#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_১০
পরের দিন খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছে সোনালী তখন ওর আব্বু বললো…..
—” মা তোমার সাথে আমি আর তোমার আম্মু খুব ফ্রেন্ডলী ভাবে কথা বলি। তুমি আমাদের এক মাত্র মেয়ে। আমরা চাই না তুমি খারাপ থাকো তাই তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করছি সত্যি কথাটা বলবে মা আর আমরা জানি তুমি মিথ্যা বলবে না।”
—” আব্বু কি বলতে চাচ্ছো বলো আমি সত্যি কথাই বলবো তাছাড়া তোমরা আমার জন্য ভালোটাই করবে বলো কি বলবে?”
—” মা তোমার কি কোনো রিলেশন আছে?”
সোনালী এমন কথা শুনে হেঁচকি ওঠা শুরু করলো। সোনালীর মা এক গ্লাস পানি সোনালীর হাতে দিয়ে বললো…..
–” খেয়ে নে ঠিক হয়ে যাবে।”
সোনালী এক চুমুকেই সবটুকু পানি পান করলো তখন সোনালীর আম্মু বললো…….
—” কি রে তোর হটাৎ হেঁচকি উঠলো কেনো? তোর আব্বু কি বলেছে উত্তর দে?”
—” নাহ আসলে হটাৎ এমন বিভ্রান্ত মুলুক প্রশ্ন করলে তো তাই নিজেকে সামলাতে না পেরে এমন অঘটন ঘটে গেছে।”
সোনালীর কথা শুনে হাসতে লাগলো সোনালীর আব্বু।
—” মা তুমি তো এখন বড় হয়ে গেছো তোমার জন্য অনেক অনেক পাত্র পক্ষ আসছে জানো তো তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ইতির কিন্তু বিয়ে ঠিক তাই আমরাও চাচ্ছি তোমাকে বিয়ে দিতে।”
—” আমি তো ছোট ।”
সোনালীর মা তখন বললো…..
—” তোর থেকে ছোট তাদের বিয়ে হয়ে গেছে এমনকি তাদের সন্তানকেও স্কুলে ভর্তি করিয়েছে দিছে আর এইদিকে তুই এখনও মায়ের হাতে খাওয়া দাওয়া করিস।”
—” মা তুমি কিন্তু আমায় অপমান করার চেষ্টা করছো?”
সোনালী ওর মায়ের দিকে চোখ ছোট ছোট করে বললো তখন ওর মা বললো…..
—” অপমান করার চেষ্টা করছি না বরং অপমানই করছি।”
—” দেখছো আব্বু আম্মু কিন্তু সিরিয়াল দেখে দেখে নাটক করা শিখে গেছে এখন উঠতে বসতে আমায় অপমান করে।”
মা মেয়ের এমন মিষ্টি ঝগড়া কিছুক্ষণ চলতে লাগলো। সোনালী আব্বু বললো…..
—” ওই থামো তো তুমি আমার মায়ের সাথে সব সময় লেগেই থাকো অসভ্য মহিলা। আচ্ছা মা এখন বলো তোমাকে কি বলেছি তার উত্তর দেও?”
সোনালীর আম্মু কিছুক্ষণ ওনার স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু বললো না।
—” নাহ আব্বু আমার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।”
—” আলহামদুলিললাহ। শুনো সোনালীর মা আমাকে আরেকটু খাসির মাংস দেও তো খুশিতে আমার ডুগডুগি বাজাতে ইচ্ছা করছে।”
—” আমি তো অসভ্য মহিলা। তাহলে এখন এই অসভ্য মহিলার কাছ থেকে তরকারি চাইতে লজ্জা করছে না। যাও নিজের কাজ নিজে করো অসভ্য পুরুষ কোথাকার।”
সোনালী ও তার আব্বু বুঝতে পারলো যে অসভ্য মহিলা বলার রিভেঞ্জ নিয়েছেন ওনি। সোনালীর আব্বু আর কিছু না বলে নিজেই তরকারি নিয়ে খেতে লাগলো………
।।
।।
।।
।।
আরিয়ান আর হৃদয় নাস্তা করছে। আরিয়ান টুকটাক কথা বলছে অফিস বিষয়ের। হৃদয় কথা শুনছে কিন্তু কিছু বলছে না মাঝে মধ্যে হুম হুম করছে…..
—” আজ এই বাঁচাল লোকের কি হলো?”
—” হুম।”
অন্যমনস্ক হয়ে বললো হৃদয়……
—” তোর কি কোনো সমস্যা হয়েছে?”
আরিয়ান হৃদয়কে আস্তে ধাক্কা দিয়ে বললো হৃদয় হুসে এসে বললো…..
—” হুম কি যেনো বলছিলি ব্রো?”
