#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_২৫
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
বাইরে অনেক জোরে ঝড় আর বৃষ্টি শুরু হয়েছে মাঝে মাঝে মেঘের বিকট শব্দে গর্জন করছে যা শুনে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠছে। বিদ্যুৎ টাও চলে গেছে ছোট্ট একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে আছি৷ যদিও এখনো রাত হয়নি তবুও বাইরে কালো মেঘে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গিয়েছে৷ পুরো বাড়ি ফাঁকা কেউ নেই বাড়িতে হয়ত ঝড় বৃষ্টির জন্যই আম্মু আসতে পারছে নাহ। নিজের রুমের দরজা জানালা আটকে কাথা গায়ে জড়িয়ে মোমবাতি টা জ্বালিয়ে বসে আছি। অনেক ভয় লাগছে। তখন একা একা বাড়ি না আসায় ভালো ছিলো ভয়ে আমার কান্না পাচ্ছে অবশ্য আমি কান্না ও করছি তখনি দরজায় কেউ জোরে জোরে এলোপাথাড়ি ধাক্কা দিতে লাগল। প্রথমে বৃষ্টির কারণে শুনতে না পেলেও অনেকক্ষণ ধরে এমন হওয়াই বুঝতে পারলাম৷ তবে এতো রাতে কে আসলো? আম্মু তো আসবে না কেননা এতো ঝড় বৃষ্টির মধ্যে আম্মু কীভাবে আসবে তাহলে কি আব্বু আসলো? হ্যাঁ হবে হয়ত আব্বুই এসেছে কেননা আব্বু তো একটু আগে ফোন দিয়ে বলল যে দেখছে আসতে পারে নাকি। আমি তড়িঘড়ি করে ফোনের আলো জ্বালিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে মেন দরজার সামনে গেলাম। এখনো দরজায় কেউ এলোপাথাড়ি ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছে। আমি দরজা খুলতে গিয়েও আবার থেমে গেলাম এতো ঝড় বৃষ্টি তে আব্বু মোটরসাইকেল চালিয়ে কীভাবে আসবে? তাহলে কি ডাকাত আসলো নাকি? হায় হায় তাহলে এখন আমি কি করবো? ভয়ে একটা ঢোক গিলে আশে পাশে মারার জন্য শক্ত কিছু খুঁজতে লাগলাম। অবশেষে রান্না ঘর থেকে সবজি কাটা ছুরিটা হাতে নিয়ে দরজার সামনে গেলাম। আয়াতুল কুরছি পরতে পরতে কাঁপা কাঁপা হাতে দরজার ছিটকেনি টা খুলতেই কেউ সজরে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে চলে আসলো। আমি তাকে আক্রমণ করতেই যাবো তখন দেখি সে আসলে কেউ নয় বরং মেহরাব ভাই। ভিজে একদম চুপচুপে হয়ে গেছে। ওনি ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে পিছন ঘুরে আমার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো৷ আজব তো আমাকে মারার জন্য এতো ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে ওনি এখানে এসেছে? আমি গালে হাত রেখে কাঁদো কাঁদো চোখে ওনার দিকে তাকালাম।
এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? চড়টা তোকে মারলাম কেনো এটাই তো ভাবছিস?
