মন গহীনে পর্ব-০৫

0
356

#মন_গহীনে

#পর্বঃ৫

#দোলন_আফরোজ

কাব্যর বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় ১১টা বেজে গেছে। মা খাবার নিয়ে বসে ছিলেন ডাইনিং এই। সাথে আছে তিথীকে খুঁজে পাওয়ার চিন্তা। ছেলে ফিরতেই মা জিজ্ঞেস করেন তিথীকে পাওয়া গেছে?
ছোট করে শুধু উত্তর আসে হুম।
শাহানারা বেগম কিছুই বুঝতে পারেন না, এতো তারাতাড়ি কি করে পাওয়া সম্ভব। ছেলের মুটামুটি পাওয়ার আছে উনি জানেন, তাই বলে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে?
উনি শুধু বল্লেন খেতে আয়, খাবার দিচ্ছি।
খেয়ে এসেছি তারেক চাচার বাসা থেকে। ফ্রেশ হবো আমি। উপরে যাচ্ছি।
ছেলের মন খারাপ এর কারণ বুঝতে পারলেন না শাহানারা বেগম। তাই খাবার গুছিয়ে উনি চললেন ছেলের রুমে।

রুমে এসেই কাব্য সোজা চলে যায় ওয়াশরুমে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে মা বিছানায় বসে আছে। মা কে দেখে জিজ্ঞেস করে, কি মা কিছু বলবে?
-উহুম, তোর কি হয়েছে জানতে এসেছি।
– টাওয়েল টা বিছানায় রেখে মায়ের কোলে ধপ করে শুয়ে পরে বলে, মাথা টা টিপে দাও না মা, বড্ড মাথা ধরেছে।
-কফি দিতে বলি শেফালী কে?
-উহুম,লাগবে না। তুমি টিপে দিলেই ভালো হয়ে যাবে।
শাহানারা বেগম চুপচাপ ছেলের মাথা টিপে দিতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করে, এতো তারাতাড়ি তিথীকে কোথায় পেলি? আর পাওয়ার পর তোর মন খারাপ ই বা কেনো?

কাব্য এবার উঠে বসে মায়ের দুগালে হাত রেখে বলে, মা আমি যদি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলি ক্ষমা করতে পারবে আমায়?

আঁতকে ওঠেন শাহানারা বেগম, কি এমন অন্যায় করেছেন ছেলে যে এভাবে বলছে।
তুই তো কখনো কোনো অন্যায় করিস না, আর কেউ করলেও তা মেনে নিস না। তবে কি এমন অন্যায় করেছিস তুই যে ক্ষমার কথা বলছিস?

মাথা নিচু করে রাখে কাব্য।

বলনা সোনা। টেনশন হচ্ছে আমার খুব।

তিথীকে আমিই তুলে নিয়ে আটকে রেখেছিলাম।

ছেলের হাত দুটো ধরা ছিলো শাহানারা বেগম এর। হাত দুটো ছেড়ে দিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, কি বলছিস তুই এসব? কিন্তু কেনো?

আবির সো*সা*ই*ড করতে চেয়েছিলো জানোতো?

হুম এতে তিথীকে আটকে রাখার কি সম্পর্ক?

আবির তিথীর জন্য ই সো*সা*ই*ড করতে গেছিলো।

কি বলছিস এসব। এত টুকুনি পিচ্চি মেয়ে আবার কি করলো?