—” তুই তো এইভাবে চুপ করে থাকার ছেলে না তাহলে আজ হটাৎ কি হলো তোর? মন খারাপ?”
—” তেমন কিছু না ব্রো ওই একটু আকটু শরীলটা খারাপ।”
—” কেনো কি হয়েছে তোর?”
আরিয়ান হৃদয়ের শরীলে হাত দিলো দেখলো জ্বর এসেছে কি না…..
—” জ্বর তো আসে নাই তাহলে কি হয়েছে ? দাড়া আমি এক্ষুনি ডক্টর রায়হান কে ফোন দিচ্ছি।”
—” আরেহ ব্রো তেমন কিছু হয় নাই আমার বলছিনা। মাথাটা একটু ঘুরছে ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবো?”
—” সত্যি তো?”
—” হুম।”
—” ওকে আজ তোর অফিসে যেতে হবে না তুই বাসায় থেকে রেস্ট নে আর শরীল বেশি খারাপ হলে আমায় বলবি আর অবশ্যই ডক্টর কে ফোন দিবি।”
—” হুম। তুই কি এখন অফিসে যাবি?”
—” নাহ আগে দাদীর কাছে যেতে হবে কি যেনো দরকার আছে পরে ওইখান থেকে অফিস যাবো।”
—” ওকে সাবধানে থাকিস।”
—” তুইও।”
আরিয়ান চলে গেলো হৃদয় খাবার না খেয়েই নিজের রুমে চলে গেলো। ফোনটা হাতে নিয়ে ইতির পিক দেখতে লাগলো……
—” আচ্ছা তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তাহলে আমার খারাপ লাগছে কেনো? মনে হচ্ছে কেউ আমার সব চেয়ে দামী জিনিস কেরে নিচ্ছে। তোমাকে তো আমি চিনি মাত্র কিছুদিন তাহলে এমন হচ্ছে কেনো? তোমার সাথে তো আমার ভালো করে কথাও হয়নি ঝগড়া ছাড়া।”
হৃদয় ছবির সাথে কথা বলছে। সোনালী ও ইতিকে যেদিন তোলে নিয়ে গিয়েছিল সেইদিন এই পিক গুলো তোলা হয়েছে। হৃদয়ের খুব কষ্ট হলে ও গিটারের সুর বাজায় তাহলে ওর কষ্ট কিছুটা কমে। তাই হৃদয় তার গিটার হাতে নিয়ে রুমের জানালার কাছে গিয়ে বসলো…….
জানি তুমি,আসবেনা ফিরে
বাসবেনা ভালো আমাকে
জানি তুমি,ভেঙেছ হৃদয়
সেই আশাতে,দুঃখ চেপে রয়
এ হৃদয়ের এতো কাছে
ছিলে তুমি মনে কি পরে?
ফোনের ইতির পিক আর হাতে গিটার নিয়ে দেবদাসের মত গান গাইছে হৃদয়। মনটা তার খুব খারাপ।
—” হয়তো মনের অজান্তেই তোকে চেয়ে ছিলাম কিন্তু বুঝিনি তুই অনেক দামী। এতদিন কতই না রোমান্টিক গল্প পড়েছি কিন্তু আসল ভালোবাসাটা অপলব্দি করতে পারি নাই তোকে দেখার পর তোকে হারিয়ে সেটা বুঝলাম।”
।।
।।
।।
।।
কলেজে কেম্পাসে বসে আছে ইতি আর সোনালী। ইতি তো সেই রেগে আছে সোনালীর উপর। সোনালী যখন সব বুঝিয়ে বললো তখন ইতির রাগটা কমলো…….
—” এখন বল ছেলেটাকে তোর কেমন লাগলো?”
–” খুব ভালো লেগেছে ভাবতে পারি নাই আমি কোনোদিন কাওকে মন থেকে পছন্দ করবো।”
—” হুম এখন তো আমাকে ভুলে যাবি বর পেয়ে।”
—” তোকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে কোনোদিন সম্ভব না নিজেকে ভুলে যাবো কিন্তু তোকে না।”
—” হইছে দেখা যাবে নে। এখন বল তোর হবু বরের নাম কি?”
—” ওর নাম নাহিদ। জানিস ওর কথাগুলো কি যে ভালো লাগে মনে হয় ওর কথায় জাদু আছে।”
নাহিদ নামটা শুনে সোনালী কেমন যেনো হয়ে উঠলো…..
—” ওই গোল্ডেন কি হইছে তোর?”
—” দুলাভাইয়ের কি কোনো পিক আছে তোর কাছে?”
—” ওহহ সরি পিক নিতে ভুলে গেছি । ওকে অন্য একদিন নিয়ে নিবো নে এখন বল তুই এমন হাইপার হচ্ছিস কেনো?”
