মধু পিঁপড়া পর্ব-১২+১৩

0
82

#মধু_পিঁপড়া
পর্বঃ১২
#অত্রি আকাঙ্ক্ষা
আবিরের ঘুম ভাঙলো ভোরের কোমল রোদের আলোতে।পাশ ফিরে দেখলো বিছানা খালি!ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে।সামিরা ফ্রেশ হচ্ছে।সে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো।শশুর বাড়িতে এসে লাভ হয়েছে তার!বেশ ভালো ঘুম হয়েছে।বাড়িতে থাকলে পুরো রাত নির্ঘুমই কাটতো!রাত জেগে সামিরার ভাবনায় পরে থাকতো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল,সকাল সাতটা বেজে পনেরো মিনিট!মোবাইল নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল।পর পর দুটো কল করে মালদ্বীপ ট্রিপের সমস্ত বন্দোবস্ত কনফার্ম করে নিলো।কথা শেষ করে ফোন ট্রাউজারের পকেটে ভরে বাড়ির পূর্ব পাশে থাকা বাগানটিকে গভীর চোখে পর্যবেক্ষণ করলো।হালকা শব্দ কানে আসতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল।সামিরা তোয়ালে হাতে নিয়ে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।সেই দৃষ্টিতে আবির নজর মেলাল!কি এতো দেখছে মেয়েটা?হরিণী চোখ জোড়া যতবারই পলক ফেলছে তার বেসামাল হৃদয়ে শান্ত এক ঝড় ঘুরপাক খাচ্ছে।আবিরের ঘুমঘুম চোখে-মুখে শীতের মিষ্টি সূর্য কিরণ যেন আলাদা ভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।মুখাবয়ব জুড়ে অন্যরকম স্নিগ্ধতা।কালো রঙের জীম ট্যাঙ্ক টপে হাতের পাকাপোক্ত বাইসেপ পেশিগুলো পুরোপুরি দৃশ্যমান!কি একটা দমবন্ধ পরিস্থিতি।

—–“অল প্যাকিং ডান?”

আবিরের প্রশ্নের উত্তরে সামিরা মাথা নাড়াল।তার বুক ধড়ফড় করছে।ঠোঁট কাপছে।মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলো না।

——“কিছু লাগলে বলে দেও।আমি কিনে নিবো।এগারোটায় ফ্লাইট।যেহেতু এখান থেকে সরাসরি এয়ারপোর্টে যাবো,শপিং করার বেশি সময় পাবো না।”

——-“কিছু লাগবে না আমার!কিন্তু আপনার প্যাকিং তো হয় নি।সব জিনিস তো ওই বাসায়।এছাড়া যাওয়ার আগে কি আঙ্কেল আন্টির সাথে দেখা করবো না?”

সামিরা কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।সে ভেবেছিলো আবির হয়ত একটু পরই বাড়িতে যাওয়ার জন্য তাড়া দিবে।

—“তোমার সাথে দেখা করতে মা,বাবা এয়ারপোর্টে আসবেন।আর আমি ফোন করে মাকে বলে দিয়েছি।মা আমার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে আসবে।চমকি আর আদিবাকেও আমাদের সাথে নিয়ে নিবো।এয়ারপোর্ট থেকে তারা বাবা-মায়ের সাথে বাসায় চলে যাবে।”

—-“ওহ।”

সামিরার চেহারায় সংকোচ।সেই দ্বিধার রেশ ধরে আবির জিজ্ঞেস করলো,

—-“কিছু কি বলবে?”

সামিরা আমতা আমতা করে উত্তর দিলো,

—‘একটু কি বেশি তাড়াহুড়ো হয়ে গেল না?চাইলে তো পরেও ধীরে সুস্থে ট্রিপ যাওয়া যেত।”

আবির শব্দবিহীন হাঁসলো।সামিরার কাছে এসে তার কপালে ওপরে পড়ে থাকা বেবি হেয়ারগুলো ডান হাতের দু আঙুলের সাহায্যে সরিয়ে দিতে দিতে বলল,

—-“সত্যি বলতে,আমি নিজেও চাচ্ছিলাম না।কিন্তু ডিপার্টমেন্টের কমিশনার যেভাবে এই লাক্সারিয়াস হানিমুন ট্রিপের এরেঞ্জম্যান্ট করে দিয়েছেন,আমি চাইলেও আগামী দু’বছর তোমাকে এমন ফ্যাসিলিটিসের সাথে কোথায়ও নিয়ে যেতে পারবো না।তাই সুযোগটাকে কাজে লাগালাম।”

সামিরা নিরুত্তর।আবির কিছুটা থেমে পুনরায় বলল,

—“এছাড়া স্যারের মুখের ওপরে না করতে পারি নি।তোমার খুব বেশি সমস্যা হলে না হয়……”

—-“না আমার কোনোরকম কোনো সমস্যা নেই। আর একটা কথা, আমার স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী চলার অ্যাবিলিটি আমার আছে।”