আবির তিথীর বোন তমা কে ভালোবাসে। অনেক দিন থেকেই তমার পিছনে ঘুর ঘুর করতো। আমার এসব পছন্দ ছিলো না বলে আমি ওসব এড়িয়ে চলেছি।আবির নাকি সব জায়গায় ই তমাকে ফলো করতো আর বিভিন্ন ভাবে ইম্প্রেস করার চেষ্টা করতো। হয়তো তমার এসব পছন্দ ছিলো না, নয়তো আবিরকেই পছন্দ ছিলো না। তমা খুব লাজুক আর ভিতু টাইপের মেয়ে। তাই ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো সে। আর তমার ঠিক উল্লোটাই তিথী। ভিষণ সাহসী আর রাগী। কেনো ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করেছে তমা এটা তার মোটেও পছন্দ হয়নি। তাই সে ঠিক করে আবির কে শায়েস্তা করবে। তাই সেদিন তমার সাথে সেও ভার্সিটি আসে। তমা কে এতোদিন পর দেখে যখন ই আবির তমার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় একটা গোলাপ হাতে নিয়ে, তখনই তিথী সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরে। ফুল টা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে পায়ে পিশে ফেলে। আর আবির কে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
কি ভেবেছেন কি, কয়েকটা চেলাপেলা পুষে নিজেকে অনেক বড় গুন্ডা ভাবেন। আর যখন দেখেছেন মেয়ে তো ভয় পাচ্ছে, তাই আরো পেয়ে বসেছেন না? জোর জবরদস্তি করে ভালোবাসা পেতেই হবে। ক্যাডার গিরি করে কয়েক দিন মজ মাস্তি করে ছেড়ে দিবেন না। তমা ভয় পেলে কি হবে। এই তিথী কাউকে ভয় পায় না। আর আপনাদের মতো গুন্ডাদের তো না ই। নেক্সট টাইম যদি দেখেছি আপুটি কে বিরক্ত করেছেন তবে একটার যায়গায় ৫ টা থাপ্পড় পরবে আর সাথে ইভটিজিং কেস এ জেলেও যাবেন বলে দিচ্ছি।

তখনই আবিরের সাথে থাকা আমাদের ই ফ্রেন্ড রা তিথীর উপর চড়াও হতে চায়। আবির ই দেয় নি।সে সত্যিই তমাকে ভালোবেসেছে। তাই চায়নি তমার বোনের কোনো ক্ষতি হোক।কিন্তু এই অপমান টা আবির মেনে নিতে পারেনি। তাও আবার আমাদের ই ক্যাম্পাসে। যেখানে সবাই আমাদের এতো সম্মান করে, সেখানে সে একটা নেহাৎ ই পিচ্চি মেয়ের কাছে এতো অপমানিত হয়েছে, তাই সে নিজেকেই শেষ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর তা করতেও যায়। ভাগ্য গুনে বেঁচে যায় সে।
তখন আমি তো ঢাকার বাইরে ছিলাম। এসে যখন শুনি এই কথা আমি তখন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমার শুধু মনে হয় এই মেয়েকে এর চরম মূল্য দিতে হবে। তাই তার পর দিন ই তিথীকে তুলে নেওয়াই।

যেখানে আবির নিজেই কিছু করেনি সেখানে তুই কি করে পারলি এতো বড় একটা কাজ করতে।

বিশ্বাস করো মা আমি জানতাম না ওটা তিথী ছিলো। আর তখন আমার মাথা ঠিক ছিলো না আবির কে এই অবস্থায় দেখে।

তিথী না হোক অন্য কোনো মেয়ে তো হতো নাকি? তুই কি বুজতে পারছিস একটা টিনেজার মেয়ে কিডন্যাপড হয়ে আবার ৫ দিন পর বাড়ি ফিরেছে এটা লোকে কি চোখে নিবে? খুব অন্যায় করেছিস তুই। আর এই অন্যায় এর ক্ষমা হয় না। এখন তিথীকে পদে পদে ভুগতে হবে।

আমি সব ঠিক করার চেষ্টা করবো মা। তুমি শুধু বলো আমায় ক্ষমা করেছো!

এখানে আমি ক্ষমা করার কে? ক্ষমা চাইতে হলে তারেক ভাই আর তানিয়ার কাছে চাবি।

আমি ঠিক সময় মতো সবটা চাচা চাচী কে বুঝিয়ে বলবো মা।তুমি শুধু বলো আমায় ক্ষমা করেছো। আমি শান্তি পাচ্ছি না মা।আমি নিজ হাতে আমার পুতুল বউ এর জীবন টা বিষিয়ে দিয়েছি।আর ওকে দেখে যা মনে হয়েছে ও চঞ্চল, রাগী তবে এসব ব্যাপারে এখনো অবুঝ। সে এই সমাজ কে ফেস করতে পারবেনা। আমি ওকে আগলে রাখবো মা। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে আমি নিজেই চাচা চাচী কে বলবো।

আশা করি সবটা যেনো ভালো হয়। সবটা যেনো সামলে উঠতে পারিস।

প্লিজ মা তুমি আমার পাশে আছো কথা দাও।

আসলে মা জাতি বড়ই খারাপ রে। সন্তান অন্যায় করলেও তাকে ছেড়ে দিতে পারে না। আমি তোর অন্যায় টাকে সাপোর্ট করছি না, তবে পাশে থাকবো তোর,তিথীকে সব বিপদ থেকে সামলিয়ে রাখার জন্য।