—” নাহ তেমন কিছু না। নাহিদ নামের একজন লোক আমার পরিচিত ছিল আমি ভাবছি সেই লোক কিনা?”
—” হাহাহা এক নামের কি একজন লোকেই নাকি ?”
—” তা না । আচ্ছা বাদ দে এইসব। চল বাসায় যাই।”
—” হুম চল।”
।।
।।
।।
।।
আরিয়ান বিশ মিনিট আগে একটি গল্প আপলোড দিয়েছে। পোষ্ট দেওয়ার সাথে সাথে রিয়েক্ট আর কমেন্টের বন্যা চলছে। সোনালী দেখলো আজ আরিয়ান নায়কার নাম সোনালী দিয়েছে । গল্পের নাম ‘ অবশেষে তুই আমার’ । মেয়েরা তো হিরোর উপর ক্রাশ খাচ্ছে। ছেলেরা তো হিরোইনের উপর। কিছুক্ষণের মধ্যে তো তাদের নাম চেঞ্জ করে হিরো আর হিরোইনের নাম দিয়েছে। আরিয়ানের গ্রুপে আবার রিভিউ পোষ্ট হচ্ছে। সোনালী দেখেই যাচ্ছে। সোনালীর কাছেও খুব ভালো লাগলো গল্পটা ওর খুব ইচ্ছে হলো একটা কমেন্ট করার জন্য কিন্তু করছে না। মনকে বুঝিয়ে জাস্ট লিখলো…..
—-” নেক্সট যদিও বা এত ভালো লাগেনি গল্পটা । ”
কতটা লিখে দুই মিনিট আরিয়ানের প্রোফাইল ঘাটতে লাগলো।
—” বজ্জাত চাল কুমড়া এখনও সিঙ্গেল দিয়ে আছে বলি তুই যে আমার জোর করে বিয়ে করেছিস এখন কি আমি পানিতে ভেসে যাবো ম্যারিড দে আন্ডা বাচ্চার বাপ।”
ভুলক্রমে আরিয়ানকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দেয় সোনালী কিন্তু সোনালী দেখতে পেলো না। নোটিফিকেশন আসলো দেখলো চারটা মেয়ে কমেন্ট লিখছে সাথে অ্যাংরি রিয়েক্ট….
* এত সুন্দর একটা গল্প লিখেছে আর তুমি নেক্সট লিখছো আবার বলছো বেশি ভালো হয় নি তাহলে আসছে কেনো গল্প পড়তে। নিজে একটা লিখে দেখাও তো গল্প আবার আসে অন্য জনকে বলতে বেশি ভালো হয় নাই। ভালো একটা কমেন্ট তো করতে পারো আজব পাবলিক।*
* গল্প ভালো না লাগলে তো আর নেক্সট লিখতেন না তাই না? গল্প ভালো না হলে অবশ্যই পরের পর্ব পড়তে ইচ্ছুক হবে না এখন আবার দেখছি নামও চেঞ্জ করে ফেলছেন। এই কমেন্ট না করলে কি হতো না পাগল লোকজন*
* এত বড় কমেন্ট করার জন্য আপনাকে সু স্বাগতম আফা। দোয়া করে এইসব আর লেখবেন না আমাদের ক্রাশের আইডিতে। আপনার মতো মেয়ে গল্পের গ বুঝে না তার দ্বারা গল্প পড়া মানায় না।”
সাথে ব্যাঙের ঈমোজি……
* আরেহ বইনা গল্প যেহেতু লেখছে পরের পর্ব তো দিবো এই জন্য এত কষ্ট করে লেখার কি দরকার? আর শুনো বইন তুমি একটা গল্প লিখো দেখি তো কেমন লেখতে পারো?*
সোনালী এইসব কমেন্ট দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো ও শুধু আরিয়ানের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সুন্দর গল্পকে অসুন্দর বলেছে এই জন্য মেয়েরা তাকে ধুয়ে দিচ্ছে। সোনালী আর দেরি না করে কমেন্ট ডিলেট দিয়ে দিলো। কিন্তু কমেন্ট ডিলেট দিতে দেরি হয়ে গেছে ওই মেয়েগুলো স্কিনশট নিয়ে রেখেছে আর গ্রুপে পোষ্ট করছে। সোনালীকে ভাইরাল করে দিচ্ছে। সোনালীর আইডিতে এসে, ইনবক্স এসে সবাই বকছে সোনালীকে। সোনালী রাগে নিজের মাথার চুল নিজেই চিরছে কেনো এমন করলো ও। হটাৎ দেখলো আরিয়ান তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছে সোনালী অবাক হলো ও কবে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইছি। কিছুক্ষন ভেবে মনে মনে একটা শয়তানি হাসি দিলো। রাতে সোনালী তার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিলো আরিয়ানের সাথে। সকালে উঠে যা দেখলো তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না……
চলবে……
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।