ভালো থেকো তুমিও পর্ব-০৩

0
275

#ভালো_থেকো_তুমিও
Sumon Al-Farabi
#৩য়_পর্ব

“আপনি মায়াকে কি বললেন যার জন্য ও আমায় এভাবে বলে ফোন কেটে দিলো”- তুলির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম।
– তুমি রেগে যাচ্ছো মনে হচ্ছে!
– রেগে যাচ্ছি না। আমি রেগেই বলছি।
– তুমি একটা মেয়ের জন্য আমার সাথে রাগ করছো?
– উনি একটা মেয়ে না একমাত্র মেয়ে। ওনার জন্য আপনার উপর শুধু রাগ না থাপ্পড় ও দিতে পারি। ভুলে যাচ্ছেন ও আমার হবু বউ।

তুলি মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
– যত্তসব ন্যাকামি। শুনুন আপনার সাথে আমার যা কিছু ছিলো সব কিছু আপনি নিজের হাতেই নষ্ট করেছেন। এখন নতুন করে আমার জীবনে আসার চেষ্টা করবেন না। আপনি সুখ খুঁজতে গিয়েছিলেন, পেয়েও গেছেন তবুও এমন বেহায়ার মতো পিছনে পরে আছেন কেন! আপনি তো সব সময় আমার থেকে বেটার অপশন খুঁজতেন।

প্রচন্ড রাগ উঠছে কিন্তু তুলির মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলাম। মেয়েটার প্রতি এখনও মনের গভীরে কোথাও না কোথাও ভালোবাসার অংশবিশেষ রয়েই গেছে।
– যাই হোক দয়া করে আর বিরক্ত করবেন না। আল্লাহ হাফিজ।

প্রস্থান করলাম।
এতক্ষণ যে কথা গুলো বললাম সেগুলো দুই বছর আগে এই মানুষের মুখ থেকেই আমায় শুনতে হয়েছে। আমি বেহায়া, লজ্জা নেই ওনাকে বিরক্ত করি। প্রতিটা শব্দ মনের গভীরে এমন ভাবে গেঁথে আছে আমৃত্যু থেকে যাবে।

বাসায় আসলাম।
সবাই কত্তো খুশি। আমার দাদুর পরিবার এবং আমার নানুর পরিবার, দুই পরিবারের বড় ছেলে আমি। তাই তাদের আনন্দ একটু বেশিই।

বাসা থেকে কিছুটা দূরে একটা ছোট নদী আছে। বিকেল বেলার পরিবেশটা অসম্ভব সুন্দর। সেখানেই বসে সিগারেটের ধোয়ার সাথে নিজেকে উড়াচ্ছি। পিছনে বাইকের হর্ণ কানে আসলো। ছোট চাচ্চু বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
একবার পিছনে তাকিয়ে আবার সিগারেটে টান দিলাম।
– এখনো সিগারেট ছাড়তে পারিস নি?
– প্রিয় জনের দেওয়া ভালো থাকার ঔষধ কিভাবে ছাড়বো।
– দে আমারে একটা দে।

চাচ্চু আর আমি বন্ধুর মতোই। আব্বুর হাত থেকে কত যে বাঁচিয়েছে আমায় তার কোনো হিসাব নেই।
দু’জনেই নিরব দৃষ্টিতে নদীর পানির স্রোত দেখছি।
– তুলি কে এখনো ভুলতে পারিস নি?
– ভুলতে পারলে সিগারেট জ্বালাতাম না।
– বাদ দে না। কিছু কিছু প্রিয় জিনিস আমাদের ভাগ্যে থাকে।
– সব সময় ভাগ্যকে দোষ দিতে নেই চাচ্চু। প্রিয় মানুষটা নিজেই তো আমার হয়ে থাকতে চায় নি। সেখানে ভাগ্য কি করবে বলো!
– তোকে কথায় সান্ত্বনা ও দিতে পারবো না হারাতে ও পারবো না। অতএব চল এখন বাসায় যাই।
– এখন বাসা যেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি যাও আমি একটু পরেই আসছি।
– তাড়াতাড়ি আসবি।

চাচ্চু চলে যাওয়ার পর পরই মায়াকে কল করলাম। একবার কল কেটে গেলো। আবার কল দিলাম। এবার রিসিভ হয়েছে।
– হ্যালো
( নিরবে শুনে যাচ্ছে কিন্তু কথা বলছে না। মাঝে মাঝে একটু শব্দ আসছে যাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কান্না করছে)
– কান্না করছেন?
( এখন ও কোনো কথা বলছে না)
– কিছু কান্না জমিয়ে রাখুন পরশু যখন বিদায় হবে তখনও তো কাঁদতে হবে তাই না।
নিরবতা ভেঙ্গে বললো- জমিয়ে রেখে কি লাভ আপনি তো আমায় বিয়েই করবেন না।
– কে বলেছে?
– ঐ মেয়েটা বললো তখন।
– কি বলেছে?
– উনি আপনার প্রেমিকা আপনারা পালানোর প্ল্যান করছেন।
– মাত্র কয়েক সেকেন্ডে এতো সব বলেছে!
– আপনাকে একটা প্রশ্ন করি!
– কি?
– যে মানুষটা আপনার স্বপ্ন ভেঙেছে তার কাছে ফিরে যাবেন নাকি যে মানুষটা আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনছে তার কাছে যাবেন?
– আমি আপনার কাছে যাবো।
-আমার উত্তর তো আগে দিন।
– যে স্বপ্ন বুনছে।
– তাহলে নিশ্চিতে থাকুন আমি আপনাকেই নিয়ে আসবো।
– উনি আপনার প্রেমিকা না?
– ছিলো দুই বছর আগে।
– আমার কিন্তু কোনো প্রেমিক ছিলো না।
– এই জন্য তো এত অল্পতেই সারাদিন ধরে কান্না করছেন। এখন লক্ষী মেয়ের মতো ফ্রেশ হয়ে নেন। আমি রাতে কল করবো।
– আচ্ছা।
– রাখলাম।
– শুনেন
– কি?
– আপনাকে কিন্তু আমি অনেক ভালোবাসি।
মুচকি হেঁসে বললাম – আচ্ছা ।

