মায়ার জালে পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

0
610

#গল্প::#মায়ার_জালে Last
#writer_পাপন
#পর্ব::১৫

পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঁকি দিচ্ছে । বাড়ির সবাই এখনও ঘুমিয়ে আছে। শান্তিতে ঘুমোচ্ছে সবাই। কিন্তু এই শান্তিটা যে ক্ষণিকের জন্য তা কেউই জানে না। সূর্যের আভা জানালা টপকে অনুর মুখে এসে পড়লো। একরকম বিরক্তি নিয়েই অনু ঘুম থেকে উঠলো। ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায় অনু। নিচে নেমে দেখতে পায় আয়ানের মাও সুফায় বসে আছেন। অনু গিয়ে উনার পাশে বসে। আয়ানের মা একবার অনুর দিকে তাকিয়ে সামনে দৃষ্টি দিলেন। অনু দেখলো উনি কেমন একটা অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছেন। অনু জিজ্ঞেস করলো,,,,

অনু— মা কি হয়েছে। এভাবে মুখ শুকনো দেখাচ্ছে কেন।

আয়ানের মা— কেন জানি ভালো লাগছে না অনু। মনের মাঝে অজানা ভয় কাজ করছে। রাতে ঘুমোতে পারি নি। তাই সকালে ওঠে এখানে বসে আছি।

অনু আর কিছু বললো না। দুজনেই বসে আছে। হঠাৎ আয়ানের মা দেখলেন আকাশ হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে । আয়ানের মা বললেন,,,,

আয়ানের মা— কিরে আকাশ এতো সকাল কোথায় যাচ্ছিস। আর তোকে এভাবে দেখাচ্ছে কেন।

আকাশ সারারাত ঘুমোতে পারে নি। রিতুকে মারার ইচ্ছে ছিল না তার। কিন্তু ফেঁসে যাবার ভয়ে খুন করে দিল। আকাশের চোখমুখ শুকিয়ে গেছে। পাগলের মতো লাগছে তাকে।

আকাশ— একটু দরকার আছে। তাই (তুতলিয়ে বললো কথাটা)

আয়ানের মা— তুতলাচ্ছিস কেন?

আকাশ— না এমনিতেই (কিছুটা তুতলিয়ে)

আকাশ চলে যায় । অনু ভাবছে আকাশ কিছু তো লুকোচ্ছে সবার থেকে। কিন্তু কি? তা অনুর অজানা । অনু উপরে যায় আয়ানকে ডাকতে। রুমে ঢুকে দেখে আয়ান বিছানায় নেই। অনু দেখলো ওয়াশ রুম থেকে শব্দ আসছে। অনু বুঝতে পারলো আয়ান ওয়াশ রুমে আছে। অনু বিছানায় বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর আয়ান ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। তারপর রেডি হয়ে নিলো। অনু আয়ানের সামনে এসে দাঁড়ায় । অনুর কাছে আয়ানকে যেন আজকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। অনু আয়ানকে আস্তে করে জড়িয়ে ধরলো। আয়ান অনুর কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ একে দিলো। তারপর দুজনেই নিচে গেলো।

/

আয়ান নাস্তা করে অফিসে চলে গেছে। অনু আর আয়ানের মা সুফায় বসে আছেন। হঠাৎ আয়ানের মা খেয়াল করলেন রিতু এখনও উঠে নি। তিনি অনুকে বললেন,,,,