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে আবার না বললাম। ওনি বলল, এতো ঝড় বৃষ্টির রাতে কেউ তোর দরজায় ধাক্কা দিলো আর তুই খুলে দিলি? এখানে আমি না এসে অন্য কেউও তো হতে পারতো। আর যদি ফুপি বা তোর বাপ হতো তাহলে তারা নিশ্চয়ই তোকে ফোন করে বলত যে দরজা খোল আমরা আসছি৷ কিন্তু তোকে তো কেউ ফোন করেও বলেনি তাহলে দরজা খুললি কেনো? এরপর থেকে যেনো এমন ভুল আর না হয় তাই জন্য চড়টা দিলাম৷ এখন সর সামনে থেকে আমি চেঞ্জ করবো। আর হাতে এটা কি ফল কাটার ছুড়ি যে না তাল পাতার সিপাহী মার্কা চেহারা সে আবার এই ছুরি দিয়ে নাকি নিজেকে প্রটেক্ট করবে হায়।
কথাটা বলেই ওনি আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে চলে গেলো আজব ওনার ফোন কোথায়? আর ওনি আমায় তাল পাতার সিপাহী বলল? আমি কি দেখতে এতোটাই চিকন? তবে আর যাই হোক আমার এভাবে দরজা খোলা ঠিক হয়নি সত্যিতো এখানে অন্য খারাপ লোকও হতে পারতো। আর এতো জোরে কেউ চড় মারে? মনে হয় গালের সবকটা দাঁত নড়ে গেছে। বুঝানোর তো আরো কত তরিকা আছে এভাবেই যে চড় মেরে দাঁত নড়িয়ে দিয়ে বুঝাতে হবে এর কোনো মানে আছে? ফালতু লোকজন। আরে অন্ধকার আমি যাবো কীভাবে? অন্ধকারে হাঁতড়ে হাঁতড়ে আমি আমার রুমে গেলাম মোমবাডিটা নিভু নিভু ভাবে জ্বলছে। ওনি হয়ত আব্বু আম্মুর রুমে চেঞ্জ করছে। বিছানায় গিয়ে বসবো তখনি আমার মনে হলো বারান্দায় তো আমার জামা ছিলো ওটা আনা হয়নি এতোক্ষণে হয়ত ভিজে একদম যাচ্ছে তাই হয়ে গেছে। জামার টার কথাটা মনে হতেই জামার জন্য বেশ মায়া লাগল কত সখের জামাটা আহারে। তড়িঘড়ি করে বারান্দায় ছুটলাম প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে এখন একটু ঝড় কমেছে তবে অনেক জোরে জোরে বাজ পরছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আমি কোনোমতে গিয়ে জামাটা তুলে আনলাম ফল স্বরূপ ভিজে একাকার৷ এখন মনে হচ্ছে জামাটা না তুলায় ঠিক ছিলো রুমের দরজাটা ভিরিয়ে দিয়ে মাথাটা মুছে চেঞ্জ করছি। আমি এতোটাই বোকা আমার মাথাতেই ছিলো না বাড়িতে আমি ছাড়াও অন্য আরেকজন আছে৷ আমার দরজাটা লাগানো উচিত। আসলে বৃষ্টির পানিটা অনেক ঠান্ডা ছিলো আর আমি শীতে কাঁপছিলাম আর দরজা তো ভিড়ানোই ছিলো কেউ আসলে নক তো করবেই। আমি কোনো মতে চেঞ্জ করে জামার চেইনটা লাগাবো তখনি পিছনে কিছু পড়ার শব্দে আমি তড়িঘড়ি করে পিছনে তাকিয়ে দেখি মেহরাব ভাই দাঁড়িয়ে আছে। আর মেঝেতে আমার ফোনটা পড়ে আছে। ওনি আব্বুর সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরেছে ফোন পড়ে গেলেও আলো জ্বলছে ওনি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। কপালের কোণে পানি জমে আছে ওটাকি ঘাম নাকি পানি তা আমার জানা নেই। হঠাৎ করেই ওনি রুম থেকে রেবিয়ে গেলো আর সাথে সাথে আমার চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে নিচে পড়ল।
,,,,,
অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে বাইরে বৃষ্টি টাও কমে এসেছে। হয়ত কিছু সময় পর বৃষ্টি থেমে যাবে তখন যে ওনি বেরিয়ে গেলো আর আমার রুমে আসিনি। আমি বিছানায় বসে ছিলাম তখন রুমে কেউ নক করল তবে ভিতরে না এসেই বাইরে থেকে বলল, আমি চলে যাচ্ছি বৃষ্টি কমে যাচ্ছে ফুপি চলে আসবে একটু পরেই। আমার এখন যাওয়া উচিত কেউ এভাবে দেখলে খারাপ ভাববে তুই এসে দরজাটা লাগিয়ে দে। ব্যাস তারপর আর কোনো শব্দ নেই শুধুই নিরবতা প্রায় অনেক সময় পর আমি উঠে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে রুমে আসলাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি এতোদিন এই আমিটার সবটা শুধু আমিই দেখেছি আজকে কি তা অন্য কারো চোখে পড়ে