ভালো থেকো তুমিও পর্ব-০২

0
307

#ভালো_থেকো_তুমিও
Sumon Al-Farabi
#২য়_পর্ব
অদ্ভুত বিদঘুটে এক নারী চরিত্র আমার সামনে দাঁড়িয়ে। ভোরের আবছা আলোয় ঠিক মতো মুখটা বোঝা যাচ্ছে না। আমি ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে যেতেই মহিলা আমায় ধাক্কা দিলো। আমি উঁচু কোনো পাহাড় থেকে যেন নিচে পড়ে যাচ্ছি। ঠিক তখনই ঘুমটা ভেঙে গেলো। পুরো শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।

এতক্ষণ যেটা ছিলো সেটা তাহলে শুধুমাত্র একটা স্বপ্ন ছিলো! কিন্তু এমন অদ্ভুত স্বপ্ন আমি আগে কখনোই দেখিনি।

দরজায় হঠাৎ নক করার শব্দেও আমি চমকে উঠলাম।
– কে!
– আমি তাড়াতাড়ি দরজা খোল।

আম্মু ভিতরে আসলো। এসে সোজা আমার বেডে বসে পড়লো।
– কি হইছে আম্মু!
– আমার একটা মাত্র ছেলে। ভাবছিলাম হলুদ বিয়ে সব কত ধুমধামে করবো কিন্তু কিছুই হলো না।
– কেন?
– কিভাবে হবে যার বিয়ে সে ১২ টায় ঘুম থেকে উঠছে। তাহলে হলুদ এর অনুষ্ঠান করবো কিভাবে।

মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম দশটা বাজে। কিন্তু মায়েদের ঘড়িতে সবসময় দুই তিন ঘন্টা বেশি বাজে কেন? তাদের ঘড়িটা কোন বিজ্ঞানী বানায়!

– আজ তো হলুদ না তাই না!
– হলুদ কাল। কিন্তু তার জন্য তো শপিং করতে হবে। নিজের জন্য তারপর তোর বন্ধুদের জন্য।

বন্ধুদের কথা বলতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
– আমার কোনো বন্ধু নেই।
– সরি বাবা। আচ্ছা ঠিক আছে নিজের জন্য তো হলুদের পাঞ্জাবি টা কিনে আনবি।
– আমি নাস্তা করে বেড়িয়ে পড়ছি।

নাস্তা করে শপিংমলের দিকে গেলাম।
রাস্তায় রিকশায় বসে আছি। তখন মায়া কল করলো।
– কি করছেন?
– এই তো আম্মু জোর করে হলুদের পাঞ্জাবি কিনতে পাঠিয়ে দিলো।
– আমার জন্য কিছু কিনবেন না?
– আপনার জন্য ড্রেস আর যা যা লাগে বাকী সব তো কেনা হয়ে গেছে।
– জানি তো। সেগুলো তো আপনি কিনেন নি। আম্মু কিনেছে।
– আম্মু কেনা আর আমি কেনা একই তো হলো।
– কিভাবে এক হলো! আমি এতো কিছু শুনতে চাই না আপনি আমার জন্য কিছু কিনবেন।
– কি কিনবো আপনার জন্য?
– সেটা তো আমি জানি না। তবে আমার জন্য অবশ্যই কিছু কিনবেন। সেটা কিন্তু আমি বাসায় গিয়েই নিবো।

মায়ার সাথে কথা বলতে বলতেই রাস্তার পাশের একটা গাছের নিচে চোখ গেলো। তুলি আর রাজ বাইকের উপর বসে গল্প করছে। আমি একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। কিন্তু আচমকাই তুলির সাথে চোখাচোখি হওয়ায় অন্য দিকে তাকালাম।

এইটুকু সময়ে ভুলেই গেছলাম আমার ফোনে কেউ আছে।
– এই যে শুনছেন!
– হ্যাঁ বলুন।
– কোথায় হারাই গেছলেন?
– কোথায় আর হারাবো। আচ্ছা আমি এখন রাখছি।
– ঠিক আছে। কিন্তু অবশ্যই আমার জন্য কিছু কিনবেন।

রিকশা থেকে নেমে একটা টং দোকানে বসে সিগারেট জ্বালিয়ে একটা চা নিলাম।
সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে নিজের অনুভূতিগুলোকে উড়াচ্ছি।
– সিগারেট ধরলে কবে থেকে?
পরিচিত কেউ ভেবে সিগারেট লুকিয়ে নিলাম। কিন্তু সেটা তুলি ছিলো।
– আপনি এখানে! আপনাকে তো একটু আগেই আমি ঐদিকে দেখে আসলাম।
– তোমায় দেখে একটা রিকশা নিয়ে তোমার পিছনে পিছনে আসলাম।
– চা খাবেন!
তুমি আমার বা হাতের দিকে তাকিয়ে বললো- কবে থেকে এসব শুরু করেছ?
– কোন সব?
– সিগারেট খাচ্ছো। তুমি তো ঠিক মতো চা ও খেতে না। আমরা জোর করলে তখন একটু আধটু খেতে।
– মানুষ পরিবর্তনশীল, সেই সাথে মানুষের চাহিদা, ভালোলাগা ভালোবাসা। আমি ও তো মানুষ যদিও বা সেটা আপনারা জানেন না কিন্তু আমি ও মানুষ তাই এতটুকু পরিবর্তন হতেই পারে।

