুঝতে না পেরে মাহি বলল, মানে?

আরে ওর কথা বাদদে তো আসলে আমাদের মেঘ বাবুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তো তাই রিফাত ওকে বর বলতে বলছে।

মেহরাব ভাই এর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে মেঘলা আপুর দিকে তাকালাম দেখলাম আপুর চোখ ছলছল করছে। এখানে কেউ না থাকলে হয়ত এখনি সকল বাদ ভেঙে অঝর ধারায় বৃষ্টি নামতো। আপু আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে আমার বেথ্যা লাগলেও কিছু বললাম নাহ।

আরে মাহি তুমি ওদের কথায় কিছু মনে করো নাতো ওরা সবসময় বেশি বারিয়ে বলে। আর বিয়ে তো এখন নাহ আগে নেহাল ফিরবে তারপর।

মেঘ ভাইয়ার কথাশুনে আমি হাসার চেষ্টা করলাম কিন্তু হাসি তো আসে নাহ। আমরা পরশোদিন চলে যাবো তাই কথা হলো মেঘ ভাইয়াও আমাদের সাথে থাকবে আর একবারে আমাদের সাথেই ফিরবে। কথা শেষ হলে সবাই আবার সামনের দিকে হাঁটতে লাগল আমি আস্তে করে আপুকে জিগাস করলাম। আপু তোমার কি খারাপ লাগছে? বাড়ি ফিরে যাবে?

আরে নাহ আমি ঠিক আছি চল দেখ ওরা কত আগে চলে গেছে চল চল। আপু আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো আমি শুধু আপুর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ঘুরা শেষে আমরা সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে চলে আসলাম আর আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে মেহরাব ভাই কে বলব যে মেঘ ভাইয়া আর মেঘলা আপুর কথা। আমি নিশ্চিত আপু মেঘ ভাইয়া কে ভালোবাসে কিন্তু বলতে পারছে নাহ তাই যা করার আমাকেই করতে হবে। কিন্তু কই মেহরাব ভাই ওনাকে তো খুঁজেই পাচ্ছি নাহ থেকে থেকে একদম হাওয়া হয়ে যায়। খুঁজতে খুঁজতে পুকুর পাড়ে চলে গেলাম ওখানে গিয়ে দেখি ওনি মীরা আপুর সাথে গল্প করছে । ওখানে অবশ্য আরো অনেকেই ছিলো কিন্তু আমার চোখ শুধু ওনাদের দুইজনকেই দেখছিলো। আমি নিজের রাগকে সংযত রেখে মেহরাব ভাই এর কাছে গিয়ে বললাম।

আমার সাথে একটু আসুন তো কথা আছে।

কি কথা এখানেই বল আমি উঠতে পারবো নাহ দেখছিস না আমরা আড্ডা দিচ্ছি।

আহ মেঘ যা না ওর সাথে হয়ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে গিয়ে শুনে আয় এভাবে তেড়্যামো করছিস কেনো? মেঘ ভাইয়ার কতা শুনে মীরা মেহরাব ভাই এর বাম হাত ধরে বলল, কেনো মেঘ ভাইয়া মেহরাব ভাইয়া কেনো যাবে ওর সাথে কী এমন কথা বলবে যে এখানে বলা যাবে নাহ। আর মাহি মেহরাব এর সাথে এভাবে কথা বলো কেনো ভুলে যেও নাহ ওনি তোমার বড় ভাই। আর তোমার যা বলার এখানেই বলো মেহরাব ভাই কোথাও যাবে নাহ।

এমনিতেই রাগ ছিলো কিন্তু এখন রাগ আরো বেড়ে গেলো নিজেকে সংযত করতে না পেরে মেহরাব এর ডান হাত ধরে দিলাম এক টান ওনি হুরমুর করে পড়তে পড়তে দাঁড়িয়ে গেলো। আরে এভাবে টানাটানি করছিস কেনো?

