ভালো থেকো তুমিও পর্ব-০৪

0
275

#ভালো_থেকো_তুমিও
Sumon Al-Farabi
#৪র্থ_পর্ব

আম্মু অদ্ভুতভাকে আমায় অবাক করে দিয়ে বললো- ভিতরে আসো।
আম্মুর কাছে এমন কিছু আমি মোটেও আশা করিনি। তুলিও থ হয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছে।
– দাঁড়িয়ে আছেন কেন! চলুন।
তুলিকে নিয়ে আমি ছাঁদে আসলাম।
– ছাঁদে আসলে যে! রুমে যাবা না?
– সেখানে যাওয়ার অধিকার নেই আপনার। যা বলার এখানেই বলুন।
তুলি কিছু বলার আগেই আম্মুর কল আসলো। – আমার কাছে আয়। কথা আছে।

এই হচ্ছে বাঙালি মা। এরা সবার সামনে কিছু বলবে না। কিন্তু সাইডে নিয়ে ঠিকই উত্তমমধ্যম দিবে।

– আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি আসছি।

আম্মুর রুমে আসলাম।
– এই মেয়ে আমাদের বাসায় কেন?
– আমার কাছে কি যপন দরকার তাই আসছে।
– বাসায় অনেক আত্মীয় আছে। আমি চাই না কোনো সিনক্রিয়েট হোক। আর ভুলে যাস না তোর বিয়ে পরশু।
– আমি কিছু ভুলিনি আম্মু।

ছাদে এসে দেখি তুলি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
– কি বলবেন বলুন।
– আম্মু তোমায় বকলো তাই না!
– কই না তো। আমায় শুধু মনে করিয়ে দিলো আগামী পরশু আমার বিয়ে। এখন তাড়াতাড়ি আপনার সমস্যার কথা বলুন।
– আমি রাজের সাথে আর থাকতে পারছি না।
– কেন! নতুন কাউকে পেয়ে গেলেন?
– তুমি প্লিজ আমার পুরো কথাটা শোনো।
– আচ্ছা বলুন।
– রিলেশনের এক পর্যায়ে ও আমায় শারীরিক সম্পর্কের জন্য ফোর্স করা শুরু করে আমি বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে যাই। কিন্তু ও যে গোপনে ভিডিও করবে সেটা বুঝতে পারিনি। এরপর থেকে ও বিভিন্ন মেয়ের সাথে মেলামেশা শুরু করে। আমি কিছু বলতে গেলেই ব্লাকমেইল করে। আবার যদি ব্রেকআপ করতে চাই তবেও ভাইরাল করার ভয় দেখায়। সেই ভিডিও এর জন্য ব্লাকমেইল করে এরপর কয়েকবার শারীরিক সম্পর্কে জড়ায়। এখন আমার মনে হয় যার সাথে এতো দিনের ভালোবাসার সম্পর্ক তার হাতেই প্রতিনিয়ত আমায় ধর্ষনের শিকার হতে হচ্ছে।
– আপনি এগুলো আমায় বলছেন কেন! বাসায় জানান, পুলিশের কাছে যান।
– তুমি তো জানোই আমার বাসার মানুষ কতটা সেনসিটিভ। আর যদি একবার এইসব পাবলিক হয় তবে আমার পরিবারের মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।
– শুরুর দিকে এগুলো ভাবা উচিত ছিলো।
– অনেক বার চেষ্টা করেছি সুইসাইড করতে কিন্তু আমি এতটাই ভীতু যে আমাকে দিয়ে সেটাও হয় নি।
– তো এখন কি চাচ্ছেন আপনি?
– তুমি প্লিজ আমায় হেল্প করো। এসব নিয়ে আমি আর পারছি না।
– ভালোবাসা সুন্দর। অনেক সুন্দর।
– প্লিজ।
– আপনি আমায় কিভাবে ছেড়েছিলেন মনে আছে? তবুও আপনার কেন মনে হয় আমি আপনার সাহায্য করবো?
– তুমি সেই সময় খুব রাগী ছিলে অল্পতেই মারামারি করতে যেগুলো আমার একদম ভালো লাগতো না।
– অন্য ছেলের সাথে জড়াতেন। কিন্তু আপনি আমার বেষ্টফ্রেন্ডকেই পেলেন। আমার জীবন থেকে একসাথে মূল্যবান দুইটা জিনিস হারিয়ে গেলো। যাকে মায়ের পরে সব থেকে বেশি বিশ্বাস করতাম সেই নারী আর যাকে নিজের ভাইয়ের মতো আগলে রেখেছিলাম সেই বন্ধু।
– আমি মানছি আমি ভুল করেছি কিন্তু তার জন্য তো শাস্তি তো পাচ্ছি আমি। প্লিজ আমি আর নিতে পারছি না।

আমি কিছুটা সময় নিরবে ভাবলাম- কোথায় আছে রাজ?
– ঠিক বলতে পারি না। তবে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে মনে হয়।
বাসা থেকে বাইক নিয়ে বের হলাম। কারণ আমি জানি রাজ কোথায় আছে ।

