মন গহীনে পর্ব-০৭

0
309

#মন_গহীনে

#পর্বঃ৭

#দোলন_আফরোজ

ক্লাসে গিয়ে তিথী ফাহিম কে হাই দিলো। ছেলেটা এটা দেখে মাথা নিচু করে ফেলে। তিথীকে যেনো সে দেখেইনি।কিছুই বুঝতে পারছে না তিথী। কাল তো সব ঠিক ঠাক ই ছিলো। আর আবার এর কি হলো।যাইহোক সব ভাবনা চিন্তা রেখে ক্লাসে মনোযোগ দেয় সে। ক্লাস শেষ হলে জিজ্ঞেস করে নিবো নে।
ক্লাস শেষে সে নিজেই ফাহিমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

এই কি সমস্যা তোমার, এড়িয়ে যাচ্ছো কেনো তুমি আমায়?

ভয়ে কাচুমাচু হয়ে, না এড়িয়ে যাবো কেনো।

নোটস গুলো এনেছো?

মাথা নিচু করেই উত্তর দেয়, আনতে পারিনি।

তিথীর যেনো কান্না এসেই যাচ্ছে। সামনে এক্সাম, এই চ্যাপ্টার টা ধরতে ধরতে আবার সেই এক্সাম এর আগে আগে ধরবে। তখন এই শর্ট টাইমে কিভাবে আয়ত্ত করবে সে। ভেবেই কান্না পেয়ে যায় তার।
তুমি কাল বলেছিলে আনবে। আর আমকে বুঝিয়েও দিবে।( ছলছল চোখে)

আসলে নোটস গুলো আমি পাচ্ছিনা, তাই আনতে পারিনি।

এখন আমি কার কাছে পাবো! বলেই মন খারাপ করে চলে যায় সে।

স্কুল ছুটির পর আজ আর কাব্য নিতে আসেনি ওকে। আসলে ওদের ও ফাইনাল সেমিস্টার চলছে। পড়াশোনার চাপ বেশি। আর তাছাড়া ওর নিজের ও কিছু কাজ আছে। তাই যথারীতি ওই দুজন চেলা ই তিথীর রিক্সার পিছু পিছু যায়।

তিথী বেশ অবাক হয় কাব্য আজ কোচিং এর জন্য ও নিতে আসেনি। অবাক হলেও ব্যাপার টা ভালোই লাগছে তার। কাবির সিং টা পিছু ছাড়লেই হয়।কাব্য তানিয়া বেগম কে ফোন করে জানিয়েছে আজ সে আসতে পারবে না। তাই তানিয়া বেগম ই মেয়েকে নিয়ে কোচিং এর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যায়। বিকেলের নাস্তা রেডি করে গেছেন। তমা বাসায় রয়েছে। তারেক রহমান এলেও সমস্যা নেই। তমা শুধু এক কাপ চা করে দিবে, আর তানিয়া বেগম ফিরে বাকি নাস্তা দিবেন।

ওদের ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তানিয়া বেগম ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে ঢুকে যায়। তিথী ও ফ্রেশ হতে চলে গেছে। নাস্তা করে পড়তে বসতে হবে।

ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই ওর চোখ গিয়ে কপালে উঠে। এম্মা! আপনি এখানে? আমার বিছানায় কি করছেন?(কাব্য সটান হয়ে গা এলিয়ে দিয়েছে বিছানায়)

বিরক্তিকর চাহনিতে তাকায় শুধু তিথীর দিকে। কিছু বলে না।

তিথী রেগে বলে, এই আপনাকে আমার রুমে কে এলাউ করে হ্যা? আমার বাড়িটাকে নিজের বাড়ি বানিয়ে নিয়েছেন ঠিক আছে, এখন আমার ঘর টাকেও নিজের ভেবে বসে আছেন। যখন ইচ্ছে এসে পরবেন।

চুপচাপ গিয়ে এক কাপ চা নিয়ে আসো। খুব মাথা ধরেছে।

মোটেও না।আমি যাবো না।কথাটা খুব জুড়ে চেচিয়ে টেনে টেনে বল্লো।

ওকে নো প্রবলেম। আমার আবার মাথা ব্যথা করলে না ঘুম দিলে হয় না। ঘুমিয়েই নেই তবে আমি । আর হ্যাঁ আমি এখন ঘুমিয়ে গেলে তোমারি কিন্তু লস।

আপনি ইচ্ছে করে আমাকে রাগানোর জন্য এমন করেন তাই না?আমি আম্মু কে আজ ই বলে দিবো সেই কিডন্যাপার টা আপনি ই।তখন দেখবো আপনি কি করে পুট করে আমার ঘরে যখন তখন চলে আসেন।

আচ্ছা বলে ফিরে আসার সময় চা আনতে ভুলো না যেনো।

আপনি সত্যিই একটা পঁচা লোক,, খুউউউব পঁচা।

তা আমি জানি।চা টা কি সত্যিই আনবা না?

