ভুলবশত প্রেম পর্ব-১৫+১৬

0
468

#ভুলবশত_প্রেম
#লেখনীতে:সারা মেহেক

১৫

নার্সের মুখে এমন কিছু শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। কিছুক্ষণ হতবিহবল দৃষ্টিতে উনার দিকে চেয়ে রইলাম আমি। পলি নার্স আমার বাহু ঝাঁকিয়ে উৎকণ্ঠিত গলায় বললেন,
” আপনি এখনও দাঁড়িয়ে আছেন! পেশেন্ট আপনাকে ডাকছে। আপনি না গেলে সে ড্রেসিং করাবে না। দ্রুত চলুন।”

আমি এখনও বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমার বিস্ময়ভাব কাটাতে নিশাত আমাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ফিসফিস করে বললো,
” হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? তোকে যে একটা পেশেন্ট ইমার্জেন্সি ডাকছে তা কি মাথায় নেই? চল জলদি। পরে পেশেন্টের কিছু হলে সব দোষ তোর উপর পড়বে।”

নিশাতের কথায় আমি ধরাধামে অবতীর্ণ হলাম। এক পলক ওর দিকে চেয়ে লিফটের অপেক্ষায় না থেকে সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উপরে উঠতে লাগলাম। আমার পিছে নার্স, নিশাত ও তিন্নি উঠছে। তৃতীয় তলায় আসবার পর ওয়ার্ডে ঢুকে আমার দৃষ্টি জোড়া আদ্রিশকে খুঁজতে লাগলো। প্রথম সারির বেডগুলোয় আদ্রিশকে দেখতে না পেয়ে দ্বিতীয় সারিতে চোখ বুলাতেই শেষের দিক হতে দুই নাম্বার বেডে উনাকে দেখতে পেলাম। আমি দ্রুত পায়ে উনার বেডের কাছে যেতেই দেখলাম একজন নার্স হাতে তুলো নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত দৃষ্টিতে আদ্রিশের দিকে চেয়ে আছেন। আদ্রিশ তখন নিশ্চুপ বসে আছেন। উনার কপালে, ঠোঁটের কোনে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। দু হাতের কনুইও ছিলে গিয়েছে। পরনের সাদা শার্টটি ধুলো ময়লায় একাকার হয়ে গিয়েছে। উনার এ জখম অবস্থা দেখে আমি শিউরে উঠলাম। উনার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই উনি বাঁকা নজরে আমার দিকে চেয়ে অভিমানী সুরে বললেন,
” আমি মারা যাবার পরে আসতে। ”

উনার এহেন কথায় আমি কিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাবো তা ভেবে পেলাম না। এদিকে হাতে তুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নার্সটি আমার দিকে তুলো এগিয়ে দিয়ে বললো,
” এই নিন। আপনিই করুন আপনার হাসবেন্ডের ড্রেসিং। ”

নার্সের মুখে ‘হাসবেন্ড’ শব্দটি শুনে কিছুক্ষণের জন্য স্তম্ভিত দৃষ্টিতে নার্সের দিকে চেয়ে রইলাম আমি৷ অতঃপর আদ্রিশের দিকে চেয়ে বিস্মিত কণ্ঠে নার্সের উদ্দেশ্যে বললাম,
” কি বলছেন আপনি! উনি আমার….”

আমাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে আদ্রিশ ভীষণ বিরক্ত নিয়ে নার্সকে বললেন,
” আহহা, আপনি এতো কথা বলছেন কেনো? ওর হাতে তুলো আর ব্যান্ডেজ দিয়ে নিজের কাজে লেগে পরুন৷ ”

আদ্রিশের হুকুম পাওয়া মাত্রই নার্সটি আমার হাতে তুলো ধরিয়ে দিয়ে চলে যেতে নিলো। কিন্তু আদ্রিশ উনাকে ডেকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন,
” হসপিটালে কোনো কেবিন খালি আছে?”

নার্সটি তড়িৎ গতিতে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলেন। তৎক্ষনাৎ আদ্রিশ বললেন,
” তাহলে একটা কেবিনের ব্যবস্থা করুন। আমি সেখানে শিফট হবো।”

নার্সটি মাথা নাড়িয়ে দ্রুততার সহিত ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন। এদিকে আমি লক্ষ্য করলাম, ওয়ার্ডের প্রায় প্রতিটি সজাগ পেশেন্ট এবং পেশেন্টের আত্মীয়স্বজন আমাদের দিকে অদ্ভুত চাহনিতে চেয়ে আছেন। তাদের এ চাহনি স্বাভাবিকভাবেই আমার অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ালো।
হঠাৎ নিশাত আমার কানের কাছে এসে বিস্ময়ের সহিত ফিসফিস করে বললো,
” মিম! তুই বিয়ে করে ফেললি আর আমাদের জানালিও না! কেমন বান্ধবীরে তুই!”

