মাই এক্স পর্ব-১১

0
165

মাই এক্স (১১ম পর্ব)
রাজিয়া সুলতানা জেনি

১১
আজকে বিকেলে সুমন আসবে। পুরোনো দিন সিম্যুলেট করতে চায়। আগের মত একসাথে রিক্সা করে ঘুরবে। সেদিন ওর বাসা থেকে ফিরে আসবার সময় এটাই ছিল সুমনের প্রস্তাব। তার আগে বেশ অনেক্ষণই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সুমনের আলাপ হয়। এখন কি করছে, কি কি বিষয় আশয় করেছে, সব বলল। ওর পার্টী বিরোধী দলে থাকবার সময় যেহেতু অত্যাচারিত হয়েছিল, তাই প্রাইম মিনিষ্টার ওকে স্পেশালভাবে ট্রিট করেন। ওকে তিনি প্রাইম মিনিষ্টারের অফিসে এপিএস করে নেন।
আমার কথাও জানতে চাইল। মাস্টার্সের পরে কি কি করেছি। জানালাম, অনলি বিয়ে। চাকরী বাকরীর চেষ্টা করিনি। বরের অঢেল না হলেও পর্যাপ্ত টাকা আছে। নিজের খরচ চালাবার জন্য টাকার অভাব হয় না। তাই, চাকরী ট্রাই করিনি। আর তাছাড়া, এতো বড় ম্যানেজারের বউ চাকরী করে শুনলে লোকে কি বলবে? কথাগুলো চুপচাপ শুনল। উত্তরে কিছু বলল না। হয়তো ভাবল, বড়লোকের বউ হওয়ার জন্য আমার বেশ দেমাগ হয়েছে। তা যে একবারে হয়নি, বলব না। বাট কার না হয়?
যদিও স্বভাবিক ভাবেই গল্প করছি, তবে মনে মনে সুমনকে অ্যাসেসও করছি। সুমনের বিভিন্ন গল্প শুনে ততোক্ষণে বুঝে গেছি, এই মানুষটি এখন অসীম ক্ষমতাধর। চাইলে যাকে খুশি, নিমিষেই গায়েব করতে পারে। থানা পুলিশ কারোরই ক্ষমতা নেই ওর টিকির আশে পাশে আসে। সেই সুমন এখন আমার প্রতিপক্ষ। প্রতিপক্ষ ঠিক না, এই মুহুর্তে আমি ওর হাতের পুতুল।
তাই যখন আমকে কাছে পেয়েও কিছু করল না, আই মিন একজন সুন্দরী মেয়ের সাথে প্রাক্তন প্রেমিক, প্রেমিকাকে বাগে পেয়ে যা করতে চায়, তেমন কিছুই যখন করল না, তখন সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। ঘুরতে যাওয়ার অফারে তো মনে হয়েছিল, এই লোক কি পাগল হয়ে গেছে নাকি? আসলে এতো বাজে কিছু ভেবে গিয়েছিলাম যে এমন রিক্সা করে ঘুরতে যাওয়ার অফার শুনে কিভাবে রিয়াক্ট করব, ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ পরে দেখলাম কেমন রিলিভড ফিল করেছি।
একটা ব্যাপার খটমট ঠেকছিল, বুঝতে পারছিলাম, কোথাও কোন ভুল হচ্ছে। আর তা হচ্ছে, এটা সুমনের প্ল্যান হতে পার না। যে সুমনকে চিনতাম, ও তো এমন ইডিওট ছিল না। এভাবে, জোর করে, আর যাই হোক, কোন মেয়ের মন পাওয়া যায় না, একথাটা না বোঝার মত গাধা তো ও না। তাহলে? কেন করছে? আচ্ছা, জেলে কি খুব টর্চার করেছিল ওকে? মানষিক ভারসাম্য কি হারিয়ে ফেলেছে?