ওনার কথায় কান না দিয়ে শক্ত করে ওনার হাত চেপে ধরে টানতে টানতে ওখান থেকে নিয়ে আসলাম আর ওনি সমানে বলে যাচ্ছে দাঁড়া স্যান্ডেল টা পরতে দে। আজব এখানে জীবন মরণ সম্যসা আর ওনি স্যান্ডেল নিয়ে পরে আছে। মনে হচ্ছে স্যান্ডেল না পরতে পারলে ওনার বিয়েই হবে নাহ।

বাহ বাহ মেঘলা বাহ এই না হলে আমার বোন ঠিক নিজের অধিকার নিজে ছিনিয়ে নিতে জানে গুড এমনি তো হতে হয়। আর আমার জনকে দেখো এমন ভাব যেনো ভাজা মাছটা উল্টে ও খেতে জানে নাহ গাধী একটা। এমনি সময় বেশ ফরফর করবে আর এই দরকারের সময় চুপ করে থাকে। মেঘ কথাগুলো বিরবির করে বলতেই মীরা রেগে বলল, দেখলে সবাই মাহির সাহস কতবড় বিয়াদপ কীভাবে বড়দের সাথে কথা বলতে হয় সেটাও জানে নাহ অসভ্য মেয়ে একটা।

মীরার কথা শুনে অভ্র বলল,এই তুমি যে মাহিকে অভদ্র বলছিলে তাহলে তুমি কেনো মেহরাব এর হাত ওভাবে চেপে ধরে রেখেছিলে কেনো?

আরে মেহরাব ভাই আমার খালাত ভাই আমি ভাই হিসাবে ওনার হাত ধরতেই পারি আজব।

হ্যাঁ তাহলে তো মেহরাব ওতো মাহির মামাত ভাই সেই হিসাবে মাহিও তো মেহরাব কে নিয়ে যেতে পারে এতে এতো রাগার কী আছে?

মীরা যেনো এতে আরো রেগে গেলো রেগে চোখ বড়বড় করে বলল, আজব তো মামাত ভাই বলে কি বড়দের সম্মান করবে নাহ। এভাবে সবার সামনে থেকে টেনে নিয়ে যাবে?

আহ তোরা সবাই একটু চুপ করবি সব সময় শুধু বকবক করিস থাক তোরা আমি গেলাম দেখি ওই দুটো আবার কোথায় গেলো। কথাটা বলে মেঘ ওখান থেকে উঠে এসে মেঘলাকে খুঁজতে লাগল।

আরে ছাড় আমায় এভাবে টানছিস কেনো? আর হাতের নখ এতোবড় কেনো হাতের থেকে মনে হয় গোশত তুলে ফেলছিস। আজকেই নখ কাটবি নয়ত আঙুল সহ কেটে দেবো।

হ্যাঁ আমি ধরতেই তো আপনার হাত থেকে মণ মণ গোশত উঠে যায় আর এতোক্ষণ অন্যকেউ ধরে ছিলো তাতে আপনার কিছু হয়নি নাকি আরাম লাগছিলো। বেটা লুচু ওনাকে কথাগুলো বললাম তবে মনে মনে কেননা এই কথাগুলো ওনার মুখের সামনে বলার সাহস আমার নেই।

কিরে ওখান থেকে ওভাবে টেনে এনে এখন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? কিছু বলবি?

হ্যাঁ বলব, বলছি কি মেঘ ভাইয়ার বিয়ে?

হ্যাঁ কেনো?