তুমি পাশে থাকলে পারবো আমি। কিছুটা হলেও আমার বুকের ভিতরের ঝড়টা কমেছে। বাকিটা সাড়বে চাচা চাচী কে বলার পর।

আচ্ছা এখন এতো চিন্তা না করে ঘুমিয়ে যা। বলে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিয়ে শাহানারা বেগম চলে যান।

কাব্য উঠে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। পরনে শুধু ট্রাউজার, ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট কামড়ে আয়নায় নিজেকে দেখতে থাকে। খুব ফর্সা না হলেও উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, ৬ পেগ বডি।পার্ফেক্ট হাইট।ভার্সিটির মুটামুটি অনেক মেয়ের ই ক্রাশ সে। তবে প্রথম দিন দেখেই তার পুতুল বউ তাকে আংকেল বলে সম্মোধন করলো কেনো?
উহুম মেয়েটা যে নেহাৎ ই পিচ্চি। গুনে গুনে তার চেয়ে ৮ বছরের ছোট। শেষে কিনা এই পিচ্চির প্রেমে এতো বছর যাবৎ হাবুডুবু খাচ্ছি। ভাবতে ভাবতেই আনমনে হেসে দিলো। নাহ আর দেড়ি করা যাবে না, শুয়ে পরতে হবে। কাল আবির কে হস্পিটাল থেকে রিলিজ দিবে। তিথীকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আবির কে নিয়ে বাসায় ফিরতে হবে। তাই আর দেড়ি না করে শুয়ে পরে সে। শোয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই স্বপ্ন রাজ্যে পারি জমায়। আজ অনেক বছর পর শান্তির ঘুম ঘুমাবে সে।

**************

সাড়ে ৮ টার দিকে ঘুম ভাংগে কাব্যর। উঠে তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে যায়। সেলিম সাহেব, কায়েস, অর্না,শাহানারা বেগম সবাই নাস্তা করছিলো। সবাই এক সাথে নাস্তা করতে বসেছে। কাব্যর বেড়িয়ে যাওয়া দেখে শাহানারা বেগম বলে কোথায় বেরোচ্ছিস নাস্তা করবি না।

না, তারা আছে। খেয়ে নিবো কোথাও।

সেলিম সাহেবঃ তোমার ছেলে শুরুটা করেছে কি? যাই নিয়ে পরে থাকুক খাওয়া দাওয়া টা তো ঠিক মতো করবে নাকি!

কাব্য বিরক্ত হয়ে উনার দিকে তাকায়। এক যুগের ও বেশি সময় এর রাগ উনার উপর। বাবার কোনো কথায় যেনো তার সহ্য হয় না।বিরক্তিকর চাহনি দিয়ে বেরিয়ে যায় সে।

কিছুক্ষণের মাঝেই পৌঁছে যায় তিথীদের বাসায়। এখনো ঘুম থেকে উঠেনি সে। ১০ টাই স্কুল, কয়েকবার ডেকে গেছেন তানিয়া বেগম। তবু উঠেনি।এদিকে তমা চলে গেছে ভার্সিটিতে। তার আজ নাকি কি ল্যাব ক্লাস আছে। তাই সকাল সকাল ই চলে গেছে। তারেক রহমান অফিসে চলে গেছেন। মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাবেন তানিয়া বেগম। আর একা ছাড়বেন না উনি মেয়েকে। তাই মেয়ে কে স্কুলে আনা নেয়া উনি নিজেই করবেন। এতে কাজের যতই অসুবিধা হোক না কেনো।

সকাল সকাল কাব্য কে দেখে উনি অবাক ই হোন। তুই এতো সকালে?

স্কুলে যাবে না তিথী?

এইতো কিছুক্ষণ পরেই নিয়ে যাবো।

– তোমার নিয়ে যেতে হবে না। তিথীর চিন্তা আজ থেকে আমার। ওকে আনা নেয়া সব আমি করবো। আর আমি যদি কখনো ব্যস্ততার কারণে নাও করতে পারি আমার লোকেরা করবে। তোমায় চিন্তা করতে হবে না।

কাব্যর কথা শুনে তানিয়া বেগম খানিকটা হাসেন। উনি মেয়েকে নিয়ে চিন্তাতেই ছিলেন। কাব্য উনার চিন্তা দূর করে দিয়েছে। কাব্যর পাওয়ার আছে, ওর ভয়ে অন্তত কেউ আর উনার মেয়েদের দিকে তাকাতে সাহস করবেন না।

ম্যাডাম কি উঠেছে?

