মাফিয়া ক্রাশ বর পর্ব-১৫

0
2209

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ১৫

বিকেলে রুহি, অভিদ, অনি, রায়হান, তুষার বাড়িতে রওনা দেয়। রুহি আসার সময় অনেক কান্না করেছে এখন গাড়িতে মন খারাপ করে বসে আছে। আনমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
অভিদ রুহির দিকে তাকিয়ে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে
” গাড়ি থামাও ” ড্রাইভার গাড়ি সাইড করে ব্রেক করে। রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” কি হয়েছে গাড়ি থামিয়েছেন কেনো ”

অভিদ কিছু না বলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে রুহির দিকে গিয়ে গাড়ির ডোর খুলে গম্ভীর গলায় বলে
” বের হও ” রুহি জানে অভিদকে এখন কিছু জিজ্ঞেস করলে অভিদ কিছু বলবে না তাই রুহি চুপচাপ বেড়িয়ে আসলো।

চারপাশে তাকিয়ে দেখে অনেক অবাক হলো। ওদের থেকে কয়েক হাত দূড়ে মেলায় ঢোকার রাস্তা। এখানে অনেক বড় মেলা হচ্ছে। অভিদের গাড়ি থামতে দেখে অনিদের আর গার্ডদের গাড়িও সাইডে থামায়। অনি, রায়হান, তুষার, গার্ডরা অভিদের কাছে আসলো
রুহি হা করে অভিদের দিকে তাকালো। অভিদ ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। রুহি অবাক হয়ে বলে
” আপনি এখানে গাড়ি থামিয়েছেন কেনো। ”

অভিদ হাত দিয়ে চুলগুলো পেছনে ঠেলে সামনের দিকে তাকয়ে বলে
” এখানে বাণিজ্য মেলা হচ্ছে। তোমার তো মন খারাপ তাই এখানে নিয়ে এসেছি। মিশু বলেছিলো তোমার মন খারাপ হলে তুমি মেলায় যাও। ”
অভিদের কথা শোন মাত্রই সবার মাথায় বজ্রপাত হলো। অনি মোবাইলের ক্যামেরা অন করে চুল ঠিক করছিলো তবে অভিদের কথা কান পর্যন্ত পৌছতেই স্ট্যাচু হয়ে গেলো। রায়হান, তুষার, রুহি এমনকি গার্ডরা পর্যন্ত হা করে তাকিয়ে আছে।

অভিদ ওদের এভাবে তাকানোর কারণ বুঝতে পেরে গলা ঝেড়ে বলে
” ভেতরে যাবে নাকি বাসায় চলে যাবো ” রুহির তার অবাক হওয়ার রেশ কাটিয়ে উঠতেই বলে
” আপনিও জাবেন ?? ”

অভিদ ভ্রু কুচকে রাগি ভাবে বলে
” তো কি তোমাকে একা ছেড়ে দেবো ”
রুহি সঙ্গে সঙ্গে মাথা নেড়ে না বলে। অভিদ চল বলে এগিয়ে গেলো। রায়হান অনিকে ধাক্কা মাড়তেই অনি নরে উঠলো। রায়হান আর তুষারের দিকে কাঁদোকাঁদো ভাবে তাকিয়ে বলে
” এটা আমার ভাইয়া তো ??? এতো চেঞ্জ হলো কি করে ??”

রায়হান মাথার চুল টেনে অসহায় ভাবে বলে
” সেটাতো আমিও ভাবছি !! যেই ছেলেকে মেলার কথা বললে সবার উপর দিয়ে তুফান যেতো সেই ছেলে কিনা আজকে রুহির মন খারাপ দেখে নিজ থেকে মেলায় এসেছে ?? স্ট্রেঞ্জ !! আমি কবে জেনা হার্টএট্যাক করি। আল্লাহ !!! ” সবাই অভিদের সাথে মেলায় ঢোকে।

মেলায় ঢোকা মাত্রই সব মানুষ অভিদকে দেখে সাইড হয়ে যায়। কিছু মেয়েরা অভিদের সাথে সেলফি নিতে আসলেই গার্ডরা হাতে গান নেয়। এটা দেখে আর একটা মেয়েও এগোয় না। অভিদ দের চারপাশ গার্ড ঘিরে রেখেছে।

