মিষ্টি রোদের হাতছানি পর্ব-৫+৬

0
585

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_5

ধরণীর কোল জুড়ে বর্ষণ হচ্ছে আষাঢ়ের বৃষ্টি।আকাশ ছেয়ে আছে ঘন কালো মেঘে।ঠিক এমনি দিনে নাহিদের কাছে এক বেনামী চিঠি এসেছিলো।সে বেশ অবাক হয়েছিল সেদিন।এমন দুঃসাহসী কাজ কেউ কি ভাবে করতে পারে?একজন মেয়রের কার্যালয়ে প্রেমপত্র পাঠানো সহজ কিছু না।

নাহিদ টেবিলে কাজ করতে করতে বার বার পাশে রাখা খামটির দিকে তাকাচ্ছে।একটু আগেই আসফি তাকে এই খামটি দিয়ে গেছে।দেওয়ার সময় সে মুচকি হেসে বলেছিল

-“ভাই আপনার এবার একটা জবাব পাঠানো উচিৎ।চিঠির জবাব না পাওয়াটা পৃথিবীর অন্যতম বিরক্তিকর বিষয়।”

নাহিদ বাঁকা হেসে বলেছিল
-“কারো চিঠির জবাব দেওয়া ছাড়াও আমার হাতে অনেক কাজ আছে।আমার লাইফে এসবের কোনো জায়গা নেই।”

আসফি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।ছাত্রজীবন থেকেই সে নাহিদের সাথে আছে।এই মানুষটা পলিটিক্স ছাড়া কিছুই বুঝে না।তার রক্তে মিশে আছে রাজনীতি।ভালোবাসা,বিয়ে,সংসার এসবে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।সারাদিন কাজেই ডুবে থাকে।এইযে কতদিন যাবত এই বেনামী চিঠি আসছে এতেও তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।মানুষটা কেমন যেনো অনুভূতিহীন।এমন হাজারো চিন্তা করতে করতে আসফি কেবিনের বাহিরে চলে গেলো।

নাহিদ পাশের মিরিরে তাকিয়ে একবার নিজেকে দেখলো।সাদা রংটা কি আসলেই ফ্যাকাসে? তার কি একবার কমলা রঙের পাঞ্জাবী পড়ে দেখা দরকার?পরমুহূর্তেই সে মিরোর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। ছি!! কি ভাবছে সে?তাই বলে কমলা? ডিসকাস্টিং একটা কালার।এই রং পড়ে আর যাই হোক জনসাধারণের সামনে দাড়ানো অসম্ভব।এটা তার ব্যাক্তিত্বের সাথে মোটেও যায়না। তাছাড়া কমলা তার ভীষণ অপছন্দের।চিঠি প্রেরকের কালার সেন্স খুবই বাজে।নাহিদ মাথায় হাত বুলিয়ে আবার কাজে মনোযোগ দিলো।এসব নিয়ে ভাবার সময় তার কাছে নেই।

আজ ছুটির দিন হওয়ায় শুভ বেশ সকাল অব্ধি ঘুমাচ্ছে।তাছাড়া এমন বৃষ্টির দিনের স্নিগ্ধ আবহাওয়ায় ঘুমটাও বেশ ভালো হয়।কিন্তু এই শান্তির ঘুম ভাঙতেই চলে এলো তার একমাত্র ছোট বোন শোভা।সে এসেই শুভকে ডাকতে শুরু করলো।

-“ভাইয়া উঠ।আর কতো ঘুমাবি?”

-“প্লিজ ঘুমাতে দে।সকাল সকাল ঘুমের ডিস্টার্ব করিস না।”

-“আরে উঠ না।আম্মু তোর ফেভরেট সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করেছে।”

শুভ ঘুম ঘুম চোখে বললো
-“সাথে গরুর মাংস করেছে?”

-“হে করেছে। এবার জলদি উঠে আস।আব্বু কিন্তু তোর জন্য বসে আছে।”

-“যা আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসতেছি।”

শুভ নাস্তার টেবিলে এসেই দেখতে পেলো তার বাবা বসে আছে।শুভ হালকা হেসে চেয়ারে বসতে বসতে বললো

-“আব্বু এখনো নাস্তা শুরু করনি কেনো?”

-“আরে তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।আজকাল তোকে কাছেই পাইনা। ব্যাস্ত নাকি?”

-“না আব্বু তেমন কিছু না।আসলে পড়ার চাপ বেশি।সামনেই ইয়ার ফাইনাল তো তাই।”

-“আচ্ছা।কই শুভর মা নাস্তা দাও?”

শুভর মা দ্রুতই টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে দিলো।আর বললো
-“বৃষ্টির দিন হলেই তোমাদের খিচুড়ি ছাড়া চলে না।এই সকালে উঠে তোমাদের ফরমায়েশ পূরণ করার কাজে লেগে পড়তে হয়।”

শুভ মুচকি হেসে বললো
-“আম্মু তোমার হাতের খিচুড়ি ছাড়া বৃষ্টির সকাল একদম জমে না।”

শোভা পাশে চেয়ার পেতে বসতে বসতে বললো
-“আম্মু আর কয়েক বছর অপেক্ষা করো।তোমার ছেলে পাস করে বের হলেই একটা মিষ্টি বউ নিয়ে আসবো।তখন তোমার আর কষ্ট করা লাগবে না।”