তিথী গাল ফুলিয়ে চেয়ার টেনে বসে বলে। না না না।

তখন ই তমা চা আর সাথে পিয়াজু নিয়ে রুমে আসে। আর তিথীর জন্য হরলিক্স।এই কদিনে কাব্যর সাথে তমার সম্পর্ক টা স্বাভাবিক হয়েছে। একবারে ভাই বোন এর মতো।

তমা কাব্য কে চা দিয়ে বলে, ভাইয়া তোমার চা।কাব্য ও উঠে বসে হাসি মুখেই চা নেয়। তমা কে জিজ্ঞেস করে আচ্ছা কোনো কারণে কি ছোট বেলায় তিথী হারিয়ে গেছিলো আর এই মেয়েটাকে তোমরা কুড়িয়ে এনে তিথীর জায়গায় বসিয়ে দিয়েছো?

তমা অবাক হয়ে একবার কাব্যর দিকে আর একবার তিথীর দিকে তাকায়। তিথী মুখ টা বাংলার পাঁচ এর মতো করে রেখেছে। তমার বুঝতে আর বাকি নেই কিছু একটা বোধহয় হয়েছে। ( তমা কাব্যর তিথীকে নিয়ে পাগলামি করা টা কিছুদিন আগেই শুনেছে তানিয়া বেগম এর মুখে। আর এখনো তিথীকে কতোটা ভালোবাসে তা সে নিজেই বুঝতে পারে।) তাই সে কাব্যর দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। বলে কি হয়েছে?

এতো পুরাই তোমার উলটা। আচ্ছা ও হওয়ার পর কি কেউ ওর মুখে মধু দেয়নি?সবসময় এমন অগ্নিমূর্তি হয়ে থাকে কেনো।

তোর এই ভাই হুটহাট করে আমার রুমে চলে আসে কেনো আপুটি? তোর রুমে নিয়ে যেতে পারিস না? তোর ভাই তোর রুমে যাবে, আমার রুমে উনার কি?

এমা তুমি বলোনি ভাইয়া, তুমি যে ওকে পড়াতে আসছো?

আমি কেনো উনার কাছে পড়তে যাবো?

হুম তাই তো। আমার কাছে কেনো পড়তে যাবে। আমার কাছে পড়লে কি আর ছেলেদের সাথে হ্যান্ডশেক করতে পারবে।

এবার তমা অবাকের শীর্ষে পৌঁছে তিথীর দিকে তাকায়।

একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবেন না বলছি। আর করলেই বা আপনার কি তাতে? আপনি এক্ষুনি বেড়িয়ে যান আমার ঘর থেকে।

এবার কিন্তু তুই বেশি বেশি করছিস তিথী। তোর ম্যাথ কোন চ্যাপ্টার নাকি বাকি রয়ে গেছে ভাইয়া তো ওই নোটস গুলোই কালেক্ট করেছে আর তোকে বুঝিয়েও দিবে।

এবার তিথীর চোখ পরে টেবিলে রাখা নোটস গুলোর উপর। ঠোঁট উলটে বলে এটা আগে বললেই হতো।

কি খাবে তারাতাড়ি খেয়ে চুপচাপ খাতা কলম নিয়ে রেডি হও। অমনোযোগী স্টুডেন্ট আমার একদমই পছন্দ না। আর পড়ার সময় আমার একদম ই তাল বাহানা পছন্দ না। বলেই চায়ে চুমুক বসায়। তমা ও আর কথা না বাড়িয়ে উঠে চলে যায়।।

তিথী হরলিক্স টুকু শেষ করে ফু দিতে দিতে গরম পিয়াজু ঠান্ডা করায় লেগে পরে।

সময় নষ্ট করছো কেনো.?