গেলো? আমি কি অপবিত্র হয়ে গেলাম? হ্যাঁ সত্যি আমি অপবিত্রই হয়ে গেছি শুধু কি স্পর্শে কেউ অপবিত্র হয়? না স্পর্শ ছাড়াও তো হয় যেমনটা আমি হয়েছি। ভুলটা আমারি আমি যদি তখন দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আসতাম তাহলে হয়ত আজ এমনটা হতো নাহ। সব কিছু শেষ হয়ে গেছে আর কিছু বাকি নেই তাহলে কি এখন আমার মরে যাওয়া উচিত? কিন্তু আত্মা হত্যা তো মহাপাপ। আমার ভাবনার মাঝেই ফোনটা টং করে শব্দ হলো হয়ত কোনো মেসেজ এসেছে। ফোনটা হাতে নিতেই দেখি মেহরাব ভাই এর মেসেজ মনটা মুহুর্তেই বিষিয়ে গেলো। মন চাইছে ফোনটা ছুঁড়ে দিয়ে ভেঙে দুখণ্ড করে ফেলি কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম এখানে ফোনের কি দোষ। তবে তখন ওভাবে ফোন মেঝেতে পরায় স্কিনটা ফেঁটে গিয়েছে। হাজারও দ্বিধা দ্বন্দ নিয়ে মেসেজটা অপেন করলাম।
আমার প্রেয়সী সেতো হাজার ও ফুলের থেকে শুভ্র।
নেই কোনো অপবিত্রা চাঁদের ও হয়ত কলঙ্ক থাকতে পারে। চাঁদ ও হয়ত কলুষিত হতে পারে তবে আমার প্রেয়সী, সেতো অফুটন্ত ফুলের কলির থেকেও বেশি পবিত্র।
সে যেনো নিজেকে অপবিত্র না ভাবে কেননা তার পবিত্রতা কেউ নষ্ট করতে পারবে নাহ।
সে প্রথম থেকে যেমন পবিত্র ছিলো এখনো ঠিক তেমনি পবিত্র আছে। হ্যাঁ আমার ভুল ছিলো নক করে যাওয়া উচিত ছিলো। আমি সেটা করিনি এটা আমার ব্যার্থতা আমার প্রেয়সী যেনো আমায় মাফ করে দেয়। নয়ত তার চোখের থেকে পড়া এক একটা অশ্রু আমার জীবনের অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।
সবশেষে বলবো আমার প্রেসয়ী কোমলতায় আর পবিত্রায় পরিপূর্ণ।
ওনার এই কয়েকটা কথায় আমার মন থেকে কয়েক গুনের চেয়েও বড় বোঝা হালকা হয়ে গেলো। চোখ থেকে ঝড়ে পড়লো আনন্দ অশ্রু আর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির ঝলক।
চলবে….?
#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_২৬
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
আপুর বিয়ের পুরো দমে কাজ চলছে কালকে গায়ে হলুদ তাই আজকে সবাই ভীষণ ব্যাস্ত। আর মেহরাব ভাই তাকে তো খুঁজে পাওয়াই দাই যতই হোক একমাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা। তাকে কি আর এখন পাওয়া যাবে কত কাজ ওনার তবে সেক্ষেত্রে দেখতে গেলে আমিই ভালো আরাম করে ডয়িং রুমের সোফায় বসে মুড়ি আর মিষ্টি খাচ্ছি। কোনো কাজ নেই একেই হয়ত বলে মামার বাড়ি মধুর হাড়ি৷ পরিক্ষাও শেষ তাই এখন আরো ফ্রি একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে আপুর বিয়ের আগেই আমার পরিক্ষা টা হয়ে গেলো৷ আমার পরিক্ষার জন্য আপুর বিয়ে পিছানো হয়নি মেঘ ভাইয়ার ছোট ভাইয়ের জন্য পিছানো হয়েছে ওনার নাকি আসতে আরো দেরি হবে তাই বিয়েটা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। আর মধ্যে আমার পরিক্ষা টাও হয়ে গেলো এখন মন মতো আনন্দ করতে পারবো। আমার এভাবে আরাম করে আর বসা হলো না মনির এসে বলল মেহরাব ভাই নাকি আমাকে ছাঁদে ডেকেছে কি আর করার অগত্যা আমায় যেতে হলো। গুটি গুটি পায়ে ছাঁদে গিয়ে দেখি ওনিসহ ওনার বন্ধুরা সবাই মিলে গায়ে হলুদের স্টেজ সাজাচ্ছে আর ওনার পাশেই মীরা আপু দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই রিফাত ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে বলল, আরে ভাবি এসে গেছে আসুন এখানে আপনাকে বড় প্রয়োজন ছিলো।
এভাবে সবার সামনে ভাবি ডাকায় আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম মীরা আপু ভ্রু কুঁচচে একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার রিফাতের দিকে তাকিয়ে বলল, এই আপনি ওকে ভাবি বললেন কেনো?