শুভ শোভার মাথায় একটা টোকা মেরে বললো
-“তার আগে তোকে বাসা থেকে বের করবো।শশুর বাড়ী পাঠিয়ে দিবো।”

-“মোটেও না।মাত্র এইচ এস সি দিলাম।আগে স্টাডি শেষ করবো।তাছাড়া তোমার বউকে না জ্বালিয়ে আমি কোথাও যাচ্ছি না।”

শুভর মা শোভাকে দমক দিয়ে বললো
-“পাকামি বন্ধ করে আগে নাস্তা কর।সময় হলে আমি নিজেই নিয়ে আসবো আমার ছেলের বউ।”

শুভ একটু লজ্জা পেলো।আর ভাবলো” আচ্ছা আরজু কি খিচুড়ি রান্না করতে পারে?মনে তো হয় না।জীবনে রান্না ঘরে গেছে কিনা সন্দেহ।”

শুভর মা বললো
-“এই শুভ ফুয়াদের জন্য আমি খবর প্যাক করে রেখেছি।সেও নাকি খিচুড়ি পছন্দ করে।গতবার খেয়ে বেশ প্রশংসা করেছে।ওকে যেয়ে দিয়ে আস।”

-“আচ্ছা মা।”

-“ছেলেটার জন্য ভীষণ খারাপ লাগে।মা বাবা থাকতেও ছেলেটা কেমন একা।এমন মা বাবা আমি জীবনেও দেখিনি।নিজের সন্তানের চাইতে কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ন হয় কি করে?”

মুহূর্তেই শোভার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।ফুয়াদ ভাইয়া সবাইকে হাসি খুশি দেখালেও মনে মনে সে ভীষণ অসুখী।মনের কষ্ট লুকিয়ে দিব্যি সবার সামনে হেসে বেড়ায়।

সাবা খানমের মেজাজ এই মুহূর্তে ভীষণ খারাপ।তারা সকাল থেকে তার কানের সামনে ঘ্যান ঘ্যান করে চলছে।এই সকাল বেলা জুবায়ের আহমেদ এক গাধা ছোট মাছ নিয়ে হাজির।কাজের মেয়ে তারার তো মাথায় হাত।সে এক সপ্তাহ বলে প্রায় পনেরো দিন গ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে এসেছে।তার বিশ্বাস খালুজান সেটার বদলা নিতে এমন কাজ করেছে।সে কাঁদো কাঁদো স্বরের সাবা খানমের কাছে বিচার দিলো।

-“খালাম্মা খালুজান এইডা কোনো কাম করলো।এই বৃষ্টির দিনে এতো গুলা মরা পচা মাছ নিয়া আইলো।আমি জানি সব আমারে শাস্তি দেওনের লাইগা করছে।আমি এক সপ্তহ দেরি কইরা আইছি দেইখা।”

সাবা খানম চোখের চশমা ঠিক করে হাতের ফাইলের দিকে তাকিয়ে বললো
-“ওই মাছ তোর খালুকে দে কাটতে।”

-“আল্লাহ কি কন খালাম্মা।খালুজান তো কেমনে মাছ কাডে জানেই না।”

-“তাহলে আমার সামনে ঘ্যান ঘ্যান না করে নিজের কাজ নিজে কর।”

-“আচ্ছা খালাম্মা খালুজানের এই কামের লাইগা আইনে কোনো শাস্তি নাই?”

সাবা খানম বেশ বিরক্ত হয়ে ধমকে বললো
-“তারা বেশি কথা বলছিস।আমি এখন একটা কেস নিয়ে ব্যাস্ত আছি।ঝামেলা করিস না।”

তারা মুখ ভার করে রান্না ঘরে ফিরে আসলো।মনে মনে চিন্তা করলো আজ আর খালুজানের চায়ে চিনি দিবে না। খালাম্মার নিষেধ আছে।কিন্তু তবুও খালুজান তারা কে লুকিয়ে আধা চামচ চিনি দিতে বলে।তারাও তাই করে।কিন্তু আজ করবে না।এটা তার শাস্তি।

আরজু পড়ার টেবিলে বসে মনোযোগ দিয়ে পড়ছে।লাস্ট টেস্ট পরীক্ষায় সে এক সাবজেক্টে ফেল করেছে।এই খবর খালামণি জানলে খবর আছে।খালামণি তার স্টাডি নিয়ে ভীষণ সিরিয়াস।তাই সে আর খালামণিকে ডিসপয়েন্ট করতে চায়না।এই মানুষটা তার জীবনে সবচাইতে বেশি ইম্পর্টেন্ট।মা বাবার কমতি খালামণি তাকে কোনো দিন বুঝতে দেয়নি।ভীষণ ভালোবাসে সে তার খালামণিকে।মূলত খালামনির অতি আদরে সে বাঁদর হয়ে গেছে।তাই বর্তমানে খালামণি তাকে বেশ শাসনে রাখে।সে বোঝে খালামণি পৃথিবী সবার সামনে কঠোর হতে পারলেও তার সামনে পারে না।হাজার ভুল করলেও তাকে বকা ঝকা করতে পারে না।বরং তাকে সুন্দর ভাবে বোঝাবে।এই মানুষটিকে ছাড়া সে নিজেকে কল্পনা করতে পারে না।তার অতি বদরাগী খালামণি ভেতর থেকে ঠিক কতটা নরম সেটা সে জানে।তবে খালামনির রাগের সামনে সবচাইতে বেশি পড়তে হয় খালুজান কে।এদের মধ্যে খুন সুটি লেগেই থাকে।অবনি খালামণিকে বেশ ভয় পায়।তাই তার সকল কাজ সে আরজুর মাধ্যমে আদায় করে।কারণ খালামণি কখনই আরজুর কথা ফেলতে পারে না।

সাবা খানম আরজুর রুমে নক করলো।আরজু ভেতর থেকে বললো
-“খালামণি ভেতরে আসো।”

সাবা খানম মুচকি হেসে আরজুর পাশে বসে বললেন
-“আমার মা টা কি করে?”