আসহায় মুখ করে, তো খাবো ও না?

কুইক।ধমক দিয়ে।

ভয়ে তিথী একবারেই দুটো পিয়াজু মুখে পুড়ে দেয়। দুটো একসাথে মুখে দেয়াতে চিবুতে কষ্ট হচ্ছে তাই কোনো রকমে গেলার চেষ্টা করতেই গলায় আটকে যায়। মুহূর্তেই চোখ দুটো বড় বড় হয়ে লাল হয়ে যায়।
ওর এই অবস্থা দেখে কাব্য সাথে সাথে পিঠে জোরে জোরে হাত দিয়ে উপর নিচ করে লম্বা লম্বা করে ডলতে থাকে।এতে কিছুটা স্বাভাবিক হয় সে৷ তখন পানি নিয়ে এসে মুখের সামনে ধরে। ঢক ঢক করে পানি টুকু খেয়ে লম্বা একটা শ্বাস টানে সে। যেই চোখ মেলে তাকায় দেখে কাব্য অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে কি?

আমিও তো তাই বলছি, কি?

এখন আবার কি করলাম আমি? আপনি ই তো বলেছেন কুইক খেতে।

তাই বলে দুটো এক সাথে গিলে গলায় আটকে অক্কা পেতে বলেছি? ধমকের স্বরে।

আপনি সব সময় এমন করেন কেনো? ঠোঁট ভেংিগয়ে।

কাব্য স্বাভাবিক হয়ে বলে, এখন ঠিক আছো?

তিথী ছোট করে উত্তর দেয়, হুম।

কাব্য বুকে হাত দেয়। হৃদপিন্ড টা অস্বাভাবিক ভাবে লাফাচ্ছে। এই বুঝি তার প্রান পাখিটা উড়াল দিতো। তিথীকে কিছু বুঝতে না দিয়ে তিথীর পাশেই একটা চেয়ার টেনে বসে। হয়েছে এবার? শুরু করতে পারি আমরা? তিথী ও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে।
কাব্য ম্যাথস বুঝাচ্ছে তিথীও খুব মনোযোগ সহকারে বুঝে নিচ্ছে সব। তিথী এক পায়ের উপর আরেক পা উঠিয়ে ডান হাতের কনুই টা টেবিলে ঠেকিয়ে, আর আংগুল গুলো মুঠো করে থুতনির নিচে ঠেকিয়ে পা নাড়াতে নাড়াতে কাব্যর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।

অসাবধানতায় প্লাজুটা কিছুটা উপরে উঠে যায়। খয়েরী কালার প্লাজু উপরে উঠে যাওয়াতে তিথীর ফর্সা পায়ের পায়েলটা চোখে পরে কাব্যর। ফর্সা পা টা কি কামনীয় লাগছে। মুহূর্তেই কাব্যর সারাশরীরে কেমন যেনো শিহরণ বয়ে যায়। বুকের ভিতর ঢিপ ঢিপ শুরু হয়ে যায়।
চোখ সরিয়ে নিয়ে লম্বা একটা শ্বাস টেনে নিজেকে কন্ট্রোল করে নেয় সে।তারপর তিথীর চোখে চোখ রেখে বলে, বালিকা সিডিউস করতে চাইছো আমায়?
চোখ বড় বড় করে তাকায় তিথী কাব্যর দিকে। তারপর পা নাড়ানো থামিয়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে আসতে করে প্লাজুটা কিছুটা নামিয়ে লাজুক ভংগীতে পড়ায় মনোযোগ দেয়। আনমনেই হাসে কাব্য।

সব ম্যাথস বুঝিয়ে দিয়ে কাব্য এবার করতে দেয় তিথীকে। তিথীও বাধ্য ছাত্রীর মতো সব গুলো ম্যাথ করে নেয়। খাতা দেখে তো কাব্যর মেজাজ চরম বিগড়ে যায়। মাত্র দুটো ম্যাথ হয়েছে। বাকি পাঁচ টাই ভুল। খুব জুরেই ধমক দেয় সে। পড়ানোর সময় মনোযোগ কই থাকে তোমার? দুদিন পর এক্সাম, মাত্রই বুঝালাম আর এখনই গুলে খেয়েছো? আগেই বলেছি অমনোযোগী স্টুডেন্ট আমার পছন্দ না।

