মায়ার জালে পর্ব-১৩

0
332

#গল্প::#মায়ার_জালে
#writer_পাপন
#পর্ব::১৩

অনু আয়ানের জন্য খাবার নিয়ে রুমে ঢুকে । খাবার টেবিলে রেখে অনু অন্যমনস্ক হয়ে বসে থাকে। অনু শুধু ভাবছে আকাশ পুলিশের কথা কি বললো । আকাশ কি কোনো বাজে কাজের সাথে লিপ্ত আছে। আয়ান ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে দেখে অনু অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে।আয়ান খাবার টেবিলে বসে অনুকে ডাকলো কিন্তু অনুর যেন কানে পৌঁছাতে পারছে না । আয়ান এবার একটু জোরেই ডাকলো। আয়ানের জোরে ডাকার কারনে অনু হকচকিয়ে ওঠে। আয়ান অনুকে বলে,,,,,

আয়ান— কি হয়েছে অনু। কখন থেকে ডাকছি । কি হয়েছে বলো তো।

অনু— না কিছু না । এমনিতেই । আপনি খাবার খেয়ে নিন।

অনু মনে মনে ভাবছে আয়ানকে বলবে এসব কথা। আবার ভাবছে, না থাক সারাদিন ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছেন । এখন না বলাই ভালো। কিন্তু আকাশ কে এতো বিচোলিতো দেখাচ্ছিল কেন। নিশ্চয়ই কিছু তো আছে।

পরের দিন সকাল বেলা আয়ান অফিসে চলে যায় । অনু বিছানা গোছিয়ে নিচে নামছিলো তখন দেখতে পায় আকাশ তাড়াহুড়ো করে বেরোচ্ছে রুম থেকে । আকাশের মুখ দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ চিন্তিত সে। আয়ানের মা আকাশকে এভাবে বেরোতে দেখে বললেন,,,,

আয়ানের মা— এভাবে কোথায় যাচ্ছিস আয়ান । নাস্তা করে যা।আর তোকে এভাবে চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন।

আকাশ— না মা সময় নেই। এখন নাস্তা করতে পারবো না। আর কাল রাতে ঘুম হয় নি তো তাই এভাবে দেখাচ্ছে । আমি যাই।

আকাশ তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যায় । অনু নিচে নামতে নামতে ভাবছে কিছু তো একটা গাফলা আছে।অনু আর আয়ানের মা দুজনে নাস্তা করছেন তখন রিতু এসে বললো ,,,,,, ফুফি আমি একটু বাইরে যাবো ফিরতে লেট হবে।

আয়ানের মা— সেকি নাস্তা করে যা।

রিতু— না ফুফি আমি বাইরে খেয়ে নেবো।

রিতু চলে যায়। অনু নাস্তা করে রুমে আসে। অনু ভাবছে আয়ানকে বিষয়টি বলা দরকার। অনু আয়ানের নাম্বার ডায়াল করে ফোন দিতে যাবে তখনই পেছন থেকে আয়ানের মা অনুকে ডাক দেন।

আয়ানের মা— অনু আমার ওয়াশ রুমে পানি আসছে না। আমি কি তোমাদের টা একটু ইউজ করতে পারি।

অনু— আরে মা এখানে অনুমতি নেওয়ার কি আছে । অবশ্যই ইউজ করতে পারো।

আয়ানের মা— ঠিক আছে মা। আমি যাই।

অনু ফোন রেখে দেয়। আয়ানকে ফোন দেওয়ার কথা ভুলে যায় । অন্যদিকে রিতু একটা শপিং মহলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হয় যেন কারো জন্য অপেক্ষা করছে। রিতু হঠাৎ দেখতে পায় আকাশ একটা গলির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । সাথে একটা ছেলে। রিতু আকাশকে পেছন থেকে ডাক দেয় । কিন্তু আকাশ যেন শুনতে পায় নি। রিতু আকাশকে ডাকতে ডাকতে আকাশের পিছু পিছু যাচ্ছে । কিন্তু আকাশ সাথে থাকা ছেলেটাকে কি যেন বুঝাচ্ছে। রিতু যে তাকে ডাকছে সেদিকে তার ভ্রূক্ষেপই নেই। রিতু দেখতে পায় আকাশ একটা পুরোনো গলির ভিতর দিয়ে যাচ্ছে । এদিকে মানুষের আসা যাওয়া একেবারেই নেই। রিতুর মনে সন্দেহ জাগলো সাথে ভয়ও করছে। রিতু ভয়ে ভয়ে আকাশের পিছু নেয়। রিতু পিছু নিতে নিতে একসময় থমকে যায় । রিতু নিজের হাত দিয়ে নিজের মুখ শক্ত করে চেপে ধরে।

/

আকাশ একটা গোডাউনে ঢুকেছে। সেখানে রয়েছে আকাশের বিশাল বিজনেস । আকাশ মূলত মাদকের ব্যবসা করে। তার বিশাল একটা গ্যাং রয়েছে। কিন্তু আকাশের পরিবারের কেও এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