রিফাত ভাইয়ার মুখটা নিমিষেই চোরের মতো হয়ে গেলো যেনো চুরি করতে এসে ধরা খেয়ে গেছে। আমতা আমতা করে বলল, আরে এখানে তো ফুল নেই আমি বরং নিচে থেকে ফুল আনি। এই বলে ওনি আমার পাশ কাটিয়ে নিচে নেমে গেলো। অভ্র ভাইয়া পরিস্হিতি সামাল দিতে বলল, আরে মাহি এখানে এসে আমাদের একটু সাহায্য করো দেখেছো কত কাজ আমাদের না হয় কাজ করতে সম্যসা হবে নাহ৷ তবে কেউ একজন আছে যার আবার কাজ করতে করতে মাঝে মাঝে এর্নাজি লো হয়ে যায় আর সেই জন্য তোমাকে এখানে খুব করে প্রয়োজন বুঝলে।
অভ্র ভাইয়ার কথা বোধগম্য হতেই লজ্জায় আমার গাল দুটো লাল হয়ে গেলো। কিন্তু মেহরাব ওনার তো কোনো হেলদুল নাই এখানে এতো কিছু হয়ে যাচ্ছে আর ওনি মন দিয়ে কাজ করছে। সেই রাতের ঘটনার পর থেকে ওনি কেমন যেনো হয়ে গেছে বেশির ভাগ সময় আমার থেকে কেমন দূরে দূরে থাকে। আমাকে এরিয়ে চলে আমি যদি কোনো রুমে একা থাকি তবে ওনি সেখানে প্রবেশ করেননা। ওনি কি বোঝেনা ওনার এই দূরত্ব আমাকে বড্ড পিড়া দেয়। আমার ভাবনার মাঝেই ওনি স্টেজ থেকে নেমে বাম হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে বলল, তোরা কি এখানেই বকবক করবি নাকি কাজ ও করা লাগবে। তোদের যে বিয়ের দুইদিন আগে আনলাম কি জন্য এভাবে আড্ডা দেওয়ার জন্য নাকি? দ্রুত কাজ কর আমার আবার নিচে গিয়ে দেখতে হবে বাজার যা বাকি ছিলো ওগুলো আনা হয়েছে নাকি। তোরা এখানে থাক আমি নিচে যাচ্ছি ওনি আমাকে ক্রস করি নিচে যাবে তার আগেই আমি বললাম।
আমাকে ডেকেছিলেন? মনির বলল আপনি নাকি আমাকে ডেকেছিলেন। ওনি আমার দিকে না ফিরেই বলল, কই নাতো আমিতো তোকে ডাকিনি তবে এসেই যখন পরেছিস তখন ওদেরকে কাজে সাহায্য কর। কথাটা বলেই ওনি নিচে নেমে গেলো ঘাড় ফিরিয়ে একবার আমার দিকে তাকালো নাহ।
আচ্ছা আপনারা তাহলে থাকেন আমিও বরং নিচে যাই। দেখি মেহরাব ভাই এর কিছু লাগে কি না আমার কত কাজ আমি আবার মানুষের মতো বসে থাকতে পারি না৷ মীরা মাহিকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে নিচে নেমে গেলো।
আমি আর কি করবো হাজার ও মন খারাপ নিয়ে হাসি মুখে ওনাদের সাহায্য করছিলাম কাজে। আর বার বার শুধু নিচের দিকে দেখছিলাম যে মেহরাব ভাই কি করে। ওনি নিচে মামা সহ আরো গুরুজনদের সাথে কথা বলছিলো আর মীরা আপু ওনার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। মীরা আপুর এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঈশিতা বলল, আচ্ছা মীরা আপুর কি কোনো কাজ নেই সব সময় কেমন বড় ভাইয়ার পিছনে পড়ে থাকে।
ঈশিতার কথা শুনে অভ্র ভাইয়া ফোঁড়ন কেটে বলল, যার যে কাজ সে তো সেটাই করবে তবে তুমি চাইলে আমার সাথে এভাবে লেগে থাকতে পারো আমি মোটেও মাইন্ড করবো নাহ।
অভ্র ভাইয়ার কথা শুনে ওখানে থাকা সবাই হেসে উঠল আর ঈশিতা রেগে গাল দুটোকে লাল করে বলল, আমার বয়ে গেছে আপনার পিছনে পড়ে থাকবো বাংলাদেশে কি ছেলের অভাব পড়েছে নাকি?