আয়ানের মা— অনু দেখো তো রিতু এখনও উঠে নি কেন। কত বেলা হয়েছে।

অনু— আচ্ছা আমি দেখছি।

অনু বসা থেকে উঠে রিতুর রুমের দিকে হাঁটা ধরলো । অনু দরজায় ধাক্কা দিতে যাবে তখনই অনু খেয়াল করলো দরজা হালকা ফাঁক করা। অনু ভাবলো রিতু হয়তো উঠে গেছে। দরজা খুলে ওয়াশ রুমে গেছে হয়তো। অনু আর ভিতরে না ঢুকে চলে আসলো। অনু ডয়িং রুমে এসে দেখলো আয়ানের মা উনার রুমে চলে গেছেন । অনু সুফায় বসে টিভি অন করলো। বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেলো কিন্তু রিতু নিচে আসার নামই নেই। অনু আবার গেল রিতুকে ডাকতে। অনু দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। দেখলো রিতু অগোছালো ভাবে শুয়ে আছে। অনু ভাবলো রিতু যদি ঘুমিয়ে থাকে তাহলে রুমের দরজা খুলা কেন? পরক্ষণেই আবার ভাবলো হয়তো দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছে। অনু রিতুর কাছাকাছি গেল। বার কয়েক ডাক দিলো কিন্তু রিতুর কোনো হেলদোল নেই।অনু দেখলো রিতু নড়ছে না। অনু রিতুর পালস্ চেক করতে লাগলো। পালস্ চেক করা মাত্রই অনুর বুঝতে বাকি রইলো না । অনু মা বলে জোরে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায় ।

/

অনু এতোটা জোরে চিৎকার করেছে যে বাইরে থাকা কাজের লোকগুলোও তাড়াতাড়ি করে রুমে আসে। আয়ানের মা এসে দেখলেন অনু অজ্ঞান হয়ে নিচে পড়ে আছে। আর রিতু বিছানায় অগোছালো ভাবে শুয়ে আছে। এসব দেখে তিনি থমকে যান। তাড়াতাড়ি করে অনুকে বিছানায় তুলেন । তারপর আয়ানকে ফোন দিয়ে সবকিছু বলেন।

আয়ান ফোন পেয়ে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌছালো । ততক্ষণে অনুর জ্ঞান ফিরেছে। আয়ানকে দেখা মাত্রই অনু দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। কান্না করে দেয় অনু। আয়ান অনুর কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আয়ান বুঝতে পারছে না রিতু মারা গেলো কিভাবে । আয়ান ডাক্তার খবর দেয় ।

/

এদিকে খবর পেয়ে রিতুর মা বাবাও চলে আসেন এখানে। রিতুকে এভাবে মৃত দেখে রিতুর মা অজ্ঞান হয়ে যান। ডাক্তারও চলে এসেছে । ডাক্তার এসে রিতুকে চেক করে বললো,,,,,

ডাঃ— উনি মার্ডার হয়েছেন। আপনারা পুলিশকে inform করুন।

ডাক্তারের কথা শুনে সবাই থ হয়ে গেলো। কে করতে পারে রিতুকে হত্যা । তার সাথে কার শত্রুতা ছিল। এসব প্রশ্ন সবার মনে উঁকি দিচ্ছে । মুহুর্তেই পরিবারে কালো ছায়া নেমে গেলো। আয়ান পুলিশকে inform করে।আকাশকেও ফোন দিয়ে বলে।

/

রিতুর মায়ের এখনও জ্ঞান ফিরে নি। কিছুক্ষণ পর পুলিশ আসে। আকাশও প্রবেশ করে বাড়িতে । আকাশের চোখমুখ লালচে হয়ে গেছে। পুলিশ রিতুর রুম ভালোভাবে সার্চ করছে। সবাই ডয়িং রুমে বসে আছে। অনু এখনও আয়ানকে জড়িয়ে ধরে আছে। অনু ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল । আকাশের একটা ফোন আসে । আকাশ ফোনে কথা বলতে তার রুমে যায় ।

/

কিছুক্ষণ পর পুলিশ একটা চেইন নিয়ে বাইরে আসে। পুলিশ রিতুর হাতের মুঠোয় চেইন টা পায়। আকাশ রিতুকে মারার সময় যে তার চেইন রিতুর হাতে চলে গেছে সেদিকে খেয়ালই ছিল না তার। যেটা কারো নজর না কাড়লেও পুলিশের নজর কাড়ে। চেইন দেখা মাত্রই আয়ানের মা দাঁড়িয়ে যান। উনার চিনতে দেরি হয়নি যে এটা আকাশের চেইন।

