ভালো থেকো তুমিও পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0
434

#ভালো_থেকো_তুমিও
Sumon Al-Farabi
#শেষ_পর্ব

আমার গায়ে হলুদে তুলি আসবে এটা কখনো আমি কল্পনাও করিনি। সবাই কত্তো আনন্দ করছে। এদিকে আমার ভয়ে ভিতর শুকিয়ে যাচ্ছে তুলি আবার না জানি কোনো অঘটন ঘটায়। আমি বার বার তুলির দিকে তাকাচ্ছি ওর সব কিছু ফলো করছি। তবে তুলির অদ্ভুত আচরণ আমায় অবাক করে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে ও আমার পাশে বসে সবার সাথে সুন্দর গল্প জুড়িয়ে দিচ্ছে।

একটু পরেই আম্মু তুলিকে কোথায় যেন ডেকে নিয়ে গেলো। এখন ভয়টা আরও বেরে গেলো। তুলিকে নিয়ে না। আমার আম্মু কে নিয়ে। না জানি আবার আম্মু ওকে কি উল্টো পাল্টে শুনিয়ে দেয়। আজ আমার গায়ে হলুদ কোথায় আনন্দ করবো তা না আমার মাথা থেকে চিন্তা কিছুতেই সরছে না।
সবাই যখন কাজিনদের নাচ দেখতে ব্যাস্ত এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আমি সেখানে থেকে উঠে চলে আসলাম। আম্মুর সাথে দেখা হলো কিন্তু আম্মুর সাথে তুলি ছিলো না।
– আম্মু
– কিছু বলবি?
– তুলি কোথায়?
– ওকে নিয়ে তোর এতো মাথা ব্যাথা কেন?
– আমি দেখলাম তুমি ওকে ডেকে নিয়ে আসলে।
– হ্যাঁ। ওকে সাবার সাথে ফুল আনতে পাঠালাম।

আম্মুর কথা শুনে কিছুটা অবাক হলেও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
– ওকে তুই ইনভাইট করছিস?
– হ্যাঁ। তবে তুমি কোনো চিন্তা কইরো না।
– আমি চিন্তা করছি না। তোর উপর আমার বিশ্বাস আছে।

আম্মুর এই কথাটা যেন আমায় এক আকাশ সমান প্রশান্তি দিচ্ছে।

সারাদিনের কতশত আয়োজন শেষে এখন রাত। ছাঁদে দাঁড়িয়ে প্রশান্তির শ্বাস নিচ্ছি।
– কাল তোমার বিয়ে!
– ওহ আপনি।
– হুম। অন্য কেউ আসবে বলেছিল নাকি?

আমি উত্তর দেওয়ার আগেই মায়ার কল আসলো।
– হ্যালো।
– কি করছেন?
– খুব আনন্দে আছেন মনে হয়!
– কাল আমার ভালোবাসা আমার হয়ে যাচ্ছে। আমি তো খুশি থাকবোই।
– ওহ আচ্ছা।
– আমি কিন্তু আপনার পাশে কোনো মেয়েকে সহ্য করবো না বলে দিলাম। আর আপনার ঐ প্রেমিকা ওনাকে যদি আপনার পাশে দেখি কখনো তবে কিন্তু আমি কেঁদে দিবো।
– আচ্ছা এসব কান্নার হিসাব পরে করি। এখন কিছু বলবেন আপনি?
– বলবো তো।
– কি বলবেন?
– আপনাকে ভালোবাসি।
– জানি।
– সত্যি ভালোবাসি কিন্তু।
– জানি আমি।
– ধ্যাত। মানুষের বর কত রোমান্টিক হয় আর আমার বর একদম আনরোমান্টিক। এই জন্য কি এতদিন প্রেম ভালোবাসা থেকে দূরে ছিলাম।
– হয়েছে এখন আর ঢং করতে হবে না। রাত অনেক হয়েছ ঘুমিয়ে পড়ুন। চোখের নিচে কালো দাগ পড়লে কিন্তু বিয়ে করবো না।
– না করলে আমি কান্না করবো।
– তবুও লাভ হবে না।
– কথা বলবেন না বললেই হয়। রাখলাম।