-“এইতো পড়ছি।সামনে ইয়ার ফাইনাল তো।”

-“আচ্ছা।গত টেস্টে যে আজ সাবজেক্টে ফেল করলি সেই সাবজেক্টে ফাইনালে পাস করতে পারবি তো?”

আরজু দাত দিয়ে জিব কাটলো।এই মানুষটার কাছে কিছুই গোপন থাকে না।সে মুচকি হেসে বললো
-“ওই সাবজেক্টে পাস করা কোনো ব্যাপারই না।দেখো বেশ ভালো রেজাল্ট করবো।”

সাবা খানম আরজুর কান মলে দিয়ে বললো
-“পাস করা ব্যাপার না হলে ফেল করলি কেনো?”

-“আরে খালামণি কি করছো ব্যাথা পাচ্ছি তো।”

-“ফাজিল!দেখ তোকে আমি কিছুতেই বাঁধা দেইনা।কিন্তু আমি চাই তুই ভালো রেজাল্ট কর।”

আরজু খালামনির গলা জড়িয়ে ধরে অদূরে গলায় বললো
-“চিন্তা করো না।আমি অনেক ভালো রেজাল্ট করবো।”

সাবা খানম পরম আদরে আরজুর ললাটে চুমু খেলেন।আরজু সুযোগ বুঝে বলে ফেললো
-“তুমি কি জানো অবনির চাইতেও আমাকে তুমি বেশি ভালোবাসো?”

-“আমার কাছে তোরা দুইজনই সমান।”

-“মোটেও না।আমাকে বেশি ভালোবাসো তুমি।এই কারণেই তোমার মেয়ে আমার সাথে সারাদিন লেগে থাকে।”

-“আবার কি করেছে ও?”

-“আরে ওই আরকি।আমার সাথে ঝগড়া লেগেই থাকে।”

সাবা খানম ব্রু যুগল কুচকে বললো
-“এতো নাটক না করে কি বলবি বলে ফেল।”

আরজু মুচকি হাসলো।সে জানে এই হাসিতেই তার খালামণি ঘায়েল হবে।

**********
শুভ বসে আছে ফুয়াদের সামনে।আর ফুয়াদ মনের আনন্দে খিচুড়ি খাচ্ছে।শুভর মাঝে মাঝে এই ছেলেটাকে দেখে অবাক হয়।সবাইকে মাতিয়ে রাখা ছেলেটা দিন শেষে একা।ভীষণ একা।আসলেই অর্থ সম্পদ মানুষকে সুখী করতে পারেনা।দিন শেষে পরিবারে মধ্যকার ভালোবাসাই প্রকৃত সুখ এনে দেয়।ফুয়াদ খেতে খেতে বললো

-“আন্টির হাতের খিচুড়ি জাস্ট ওয়াও।মুখে লেগে থাকার মতো।”

শুভ হাসলো।আর বললো
-“আম্মু তো তোকে বাসায় যেতে বলে তুই যাসনা।”

-“আরে বেটা পরীক্ষার চাপে পড়ে পিষে যাচ্ছি।তার উপর আমার গার্লফ্রেন্ডেরকে সময় দিতে হয়।তাই একদম সময় পাইনা।”

শুভ এবার কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো
-“এই ভাবে টাইমপাস না করে সিরিয়াস রিলেশনে যেতে পারিস না?এমন করে চলে কি মজা পাস?কোনো একজনকে ভালোবেসে দেখ।দেখবি ভালোবাসার মতো প্রশান্তি আর কিছুতে নেই।”

ফুয়াদ বাঁকা হেসে বললো
-“ভালোবাসা!এটা আমার দ্বারা হবে না।আমার বাবা মাও ভালোবেসে বিয়ে করেছে।বর্তমানে দুজন দুজনকে সহ্যই করতে পারেনা।এদের দেখে ভালোবাসার উপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে।”

-“সবার ক্ষেত্রে তো একরকম হয় না। আরজুর খালামণি আর খালুকে দেখেছিস না?তাদের দেখলেই মনে হয় মেড ফর ইচ আদার। ভালোবাসা খুনসুটি সবটাই কিন্তু একটা সম্পর্কের মধ্যে থাকে। তোর বাবা মায়ের সাথে যেটা হয়েছে ঠিক তেমনটা তোর সাথেও হবে এমনটা ভাবা বোকামি।”

ফুয়াদ আড়চোখে শুভকে দেখে বললো
-“আমাকে এতো লেকচার দিচ্ছিস, অথচ আজ পর্যন্ত আরজুকে নিজের মনের কথা বলতে পারিস নি।সেই স্কুল লাইফ থেকে ভালোবাসিস ওকে।”

শুভ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
-“কি করবো বল।ভীষণ ভয় হয়।আরজুর মনে কি আছে সেটা বুঝতে পারিনা।বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে বলতে পারিনা।”