নিশাতের এহেন কথায় আমি কটমট করে তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। আমার চাহনিতে নিশাত মোটেও ঘাবড়ালো না। বরং সরু চোখে আদ্রিশের দিকে চেয়ে পুনরায় ফিসফিস করে বললো,
” উনাকে তো চেনা চেনা লাগছে খুব৷
হ্যাঁ, মনে পড়েছে। নাফিসা আপুর বিয়েতে ছেলেপক্ষ থেকে এসেছিলো উনি। তাই তো? কিন্তু সেদিনই না তোকে অবিবাহিত দেখলাম। আর আজকের মাঝেই তুই বিবাহিত হয়ে গেলি! হাউ ম্যান হাউ!”

নিশাতের কথাসমূহ আমার শরীরে জ্বালা ধরিয়ে দিলো। আমি অমর্ষ চাহনিতে নিশাতের দিকে চেয়ে তার বাহুতে সজোরে একটা ঘা মারলাম। এতে নিশাত ‘আহ’ শব্দ করে উঠতেই আদ্রিশ যৎসামান্য হেসে উঠলেন। হয়তো ব্যাথার অনুভূতিতে উনি সামান্য কাতর ছিলেন। এমতাবস্থায় হাঁটুতে হাত ঘষতে ঘষতে ভ্রু নাচিয়ে আমার দিকে চেয়ে বললেন,
” কি ব্যাপার মিশমিশ? আমাদের বিয়েও হয়ে গেলো অথচ আমিই জানলাম না! সত্যি করে বলো তো, আমাকে অজ্ঞান টজ্ঞান করে কিডন্যাপ করে এই শুভ কাজটা সারোনি তো?”

আদ্রিশের এহেন কথাবার্তায় ক্রোধে আমার কান গরম হয়ে এলো। এদিকে উনার কথা শুনে নিশাত আর তিন্নি যেনো হেসেই কূলকিনারা পায় না৷ আমি ওয়ার্ডের চারপাশের একবার চোখ বুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে আদ্রিশের উদ্দেশ্যে বললাম,
” ওয়ার্ডে এতো মানুষের মাঝে আপনাকে কিছু বললাম না। কিন্তু আপনি এখন যে কথা বললেন তাতে আপনাকে হাজার কথা শুনিয়ে দেওয়া উচিত আমার এবং আমি শুনাবোও। তবে কেবিনে গিয়ে। আগে কেবিনে শিফট হতে দিন। তারপর দেখুন মজা। ”

আমার কথায় আদ্রিশ চাপা হাসি হেসে আমার দিকে প্রগাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। আমি উনার এ চাহনি ইচ্ছাকৃতপূর্বক উপেক্ষা করলাম।
কিছুক্ষণের মাঝেই পলি নার্স এসে আদ্রিশকে বললেন,
” আপনার কেবিন রেডি হয়ে গিয়েছে স্যার। আসুন। আপনার জন্য কি হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা….”

পলি নার্সকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে আদ্রিশ আমার দিকে আপাদমস্তক নজর বুলিয়ে বললেন,
” সাথে জলজ্যান্ত একটা হেল্পিং মানুষ থাকতে হুইলচেয়ারের কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি যান।”

পলি নার্স চলে গেলেন। আদ্রিশ আমার দিকে চেয়ে বললেন,
” নাও মিশমিশ,আমার হাতটা ধরো। ”

আমি সাথে সাথে হাত দুটো বুকে ভাঁজ করে বললাম,
” কখনও না। আমি আপনার হাত ধরতে যাবো কেনো? আপনাকে হুইলচেয়ার অফার করার পরও আপনি তা রিজেক্ট করলেন। আর এদিকে আমার হেল্প চাইছেন! আপনাকে হাবভাবে দেখে মোটেও মনে হচ্ছে না আপনি ইনজুরি অবস্থা নিয়ে হসপিটালে এসেছেন। মনে হচ্ছে আমার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করার জন্য এখানে এসেছেন।”