ভেবে নাও বালিকা পরে কিন্তু আফসোস করবে এই ভেবে যে কেনো আমার পিছনে পড়লে না। তখন কিন্তু আফসোস করেও কোনো লাভ হবে নাহ। অভ্র ভাইয়া সহ বাকি সবাই ঈশিতার পিছনে লেগেছে সবগুলো মিলে মেয়েটাকে শুধু শুধু রাগাচ্ছে ঈশিতা রেগে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল, দেখেছিস মাহি ওনারা আমার সাথে কেমন করছে আমি কিন্তু বড় ভাইয়াকে বলে দেবো।
ওলে লে ছোট খুকি এই তোরা কেউ কিছু বলিস না তাহলে আবার বাচ্চাটা তার বড় ভাইয়াকে বলে দেবে আহালে বেবিটা। অভ্র ভাইয়া কথাটা বলেই আবার গুল্লি দিয়ে সবাই হেসে উঠল।
ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক নয় আপনারা এভাবে আমার বোনটাকে একা পেয়ে ওর পিছনে লাগতে পারেন না।
তা মাহি তোমার বোন কি ছোট বাচ্চা নাকি যে আমরা বললেই ওকে রাগতে হবে। আরে আমরা তো মজা করছিলাম এই তোরা সবাই চুপ আর কেউ আমাদের মাহির বাচ্চা বোনকে রাগাবি না। কথাটা বলে অভ্র ভাইয়া হেসে দিলো সাথে আমিও হেসে দিলাম আর ঈতিশা রেগে মেগে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।
রাতে পুরো বাড়ি খুঁজেও কোথাও মেহরাব কে পেলাম নাহ। ওনার সাথে আমার কথা বলা দরকার ওনি কেনো আমার সাথে এমন করছে। সেটা আমার জানতেই হবে। এভাবে আমাকে এড়িয়ে চলার মানে কি? কোথাও ওনাকে না পেয়ে মেঘলা আপুর রুমে গিয়ে আপুর পাশে বসলাম আপু ফোনে কথা বলছিলো আমাকে বসতে দেখে ফোনটা রেখে আমার কাছে এগিয়ে আসলো। সবাই ছাঁদে বসে আড্ডা দিচ্ছে তাই আপুর রুম পুরো ফাঁকা।
কি ব্যাপার আমার ভাইয়ের পিচ্চি জানটার কি হয়েছে এভাবে মন খারাপ করে বসে আছে কেনো? ভাইয়ার সাথে কি কিছু হয়েছে? আমাকে বলা যায়?
আপুর কোলে মাথা রেখে আপুর কমর জড়িয়ে পেটে মুখ গুজে শুয়ে রইলাম। আপুও মুচকি হেসে পরম যত্নে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, কি হয়েছে হুম?
আপু তোমার ভাইটা এমন কেনো বলোত সব সময় শুধু আমাকে কষ্ট দেয়। কীভাবে কথা বলে মাঝে মাঝে মনে হয় ওনি আমায় একটুও ভালো বাসে নাহ। জানো সেদিন তোমায় যখন দেখতে আসলো সেদিন ঝড়ের রাতে তারপর আপুকে সবটা বললাম। ওই দিনের পর থেকে তোমার ভাই কেমন যেনো বদলে গেছে আমার সাথে ভালো করে কথাও বলে না শুধু এরিয়ে চলে মনে হয় যেনো আমাকে চেনেই নাহ৷ কথাগুলো বলতে বলতে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল আমার নাক টেনে কাঁদতে লাগলাম।
ওলে আমার ভাইয়ের পিচ্চি জানটার দেখি আমার ভাইয়ার প্রতি অনেক অভিযোগ। তবে সেদিন যেটা হয়েছে সেটা নিতান্তই একটা এক্সিডেন্ট এতে কারো হাত ছিলো নাহ। তবে ভাইয়ার এটা মোটেও উচিত হয়নি এভাবে আমার ছোট্ট মাহিকে এরিয়ে চলা মোটেও ঠিক নাহ৷ আসুক আজকে ওকে তো শূলে চড়াবো আমি।
আপুর কথায় কেনো যেনো নিজেকে চার বছরের বাচ্চা মনে হলো আবেগে আরো বেশি কান্না করে দিলাম। আম্মু আব্বুর পরে এই আপুই আমার সকল অভিযোগ শোনার বাক্স আবেকে আরো অনেক কিছুই আপুকে বললাম মেহরাব ভাই এর নামে। যেনো ওনি আমার প্রিয় খেলনা নিয়ে নিয়েছে আর আমি আপুর কাছে অভিযোগ করছি। এভাবে বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানি নাহ। মেহরাব বাজার থেকে এই মাএ আসলো বড় ছেলে হওয়াই অনেক কাজ বাইরের সব কাজ মিটিয়ে বাড়িতে আসলো। মেঘলা ফুল আনতে বলেছিলো সেটা দিতেই মেঘলার রুমে আসতেই দেখলো মাহি মেঘলার কোলে মাথা রেখে মেঘলাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে৷ আর মেঘলা একহাতে মাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আরেক হাতে ফোন টিপছে।
আরে ভাইয়া কখন এলি তুই আয় ভিতরে আয়।
মাহির দিকে তাকিয়েই ছোট ছোট পা ফেলে ভিতরে আসলো মেহরাব নে তুই যে ফুল আনতে বলেছিলি সেগুলো। আর ও এখানে এভাবে কেনো? কিছু হয়েছে?