সেদিন অবশ্য একটা লাভ হয়েছিল। শাহেদ জীবিত, এই তথ্যটা পেয়ে গিয়েছিলাম। অন্ততঃ সুমনের কথা যদি বিশ্বাস করি। একবার অবশ্য ভেবেছিলাম, প্রমাণ চাইব। পরে মত পাল্টাই। আগে ওকে খানিকটা বুঝে নিই। কি চাইছে, সেটা পরিস্কার হওয়ার আগে, এমন কোন কথা বলা ঠিক হবে না। শুনে ও বিগড়ে যেতে পারে।
আরও একটা ব্যাপার ভেবে ভাল লেগেছিল, এই মুহুর্তে ও রিভেঞ্জ নেয়া বলতে যা ভেবেছিলাম, তেমন কিছু করতে চাইছে না। পুরোনো দিনে ফিরে যাওয়ার কেবল একটা সুযোগ চাইছে। যে অবস্থার কারণে আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছিল, সেই অবস্থাটাকে মুছে দিয়ে, সেই সময় থেকে পুরো কাহিনী আরেকবার শুরু করার চেষ্টা করতে চাইছে। মাঝের দেড়টা বছর মন থেকে মুছে ফেলতে বলছে। বাট… এটা কি সম্ভব? প্রেমিককে ভোলা আর স্বামীকে ভোলা কি এক? আর সেটাও এভাবে? মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে?
ঠিক করেছি, আগামী কিছুদিন, ওর কোন কথায় অমত করার ঝুঁকি নেব না। ইডিয়েটই হোক আর ম্যানিয়াকই হোক, ওকে সহ্য করা ছাড়া এ মুহুর্তে আর কোন উপায় আমার নেই। কখন যে ও কি করে বসবে, কে জানে? শাহেদের জীবন ঝুঁকির ভেতরে ফেলা যাবে না।
বিছানা ছেড়ে উঠলাম। ব্রেকফার্স্ট করতে মন চাইছে না। ডাইনিং টেবিল দেখলেই শাহেদের কথা মনে পড়ছে। ও কি খেয়েছে আজকে? জেলে রেখেছে, না কোন সেফ হাউজে? পিছমোড়া করে বেঁধে রেখেছে? জানি শাহেদের জন্য ভেবে কিছু করতে পারব না, তারপরও শাহেদের জন্য চিন্তা করা থামাতে পারছি না। বারবার একটা চিন্তাই আসছে, এখন কি করব? কারো কাছে কি হেল্প চাইব? সাহস পাচ্ছি না। ও যেভাবে ওর গোয়েন্দা ছড়িয়ে রেখেছে, আমার ধারণা আমার প্রতিটা পদক্ষেপের ওপর ওর নজর আছে। ফোনও হয়তো ট্যাপ করছে। কে জানে?

কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। নিজেকে শক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। মনকে বলছি, ‘যতক্ষণ ডেফিনিট কোন খবর না পাচ্ছি, ততোক্ষণ এটা বিশ্বাস করে চলতে হবে, শাহেদ বেঁচে আছে। তা নইলে আরও ভেঙ্গে পড়ব। হতাশা পেয়ে বসবে।’ গতকাল থেকে এটাই বিশ্বাস করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আজকে অনুভব করলাম, হচ্ছে না। মন কেবল চাইছে, তথ্যটা ভ্যারিফাই করতে।

এ ব্যাপারটা নিয়ে যতই ভাবছি, ঘুরে ফিরে একজনের কথাই মাথায় আসছে। শেলি। যদি কেউ হেল্প করতে পারে, শেলিই পারবে। শেলিকে কি জিজ্ঞেস করব? তার আগে জানা দরকার, ওর হাজব্যান্ড সুমনের কেমন বন্ধু? ক্লোজ কেউ? ইউনিভার্সিটিতে কখনও দেখেছি বলে তো মনে হল না। যেভাবেই হোক, সমস্যাটা খুলে বললে, শেলি কি উনাকে দিয়ে সুমনকে একবার অন্ততঃ রিকোয়েস্ট করাতে পারবে না? রিকোয়েষ্ট যদি না ও করে, অ্যাটলিস্ট ডেফিনিট খবরটা কি জেনে দেবে না? কিংবা এ ব্যাপারে ওর বরের ধারণা তো জানা যাবে।
ফোন করলাম। একবার রিংয়ের পরেই শেলি ধরল। বাসায়ই আছে এখনও। জানতে চাইল
— কি রে? সকাল সকাল?