এই বলে আমি দৃঢ়তার সহিত সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার কথা শেষ হওয়া মাত্রই আদ্রিশের পাশের বেড হতে একজন বৃদ্ধ মহিলা অনেকটাই ধমকের সুরে বলে উঠলেন,
” ঐ মাইয়্যা? সোয়ামির সাথে কেউ এমন করে নাহি? যতই রাগমাগ হোক গে। সোয়ামি তো সোয়ামিই। হের সেবা-যতনেই দিন কাটাইতে হয়। ”
এই বলেই উনি বেডে শুয়ে থাকা বৃদ্ধের দিকে চেয়ে বললেন,
” এই দেহো, আমার সোয়ামি কত্ত অসুস্থ ছিলো৷ এহানে ভরতি করবার পর আমি ওর কত্ত সেবা যতন করছি। এহন হে এক্কেবারে সুস্থ। আজকেই চইলা যামু আমরা। এইবার আমার কথা হুনো, তোমার সোয়ামিরে নিয়া যাও। আর তুমিই তো ডাক্তার মাইয়্যা। তুমি তো আমার চাইয়া আরো বেশি ভালা বুঝবা এগুলান। যাও যাও, জলদি যাও। ”

বৃদ্ধ মহিলার লম্বা এ ভাষণে আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম। বিস্ময়ে আমার মুখখানা হা হয়ে এলো৷ ফলে আমি সেই বৃদ্ধার উদ্দেশ্যে কিছু বলতে নিলাম। কিন্তু আদ্রিশ আমাকে মাঝপথে থামিয়ে ঠোঁটের কোনে চাপা হাসি বজায় রেখে কণ্ঠে কৃত্রিম কাতরতা প্রকাশ করে বললেন,
” আহ, মিশমিশ। আমাকে জলদি কেবিনে নিয়ে চলো। দেখছো না তোমার স্বামীর কি অবস্থা! ”

চারপাশে আমার প্রতিকূলে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনায় আমি একপ্রকার দিশেহারা হয়ে পড়লাম। অগত্যা আদ্রিশের সম্মুখে দাঁড়িয়ে বেশ বিরক্তি নিয়ে বললাম,
” চলুন কেবিনে।”

আদ্রিশ আমার দিকে এক পলক চাইলেন৷ অতঃপর আমার সাহায্য ছাড়াই ধীরেসুস্থে উঠে দাঁড়ালেন উনি৷ মৃদু হেসে আমায় বললেন,
” আমার পাশাপাশিই থেকো মিশমিশ। প্রয়োজনে হাতটি একটু বাড়িয়ে দিও। ”

এই বলে উনি হাঁটা ধরলেন। আমিও কোনোরূপ কথাবার্তা ছাড়া উনার পাশাপাশি হাঁটতে লাগলাম। এদিকে নিশাত ও তিন্নিও আমার পিছু পিছু আসছে৷ ওয়ার্ড থেকে বেড়িয়ে যাবার পর তিন্নি পিছন হতেই আমার কানের নিকট ফিসফিস করে বললো,
” তলে তলে এতো কিছু চলে আর আমাদের জানানোর প্রয়োজনও বোধ করলি না তুই। এই তোর ফ্রেন্ডশিপ! ”

তিন্নির কথা শুনে আমি দাঁত কটমট করে বললাম,
” এখান থেকে বের হতে দে আমাকে। তারপর দেখ কি করি তোদের। ”
এদিকে আমাদের কথা শেষ হতেই দেখলাম, আমরা কেবিনের সামনে চলে এসেছি। তিন্নি আর নিশাত কেবিনে ঢুকবার পূর্বেই আমায় বললো,
” মিম, তুই কেবিনে যা। আমরা ওয়ার্ডে যাচ্ছি৷ আর কিছুক্ষণ পরই হয়তো স্যার চলে আসবে৷ তোর মনে হয় আজ আর ক্লাস করা হবে না৷ আমরা বরং ওয়ার্ডে যা যা হবে তা জানিয়ে দিব তোকে।”

তিন্নির কথা শুনে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম। নিশাত ও তিন্নি চলে যেতেই আমি এবং আদ্রিশ কেবিনে প্রবেশ করলাম। আদ্রিশ ধীরেসুস্থে গিয়ে বেডে বসলেন৷ আমি কাঁধের ব্যাগটা সোফায় রেখে দু হাত গুঁজে আদ্রিশের দিকে ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে চেয়ে বললাম,
” রাস্তায় গুণ্ডাদের মতো মারপিট করে এখানে এসেছেন আমাকে জ্বালাতে?”

আদ্রিশ আমার দিকে এক পলক চাইলেন৷ অতঃপর আমার বাহু ধরে আচমকা আমাকে নিজের সামনে টেনে এনে বললেন,
” জখম একজন রোগীকে সেই কখন থেকে জ্বালিয়ে যাচ্ছো তুমি মিশমিশ! তোমার জ্বালায় আমার রক্তও জমাট বেঁধে গিয়েছে দেখো। আর ব্যাথায় সমস্ত শরীর জর্জরিত হয়ে আছে। অথচ আমার এমন অবস্থা দেখে একজন ভবিষ্যত ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও তুমি আমার সাথে ঝগড়া করছো!”

