মায়ার জালে পর্ব-১৪

0
343

#গল্প::#মায়ার_জালে
#writer_পাপন
#পর্ব:: ১৪

অনু আয়ানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে । এদিকে আকাশের চোখে ঘুম নেই। সে ভাবছে রিতু কেন ভয় পেলো তাকে দেখে। তাহলে কি রিতু কিছু জানতে পেরেছে । আকাশের মাথায় নানা চিন্তা ভর করছে। এসব ভাবতে ভাবতে আকাশ ভাবলো রিতুকে একবার বলে দেখি। কিন্তু পরক্ষণেই সে ভাবলো এতো রাতে যাওয়া ঠিক হবে না বরং কালকে বলবে। এদিকে আয়ানের মায়ের চোখেও ঘুম নেই উনি কিছুটা হলেও আচ করতে পেরেছেন। আকাশকে দেখে কেন রিতু ভয় পেলো।আকাশ কি রিতুর সাথে বাজে কিছু করেছে।🤔

সকালবেলা আকাশ বাড়ি থেকে বের হবে তখনই পেছন থেকে আয়ান আকাশকে ডাক দিলো।

আয়ান— ভাইয়া শুনো।

আকাশ— কি বলবি তাড়াতাড়ি বল। আমার তাড়া আছে।

আয়ান— তোমার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে।

আকাশ— বেশি জরুরি । আচ্ছা তুই অফিসে যাবি না চল একসাথে যাই।

আয়ান— হুম চলো।

আয়ান আর আকাশ দুজনে গাড়িতে গিয়ে বসলো। আকাশ ড্রাইভ করছে আর আয়ান পাশে বসে আছে।

আকাশ— বল কি বলবি।

আয়ান— actually ভাইয়া অনু আমাকে বললো যে রিতু নাকি তোমাকে দেখে কাল ভয় পেয়েছে । তাছাড়া তুমি নাকি কাকে বলছো পুলিশ তোমাদের কি জানি জেনে ফেলছে । তুমি কি কোনো খারাপ কাজ করছো ভাইয়া ।

আয়ানের কথা শুনে আকাশ জোরে ব্রেক কষে। কিছুটা ঘাবড়ে যায় আকাশ । আয়ান আকাশের মুখে চিন্তা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে । আকাশ নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে বলে,,,,,,

আকাশ— কি বলছিস এসব। আমাকে দেখে কেনো ভয় পাবে। আর অনু মনে হয় ভুল শুনেছে। পুলিশ কি জানবে আবার। তুই বরং এখান থেকে একটা গাড়ি নিয়ে অফিসে যা। আমি অন্যদিকে যাবো একটা কাজ আছে।

আয়ান গাড়ি থেকে নামতেই আকাশ তাড়াতাড়ি করে গাড়ি বেক করে চলে যায় । আয়ান ভালোই বুঝতে পারছে তার ভাই কিছু একটা লুকাচ্ছে। কিন্তু এখন আয়ানের এসব ভাবলে চলবে না তাকে অফিসে যেতে হবে। তাই আয়ান একটা রিক্সা করে অফিসে যায়।

এদিকে রিতু এখনও রুম থেকে বের হয় নি। বিছানায় বসে আছে । বের হবার সাহস পাচ্ছে না। আর খুনের ঘটনাটা মনে হলেই কেঁপে উঠছে সে। হঠাৎ দরজার আওয়াজ আসতেই রিতু ঘাবড়ে যায় । কে যেন দরজা ধাক্কাচ্ছে। মুহুর্তেই রিতু ঘেমে গেছে । তবুও রিতু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো ,,,,,,,

রিতু—- কে।

অনু—- আরে রিতু আমি অনু। কখন থেকে ডাকছি দরজা খুলছো না কেনো। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসো নাস্তা করবে তো। দেখছো কয়টা বাজে।

রিতু–আচ্ছা তুমি যাও আমি আসতেছি ।

অনু— তাড়াতাড়ি এসো।

অনু চলে যায় । এদিকে রিতু ধীরে ধীরে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে যায় নাস্তা করতে। রিতু নাস্তা করছে আর চারিদিকে চোখ বোলাচ্ছে কোথাও আকাশ আছে কিনা। রিতুকে এভাবে তাকাতে দেখে আয়ানের মা বলেন,,,

আয়ানের মা— এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস রিতু।

রিতু— কিছু না ফুফি ।( আমতা আমতা করে বলে)

নাস্তা করে অনু সুফায় বসে আছে। রিতু এসে অনুর পাশে বসলো। এভাবে অনেকক্ষণ বসার পর অনু বুঝতে পারলো রিতু তাকে কিছু বলতে চাইছে। অনু রিতুকে বললো,,,,,

অনু— রিতু তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছো ।

রিতু— হ্যাঁ । আসলে অনু আমি বল***

আকাশ— কি কথা হচ্ছে রিতু।

আকাশের কন্ঠ শুনে অনু আর রিতু পেছনে তাকায়। দেখে আকাশ দাড়িয়ে আছে। আকাশকে দেখা মাএই রিতু খামচে ধরে অনুকে। রিতুকে এভাবে ঘাবড়ে যেতে দেখে অনু রিতুকে জড়িয়ে ধরে। আকাশকে দেখে তার বলেন