সামিরা আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো।আবির মনে মনে বেশ প্রসন্ন হলো।তাদের মধ্যের দূরত্ব কমিয়ে আবির এগিয়ে এসে আলতোভাবে সামিরার কপালে তার উত্তপ্ত ওষ্ঠ ছোঁয়ালো।অনুমতি নেওয়া প্রয়োজনবোধ করলো না!সামিরা চোখ বন্ধ করে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল।অনাঙ্ক্ষিত এই স্পর্শ তার অন্তরে ঝড় তুলে দিলো।একজোড়া কপোত-কপোতীর ওপর দিয়ে বয়ে গেল নিরব প্রণয় হওয়া।

—————–

—“শোন এই হ্যান্ডব্যাগ একদম তোর কাছাকাছি রাখবি।এতে মাথা ব্যথার ঔষধ,প্যারাসিটামল,সানগ্লাস,লিপ ওয়েল,কম্বসহ তোর সব দরকারি জিনিসপত্র আছে।আর কোনো কিছু না পেলে আমাকে কল করবি।আবিরের সাথে সাথে থাকবি।বেশি সময় পানিতে নেমে থাকবি না,কিন্তু।”

সামিরা এ নিয়ে পরপর কয়েকবার মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।নামিরা তাও অস্থির!!সে মুখ ফুটে পুনরায় কিছু বলতে নিয়েছিলো,তার পূর্বে সাঈফ বলে উঠলো,

—–“বড়পা পানি খেয়ে নে!এককথা চারবার রিপিট করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিস তো।”

—-“তোর সমস্যাটা কোথায় বল তো?সামুর কেয়ার করছি তাই জ্বলছে তোর?”

—-“আমার না বরং তোর জ্বলছে।আপা একা একা ট্যুরে যাচ্ছে তাই!”

—-‘প্রথম মেয়েটা আমাদের রেখে এতো দূরে যাচ্ছে।টেনশন করাটা কি অস্বাভাবিক?”

—-“আচ্ছা,এতো সিরিয়াস কেন হচ্ছিস? আবির ভাই আছে তো আছে আপার খেয়াল রাখার জন্য!!এক কাজ কর,তুইও না হয় ওদের সাথে চলে যা।বিরিয়ানির এলাচির মতো ডিজগাস্টিং তুই।”

নামিরা সাঈফের দিকে কটমট করে তাকাল।সাথে সাথে বাহুতে পাকাপোক্ত ঘুষি বসিয়ে দিলো।সাঈফ ভ্রুক্ষেপহীন!সে তার চুলগুলো কপালের দিকে ঠেলে দিয়ে,আশেপাশে তাকিয়ে আড়মোড়া ভাঙল।দৃষ্টি ঠেকলো অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা আদিবার ওপর।আশ্চর্য!মেয়েটা কি প্রথম এয়ারপোর্টে এসেছে নাকি?গোল গোল চোখে এতো কি ঘুরে ঘুরে দেখছে??গতরাতের ওই ঘটনার পর একবারও তার মুখোমুখি হয় নি।সাঈফের মুখ থেকে হতাশার শ্বাস বেরিয়ে এলো।
এদিকে সামিরা তাকিয়ে তাকিয়ে দুই ভাইবোনের ঝগড়া উপভোগ করছে।একজন যতোবার মুখ নাড়াচ্ছে,অপরজন ততোবার হাত চালাচ্ছে।

——–

সেলিনা খাতুনকে আসতে দেখে সামিরা এগিয়ে গেল।নিজ থেকে টুকটাক আলাপ করলো।মোখলেস মিয়ার জ্বর আসায় তিনি আসেন নি।সামিরা শ্বাশুড়ির কাছ থেকে তার খবর নিলো।ছেলের বউয়ের জন্য কিছু টাকা পাঠিয়েছেন মোখলেস মিয়া।সামিরা প্রথমে নিতে চাইলো না,শশুরের ফোন পেয়ে আর না করলো না।সেলিনা খাতুন ছেলের হাত ধরে এনে বউয়ের পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে দিলেন। দুজনের ওপর একসাথে আপাদমস্তক চোখ বুলালেন।হোয়াইট ব্রুমস্টিক স্কার্ট এর সাথে ব্ল্যাক এন্ড ব্লু ফ্লোরাল প্রিন্টের টিউনিক টপ পড়েছে সামিরা।সাথে গলায় স্কার্ফ ঝুলিয়েছে।পায়ে স্টিলেটো।সিল্ক খোলা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।উচ্চতায় আবিরের কাঁধ থেকে কিছুটা নিচে।এদিকে আবিরের পরেছে গ্রে কালারের ফুল হাতা কলার শার্ট সাথে ব্ল্যাক ডেনিম জিন্স।হাতে ক্যাসিয়োর ঘড়ি।গালের খোঁচা খোঁচা চাপ দাঁড়ি কিছুটা বড় হওয়ায় মানিয়েছে তাকে।দুজনকে এক সাথে বেশ মনোমুগ্ধকর লাগছে।সেলিনা খাতুন দুজনের শরীরের হাত বুলিয়ে দোঁয়া পড়ে ফু দিলেন।মনে মনে আল্লাহ কাছে শুকরিয়া আদায় করলেন।সামিরার সাথে কথা বলে,,ছেলেকে এক কোনায় টেনে নিয়ে গেলেন।ছোট পার্স থেকে একজোড়া স্বর্ণের বালা বের করে তার হাতে ধরিয়ে দিলেন।

