মিষ্টি রোদের হাতছানি পর্ব-২০+২১+২২

0
567

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_20

আজ সকাল থেকেই অবনি আরজুর কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।গতকাল রাতে মুমূর্ষ আরজুর প্রতি তার ভালোবাসা অতিয়াত্রায় বেড়ে গেছিলো।বোন ওই অবস্থায় ক্রাশের নাম এই ভাবে জপছিলি বলে একটু সাহায্য করার চেষ্টা করছে।

সকাল সকাল ইন্টারনেট ঘেঁটে নাহিদের কার্যালয়ের নম্বর জোগাড় করে।পার্সোনাল নম্বর তো নেই তাই অফিসেই কল করে।কিন্তু সেখান থেকে জানায় এই ভাবে মেয়রের সাথে কথা বলার নিয়ম নেই।অবনি অনেক রিকোয়েস্ট করার পর যখন দেখলো কাজ হচ্ছে না তখন একটু ফাপর নেওয়ার ট্রাই করে।বলে তার বোন মৃত্যু পথযাত্রী।যে কোনো সময় টপকে যেতে পারে।জীবনের শেষ সময়ে এসে গা কাপানো জ্বর নিয়ে সারা রাত মেয়র সাহেবের নাম জপেছে।তাদের মেয়র আসলে সবার জন্য এত কাজ করে তাই তার বোন মেয়র সাহেবের বিরাট ফ্যান হয়ে গেছে।একটা বার মেয়র সাহেব তার বোন কে কল করে যেনো কথা বলে।লোক গুলো টালবাহানা করছে বলে অবনি হুমকি দিয়ে বলে এক্ষনি তার খবর মেয়রের কাছে না পৌঁছেলে সে সোজা কার্যালয়ে এসে নাহিদের কাছে তাদের নামে অভিযোগ করবে।

প্রথমে তারা বিষয়টি বিশ্বাস না করলেও অবনির অভিনব অ্যাক্টিং এর জন্য তারা কনফিউজড হয়ে পড়ে।অবনি বেশ কনফিডেন্ট ছিলো তার খবর নাহিদ অব্দি নিশ্চই পৌঁছবে।
যে বোনের জন্য সকাল সকাল এতো নাটক করতে হলো সে কিনা তার উপর হিংস্র বাঘের নেয় ক্ষেপে আছে? এটা কি মানা যায়? ধেত্ত!আর কারো উপকার সে করবে না।তবে আজ সারাদিন বাসায় যাবেনা বলেই চিন্তা করলো।নাহলে আরজু আজ তাকে পেলে কয়েক ঘা বসিয়ে দিবে।সে সুরভীকে কল করে বললো আজ ক্লাস ব্যাঙ্ক দিয়ে মুভি দেখতে যাবে।সুরভী জানে মানা করে কোনো লাভ নেই।এই পাগলের মাথায় যখন ভুত চেপেছে তবে যেতেই হবে।

*********
সকাল সকাল আরজুর বাসায় হামলা দিলো বন্ধু মহল।তাদের দেখেই মুহূর্তেই আরজুর মন ভালো হয়ে গেলো।ফুয়াদ একটা প্যাকেট আরজুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো

-“নে ধর।তেতুলের আচার আর পেয়ারা মাখা।রাস্তায় মামা আনহাইযিনিক ওয়েতে বানাচ্ছিল।পড়ে মনে পড়লো তোরা মেয়েরা তো এইসব জিনিস চেটে পুটে খাস।ভাবলাম অসুস্থ মানুষ দেখতে আসবো তাই নিয়ে আসলাম।চিন্তা করিস না।আমি মামাকে গ্লাভস পরিয়ে তবেই বানিয়ে এনেছি।”

জারা জলদি পকেট খুলে আচার মুখে দিতে দিতে বললো
-“ভালো করেছিস।এই সবের মজা তোরা বুজবি না।”

শুভ আরজুর কপাল ছুঁয়ে দেখলো জ্বর নেই।সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো
-“তোকে নিয়ে আমি আর কোনো ট্যুরে যাব না।এমন লেদা টাইপের মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি।ক্লাস এইটে পিকনিক থেকে এসেও এই বলদ তিনদিন জ্বরে ভুগছে।”

আরজু মুখটা মলিন করে রেখেছে।রিমি হেসে বললো
-“তুই আরজুকে না নিয়ে গেলে এসে দেখতি কাদতে কাদতে এর চাইতে দ্বিগুণ জ্বর বাঁধিয়ে ফেলত।”