এবার তিথী কেঁদেই দেয়। আপনি সব সময় আমাকে ধমকান। ঠোঁট উলটে বলে, কেউ ধমকায় নাতো আমায়। সবাই আদর করে তো। আপনি অনেক পঁচা। খুব খারাপ, পড়বো না আপনার কাছে আর।

তিথীর এমন ফেস দেখে এত্তো এত্তো আদর পাচ্ছে কাব্যর। ইচ্ছে করছে এক্ষুনি বুকের ভিতর টায় ঢুকিয়ে নিতে।নিজেকে সামলে নিয়ে ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে, আদর করলে আদর নিতে পারবে? আমার আদর সহ্য করার ক্ষমতা আছে?

কাব্যর চোখ দুটোতে যেনো ভয়ংকর নেশা আছে। তিথী এক পলক ওদিকে চেয়ে থমকে গেলো। কান্না নিমিষেই শেষ তার। ছোট করে একটা ঢোক গিল্লো সে।

*************
এভাবেই কেটে গেছে কিছুদিন। তিথীর এক্সামের আর খুব বেশি দেড়ি নেই। এখন পড়াশোনার চাপ অনেক।স্কুল ছুটির পর একদিন স্কুল থেকে বেরুনোর সময় দুটো সিনিয়র ভাইয়া ডাকে তিথীকে।( তিথীর স্কুল টা স্কুল এন্ড কলেজ) তিথী শুনেও না শোনার ভান করে এড়িয়ে যেতে নেয়। পাশ থেকে পিয়া বলে এরা কলেজের সবচেয়ে বাজে ছেলে, তাকাবি না ওদের দিকে।তিথীও চলে যেতে নেয়। তখন ছেলেটা সামনে এসে দাঁড়ায়। ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না?

তিথী অবাক হওয়ার ভান করে বলে আমাকে ডাকছেন? কেনো?

তুমি সিরাত মুনজারিন তিথী না?

হুম।

কাল ছুটির পর আমার সাথে দেখা করবে। আর বাসায় বলে আসবে ফিরতে লেট হবে। আশা করি বাসায় সমস্যা হবে না।

ভ্রু কুচকালো তিথী। কিছু বলতে যাবে তার আগেই চলে যায় ছেলেটা।তিথী ও আর বেশি একটা না ভেবে চলে যায়।

পরদিন যথারীতি স্কুল ছুটির পর তিথী বেরিয়ে যায়। আজ ও কাব্য আসেনি। ওর একটা চেলা গেছে রিক্সা আনতে আরেকজন দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে। তখনই কালকের ছেলেটা এসে হাত ধরে নিয়ে যেতে নেয় তিথীকে। প্রচন্ড রেখে জিজ্ঞেস করে কি করছেন? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়।

ডেইট এ।অসুবিধা নাই ভালো রেট দিবো।

কিছুই বুঝতে পারে না তিথী। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারে ছেলেটার উদ্দেশ্য ভালো না। নিজেকে ছেলেটার হাত থেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে সে। না পেরে সজোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয় ছেলেটাকে।
ছেলেটাও তার পুরুষালী হাতে আরো জোরে থাপ্পড় মারে তিথীকে। সাথে সাথেই ঠোঁটের পাশ টা কেটে যায় তার।নোংরা একটা গালি দিয়ে বলে ওই কি মনে করছোস তুই কিচ্ছু জানি না? ৫ দিন কোন ভা*তা*র এর লগে থাইকা আসছোস? আর এখন এমপির পুতের লগে ফষ্টি নষ্টি করোস।
সাথে থাকা ছেলে গুলো কে বলে এই মা*গিরে গাড়িতে তোল।কয়েকজন এসে জোর করে গাড়িতে তোলতে যায়।তিথীর বান্ধবী পিয়া আর সাথের কয়েকটা ক্লাসমেট ছেলে এসে ওই ছেলে গুলোর সামনে কাকুতি মিনতি করতে থাকে।ততক্ষণে তিথীকে গাড়িতে তুলা হয়ে গেছে।তখন ই সেখানে কাব্য এসে হাজির হয়।(হুম ওর চেলারাই ফোন করেছিলো)

দুই একটা ছেলে এখনো গাড়িতে উঠেনি। আর তিন চার জন গাড়িতেই ছিলো।নিচে থাকা ছেলে গুলো কাব্য কে দেখে শুকনো ঢোক গিলে। যদিও তাদের উপর উপরমহলের হাত আছে। তবু তারা কাব্যর রক্তলাল চোখ জোড়া দেখে ভয়ে নেতিয়ে যায়।

কাব্য সামনে এসে বলে কে টাচ করেছিস ওকে?