অনেক কিছু হয়েছে তোর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে সেগুলো বলতে বলতেই বেচারি ঘুমিয়ে পরেছে।
মেহরাব হেসে বলল বাহ আমারি বোনের কাছে আমার নামেই নালিশ?
হুম বেচারি অনেক কষ্ট পেয়েছে কিন্তু। অনেক অভিমান করে আছে।
মেহরাব একহাত কমড়ে রেখে আরেক হাতের বৃদ্ধ আঙুল দিয়ে ব্রু চুলকে ঠোঁট কাঁমড়ে ধরে কিছু ভাবলো। তারপর হঠাৎই মাহিকে কোলে তুলে নিয়ে মেঘলাকে উদ্দেশ্য করে বলল, এদিকটা একটু সামলে নিস আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। কথাটা বলেই মেহরাব মাহিকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো৷ আর ঘুমন্ত মাহি ঘুমের মধ্যেই মেহরাব এর গলা জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে নাক ঘষে মুখ গুজে আবার ঘুমিয়ে গেলো।
চলবে….
#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_২৭
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
কথা বলতে বলতে কখন যে মেঘলা আপুর কোলে ঘুমিয়ে গেছি নিজেই জানি নাহ। হঠাৎ মনে হলো আমি কোনো বরফের দেশে ঘুমিয়ে আছি। কিন্তু আমি তো মেঘলা আপুর রুমে শুয়ে ছিলাম তাহলে বরফের দেশে আসবো কীভাবে? আর হঠাৎ করে এমন শীতই বা লাগছে কেনো? চোখ বন্ধ রেখেই চারপাশে হাড়তে দেখলাম যদি গায়ে দেওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু না হাতের কাছে গায়ে জড়ানোর মতো কিছুই পেলাম নাহ অগত্যা এক প্রকার বাধ্য হয়েই উঠে বসলাম। দুচোখে যেনো পুরো পৃথিবীর মানুষের ঘুম একবারে চেপে ধরে আছে। বহু কষ্টে চোখ খুলে চারপাশে দেখলাম কিন্তু একি এটা তো মেঘলা আপুর রুম নয় তাহলে এটা কার রুম? মুহুর্তে আমার ঘুম ছুটে গেলো দুহাতে চোখ ডলে ভালো মতো চারপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এটা মেহরাব ভাইয়ার রুম। আর আমার পাশেই ঈশিতা মরার মতো ঘুমিয়ে আছে। আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না এই মেয়ের কী শীত লাগছে নাহ? আর এসির পাওয়া এতো কোন গাধা দিয়েছে? রুমটা যে আইসলেন্ড বানায়ে ফেলছে। কিন্তু আমি এখানে আসলাম কীভাবে? গায়ে ভালো মতো ওড়নাটা জড়িয়ে নিলাম। আসলে ঘুম ভাঙ্গার মূল কারণ হলো ক্ষিধে পেটের মধ্যে গুড়গুড় করছে। শীত আর ক্ষিধের আক্রমণে আমি আর ঘুমাতে পারলাম নাহ। তখনি চট করে আমার মাথায় এলো আমি এই রুমে কীভাবে এলাম আর মেহরাব যে মানুষ ওনি ওনার রুম কারো সাথে মোটেও শেয়ার করে নাহ। তাহলে কোন হতোভাগা আমাকে এখানে এনেছে তাকে পেলে মেরে দাঁত উড়িয়ে দিতাম। বিছানা থেকে নেমে বাইরে যাবো তখনি দেখি ব্যালকণিতে আলো জ্বলছে। বেশ কৌতুহল হলো এতো রাতে ব্যালকণিতে আলো জ্বলছে কেনো? যেখানে সারা বাড়ি ঘুমিয়ে আছে সেখানে আলো জ্বালিয়ে রেখেছে কে? ভয়ে আর হাজারও কৌতুহল নিয়ে গুটিগুটি পায়ে ব্যালকণির দরজার দিকে গেলাম। দরজাটা বন্ধ আছে আমি হাত দিয়ে আলতো ধাক্কা দিতেই সেটা খুলে গেলো। আস্তে করে মাথাটা বার করে উঁকি দিতেই দেখি ব্যালকণির এক কোণায় মেহরাব ভাই বসে আছে। আর ওনার কোলের উপরে ল্যাপটপ রাখা। পরনে নীল রঙের একটা টিশার্ট আর থ্রী কোয়াটার প্যান্ট পড়া। চুল গুলো কপালের উপর ছন্ন ছাড়া ভাবে পড়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগেই হয়ত গোসল করেছে। আমি এক ধ্যানে ওনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম তখনি ওনি মাথা নারাতেই আমার দিকে চোখ পড়ল৷ আমি থতমত খেয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম। ওনি ভ্রু কুঁচচে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ল্যাপটপ টা নামিয়ে আমার দিকে আসলো। হাত দিয়ে চুল গুলো কপাল থেকে সরিয়ে পকেটে দুহাত রেখে জিগাস করল।
কি ঘুম হয়েছে? এতো রাতে না ঘুমিয়ে এভাবে রুমের মধ্যে হেঁটে বেরাচ্ছিস কেনো?