কেনো মানে ওনি বিয়ে করবে কেনো ওনি কিছুতেই এই বিয়েটা করতে পারবেন না আমার সম্যসা আছে।

তো? তোর সম্যসা আছে তাতে কি হয়েছে? বিয়ে তো হবেই আচ্ছা কোনো ভাবে কি তুই মেঘকে পছন্দ করিস? একদম না তাহলে কিন্তু গলা টিপে মেরে ফেলব।

ছিঃ কিসব বলেন আমি কেনো মেঘ ভাইয়া কে পছন্দ করতে যাবো। ওনি আমার ভাইয়া হয়।

তাহলে ওর বিয়েতে তোর সম্যসা কই? কোনো সম্যসা নেই এখন চল আমার সাথে এক জায়গায় যাবো।

কোথায়? আর এই রাতের বেলায় কোথাও যাবো না আম্মু খুঁজবে তখন না পেলে আবার সম্যসা আপনিই যান আমি যাবো নাহ। আর আমি শুনেছি গ্রামে নাকি জ্বীন-ভূত থাকে সেই জন্য তো আরো যাবো নাহ।

হ্যাঁ তোর সাথে দেখা করার জন্য জ্বীন ভূত বসে আছে। চল আমার সাথে গাধী কোথাকার। ওনি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন কিন্তু আমিতো ওনাকে আসল কথাটাই বলতে পারলাম নাহ। তাহলে কি সত্যিই মেঘ ভাইয়ার বিয়ে হয়ে যাবে অন্য কারো সাথে?

তারায় ভরা আকাশটা ঝলমল করছে মেঘলা রেলিং ছাড়া ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে ছাঁদে উঠার জন্য একস্ট্রা কোনো সিঁড়ি বানানো হয়নি বাড়ির পিছনে একটা মই বাঁধা আছে। ওটা দিয়েই ছাঁদে উঠতে হয়। মেঘ অনেক সময় ধরে খুঁজেও মেঘলাকে না পেয়ে উপরের দিকে তাকাতেই দেখলো ছাঁদের এককোনায় কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। যেহেতু মেঘলাকে বাড়ির কোথাও পাইনি তাই মেঘ ভাবলো ওটাই মেঘলা তাই মেঘও চুপিচুপি বাড়ির পিছনের দিকে চলে গেলো।
মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছিলো তখনি আচমকা কেউ ওর কাঁধে হাত রাখল। এভাবে আচমকা হাত রাখায় ভয় পেয়ে সামনের দিকে এগোতে গেলো যেহেতু ছাঁদে কোনো রেলিং নেই তাই নিচে পড়ে যাচ্ছিল তখনি কেউ পিছন থেকে ওর কমর শক্ত করে চেপে ধরে টান দিয়ে বুকের সাথে শক্ত করে মিশিয়ে নিলো।

চলবে……

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_২০
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
মনে হচ্ছে দূর হতে কোনো ঢিপ ঢিপ শব্দ প্রবল বেগে ছুটে আসছে আমার দিকে। আর সেটা আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি কিন্তু এটা কিসের শব্দ? আচ্ছা কারো বুকে কান পাতলে কি এমন শব্দ শোনা যায়? কই ভাইয়ার বুকেও তো কত মাথা রেখে রাজ্যের গল্প শুনেছি হাজার ও অভিমান করেছি। তখন তো এমন শব্দ শুনিনি তাহলে ওনার বুকে মাথা রাখতেই এমন শব্দ কেনো আসছে? আমি মেঘের বুকে আমার মাথাটা আরো ভালোভাবে চেপে ধরে সেই ঢিপ ঢিপ শব্দ টা আরো গভীর ভাবে শুনতে চাইলাম। কিন্তু ওনার কথার তেজে আমার সেই ইচ্ছে টাই পালিয়ে গেলো।

কি হলো ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?

নিজেকে ওনার থেকে ছাড়িয়ে যথাযথ দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম। অন্ধকারে ওনার মুখ ভালোভাবে বুঝা না গেলেও আমি বেশ বুঝতে পারছি ওনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে৷ কেমন জানো অসস্তি লাগছে একটা প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে রাতের বেলা এভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকলে যে কারোরি অসস্তি লাগবে। ভাবলাম এখানে এভাবে ওনার সাথে দাঁড়িয়ে থাকলে কেউ দেখে ফেললে কেলেংকারী হয়ে যাবে৷ তারউপর আবার ওনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে না না এভাবে রাতের বেলা ওনার সাথে না থাকায় ভালো৷ ওখান থেকে আসার জন্য পা বাড়াতেই ওনি পিছন থেকে বলল, সেকি তোমাকে ছাঁদে দেখে আমিও আসলাম ভাবলাম দুজনে গল্প করবো৷ কিন্তু তুমিতো দেখি আমাকে একা রেখেই চলে যাচ্ছো।