রুহি, অনি স্টল ঘুরে ঘুরে চুড়ি, ইয়ারিং কিনছে, ঘুরছে। রায়হান আর তুষার শুধু অভিদকে দেখছে। অভিদের চলে যেতে ইচ্ছে করলেও রুহির জন্য যাচ্ছে না। রুহি আর অনি দোলনায় উঠলো, কটন ক্যান্ডি খেলো, পুরো মেলা ঘুরলো।

রুহিরা ঘোরা ঘুরি শেষ করে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। রুহি গাড়িতে খেয়াল করলো অভিদের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। সম্ভবত রেগে আছে। রুহি মিনমিন করে অভিদকে বলে
” আপনি রেগে আছেন কেনো ” অভিদ রুহির দিকে রাগি চোখ করে তাকাতেই রুহি ঢোক গিলে চোখ ফিরিয়ে নেয়।

বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই সবাই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে যায়। অভিদ হনহন করে তার রুমে চলে যায়। অনি কোমড়ে হাত রেখে বলে
” দেখেছো !! ভাইয়া আমাদের নিজেই মেলায় নিয়ে গেলো এখন নিজেই রেগে গেলো। ”

রায়হান রুমে যেতে যেতে বলে
” অভি মেলায় যাওয়া নিয়ে রেগে নেই। অন্য কারণে রেগে আছে। তোরা রুমে যা ”

অনি আর তুষার তাদের রুমে চলে গেলো। অভিদ কি নিয়ে রেগে আছে সেটা ভাবতে ভাবতে রুহি তার রুমে যায়। রুমে গিয়ে শুনলো অভিদ ফোনে কাউকে রাগিভাবে বলছে
” ওকে গোডাউনে নিয়ে আসবি ” বলে ফোন কেটে ঘুরে দাঁড়ায়।

রুহিকে দেখে গম্ভীর ভাবে বললো
” যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। ” রুহি মাথা নেড়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে খাটে বসে টিভি অন করে হিন্দি ফিল্ম দেখতে থাকে। অভি সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।

অভিদ আরও কিছুক্ষণ কাজ করে ল্যাপটপ বন্ধ করে রুহির পাশে এসে বসে। রুহি আড়চোখে একবার অভিদের দিকে তাকিয়ে আবার টিভিতে মন দেয়। অভিদ রুহির দিকেই তাকিয়ে আছে। রুহির এমন ভাব দেখে হুট করে রুহির হাত চেপে নিজের দিকে ঘুরায়। রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” কি হয়েছে ”

অভিদ রুহির চোখে চোখ রেখে ধীর কন্ঠে বলে
” এখনও কিছু হয়নি তবে তুমি চাইলে সব কিছুই হতে পারে ” রুহি অভিদের খাপ ছাড়া কথা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। অভিদ হালকা হেসে রুহির থুতনি ধিরে রুহির মুখটা উঁচু করে নিজের মুখটা এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে।রুহি অভিদকে এগোতে দেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। রুহিকে চোখ বন্ধ করতে দেখে অভিদ মুচকি হাসি দিয়ে রুহির ঠোট আয়ত্ত করে নেয়। রুহি এক হাতে অভিদের চুল খামছে ধরে অন্যহাতে অভির শার্ট খামছে ধরে। অভিদ দুই হাতে রুহির কোমড় শক্ত করে ধরে।

কিছুক্ষণ পরেই অভিদের ফোনে কল আসে। অভিদ তখনও রুহিকে ছাড়ে না। কিন্তু হঠাৎ কিছু মনে পরতেই রুহিকে ছেড়ে লাফিয়ে খাট থেকে নেমে ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করে অভিদ ওইপাশের কাউকে বলতে বলে। রুহি ওপরপাশের ব্যক্তির কথা শুনতে পায় নি। অভিদ দাতে দাত চেপে রাগি গলায় বলে,
” আসছি আমি, ওকে বেধে রাখ। আর বেশি কথা বললে মুখে কেরোসিন তেল দিয়ে দে ” বলে ফোন কেটে দেয়।

হাত দিয়ে ঠোট মুছে। রুহির কাছে এসে রুহির কপালে চুমু দিয়ে বলে
” আমার আসতে দেড়ি হলে তুমি ডিনার করে ঘুমিয়ে পরো ”
রুহি চোখ তুলে অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” আপনি কোথায় যাবেন। ”

অভিদ চোখ মুখ শক্ত করে সামনে দিকে তাকিয়ে বলে
” আমি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে আসছি। তুমি ঘুমিয়ে পরো। বায় ” বলে দরজা খুলে ধুপধাপ করে চলে যায়। রুহি বিছানায় গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।