সাবিহা হেসে বললো
-“একদম সত্যি কথা।”

আরজু ঠোঁট ফুলিয়ে বললো
-“তোরা আমাকে নিয়ে মজা নিচ্ছিস?শুধু মাত্র আজ দুর্বল বলে বেচেঁ গেছিস।নাহলে এক একটাকে বালিশ চাপা দিয়ে মারতাম।”

তখনই তাদের জন্য সরবত নিয়ে আসে তারা।তারা তীক্ষ্ণ নজরে তাকায় তাদের সকলের দিকে।তিন তিনটা দামড়া ছেলে তার আরজু আপাকে ঘিরে বসে আছে।তাদের এতো মাখা মাখি সম্পর্ক তারা বেচারি একদমই নিতে পারে না।সবাইকে সরবত দিয়ে তারা চলে যেতেই ফুয়াদ বললো

-“তোদের এই তারাকে দেখলে মনে হয় সেই এই বাড়ির কর্ত্রী।দেখলি আমাদের দিকে কেমন ধারালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।আন্টি কে জীবনে আমাদের উপর বিরক্ত হতে দেখলাম না।কিন্তু এই ম্যাডাম আমাদের উপর ভীষণ বিরক্ত।”

শুভ বিছানায় হেলান দিয়ে বললো
-“তারা বিবি আমাকে দুই চোখে দেখতে পারে না।আজ তারা বিবিকে একটা শিক্ষা দিয়ে যাবো।ওই আরজু তোদের ম্যাডামকে বল আমাদের জন্য ভুনা খিচুড়ি আর কালা ভুনা করতে।ওর হাতের রান্না না খেয়ে আজ এই বাড়ি ছাড়ছি না।”

জারা আচার খেয়ে বিচি রুমের মধ্যেই ফুক মেরে ফেলে বললো
-“তোরা শেষ পর্যন্ত এই তারা কেও ছাড়বি না।বেচারি আরজুর প্রতি কনসার্ন। তোদের চেহারাতেই লুচ্চা লুচ্চা ভাব আছে।তাই তো বেচারীর আরজুকে নিয়ে ভয় হয়।”

জারার কথায় ফুয়াদের কাশি উঠে গেলো।সে বললো
-“আমাদের দেখে তোর লুচ্চা মনে হয়?”

-“অবশ্যই।তুই তো এক নম্বরের লুচ্চা।”

শুভ জারার মাথায় একটা থাপ্পর মেরে বললো
-“আমাকে কোন দিক দিয়ে তোর লুচ্চা মনে হয়?”

জারা আমতা আমতা করে বললো
-“তুই শুভর মত ডাইরেক্ট লুচ্চা না। তবে তোর মধ্যে লুচ্চা ভাব আছে।”

-“কি?”

বলেই শুভ জারারকে মারতে লাগলো।সাথে যোগ হলো রিমি আর ফুয়াদ।আরজু তাদের কান্ড দেখে হেসে উঠলো। এরা না থাকলে হয়তো জীবনের এই সুন্দর মুহূর্ত গুলো তার জীবনে কখনই আসতো না।তাদের এই বন্ধুত্বের মাঝে যেন কখনোই তিক্ততা না আসে। তোদের এই অটুট বন্ধন যেন কখনোই না ভেঙে যায়। আরজু সাবিহার দিকে তাকিয়ে দেখলো মুখটা মলিন করে বসে আছে।আরজু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।রামিম সকালে কল করে বলেছে সে আজ আসতে পারবে না।অন্য একদিন এসে দেখা করে যাবে।আরজু জানে সাবিহা আর রামিমের মধ্যে আবার দূরত্ব রেখা টানতে চাইছে রামিম।এতে যে মেয়েটা ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে কে বুজবে তাকে?

***********
অবনি আর সুরভী সিনেপ্লেক্সে বসে মুভি ইনজয় করছে। কিছুক্ষণ পর অবনী বেরিয়ে আসলো ওয়াশরুমে যাবার উদ্দেশ্যে। হাতের ফোন চাপতে চাপতে সামনের দিকে এগোতেই হঠাৎ সামনের বিশাল এক দেয়ালে ধাক্কা খেল।অবনি কপালে কিছুটা ব্যাথা পেয়ে “ওমাগো” বলে চিৎকার করে উঠলো।সামনে তাকিয়ে দেখলো এটা দেয়াল না।বরং কোনো পুরুষের পিঠের সাথে ধাক্কা খেয়েছে।লোকটি অত্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ করে অবনির দিকে ফিরতেই দুজই চমকে গেলো।অবনি চমকে বললো

-“আপনি?”