ওনার সাথে মোটেও কথা বলতে ইচ্ছে করছে নাহ অভিমানে ভিতরটা ভরে আছে। তাই কোনো রকমে বললাম, শীত লাগছিলো তাই ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
ওনি কপাল কুঁচকে আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেনো আমি বলেছি যে মরুভূমিতে আমি কম্বল গায়ে দেবো। ওনার এমন তাকিয়ে থাকা দেখে বললাম। এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? এখন হয়ত মাঝ রাত আর এসির পাওয়ার এতো দেওয়া তো শীত লাগবে না? আজব নাকি গরমের সময় শীত লাগা বারণ।
আমার কথায় ওনার মধ্যে কোনো পরিবর্তন হলো না চুপচাপ হেঁটে রুমের মধ্যে গিয়ে টি টেবিলের উপর থেকে এসির রিমোট টা নিয়ে পাওয়ার কমিয়ে দিলো। নে এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পর আর শীত লাগবে না। কথাটা বলেই ওনি ব্যালকণিতে চলে গেলো কিন্তু ওনিতো একটা সম্যার সমাধান করলো বাকিটা মনে হয় আমাকেই করতে হবে। দরজা খুলে বাইরে চলে গেলাম সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নেমে আসলাম ডয়িং রুমে হালকা আলো জ্বলছে। তাতেই রান্না ঘরের যাওয়ার পথটা দেখে রান্না ঘরে চলে আসলাম খাবার পাওয়ার আশায়। কিন্তু রান্না ঘরে অনেক জিনিসপত্র রাখা বিয়ের জন্য আনা হয়েছে হয়ত। পা রাখা যাচ্ছে না তবুও পা টিপে টিপে ভিতরে গেলাম কিন্তু ভাগ্যটা এতোই খারাপ যে কোনো খাবারই পেলাম নাহ। রেগেমেগে দেওয়ালের সাথে পা দিয়ে পাড়া দিলাম ব্যাস তাতেই পাশে রাখা ব্যাগ থেকে কি যেনো একটা পড়ে গেলো আর তাতেই ঝনঝন শব্দ হলো। দ্রুত গিয়ে জিনিসটা তুলে উপরে রাখতেই দেখি সামনে মেহরাব দাঁড়িয়ে আছে৷ ওনাকে এভাবে হঠাৎ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।
কিরে তুই এতো রাতে এখানে কি করছিস? তোকে না আমি ঘুমাতে বললাম তাহলে না ঘুমিয়ে রান্না ঘরে কি?