কেনো আপনি আমার সাথে গল্প করবেন কেনো? আপনার না বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তাহলে তার সাথে গল্প করেন। আমার সাথে কি গল্প করবেন? আর তাছাড়া বন্ধুর বোনের সাথে আপনার এতো কি কথা থাকতে পারে।

হুম তাও তো কথা আর আমার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তার সাথে তো আমি গল্প করবোই কিন্তু সেটা বিয়ের পর। এখন তুমি আছো তাই ভাবলাম তোমার সাথেই করি মানে গল্প৷

শুনুন আমি কারো টাইম পাস করার জিনিস নই বুঝলেন আর আমার মোটেও ইচ্ছে নেই আপনার সাথে গল্প করার আমি গেলাম।

হুম যেতেই পারো তবে আমি শুনেছি গ্রামে নাকি গভীর রাতে ভূতের আনাগোনা দেখা দেয়। এখন আনুমানিক দশটা বাজে হয়ত আর গ্রামে এটা অনেক রাত। এই জন্য বলছি একা না যাওয়াই ভালো।

এতোক্ষণ মনের ভিতর যেই সাহস নিয়ে ওনার সাথে ঝগড়া করছিলাম মুহূর্তের মধ্যে সেটা ফুস করে উড়ে গেলো৷ সত্যিতো এখন যদি আমাকে একা পেয়ে ভূত বাবাজী চেপে ধরে তাহলে কি করবো? তারচেয়ে বরং ওনার সাথেই থাকি হ্যাঁ কষ্ট হবে তবে সেটা সামলে নেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে৷ আস্তে করে গিয়ে ওনার থেকে একটু দূরে গিয়ে বসে পড়লাম। ওনি এখন চাঁদ দেখায় ব্যাস্ত হয়ত চাঁদের মধ্যে ওনার হবু বউকে দেখতে পাচ্ছে।

আরে এভাবে টেনে আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস মাহি? আমি তোকে ছাঁদে যাওয়ার জন্য বললাম আর তুই আমাকে টেনে নিয়ে এই অন্ধকারে কই যাস?

আপনাকে কীভাবে বলবো মেহরাব ভাই ছাঁদে মেঘলা আপু আর মেঘ ভাইয়াকে দেখেছি আমি। সেই জন্যই তো আপনাকে টেনে নিয়ে অন্যদিকে যাচ্ছি। কেননা এই মহুর্তে আপুর মেঘ ভাইয়ার সাথে কথা বলা খুবিই দরকার। কিরে কথা বলছিস না কেনো? আর এই পুকুর পাড়ে আনলি কেনো?

আসলে কি হয়েছে মেহরাব ভাই আমি না সকালে পুকুরের ওই দিকটাতে একটা লাল রঙের শাপলা ফুল দেখেছিলাম।

তো? তুই কি বলতে চাইছিস এই অর্ধ রাতের বেলা আমি পুকুরে নেমে তারপর সাঁতার কেটে ওই ঝুপটির মধ্যে থেকে শাপলা ফুল তুলে আনি? আর ওখানে থাকা সাপ বাবাজী বুঝি আমায় ছেড়ে দেবে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল মেহরাব।

আরে না না আপনি কেনো ওখানে যাবেন আমিতো শুধু আপনাকে ফুলটা দেখানোর জন্য এনেছিলাম।

হুম ভালো করেছিস তো এখন কি করবো এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাওয়া খাবো?