এখনো উঠেনি। দাঁড়া আবার ডাকছি।

তুমি থাকো। আমি ডাকছি, রুম কোন টা?

ওইযে ডান পাশের টা।

বলতেই কাব্য চলে যায় তিথীর রুমে।
সে আগা গোড়া কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে।কি ম্যাডাম, স্কুলে যাওয়া লাগবে না?

ঘুমের মাঝেই তিথী ভাবছে বুঝি কালকের ঘটনায় স্বপ্ন দেখছে। কাঁথা টা হালকা ফাঁক করে এক চোখে পিটপিট করে চেয়ে কাব্য কে দেখে বলে স্বপ্নের মাঝেও ভিলেন টা হাজির।

কাব্য দুই হাত বুকে বেধে এক ভ্রু উচিয়ে কড়া ভাবে জিজ্ঞেস করে, কি বললে?

তিথী এক লাফে উঠে বসে, কাঁথা টা দু’হাতে বুকে জড়িয়ে ধরে,আমতা আমতা করে বলে আ আ আপনি? আপনি এখানে কি করে?

দু মিনিট দিচ্ছি, জাস্ট দু মিনিট। দু মিনিটে রেডি হয়ে ডাইনিং এ এসো।

তিথী এবার রাগ করে বলে, বললেই হলো? আপনি কে বে? এই তিথীকে অর্ডার করছেন? তিথীকে কেউ ধমকিয়ে কথা বলে না, আদর করে কথা বলে সবাই।হুহ। আর তিথী কারো অর্ডার শুনেও নাহ, হুহ।আর আপনি আমার আম্মু আব্বুর ছেলে হতে পারেন কিন্তু আমার ভাই না। তাই ভাগেন এখান থেকে। যান।

(আদর করলে যে এতো আদর সহ্য করতে পারবে না সোনা। আর এখন সেই সময় টাও আসেনি।মনে মনে)

কাব্য কখনো কাউকে এতো লুতুপুতু করে কথা বলতে পারে না। এটা কাব্যর ডিকশনারিতে নেই। আর আমি কখন বললাম আমি তোমার ভাই? ও চিন্তা মাথায় ও এনো না। আমি শুধু তমার ভাই, তোমার না। এটা সব সময় মাথায় রাখবা। ৯.১০ বাজে, সারে ৯ টাই স্কুলের জন্যে বেরুবো। এক্ষুনি রেডি হয়ে ডাইনিং এ এসো। আমার যদি আবার আসতে হয় তবে কিন্তু খুব খারাপ হবে। বলেই বেরিয়ে যায়।

নাম টাও সুন্দর আর চেহারাটাও মাশাল্লাহ, কিন্তু কাজ গুলা ভিলেনের মতো। কাবির সিং জানি কোথাকার। হুহ।
বলেই ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।কিছুক্ষণের মাঝে ফ্রেশ হয়ে একেবারে স্কুলের জন্যে রেডি হয়ে ডাইনিং এ এসে দেখে কাব্য নাস্তা করতে। সে নিজেও একটা চেয়ার টেনে বসে। তারপর তানিয়া বেগম এসে তিথীকে পরোটা খাইয়ে দেয়। খেতে খেতে মনে মনে ভাবে এই কাবির সিং আমাদের বাড়িটাকে কি নিজের বাড়ি বানিয়ে নিয়েছে নাকি? ঢং।

আম্মু আমি উনার সাথে যাবো না, একাই যেতে পারবো। আগে তো একাই যেতাম।

আগে যেতে, কিন্তু এখন যাবে না। আগের সময় আর এখনকার সময় টা এক না। আমার কথায় শেষ কথা। চুপচাপ খেয়ে বেড়িয়ে যাও।।

মুখটা কালো করে খেয়ে বেড়িয়ে যায় কাব্যর সাথে।

কি ব্যাপার এমন সং এর মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? উঠে পরো বাইকে।

আমি আম্মুকে বলে দিবো আপনি ই যে আমাকে কিডন্যাপ করিয়েছিলেন। তখন দেখবো এই আদর কোথায় থাকে।

