মনের আড়ালে পর্ব-০৩

0
1093

#মনের_আড়ালে
Part_3
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain

এক বুক সাহস নিয়ে ইশমি চোখ খোলার সিদ্বান্ত নিল ।সে পিটপিট করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখতে পেল পুরো রুম অন্ধকার ।এই অন্ধকারেও তার সামনে কারো গাঢ়ো অবয়ব টের পাচ্ছে ।সে যে-ই না চিৎকার করতে যাবে অমনি একটা শক্তপোক্ত পুরুষালি হাত তার মুখ চেঁপে ধরার চেষ্টা করল কিন্তু পারলো না তার আগেই ইশমি বিছানা থেকে দূরে সরে চিৎকার দিয়ে উঠল ।আয়নাল হোসেন মেয়ের চিৎকার শুনতে পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে দৌঁড়ে আসে মেয়ের রুমে সাথে হাফসা বেগম ও আসে ।ইশমি চোখমুখ খিঁচে অন্ধকারে ভয়ে কাঁপছিল তার সামনের পুরুষের অবয়ব টা তখনো পর্যন্ত চলে যায়নি ।আয়নাল হোসেন রুমে এসেই লাইট জ্বালিয়ে দিলেন আর চিৎকার করে বললেন আপনি এই রুমে এত রাতে কি করছেন?রুমে আলো পরতেই আর বাবার চিৎকার শুনেই ইশমি চোখ খুলে দেখতে পেল জাহিদকে ।তার দিকে এখনো কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।জাহিদ তার মায়ের আপন বড় ভাই এই বাড়িতেই বউ রানী আর মেয়ে তিথিকে নিয়ে বসবাস করে ।একদম বদ চরিত্রের লোক এই জাহিদ ।সম্পর্কে তার মামা হলেও তার শরীরে অনেকবার হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছে ।
ইতিমধ্যে ইশমির রুমে সবাই এসে গেছে চিৎকার শুনতে পেয়ে ।জাহিদের বউ রানী চোখ ডলতে ডলতে আয়নালকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে ভাইয়া ? তখন কে এভাবে চিৎকার করল ?
আয়নাল হোসেন রানীর কথায় কোনো জবাব না দিয়ে রাগীকন্ঠে জাহিদকে বলল আপনি আমার মেয়ের রুমে এতো রাতে কেন এসেছেন ?
জাহিদ কিছু বলার আগেই হাফসা বেগম রাগীকন্ঠে বলে উঠল তুমি এভাবে কেন জেরা করছ আমার ভাইকে ?
জাহিদ এবার ইশমির দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলল আমি তো ইশমি মামনির চিৎকার শুনতে পেয়েই এই রুমে এসেছি ।এবার তিনি মুখটা করুন করার ভান করে বললেন ভাইজান আপনি আমায় শুধু শুধু ভুল বুজছেন ।
ইশমি সাথে সাথে চিৎকার করে বলে উঠল না বাবা উনি মিথ্যা বলছেন ।আমি অন্ধকার রুমে উনাকে দেখেই ভয় পেয়ে চিৎকার করেছিলাম ।
জাহিদ সাথে সাথে অবাক হওয়ার ভান করে বলে উঠল না না মিথ্যা কথা ।ইশমি মামনি তুমি কেন মিথ্যা বলছ আমার নামে ? আমি তো তোমার চিৎকার শুনতে পেয়েই তোমার রুমে এলাম ।
হাফসা বেগম এবার রাগে গজগজ করে বললেন মুখপুরী কোথাকার আমার ভাইয়ের নামে মিথ্যা কেন বলছিস তুই ।তোর কোন ভারাপাতে ছাই দিয়েছিল আমার ভাই যে মিথ্যা কথা বলছিস ।
আয়নাল হোসেন এবার রেগে গর্জন করে বলল চুপপপ একদম চুপ ।তাহলে তোমার ভাইকে জিজ্ঞেস কর ও এত রাতে আমার মেয়ের রুমে কি করছে ? ও শুধু শুধু চিৎকার দেয়নি ।সবাই জানে তোমার ভাইয়ের চরিত্র কেমন ? কত বড় সাহস আমার খেয়ে আমার পরে আমার মেয়েকেই হ্যারাস করার চেষ্টা করে ।তিনি জাহিদকে চোখ রাঙিয়ে বললেন এরপর এমন কিছু করলে আমি তোকে ঘাঢ় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব আমার বাড়ি থেকে ।