-“ওই বেকুবটা কিছু বুঝে বলে মনে হয়না।সারাদিন তো জারাকে নিয়ে বাঁদরামি করে বেড়ায়।একে না বলা অব্ধি বুজবে না।প্রপোজ করে ফেল।”

-“থাকনা।যেমন চলছে তেমনি থাকুক।ওকে প্রপোজ করলে আমি আর আগের মতো ওর সাথে মিশতে পারবোনা।কেমন একটা অসস্তি কাজ করবে। আই থিঙ্ক আরজুর ক্ষেত্রেও তাই হবে।”

ফুয়াদ মুচকি হেসে বললো
-“তোদের কাহিনী আমি বুঝিনা।এক তুই কিছু বলতে পারিসনা।অন্যদিকে আমাদের সাবিহা ও রামিম কিছু বলতে পারে না।সব ভীতুর দল নিয়ে ঘুরি।”

-“সাবিহার চোখে রামিমের প্রতি ভালোবাসা টা আমরা সবাই দেখতে পাই।আমার মনে হয় রামিম ও বোঝে।”

-“তাহলে ওই বেটা রেসপন্স করেনা কেনো?”

-“আমি নিজেও জানিনা কেনো ও এমন করে।ওর সাথে এই বিষয়ে সরাসরি কখনো কথা হয়নি।”

-“দেখলি আই ভালোবাসা কতো ভেজাল জিনিস?”

ঠিক তখনই ফুয়াদের ফোন বেজে উঠলো।সে কল রিসিভ করে বললো

-“হ্যালো বেবি তোমার কি এতক্ষণ মিস করছিলাম। আর সাথে সাথেই তুমি আমাকে কল করলে ।আমাদের মনের কানেকশন দেখেছো?”

অপর পাশ থেকে কি জবাব আসলো সেটা শুভ শুনতে পেলো না।জানার ইচ্ছে নেই।এই ছেলে জীবনেও শুধরাবে না। তবে শুভর চায় ফুয়াদের লাইফ এমন কেউ আসুক যে ওর সকল একাকিত্ব দুর করে দিক।এই ছেলেটাও কাউকে পাগলের মতো ভালোবাসুক।

*************
অবনি সকাল থেকেই আরজুর পেছন পেছন ঘুরছে।আরজু বিষয়টা খেয়াল করেছে।সে জানে এই বাঁদর কেনো এমন করছে।তাই ইচ্ছা করেই সে অবনিকে আজ পাত্তা দিচ্ছে না।অবশেষে অবনি সকল লুকোচুরি রেখে আরজুর রুমে এসে মাথা চুলকে বললো

-“আপু আমার কাজটা করেছ?”

আরজু না বোঝার ভান করে বললো
-“কি কাজ?”

অবনি বেশ বিরক্ত হলো।আরজু সব ইচ্ছে করে করছে।সে নরম সুরে বললো

-“আপু আমার পিকনিকে যাওয়ার বিষয়ে আম্মুকে বলেছ?”

আরজু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
-“হে বলেছিলাম।”

-“কি বলেছে আম্মু?”

-“মানা করে দিয়েছে।তিন দিনের জন্য তোকে খালামণি কিছুতেই ছাড়বে না।”

মুহূর্তেই অবনির মুখ মলিন হয়ে গেলো।দুই চোখ ভিজে উঠলো। কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো

-“আম্মু আমার সাথে সবসময় এমন করে।তুমি নিশ্চই ঠিক মতো বলনি।তোমাকে তো ঠিকই সব জায়গায় যেতে দেয় আমার সময় খালি বাধা দেয়।”

বলেই অবনি কেঁদে দিল।সে আর তার বন্ধু বান্ধবীরা মিলে কত শতক প্ল্যান করে বসে আছে।আর আম্মু কিনা তাকে যাওয়ার পারমিশন দিলো না?সবাই কতো মজা করবে।আর সে কিনা বাসায় বসে ঘাস কাটবে?

আরজু অবনির কান্না দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। এতো বড়ো মেয়ে এই ভাবে কাদে?তাকে হাসতে দেখে অবনির কান্নার শব্দ আরো বেড়ে গেলো।আরজু এবার জোরে হেসে দিলো আর বললো

-“তুই জানিস তোকে এখন শিম্পাঞ্জির মত লাগছে।একদম তার বংশধর মনে হচ্ছে।”

অবনি রাগী চোখে তাকিয়ে চোখের জল ফেলতে লাগলো।আরজু হেসে বললো
-“আরে হুতুম পেঁচা কান্না বন্ধ কর।খালামণি তোকে যাওয়ার পারমিশন দিয়ে দিয়েছে।”

অবনি মুহূর্তেই আরজুর উপর ঝাপিয়ে পড়লো।আরজুকে জড়িয়ে ধরে অভিমানী গলাতেই বললো
-“তুমি আমাকে ইচ্ছে করে কাদিয়েছ।দেখো তোমার নেতা সাহেবও তোমাকে এমন ভাবে কাদাবে।”

-“অভিশাপ দিচ্ছিস?”

-“না।তবে তোমার এমন ফালতু কাজের জন্য ঠিক তার কাছে বকা খাবে।”

-“আচ্ছা দেখা যাবে।”

দুই বোন মধ্যে বেশ কিছুক্ষন এইভাবেই খুনসুটি চললো।বাহিরে দাড়িয়ে সাবা খানম তাদের দেখছে আর হাসছে।কিন্তু তার মাথায় একটাই চিন্তা আরজু সেই মেয়রের প্রতি বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেছে।এটা মোটেও ঠিক না।এই বয়সে চার্মিং কোনো পারসনকে দেখে মুগ্ধ হওয়া স্বাভাবিক।কিন্তু আরজু যার প্রতি মুগ্ধ হচ্ছে সেটা নেহাৎ পাগলামি।সময়ের সাথে সাথে এই পাগলামি কমে গেলেই ভালো।কারণ এইসব নেতাদের প্রতি তার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। এরা কখনোই সাধারণ লাইফ লিড করতে পারেনা।তাছাড়া এদের চারিত্রিক দোষের কোনো শেষ নেই।টাকা আর ক্ষমতা এদের অন্ধ করে রাখে।সমাজে এরা ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে ঘুরে।প্রয়োজন ভেদে সেই মুখোশ খুলতে একটুও দেরি করে না।
আরজু ভীষণ ইমোশন একটা মেয়ে।এইসব নেতাদের চক্করে পড়লে মেয়েটা শেষ হয়ে যাবে।তাই আরজুর প্রতি তার বিশেষ নজর রাখতে হবে।এই বয়সটা আবেগের। সাবা খানম চায়না আরজু আবেগের বশে কোনো ভুল সিদ্বান্ত নিক।এই মেয়েটা তার প্রাণ। এর চোখের এক ফোঁটা জল ও সে সহ্য করতে পারবে না।

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_6

আজ খুব সকাল সকাল অবনি ঘুম থেকে উঠেছে।ভীষণ এক্সাইটমেন্ট এর কারণে রাতে ঠিক মতো ঘুমুতে পারেনি।আজ তাদের কলেজ ট্যুর।সিলেটে এর আগে তার যাওয়া হয়নি।ফ্রেন্ড দের সাথে বেশ মজা হবে।সে দ্রুত তৈরি হয়ে আরজুর রুমে চলে গেলো।আরজু তখন সারা বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।অবনি মুচকি হাসলো।আপুকে এই এলোমেলো অবস্থায় ও অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।কবি বলেছেন

-“যে নারী ঘুমন্ত অবস্থায় সুন্দর সেই প্রকৃত সুন্দরী।”

তবে কি কবি আপুকে দেখেই এই লাইনটি বলেছিলেন?তার এই সুন্দরী বোন টা একটু পাগলাটে বটে।নেতার পেছনে ছুটছে।ওই নেতা মনে হয় আপুকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে নি।নাহলে আপুর মত সুন্দরী মেয়েকে ইগনোর করতে পারতো না।আচ্ছা আপুর কাছে এই নেতাকে ঠিক এই কারণেই ভালো লাগে নি তো?কারণ আপু সবসময় সবার কাছ থেকে অ্যাটেনশন পেয়েছে।অবহেলা জিনিসটা তাকে কখনো ছুঁতে পারেনি।কিন্তু এই মানুষটি কখনই তার প্রতি নূন্যতম আগ্রহ দেখায়নি।এই কারণেই কি আপু সেই মানুষটির বেশি আকর্ষণ বোধ করে?কি জানি?তার এই ছোট্ট মাথায় এইসব কিছুতেই ঢুকবে না।

অবনি বিছানায় বসে আরজুকে ডাকতে লাগলো।এই সকালে গভীর ঘুম ভাঙতেই আরজুর মেজাজ খারাপ হলো।সে ধমকে বললো

-“এই সকাল সকাল আমার ঘুমটা না ভাঙলে কি হতো না?সমস্যা কি তোর?”

-“আপু আজ দুপুরে আমার বাস।তাই ভাবলাম তোকে একটু জ্বালিয়ে যাই।তিন দিন জ্বালাতে পারবো না।এইটা ভাবতেই আমার পেট মুচড়ে উঠছে।”

-“পেট মুচড়ালে বাথরুমে যা।আমাকে বিরক্ত করিস না।আর শোন সাথে কয়েক প্যাকেট স্যালাইন নিয়ে যাস।নাহলে সিট নষ্ট করে ফেলবি।”

অবনির বেশ রাগ হলো।সে নাকি সিট নষ্ট করবে? ছি!!!
সে পাশের ছোট্ট টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি আরজুর দিকে ছুঁড়ে মারলো।মুহূর্তেই আরজু লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়লো।রাগান্বিত চোখে অবনির দিকে তাকালো।কিন্তু অবনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে যেতে যেতে বললো

-“এবার বেশি করে ঘুমাও।”

আরজু প্রচন্ড রেগে চিৎকার করে বললো
-“মির জাফরের বংশধর।অকৃতজ্ঞ।এই আমার জন্যই না আজ ডেং ডেং করে কলেজ ট্যুরে যেতে পারছিস।নাহলে খালামনির পায়ে পড়ে থাকলেও তোকে যেতে দিতো না।”

অবনি রুমে উকি দিয়ে বললো
-“আপু তোর পছন্দ এতো বাজে?কমলা কোনো কালার হলো?ওই কমলা রঙে তোর নেতা সাহেবকে জোকারের মতো লাগবে।জোকার নাহিদ।হি হি হি!!!”