এতো কিছু থাকতে আপনি হাওয়া খাবেন কেনো? এখানে দেখার জন্য কতকিছু আছে এই যে উপরে সুবিশাল আকাশ আর নিচে পানির মধ্যে পড়া চাঁদের প্রতিছবিটা কি সুন্দর চকচক করছে।

মাহি এসব আমরা ছাঁদে বসেও দেখতে পারতাম ওকে এখন এতো কথা না বলে চল ছাঁদে যায়। রাতের বেলা পুকুর পাড়ে না থাকায় ভালো। এই বলে ওনি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে ছাঁদের দিকে যাচ্ছে। আরে আমার হাত টাকি সরকারি নাকি যখন পারছে টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছে আর ওনি এইমাত্র কি বলল ছাঁদে যাবে? হায় হায় তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে ছাঁদে তো মেঘলা আপু আর মেঘ ভাইয়া আছে এখন কি করবো আমি?

কিরে দাঁড়িয়ে পড়লি কেনো? চল।

আসলে কি বলেন তো ভাইয়া আমার না খুব ঘুম পাচ্ছে তাই আমি বলি কি চলেন আমরা ঘুমিয়ে পড়ি সকালে কথা হবে।

ওহ এই ব্যাপার আচ্ছা ঠিক আছে যা।

ওফ বাঁচলাম ওনি যাওয়ার কথা বলতে দেরি আমি দৌড়ে রুমে যেতে একদম দেরি করিনি। কেননা বলা তো যায় না আবার কখন আমার নিরীহ হাতটা ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়। আমি রুমে ঢুকতেই দেখি ঈশিতা কিছু লুকাচ্ছে আমি ওর কাছে গিয়ে বসে ওকে জিগাস করলাম। কিরে আমাকে দেখে তুই পিছনে কি লুকালি?

কই কিছু নাতো আমিতো কিছুই লুকায়নি তুই ভুল দেখেছিস।

হুম তা তুই একা কেনো মীরা আপু কোথায়?

আরে মীরা আপুতো এখানেই ছিলো ফোন দেখতেছিলো। তারপর জানালা দিয়ে কি যে দেখলো কে জানে তুই আসার একটু আগেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। আমি জিগাস করতেই বলল যে মেহরাব ভাইয়ার সাথে নাকি দেখা করতে যাচ্ছে।

ঈশিতার কথা শুনতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। মীরা আপু মেহরাব ভাই এর সাথে দেখা করতে গেলো মানে কি ওনিতো এখন ওনার রুমে গেলো তাহলে কি মীরা আপুও ওনার রুমে? মেহরাব ভাই আর মীরা আপুকে একসাথে কল্পনা করতেই আমার রাগ আসমানে উঠে গেলো। ঈশিতাকে ঘুমিয়ে পরতে বলে আমি রুম থেকে বেরোতে গেলাম তখনি মেঘলা আপুর সাথে দেখা হয়ে গেলো।

কিরে এতোরাতে তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস আয় শুয়ে পড়।

আমার একটু কাজ আছে আপু তুমি ঘুমাতে লাগো আমি এখনি আসছি। আপুকে আর কিছু বলতে না দিয়েই আমি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। বারান্দা পেরিয়ে সামনের দিকে গেলাম মেহরাব ভাইদের রুমের দিকে উঁকি দিতেই দেখি ওনি রুমে নেই আর বাকি সবাই কেউ কেউ ঘুমাচ্ছে আবার কেউ শুয়ে ফোন দেখছে। সবাইতো এখানেই আছে তাহলে মীরা আপু কোথায়? আমি বারান্দা থেকে উঠানে নামলাম উঠানের মাঝখানে একটা মোটাসোটা নারিকেল গাছ আছে৷ যেহেতু বাইরে লাইট দেওয়া তাই মুটামুটি উঠানটা ভালোই আলোকিত হয়ে আছে। আমি আর একটু সামনে যেতেই দেখি মেহরাব ভাই মীরা আপুর কমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। আর মীরা আপুও ওনার কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে মনে তো হচ্ছে একে অপরকে কিস করছে। ছিঃ দৃশ্য টা দেখতেই আমার দুচোখ বেয়ে পানি পরতে লাগল আর ওনার প্রতি একরাশ ঘৃণা নিয়ে আমি ওখান থেকে চলে আসলাম৷