আয়ানের মা— কিরে বাবা এখন বাসায় এলি যে।

আকাশ— আসলে একটা ব্যাগ নিতে ভুলে গেছি । তাই আসলাম ।

আকাশ একটা ব্যাগ নিয়ে চলে যায় । বাইরে বের হয়ে আকাশ চিন্তায় পড়ে যায় । রিতু কি অনুকে আমার কথা কিছু বলতে চেয়েছিল। আকাশ মনে মনে ভাবছে যে রিতুকে বলতে হবে বিষয়টি ।

রাতে আয়ান বাড়ি ফিরে। দেখতে পায় রিতু আর অনু বসে আছে। আয়ান উপরে যায় । অনু আয়ানকে দেখতে পেয়ে আয়ানের পিছু পিছু উপরে যায় । আয়ান টেবিলে ব্যাগ রেখে ওয়াশ রুমে যায় ফ্রেশ হতে। অনু বিছানায় বসে আছে। কিছুক্ষণ পর আয়ান ওয়াশ রুম থেকে বের হলো। বের হয়েই অনুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। আচমকা এমন হওয়ায় অনু পড়ে যায় । অনু আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,,,,

অনু— এভাবে জড়িয়ে ধরে আছো কেনো। ছাড়ো।

আয়ান— না এখন ছাড়া যাবে না। এখন ভালো মুডে আছি আমি।(দুষ্টুমি করে বললো)

অনু— দেখো আ,,,

আয়ান অনুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে কিস করে । হুট করে কিস করায় অনু আয়ানের দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে । কিছু সময় পর আয়ান অনুকে ছেড়ে দেয় । অনু তাড়াতাড়ি করে উঠে বসে। নিচের দিকে তাকিয়ে বলে ,,,,, আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি। লজ্জায় যেনো তাকাতেই পারছে না। অনু নিচে যায় খাবার আনতে । আয়ান হাসছে। অনু নিচে খাবার খেয়ে আয়ানের জন্য খাবার নিয়ে রুমে যায় । রিতুও খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ।

/

রাত একটা ছুঁই ছুঁই দরজায় টক টক শব্দে ঘুম ভাঙে রিতুর। ঘুম ঘুম চোখেই দরজা খুলে দেয় । দরজা খুলতেই সামনে দেখতে পায় আকাশকে। রিতু চমকে উঠে। দু পা পিছিয়ে যায় । আকাশ তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। রিতু ভীষণ ভয় পেয়ে যায় । ভয়ে ভয়ে বলে,,,,

রিতু—- ভাইয়া তুমি এতো রাতে এখানে কেনো। আর দরজা বন্ধ করলে কেনো।(তুতলিয়ে বলছে। ঘেমে যেন একাকার হয়ে গেছে)

আকাশ— রিতু তুমি আমাকে দেখে ভয় পাও কেনো। আমাকে সত্যি করে বলো। নয়তো খুব খারাপ হবে।

রিতু— আমি সবাইকে বলে দিবো ভাইয়া । তুমি কাকে খুন করছো। তুমি খারাপ কাজ করো ভাইয়া । আমি বলবো সবাইকে।(কান্না করে দেয় ভয়ে)

আকাশ— কাকে কি বলবে হ্যাঁ! দেখো কাউকে যদি কিছু বলেছো তাইলে তোমাকে শেষ করে দিবো।

রিতু— আমি সবাইকে বলবো তুমি খারাপ ।

আকাশ আর সহ্য করতে না পেরে রিতুর মুখে বালিশ চেপে ধরে। রিতু নিজেকে বাঁচাতে যেনো সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। কিন্তু ছেলের শক্তির কাছে তো হার মানতেই হবে। কিছুক্ষণ পর রিতু নাড়াচাড়া বন্ধ করে দেয়। আকাশ চেক করে দেখে রিতু নিঃশ্বাস নিচ্ছে না। এবার আকাশও কিছু ঘাবড়ে যায় ।আকাশ বালিশটা সাথে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে বের হয় রুম থেকে। তারপর বাইরে বের হয়ে বালিশ পুড়িয়ে ফেলে। তবুও আয়ান কিছুটা ঘাবড়ে আছে। বুঝাতে এসে খুন করে দিবে ভাবতে পারে নি সে।

/

অনুর ভীষণ পিপাসা পেয়েছে। তাই সে নিচে যায় পানি খেতে। রান্না ঘর থেকে পানি খেয়ে উপরে আসতে যাবে তখন অনু দেখতে পায় আকাশ তাড়াহুড়ো করে বাড়িতে ঢুকে তার রুমের দিকে যাচ্ছে। আকাশ রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয় । আকাশের হাবভাব সুবিধের মনে হচ্ছে না অনুর কাছে। অনু ভাবছে এতো রাতে আকাশ কোথায় গিয়েছিল । অনুর মাথায় নানা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে । অনু এসব চিন্তা ফেলে ঘুমানোর চেষ্টা করে।

সবাই ঘুমোচ্ছে । তাদের সবারই অজানা সকালে কি হতে চলেছে বাড়িতে । একমাত্র আকাশ জেগে আছে। ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই তার চোখে। ভীষণ চিন্তিত সে। কি করতে কি করে ফেলেছে,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,