এভাবে ওনার কাছে ধরা পড়ে যাবো ভাবিনি তবুও লজ্জার মাথা খেয়ে বললাম। আসলে দেখতে এসেছিলাম এখানে খাবার আছে কিনা রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই ক্ষিদে পেয়েছে।
আমার কথায় ওনি কিছুক্ষণ ভাবলেন তারপর বললেন, বাড়িতে এতো মানুষ খাবার না পাওয়া টাই স্বাভাবিক। ওনিও রান্না ঘরে আসলেন জায়গা কম থাকায় ওনার বুকের সাথে আমার পিঠ লেগে গেলো৷ ওনি আমাকে সরিয়ে এক সাইটে দাঁড় করায়ে ফ্রিজ খুলে কিছু খুঁজলেন কিন্তু ওখানে গোশত আর দই ছাড়া খাওয়ার মতো তেমন কিছুই দেখা গেলো নাহ। অবশেষে এক কোণে দুইটা কাপ নুডলস দেখা গেলো ওনি সেটা বার করে বলল।
এখন আপাতত এটাই খেতে হবে ফ্রিজে আর কিছু নেই। তুই সর আমি পানি গরম করছি।
আমিও বাধ্য মেয়ের মতো সরে দাঁড়ালাম ওনি কোনো শব্দ ছাড়া চুলায় পানি বসিয়ে দিলো। কেনো যেনো আমার ওনার প্রতি জমে থাকা অভিমানটা আর খুঁজে পাচ্ছি নাহ। আজব তো হঠাৎ করে এভাবে কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো এতোটা অভিমান? এভাবে এতোটা অভিমান গায়েব হওয়া কি মেনে নেওয়া যায়? আমি ভেবেই পাচ্ছি না। পানি গরম হয়ে গেলে ওনি নুডলস টা বানিয়ে আমায় দিলো আমিও কোনো দিক না তাকিয়ে গপাগপ খেয়ে নিলাম যাক পেট তো কিছুটা হলেও ভরলো।
আমি রুমে চলে এসেছি ওনি এখনো আসেননি হয়ত সবটা গুছিয়ে রাখছে। কিছুক্ষণ পর ওনিও আসলো তবে ল্যাপটপটা নিয়ে বেরিয়ে যাবে। যাওয়ার আগে বলল, দরজাটা বন্ধ করে দে। আর প্লিজ আমার উপর রাগ করিস না সেদিনের পর কেমন যেনো নিজেকে তোর অপরাধী মনে হচ্ছিল। কেনো যেনো মনে হচ্ছিল দোষ টা আমার আমি যদি নক করতাম তাহলে এমন কিছুই হতো না। নিজেকে নিকৃষ্ট মনে হচ্ছিল সেই অপরাধ বোধে তোর সামনে দাঁড়াতে পারছিলাম না কেনো জানি মনে হচ্ছে তুই আমায় মাফ করতে পারিসনি তাই। তবে তুই চাইলে আমাকে শাস্তি দিতে পারিস আমি তোর দেওয়া সব শাস্তি মাথা পেতে নেবো।
এভাবে কেনো ভাবছেন আপনি, আমার আপনার প্রতি কোনো অভিযোগ নেই আর যা হয়েছে সেটা নিতান্তই একটা এক্সিডেন্ট এতে কারো হাত নেই। আর তাছাড়া আমার আপনার উপর বিশ্বাস আছে মেহরাব।
ওনি আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তারপর আমার দিকে এগিয়ে এসে বা হাতে আমার মাথাটা ধরে কপালে দীর্ঘ সময় নিয়ে কিস করলেন। তারপর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ঘুমিয়ে পর দরজা বন্ধ করে দে। কথাটা বলে ওনি আরেকটা চুমো দিয়ে চলে গেলেন। আমি ওখানেই কিছু সময় ওভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। কি হলো সেটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম। কেনো যেনো অনেক বেশি লজ্জা লাগছে দুহাতে মুখটা ঢেকে নিলাম। তারপর দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে বিছানায় শুয়েই চোখ পড়ল ঈশিতার উপর এখানে এতো কিছু হয়ে গেলো তবুও ওনার ঘুম ভাঙ্গল না। মেলায় হারিয়ে যাওয়া কুম্ভকর্ণের চাচাত বোন।
সকাল থেকে ভীষণ ব্যাস্ত সময় কাটছে সবার আমিও অনেক ব্যাস্ত আর মেহরাব তার খোঁজ আজকে না করাই ভালো৷ কেননা তাকে তো খুঁজেই পাওয়া যাবে নাহ। সকালে একবার তার দেখা পেয়েছিলাম দেখলাম কাজের তদারকি করছে ব্যাস তারপর থেকে আর তার টিকিটাও খুঁজে পাইনি৷ দুপুর গড়িয়ে বিকেল পড়বে পড়বে ভাব লোকজন ও আসতে শুরু করেছে আমরা সবাই হলুদ রঙের থ্রী পিস পড়ে আছি সবার গায়েই একি জামা সবাই চুল খুলে রাখা পিছন থেকে কেউ কাউকে চট করে চিনতে পারবে নাহ। আর আপুকে শাড়ি পড়ায়ে সাজায়ে স্টেজে বাসায়ে রাখা হয়েছে ছেলের বাড়ি থেকে হলুদ আসছে। আমরা হলুদ লাগায়ে গোসল করে তারপর সাজুগুজু করবো। আমি আপুকে হলুদ দিয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম আমার মুখেও হলুদ হঠাৎই পিছন থেকে কেউ বলল,
হ্যালো বিয়ানসাহেবা।
চলবে…..