নিশান কপাল কুঁচকে বললো
-“এই মেয়ে আমাকে ফলো করছো নাতো?”

মুহূর্তেই অবনির মেজাজ খারাপ হলো।সে তেরে এসে বললো
-“আপনাকে আমি কোন দুঃখে ফলো করতে যাবো?নিজেকে কি ভাবেন? হিরো?”

-“আমি নিজেকে কি ভাবি সেটা তোমাকে বলতে ইচ্ছুক নই।তবে তুমি ইচ্ছা করে আমার পিছু নিয়েছ এটা নিশ্চিত।”

-“ইসস!যেই না চেহারা নাম রেখেছে পেয়ারা।আমার তো মনে হয় আপনি আমার পিছু নিয়েছেন।যেখানে যাচ্ছি সেখানেই টপকে পড়ছেন।আর ঝামেলা ক্রিয়েট করছেন। ধাত!!!আজকের দিনটাই খারাপ।”

নিশান নিজের সামনের চুলে হাত বুলিয়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।একটা বাচ্চা মেয়ে কিনা তার মুখে মুখে তর্ক করছে।ইচ্ছে করছে থাপ্রিয়ে গাল ফাটিয়ে দিতে।এমন অসভ্য বাচাল মেয়ে সে জীবনে একটাও দেখে নি।তার ডিসিপ্লিন মেইনটেন করা বাবা যদি এই মেয়েকে দেখে নির্ঘাত হার্ট এ্যাটাক করবে।নিশান রেগে বললো

-“তোমার মত বাচ্চা কাচ্চার পিছু নেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।নিজের বয়সের তুলনায় বেশি কথা বলো তুমি।নাক টিপলে দুধ বের হবে সেই মেয়ে কিনা আমার সাথে তর্ক করে।বাচ্চা বাচ্চার মতো থাকবে।”

অবনির মাথায় যেনো আগুন ধরে গেলো।এই লোকের সমস্যা কি?যখন তখন তাকে বাচ্চা বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে।অত্যন্ত রাগের বশে সে একটা বিরাট কান্ড ঘটিয়ে বসে।সে নিশানের কাছে যেয়ে নিশানের কলার ধরে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসে।নিশান অবাক হয়ে অবনীকে দেখছে।অবনি হঠাৎই নিশানের রুক্ষ ওষ্ঠে নিজের কোমল ওষ্ঠ করা মিলিয়ে দেয়।মুহূর্তেই নিশানের চোখ বড়ো হয়ে যায়।কি হচ্ছে কিছুই সে বুঝে উঠতে পারে না।কয়েক মুহূর্ত পর অবনি তাকে ছেড়ে বললো

-“এইবার বুঝলেন তো আমি মোটেও বাচ্চা না।ফারদার আমাকে পিচ্ছি বা বাচ্চা বলার সাহস করবেন না।”

বলেই অবনি এক প্রকার দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেলো।নিশান যেনো বরফের মতো জমে গেছে।এই পিচ্ছি কি করে গেলো?নিশানের সারা শরীর ঝিমঝিম করতে লাগলো।বুক ধুকপুক করছে।একটু পর তার বন্ধু কাছ এসে নিশানকে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো

-“কীরে দাড়িয়ে আছিস কেনো? ক্যাফেট এরিয়াতে না বসতে বললাম তোকে।”

নিশান তখনও চুপ করে আছে।তার বন্ধু কাধে ধাক্কা দিয়ে বললো

-“কীরে ঠিক আছিস?এই তোর ঠোঁটে পিংক কলার কি লেগে আছে?”

মুহূর্তেই টনক নড়লো নিশানের।পকেট থেকে রুমাল বের করে ঠোঁট মুছে দেখল পিঙ্ক কালার লিপস্টিক লেগে আছে। সে ভীষণ প্রস্তুত হয়ে পড়ল।তার বন্ধুকে বললো

-“আমার শরীর খারাপ লাগছে।পড়ে একদিন তোর সাথে মিট করবো।আজ আসি।”

কথাটা বলেই সে বেরিয়ে গেলো।ওপর দিকে অবনি সুরভীর পাশে বসে হাপাতে লাগলো।সুরভী তার দিকে তাকিয়ে বললো

-“কি সমস্যা?”