হাফসা বেগম তীক্ষ্ণ চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে গটগট করে চলে গেলেন ।রানি মুখে কাপড় গুজে বের হয়ে গেল আর সাথে জাহিদও বের হয়ে গেল মাথা নিঁচু করে ।
আয়নাল হোসেন ইশমির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন তুই ঘুমিয়ে পর মা ।এখন আর কোনো ভয় নেই ।ইশমি মাথা ঝুলিয়ে বাবাকে হ্যাঁ বোঝাল ।সাথে সাথে তিথি বলে উঠল ফুপা আমি ইশমির সাথে ঘুমাবো আজ থেকে ।আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন ।আয়নাল হোসেন তিথির মাথায় হাত বুলিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত মনে বের হয়ে গেলেন রুম থেকে ।
ইশমি তিথিকে বলল আপু তুমি আমার সাথে ঘুমাতে পারবে ?তোমার কষ্ট হবে না ?
তিথি মুচকি হেঁসে বলল দূর পাগলি আমার কোনো কষ্ট হবে না ।আজকে থেকে তোর সাথেই ঘুমাবো বলেই তিথি মনে মনে বলল আমার বাবাকে আমি খুব ভালো করেই চিনি ।তোর উপর উনার জগন্য চাহনি আমার অনেক আগেই চোখে পরেছে তবে তুই কোনো চিন্তা করিস না তোর কোনো ক্ষতি হতে দিবো না আমি ।
ইশমি নিশ্চিন্ত মনে বিছানার একপাশে শুয়ে পরল আর তিথি তার পাশে শুয়ে পরল ।তিথি বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে কাদা ।ইশমি উশপিশ করছে ।তার ঘুম আসছে না ।বারবার কিছুক্ষণ আগে হওয়া ঘটনাগুলো মনে পরছে । জাহিদের নোংরা দৃষ্টি সে খুব ভয় পায় ছোটবেলা থেকে ।তবে এখন সে নিশ্চিন্ত তিথি আপু আজকে থেকে তার সাথে ঘুমাবে ।তিথি মেয়েটা খুব ভালো ।তবে একটাই সমস্যা তিথি আপু পড়াশোনা করতে চায় না ।দুই বছর আগে এইচ এস সি ফেইল করে বাড়িতেই বসে আছে ।
ইশমি এসব কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরল ।তার ঘুম ভাঙল সকালের তীর্যক রশ্নিতে ।সে চোখ ডলতে ডলতে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল সাতটা বাজে ।তাকে এখন ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানাতে হবে সকলের জন্য তারপর ভার্সিটিতে যেতে হবে ।ভার্সিটি যাওয়ার কথা ভাবতেই তার কলিজা ধক করে উঠল ।আজকেও অভিক স্যারের ক্লাস আছে মানে আজকেও তাকে অপমান করবে ।হে আল্লাহ রক্ষা করো তোমার এই বান্দাকে প্লিজ প্লিজ বলেই ইশমি ইউনুছ নবীর দোয়াটা পরতে পরতে ফ্রেশ হতে চলে গেল ।ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে চলে গেল নাস্তা বানাতে ।কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে সে অবাক রানী মামি নাস্তা বানাচ্ছে ।এমনিতেও রানী মামী মাঝেমধ্যে রান্না করে কিন্তু সকালে নাস্তা বানায় না সে । ইশমি রানীর কাছে গিয়ে বলল মামী আপনি কেন নাস্তা বানাচ্ছেন আমায় দিন আমি নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি ।
রানী পরোটা বেলতে বেলতে ইশমিকে বলল ইশমি আজকে থেকে আমি নাস্তা বানাবো আর বাকি কাজগুলোও আমি করবো ।তোমায় কিছু করতে হবে না তুমি বরং একটু ঘুমিয়ে নাও ।