— হ্যা রে… আসলে একটু সমস্যায় পড়ে ফোন করলাম।
— কি ব্যাপার?
— তোর সাথে একটু দেখা করা যাবে?
— যাবে না কেন? ব্যাংকে আয়। চিনিস তো?
জানালাম চিনি। এগারোটার দিকে যেতে বলল। কথা শেষ করে ঘড়ি দেখলাম, দশটা বাজতে দেরী আছে। এসময়ে আপাততঃ কিছু করার নেই। কিছু রান্না করতে মন চাইছে না। ফ্রিজে পাউরুটি ছিল, ওটা দিয়েই ব্রেকফার্স্ট সারলাম। সময় কাটাতে শাওয়ার নিলাম। আলমিরা থেকে পোশাক নিতে গিয়ে শাহেদের পোশাকগুলোর দিকে নজর পড়ল। মনটা হু হু করে উঠল।
দ্রুত পোশাক পাল্টালাম। ইউজুয়ালি বান্ধবীদের কারো বাসায় গেলে, একটু গর্জিয়াস পোশাক পড়ে যেতাম। নিজের স্ট্যাটাস দেখানোর কোন সুযোগ ছাড়তাম না। আজ সিক্সথ সেন্স জানান দিল, তেমন কিছু করা যাবে না। ইনফ্যাক্ট এখন থেকে এমন কিছু করা যাবে না, যা দেখে শেলি ভাবতে পারে, শো অফ করতে গেছি। নিজেকে যতটা সম্ভব লো প্রোফাইল রাখতে হবে। সাধারণ একটা শাড়ী পড়লাম। সাজগোজও তেমন করলাম না। গাড়ীও সঙ্গে নিলাম না।
ট্যাক্সি ক্যাব নিতে গিয়েও নিলাম না। কেন যেন সেই ইউনিভার্সিটি লাইফের মত রিক্সা নিলাম। সুমনের ইফেক্ট? কে জানে? কতদিন পরে রিক্সায় উঠলাম? বাবার বাসায় আমার গাড়ী ছিল না, রিক্সা করেই স্টুডেন্ট লাইফ কাটিয়েছি। শাহেদের সাথে বিয়ের পর থেকে গাড়ী আসে জীবনে। এরপর থেকে আর রিক্সায় চড়া হয়নি। শাহেদের সাথে যখন বিয়ে হয়ে, তখনই ও অফিসে থেকে গাড়ী পেয়ে গেছে। যে ক’জন বান্ধবীর তখন বিয়ে হয়েছিল তাদের কারো হাজব্যান্ডের তখন গাড়ী ছিল না। মাস্টার্স তখনও শেষ হয়নি। পরীক্ষার আর তখন মাস ছ’য়েক বাকী। এ বাসা থেকেই বাকীটা সেরেছিলাম। প্রথম কিছুদিন তো সবাইকে দেখানোর জন্য গাড়ী চড়ে ইউনিভার্সিটি গিয়েছিলাম। ওর অসুবিধা হচ্ছে বুঝতে পেরেও কাজটা করছিলাম। শাহেদ অবশ্য ব্যাপারটা নিয়ে কিছু বলেনি, বরং ব্যাপারটা অন্যভাবে ম্যানেজ করে। আমার জন্য ও আরেকটা গাড়ী কিনেছিল।
শেলি ব্যাংকেই ছিল। আমাকে দেখে ইশারায় বসতে বলল। কাস্টমারদের জন্য নির্ধারিত কিছু সোফা ছিল। সেটার একটায় বসলাম। এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। কাস্টমারদের চেয়ে বেশি করে চোখ যাচ্ছিল কর্মরত মেয়েগুলোর দিকে। বেশ অনেক কজন মেয়েই কাজ করছে। আমারও একসময় স্বপ্ন ছিল, চাকরী করার। ব্যাংকে না অবশ্য, ইউনিভার্সিটিতে।
সুমনের সাথে তখন পুরোদমে প্রেম চলছে। অনেকটাই সিওর, ওর রেজাল্টের পরই ও ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে জয়েন করবে। আমি কি করব, তা নিয়ে তেমন কোন প্ল্যান ছিল না। সেটা শুনে সুমন বিরক্ত হয়েছিল। বলেছিল, ইডিওটের মত কথা বল কেন? পড়াশোনা কেন করছো? ভাল বর যোগাড়ের জন্য? না নিজের পায়ে দাঁড়াবার জন্য? সারাক্ষণ সুমন উৎসাহ দিত, তোমাকেও টপ করতে হবে। আর ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করতে হবে। একসাথে চাকরী করব।