——“শোন,ওখানে যেয়ে আগে এটা বিক্রি করে নিবি।যে টাকা পাবি সবটা বউয়ের হাতে দিয়ে বলবি,যা যা পছন্দ কিনে নিতে।আরো লাগলে আমাকে কল করিস,আমি ব্যবস্থা করে দিবো।”

আবির কয়েক সেকেন্ড বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইল তার মায়ের দিকে।পরক্ষণে হেঁসে দিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরলো। নিচু গলায় বলল,

—–“কাম অন মা!তুমি এমন বিহেভ করছো মনে হচ্ছে,আমার বউ ডাকাত!আমার এতো খারাপ দিন আসে নি যে,মায়ের গহনা বিক্রি করে বউয়ের চাহিদা মেটাতে হবে।”

আবির বালা জোড়া তার মায়ের হাতে পরিয়ে দিলো।সেলিনা খাতুন বেশ বিরক্ত হলেন।ছেলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তাড়া দিতে দিতে বললেন,

—-“তুই সব সময় একটু বেশি বুঝিস!মেয়ে মানুষের কতো কি লাগে তুই জানিস?বিদেশ যাচ্ছে কেনাকাটা করতে হবে না!তোর বোন কতো লম্বা লিস্ট করে,তোর বউয়ের হাতে দিয়েছে জানিস?”

—–“তুমিও তো মেয়ে!যেন তেন মেয়ে না,জমিদার বাড়ির মেয়ে।সবকিছু ছেড়ে বাবার আয়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছো না?”

—-“হ্যাঁ,নিয়েছি কিন্তু…..”

—-“ব্যস!আর কোনো কথা নয়।তুমি পারলে আমার বউকেও পারতে হবে।”

আবির কিছুটা কঠিন স্বরে বলে উঠলো।সেলিনা খাতুন ছেলেকে বোঝাতে লাগলেন।

—–“আমি বলছি না যে,তোর বউ পারবে না!কিন্তু ওর অবস্থান থেকে আমাদের অবস্থান অনেক ভিন্ন!একটু তো সময় লাগবে।এক হাজার টাকার জিনিসের পরিবর্তে একশ টাকার জিনিস কিনতে হলে,আগে নয়শ টাকা থেকে শুরু করতে হবে।এখন,আমি যেটা বলেছি সেটাই করবি।”

—-“গতকাল রাতে মিরার বাবা আমাকে আর মিরাকে একসাথে ডেকে বলল,”আমার অফিস থেকে যে রিসোর্ট বুক করে দিয়েছে,সেটা যাতে আমি ক্যান্সেল করে দি!”বিয়ের আগেই মিরা আর মাহিদের হানিমুনের জন্য নামিরা আপা আর সাঈফ নাকি আগেই সবকিছুর ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন।আমি যাতে তাদের বুক করা সেই রিসোর্টেই উঠি।আমি কিছু বলার আগে,মিরা কি বলেছিলো জানো?”

আবিরের শীতল কণ্ঠ।সেলিনা খাতুন প্রশ্নবোধক চোখে তাকালেন।

—-“সরি বাবা!আমি তোমার এই অফারটি নিতে পারছি না।আমার স্বামী যদি আমাকে সেখানে নিয়ে পানিতেও রাখে,আমি সেখানেই থাকবো।দরকার হলে দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা পানি খেয়েই থাকবো!তবুও তোমাদের বুক করা রিসোর্টে উঠবো না।”

আবির সামিরার মতো মুখ গম্ভীর করে,কোমর দুলিয়ে বলে উঠলো।ছেলের বাচনভঙ্গিতে সেলিনা খাতুন হাল্কা হাসলেন।তিনি কালকে ছেলের মুখে তাদের হানিমুন ট্রিপের কথা শুনে কিছুটা ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলেন।ছেলের কথা শুনে,ভাবনা দূর হয়ে গেছে। সামিরা মেয়েটা বেশ বুদ্ধিমান!আবির তার মায়ের কপালে আলতো করে চুমু খেলো।ওয়ালেট থেকে তিন হাজার টাকা মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

—–“বাবা তো এলো না।তুমি বাবার পছন্দ মতো,কিছু খাবার কিনে নিও।”

সেলিনা খাতুন চোখ ভর্তি জল মাথা নাড়ালেন।এনাউন্সমেন্টের শব্দ কানে আসতেই,আবির সামিরা সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিলো।ইমিগ্রেশনে ঢোকার আগে সাঈফ মিনিট দুই,বোনকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইল।খানিকটা উঁচু গলায় বলল,