রুমে গিয়ে কারো সাথে কথা না বলেই ঘুমিয়ে পড়লাম তবে ঘুম আসলে তো তবুও ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা চালালাম। কিন্তু তবুও ঘুমের টিকিটুকুও পেলাম না শুধু মনে হতে লাগল মেহরাব ভাই আমায় ধোকা দিয়েছে। একটু পরেই মীরা আপু হাসি হাসি মুখ করে রুমে এসে শুয়ে পড়ল। মীরা আপুকে দেখে আমার আরো বেশি কষ্ট লাগছিলো আমার মনটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।

চলবে…..?

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_২১
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
আমরা গ্রাম থেকে চলে এসেছি আজ তিনদিন হতে চলল। আর এই তিনদিনে ওনাকে যতটা সম্ভব ইগনোর করা যায় তার থেকে বেশিই হয়ত করেছি। এখন ওনার শোকে রুমে বসে থাকলে হবে নাহ আর কয়েকটা দিন পরেই আমার এইচএসসি পরীক্ষা তাই এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বই নিয়ে বসলাম। ভাবলাম বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকলে হয়ত ওনাকে ভুলতে পারবো। সেই আশায় রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে টানা চার ঘন্টা পড়লাম।অবশেষে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে চোখটা বন্ধ করতেই আবারও ভেসে উঠল মেহরাব আর মীরা আপুর সেই অন্তরঙ্গ দৃশ্য। হঠাৎ আমার শ্বাস নেওয়া যেনো দূর্বিষহ হয়ে উঠল। একটু শ্বাস নেওয়ার জন্য হাস ফাঁস করতে লাগলাম। নাহ এভাবে বন্দী থাকলে হয়ত দমবন্ধ হয়েই মারা যাবো। মুক্ত বাতাস প্রয়োজন আমার আর ওনি আমার সাথে যেটা করেছে তার জন্য কখনোই ওনাকে মাফ করবো নাহ। বিছানা থেকে উঠে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। রান্নাঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে নিয়ে ছাঁদে চলে আসলাম। আমার এভাবে রান্না ঘরে যাওয়া নিয়ে মা অবশ্য অনেক কথায় জিগাস করলো কিন্তু তার কথার পিঠে কোনো কথা না বলে সরাসরি ছাঁদে চলে গেলাম। এইতো উপরে সুবিশাল আকাশ আর গা ঠান্ডা করা হিমেল হাওয়া বিকেলের এই সময়টা আমার কেনো যেনো বড় মিষ্টি লাগে। দুহাত প্রসারিত করে চোখটা আলতো করে বন্ধ রেখে জোরে একটা শ্বাস নিলাম। গরম কাঁপে ঠোঁট ছোঁয়াতেই আমার চোখ নিচে চায়ের দোকানে থাকা লোকটার উপর গিয়ে পড়ল। প্রথম দেখায় যেনো থমকে গেলাম আমি একি অবস্থা ওনার চুলগুলো উষ্কখুষ্ক মুখটাও কেমন শুকিয়ে গেছে চোখগুলো লাল। কেমন তৃষ্ণার্থ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওনার দিকে তাকাতেই ওনি শুকনো একটা হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়াল হয়ত কিছু বলতে চাই। কিন্তু ওনার মতো একটা প্রতারক লোকের থেকে কোনো কিছু শুনার ইচ্ছে বা সময় আমার কোনোটাই নেই। আমি ওখান থেকে সরে অন্যপাশে গিয়ে দাঁড়ালাম কিছুসময় পর আমার ছোট ভাই মনির আসলো বলটা একহাত দিয়ে বগলে চেপে ধরে ডানহাতে চকলেট খেতে খেতে বলল, আপি নিচে চল আম্মু ডাকছে।

কেনো? আমি তো এখনি আসলাম আর আম্মু তো দেখলো আমি এখানে আসছি। আর অনেক সময় পড়েছি মাথা বেথ্যা করছে তাই কফিটা শেষ করে আসছি।

না আম্মু তোকে এখনি যেতে বলেছে না গেলে কিন্তু আম্মু অনেক রাগ করবে এমনিতেই অনেক টেনশনে আছে।

টেনশনে? কেনো?