অবনি কাপা কাপা চোখে তাকিয়ে বললো
-“দোস্ত আজ আমি একটা বিশাল কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছি?”

-“এই টুকু সময়ে আবার কি অঘটন ঘটিয়েছিস?”

অবনি নিচের ঠোঁট কামড় ভীতু গলায় বললো
-“ওই রোবট মানবকে আমি চুমু খেয়ে ফেলেছি।”

সুরিভি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে চিৎকার করে বললো

-“কি!!”

তার চিৎকারে হলের লোকজন বেশ বিরক্ত হলো।সুরভী নিজেকে সামলে অবনির দিকে তাকালো।এই মেয়ে তার বান্ধবী কি করে হলো। এমন তার ছেড়া পাবলিক শেষে কিনা তার সাথেই জুটলো?

**************
বেশ কিছুদিন পরের কথা।আরজু দের ফাইনাল ইয়ারে ক্লাস অলরেডি শুরু হয়ে গেছে।সবাই রুটিন মাফিক জীবনে চলে এসেছে।নিয়মিত ক্লাস,ক্লাস শেষে তাদের আড্ডা আর রামিম ও সাবিহার দূরত্ব সবটাই সমান তালে চলছে।এই এতো দিনে আরজু নাহিদের কোনো খবর পায়নি।লোকটি যেনো উধাও হয়ে গেছে।

আরজুকে মন খারাপ করতে দেখে জারা ক্লাস শেষে আরজুকে নিয়ে মাঠে বসলো।বললো

-“কি হয়েছে বল তো?ট্রিপ থেকে আসার পর থেকে তুই কেমন অন্য মনস্ক হয়ে আছিস।মেয়র সাহেব কে মিস করছিস?”

আরজু মলিন চোখে জারার দিকে তাকালো।জারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো

-“তুই কেনো ওই গম্ভীর মানুষটিকে পছন্দ করিস?”

আরজু শুকনো ঢোক গিলে বললো
-“কিছু মানুষকে কোনো কারণ ছাড়াই ভালো লাগে। ভালো ভালো লাগার পেছনে কোন স্পেশাল রিজন হয়তোবা থাকে না, তবুও মানুষটাকে অনেএএক ভালো লাগে। এই মানুষের সাথে আমার তেমন কোন কথা হয় না!তবুও সেই অল্প কথা বলার সময় গুলো ‘ স্পেশাল ‘ হয়ে যায়। মানুষটাকে পাবোনা জেনেও ভালোলাগাটা থেকে যায়। কমেনা এতোটুকু ও। এই ভালোলাগা কমার নয়। কারণ মানুষটা আলাদা সবার থেকে আলাদা।”

কথা গুলো বলতে বলতে আরজুর দুচোখ ভিজে উঠলো।জারা মুচকি হেসে বললো

-“দোস্ত তুই প্রেমে পড়েছিস।গভীর ভাবে ওই বেটার উপর স্লিপ করে গেছিস।”

আরজু করুন চোখে জারার দিকে তাকালো।সে নেতা সাহেবের প্রমে তো কবেই পড়েছে।কিন্তু নিজের মনকে দমিয়ে রেখেছিল।কিন্তু সেই রাতের পর সব কেমন যেনো এলোমেলো হয়ে গেলো।আরজু মনের উপর কোনো কন্ট্রোল করতে পারছে না।তার অবাধ্য, বেহায়া মনটা নাহিদ নামক পাষাণ ব্যাক্তিটির দিকে ছুটে চলে যাচ্ছে।

************
সাবা খানম এই কয়দিন আরজুকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন।তার বিচক্ষণ বুদ্ধিমত্তা আর ধারালো দৃষ্টি আরজুর ভেতরকার অস্থিরতাকে ঠিক ধরে ফেললো।তিনি যেই সিদ্ধান্ত আরজুর জন্য নিয়েছেন সেটা কার্যকর করার এটাই উপযুক্ত সময়।নাহলে এই আবেগী মেয়েটি কখন কি বোকামি করে ফেলে কে জানে।

সন্ধার দিকে আরজু টেবিলে বসে বইয়ে মুখ গুজে রয়েছে।পড়ায় তার মোটেও মনোযোগ নেই।একটু পর পর নাহিদের পেজে ঢু মারে আসছে।আগের কিছু ছবি ছিলো সেটাই বার বার দেখছে।নাহিদের পার্সোনাল একাউন্টের হদিস আজও সে পায়নি।এই নামে হাজারো একাউন্ট।কোনটা আসল সেটা বোঝা মুসকিল।তার কোমল মনটা চুরি করে এই লোক কোথায় ঘাপটি মেরে বসে আছে?হাজারো চিন্তা ভাবনার মাঝে সাবা খানম আসলেন আরজুর রুমে।আরজু খালামণিকে দেখে মুচকি হেসে বললো

-“কনগ্রাচুলেশন খালামণি। এই কেসটাও জিতে গেলে। আমাদের ট্রিট কোথায়?”

খালামণি নরম বিছানায় বসলেন।আরজু তার কাছে যেয়ে বসে বললো

-“আচ্ছা খালামণি তুমি এই জটিল কেস গুলো সলভ কি করে করো?নিশ্চই তোমাকে অনেক ক্রাইম থ্রিলার মুভি দেখতে হয়।”

সাবা হেসে বললেন
-“কেস সলভ করতে কোনো মুভি দেখতে হয় না।কেসের ডিটেলস দেখে সেটা সলভ করতে হয়।”

-“আমার মাথায় এতো জটিল বিষয় কিছুতেই ঢুকতে চায় না।”

সাবা হাসলেন।মেয়েটা এতো সহজ সরল কেনো?বাস্তবিক জীবনের জটিলতা সম্পর্কে মেয়েটার কোনো ধারণা নেই।এই রূপবতী আবেগী মেয়েটাকে নিয়ে তার ভীষণ ভয় হয়।যেই পথে আরজু আগাতে চাইছে সেটা যে তার জীবনের ধ্বংসের পথ।তাছাড়া অনেক কঠিন সত্যি আছে যেটা আরজু জানে না।জানলে হয়তো এই পথে কোনো দিন আগানোর কথা ভাবতে পারতো না।নিজেকে গুছিয়ে আরজুর উদ্দেশে বলেন

-“আমার উপর বিশ্বাস আছে তোর?”

আরজু কিছুটা চমকালো।হঠাৎ খালামণি এই কথা কেনো বলছে?

-“হঠাৎ এই কথা কেনো বলছো?অবশ্যই তোমার উপর আমার হানডেট পারসেন বিশ্বাস আছে।”

-“তাহলে নিশ্চয়ই এটাও বিশ্বাস করিস যে আমি তোর জন্য সব সময় সঠিক সিদ্ধান্তই নিবো?”

আরজু অবাক চোখে তাকিয়ে মাথা ঝাকিয়ে হে জানালো।সাবা খানম মিষ্টি হেসে আরজুর কপালে আলতো চুমু খেয়ে বললেন

-“আমাদের সেই ছোট্ট আরজু আজ কতো বড়ো হয়ে গেছে।সেই মিষ্টি মেয়েটা যে আদো আদো সুরে আমাকে খালামণি ডাকতো।সারা বাড়ি এলোমেলো করে মিষ্টি হেসে সরি বলতো।সেই পিচ্ছিটা আজ অনেক বড়ো হয়ে গেছে। আজও মনে পড়ে দুলাভাই তোকে আমার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিল
-“সাবা আজ থেকে তুমি আরজুর মা।”

জানিস সেদিন আমার বুক ফেটে কান্না আসছিলো।পাশের কেবিনে আমার বোন মৃত অবস্থায় পড়ে আছে।আর দুলাভাই জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।তোকে তো আমি নিজের মেয়েই ভেবে এসেছি।কিন্তু কোনো দিন এই ভাবে তোর হাত আমার হাতে দিয়ে আপা দুলাভাই চলে যাবে ভাবতে পারিনি।তুই যখন বাবা মা হারানোর শোকে দুইদিন হসপিটালে আনকনশিয়াস অবস্থায় পড়েছিলি তখন শুধু ভাবছিলাম তোর মা হয়ে উঠতে পারবো ত?”

সাবা খানমের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দু ফোঁটা জল।আরজু তখন ফুপিয়ে কাদঁছে। সাবার হাতে চুমু খেয়ে বললো

-“তুমি আমার শুধু মা না সবচাইতে ভালো বন্ধু ও।তুমি আমাকে আগলে না রাখলে এই আরজু কবেই মরে যেত।”

সাবা আরজু চোখ মুছে বললো
-“একজন মা হিসেবে তোর লাইফের যে কোনো ডিসিশন আমি নিতেই পারি তাইনা?”