ঘটনার আকস্মিকতায় আমি কিছুক্ষণের জন্য হতভম্ব দৃষ্টিতে উনার দিকে চেয়ে রইলাম৷ অতঃপর নিজেকে উনার স্পর্শ হতে মুক্ত করে পাশের টেবিল হতে তুলো নিলাম। উনার কপালের জখমে তুলো দিয়ে চেপে চেপে পরিষ্কার করতে লাগলাম। আমার স্পর্শে ব্যাথায় আদ্রিশ ‘আহ’ শব্দ করে ককিয়ে উঠলেন। আমি চমকে উঠে তৎক্ষনাৎ পিছিয়ে এলাম। উনি পুনরায় আমার হাত ধরে আমায় নিজের সামনে দাঁড় করালেন। মৃদু হেসে আমায় বললেন,
” হবু ডাক্তারদের এতো দূর্বল হতে নেই। আমার সামান্য গোঙনিতে এভাবে পিছিয়ে পড়লে অপারেশন টেবিলে কি করে টিকবে?”

আমি কোনোরূপ জবাব না দিয়ে আদ্রিশের জখম পরিষ্কার করতে করতে জিজ্ঞেস করলাম,
” কার সাথে মারপিট করে এসেছেন? ”

আদ্রিশ চোখ তুলে আমার দিকে চেয়ে খানিক রাগত স্বরে বললেন,
” আমি কারোর সাথে মারামারি করিনি। ওরাই আমাকে পিছন হতে আচমকা মারতে শুরু করে। অতর্কিতে হামলা চালানোয় প্রথম দফায় আমি সেল্ফ প্রটেকশনে কিছু করতে পারিনি। কিন্তু এরপরই আমার সাধ্যমত মেরেছি ওদের। ওরাও আমাকে মেরেছে। ”

আমি ভীতসন্ত্রস্ত দৃষ্টিতে উনার দিকে চেয়ে রইলাম। জিজ্ঞেস করলাম,
” কাদের সাথে আপনার শত্রুতা আছে? আর কিসের শত্রুতা?”

” কাদের সাথে নয় বরং জিজ্ঞেস করো, কার সাথে আমার শত্রুতা আছে। যারা আমাকে মারতে এসেছিলো, তারা ভাড়াটে মাস্তান ছিলো। আসল মানুষটা হয়তো দূরে বসে এসবের তদারকি করছিলো। ”

আমি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
” সে কে?”

আদ্রিশ প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
” আছে একজন। যার সাথে আমার পার্সোনাল এণ্ড প্রফেশনাল শত্রুতা আছে।”

#চলবে

#ভুলবশত_প্রেম
#লেখনীতে:সারা মেহেক

১৬

আদ্রিশের কাঁটাছেড়া স্থানগুলো ততক্ষণে পরিষ্কার করা হয়ে গিয়েছে। আমি তাতে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করলাম,
” নাম কি তার?”

আদ্রিশ আমার দিকে এক পলক চেয়ে হাঁটুতে হাতের তালু ঘষতে ঘষতে বললেন,
” পায়েও বেশ ব্যাথা পেয়েছি আমি। যদিও এখন ব্যাথা করছে না। তবে নিশ্চিত রাতে পুরো শরীর ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে যাবে।”

আমার প্রশ্নের জবাবের বদলে আদ্রিশের কথা ঘুরিয়ে ফেলা দেখে আমি উনাকে এ বিষয়ে আর প্রশ্ন করলাম না। স্বভাবতই উনি আমার সাথে এ ব্যাপারে বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন না। ফলে উনার কথার প্রবাহ বজায় রাখতে আমি বললাম,
” আচ্ছা, আপনি বসুন। আমি ডক্টরকে ডেকে আনছি। ”
এই বলে আমি দরজা খুলে কেবিনের বাহিরে চলে এলাম। কিন্তু ডক্টর ডাকতে গিয়ে আমি ডক্টরকে কি বলবো তা ভেবে পুনরায় কেবিনে চলে এলাম। আড়ষ্টভাব নিয়ে আদ্রিশের উদ্দেশ্যে বললাম,
” আমি ডক্টরকে ডাকতে পারবো না। দরকার হলে আপনি ডেকে নিন। ”

আদ্রিশ তাজ্জব বনে জিজ্ঞেস করলেন,
” কেনো? ডক্টরকে ডাকতে কি প্রবলেম তোমার?”