আরজু রাগে একটা বালিশ ছুড়ে মারলো অবনির দিকে।অবনি দ্রুতই সেখান থেকে কেটে পড়ল।যথেষ্ট রাগিয়ে দিয়েছে আরজুকে। এবার তিনদিন তার বেশ ভালো কাটবে।
অন্য দিকে আরজু ভাবছে সেদিন রাতে চিঠিটা লিখে টেবিলে ভুল করে রেখে গেছিলো।আর এই সুযোগে বাঁদর টা চিঠিটা পরে ফেলেছে।আরজু গালে হাত দিয়ে ভাবলো

-“নেতা সাহেবকে কমলা রঙে মোটেও জোকার লাগবে না।কারণ স্বপ্নে সে দেখেছে কমলা রঙে মানুষটিকে চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাগছিল।ইসস!!! বাস্তবে যদি দেখার সুযোগ হতো।”

দুপুরে অবনীকে বাস অব্ধি ছাড়তে এসেছে জুবায়ের আহমেদ।মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন

-“সাবধানে যাবি।আর কল করলে অবশ্যই রিসিভ করবি।আর একা একা কোথাও যাবিনা।”

-“ওকে আব্বু।চিন্তা করো না। আল্লাহ হাফেজ।”

অবনি বাসে উঠে বসে পড়লো।সব বন্ধু বান্ধবরা মিলে হই হুল্লোড় করে যাত্রা শুরু করলো।

ভার্সিটিতে আসতেই রিমির দেখা হলো শুভর সাথে।শুভ তার বাইকে বসে ফোনে কথা বলছে।রিমি মুচকি হাসলো।রিমিকে দেখেই শুভ কথা বলতে বলতে তার সামনে এসে দাড়ালো।আর রিমির গালে হালকা করে আগুল ছোঁয়ালো।মুহূর্তেই রিমির সর্বাঙ্গ কেপে উঠলো।এই সামান্য স্পর্শ তার ভেতরে কেমন তোলপাড় শুরু করেছে।রিমি চোখ বড়ো বড়ো করে শুভর দিকে তাকালো।শুভ কল কেটে বললো

-“গালে কি লেগে আছে উঠে না কেনো?”

রিমি চোখ কুচকে বললো
-“কই কি লেগে আছে?”

-“লাল কি যেনো?মেকাপ লাগাস নি তো?”

-“আরে না।সকাল থেকেই অ্যালার্জির কারণে মুখ লাল হয়ে আছে।গতকাল মাশরুম সুপ খেয়ে এখন এই অবস্থা।”

-“যেটা সুট করে না সেটা খাস কেনো?নিজের খেয়াল রাখা কবে শিখবি?”

রিমি নরম সুরে বললো
-“তুই আছিস না খে রাখার জন্য?”

-“আরে আমি কি সব সময় থাকবো নাকি?”

রিমি মনে মনে বললো
-“আমি তো সেটাই চাই।সারা জীবন আমার সাথে থাক,আমার খেয়াল রাখ।”

-“কিছু বললি?”

-“না কিছু না।ক্লাসে চল।”

***********
রামিম মাত্রই টিউশন থেকে বেরিয়েছে।আজ বেতন পেয়েছে।চিন্তা করেছে মায়ের জন্য কিছু কিনবে। কাল মায়ের জন্মদিন।কিন্তু কি কিনবে সেটা বুঝতে পারছে না।সে সাবিহাকে কল করে বললো

-“ফ্রী আছিস?”

-“আছি।কেনো?”

-“একটু হেল্প লাগবে।মাকে কি গিফট্ দিবো ডিসাইড করতে পারছি না।”

-“সব মেয়েরাই শাড়ি পছন্দ করে।সেটা দিতে পারিস।”

রামিম একটু চিন্তা করে বললো
-“দিলি তো ঝামেলায় ফেলে?এই শাড়ি টারি আমি ভালো চিনি না।আমি তোর বাসায় সামনে আসছি।তুই রেডি হ।”

সাবিহা বেশ খুশি হলো।সে দ্রুতই তৈরি হতে চলে গেলো।রামিম আসলে দুজনেই বেরিয়ে পড়লো শপিংয়ের উদ্দেশে।
দোকানে বেশ কয়েকটা শাড়ি দেখলো সাবিহা।কোনোটাই তার মন মতো হচ্ছে না।আসলে সাবিহা বাজেটের মধ্যে ভালো কিছু খুঁজছে।সে জানে রামিমের বাজেট অনেক কম।অন্যদিকে রামিম হা করে সাবিহার দিকে তাকিয়ে আছে। এতো শাড়ি বের করে একটা ও পছন্দ করতে পারছে না।মেয়ে মানুষ আসলে কি চায় এরা নিজেরাও জানে না।দোকানি না জানি কখন এদের বের করে দেয়।

অনেক দেখে সাবিহা একটা শাড়ি পছন্দ করলো।রামিম দীর্ঘশ্বাস ফেললো।শেষ মেশ কিছু পছন্দ হলো।দোকান থেকে বেরিয়ে আসে তারা।পাশের অন্য দোকানের দিকে হঠাৎ রামিমের চোখ পড়ে।ভীষণ সুন্দর নীল রঙের শাড়ি।সে পাশে দাড়ানো সাবিহার দিকে তাকালো।শাড়িটা সাবিহাকে বেশ মানাবে।সে সাবিহাকে সামনে এগুতে বলে সে দোকানে ঢুকলো।আর কিছু না ভেবে শাড়িটা নিয়ে নিল। ঝোঁকের বসে নিয়ে তো নিয়েছে।কিন্তু শাড়িটা দিবে কি করে?আচ্ছা সাবিহাকে শাড়িটা দিলে সে কি পড়বে? এতো কম দামী শাড়ি কি আদো সাবিহা পছন্দ করবে?

সাবিহাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসার সময় সেই শাড়ির ব্যাগটা সাবিহাকে ধরিয়ে দিলো।সাবিহা অবাক হয়ে তাকালো।আর বললো

-“এটা কি?”

-“এমনি একটা গিফট।ভালো লাগলে পড়িস।”

বলেই রামিম দ্রুত চলে আসলো।সাবিহা হা করে রামিমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।রামিম কিছু দূর এসে বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিলো।কেমন দম বন্ধ লাগছিলো।এই মেয়েটা তাকে কেমন যেনো দুর্বল করে দেয়।ঠিক এই কারণেই সে সাবিহার সাথে একা তেমন একটা বের হয়না।

*******
আরজু আর জারা ভার্সিটির মাঠে বসে আছে।বাকি সবাই চলে গেছে।জারাকে আসে পাশে তাকাতে দেখে আরজু বললো

-“কাউকে খুঁজছিস?”

জারা কিছুটা চমকে বললো
-“কই না তো?”

-“না মনে হলো তাই বললাম।কি হয়েছে বলবি?”

-“আমার মনে হয় কেউ আমাকে ফলো করে।”

আরজু ব্রু জোড়া কুচকে বললো
-“মানে?”

-“মানে আমার মনে হয় ভার্সিটিতে আসতে যেতে কেউ আমাকে ফলো করে?”

-“বলিস কি?তোর কোনো আশিক না তো?”

বলেই আরজু মুচকি হাসলো।জারা বিরক্ত হয়ে বললো
-“মজা নিচ্ছিস?আমি টেনশনে শেষ আর তুই হাসছিস?”

আরজু হেসে বললো
-“আমার মনে হয় তোর কোনো সিক্রেট লাভারের কাজ হতে পারে।”

জারা বুঝতে পারলো আরজু বিষয়টা ফান হিসেবেই নিচ্ছে।সে আর কিছুই বললো না।

আরজু সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো দশ আগারো বছরের একটা ছেলে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।আরজু ব্রু কুচকে তাকালো।এই ছেলেকে সে বেশ ভালো করে চেনে।ছেলেটার নাম রতন।সে সামনের একটা চায়ের দোকানে কাজ করে।এই ছেলে একটা বিবিসি নিউজ।তার কাছে সকল খবর থাকে।আর সাথে সে বেশ চতুর।এক জায়গায় কথা সে অন্য জায়গায় পৌঁছাতে উস্তাদ।কতবার এই ছেলে মানুষদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাজিয়েছে তার হিসেব নেই।তবে অদ্ভুত ভাবেই এই ছেলেটা আরজুকে ভীষণ পছন্দ করে।কারণটা আরজুর নিজের ও জানা নেই।এই ছেলেটাকে আরজুর ও বেশ লাগে।এই বয়সে এতো চতুর ছেলে সে একটিও দেখেনি।ঠিক এই কারণেই সে এই ছেলেটিকে বিশেষ কাজে নিয়োজিত করেছে।

ছেলেটা দৌড়ে আরজুর সামনে এসে দাড়ালো।ভীষণ হাপাচ্ছে।আরজু ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দিলো।ছেলেটাও এক নিমিষেই ঢকঢক করে সেই পানি শেষ করলো।আরজু বললো

-“কীরে এই ভাবে দৌড়াচ্ছিস কেনো?”

ছেলেটা বেশ উৎসাহ নিয়ে বললো
-“আপা,ভাইজান আসছে।”

আরজুর বুকটা কেপে উঠলো।কত দিন পর আসলো মানুষটি।এই খবরটি শোনার জন্য সে অধীর আগ্রহে বসে থাকে।আরজু আজ কতদিন পর নেতা সাহেবকে দেখবে।
এই ভার্সিটিতে পড়া কালীন নাহিদ আর তার বন্ধুরা পাশের একটা জায়গাতে ক্লাবঘর নির্মাণ করেছিল।তাদের সকল আড্ডা,খেলা, মিটিং এই জায়গাতেই সম্পন্ন হতো।ভার্সিটি শেষ করে যাওয়ার আগে তার জুনিয়রদের দায়িত্বে এই ক্লাবঘর দিয়ে যায়। এখানে সে বিভিন্ন ইনডোর গেমের বেবস্থা আছে।ছেলেপেলেরা এই জায়গায় বসে আড্ডা দেয়।মাঝে মাঝে নাহিদ আসে।পুরনো বন্ধুদের নিয়ে ছোট খাটো আসর বসায়।এই সময় যে কেউ তাদের অভিযোগ নিয়ে আসতে পারে।নাহিদ সরাসরি জনসাধারণের সাথে কানেক্ট করার চেষ্টা করে।

আরজু ভাবছে সে কি ভাবে নাহিদের সাথে কথা বলবে।যতবারই নাহিদ আসে সে দুর থেকে শুধু এক পলক দেখতে পারে।কথা বলার কোনো বিষয় বা অভিযোগ তার কাছে থাকে না।আর কারণ ছাড়া ছেলেগুলো তাকে ভেতরে ঢুকতেই দিবে না।আরজুর হঠাৎ জারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