—–“আপা!সবার জন্য কিছু না কিছু তো আনবি,তাই না?আমার এজন্য একটা না’হয় বউ আনিস।অবশ্য!তুই চাইলে দুটোও আনতে পারিস।”

সাঈফের কথায় সবাই হাসলেও,আদিবার মুখ কালো হয়ে গেল।সে তার ভাই-ভাবি কোনোরকম বিদায় দিয়ে,গাড়িতে যেয়ে বসে পড়লো।

————–

সামিরা এদিক-ওদিক তাকালো।তার বেশ বিরক্ত লাগছে।ইতিমধ্যে সাড়ে তিন ঘন্টা পার হয়ে গেছে,তারা প্লেনে উঠেছে।একাধারে বসে থাকতে থাকতে তার কোমর ব্যথা করছে।অন্যদিকে আবির এক ধ্যানে ফোনে কিছু একটা দেখছে।এতো সময় তার সাথে একটা কথাও বলে নি।সামিরা ভাবছে,মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কি করে সব অগোছালো হয়ে গেছে,? সব ঠিকঠাক থাকলে হয়ত আজ আবিরের জায়গায় মাহিদ তার পাশে থাকতো। আফসোস হয় না তার,সে জানে যা হয়েছে সব ভালোর জন্য হয়েছে।হয়ত আবিরই তার জন্য পারফেক্ট!তবুও মাঝে মাঝে বুকটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।

——“আচ্ছা আপনার কাছে ভালোবাসা জিনিসটা কেমন?কি কি করলে ভালোবাসা পাওয়া যায়?”

সামিরার প্রশ্নে আবির চোখ তুলে চাইলো।কিছু সময় ভাবলো,তারপর উত্তর দিলো।

—-“আমার কাছে ভালোবাসা মানে ভালোবাসা।এটা কোনো বস্তু বা জিনিস নয়!একটা উক্তি আছে না?
(ধীরে ধীরে যেটা পাবে সেটা তোমার,
হুট করে যেটা পেয়ে যাবে সেটা তোমার নয়।)
আমার কাছে এই ধীরতাই ভালোবাসা।আর ধীরে সুস্থে ভালোবাসা অর্জনে আমি বিশ্বাসী।”

আবিরের উত্তর সামিরার মনে ধরেছে।সে চুপ রইল।সামিরাকে চুপ থাকতে দেখে আবির বলল,

—–“বেশি খারাপ লাগলে,আমার কাঁধে মাথা রাখতে পারো।”

সামিরা আবিরের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো।আবির কোমলভাবে চুলে হাত বোলাতে লাগলো।

—————-

ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অন্যতম মালদ্বীপ। শ্রীলঙ্কা হতে আনুমানিক ৪০০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে প্রায় ১২০০টি প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই রাষ্ট্র।এই দ্বীপগুলো ২৬ টি অ্যাটলের মধ্যে বিস্তৃত!
এর মধ্যে ১৯৮টি দ্বীপে মানুষ বসবাস করে।ভারত মহাসাগরের কাছাকাছি আসতেই আবির সামিরাকে ডেকে তুললো।তার চোখ লেগে গিয়েছিল।সে চুলগুলো বেঁধে পোর্টহোল দিয়ে বাহিরে তাকালো।আকাশ টা যেন পানিতে মিশে গেছে!!নীলচে সাগরের মাঝে নীল ফিরোজা সমারোহে ঘেরা ছোট ছোট দ্বীপ গুলো চোখে ধরা দিচ্ছে।সামিরা খুশিতে আবিরের হাত চেপে ধরলো।অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য দেখে তার চোখ জ্বল জ্বল করে উঠলো!সামিরার সাথে আবিরও বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখছিলো।তার কাছে এ এক নতুন অব্যক্ত অনুভূতি!পাশে থাকা স্নিগ্ধ,কোমল মেয়ে সঙ্গীর উৎফুল্লতা,এই অনুভূতিকে যেন আরো এক ধাপ প্রখর করে তুলেছে।