আমি খানিক আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললাম,
” আশ্চর্য তো! আমি ডক্টরকে আপনার সম্পর্কে কি বলবো? এখানকার অনেক ডক্টরই আমার কাছে পরিচিত মুখ। ক্লাস করতে এলে তাদের সাথে দেখা হয়। তো তাদেরকে এখানে কি বলে আনবো আমি?”

আদ্রিশ ব্যাপারটাকে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে নিয়ে বললেন,
” বলবে, একজন পেশেন্ট এসেছে। তাকে ওষুধ লিখে দিতে হবে। ব্যস, কাজ শেষ। ”

” হ্যাঁ। তারপর যখন কেবিনে আসার পর ডক্টর আমাকে জিজ্ঞেস করবে যে, আপনি আমার কি হোন, আপনাকে কিভাবে চিনলাম। তখন আমি কি জবাব দিবো?”

এ পর্যায়ে আদ্রিশ চুপটি করে রইলেন। নীরবে কিছু ভাবতে লাগলেন৷ উনার ভাবনার গাড়িকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে আমি অনেকটাই সন্দেহের সুরে জিজ্ঞেস করলাম,
” ঐ নার্সটিকে আপনি কি বলেছিলেন যে উনি আপনাকে আমার হাসবেন্ড বললো?”

আমার প্রশ্ন শোনামাত্রই আদ্রিশ নিতান্তই অবুঝ বালকের ন্যায় বললেন,
” বিশ্বাস করো। আমি এমন কিছুই বলিনি নার্সকে। আমার অবস্থা দেখে নার্স তুলো, ব্যান্ডেজ নিয়ে হাজির হতেই আমি বললাম, আমি উনাকে দিয়ে ব্যান্ডেজ করাবো না। এ কাজের জন্য তোমাকে যেনো ডেকে আনে। ব্যস, তুমি আসার পরই নার্স ভাবলো, আমার দুজন হাসবেন্ড ওয়াইফ।”
এই বলে আদ্রিশ শিশুসুলভ চাহনিতে আমার দিকে চাইলেন। উনার এহেন কথার ঢং দেখে আমি কিয়ৎক্ষণ ফ্যালফ্যাল চাহনিতে উনার দিকে চেয়ে রইলাম। বিশেষত শেষোক্ত বাক্যটি উনি এমনভাবে বললেন যে, মনে হলো আমাদের দুজনকে হাসবেন্ড ওয়াইফ ভাববার পিছনে উনার কোনো হাত নেই।
আমি কিয়ৎক্ষণ উনার দিকে চেয়ে খেঁকিয়ে উঠে বললাম,
” সে ভালো কথা। আপনি যে পুরো ওয়ার্ডের সামনে, নার্সগুলোর সামনে আমার মান সম্মানের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে এসেছেন সেগুলোর ক্ষতিপূরণ কে দিবে? বলুন?”
আদ্রিশকে জবাব দেবার সুযোগ না দিয়ে আমি পুনরায় বললাম,
” পরিচিত স্যার এবং নার্সরা জানে, আমি এখনও অবিবাহিত এবং মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই৷ কিন্তু আজ ওয়ার্ডে আপনার নাটক দেখে সকলেই এসব ভেবে বসেছে। ফর শিওর নার্সগুলো সময় সুযোগ পেলে এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করবে। তারপর তাদের এসব কথা এভাবে ওভাবে স্টুডেন্টদের কানে যাবে, স্যারদের কানে যাবে। এভাবে করতে করতে আমার বাসা অব্দি ব্যাপারটা চলে যাবে। তখন আমাকে কত ধরনের প্রশ্ন ফেস করতে হবে আপনি জানেন? সেসব প্রশ্নের কি জবাব দিবো আমি? বলুন আপনি। আমার কাছে……”

আমাকে মাঝপথে থামিয়ে আদ্রিশ আমায় টেনে এনে নিজের পাশে বসালেন। শান্ত সুরে বললেন,
” এতো হাইপার হও কেনো মিশমিশ? তুমি ব্যাপারটাকে নিজের মতো করে এভয়েড করে চলবে। দেখবে একসময় সবাই ব্যাপারটা ভুলে যাবে৷ পেশেন্টদের নিয়ে চিন্তা করার তো কোনো কারন দেখছি না আমি৷ আর রইলো নার্সদের নিয়ে। আমি তাদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবো।”

” আচ্ছা? কি বলবেন তাদের আপনি? ”

আদ্রিশ আমার প্রশ্নের জবাব দিতে চাইলেন। কিন্তু এর পূর্বেই দরজায় কড়া নাড়লো কেউ। কড়া নাড়বার শব্দ শুনে আমি ঘাবড়ে গিয়ে তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ালাম। দ্রুত দরজা খুলে পরিচিত এক ডক্টরকে দেখতে পেয়ে আমরা ভয়ের পরিমাণ পূর্বের তুলনায় আরো বেড়ে গেলো। ফলে ডক্টরকে ঢুকতে দিয়েই আমি তাড়াহুড়ো করে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম৷ ভয়ের ফলে ফের পিছনে ফিরে তাকাবার সাহস জুটাতে পারলাম না আমি। দ্রুত পা চালিয়ে ক্যান্টিনে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

.

রাতের খাবার শেষে বই সামনে নিয়ে রীতিমতো ঝিমুতে শুরু করলাম আমি৷ আচমকা ফোনের বাজখাঁই রিংটোনে আমি ধড়ফড়িয়ে উঠলাম। ফলে নাম্বার না দেখেই কল রিসিভ করে বললাম,
” কে বলছেন?”

ওপাশে পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। সেকেন্ডেই বুঝতে পারলাম আদ্রিশ কল করেছেন৷ উনি অনেকটাই অভিমানী সুরে জিজ্ঞেস করলেন,
” একজন অসুস্থ মানুষের খোঁজখবর নেয়া কি ডাক্তারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?”

আমার দু চোখ হতে ঘুমুঘুমু ভাবটা নিমিষেই কেটে গেলো। আমি তৎক্ষনাৎ বিছানা ছেড়ে উঠে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। কণ্ঠে বিস্ময়ভাব প্রকাশ করে আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথা থেকে?”

” পেয়েছি এক জায়গা থেকে। ওসব শুনে লাভ নেই। কিন্তু কথা হলো, আমি যে কাজটা করলাম সে কাজটা তোমার করা উচিত ছিলো। ”

” কোন কাজ?”

” এই তো, আমার নাম্বার জোগাড় করে আমার খোঁজখবর নেয়ার কাজ।”

” এ্যাহ, আমার ঠেকা পড়েছে না কি! কোন দুঃখে আমি আপনাকে কল করবো!”

” ইশ! দেখো তো মেয়েটা কি অকৃতজ্ঞ! সেদিন তোমার পা মচকে যাওয়ায় তোমার কত খেয়াল রাখলাম, এর বিনিময়েই তো আজ আমার খোঁজ নিতে পারতে।”

আদ্রিশের কথা শুনে আমি কিয়ৎক্ষণের জন্য বাকহারা হয়ে পড়লাম। ওপাশ হতে আদ্রিশ আমার নির্বাক পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে বললেন,
” আচ্ছা, যাই হোক। অন্তত এখন আমি কেমন আছি এটলিস্ট সেটা তো জিজ্ঞেস করবে?”

আমি তৎক্ষনাৎ জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনার অবস্থা কি এখন? শরীর ব্যাথা করছে? ওষুধ নিয়েছেন?”

ওপাশে আদ্রিশের হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। উনি হাসতে হাসতে বললেন,
” ব্যস ব্যস। একসাথে এতো প্রশ্ন করতে বলিনি আমি৷ আচ্ছা, আমি একে একে উত্তর দেই।
এট ফার্স্ট, আমার শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। সেকেন্ডলি, আমার সমস্ত শরীর ব্যাথায় একাকার। মনে হচ্ছে, যত সময় যাচ্ছে, ততই আমার ব্যাথা বাড়ছে। থার্ডলি, আমি ওষুধ খেয়েছি। আপাতত ব্যাথায় জর্জরিত শরীর নিয়ে শুয়ে আছি। ”

আদ্রিশের হেন পরিস্থিতির বর্ণনা শুনে আমার ভীষণ মায়া হলো। আমি কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ থেকে উনার কথা ভাবতে লাগলাম। অতঃপর ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনার উপর যে, অ্যাটাক হলো এ নিয়ে পুলিশে কমপ্লেন করেছেন?”

আদ্রিশ ক্ষণিকের জন্য নিশ্চুপ রইলেন। অতঃপর বললেন,
” এসব বিষয়ে পুলিশি মামলা হলে সবকিছু আরো বিগড়ে যেতে পারে। এজন্য পুলিশি ব্যাপারে জড়ায়নি।”

আদ্রিশ ঠিক কি বিষয় নিয়ে চিন্তায় আছেন তা আমায় বেশ ভাবালো। এ নিয়ে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার কৌতূহল জাগার পরও আমি নিজেকে সংযত রাখলাম৷ কারণ উনার পার্সোনাল বা প্রফেশনাল কোনো ব্যাপারেই আমার হস্তক্ষেপ ঠিক মানায় না। ফলে সে ব্যাপারটা না ঘেঁটে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
” আংকেল, আন্টী কিছু বলেননি এ ব্যাপারে? তারা জানে না?”