অভিদ তার গোডাউনের ভেতরে গিয়ে দেখে একটা ছেলেকে চেয়ারে বেধে রাখা রয়েছে। অভিদ ছেলেটির সামনে যেতেই গার্ড একটা চেয়ার দেয় অভিদকে বসার জন্য। অভিদ চেয়ারে বসে গার্ডকে বলে
” সব রেডি আছে তো। আর ডিটেইলস বলো ”

গার্ড মাথা নেড়ে বলে বলে
” জি স্যার সব রেডি আছে। আর ছেলেটি মা – বাবা, বড় ভাই স্কটল্যান্ডে থাকে। ছেলেটা এখানে বন্ধুর সাথে ঘুরতে এসেছে। ফ্যামিলি মেম্বার বাংলাদেশেই থাকতো তবে ১৫ বছর আগে স্কটল্যান্ডে চলে গিয়েছিলো। রিদয় আর তার বন্ধুরা অনেক মেয়েদের সাথে রিলেশন করে পরে ডেট করে ব্রেকাপ করে। ”

কাপড় দিয়ে বাধা ছেলেটার মুখ আর অজ্ঞান হয়ে আছে। অভিদ গার্ডকে ইশারা করতেই গার্ড মুখের কাপড়টা খুলে দিয়ে একি বালতি পানি এনে মুখে ঢেলে দেয়। পানি দিতেই ছেলেটা ধরফরিয়ে উঠে। পানির কারণে চোখের সামনে ঝাপসা দেখে। মুখ ছাড়া দিয়ে আবার সামনে অভিদকে বসে থাকতে দেখে। ঝাঁঝালো গলায় বলে
” কে তুই আর আমাকে এখানে কেনো ধরে এনেছিস ”

অভিদ রেগে বলে
” তোর নাম কি ??” ছেলেটা ঝাঁঝালো গলায় বলে
” রিদয় ” অভিদ চোয়াল শক্ত করে ছেলেটির মুখ জোড়ে চেপে ধরে বলে
” বল তখন মেলায় কি যেন বলেছিলি তুই ?? ”

রিদয়ের মনে হচ্ছে মুখ ভেঙে যাচ্ছে। রিদয় অভিদের হাত সরানোর জন্য মোচড়া মুচড়ি করছে। অভিদ রিদয়ের মুখ ছেড়ে দিয়ে বলে
” বল মেলায় রুহি কে কি বলেছিলি ??”

রিদয় মুখে বিশ্রী হাফি ফুটিয়ে বলে
” ওই মেয়েটার নাম রুহি !! যাই হোক না কেনো মেয়েটাকে কিন্তু আমার জোস লেগেছে। মেয়েটাকে একবার কাছে পেলে…. ” পুরোটা কথা শেষ করার আগেই অভিদ তার শক্ত হাত দিয়ে থাপ্পড় মারে। গার্ডের হাত থেকে রডটা নিয়ে রিদয়ের হাতে চেপে ধরে। রিদয় চিৎকার করে উঠে। অভিদ রড গার্ডের হাতে দিয়ে রিদয়ের গালে আবার থাপ্পড় মারে। রিদয়ের নাক দিয়ে রক্ত পরছে।

অভিদ রিদয়ের চুল টেনে ধরে বলে
” আমার রুহির দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে চোখ উপড়ে নেবো। এখন তোর চোখ আর তুই কোনোটাই থাকবে না।” বলে চুল ছেড়ে দেয়

রিদয় অট্টহাসিতে মেতে উঠে। হাসতে হাসতে বলে
” আমার চোখ থাকবে না ??? হাউ ফানি !! আমার চোখ আর আমি থাকবো না ?? আমাকে মারার ক্ষমতা কারও নেই। আমার বাবাকে এক নামে সবাই চিনে। কে আমাকে মারবে হা হা হা। ”

অভিদ রিদয়কে হাসতে দেখে বাকা হেসে বলে
” যতো হাসার হেসে নে এখনি তোর হাসা বন্ধ করে দিচ্ছি। তোর চোখ কেনো এখন তুই নিজেই মরবি।

অভিদের কথা যেন রিদয় কানেই নিলো না। আগের মতো হাসতে থাকে। অভিদ গার্ডের হাত থেকে গরম রডটা নিয়ে রিদয়ের গায়ে আঘাত করতে থাকে। প্রতিটা আঘাতে রিদয় চিৎকার করে উঠছে। রিদয় চিৎকার করে বলে
” আমি ছাড়বো না তোকে ”