চলবে

#মধু_পিঁপড়া
পর্বঃ১৩
#অত্রি আকাঙ্ক্ষা
এয়ারপোর্ট থেকে সাঈফ সরাসরি গানের ছোঁয়া স্টুডিওতে এসেছে।ভিতরে ঢুকতেই দেখলো,পুরো স্টুডিও অগোছালো!সে অবাক হলো না।এ সব তার জন্য নতুন কিছু নয়।দুটি,দুটি করে মোট চারটি সোফা।রাতুল,হাসিব ঘুমিয়ে আছে তাতে।সেন্টার টেবিলে তিন-চারটে মদের বোতল গড়াগড়ি খাচ্ছে।মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট গুলোতে ধুলা জমে গেছে।ময়লা লুঙ্গি আর দুটো শার্ট পড়ে আছে মেঝেতে!সাঈফ তোয়াক্কা করলো না।তার ভীষণ মন খারাপ। গিটার নিয়ে কাপড়গুলো সরিয়ে মেঝেতেই বসে পড়লো।চুলগুলোতে আঙ্গুল চালিয়ে চোখ বন্ধ করে মিনিট দুই সময় নিয়ে ভাবলো,এরপর গিটারে সুর তুললো!ম্লান একটি সুর!পিচ এবং ছন্দের সংমিশ্রণে অন্তর ছুয়ে যাওয়া মেলোডি!ভীষণ গভীর!সে আর তার বন্ধুরা মিলে পুরনো গানের কভার তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করে।বেশির ভাগ গানের কন্ঠ দেয় সাঈফ নিজে।আজকে প্রথম সে সুর তুললো।তাও ভিন্নধর্মী।

—-“ব্যাপার কি মামা?কেমনে কেমনে,দিন-দুপুরে স্টুডিওতে আইলা!আবার নতুন ধুন তৈয়র করলা? অন্য সময় তো রাইত ছাড়া তোমার দেখাই মেলে না।”

সাঈফের হাত থেমে গেল,চোখ খুলে দেখলো হাসিব তার দিকে ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে আছে। মুখে ফিচলে হাসি।হাসিবের কথার আওয়াজে রাতুল ঘুমানো অবস্থায় সামান্য নড়ে উঠলো।তার পায়ের লাথি খেয়ে হাসিব নিচে পড়ে গেল।টেবিল মাথায় বাড়ি খেয়ে কপালের এক পাশ চেপে ধরলো।দাঁত দাঁত চেপে হুঙ্কার ছাড়লো।

—-“আ*ল সালা।”

সাঈফ দেখেও দেখলো।তার কোনোকিছুই ভালো লাগছে না।খুব ইচ্ছে করছে এই মূহুর্তে ডক্টর স্ট্রেঞ্জের মতো একটা পোর্টাল ওপেন করে অন্য একটা ইউনিভার্সে চলে যেতে।সে নিজে নিজেই ভাবতে লাগলো,সেখানে থাকা আদিবা কেমন হবে?এই ইউনিভার্সে থাকা আদিবার মতো নাক উঁচু?যে তাকে ইগনোর করে নাকি কোমলমতি!

—“কিরে ব্যাটা, জবাব দে!”

হাসিব সাঈফের পাশে বসে তার কাঁধে খোঁচা মারলো।সাঈফ চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো।কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলো।নাচ কুচকিয়ে মেঝে থেকে উঠে কোনার দিকের একটা বন্ধ রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লো।দরজা আঁটকে আটকাতে বললো,

—“একদম জ্বালাবি না!ঘুমাবো আমি।কাল সারারাত ঘুম হয় নি।ঘুম থেকে উঠে সব বলবো।”

ধড়াম শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিলো। সেকেন্ডের মধ্যে দরজা খুলে,মাথা বের করে গলা উঁচিয়ে বললো,

–“স্টুডিওটা এখন থেকে পরিষ্কার রাখিস।আদিবাকে এখানে নিয়ে আসলে তো আমার মান সম্মান কিছুই থাকবে না।গোয়াল ঘরও এর থেকে পরিষ্কার আর গোছানো থাকে।”

কথা শেষ হতেই পুনরায় দরজা লাগিয়ে দিলো।হাসিব অবাক চোখে তাকিয়ে রইল।আদিবা নামটা তার কানে বাজতে লাগলো।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো রাতুল সোফায় শুয়ে ড্যাব ড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।দৃষ্টিতে বিস্ময়!সেও সাঈফের সম্পূর্ণ কথাই সে শুনেছে।এর আগে সাঈফের মুখে তার মা,বোন আর নানী ব্যতিত কোনো অন্য মেয়ের নাম তারা শুনে নি।কে এই আদিবা যাকে নিয়ে সে স্টুডিওতে আসবে!সামিরাকেও তো কোনোদিন এই স্টুডিওতে আনে নি।