– সুমন ভাইয়া অনেক দিন পর এদিকে আসা হলো কেমন আছেন? – আমায় দেখে চা দোকানের ছেলেটা বললো।
একটা সময় সারাদিনের বেশির ভাগ সময় কেটে যেতো এদিকে।
– রাজ আছে?
– রাজ ভাইয়া তো ভিতরে।
দোকানের পিছনেই একটা ছোট রুম আছে যেখানে ছেলেরা আড্ডা দেয়। আমি সোজা সেই রুমে আসলাম আমায় দেখেই রাজ দাঁড়িয়ে গেলো আমার সাথে তুলি ও আছে ।
– সুমন তুই এখানে!
– আমি বেশি কথা বলার জন্য আসিনি। তুই তাড়াতাড়ি তোর ফোনের লক খুলে আমার হাতে দে।
– কিন্তু কেন!
– তুই ভালো করে জানিস আমায় আমি দ্বিতীয় বার বলবো না।
রাজ আমার ব্যাপারে সবটাই জানতো। কারণ আমার সব খারাপ কাজের একমাত্র সাক্ষী রাজেই ছিলো। যার জন্য রাজ তুলি রিলেশনে যাওয়ার পর আমায় পাঁচ দিনের জন্য জেলেও কাটাতে হয়েছে।

রাজ কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা এগিয়ে দিলো।
ফোনটা তুলির হাতে দিয়ে ওকে ফেসবুক ডিলিট করতে বললাম।
– তোর জিমেইল এর পাসওয়ার্ড বল।
– এসব কি করছিস? পাসওয়ার্ড দিয়ে কি করবি?
এরপর রাজ পাসওয়ার্ড বললো। সব কিছু ক্লিন করার পর । রাজের কাঁধে হাত রেখে বললাম – আমি তোকে সব সময় সব বিষয় থেকে প্রটেক্ট করছি আজকেও সেটাই করলাম। ভুলেও পরবর্তীতে তুলি কেন কোনো নারীকে যেন ব্লাকমেইল করতে না শুনি। তুই অনেক ভালো পরিবারের ছেলে এসব তোর সাথে মানায় না। আংকেল আন্টি শুনলে কষ্ট পাবে। আর ভাব তোর একটা বোন ও আছে। তোর বোনের সাথে যদি এমন কিছু হয়! যাই হোক তুলির কাছে ক্ষমা চেয়ে নে।

রাজ অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে তুলিকে সরি বললো।
– পরবর্তীতে এই রকম কিছু করার আগে আংকেল আন্টি কে বলে দিস তারা যেন ভুলে যায় তাদের একটা ছেলে আছে। কারণ কেউ না জানুক আমার অতীত তুই ভালো জানিস। আর ফোনটা নিয়ে যাচ্ছি কাল নতুন একটা ফোন পেয়ে যাবি।

ফাকা রাস্তায় বাইক দাড় করিয়ে বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট জ্বলালাম।
তুলি পিছনে থেকে আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আমার চোখেই পানি টলমল করছে। তবুও জোর করে ওকে সরিয়ে দিলাম।
চোখ মুছে তুলি আমার সামনে আসলো তার আগেই আমি নিজের শান্ত করলাম।
– তোমাকে জড়িয়ে ধরার অধিকার ও আমার নেই?
-না।
– তুমি চাইলেই আমায় ফিরিয়ে নিতে পারো। আমায় ফিরিয়ে নিবে?
– সূর্য যদি পশ্চিম আকাশে দেখা যায় সেটাও সম্ভব হতে পারে। তবে এটা সম্ভব নয়।
– কেন! আমি শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর জন্য?
– আমার পরিবার যদি দুই বাচ্চা আছে এমন কোনো মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিতে চায় আমার বিন্দু মাত্র আপত্তি নেই। তবে ছেড়ে যাওয়া মানুষকে আমি আর বিশ্বাস করতে পারবো না।
– এতটাই ঘৃণা করো আমায়?
– একজন মানুষের মনের মাঝে থাকার দুইটা উপায়। ভালোবাসা নয়তো ঘৃণা। আপনি দুটোরই অযোগ্য। ভালো থাকবেন আর হ্যাঁ কাল আমার হলুদে অবশ্যই আসবেন।
তুলিকে মাঝ রাস্তায় একা রেখে বাসায় ফিরলাম।

বাসায় সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। গায়ে হলুদ নিয়ে আমার কোনো প্ল্যান আছে কি না সেটা জানতে। কিন্তু আম্মু একপাশে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আম্মুর দৃষ্টি আমায় প্রশ্ন করছে এতক্ষণ তুলির সাথে কি করলাম। আম্মুর মনে অদ্ভুত এক ভয়ের সূচনা হয়েছে আবার আমি বিয়েতে না করে দেই।

To be continue