মায়া রাগ করে ফোন কেটে দিলো।
আমি মায়ার কান্ড দেখে আনমনে হাসতে শুরু করলাম। এতক্ষণে ভুলেই গেছলাম তুলি আমার সাথে আছে।
– কথা বলা শেষ!
– ওহ! আপনি তো আছেন।
– কথ বলায় এতটাই ডুবে ছিলেন যে ভুলেই গেলেন আমি বলে কেউ একজন মানুষ আপনার সাথে ছিলো।
– সরি।
– তোমার বউ ছিলো?
– হুম। ছোট বাচ্চাদের মতো কথা বলছিলো তাই হাসি পাচ্ছে।
– তোমার তো এমনটাই পছন্দ।
– হুম।
– তুমি কি সত্যি সত্যি বিয়ে করছো?
– বিয়ে আবার মিথ্যা হয় নাকি। আপনার কি মনে হয় মিথ্যা বিয়ে করার জন্য এত টাকা দিয়ে বাড়ি এভাবে সাজানো হয়েছে সব আত্মীয় কে ডাকা হয়েছে।
– আমাকে একটা সুযোগ তো দিতেই পারো।
– সুযোগ দিলাম তো।
– কিভাবে!
– আপনাকে নতুন করে বাঁচার। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যার সাথে জীবনে ও কথা বলবো না তার কাছে গিয়ে কথা বললাম শুধু মাত্র আপনার জন্য। এর থেকে আর কি সুযোগ আশা করেন।
– দেখো আমি জানি তুমি এই বিয়েতে রাজি নেই। তাছাড়া তুমি বললেই আব্বু বিয়েটা ভেঙে দিবে এটা আমি জানি। শুধু তুমি একবার বলো।
– বিয়ে ভেঙে কি হবে!
– আমায় ফিরিয়ে নিবা। তুমি যেভাবে বলবা আমি সেভাবেই থাকবো। তুমি যেমনটা বলবা সব সময় ঠিক তেমনটাি হবে।
– বাক্য গুলো খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। ওহ হ্যাঁ! মনে পড়ছে। এভাবেই তো আমি আপনাকে বলেছিলাম।
– তুমি আমাকে যতই কথা শোনাও না কেন আমি বিন্দু মাত্র অভিযোগ করবো না। তবুও তুমি প্লিজ আমায় ফিরিয়ে নাও।
– ছেলেরা সব থেকে বেশি কাকে ভালোবাসে জানেন?
– কাকে?
– তার মা কে। আর আপনি আমার মা কে কাঁদিয়েছেন। এখন যদি আমায় দুটি অপশন দেওয়া হয় আপনি এবং মৃত্যু তবে আমি মৃত্যু বেচে নিবো। তাছাড়া সব ছেলেরাই চায় তাকে কেউ পাগলের মতো ভালোবাসুক। আমি সেই মানুষটা পেয়ে গেছি। তাই আমার কোনো পিছুটান থাকা উচিত নয়।
– তুমি এভাবে বললে আমি সত্যি মরে যাবো।
– আপনার ব্যক্তিগত জীবনে তো আমি ইন্টারফেয়ার করতে পারি না। আপনার জীবন রাখবেন কি না সেটা একান্তই আপনার ইচ্ছে। রাত অনেক হয়েছ এখন আপনি বাসায় যান।
– তুমি কতটা বদলে গেছো। আমি একবার মৃত্যু শব্দ উচ্চারণ করলে তুমি কতটা ঘাবড়ে যেতে। আজ তুমি নিজেই আমায় ( তুলি কান্না করছে)
– মানুষ বদলায়, তার চাহিদায় অথবা পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে। একটা কথা কখনো ভেবে দেখেছেন একটা মেয়ের দিয়ে কোনো ছেলের নজর যে ছেলেটা সহ্য করতে পারতো না সেই ছেলেটা কিভাবে মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে কিভাবে নিজেকে বুঝিয়েছে সেই মেয়েটার শরীরে অন্য পুরুষের স্পর্শ করার কারণটা। এতসব কথা বলতে একদম ভালো লাগছে না। চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।

আমি তুলির আগে ছাঁদ থেকে নেমে আসলাম। বাইকে করে তুলিকে ওদের বাসার সামনে নামিয়ে দিলাম।
– কাল তুমি চিরদিনের জন্য অন্য কারো হয়ে যাচ্ছো।
– হুম।
– ভালো থেকো সবসময়।
– আমি তো ভালোই থাকবো। পৃথিবীতে নাকি যে যেমনটা করে তেমনটাই ফল পায়। মানুষের অনেক ক্ষতি করেছি সেটার পরিবর্তে প্রিয় মানুষ হারানোর ব্যাথা পেয়েছি। কিন্তু আমি ও তো মন থেকে ভালোবেসেছিলাম এখন সেটার পরিবর্তে ভালো থাকাটা তো আমার পাওনা। তবে হ্যাঁ ” ভালো থাকবেন আপনিও”। আল্লাহ হাফিজ।

তুলি কান্না করতে করতে বাসার ভিতরে গেলো। আমি সেখানে দাঁড়িয়ে মায়াকে কল দিলাম।
– কি হয়েছে এখন আবার কল দিচ্ছেন কেন?
– খুব অভিমান হয়েছে বুঝি!
– না। আমার কোনো অভিমান হয় না।
– আচ্ছা শোনো না একটা কথা বলার ছিলো।
– কি কথা?
– আমার পাশে কোনো দিন কোনো মেয়েকে দেখবে না। আমি সারাজীবন শুধুই তোমার।
– হুম।
– আর একটা কথা বলবো?
– কি?
– ভালোবাসি আমার একমাত্র বউ।
– সত্যি! ( মায়ার কন্ঠে উচ্ছাস)
– হ্যাঁ সত্যি। এখন ঘুমাও আমাদের প্রথম দেখা কাল হচ্ছে।
– আপনাকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি।

পাগলীটা কল কেটে দিলো।
জীবন কখনো কারো কোনো প্রকার ঋণ বাকী রাখে না। আজ তুমি যেটা করছো সময়ের বিবর্তনে কোনো একদিন তার প্রতিদান তুমি পাবেই সেটা ভালো হোক বা মন্দ।

The End……