—“ইয়া আল্লাহ!সাঈফ?”বলে দুইজন একসাথে চেঁচিয়ে উঠলো।যা বোঝার বুঝে গেছে তারা।

———–

মালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ইমিগ্রেশন শেষ করে আবির আর সামিরা দাঁড়িয়ে আছে কাউন্টার নম্বর সিক্সটি সেভেনের সামনে।সামিরার হাত আবিরের হাতের মুঠোয়।বেশ শক্ত করে ধরে রেখেছে।এই মূহুর্তে আবিরকে দেখে মনে হচ্ছে একজন সতর্ক অভিভাবক!হাত ছেড়ে দিলেই তার প্রিয় হয়ত হারিয়ে যাবে।
এয়ারপোর্টের বাহিরে প্রায় সব হোটেল আর রিসোর্টের কাউন্টার থাকে।সেখান থেকে টোকেন নিয়ে প্রোভাইড করা স্পিডবোটে করে কাঙ্ক্ষিত রিসোর্টে বা হোটেলে যেতে হয়।যেহেতু মালদ্বীপের পুরোটা ভারত মহাসাগরের ওপর অবস্থিত,চলাচলের জন্য ওতোটা রাস্তা নেই।যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই নীলাভ সবুজ মহাসাগরের সমাহার। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াতের জন্য সচরাচর মাধ্যম হলো পানি!স্পিডবোট ছাড়াও সি প্লেন অথবা কার্গো শিপে করেও যাতায়াত করা যায়।আবিরের ডিপার্টমেন্ট থেকে প্যারাডাইস আইল্যান্ড রিসোর্টের ওয়াটার ভিলা বুকিং দেওয়া হয়েছে।আবির প্রথমে ট্যাক্সিতে করে যেতে চেয়েছিলো।পরে যখন দেখলো সি প্লেন কিংবা স্পিড বোট ছাড়া আর কোনো উপায় নেই,তখনই তার মধ্যে অস্থিরতা শুরু হলো।পানিতে সে ভয় পায় না।তার ভয় সামিরাকে নিয়ে।মেয়েটা যদি পানি পড়ে যায়?? অন্যদিকে সামিরা অনেক এক্সাইটেড!!এর আগে সে কখনো স্পিড বোটে চড়ে নি।তিন বছর আগে যখন পরিবারের সাথে কক্সবাজার গিয়েছিল তখন তার বাবাকে বহুত রিকোয়েস্ট করেও প্যারাসেইলিং আর স্পিড বোটে ওঠার পারমিশন পায় নি।তখন তার নিভে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে সাঈফ বলেছিলো,

–“দেখিস! ভবিষ্যতে তোর জন্য অনেক ভালো কিছু আছে।তোর জামাই তোকে কাঁধে নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিবে।”

আবির সামিরাকে কাঁধে নিয়ে সমুদ্র পাড়ি না দিলেও বেশ যত্নে রেখেছে।এ জায়গায় মাহিদ থাকলে হয়ত সামিরা কখনোই এমন কেয়ার পেত না।কি মনে করে সামিরা আবিরের হাত ছিটকে সরিয়ে দিলো।বড় বড় চোখ থেকে তাকিয়ে রইল।আবির চোখে বিমর্ষতা ফুটে উঠলো।সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।

—-“খালি এভাবে শক্ত করে হাত ধরে রাখলেই হবে?আশেপাশে দেখছেন না কতো মানুষ!!”

সামিরা উঁচু গলায় বলে উঠলো।আবির আশেপাশে তাকালো।তারা এখন এয়ারপোর্টের জেটিতে দাঁড়িয়ে আছে।এখান থেকে স্পিড বোটে উঠবে।সত্যিই অনেক মানুষ!তারাও তাদের সাথে একই স্পিড বোটে চড়বে।এতো মানুষের ভীড় দেখেই সে সামিরার হাত ধরে রেখেছিলো।সামিরা কি তাকে ভুল বুঝলো!!নাকি সত্যি সত্যি মাহিদকে ভালোবাসতো?তাই তার এই অল্প একটু ছোঁয়াও মেনে নিতে পারছে না?তার চুপসানো মুখ দেখে সামিরার বেশ হাসি পেল। মুখে অসহায়ত্ব ফুটিয়ে হাল্কা গলায় বলল,

—-“একটু ভালো করে জড়িয়ে ধরে কাঁধে হাত রাখুন না!!কতোগুলো অপরিচিত মানুষের সাথে ধাক্কা খেলাম।এমন ধাক্কা খেতে খেতে কখন জানি পানিতেই পড়ে যাই।”

আবির কিছু সময় সামিরার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে চট করে তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো।মুখের হাসি গম্ভীরতার আড়ালে লুকিয়ে রাখলো। কিছু প্রাপ্তির আনন্দ মাঝে মধ্যে একাই উপভোগ্য!!অপরদিকে সামিরা আবিরকে ভড়কে দিয়ে পুরোপুরি স্বাভাবিক। বোট আসতেই সে খুশির তোড়ে তাতে এক প্রকার লাফিয়ে চড়লো।আবির তাকে না ধরলে হয়ত পড়েই যেত।নির্দিষ্ট সিটে বসার পর সামিরা বাহিরের দিকে তাকিয়ে নীলাভ জলের নৃত্য উপভোগ করছিলো।চারদিকে কেবল নীলচে ফিরোজ পানি!!দূরেই মালে আইল্যান্ড দেখা যাচ্ছে।দুই একটা মসজিদ।ইট,পাথর আর কাঠের বাড়ি ঘর।চোখ বন্ধ করে সে দীর্ঘ শ্বাস টানলো।মন ভরে নীল সায়রের গন্ধ শুষে নিলো।চোখ খুলে দেখলো আবির তার সামনে দু’ প্যাকেট চিপস ধরে রেখেছে।সামিরা চুপচাপ চিপসের প্যাকেট খুলে খাওয়া শুরু করলো।পর মূহুর্তে বলল,

—–“আপা বলেছে তাই না?”