আদ্রিশের মৃদু হাসির শব্দ শোনা গেলো। উনি বললেন,
” হ্যাঁ, তা তো জানেই। এমনকি তারা এও জানে যে, তাদের ছেলে এসব ঝামেলা ঠিকই সামল নিবে। ”

আমি আর কোনো কথা খুঁজে পেলাম না৷ ফলে অযথা কানে ফোন চেপে না ধরে আমার রুমে আম্মুর প্রবেশের বাহানা বানিয়ে আদ্রিশের কল কেটে দিলাম। আদ্রিশও ফের ফোন করলেন না। ফলে রুমে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি।

.

আজ কলেজে সর্বশেষ ক্লাস না হওয়ায় মনে ফূর্তিভাব নিয়ে একা একা লাইব্রেরিতে গেলাম। নিশাত আর তিন্নি ওয়ার্ড শেষ হওয়া মাত্রই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। মূলত আমিই ওদের চলে যেতে বলি। কারণ আজ লাইব্রেরিতে নিজের মতো করে কিছুটা সময় কাটাতে চাইছি। কিন্তু আজ লাইব্রেরি মোটামুটি ভরপুর থাকায় সেখানে সময় কাটাবার ইচ্ছে মাটি চাপা দিতে হলো। ফলে একটি বই বদলিয়েই লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে এলাম আমি। কলেজ লিফটে উঠতেই অকস্মাৎ সাদিকের সাথে দেখা হলো আমার। আপুর রিসেপশনের পর আমাদের আর দেখা হয়নি৷ বেশ ক’দিন পর আজ দেখা হওয়াতে আমি উনায় জিজ্ঞেস করে বসলাম,
” কেমন আছেন? ”

পুরো লিফটে শুধু আমি এবং সাদিক আছি। উনি আনমনে ফোন গুতাচ্ছিলেন। আমার কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে চকিতে মাথা তুলে অচেনা দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
” আমায় বলছেন?”

আমায় চিনতে না পারায় খানিক অবাক হলাম বটে। তবে তৎক্ষণাৎ নিজের বহিবারণ পর্যবেক্ষণ শেষে বুঝলাম, আমায় এমন সাজপোশাকে উনি দেখেননি বলে চিনতে পারছেন না৷ ফলে নিজের পরিচয় দিতে বললাম,
” আমায় চিনতে পারেননি? আমি মিম। ”

মুহূর্তেই সাদিক আমায় চিনে ফেললেন। চেহারায় মৃদু অনুশোচনা এনে বললেন,
” আই এম এক্সট্রেমলি সরি৷ আপনাকে একদম চিনতে পারিনি আমি। আপনার চেহারা দেখা যাচ্ছিলো না তো তাই আর কি।”

সাদিকের কথা শেষ হতে না হতেই আমরা নিচতলায় চলে এলাম। অতঃপর লিফট হতে বের হয়ে ভদ্রতাসূচক হাসি দিয়ে সাদিককে বললাম,
” ইটস ওকে। সমস্যা নেই। ”

সাদিক মৃদু হেসে বললেন,
” আপনার ক্লাস নেই?”

” না। শেষ ক্লাসটা আজ হবে না। ”

কথা বলতে বলতে আমরা কলেজ বিল্ডিং এর সামনে চলে এলাম। আচমকা আমার পাশ হতে একটি মেয়ে এসে সাদিকের বাহু জাপটে ধরে বললো,
” আমায় এতোক্ষণ ওয়েট করানোর সাজা ভোগ করতে হবে কিন্তু তোমায়, মিস্টার সাদিক।”

অপরিচিত মেয়েটির হেন কাণ্ডে আমি বেশ অবাক হলাম। ফলস্বরূপ খানিক বিস্মিত চাহনিতে তাদের দিকে চেয়ে রইলাম আমি। সাদিক হয়তো আমার চাহনি বুঝলেন। এর ফলে উনি মৃদু হেসে মেয়েটির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আমায় বললেন,
” মিট মাই ফিয়ন্সে মারিয়া। ”