সেটা অবশ্য আর হয়নি। অনার্সে টপ না করলেও রেজাল্ট ভাল ছিল। মাস্টার্সেও টপ করতে পারিনি। তবে ফার্স্ট ক্লাস পাই। এরপরে তো… পুরোপুরি মিসেস শাহেদ…
— সরি, একটু দেরী হয়ে গেল।
শেলি প্রথম কথাটা আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলেছিল। তখন সম্ভবতঃ আমাকে পুরোপুরি লক্ষ্য করেনি। এবার করল। আমার দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠল। বলল
— একি অবস্থা তোর?
আমিও অবাক হলাম। সকালে তৈরি হওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম চেহারা কিছুটা মলিন লাগছে। বাট আঁতকে ওঠার মত মনে হয়নি। স্মিত হেসে বললাম
— কৈ? কিছু না তো।
শেলি ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকাল। এরপরে বুঝতে পেরেছে এমন ভঙ্গি করে বলল
— সুমন ভাই, রাইট? তোর বর সুমন ভাইকে নিয়ে সন্দেহ করছে, তাই না?
শেলির দিকে তাকালাম। ফ্যাকাশে একটা হাসি দিয়ে বললাম
— শাহেদকে সাদা পোশাকের পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।
— হোয়াট?
শেলি প্রায় আঁতকে উঠল। আশেপাশের কিছু লোক আমাদের দিকে তাকাল। ব্যাপারটা লক্ষ্য করে শেলি গলার স্বর নামাল। ফিসফিস করে বলল
— কি বলছিস? কেন?
— জানি না।
শেলি অস্থির হয়ে এদিক ওদিক তাকাল। এরপরে জানতে চাইল
— থানায় গিয়েছিলি?
মাথা দুদিকে নেড়ে জানালাম ‘না’। শেলির দিকে তাকালাম। চোখের পানি আটকে রাখতে পারছি না। ও দ্রুত নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বুঝলাম পরিচিত কাউকে ফোন করতে চাইছে। জানতে চাইলাম
— কাকে করছিস?
ফোনের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিল
— সুমন ভাইকে। উনার অনেক জানাশোনা। একটা ফোন করে দিলে, এক্ষুনি বাপ বাপ বলে…
ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ওর হাত চেপে ধরলাম। শেলি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। কি ভাবল জানি না, বলতে শুরু করল
— এমন বিপদের সময়, কে কি ভাবল, তা নিয়ে ভাবলে চলে না।
কান্নার দমকে গলা থেকে কথা বেরোচ্ছে না। মাথা দুদিকে নেড়ে শুধু বোঝালাম ব্যাপারটা চাইছি না। শেলি তখনও বুঝে উঠতে পারছে না কেন আমি বাধা দিচ্ছি। ও অন্য হাত দিয়ে আমার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করছি কিছু বলার। অনেক কষ্টে কেবল বলতে পারলাম
— সুমনই করিয়েছে।
কথাটা খুব জোরে বলতে পারিনি। তারপরও শেলির মুখ দেখে মনে হল ও শুনতে পেয়েছে। অবাক হলেও, ‘হোয়াট’ বলে আঁতকে উঠল না। স্তব্ধ হয়ে গেল। এরপরে ধীরে ধীরে চোখ নামিয়ে নিল। এরপরে বলল
— তুই সিওর?