সেটা নিচে গেলেই দেখতে পাবি আয় আমার সাথে। কথাটা বলেই মনির নিচে নেমে গেলো আমিও ওর পিছু পিছু নিচে চলে গেলাম কিন্তু ওখানে গিয়ে তো আমার চোখ চড়কগাছ। কেননা সোফায় মেহরাব ভাই বসে আছে আর পাশে আম্মু বসে হাজারটা কথা বলছে৷ মেহরাব ভাই এর এই অবস্থা দেখে আম্মু যদি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারে যে তার আদরের মেহরাব এর এই অবস্থা তারই মেয়ের জন্য হয়েছে তাহলে যে আমার কি হবে সেটা ভাবতেই শুকনো ঢোক গিললাম। কিন্তু একমিনিট আমার জন্য ওনার এমন অবস্থা হবে কেনো? ওনি তো মীরা আপুর সাথে তাহলে ওনার এই অবস্থা কেনো?

কিরে তোকে ডেকে আনলাম কি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ পাতাল ভাববার জন্য নাকি?

আম্মু কথায় আমার হুশ আসলো আমি ওনার থেকে চোখ সরিয়ে আম্মুর দিকে তাকালাম। হ্যাঁ আম্মু বলো?

তোর মামী নাকি তোকে যেতে বলেছে তাই মেহরাব কে পাঠিয়েছে জামাটা বদলে যা।

কিন্তু এখন যাবো? একটু পরেই তো মাগরিবের আযান দিবে।

তাই কি হয়েছে এমনি সময় তো ধৈ ধৈ করে করে যাস এখন যেতে সম্যসা কি? আর ছেলেটা এই শরীল নিয়ে এতোটা কষ্ট করে আসলো জলদি কর।

এই শরীল নিয়ে মানে কি হয়েছে ওনার? কেনো জানি হঠাৎ করেই ওনার জন্য ভীষণ মায়া লাগল। ইচ্ছে করছে ওনার উষ্কখুষ্ক চুলে হাত বুলিয়ে ওনার মাথাটা আলতো করে বুকের সাথে চেপে ধরে আদুরে গলায় বলি কি হয়েছে আপনার মেহরাব। কিন্তু পরেক্ষনেই মনে হলো ছিঃ এসব কি ভাবছি আমি আমার নিজের ভাবনার উপর ভীষণ রাগ হলো আমার। আমি আবার কবে থেকে এমন কিছু ভাবতে শুরু করলাম আমার ভাবনা গুলোও এতোটা যঘন্য হলো কীভাবে।
ওনার পাশে হাঁটছি আমি আর ওনি বার বার শুধু আমার দিকে তাকাচ্ছে যেনো একটু তাকানো বাদ দিলেই আমায় দেখা কম হয়ে যাবে। তবে আমি মোটেও তাকাচ্ছি নাহ সোজা হয়ে হাঁটছি তবে মাঝে মাঝে আড় চোখে তাকালেই দেখতে পাচ্ছি ওনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। অবশেষে ওনাদের বাসায় পৌঁছালাম আমি সোফায় বসে মামী মণির সাথে কথা বলতে লাগলাম আর ওনি সোজা ওনার রুমে চলে গেলো। কিছু সময় পর মামী মণি রান্নাঘরে গেলে হঠাৎ করে কোথা থেকে মেঘলা আপু এসে আমার হাত ধরে টেনে আপুর রুমে নিয়ে গেলো।

আরে আপু কি হয়েছে এভাবে টানছো কেনো? আচ্ছা তোমরা দুই ভাইবোন কি বলো তো যে যখন পারছো আমার এই নিরীহ হাতটাকে ধরে টানাটানি করছো ছিঁড়ে যাবে তো।

একদম কথা বলবি নাহ এতোকিছু করে এখন বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। আচ্ছা তুই কি ঠিক করেই রেখেছিস যে আমার ভাইকে শান্তিতে থাকতে দিবি না?