আয়ানের মা—- এটা তো আকাশের চেইন। এটা আপনারা কোথায় পেলেন।

পুলিশ— এটা লাশের হাতে পাওয়া গেছে।

আয়ান—- হোয়াট??? কি বলছেন এসব। ( আয়ান যেন অবাকের চরম সিমানায় পৌছে যায়)

পুলিশ— আকাশ সাহেবকে ডাকুন ।

আয়ানের মা আকাশকে ডাকতে আকাশের রুমে যান। রুমে ঢুকেই আকাশ বলে চিৎকার দেন তিনি। উনার চিৎকারে সবাই দৌড়ে আকাশের রুমে যায় । রুমে ঢুকে দেখে আয়ানের মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। সবার চোখ যায় ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকা আকাশের দিকে।

আয়ান—– ভাইয়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়া (জোরে চিৎকার করে আয়ান)

পুলিশ আকাশকে নিচে নামায়। আয়ান তার মাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মুখে পানি ছিটোয় । সব ঝামেলা যেন একসাথে দেখা দিয়েছে পরিবারে। পুলিশ আকাশের পকেটে একটা চিঠি পায়। চিঠিটা আয়ানের হাতে দেয় পুলিশ । আয়ান চিঠিটা পড়ে।

চিঠি,,,

মা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। বিশ্বাস করো মা আমি মরতে চাইনি। আমি মাদকের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিলাম।অনেকবার এসব থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছি কিন্তু পারি নি। বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম শুধু নিজের ব্যবসাটা বাঁচানোর জন্য । নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছি। যখন জানতে পারলাম রিতু আমার বিষয়ে জেনে গেছে। আমি ওকে বুঝাতে চেয়েছিলাম । বিশ্বাস করো মা আমি রিতুকে মারতে চাই নি। কিন্তু ভয়ে রিতুকে মেরে ফেলেছি। এখন আমি জানতে পারলাম পুলিশ আমাদের ব্যবসা আটক করেছে। আমি যে এসবের সাথে জড়িয়ে আছি পুলিশ তা জেনে গেছে। আমি কোনো উপায় না পেয়ে এই পথ বেঁচে নিয়েছি মা। আমাকে ক্ষমা করে দিও।

চিঠিটা পড়ে আয়ান অনুর কাছে দেয়। আয়ান নিচে বসে পড়ে। পুলিশ লাশ দুটোকে নিয়ে যায় । রিতুর মায়ের জ্ঞান ফিরেছে। কিছুক্ষণ পর রিতুর মা বাবা চলে যান। রাতে আয়ানের মায়ের জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফিরলেও তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একটি ভুলের কারণে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।

অনু আয়ানের মাকে শুইয়ে দিয়ে রুমে যায় । রুমে গিয়ে দেখে আয়ান বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে। অনু আয়ানের কাছে যায় । অনু দেখতে পায় আয়ান মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

অনু—- মন খারাপ করে আছো কেন। যা কপালে ছিল তাই হয়েছে।

আয়ান— ভাইয়া কেন এমনটা করলো অনু(আয়ান কান্না করে দেয়)

অনু— তুমি কান্না করছো কেন। তুমি ভেঙে পড়লে কি হবে। মায়ের দেখাশোনা করবে কে।

আয়ান— ভাইয়া কি একবারও আমাদের কথা চিন্তা করলো না।

অনু— এটা এক ধরনের নেশা আয়ান । এসবের সাথে জড়িয়ে গেলে ফিরে আসা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু তুমি ভেঙে পড়ো না।

আয়ান— তুমি আমার পাশে থেকো অনু।

অনু— আমি তোমার পাশে তো সারাজীবন থাকতে চাই। তোমার #মায়ার_জালে আটকে গেছি যে আমি।

অনু আয়ানকে জড়িয়ে ধরে। আয়ান অনুর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়।

“সমাপ্ত”