/

আকাশের যখন অনুর সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তখন আকাশের কাছে খবর আসে পুলিশ তাদের ব্যবসা সম্পর্কে জেনে যায় । পুলিশ যদি তাদেরকে ধরে ফেলে তাহলে তাদের বিশাল লস হবে। তাই আকাশ বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যায়। পুলিশ গিয়ে কিছু পায় নি। আর পুলিশ আকাশকে কখনও দেখেনি। আকাশ কিছুদিন নিজেকে গোপন করে রাখে। কিন্তু আকাশ যখন শুনতে পায় তার ভালোবাসার মানুষের সাথে তারই ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে তখন আকাশ কিছুটা ভেঙে পড়ে। কিন্তু তার ব্যবসার কাছে যেন ভালোবাসার মানুষটিও কিছু না।

/

অন্যদিকে রিতু হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরে। বাড়ি ফিরেই আয়ানের মায়ের সম্মুখীন হয় । আয়ানের মা রিতুকে এভাবে চিন্তিত দেখে বলেন,,,,

আয়ানের মা— কিরে মা তকে এভাবে চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন। আর তুই না বললি ফিরতে লেট হবে।

রিতু— আসলে ফুফি শরীর টা খারাপ লাগছিল তাই চলে এসেছি।( তুতলিয়ে বললো কথাটা। রিতু যেন কথা বলতে পারছে না)।

আয়ানের মা— আচ্ছা তুই রুমে গিয়ে রেস্ট নে দেখবি ভালো লাগবে।

রিতু কিছু না বলে রুমে যায় । রুমে গিয়েই অনু ওয়াশরুমে ঢুকে । সাওয়ার ছেড়ে বসে পড়ে নিচে। রিতুর চোখে এসব দৃশ্য ভাসতেই রিতু কেঁপে উঠছে। রিতু সেখানে বিভিন্ন রকম অস্ত্র দেখতে পেয়েছিল । কিছু লোক কি যেন তৈরি করছিল। আর রিতু ভীষণ ভয় পেয়েছিল তখন যখন সে দেখতে পায় আকাশ কারো খুন করছে। এসব ভাবছে আর কেঁপে কেঁপে উঠছে। রিতু শাওয়ার শেষ করে রুমের দরজা আটকিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।

/

রাতের বেলা আয়ান অফিস থেকে বাড়ি ফিরে। রুমে ঢুকে দেখে অনু বসে বসে ফোন টিপছে । আয়ানকে দেখে অনু ফোন রেখে আয়ানের কাছে যায় । অনু আয়ানকে বলে,,,,,

অনু— আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন। আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

আয়ান— না আমি নিচে গিয়ে খাবো। আর আপনি আপনি বলাটা বন্ধ করো।

অনু— আমি তুমি করে বলতে পারবো না।

আয়ান— কেন।

অনু— আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।

আয়ান— অভ্যাস পরিবর্তন করো। আমি তোমার জামাই পর পুরুষ নয়।

আয়ান ওয়াশ রুমে যায় । ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে যায় খাবার খেতে। সবাই খাবার খেতে বসেছে । রিতুকে যেন ভীত দেখাচ্ছে । কিছুক্ষণ পর আকাশ এসে টেবিলে বসে খাবার খেতে। আকাশকে দেখা মাএই রিতু আঁতকে ওঠে। রিতু খামচি মেরে অনুর হাত ধরে। রিতুকে এভাবে ভড়কে যেতে দেখে আয়ান বললো,,,

আয়ান— কি হলো রিতু ভয় পাচ্ছ কেন। কিছু হয়েছে।

আয়ানের মা— কিরে মা বাড়িতে আসছিস থেকেই ভয়ে ভয়ে আছিস কেউ কিছু বলেছে।

রিতু— না ফুফি কিছু না।( তুতলিয়ে আকাশের দিকে ভয়ে তাকিয়ে বললো)

অনু তো কিছুটা আচ করতে পেরেছে। অনুর মনের সন্দেহটা যেন আরো বেড়ে গেলো। এদিকে আকাশ ভাবছে,,,, ও আমাকে দেখে এভাবে ভড়কে গেলো কেন । আর আমাকে এতো ভয় পাচ্ছে কেন। রিতু কি আমার বিষয়ে কিছু জেনেছে।

রিতু ভয়ে আর খেতে পারে নি। অনু রিতুকে তার রুমে দিয়ে আসে। রিতু রুমে ঢুকেই দরজা আটকিয়ে দেয় । ভীষণ কাঁপছে রিতু । বিছানায় গিয়ে কাঁথা মুখে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে।

আয়ান খাওয়া শেষ করে রুমে আসে। অনুও পেছন পেছন আসে। অনু রুমে ঢুকে আয়ানকে বলে,,,

অনু— শুনুন একটা কথা বলবো আপনাকে।

আয়ান— আগে তুমি করে বলো।

অনু— আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো। কিন্তু আগে শুনুন সরি শুনো।

আয়ান—- বলো কি বলবে।

অনু—- আকাশ ভাইয়াকে আমার কেমন সন্দেহ হচ্ছে । উনার চলাফেরার ঠিক নেই। সেদিন দেখলাম কাকে ফোন করে বলছেন পুলিশ তাদের কি যেন জেনে গেছে। তাছাড়া আজকে রিতু খাবার টেবিলে যে ভয় পেয়েছে তা শুধু আকাশ ভাইয়াকে দেখে।

আয়ান— আচ্ছা আমি কাল ভাইয়ার সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো। এখন ঘুমিয়ে পড়ো।

আয়ান অনুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে ,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,