আবির কিছু বলল না,এবার সেও বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

—–“আসলে হয়েছে কি ট্রাভেলের সময় আমার চিপস না খেলে কেমন যেন খালি খালি লাগে।”

—“জানি আমি।

–“জানাটাই স্বাভাবিক!যার আমার মতো দুটো পাগল ভাই বোন আছে,তার জীবনে কোনোকিছুই সিক্রেট থাকতে নেই।”

সামিরা কথার ফাঁকে আবিরের দিকে চিপসের প্যাকেট এগিয়ে দিলো।আবির মাথা নাড়িয়ে বারণ করলো।সামিরা জোর করে তার মুখে একটা চিপস ঠুসে দিলো।খানিকটা অধিকারবোধ!আবির হাল্কা হেঁসে খেয়ে নিলো।এরপর একরাশ নিরবতা!স্পিডবোট ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে দুলছে।যতোবার একে অপরের বাহুর সাথে ধাক্কা লাগছে।ততোবার আবিরের ভেতরটা অজানা কারণে কেঁপে উঠছে।কিছু হারিয়ে ফেলবে না তো?চিপস খাওয়া শেষ।সামিরা প্যাকেট কোথায় ফেলবে এই ভেবে উসখুস করছে।সে মূহুর্তে আবিরের ঠোঁটের কোনে ফিচলে হাসি ফুটে উঠলো।

—-“ফেলার দরকার কি!রেখে দেও।তোমার তো আবার ট্রাভেল সিকনেস আছে।প্যাকেটটা যেকোনো সময় কাজে লাগতে পারলে।সেদিন তো আমার গাড়িতে ছিলো,তাই সামলাতে পেরেছি আজ হয়ত পারবো না।”

টিটকারির স্বর।সামিরার নাক ফুলে উঠলো।আবির যে তাকে বিয়ের দিনের গাড়িতে বমি করা নিয়ে খোঁচা মেরেছে,সে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে।সে চোখ ছোট ছোট করে আবিরের দিকে তাকাল।তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—“সেদিন যেভাবে সামলিয়েছেন আজকেও সেভাবে সামলাতে হবে।”

—-“অধিকার দিচ্ছো?”

আবিরের কন্ঠে নিগূঢ়তা।সামিরা থতমত খেয়ে গেল। কথা পাল্টালো।

–“সেদিন মনে রাগ,কষ্ট,ক্ষোভ সব একসাথে ভীড় করেছিলো,তাই…”

—“তাই বমি করে সব উগড়ে দিয়েছো!তাই তো?”

এবার সামিরা ক্ষেপে গেল।হাতের বড় বড় নখ দিয়ে আবিরের বাহুতে খামছি মারলো।তার এমন বাচ্চামিতে আবির জোরেই হেঁসে দিলো।সামিরা মুখ ফুলিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইল, সিদ্ধান্ত নিলো কোনো কথাই বলবে না।আবির হাসি থামিয়ে সামিরার কাঁধে মাথা রেখে বিড়বিড় করে বলল,

—-“তুমি যাই করো না কেন,আমি সব সামলে নিবো।তুমি মানেই তো আমি।”

——

প্যারাডাইস আইল্যান্ড রিসোর্ট এন্ড স্পা লঙ্কানফিনোলহু উত্তর, মালদ্বীপে অবস্থিত।কাছাকাছি হওয়ায় বিশ মিনিটের মধ্যে তারা সেখানে পৌঁছে গেল।পুরো একটা দ্বীপে নিয়ে সম্পূর্ণ রিসোর্ট তৈরি।এখানে লাক্সারিয়াস বিচ ভিলা,ল্যাগুন ভিলা,হ্যাভেন ভিলা,ওয়াটার ভিলা সহ চারটি হিউজ রেসট্রন্ট,টেনিস কোর্ট, ইনফিনিটি পুল,স্পা সেন্টার এবং আরো অনেক ধরনের সেক্টর রয়েছে।ম্যানেজমেন্টের লোকেরা গলফ কার্টে করে তাদের রিসোর্টের হুলহাঙ্গু বারে নিয়ে গেল।নিয়ম অনুযায়ী সেখানে তাদের ওয়েলকাম ড্রিংকস দিয়ে অভিবাদন জানানো হলো!! এরপর বার ম্যানেজার একটা কাগজ আবিরের হাতে ধরিয়ে দিলো। বারের পেছন দিকে ইনফিটি পুল।বেশ চওড়া ও প্রশস্ত।সামিরা দেখলো আবির একাগ্রচিত্তে ফর্ম ফিল আপ করছে।সে তাকে রেখেই পুলের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো!একজোড়া বেবি সার্ক তীরের কাছাকাছি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।তাদের ঘিরে আরো কিছু ছোট ছোট মাছ ঘুরছে।পানির নিচে হোয়াইট স্যান্ড থাকায় সবকিছু একদম পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।সামিরা আবির্ভূত নয়নে ঘুরে ঘুরে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে।
ফর্মালিটিস পূরণ করে কিছু সময় রেস্ট নিয়ে আবির সামিরা রওনা দিলো তাদের জন্য নিদিষ্ট করা ওয়াটার ভিলার উদ্দেশ্যে !দুপাশে স্বচ্ছ ল্যাগুন তার ওপর পাকাপোক্ত উডেন ব্রিজ।ব্রিজের ওপর দিয়ে কার্টে করে তারা এগিয়ে চললো।ওয়াটার ভিলাতে থাকা প্রতিটি কটেজ সম্পূর্ণ পানির ওপরে। কিছু দূর এগোতে ব্রিজটি কয়েকটি শাখায় বিভক্ত হয়ে গেল। প্রতিটি শাখার শেষ প্রান্তে একটি করে কটেজ।তাদের কটেজের সামনে এসে কার্টটি থেমে গেল।সামিরা আবিরকে রেখেই তাদের কটেজের ভেতর প্রবেশ করলো।সবকিছু ওয়াশরুম, বেডরুম,কাউচ ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলো।

