#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৮
হৃদয় যতই হাসি খুশি থাকুক রাগটা তার খুব বেশি। একদম আরিয়ানের মত। ইতি তাকে বলদ বলায় রেগে গিয়ে ইতিকে দেওয়ালের সাথে মিশে ধরে…….
ইতির দম বন্ধ হয়ে আসছে। হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো হৃদয় ওর দিকে তাকিয়ে আছে…….
—” ছাড়েন বাসায় যাবো ।”
—-” আমাকে কি যেনো বলছিলে আমি বলদ?”
হৃদয় দাতে দাঁত চেপে ধরে বললো। ইতি তখন বললো…..
—” হুম উহু হুম উহু।”
—-” হুম উহু কি করছো এইসব?”
—” সরি বলছি ভাইয়া। এখন ছাড়েন।”
—-” এইবারের মত ছেড়ে দিলাম। ভবিষ্যতে কিছু বললে ভেবে চিন্তে বলবে ওকে?”
—” হুম।”
হৃদয় ছেড়ে দেয় ইতিকে। ইতি ছাড়া পেয়ে কিছুক্ষণ শ্বাস নিয়ে বিড়বিড় করে বললো……
—” একটুর জন্য তো মরেই যাচ্ছিলাম।”
।।
।।
।।
সোনালী আরিয়ান হৃদয় ও ইতি ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। সোনালী ও ইতি পিছনে বসে আছে সামনের সিটে দুই ভাই। আরিয়ান ড্রাইভ করছে।
—” ব্রো আজ রাতে ইম্পর্টেন্ট এক মিটিং আছে। ”
—” হুম জানি আমি। ”
হৃদয় ও আরিয়ান অফিসের ব্যাপারে কথা বলছে। ইতি সোনালী বোরিং হয়ে ওদের কথা শুনতে লাগলো। এতটাই বোরিং লাগছিলো তাই সোনালী বললো……
—” আপনারা গাড়ি থামান আমরা অন্য কোনো গাড়ি দেখে নিবো।”
আরিয়ান গাড়ির জানালার দিকে তাকিয়ে সোনালীকে বললো……
—” কেনো সুখে থাকতে ভুতে কিলায় নাকি তোমাকে?”
—” এইভাবে বোরিং হয়ে যেতে ভালো লাগছে না।”
—-” তাহলে কি এখন আমার তোমার জন্য নাচতে হবে নাকি?”
—” ওয়াও গ্রেট প্লিজ একটু নাচেন আমারও খুব দেখতে ইচ্ছা করছে আপনার নাচ। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
আরিয়ান সোনালীকে ধমক দিয়ে বললো……
—” আসো তোমাকে এইখানে দাঁড় করিয়ে আমি তোমাকে নাগিন ড্যান্স করাই। এইসব মাথা পাগল গুলো আমার কপালেই আসে।”
সোনালী মুখ ফুলিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তখন ইতি আমতা আমতা করে বললো…..
—” লেখক ভাইয়া।”
—” কিইইইইই।”
—-” থাক বলবো না। ”
—” কেনো বলবে না ?”
—” আপনি যেভাবে উত্তর দিলেন প্রশ্ন করার শখ মিটে গেছে। ”
—” ওকে বলো কি বলবে?”
—” আমি তো আপনার অনেক বড় ফ্যান ছিলাম।”
—” এখন নাই?”
—” আছি। আগে শুনেন কি বলছি আমি?”
—” বলতে থাকো।”
—” লেখক ভাইয়া আপনার কিছুদিন আগে একটি বই বের হয়েছিল নামটা মনে হয় ‘ভয়ানক সেই রাত ‘ আমি ওই বইটা কিনতে পারে নি এখন যদি আমায় ওই বইয়ের ব্যাপারে কিছু বলতেন তাহলে খুশি হতাম।”
হৃদয় ইতির কথা শুনে বললো…..
—” এই বইটা ছিল ভাইয়ার লেখা ভয়ানক একটা বই। ভাইয়ার সব গল্প বা বই ভয়ংকর হয় কিন্তু এইটার থিম একদম অন্য রকম।”
—” কি রকম?”
—-” নায়ক নায়িকা ছিলো মধ্যবিত্ত। প্রেম করেই বিয়ে হয় ওদের। বাট এই প্রেম বিয়ের মাঝে অনেক কিছুই ঘটে ওদের যা ভয়ানক । আর সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় বাবা তার সন্তানকে টুকরো টুকরো করে কেটে হত্যা করে। ওই সময় আমার চোখের পানি আমি ধরে রাখতে পারি নাই। এতটা কষ্ট হয়ে ছিলো। আমি এই গল্পের জন্য তো ব্রো কে কত বকা ঝকা দিয়েছি।”
ইতি আর সোনালী আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। সোনালী ভাবছে…..
—” এই মানুষটার মন মানসিকতা কতটা খারাপ এখন বুঝতে পারছি আমি। এমন ভয়ংকর উপন্যাস কিভাবে লিখে ওনি আমার তো শুনেই হাত পা কাপছে।”
ইতি তখন আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো……
—-” লেখক ভাইয়া আমি যদি পুলিশ হতাম এই ধরনের কলিজা কাপা বই লেখার জন্য আপনাকে থানায় নিয়ে যেতাম।”
আরিয়ান ইতির কথায় হাসতে লাগলো।
—” এইটুকু শুনেই এই কথা পুরো বই পড়লে হয়তো আমাকে রাক্ষস ভাববে। ওকে আমার তরফ থেকে তোমাদের দু জনকে দুইটা বই গিফট করা হবে।”
—” হুম।”
সোনালীর মনে প্রশ্ন জাগতে শুরু করলো
—” এত বড় লোক মানুষ তাহলে বই লেখার সময় কিভাবে পায়? আর ওনি বই লিখেও বা কেনো?”
সোনালী তার মনের কথা বলেই দিলো…..
—” আচ্ছা আপনি বই কেনো লিখেন?”
হৃদয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিয়ান বললো…..
—” আমার শখ তাই লিখি তোমার কোনো প্রবলেম আছে?”
—” উহু।”
।।
।।
।।
।।
একটা রেস্টুরেন্টের ধারে নামে ওরা চারজন। রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার খেয়ে আরিয়ান ওদের দু জনের বাসার মেইন রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। এইভাবে চলে যায় পনেরো দিন। পনেরো দিন আরিয়ানের অত্যাচার, মারাত্মক হাঁসি, কড়া কড়া কথা শুনতে শুনতে সোনালী প্রায় পাগল হওয়ার অবস্থা। হটাৎ করেই ইতি ফোন দিয়ে সোনালী কে বললো…..
—-” আজ পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছে আর পছন্দ করে ফেলেছে।”
—” ওয়াও কনগ্রাচুলেট বাবু।”
—” আমাকে মিট করতে বলছে ও।”
লজ্জামাখা কণ্ঠে বললো ইতি……
—” বাব্বাহ ও হয়ে গেছে। এখন বল তোর ও কেমন দেখতে?”
—” হুম ভালো।”
—” ওই তুই কবে থেকে লজ্জা পেতে শিখলি রে?”
—” ওর সামনে যেতে আমার লজ্জা করছে কি করবো বল?”
—” এক দিনেই এত কিছু বেবি তুমি তো গেছো হাহাহা।”
—” আসলে ওকে প্রতিদিন দেখতাম আমার বাড়ির পাশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতো। ও কিছু বলেনি কোনোদিন কিন্তু হটাৎ আজ ওর ফ্যামিলি নিয়ে আসছে।”
—” ওওও তারমানে তোর ওই পথিক ক্রাশ?”
—” হুম।”
—” বাহ বলতে হবে ছেলেটার গুন আছে। তোকে বিরক্ত না করে একদম বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিছে। শোন যখন বলছে মিট করার জন্য তাহলে যা।”
—” আমি একা যাবো কিভাবে তুইও যাবি আমার সাথে।”
—” ওই তোদের মাঝে আমি কাবাব মে হাড্ডি হতে চাই না। তাছাড়া নিউ দুলাভাই কি ভাববে?”
—” ওকে বলেছি আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে নিয়ে আসবো তা শুনে ও খুব খুশি হয়েছে।”
—” তবুও কেমন দেখা যায় না।”
—” তুই আসবি এইটাই ফাইনাল। তোকে আমি ঠিকানা দিচ্ছি সময় মত চলে আসবি ব্যাস ।”
ফোন কেটে ম্যাসেজে ঠিকানা দিয়ে তার হবু বরের সাথে কথা বলতে লাগলো……..
সোনালী ইতির কথা শুনে খুব খুশি হলো।
—” আমারও তো খুব ইচ্ছা ছিল আমার জীবনে এমন কেউ আসবে যার সাথে আমার কথা বলতে লজ্জা করবে যার কথা মনে হলে লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে যাবে যে আমায় খুব ভালোবাসবে। কিন্তু এমন কিছু না হয়ে ভিলেন আসলো আমার জীবনে।”
সোনালীর ফোনে আবার কল আসলো। আরিয়ান ফোন দিয়েছে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করলো তখন সোনালী কিছু বলার আগেই আরিয়ান বললো……
—” আগামীকাল তোমার সাথে আমার দরকারি একটা কথা আছে রেডি হয়ে মেইন রাস্তায় চলে এসো।”
—” আগামীকাল পারবো না আপনার সাথে যেতে। ”
—” কেনো?”
—-” ইতির সাথে এক জায়গায় যেতে হবে আমাকে।”
—” আমি বলছি তুমি আমার সাথে দেখা করবে মানে দেখা করবে এইটাই ফাইনাল ওকে।”
সোনালীকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোন কেটে দিলো আরিয়ান। সোনালী রাগে কিছু বাজে ভাষায় বকা দিলো আরিয়ানকে।
—-” এই প্যারাটা কবে যে আমার জীবন থেকে বিদায় নিবে আল্লাহ জানে। আগে জানলে জীবনেও এই বজ্জাতের নামে মিথ্যা অপবাদ দিতাম না। শালা আমার জীবনটা তেজ পাতা বানিয়ে দিচ্ছে।”
—” আপু আপু তোমাকে সেই কখন থেকে খুঁজছি।”
একটি দশ বছরের মেয়ে আসলো নাম তার তিরা। সোনালী খুব ভালোবাসে মেয়েটাকে।পাশের বাসার আন্টির মেয়ে। তিরার সাথে অনেক সময় কাটায় সোনালী। সোনালী তিরা কে দেখে বললো…..
—” কেনো আজ এত খুঁজেছিস কেনো আমায়?”
—” তুমি ভুলে গেছো আজ আমার পুতুলের বিয়ে হবে। তোমাকে না কিছুদিন আগে বলেছি। আজ বিয়ে তাই গান গাইবে তুমি।”
—-” আজকাল যে সমস্যায় আছি সব ভুলে যাই।”
—-” এখন তো চলো।”
—” কার পুতুলের সাথে বিয়ে দিচ্ছিস?”
—-” আলিশার পুতুলের কাছে বিয়ে দিচ্ছি। চলোতো তাড়াতাড়ি।”
তিরা সোনালীকে টেনে নিয়ে গেলো। সোনালী দেখলো বেলুন দিয়ে তিরার রুম সাজানো। ছোট্ট একটা কার্ড লেখা আজ তিরু মনির বিয়ে। পুতুল কে লাল শাড়ি পড়িয়ে রেখেছে। সোনালী তখন ভাবলো……
—” কবে যে পুতুল খেলেছি এখন আর মনে পড়ছে না। ইসসসসসস ছোট থাকতেই কত ভালো ছিলাম। কেনো যে বড় হলাম। খুব মিস করছি পুতুল খেলা।”
—” আপু দেখো ছেলের বাড়ির লোকজন এসে পড়েছে গান বলো এখন ।”
সোনালী তিরার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো…..
— হুম বলছি।”
তিরা বুড়ির পুতুলের বিয়ে,
তাই, বুড়ির নেইতো ঘুম!
বুড়ির ঘরে বাজে ঢোল,
টাক ডুম টাক ডুম।
আজ পুতুলের গায়ে হলুদ,
কাল পুতুলের বিয়ে।
বুড়ির পুতুল নিয়ে যাবে,
টোপর মাথায় দিয়ে।
খাওয়া হলো, দাওয়া হলো,
সবাই বললো চল!
সখের পুতুল যাবে চলে,
বুড়ির চোখে জল।
মনটা তার বড়ই খারাপ,
শূন্য বুড়ির ঘর।
পুতুলকে কি রাখবে সুখে,
পুতুলের প্রিয় বর?
দিন যে বুড়ির আর কাটেনা,
একলা প্রহর গুনে।
অনেকদিন হয় নি কথা,
প্রিয় পুতুলের সনে।
পুতুলকে বিদায় দিচ্ছে তিরা আর কান্না করছে মনে হচ্ছে ওর মেয়ে সত্যি সত্যিই অন্য ঘরে দিয়ে দিচ্ছে। আলিশা তখন বললো……
—” কাদিস না তো আমি বলছিনা তোর কাছে থাকবে পনেরো দিন আমার কাছে থাকবে পনেরো দিন। ”
আলিশার কথা শুনে তিরা হাসলো। ওদের এমন বন্ধুত্ব দেখে সোনালীও হাসলো আর ইতির কথা ভাবতে লাগলো যে কিছুদিন পর তার বেস্ট ফ্রেন্ড অন্যের হয়ে যাবে। দরকার হলে আগের মত আসতে পারবে না। এইসব ভেবেই গভীর নিঃশ্বাস ফেললো সোনালী…..
চলবে……
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন। গান / কবিতাটি কপি করা হয়েছে।
#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৯
(১৮+ এলার্ট)
আলিশার কথা শুনে তিরা হাসলো। ওদের এমন বন্ধুত্ব দেখে সোনালীও হাসলো আর ইতির কথা ভাবতে লাগলো যে কিছুদিন পর তার বেস্ট ফ্রেন্ড অন্যের হয়ে যাবে। দরকার হলে আগের মত আসতে পারবে না। এইসব ভেবেই গভীর নিঃশ্বাস ফেললো সোনালী…..
পরের দিন…..
সোনালী রেডি হয়ে ইতির দেওয়া ঠিকানায় যাওয়ার জন্য রেডি হলো। মেইন রাস্তার মোড়ে আসতেই দেখে আরিয়ান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে…..
—-” এই অশুভটা এইখানে কি করছে? ওনি জানলো কিভাবে আমি এইসব বের হবো।”
সোনালী ধীরে ধীরে পিছন চলে যাচ্ছে যেনো আরিয়ান না দেখে। সোনালী উল্টো ঘুরতেই আরিয়ান বলে…..
—-” এই আরিয়ানের চোখে ধুলো দিতে পারবে না।”
—” ধরা খেয়ে ফেলেছি।”
জিব কেটে বললো সোনালী। আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো…..
—” প্লিজ আজকের দিনের জন্য যেতে দিন। ইতি ওয়েট করছে আমার জন্য।”
—” নো।”
—” প্লিজ।”
—” ওকে আগে আমার সাথে চলো তোমায় এক জায়গায় নিয়ে যাবো পরে না হয় তুমি ইতির কাছে যেও।”
—” নাহ আমার এক্ষুনি যেতে হবে।”
—” কি এমন দরকার যে আর্জেন্ট যেতে হবে?”
—” ও আজ ওর হবু স্বামীর সাথে মিট করতে যাচ্ছে। আমাকেও যেতে বলছে।”
—” ছিঃ মিসেস চৌধুরী ছিঃ তোমার কি কমন সেন্স নেই। তুমি নতুন হবু বউ আর স্বামীর মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি হতে যাচ্ছো লজ্জা থাকা দরকার তোমার।”
—” ওরা আমায় জোর করছে বলেই যাচ্ছি। আমি আপনার মত না যে পারমিশন ছাড়াই কাজ করবো।”
—” আমি কারো পারমিশনের দরকার মনে করি না আমার লাইফে। আর শুনো তোমায় আজ এক জায়গায় নিয়ে যাবো। ওইখানে কাজ শেষ হলে যেতে পারবে ইতির কাছে।”
সোনালী বুঝতে পারলো এখন হাজার কিছু করলেও আরিয়ান তাকে যেতে দিবে না তাই বাধ্য হয়ে আরিয়ানের গাড়িতে বসে পড়লো……..
কিছুক্ষণ ড্রাইভ করার পর সোনালী বললো……
—” কোন দরকারে আমায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
—” গেলেই দেখতে পাবে।”
—” তবুও জানাটা দরকার আমার।”
—” আমার ফ্রেন্ডের ব্রেকআপ হয়ে গেছে। এখন সে পাগলের মত তাই তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি ওর কাছে।”
—” হোয়াট? কি বলছেন আপনি? আমি কি করবো ওইখানে গিয়ে ? আপনার বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে যান আমায় নিচ্ছেন কেনো আজব লোক তো আপনি।”
—” ওর সেবা করার জন্য। কিছুদিন ওর গার্লফ্রেন্ড হয়ে থাকার জন্য। যখন সুস্থ্য হয়ে যাবে পরে তোমাকেও মুক্ত করে দিবো।”
সোনালী এইবার সত্যিই খুব রেগে গেলো। জোরে চিৎকার করে বললো……
—” আমি আপনার মত মাথা খারাপের সাথে কোথাও যাবো না। আমি এক্ষুনি বাসায় যাবো। আমাকে মুক্তি দিন আপনার থেকে।”
—” তোমার কোনো মুক্তি নেই যতদিন বেঁচে থাকো আমার সাথেই থাকতে হবে তোমার।”
—” মরে যাবো তবুও আপনার সাথে থাকবো না।”
সোনালী গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা করছে কিন্তু লক করা থাকায় পারছে না। রাগের বসে গাড়িতে থাকা এক বোতল পানি ঢেলে দিলো আরিয়ানের উপর। আরিয়ান গাড়ি ব্রেক করে সোনালীর দিকে তাকালো…….
আরিয়ানের পুরো মুখ ভেজা পানি বেয়ে পড়ছে। অন্য রকম লাগছে আজ সোনালীর আরিয়ানকে দেখে কিন্তু মনে এখন ভয় করছে যদি কিছু করে বশে……..
আরিয়ান সোনালীর দিকে তাকিয়ে সোনালীর মুখের কাছে মুখ আনলো। আরিয়ান তার ঠোঁট সোনালীর ঠোঁটে মিশিয়ে দিলো। সোনালী বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আরিয়ানকে কিল ঘুসি দিতে লাগলো…….
—” বাহ খুব টেস্টি তো। কোন ব্র্যান্ডের লিপস্টিক ব্যবহার করো?”
সোনালী আরিয়ানের কথা শোনে আরিয়ানকে সজোরে থাপ্পড় মারে আরিয়ান গালে হাত দিয়ে সোনালীর দিকে তাকিয়ে রইলো……
—” মানছি আমি আপনার বিয়ে করা বউ কিন্তু আমি আপনাকে এখনও স্বামীর অধিকার দেয়নি তাহলে কোন সাহসে আপনি আমাকে কিস করলেন। আপনার সাথে কথা বলতে লজ্জা হচ্ছে আমার। আপনি আমার জীবনটা তেজপাতা করে দিচ্ছেন প্লিজ মুক্তি দেন আমায়।”
সোনালী কাঁদতে থাকে আরিয়ান কিছু না বলে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো। গাড়িতে বসে কেউ আর কারো সাথে টু শব্দ পর্যন্ত করলো না…….
।।
।।
।।
।।
ইতি বসে আছে তার হবু বর নাহিদের সামনে। নাহিদ তাকে প্রশ্ন করলো…..
—” তুমি কি সত্যিই রাজি এই বিয়েতে?”
ইতি মাথা নিচু করে বললো…..
—” হুম।”
—” আলহামদুলিল্লাহ। এখন বলো তুমি কি নিজের পছন্দ থেকে রাজি হয়েছো নাকি পরিবার বলাতে রাজি?”
—” দুটোই।”
—” তোমার কি আগে কোনো রিলেশন ছিল?”
—” উহু।”
—” কি বলছো এইসব বিশ্বাস হচ্ছে না। তোমার আগে রিলেশন ছিল না কথাটা মনে হচ্ছে আমাকে ভয় পেয়ে বলছো।”
—” সত্যিই বলছি কোনো রিলেশন ছিল না আর যদি থাকতো তাহলে তো আর এই বিয়ে হতো না।”
—” হুম তাও ঠিক।এখন বলো রিলেশন ছিল না কিন্তু পছন্দ তো ছিলো?”
—” হুম।”
—” কে সেই ব্যাক্তি?”
—” আমি প্রচুর ক্রাশ খেতাম তাই প্রতিদিনই আমার অনেক অনেক জনকে পছন্দ হতো।”
নাহিন ইতির কথা হাসলো। ইতি তখন জিব কেটে বললো…..
—” হ্যায় হ্যায় কি বললাম এখন যদি বিয়ে না হয় আমার।”
—” টেনশন করো না এইটার জন্য বিয়ে ভেঙ্গে যাবে না। তুমি সত্যি কথা বলেছো এইটাই অনেক বাই দা ওয়ে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড না আসার কথা কোথাও ওনি?”
—” আমিও তাই ভাবছি কোথাও ও। ফোন দিচ্ছি বাট রিসিভ করছে না কোনো সমস্যা হলো না তো আবার?”
—” আমার মনে হয় ওনি আমাদের মাঝে আসতে লজ্জা পাচ্ছে তাই হয়তো আসে নাই আর তোমার ফোনও রিসিভ করছে না।”
—” তাই হবে, ও যে লজ্জাবতী মেয়ে।”
—” হুম। এখন বলো কি খাবে?”
—” নাহ কিছু খাবো না।”
—” বাহ বিয়ে না হতেই স্বামীর টাকা আয় করছো।”
নাহিদের কথা শুনে আবারো লজ্জায় লজ্জাবতী হয়ে গেলো ইতি।
—” এত লজ্জা পেতে হবে না প্রিয় আর তোমাকে খাওয়ানোর জন্য টাকা শেষ হবে না বলো কি খাবে?”
—” আপনি অর্ডার করুন আজ না হয় আপনার পছন্দের কিছু খাই ।”
—” ওকে আজ আমার পছন্দের কিন্তু পরে তোমার।”
—” হুম।”
নাহিদ খাবার অর্ডার করলো। ইতি ও নাহিদ কথা বলছে আর খাচ্ছে…….
।।
।।
।।
।।
আরিয়ান বড় এক বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো। সোনালীর পা জমে আছে। ওর বার বার মনে পড়ছে বাংলাদেশের বউ বন্ধক ছবিটার কথা। আরিয়ান কি তাকে এইখানে রেখে চলে যাবে? আরিয়ান কি তার কষ্ট বুঝবে না? সোনালী ভয়ে ভয়ে গাড়ি থেকে নামলো কিন্তু সামনে এগুতে চাচ্ছে না।
—” দাঁড়িয়ে আছো কেনো চলো?”
—” আমি যাবো না।”
—” কেনো?”
—” আমার পা ব্যাথা করছে আপনি যান আমি এইখানে বসে আছি।”
সোনালী ভয়ে মিথ্যা কথা বলে ফেললো। আরিয়ান সোনালীকে এক নজর দেখে আচমকাই সোনালীকে কোলে তুলে নিলো……
—” এই কি করছেন নামান আমাকে আমি পরে যাবো আমি।”
—” একদম চুপ। তুমি বলেছো তোমায় কিস করার অধিকার নেই কিন্তু কোলে তোলার অধিকার তো আছে।”
—” আমি কি বলেছি সেই কথা?”
—” কিন্তু এইটাও তো বলো নাই। এখন চুপ থাকো।”
—” আচ্ছা আপনার বন্ধু কেমন?”
—” খুব বাজে ছেলে একজন।”
—” প্লিজ আমি বাসায় যাবো।”
আরিয়ান সোনালীর দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালো সোনালী চুপ করে থাকলো…….
আরিয়ান ওই বড় বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো। আরিয়ানকে সবাই সালাম দিচ্ছে সোনালী এত এত মানুষ দেখে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে কারণ ও আরিয়ানের কোলে……
—” সবাই দেখছে নামান আমাকে আর আমার পায়ে ব্যাথা নেই মিথ্যা বলেছিলাম আপনাকে।”
—” জানি আমি।”
—” কিভাবে?”
—” আরিয়ানের চোখকে ফাঁকি দেওয়া যে সম্ভব না।”
সোনালী অবাক হলো। আরিয়ান তার মিথ্যা জানার পরও কোলে নিয়ে এতটা পথ হেঁটে এসেছে। আরিয়ান সোজা একটা রুমের ভিতর প্রবেশ করলো। একজন বয়স্ক মহিলা শুয়ে আছে পাশে দু জন মেয়ে দেখে মনে হচ্ছে নার্স। আরিয়ান ওই মহিলার সামনে এসে সোনালীকে নামিয়ে মহিলার কাছে গিয়ে বললো…….
—” কেমন আছো দাদী?”
—” আরেহ আমার দাদু ভাই এসেছে। খুব ভালো আছি দাদু ভাই।”
সোনালীর দিকে তাকিয়ে বললো…..
—” ও কি সেই লীলাবতী?”
—” হুম।”
—” মাশাআল্লাহ। আয় তো বোন আমার কাছে আয়।”
সোনালী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান তো তাকে বলেছে তার এক বন্ধুর কাছে নিয়ে যাচ্ছে তাহলে কি আরিয়ান তাকে মিথ্যা বলেছে। আরিয়ান তখন সোনালীকে ইশারা করলো যেনো বয়স্ক মহিলাটার কাছে গিয়ে বসে। সোনালী মহিলাটার কাছে গিয়ে বসলো। তখন ওই মহিলা সোনালীকে দেখে বললো…..
—” কেমন আছো গো সুন্দরী?”
সোনালী হাসলো…..
—-” হুম ভালো আছি গো বিশ্ব সুন্দরী।তুমি কেমন আছো?”
—” তোকে কাছে পেয়ে অনেক অনেক খুশি হয়েছি কই ছিলি এতদিন তুই? কি মিষ্টি দেখতে রে তুই। আমার দাদু ভাইয়ের পছন্দ আছে।”
আরিয়ানের দাদী ও সোনালী কথা বলতে বলতে অনেক আপন হয়ে যায়। সোনালীর খুব ভালো লাগলো আরিয়ানের দাদীকে। এক ঘন্টা থাকার পর আরিয়ান বললো……
—” দাদী এখন ওর যেতে হবে নাহলে ওর বাসায় সমস্যা হবে।”
—” এক্ষুনি চলে যাবে। ”
মন খারাপ করে বললো তখন সোনালী বললো…..
—” আমি আবার আসবো তুমি কষ্ট পেও না এখন তো তোমার সাথে আমার প্রতিদিনই কথা হবে।”
সোনালী যখন দাদীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দরজার কাছে যাচ্ছিলো তখন হৃদয় এসে বললো……
—” আরেহ ভাবী আপনি কখন এসেছেন আর কেমন আছেন?”
—” হুম ভাইয়া ভালো। আপনি কেমন আছেন? আর এক ঘণ্টার মত হলো এসেছি।”
—” আমিও ভালো আছি। ভাবী আপনার সেই ঝগড়ুটে ফ্রেন্ড আসলো না আজ?”
—” ওওওও ইতি ওর তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আজ ওর হবু বরের সাথে মিট করতে গিয়েছে।”
—” ওহহ। ওকে ভাবী আমি আসছি আমার একটা দরকারি কাজ আছে।”
হৃদয় কেমন যেনো হয়ে গেলো। আরিয়ান সোনালীকে নিয়ে আবারো ড্রাইভ করতে লাগলো সোনালী ও আরিয়ান আর কোনো কথা বললো না। গাড়ি এসে থামলো সোনালীর বাড়ির সেই মেইন রাস্তার সামনে। সোনালী গাড়ি থেকে নেমে নিজের বাসায় চলে গেলো………
।।
।।
।।
পরের দিন খাবার টেবিলে………
চলবে…..
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন। গল্পে আজ ১৮+ কিছু কথা ব্যাবহার করা হয়েছে তার জন্য সরি আমি।