চায়ের বিল দিয়ে আমি হাটতে শুরু করলাম। তুলি আমার পিছনে পিছনে আসছে
-অনেক দিন পর বাসায় আসলে তাই না!
– হুম।
– একটু সময় হবে কোথাও বসে কথা বলতাম!
– না। আমি অনেক ব্যাস্ত আছি।
– তুমি যতই ব্যাস্ত থাকো আমার জন্য ঠিকই সময় বের করবে আমি জানি।
আমার গতিরোধ হয়ে গেলো। পিছনে ফিরে মুচকি হেঁসে বললাম – আমি সেই সুমন নেই। আপনার জন্য ব্যাস্ততাকে সরিয়ে সময় বের করার মানুষ আছে।

আমি আবার হাটতে শুরু করলাম। তুলিও আমার পিছনে পিছনে হাঁটছে কিন্তু কথা বলছে না।
একটা মলে ঢুকে পাঞ্জাবির কালেকশন দেখার আগে শাড়ির কালেকশন দেখতে শুরু করলাম।
– শাড়ি কার জন্য! আম্মুর জন্য?
– আপনার আম্মুর জন্য আমি শাড়ি নিতে যাবো কেন!
– আমার আম্মুর জন্য না। তোমার আম্মুর জন্য।
– আমার আম্মু। আমার আম্মুর আর কোন এডপ্ট করা বেবি নেই। আম্মু বলবেন না প্লিজ। আর শাড়িটা আমার হবু বউয়ের জন্য।
– মজা করছো?
আমি শুধু একবার তার মুখের দিকে তাকালাম। এরপর পাঞ্জাবি কিনতে গেলাম।
একটা হলুদ পাঞ্জাবি একটা নীল শাড়ি আর শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে কাঁচের চুড়ি এগুলো কিনে একটা বেঞ্চে বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। তুলি তখনও আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
– আপনি তখন থেকে আমার পিছনে পিছনে আসছেন কেন? রাজ কোথায়?
– রাজ ওর বন্ধুর সাথে গেছে।
– আপনি ও বাসা চলে যান।
– সত্যি সত্যি তোমার বিয়ে?
– মিথ্যা মিথ্যা কখনো বিয়ে হয়?
আমি খেয়াল করলাম তুলির চোখে পানি টলমল করছে।
– আমি তোমাকে অনেক খুঁজেছি জানো। তোমার বাসাতেও গেছলাম কিন্তু আম্মু আমার সাথে কথাটাও বলে নি।
– আমায় খোঁজার তো বিন্দু মাত্র কোনো কারণ দেখছি না। আমি আপনার ভালোবাসার সন্ধান পেয়ে গেছেন হ্যাপি থাকুন। আমি তো বাঁধা ছিলাম।
– আমি সত্যি হ্যাপি নেই। আমি সব সময় রাজকে ভালো রাখার চেষ্টা করি তারপর ও অনেক মেয়ের সাথে ওর সম্পর্ক। এটা রাজ জানে না যে আমি জানি। কিন্তু এমন কিছু বিষয় আছে যার জন্য আমি ওকে ছাড়তেও পারছি না। কেন হচ্ছে আমার সাথে এমন!
– আপনি ঠিক এমনটাই তো আমার সাথে করেছেন তাই না! ঐ যে একটা কথা আছে না রিভেঞ্জ অব ন্যাচার। আল্লাহ তো আমার ও।
এরপর হয়তো আরও কিছু বলতাম কিন্তু তখনই আবার মায়ার কল।
– দয়া করে কোনো কথা বলবেন না। আমার হবু বউ কল দিছে।
আমি কলটা রিসিভ করতেই তুলি আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে দৌড়ে কিছুটা দূরে চলে যায়। আমি উঠে ওর পিছনে আসলাম কিন্তু এই কয়েক সেকেন্ডে কি যেন বলে ফোনটা আমার হাতে দিলো।
আমি অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছি তুলির দিকে কি এমন বললো এইটুকু সময়ে। আরও বেশি অবাক হলাম যখন মায়া বললো- আপনার বিয়েতে যদি মত না থাকে তবে আমায় বলে দিলেই পারতেন।

সব কিছু কেমন তাড়াতাড়ি ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু আসলে কি ঘটছে সেটাই এখনো বুঝে উঠতে পারলাম না। তুলি কি এমন বললো যে মায়া এমন রিয়েক্ট করলো!

To be continue….