জারা আরজুর হাসি দেখে চিন্তায় পরে গেলো।আরজুকে সে রগে রগে চেনে। এর মাথায় নিশ্চই কোনো শয়তানি বুদ্ধি খেলা করছে।সে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো

-“খবরদার এসবে আমাকে মোটেও জড়াবি না।”

আরজু হো হো করে হেসে দিলো।আজ সে তার নেতা সাহেবের সাথে কথা বলবেই।
**********
আরজু আর জারা দাড়িয়ে আছে নাহিদের সামনে।নাহিদ একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে চা খাচ্ছে। এখানকার চা তার ভীষণ পছন্দ।ছাত্রজীবনে পাশের টং দোকানের চা তার দিনে বেশ কয়বার খাওয়া লাগতো।আজ মনে হচ্ছে চা টা একটু বেশিই ভালো হয়েছে।এই নিয়ে তিন কাপ চা খাওয়া হয়ে গেছে। চায়ে চুমুক দিয়ে সামনে দাড়ানো আরজু আর জারার উদ্দেশে ভারী গলায় বললো

-“কি সমস্যা?”

নাহিদের সামনে আসার পর থেকেই আরজুর সারা শরীর অসাড় হয়ে আছে।এই মানুষটির সামনে আসলেই সে দুর্বল হয়ে পড়ে।এতক্ষণ ধরে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা কথা সেই কখনই খেয়ে বসে আছে।মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।আরজু একবার আশেপাশে তাকালো।রুমে উপস্থিত ছেলে গুলো তাদের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।জারা আরজুর পিঠে হালকা ধাক্কা দিলো।এই মেয়ে মোমের মতো দাড়িয়ে আছে কেনো?আরজু এবার একটা দীঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বললো

-“আস…..আসলে আমার ফ্রেন্ড জারাকে কয়দিন যাবত কেউ ফলো করছে।মেয়েটা ভীষণ ভয়ে আছে।না জানি কোন দিন কিডন্যাপ করে মার্ডার করে ফেলে।বেচারি কয়দিন যাবত নাওয়া খাওয়া ভুলে কেঁদে যাচ্ছে।আমার মনে হলো আপনি ওকে হেল্প করতে পারেন।”

জারা অবাক হয়ে আরজুর দিকে তাকালো।এই মেয়ে কতো বড় চালবাজ।নিজের স্বার্থ উদ্দারে তাকে গুটির মতো ব্যাবহার করছে।সে কবে খাওয়া ভুলে কান্না করেছে? মিথ্যাবাদী একটা। এখান থেকে বের হতে পারলে আরজুর খবর আছে?

নাহিদ কপাল কুঁচকে জারার দিকে তাকিয়ে বললো
-“কে ফলো করে? চেনেন কে সে?”

-“না স্যার।আমি ঠিক বলতে পারবো না। জাস্ট মনে হয়েছে কেউ ফলো করে।”

-“হুম।চিন্তা করবেন না।বিষয়টা আমি দেখছি।”

আরজু ড্যাব ড্যাব করে নাহিদকে দেখে যাচ্ছে।কথা বলার সময় বের কয়েকবার নাহিদ পাঞ্জাবির কলার ঠিক করছে।মনে হয় মানুষটি তপ্ত অনুভব করছে।আরজুর সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসছে।এই মানুষটির প্রতিটি কাজ তাকে ঘায়েল করে।এমন করে তাকে বেসামাল করার কোনো মানে হয়?
নাহিদ এক পলক আরজুর দিকে তাকিয়ে জারার উদ্দেশে বললো

-“আপনার ফ্রেন্ডকে ও সাবধান করে দিবেন রাত বিরাতে বাইরে বাইরে না ঘুরতে।এমন কিছু তার সাথেও ঘটতে পারে।সাবধান থাকা ভালো।”

জারা মুচকি হেসে আরজুর দিকে আড়চোখে তাকালো।আরজু মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে দাড়িয়ে আছে।বেশ লজ্জা পেয়েছে বুঝা যাচ্ছে।আরজু একটু সাহস করে বলে ফেললো

-“আপনার মত মেয়র থাকতে এই এলাকার মেয়েদের ভয় কিসের?”

নাহিদ বাঁকা হেসে বললো
-“ভয় করা ভালো।কারণ বর্তমানে রক্ষকরাই ভক্ষক হয় গেছে।”

আরজু এই কথাটা ঠিক বুঝতে পারলো না।পড়ে মনে পড়লো নাহিদ নিশ্চই সেই দিনের পুলিশ অফিসারদের মতো লোকেদের কথা বলছে।আরজু মুচকি হেসে বললো

-“জি মনে থাকবে।”

-“আর কিছু বলার না থাকলে আসতে পারেন।”

আরজু অসহায় ভাবে নাহিদের দিকে তাকালো।নাহিদ মনের সুখে চায়ে চুমুক দিচ্ছে।আরজুর মন খারাপ হলো।সে আরো কিছু সময় মানুষটির পাশে থাকতে চেয়েছিলো।কিন্তু লোকটা তাকে বিন্দু মাত্র পাত্তা দিলনা।জারা দ্রুত আরজুর হাত ধরে সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো।এই পাগল যে কোনো উল্টা পাল্টা কথা বলতে পারে। এর বিশ্বাস নেই।