কোনো কথা নাই।

আবারো চিৎকার করে বলে কে করেছিস টাচ ওকে।পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে কাব্যর চিৎকারে। এতোক্ষণে টিচার রাও এসে জড়ো হয়েছে এখানে।

যেই ছেলেটা তিথীকে থাপ্পড় মেরেছিলো সে এগিয়ে এসে বলে তুমি এমপির ছেলে হতে পারো। তা বলে আমাদের পাওয়ার ও কিন্তু কিছু কম না। বলতেই ছেলেটাকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে কাব্য।ভয়ে ছেলেটার সাথে থাকা কেউ আর এগিয়ে আসে না।
কাব্য মারছে আর চিৎকার করে বলছে কোথায় হাত দিয়েছিস তুই জানিস? কাব্যর কলিজায় হাত দিয়েছিস। এই হাত দিয়ে মেরেছিস তুই আমার কলিজায়! এই হাত! বলেই হাত টা উল্টো দিকে ধরে কয়েকটা মুচড় দেয়। কড়মড় করে উঠে হাত টা ছেলেটা কুঁকিয়ে উঠে। এমন ভাবে ছেলেটাকে মারছে যে এখন মরেই যাবে। তখন কাব্যর সাথে থাকা লোকজন আর কলেজ টিচার রা এসে কাব্যকে অনেক কষ্টে থামানোর চেষ্টা করে। এতোক্ষণে কে যেনো পুলিশকেউ কল করে দিয়েছে। পুলিশ এসে বাকিদের ধরে নিয়ে যায় আর আহত ছেলেটাকে হস্পিটালে।

এতোক্ষণে তিথীকে স্কুলের ম্যাম আর তিথীর বান্ধবীরা ধরে ছিলো। তিথী গলা কাটা মুরগীর মতো কাঁপছে। কাব্য গিয়ে তিথীর সামনে দাঁড়াতে তিথী ভয়ে আরো দুকদম পিছিয়ে যায়। তিথীর ঠোঁট থেকে রক্ত পরছে দেখে কাব্য আহত চোখে ধরতে গেলেই তিথী ভয়ে ম্যাম কে জড়িয়ে ধরে। ম্যাম ও ওকে শক্ত করে ধরে। কাব্য কে মাথা নাড়ায় কাছে না আসতে। তিথীর ঠোঁট থেকে রক্ত পরা দেখে কাব্য পাশের দেয়ালে সজোরে এক ঘুষি বসিয়ে দেয়। কেনো খু*ন করে ফেলতে পারলো না সে ছেলেটাকে।

তিথীকে টিচার্স রুমে নিয়ে বসানো হয়। কাব্য ও সেখানে আছে। গাড়ি কল করেছে আসতে। আসতে দেড়ি হচ্ছে তাই অপেক্ষা করছে। আর তিথীর ও এর মাঝে স্বাভাবিক হওয়া প্রয়োজন।

কিছুক্ষণ পর গাড়ি আসতেই পিয়া আর একটা ম্যাম তিথীকে নিয়ে গাড়ি তে বসিয়ে দেয়। কাব্য গিয়ে পাশে বসাতে সে কাচুমাচু হয়ে যায়। সারা রাস্তা দুজনেই চুপচাপ। তখন কাব্য ওদের মারতে মার‍তে কি বলেছিলো তার কিছুই শুনেনি তিথী।সে তখন যেনো কোনো ঘোরের মাঝে ছিলো। কাব্য তাকাতে পারছে না তিথীর দিকে। রাগে মাথাটা ফেটে যাচ্ছে যেনো। হঠাৎ ই তিথী প্রশ্ন করে, আপনি খুশী তো? এটাই তো চেয়েছিলেন আপনি।

কাব্য করুণ চোখে তাকায় তিথীর দিকে। বুকের ভিতর টা হু হু করে উঠে। রাগের বসে কি করে বসলো সে।আজ আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারলো না তিথীর সামনে। চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো।




চলবে….