সাদিকের মুখে হেন কথা শোনবার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না৷ উনার এ বাক্য আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ মাত্র আমি কিয়ৎক্ষণের জন্য ফ্যালফ্যাল চাহনিতে উনাদের দুজনের দিকে চেয়ে রইলাম। সাদিক পুনরায় বললেন,
” আগামী মাসে আমাদের বিয়ে। আপনিও কিন্তু ইনভাইটেড। আগেভাগেই ইনভাইট করে রাখলাম।”
এই বলে সাদিকসহ উনার ফিয়ন্সে মারিয়া একত্রে হেসে উঠলেন। আমি ক্ষণিকের জন্য দুজনের হাসি পর্যবেক্ষণ করলাম। বুঝতে পারছি, আমার কোথায় কিঞ্চিৎ কষ্টের আভাসের দেখা মিলছে। কিন্তু আপাতত তাদের সামনে যেনো এরূপ অনুভূতি কোনোরূপেই প্রকাশ না পায় সেজন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাতে চাইলাম। তবে এর পূর্বেই কোথা হতে যেনো আদ্রিশের আগমন ঘটলো। উনি আমার পাশে দাঁড়িয়ে সাদিক এবং মারিয়ার উদ্দেশ্যে বললেন,
” কি ব্যাপার সাদিক? হবু বউ নিয়ে কলেজেও হাজির! তর সয় না, না কি?”

আদ্রিশের প্রশ্নে সাদিক এবং মারিয়া উভয়েই লাজুক হাসি দেয়। খানিক বাদে আদ্রিশ আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
” ওদের কংগ্রাচুলেট করেছো?”

আমি মলিন চাহনিতে সাদিকের পানে চেয়ে কিয়ৎ উদাস কণ্ঠে বললাম,
” না। এখনও করিনি। ”

আদ্রিশ প্রায় সাথে সাথেই বললেন,
” তো করে ফেলো। ওরা নিশ্চিত তোমার মুখে কংগ্রাচুলেশন শোনার অপেক্ষায় আছে। ”

আদ্রিশের কথা শোনামাত্র আমি বিলম্ব না করে সাদিক এবং মারিয়াকে বললাম,
” কংগ্রেটস বোথ অফ ইউ। ”

মারিয়া মিষ্টি হেসে বললো,
” থ্যাংকস। তবে আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না। ”

আমার পক্ষ হতে জবাব আসবার পূর্বেই সাদিকে জবাব দিলেন,
” ইমাদ ভাইয়ের শালিকা উনি। উনার নাম মিম। আমাদের কলেজেরই থার্ড ইয়ারে পড়ে।”

পুনরায় মারিয়া মিষ্টি হেসে বললো,
” দেখা করে ভালো লাগলো খুব। আই হোপ, ফিউচারেও দেখা হবে আমাদের। ”

এই বলে সে সাদিকের বাহু পুনরায় জাপটে ধরে বললো,
” চলো, যাওয়া যাক। তোমার অপেক্ষায় অনেকক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম।”

মারিয়ার ব্যতিব্যস্ততা দেখে সাদিক আমাদের দুজনকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন। আমি কিয়ৎক্ষণের জন্য উনার যাবার পানে চেয়ে রইলাম। আচমকা আদ্রিশ আমার সামনে আসায় আমি ভড়কে গেলাম। উনি আমার এ প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে আমায় প্রস্তাব দিয়ে বসলেন,
” চলো, সামনের রেস্টুরেন্টে কিছুক্ষণ বসি৷ ”

এ প্রস্তাব শোনামাত্রই আমি বারণ করতে নিলাম। কিন্তু আদ্রিশ বললেন,
” দেখো, আমি ‘না’ শুনতে মোটেও আগ্রহী নই। আমার সাথে যেতে হবে। অর্থাৎ যেতেই হবে। আর তোমার সাথে জরুরি কিছু কথাও আছে। এজন্য তুমি আমার সাথে এখনি আসবে। ”

ভীষণ অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি আদ্রিশের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম। অতঃপর দুজনে পায়ে হেঁটে কলেজ হতে এক মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত রেস্টুরেন্টে চলে এলাম। রেস্টুরেন্টের কোনার দিকে অবস্থিত চেয়ারে বসবার কিছুক্ষণের মাঝেই একজন ওয়েটার এসে ওর্ডার নিয়ে চলে গেলো।

আমি নির্বাক চাহনিতে টেবিলে রাখা টিস্যুকেসের দিকে চেয়ে আছি। চোখের সামনে ভাসছে কিছুক্ষণ পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি।
আমার আনমনা ভাব দেখেই হয়তো আদ্রিশ আমায় ডাকলেন। উনার ডাকে আমি তৎক্ষনাৎ মাথা তুলে উনার দিকে চেয়ে বললাম,
” জি? কিছু বলবেন?”

আদ্রিশ আমার দিকে নিষ্পলক চাহনিতে চেয়ে আছেন৷ আমিও উনার দিকে প্রশ্নের আশায় চেয়ে আছি। কিয়ৎক্ষণ বাদে উনি আমার দৃষ্টি বরাবর দৃষ্টি রেখে ভারী গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
” সাদিককে পছন্দ করতে?”

#চলবে