ওই চিন্তা মাথায় ও এনো না। যদি এমন টা করো তারপর যা হবে তার জন্য রেডি থেকো।

তিথী ঠোঁট উলটে কান্না কান্না ভাব করে দাঁড়িয়ে থাকে।

( উফফ এত্তো কিউট লাগে কেনো তোমাকে? মারার প্ল্যান বুঝি আমাকে।কবে বড় হবে তুমি, কবে আমার ভালোবাসা গুলো প্রকাশ করতে পারবো।)
এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? চুপচাপ উঠে পরো।মুখে কাঠিন্য ভাব রেখে।

উপায় না পেয়ে চুপচাপ উঠে পরলো বাইকে মনে মনে একশো এক টা গালি দিয়ে।

গালি দেয়া শেষ হলে এখন স্টার্ট করি।

হুম হুম, যান না। কে নিষেধ করেছে।😠

এভাবেই? পরে গেলে কিন্তু আমার কিছু করার নাই।

আপনার কাজ আপনি করুন না।

ওকে আমার কোনো প্রব্লেম নাই। বলেই এতো জুড়ে বাইক স্টার্ট করে যে উপায় না পেয়ে তিথী কাব্যর কাঁধে হাত রাখে। মুচকি হাসে কাব্য।

কিছুক্ষণের মাঝেই পৌঁছে যায় স্কুলে। স্কুলে পৌঁছে তিথী ক্লাসরুমে চলে যায় আর কাব্য যার অফিস রুমে। টিচার্সদের সাথে কথা বলতে। কি কথা হলো তা তিথীর অজানা।

ক্লাসে যেতেই তিথীর বান্ধবী পিয়া এসে জড়িয়ে ধরে তাকে। কোথায় চলে গেছিলি তুই? আন্টি আংকেল পুরো পাগল হয়ে গেছিলো। পুলিশ ও এসেছিলো স্কুলে জানিস।তোকে নাকি কিডন্যাপ করেছিলো কেউ? কে ছিলো রে ওরা। আর তুই ফিরলি ই কি করে?

পাশ থেকে লিমা বলে কিডন্যাপ না ছাই। বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ভেগেছিলো।

তিথী রাগী লুক নিয়ে তাকায় লিমার দিকে।( লিমা ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল, সব সময় তিথীকে হিংসা করে।কেনো করে তাও অজানা।)

পিয়া বলে তুই জানিস না তিথীর যে বিএফ নাই। তাও কেনো আজাইরা কথা বলছিস?😡 তুই ছাড় তো তিথী ওর কথা, বলনা চিনতে পেরেছিস কাউকে? আর কেনো নিয়ে গেছিলো?

জানি না। আমার চোখ বাধা ছিলো। দেখিনি কাউকে আমি।

পাশ থেকে হিমি নামের আরেক মেয়ে বলে তোকে কিছু করেনি ওরা?

তিথী অবাক হয়ে, কি করবে?😯

ন্যাকামো করিস না। তোর কোথাও টাচ করেনি ওরা?

টাচ কেনো করবে??

তখনই কাব্য ওখানে আসে। এসে বলে ৩ টাই ছুটি না? আমি আসতে পারবো না তখন, কাজ আছে একটু। আমার লোক রিক্সা করে দিবে বাসায় চলে যেও।মুখে সেই গাম্ভীর্য ভাব রেখেই।

তিথী বাধ্য মেয়ের মতো শুধু মাথা নাড়ে। এতো মানুষের সামনে ক্যাচাল করার মতো অতটা বোকাও সে না।

এদিকে কাব্য কে দেখে পুরা ক্লাস থ। মেয়েরা তো হা হয়ে আছে। এমন ডেশিং একটা ছেলে তিথীর সাথে কথা বলছে!! এক মেয়ে তো বলেই বসে ওয়াও কি হ*ট ছেলেরে বাবা। কাব্য বিরক্তিকর চাহনি দেয় ওদিকে।আসলে টিনেজার ছেলেমেয়েদের যাকে দেখে তাকেই ভালো লাগে আর সেখানে যদি হয় কাব্য তবে তো কথায় নেই।ছেলেরা অনেকেই কাব্য কে চিনে। আর ভয় ও পায়।

কাব্য এটুকু বলেই বেড়িয়ে যায়।
কাব্য বেড়িয়ে যেতেই দুই একটা ছেলে বলে আরেহ এতো এমপির ছেলে। কাব্য ভাই।

তো তিথী তোমার সাথে কি সম্পর্ক উনার।

আমার আম্মু আব্বুর ছেলে।এইটুকু বলেই আর কিছু বলে না তিথী।
****************

আবির কে নিয়ে হস্পিটাল থেকে বাসায় এসেছে কাব্য আর সাথে পিয়াস সহো আরো বন্ধুরা।
আবিরকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে, কাব্য বলে এটা তুই কি করেছিলি বলতো? আমি কি ফিরতাম না, একটু অপেক্ষা করা যেতো না?

এসব বাদ দে, তুই তমার বোন কে তুলে নিয়ে আটকে রেখেছিস কেনো আগে সেটা বল?

কে বল্লো তোকে?

পিয়াস বলেছে।( কাব্য যে তিথীকে তুলে নিয়ে গেছিলো তা শুধু বন্ধু মহলের মাঝে পিয়াস ই জানতো)

কাব্য পিয়াস এর দিকে তাকায় চোখ ছোট ছোট করে।

এভাবে তাকাস না ভাই, ভয় লাগে। এমনিতেও তোকে আমি ভয় পাই। তাই তোর এই অন্যায় কাজ টাতে প্রতিবাদ করতে পারিনি আমি।

আবিরঃ প্লিজ ছেড়ে দে ওকে।

আচ্ছা। বলেই আর তেমন কিছু বলেনি কাব্য। আসলে এখনি সে কাউকে এই ব্যাপারে কিছু বলতে চায় না। তিথীই যে তার পুতুল বউ।

তুই কি ভেবেছিস আমি শুধু তমার বোনের করা অপমানের জন্যই শুধু সো*সা*ই*ড করতে গেছিলাম? ওটাও একটা কারণ ছিলো। তবে তার চেয়ে বড় কারণ হলো তমা আমার প্রতি এতোটাই বিরক্ত যে সে আমাকে তার আশেপাশে আমাকে সহ্যই করতে পারেনি বলে তার ঔ পিচ্চি বোনটাকে দিয়ে অপমান করালো।
তমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিরে, তাই ওর এই অবহেলাটা সহ্য হয়নি।তাই এই ভুল টা করে ফেলেছিলাম। প্লিজ বাচ্চা মেয়েটাকে ছেড়ে দে।

আচ্ছা বললাম তো। তুই এবার রেস্ট কর।আমার কাজ আছে ভার্সিটিতে। বলেই পিয়াস কে নিয়ে বেড়িয়ে যায়।

এদিকে তিথীর ক্লাস শেষ হওয়ার পর স্কুল থেকে বেরুনোর সাথে সাথেই একজন এসে একটা রিক্সা করে দিয়ে উঠতে বলে তাতে। তিথী রিক্সায় উঠতেই দুইটা ছেলে দুই পাশে দুইটা বাইক নিয়ে রিক্সার পিছু পিছু যায়। তিথী অবাক হয়ে যায় তাতে। সাথে অবাক হয় স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যান্য ছেলে মেয়েদের সাথে তিথীর ক্লাসমেট রাও।

তিথী অবশ্য এনজয় ই করছে এই ভি আই পি ট্রিট। যাই হোক কিডন্যাপড হয়ে একটা উপকার হলো, ভি আই পি ট্রিট পাওয়া যাচ্ছে। বলে মনে মনেই হাসতে থাকে তিথী।




চলবে….
( গতপর্ব পড়ে যারা বলেছিলেন অজ্ঞান অবস্থাতে খায় কি করে, তাদের বলছি। অজ্ঞান টা থাপ্পড় খেয়ে কিংবা মাথা ফাটিয়ে করানো হয়নি। ৫ দিন না খেয়েই মুলত অজ্ঞান হয়েছে। অজ্ঞান বলতে দুর্বলতার কারণে হুশ ছিলো না বলা চলে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই এতোদিন পর খাবার পেয়ে খাওয়ার কথা। আর যেহেতু পানি চাইতে পেরেছে ওই অবস্থাতে তাই খেতে পারা টা আমার কাছে মোটেও বেশি বেশি মনে হয়নি। আমি গল্পে আজগুবী কোনো কিছু না রাখার ই চেষ্টা করি।গল্প কে যথাসম্ভব বাস্তবতার আংগিকে করার চেষ্টা করি। জানিনা এর পরো কতোটা সফল হতে পারি।তারপর ও বলছি ভুল ত্রুটি মানুষের ই হয়, তবু আমার কাছে ওটুকু ভুল কিছু মনে হয়নি।ধন্যবাদ সবাইকে।
হ্যাপি রিডিং 🙂)