ইশমি বলল কিন্তু কেন ? আপনি কেন সব কাজ করবেন মামী ?

রানী বলল তুমি ভেবো না ইশমি কালকে রাতের জন্য আমি এই কাজগুলো করছি আমি নিজের ইচ্ছাতেই এই কাজগুলো করছি ।
অগত্যা ইশমি নিজের রুমে ফিরে এল ।নিজের রুম টা গুছিয়ে নিয়ে রেডি হয়ে নিল ভার্সিটির জন্য ।রেডি হয়ে ব্যাগটা নিয়ে বের হতেই হাফসা বেগম নিজের রুম থেকে তার নাম ধরে জোরে ডেকে উঠলেন ।অগত্যা তাকে হাফসা বেগমের রুমে যেতে হল ।সে রুমে গেলে হাফসা বেগম তাকে দেখে বললেন আজকে ভার্সিটি থেকে ফেরার পর আমার সাথে একটু দেখা করিস আর এই নে একশো টাকা নিয়ে যা টিফিনে কিছু খেয়ে নিস ।
ইশমি অবাক আজ এই প্রথম হাফসা বেগম তাকে নিজে সেধে টাকা দিচ্ছে ।সে টাকাটা হাতে নিয়ে বের হয়ে গেল ভার্সিটির উদ্দেশ্য ।

ইশমি রিকশায় বসে বিরবির করে ইউনুস নবীর দোয়া পরছে ।তার পাশে অনিতা বিরক্ত হয়ে বলল

এভাবে বিরবির করে কি বলছিস ?

দোয়া পড়ছি দোয়া ইশমি সিরিয়াস হয়ে জবাব দিল তারপর আবার দোয়া আউরাতে লাগল ।

অনিতা ফিঁক করে হেঁসে বলল অভিক স্যার যে এ্যাসাইনমেন্ট করতে দিয়েছিল তা করেছিস ?

ইশমি ঢোক গিলে বলল ভুলে গিয়েছিলাম কাজের চাঁপে পরে ।

অনিতা চোখ বড় বড় করে বলল হোয়াট ! গাধী কোথাকার তুই এটা ভুললি কিভাবে জানিস অভিক স্যার তোর পিছে এমনি-ই পরে আছে তারপরো কিভাবে ভুলতে পারলি ।আজকে তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না স্যারের হাত থেকে ।

এই জন্যই তো দোয়া পরছি ইশমি দোয়া পরতে পরতে বলল ।রিকশা ভার্সিটির সামনে এসে পরলে তারা রিকশা থেকে নেমে গিয়ে ভার্সিটির ভেতরে ঢুকল ।

তিন তলার ফ্লোরে তাদের ক্লাস রুম ।অনিতা আর সে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল হঠাৎ করে অভিক ইশমির বাহু ধরে টেনে একটি রুমে নিয়ে গেল ।ঘটনাটা এত দূরত্ব ঘটল যে ইশমি হতবাকের চরম পর্যায় চলে গেছে ।অভিক তাকে রুমে এনেই ক্ষান্ত হলো না !দরজা আটকে তাকে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে রেখেছে ।তার দুই হাত অভিকের দুই হাতের মধ্যে বন্দী ।দুইজনের মধ্যে ছিটেফোঁটাও ফাঁক নেই ।অভিক তার শরীরের সাথে ঘেষে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে ।তার ঠোটজোড়া অভিকের ঠোটজোড়ার সাথে প্রায় ছুই ছুই ।অভিক আরো একটু কাছে ঘেষতেই তার ঠোটজোড়ার সাথে অভিকের ঠোটজোড়া মিলে গেল ।তার সারা শরীর জংকার দিয়ে উঠল ।ইশমি চোখমুখ খিঁচে মুখের ভেতর ঠোট দুটো চেঁপে নিয়ে বলল আ্ আমায় য্ যেতে দিন প্লিজ ।
অভিক ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে ।সে ইশমির কথা অগ্রাহ করে ইশমির চিঁবুক আলতো করে ছুয়ে মুখটা উঁচু করে ধরল ।চিঁবুকে আঙুল বুলাত বুলাতে ঘোরলাগা কন্ঠে বলল আমার কথা না শুনে এখান থেকে তুমি এক পা-ও নাড়াতে পারবে না ।খবরদার !বলেই ইশমির চিঁবুকে আলতো করে কামড় দিল ।
ইশমি অস্ফুটভাবে আহ বলে চিৎকার দিয়ে উঠল ।

চলবে,
@Nusrat Hossain

( ভুলত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন )