#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_১১
সকালে উঠে যা দেখলো তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সোনালী………
মেয়েদের কমেন্টের ভিড় জমে আছে। কতজন কত ভাবেই না বকছে সোনালীকে। কারো কারো কমেন্ট ছিলো….
** গতকাল রাতে দেখলাম কমেন্ট এখন দেখি রিলেশনশিপ বলি মাইয়া তোমার মাথা ঠিক আছে তো?**
** বিশ্বাস করেন এই পোষ্ট দেখে আমি পাবনা হসপিটালে ফোন দিচ্ছি। আপনারা কি ভাবছেন আমি যাবার জন্য আসলে না এই পাগল মেয়েকে পাঠানোর জন্য।**
** বইন তুমি কবে পাবনা থেকে পালিয়ে এসেছো?**
** আমি সিউর এই মাইয়ার মাথা খারাপ। তাই তো বলি গতকাল এমন পাগলের মত কমেন্ট করলো কেনো?**
** এই মেয়ের পরিবারের কাছে আবেদন করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার মেয়েকে বাড়ি থেকে ঝাড়ু মেরে বের করুন তানাহলে কিছুদিন পর আপনাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।**
এমন অনেক অনেক কমেন্ট। ছেলেদেরও কমেন্টও কম যায় না…..
** সবাই এক আরিয়ান নিয়েই পড়ে আছে এইদিকে যে হাজার হাজার আরিয়ান গার্লফ্রেন্ডের জন্য মেয়ে খুঁজছে তার খবর কেউ রাখে না। ওই কে আছিস আমায় গোলাপী কালারের বিষ দে খাইয়া এই জীবন ত্যাগ করি।**
** এই মেয়ে রিলেশন স্ট্যাটাস দিলেই কি লেখক আরিয়ানকে পাবে শুধু শুধু বকার ভাগীদার হচ্ছো তার চেয়ে আমার সাথে রিলেশনশিপ দিতে আমি কিছু মনে করতাম না।**
** আমাদের মত হতভাগাদের কেউ দেখে না সবাই খালি আরিয়ান আরিয়ান করে।**
** আমার সাথে প্রেম করলে আমি মাইন্ড করবো না।**
এমন আরও অনেক অনেক কমেন্ট। সোনালী মাথায় হাত দিয়ে কমেন্ট পড়ছে। ও ভাবতে পারে নাই এমন কিছু হবে।সোনালী রিলেশন স্ট্যাটাস ডিলেট দিতে গিয়ে দেখলো আরিয়ান ভাব ওয়ালা ইমোজি দিয়ে কমেন্ট করেছে। এমন ভাব দেখে সোনালীর রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে…..
—” একটু লেখে বলে তার এত ভাব। ভাব দেখলে আর বাঁচি না। দাঁড়া আজ এই মিথ্যা বিয়েই আমি সবার সামনে আনবো।”
সোনালীকে হৃদয় মাঝে মাঝে ফোন দেয়। সোনালী কল লিস্ট খুঁজে হৃদয়ের নাম্বার বের করলো……
—” আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন ভাইয়া।”
—” আরেহ ভাবী, ওলাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি?”
—” আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি ভাইয়া। ভাইয়া একটা কথা বলবো?”
—” জ্বি বলুন ভাবী?”
—” আপনার কাছে কি আমার আর আপনার ভাইয়ের বিয়ের পিক গুলো আছে?”
—” হুম আছে। কিন্তু কেনো?”
—” যদি আমাকে একটু দিতেন খুব ভালো হতো।”
—” হুম দিচ্ছি ভাবী। হোয়াটস অ্যাপে দিচ্ছি দেখুন ভাবী।”
—” অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।”
—” মোস্ট ওয়েলকাম। আচ্ছা ভাবী আপনার ফ্রেন্ড ইতির বিয়ে কবে?”
কথাটা বলতে হৃদয়ের গলা ধরে যাচ্ছে তবুও কষ্ট করে বললো…..
—-” সামনের মাসের তিন তারিখ ভাইয়া।”
—” ওহহ ওকে ভাবী।”
—” কিছু কি বলবেন?”
—” হুম না ভাবী রাখছি ভালো থাকবেন।”
—” আপনিও।”
হৃদয় ফোন কেটে দিলো। সোনালী পিকগুলো সেভ করে ফেসবুক আপলোড দিলো। সবার চোখ এখন ছানাবড়া। কেউ কেউ বলছে ……
**এইগুলো আগের বারের মত মিথ্যা**
কেউ বা বলছে …….
**এ হতে পারে না**
সোনালী এত সুন্দর জবাব দিতে পেরে খুশি হয়ে বাগানে চলে গেলো…….
সোনালীর বাগানের জায়গাটা খুব কম কিন্তু তবুও খুব সুন্দর। বিভিন্ন ধরনের গাছ আছে বাগানে…… নয়নতারা, অপরাজিতা, কাঠ টগর,নন্দিনী,পানিকা ফুল,দোলন চাঁপা, কামিনী,মর্নিং গ্লোরি,পর্তুলিকা,গোলাপ, জবা আরো বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ। সোনালীর মন একদম ভরে গেছে এত এত ফুল দেখে। কিন্তু সোনালী মর্নিং গ্লোরি গাছের দিকে তাকিয়ে বললো……
–” এখন তো সকাল না তাহলে এই ফুল ফুটলো কেনো? খুব সুন্দর করে ফোটে আছে । দেখতে কিন্তু বেশ লাগছে।”
—” সোনালী তুই তাড়াতাড়ি একটু আমার রুমে আসতো!”
—” হুম যাও আসছি।”
সোনালী ওর মায়ের কাছে গিয়ে বসলো। সোনালীর মা মেয়েকে দেখে বললো…..
—” আজ এত খুশি কেনো?”
—” বাগানের ফুল দেখে ইসসসসসস মনটা ফ্রেশ হয়ে গেছে। ”
—” যেহেতু মন ফ্রেশ তাই তাড়াতাড়ি এই শাড়িটি পরে আয় তোকে আজ পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে।”
কথাটা শুনে সোনালীর মুখের হাসি নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো…..
—” কি বলছো এইসব তুমি?”
—” ঠিক বলছি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয় এক্ষুনি চলে আসবে ওরা।”
—” হটাৎ করেই পাত্র পক্ষ আসবে কেনো বাসায়?”
—” হটাৎ করে কই আমাদের জানিয়েই তো আসছে।”
—” কই আমি তো জানি না কিছু।”
—” আমাদের সময় বিয়ের তারিখ পর্যন্ত বলতো না যখন গায়ে হলুদ হতো তখন বুঝতাম আগামীকাল বিয়ে। তাই তো লজ্জা পেয়ে আর কারো সাথে কথা বলি নাই আর এখনকার যুগের মেয়ে মাকে বলছে ও কেনো জানে না। লজ্জা সরম সব শেষ এখন।”
সোনালী কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইতি এসে বললো……
—” আরেহ মাদার ইন্ডিয়ার ফ্রেন্ড আমি আছি না দেখো তোমার মেয়েকে তুড়ি বাজিয়ে সাজিয়ে দিবো।”
—” এই জন্যই তো তোকে ডেকে এনেছি নে সাজা ওরা এক্ষুনি চলে আসবে।”
—” ওকে।”
সোনালীকে টেনে ইতি সোনালীর রুমে নিয়ে গেলো…….
সোনালী তখন বললো…….
—” ওই তোর কি মাথা খারাপ? জানিস না আমার বিয়ে হয়ে গেছে একটা মেয়ের আর কতবার বিয়ে হবে?”
—” আরেহ গাঁধী ওইটা তো মিথ্যা বিয়ে। রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য করা হয়েছে । আর শুন এই বিয়েটা হলে তুই ওই লেখক ভাইয়ার কাছ থেকে মুক্তি পাবি। তখন আর ওনি তোকে তোলে নিয়ে যেতে পারবে না এমনকি অত্যাচারও না।”
—” সত্যি!”
—” হুম।”
—” তবুও যদি ওনি পুলিশ নিয়ে এসে বলে আমি তার বিয়ে করা বউ তখন কি করবো আমি?”
—” গাঁধী, ওনি এই কথা বলবে না। ওনি তো আর তোকে আসল বিয়ে করে নাই যে ভিলেন হয়ে আসবে। যখন শুনবে তোর বিয়ে ঠিক তখন হয়তো মনটা নরম হবে তোকে আর বিরক্ত করবে না।”
—” তাহলে শাড়িটা পরে ফেলি কেমন?”
—-” আর শুন দেখতে আসলেই বিয়ে হয়ে যায় না। ”
—” তাহলে দেখতে আসার কোনো মানেই হয় না।”
—” দেখতে আসলে তো আমাদেরই ভালো শালী। ওরা টাকা দিবে আর আমরা বইমেলায় বই কিনতে পারবো হিহিহিহি।”
—” ওয়াও গ্রেট। এখন থেকে দেখতে আসলে আর বারণ করবো না। দেখতে আসলে তো বই কিনার টাকা হয়ে যাবে। জানিস কত গুলো বই যে সিলেক্ট করে রেখেছি।”
— ” আমিও। পরে মিলিয়ে দেখবো কোনো বই বাদ রইলো কি না এখন শাড়িটা পরে ফেল।”
—” ওকে বেফী।”
সোনালী কালো কালারের এক শাড়ি পড়লো। গয়না, চুড়ি সব ম্যাচিং করে পড়ছে। হালকা সাজ ঠোঁটে হালকা গোলাপি কালারের লিপস্টিক চুল গুলো খোঁপা করে বাঁধা। ফর্সা গায়ে কালো শাড়িটা একদম খুব মানান সই। ইতি তো সোনালীর দিকে তাকিয়ে আছে……
—” তোকে দেখে তো আমি আহত হয়ে গেছি দুলাভাই যে নিহত হবে আমি সিউর।”
—” ওই কথা বলবি না হাজার হোক আমার দশটা না পাঁচটা না একটাই মাত্র স্বামী হবে এমন কথা ভুলেও আনবি না।”
—” ওকে। আয় কয়েকটা সেলফি তুলি।”
দুই বান্ধবী মিলে পিক তুললো। সোনালী আম্মু এসে বললো পাত্র পক্ষ চলে এসেছে……..
।।
।।
।।
।।
পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছে সোনালী। একবারও সামনে তাকিয়ে দেখছে না কে বসে আছে……
—” কি রে বোন একবার তো আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখ।”
সোনালী চমকে উঠে মুখ উঠতেই দেখলো ওর সামনে আরিয়ানের দাদী, আরিয়ান আর হৃদয় বসে আছে। দাদী আর হৃদয় মিটমিট করে হাসছে কিন্তু আরিয়ানকে দেখে বুঝা যাচ্ছে বেশ রেগে আছে……
সোনালী ওর আব্বু আম্মুর দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো। আরিয়ানের দাদী তখন বললো…..
—” মেয়ে আমাদের বেশ পছন্দ হয়েছে এখন তোমরা বলো তোমাদের কি আমার নাতিকে পছন্দ হইছে।”
—” ছেলে অপছন্দ হওয়ার কোনো কারণ নেই বড়আম্মা আপনি যে আমাদের মেয়ে কে পছন্দ করেছেন এইটাই তো আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না কি বলো সোনালীর আব্বু।”
—” হুম। ছেলে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে।”
—” বিয়ের তারিখ তাহলে ঠিক করে ফেলি কি বলো তোমরা?”
সোনালীর আব্বু আম্মু আগের কথা জানে না তাই সোনালীর আম্মু বললো…..
—-” বড়আম্মা আমাদের উচিৎ ছেলে ও মেয়ে কে আলাদা একটু কথা বলতে দেওয়া।”
—” আমিও তাই ভাবছি। আরিয়ান যা তুই সোনালীর সাথে একটু আলাদা কথা বল আর তোদের মতামত দে।”
—” হুম।”
সোনালী আরিয়ানকে নিয়ে তার রুমে গেলো। বেচারা হৃদয় চুপচাপ বসে আছে বড়দের মাঝে।
সোনালীর রুম আরিয়ানের রুমের মত এত বড় না কিন্তু খুব সুন্দর করে সাজানো। পুরো রুম জোরে পুতুলের ছড়াছড়ি। একটা পুতুল হলো সোনালীর থেকেও বড়।
—” এই বাচ্চাদের রুম কার?”
—” এইটা আমার রুম বাচ্চাদের না ওকে।”
সোনালী আঙ্গুল ঘুরিয়ে বললো আরিয়ান তখন সোনালীর আঙ্গুল ধরে হাত টান দিয়ে নিজের কাছে মিশিয়ে বললো……
—-” তোমার তো দেখছি বিয়ে করার খুব শখ।”
—” তো কি হয়েছে?”
—” তুমি তো জানতে না যে পাত্র পক্ষ আমরা তাহলে অন্য কেউ ভেবেই রাজি হয়ে গেছো?”
সোনালী চুপ ওতো অন্য কেউ ভেবেই রাজি হয়েছিল।
—” কি হলো চুপ কেনো?”
—” আপনি তো সংসার করার জন্য আমাকে বিয়ে করেন নাই রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য করেছেন তাহলে আমি কেনো আমার বাবা মা কে কষ্ট দিবো তাই রাজি হয়েছি।”
—-” তোমাকে বলেছিনা যতদিন বেঁচে থাকো এই আরিয়ানের সাথেই থাকতে হবে । আর আজ ফেসবুকে এইসব কি করেছো।”
—” না করে উপায় কি সবাই যে হারে আমাকে গালি দিচ্ছিলো এইটা ছাড়া তো উপায় ছিলো না।”
—” বুঝেছি হিংসা হয়। নিজের স্বামীকে তো আর ভাগ করতে পারো না তাই এমন করে ফেলেছ।”
—” বয়েই গেছে আমার।”
—” মিথ্যা বলা আমি পছন্দ করি না। আমি জানি তুমি কেনো এইসব করেছো।”
—” এখন হাত ছাড়েন। ”
আরিয়ান সোনালীর কথা না শুনে সোনালীকে আরো কাছে টেনে নিয়ে কথা বলতে লাগলো….
হৃদয় কিছুক্ষণ বসে থেকে বোরিং হয়ে গেছে। তাই বাসাটা ঘুরে দেখবে বলে ওদের কাছ চলে আসে…….
একটা রুমের কাছে এসে হৃদয় অবাক হলো। একটা মেয়ে কোমরে ওরনা বেঁধে টুলের উপর দাঁড়িয়ে কিছু একটা করছে। সম্ভবত এক পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে…..
মেয়েটাই যেই পা উঠাবে তখন টুল কাথ হয়ে মেয়েটি পরে যেতে নিয়েই হৃদয় ধরে ফেলে। হৃদয় ইতিকে দেখে সারপ্রাইজ হয়ে যায়।
চলবে……
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।