কেনো আমি আবার কি করলাম আর করলেই বা কি তোমার ভাই তো ভালোই আছে আমি কিছু করলেই বা তার কি আর না করলেই বা তার কি।

এসব ফালতু কথা বলা বন্ধ কর তোর চোখ নাই থাকতে পারে তবে আমার আছে। সত্যি করে বলতো তোদের মধ্যে কি হয়েছে? গ্রাম থেকে আসার পর আমি লক্ষ করছি তোদের দুটোর অবস্থা একদম ঠিক নাই। একজন তো কিছুই বোঝে না আর একজন অতি বেশি বোঝে। তুই কি এমন করেছিস যে আমার ভাইয়ের অবস্থা ওমন দেবদাস মার্কা হয়েছে।

আপুর কথা শুনে এবার আমার বুক ফেঁটে কান্না আসছে তবুও কান্না আটকে রেখে বললাম। হ্যাঁ তোমরা তো শুধু আমার দোষই দেখবে তোমার ভাইতো কিছুই করে নাহ। শুধু আমিই ওনাকে কষ্ট দিই আর ওনি বুঝি কিছু করে নাহ তোমরা কেউই আমার দিকটা কখনোই দ্যাখো নাহ। আর দেখবে কেনো আমি কে হই তোমার ওনি তোমার ভাই তাই ওনার দিকটাই তো তুমি দেখবে।

আরে তুই কাঁদছিস কেনো? আচ্ছা সোনা কাঁদিস নাহ আমি সরি এখন বল তো আমায় কি হয়েছ।

আমি কান্না করতে করতে আমার দেখা সবটা আপুকে বললাম সবটা শুনে আপু মাথায় হাত রেখ বসে আছে।

কি হলো আপু এভাবে বসে আছো কেনো? ব্যাস আমার এই কথাটাই যেনো আপুর জন্য যথেষ্ট ছিলো। আপু রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার ভাই যে তোকে গাধী বলে সেটা ১০০% ঠিক আচ্ছা সত্যি করে বলতো তুই কি সত্যই গাধী? আরে গাধী আমি আমার ভাইকে সেই ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি ও কোনো মেয়েকে ছোঁয়া তো দূর তার দিকে ফিরেও তাকায়নি শুধু তুই ছাড়া। আর মীরা যে গায়ে পড়া টাইপ মেয়ে ভাইয়াতো ওকে দেখতেই পারে নাহ আর কিস ছিঃ আমার মন চাইছে তোর মাথায় বাঁশ দিয়ে বাড়ি মাড়ি।

তাহলে যে আমি ওইদিন রাতে দেখলাম।

শোন কখনো কখনো আমাদের দেখার মাঝেও ভুল হয়ে থাকে আর শুধু মাত্র অর্ধেক কিছু দেখে বা শুনে কাউকে বিচার করা উচিত নয়। আর তোর উচিত ছিল ভাইয়াকে সবটা জিগাস করা৷ ভাইয়া রুমে আছে তুই এখন যাবি আর ভাইয়া কে সবটা বলবি ওকে? নিজে তো পাগল আছেই এখন আমার ভাইটাকে দেবদাশ বানানোর চেষ্টায় আছে।

নিজে কত বলতে পারে তুমি যেভাবে আমায় ঙ্গান দিচ্ছো যদি নিজে এভাবে মেঘ ভাইয়া কে বলতে তাহলে মেঘ ভাইয়ার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হতো নাহ।

কিরে এভাবে সং এর মতো দাঁড়িয়ে না থেকে যা জলদি।

চলবে….