আমি ততোক্ষণে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েছি। শেলির ব্যাবহারে মনে হল, যেন ও এমন কিছু আন্দাজ করেছিল। শেলির দিকে তাকিয়ে অনুনয় করে বললাম
— একটু হেল্প করতে পারবি?
— কি?
— একটু জেনে দিতে পারবি, শাহেদ বেঁচে আছে কি না?
শেলি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকাল। কি যেন ভাবল। এরপরে বলল
— মনে হয় না।
মনে হল, এক ঝটকায় আমার মুখ থেকে সব রক্ত সরে গেল। প্রায় চিৎকার করে বললাম
— কি বলছিস?
শেলি আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকাল। এরপরে বলল
— তুই কি জানিস, তোর বিয়ের আগে শাহেদ ভাই সুমনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। জেলে।
— কি?… শাহেদ?… জেলে?
সম্মতি জানাল শেলি। এরপরে বলল
— তোর সম্পর্কে খোঁজ খবর করতে গিয়ে সুমনের ব্যাপারটা জানতে পারেন শাহেদ ভাই।
— সেটা জানি। আমার সম্পর্কে যে খোঁজ খবর করেছিল, সেটা শাহেদ আমাকে বলেছে।
— শুধু খোঁজ খবর না। রীতিমত সুমন ভাইয়ের কাছে যায়। জেলে গিয়ে ডিটেলস জানতে চায় তোদের সম্পর্ক নিয়ে।
অবাক হয়ে শেলির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। চোখে একরাশ অবিশ্বাস নিয়ে বললাম
— তুই কিভাবে জানলি?
— ও বলেছে। ওরা একই পার্টি করে। সেসময় দুজন একসাথেই জেলে ছিল। তখন থেকেই ওদের ফ্রেন্ডশীপ।
— কি বলছিস তুই?
শেলি ইশারায় বোঝাল, যা বলছে সত্যি। এরপরে বলল
— ভেতরে ভেতরে তখন সরকারের সাথে নেগোশিয়েশান চলছিল।
— তারপর?
— তারপরে সিদ্ধান্ত হয়, ওকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলবে।
ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললাম। কোন রকমে শুধু বলতে পারলাম
— কি বলছিস এসব?
— সুমন ভাই সেজন্যই তোকে বারণ করেছিল, তুই যেন আর না যাস ওখানে। নাহলে তুই ও ঝামেলায় পড়তিস।
আমি অবাক হয়ে তখনও শেলির দিকে তাকিয়ে আছি। ও বলে চলল
— তারপর অবশ্য ঘটনাটা ঘটেনি। সেনাবাহিনী ক্ষমতা হাতে নেয় দেখে… নেহাত কপাল ভাল ছিল সুমন ভাইয়ের।
কথাগুলো শুনে কি রিয়াক্ট করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সুমনের প্রতি কৃতজ্ঞ ফিল করব? না শাহেদের আচরণে অবাক হব? এমন সময় শেলি ভয়ানক তথ্যটা দিল। শুনে মনে হল, সব আশা শেষ। শাহেদকে সুমন কখনই ক্ষমা করবে না। শেলি বলল
— সেদিন শাহেদ ভাইকে সব কথা খুলে বলে সুমন ভাই। রিকোয়েষ্ট করেছিল, বিয়েটা সম্ভব হলে যেন কিছুদিন পিছিয়ে দেয়। বলে যদি মেরে ফেলে, তাহলে তো আর কোন বাধা থাকছে না। আর যদি ছেড়ে দেয় তাহলে যেন…। রিকোয়েস্টটা রাখেনি শাহেদ ভাই। শুধু তা ই না, ফিরে এসে শাহেদ ভাই আরও দ্রুত বিয়েটা সেরে ফেলেন।

চলবে