—-“আপু ভিডিও কল দিয়েছে। নেও কথা বলো।”

আচমকা আবির সামিরার দিকে তার ফোন এগিয়ে দিলো।সামিরা ফোন হাতে নিয়ে কল কেটে দিয়ে প্রথমে তার শাশুড়ি ফোন করলো।মিনিট পাঁচেক কথা বলে,শশুরের খবর নিয়ে তারপর নামিরার ফোনে কল করলো।ফোন রিসিভ করলেন নাদিরা বেগম। আবির কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।মায়ের সাথে কথা বলে সামিরা নামিরাকে চাইলো।নামিরা পাশেই ছিলো,সামিরা বলতে না বলতে সে ফোন কেঁড়ে নিলো।

—-“হেরে সামু পৌঁছে গেছিস?কোনো সমস্যা হয় নি তো?বোটে উঠে বমি করেছিস?আবির কই?পাশে তো দেখছি না।বুঝেছি তোর বমি সাফ করছে তাই তো?”

নামিরার প্রশ্নের তোড়ে সামিরা কোনো কথা বলার সুযোগই পাচ্ছে না।সে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো আবির ট্রলি ব্যাগ থেকে কাপড় বের করছে।মুখে তার হাসি।

–“কিরে জবাব দে।”

–“ঠিক আছি আপা।”

সামিরা ক্লান্ত গলায় বললো।নামিরা শুনলো কি শুনলো না।নিজের মতো পুনরায় উপদেশ দিতে লাগলো।

–“শোন এখন কিন্তু পানিতে নামবি না!!খেয়ে দেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতে ধীরে পানিতে নামবি।কেমন?”

সামিরা মাথা নাড়ালো।

—“এখন রাখি আপা,,পরে কথা বলবো নে।”

—“হ্যা জানি তো পরে কতো কথা বলবি! হানিমুনে গিয়েছিস,আমাকে তো আর ভালো লাগবে না।শুধু একটা কথাই বলবো।”

নামিরা মুখ ভেঙ্গালো।সামির তাড়া দিতে লাগলো।

—“যা বলার জলদি বল প্লিজ! শরীর কুটকুট করছে।শাওয়ার নিতে হবে। ”

নামিরা দুর্বোধ্য গলায় বলল,

—“ওই সময় বলতে ভুলে গেছি তোর ব্যাগের বাম সাইডে একটু ভেতরে দুটো লেটেস্ট মডেলের সুইমিং স্যুট আর দুটো বিকিনি আছে।আমার ধারণা পার্পল কালারের বিকিনিতে তোকে বেশি মানাবে।সুযোগ বুঝে পড়ে নিস আর….!”

সামিরা ফোন কেটে দিলো।কানের লতি লাল হয়ে গেছে।মাথা ভনভন করছে।মনে হচ্ছে গাল দুটো থেকে গরম ভাব বের হচ্ছে।গলাও শুকিয়ে গেছে। বুকটা দুরদুর করে কাঁপছে।স্ট্যচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।মুখ তুলে আবিরকে দেখার সাহস পেলো না।ফোন স্পিকারে ছিলো,মানুষটা নিশ্চয়ই সবটাই শুনে নিয়েছে।ইশশ!কি লজ্জা।তার আপা পৃথিবীর নাম্বার ওয়ান ঠোঁটকাটা মহিলা।

—-“পার্পল কালার আমার ফেভারিট।”

সামিরা চট করে মুখ তুলে চাইলো।আবিরের ঠোঁটে তীর্যক হাসি।একটু আগে ফিসফিস করে কথাটা সেই বলেছে।এবার সামিরার লজ্জা সীমা অতিক্রম করে গেল।সে একছুটে ওয়াশরুমে যেয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।

চলবে