“ভালোবাসি” কারো কারো কাছে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর শব্দ গুলোর মাঝে এটা একটা। কিন্তু আমি পৃথিবীর বুকে যদি কোনো শব্দকে সব থেকে বেশি ঘৃণা করি সেটা হচ্ছে “ভালোবাসি”

এখন সন্ধ্যা।
বাসা থেকে কিছুটা দূরে একটা টং দোকান আছে। সেখানে আসতেই মামা বললো- মামা আজ তো মামী আসছিলো তোমার খোঁজে ২০ মিনিট আগেই চলে গেলো। অনেক দিন পর মামীকে দেখলাম।
– আমার কথা জিজ্ঞেস করছিলো?
– হ্যাঁ। বললো আপনি দোকানে আসছিলেন নাকি? আমি না বললাম উনি চা খেয়ে চলে গেলো।
– একটা চা আর একটা গোল্ডিফ সুইচ দেন।
মামা সিগারেটটা হাতে দেওয়ার সময় বললো- একটা কথা জিজ্ঞেস করি মামা!
– কি কথা?
– আপনি তো সিগারেট খেতেন না। হঠাৎ কি হলো যে সিগারেট ধরলেন। এটা তো অনেক ক্ষতি করে।
– মানুষের জীবন কি সব সময় এক থাকে মামা। মাঝে মাঝে নিজেকে প্রচন্ড ডিপ্রেশন থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে সামান্য শারীরিক ক্ষতি করে হলেও সিগারেট জ্বালাতে হয়। নয়তো যে জীবনের জন্য এতো সচেতনতা সেই জীবন কোনো সস্তা দড়িতে ঝুলে যাবে অথবা হেরে যাবে কিছু সস্তা স্লিপিং পিলস এর কাছে। যখন ধোঁয়াটা উড়তে দেখি মনে হয় ডিপ্রেশন গুলো উড়ে নিলিমায় মিশে যাচ্ছে।

দোকানদার আমায় ইশারায় কিছু বোঝাতে চেষ্টা করছে। তাই আমি দোকানদারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। উনি পাশে তাকাতে বলছেন।
পাশে তুলি দাঁড়িয়ে ছিলো- সন্ধ্যা হয়ে গেছে আপনি এখনো এদিকে কি করছেন? ছেলেরা আপনাকে বিরক্ত করে না?
– না।
– মামা। আমাদের এলাকার ছেলেরা এতো ভালো হয়ে গেছে!
– কয়েকজন আসছিলো একটু আগে। আমি আপনার কথা কইছি। তারপর আর কিছু বলে নি।
– কিছু বলবেন?
– একটু জরুরি কথা ছিলো।
– আচ্ছা মামা আসি এখন।

দোকান থেকে উঠে আসলাম।
দুজনেই হাঁটছি। তুলি বললো- কোথায় যাচ্ছি আমরা?
– আমার বাসায়। যদিও বা সেখানে যাওয়ার অধিকার বা যোগ্যতা কোনোটাই আপনার নেই। কিন্তু কি আর করার এলাকার মানুষের কাছে আমি অনেক ভালো চরিত্রের একজন মানুষ। সন্ধ্যাবেলা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলা শোভা পায় না।
– ওপেনে যে এভাবে সিগারেট খাচ্ছো তখন চরিত্রের কি ক্ষতি হচ্ছে না!
আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। তুলির দিকে ফিরে বললাম- সিগারেট খাওয়া এটা আমার একটা বাজে অভ্যাস হতে পারে বাজে চরিত্র না। যে অভ্যাস টা শুধু মাত্র আপনার জন্য হয়েছে। সো আমার জীবনের কোনো বিষয় নিয়ে বিন্দু মাত্র নাক গলাবেন না।

বাসায় ধোঁকার আগেই ভাবছিলাম কিভাবে আম্মুর নজর এড়িয়ে রুম পর্যন্ত যাওয়া যায়। কিন্তু আমার এমন ভাগ্য যেখানে বাঘের ভয় সেখান আমার কখনোই সন্ধ্যা হয় নি। সেখানে আমার মাঝ রাত হয়েছে। কলিং বেল বাজাতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো। তুলিকে আম্মু ভিতরে আসতে দিবে কি না সেটা নিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে গেলাম।

To be continue….