অভিদ গান বের করে রিদয়ের বুক বরাবর পরপর তিনটা গুলি করে। রিদয় ছটফট করতে করতে একসময় চুপ হয়ে যায়। অভিদ গার্ডকে রিদয়ের ব্যবস্থা নিতে বলে গোডাউন থেকে বেড়িয়ে যায়।

১১ টা বাজে। অভিদ বাড়িতে এসে দেখে সবাই এখনও ড্রইংরুমে বসে আছে। অভিদ গিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলে
” কি হলো তোমরা এখনও এখানে বসে আছো যে। ডিনার করেছো ”

অনি মুখ টিপে হেসে বলে
” ভাবি তোমাকে ছাড়া খাবে না তাই তোমার জন্য বসে ছিলো। আমরাও ভাবলাম সবাই একসাথেই খাবো। তাই আমরাও তোমার জন্য বসে আছি। ”
অভিদ হালকা হেসে রুহির দিকে তাকালো। কিন্তু রুহি এতো ব্যস্ত যে অভিদকে খেয়ালই করেনি। রুহি টিভি দেখছে আর তুষার, রায়হানের সাথে হাসাহাসি করছে।

অভিদ শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে রুমের দিকে যেতে যেতে বললো
” ঠিকাছে। তোরা ওয়েট কর আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি ”
কিছুক্ষণ পরে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সবাই টেবিলে বসে ওর জন্য অপেক্ষা করছে। অভিদ গিয়ে তার চেয়ারে বসে পরে। অভিদকে দেখে সবাই খাওয়া শুরু করে। খাওয়ার মাঝে ফুপি আমতা আমরা করে বলে
” অভিদ আমরা পরশু চলে যাচ্ছি ”

সবাই খাওয়া থামিয়ে ফুপির দিকে তাকায়। অভিদ ক্ষিপ্ত সুরে বলে
” মানে কি এখনি চলে যাবে ?? কয়েকদিনই তো হলো এসেছো ”

ফুপি মুখ গোমড়া করে বলে
” কি করবো বল ?? কিছুদিনের জন্য হলেও যেতে হবে। আমার চলে আসবো। রাগ করিস না। ” অভিদ কিছু না বলে রাগ নিয়ে খেতে থাকলো। অভিদের ফুপি ৩ বছর পরে এসেছে এখন আবার চলে যাবে শুনে রাগ উঠছে।

রুহি মন খারাপ করে বলে
” অনি আর তুষার ভাইয়াও চলে যাবে ফুপি ?? ”
ফুপি রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” না মা। শুধু আমি আর তোমার আংকেল যাবো। তুষার আর অনি যখন ইচ্ছে হবে তখন যাবে। ”
রুহি খুশি হলেও ফুপিদের জন্য মন খারাপ রয়ে গেলো। মন খারাপ, রাগ নিয়েই ডিনারের পর্ব শেষ করলো সবাই।

অভিদ, রুহি শুয়ে আছে। দুজনেরই মন খারাপ। রুহি অভিদের দিকে ঘুরে বলে
” একটা কথা বলবো ?? ”
অভিদ ক্ষিণ স্বরে বলে
” হুম বলো ”

রুহি উঠে বসে বলে
” আচ্ছা আমরা মা – বাবা কোথায় ?? মানে তাদের কথা কখনও শুনিনি আর কেউ ওদের কথা তুলেওনি কখনো। ”

রুহির কথাটা অভিদের মন, মেজাজ বিগড়ে দিতেই যথেষ্ট। অভিদ রুহিকে রাগ দেখাতে চাইছে না তাই অভিদ উঠে বারান্দার থাই গ্লাসের লক খুলে বারান্দায় চলে যায়। রুহি অভিদের কাজে অনেক অবাক হলো। রুহি ভয়ে ভয়ে বারান্দায় যায়। রুহি অভিদের পেছনে দাঁড়িয়ে অপরাধীর মতো বলে
” সরি, আমি বুঝতে পারিনি আমার কথায় আপনি রেগে যাবেন।”

রুহি অভিদের পাশে দাড়িয়ে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ শক্ত চোখে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে হাজারো ঘৃণা রয়েছে। তবে সেটা কার জন্য সেটা বুঝতে পারলো না রুহি।

চলবে…wait for next part….