-“অবশ্যই খালামণি।”

-“আমি একটা ডিসিশন নিয়েছি। আশা করি সেটার মান রাখবি।”

-“বলো।”

সাবা খানম কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে বললেন
-“আমার সিনিয়র অ্যাডভোকেট আতিক স্যাররে ছেলে রওশান।এমবিবিএস করে ভালো একটা হসপিটালে আছে।ছেলেটাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।ভদ্র আর মার্জিত ব্যাবহার।আমি চাই তুই একবার তার সাথে মিট কর।”

আরজু বিস্ফোরিত চোখে খালামণির দিকে তাকালো।ভেতরে ভেতরে অদ্ভুত অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে।সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো

-“এখন এসব কেনো? তাছাড়া আমার স্টাডিও শেষ হয়নি।আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা।”

সাবা আরজুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
-“আমি কি একবারও বলেছি তোকে এখনই বিয়ে করতে হবে? আমি চাই তুই একবার ছেলেটাকে দেখ। তোর মতের বিরুদ্ধে তো আমি কিছুই করছি না।তোকে একটা বিশ্বস্ত হাতে তুলে দিতে পারলে মরেও শান্তি পাবো। তাছাড়া ছেলেটার মধ্যে কোন খারাপ কিছু খুঁজে বের করতে পারবি না। তোদের দুজনকে ভীষণ মানাবে।তোরা দুজন দুজনকে পছন্দ করে নিলে আমরা আপাতত এংগেজমেন্ট করে রাখবো। পরবর্তী তোর স্টাডি শেষ হলে বিয়ে নিয়ে ভাববো।”

আরজু মলিন মুখে বললো
-“আমি এখনই এসবের জন্য প্রস্তুত নই খালামণি।”

সাবা খানম জানেন আরজুর মনে কি চলছে ।নাহিদ নামক ভুত যে আরজুর মাথায় চেপে আছে সেটা সাবার মত বিচক্ষণ মানুষের বুঝতে সময় লাগলো না।নাহিদের কারণেই আরজু এমন করছে সেটা তিনি জানেন।আরজুর উপর ভীষণ রাগ হলো তার।মেয়েটাকে সব কিছু কি করে বুঝবে?নাহিদ মানুষটি সাধারণ কেউ না।একজন রাজনীতিবিদের লাইফস্টাইল সম্পর্কে তিনি বেশ ভালো করেই জানেন।আরজুর মতো মেয়ে সেখানে নিজেকে কিছুতেই এটজাস্ট করতে পারবে না।তাছাড়া তাদের মধ্যে ক্লাসের ডিফারেন্স রয়েছে। তবে নাহিদের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো আরজুর অনুভূতিকে কিছুটা প্রশ্রয় দেওয়া যেতো।কিন্তু নাহিদ কে অসম্ভব।এই মানুষটিকে তিনি প্রচন্ড ঘৃনা করে।
তিনি কিছুটা রেগে বললেন

-“যদি আমাকে মা ভেবে থাকিস তবে আশা করি আমার ডিসিশন কে সম্মান করবি। কাল রওশান তোর সাথে মিট করবে।রেস্টুরেন্টের নাম আমি তোকে টেক্সট করে দিবো।যাবি নাকি যাবিনা সেটা তোর ডিসিশন।”

অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে সাবা খানম রুম থেকে চলে গেলেন।আরজু থমথমে অবস্থায় বসে রইলো।হঠাৎ খালামণি এমন ডিসিশন কেনো নিলো?আরজু যেনো আর কিছুই ভাবতে পারছে না।সবকিছু কেমন বিষাক্ত লাগছে।নিজের পাশে নাহিদকে ছাড়া অন্য কাউকে সে কিছুতেই ভাবতে পড়ছে না।কিন্তু যাকে সে ভালোবেসে বসে আছে সেই মানুষটির তার প্রতি কোনো আগ্রহই নেই।না আছে কোনো অনুভূতি।বরং তাকে অতল সাগরে ফেলে লোকটা গা ঢাকা দিয়ে দিব্যি ভালো আছে।

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_21

সকাল সকাল সবার জন্য নাস্তা রেডি করছে লামিয়া।তবে আজ তার মনোযোগ রান্নায় নেই।সামনেই তার এইচ এস সি পরীক্ষা।ফ্রম ফিলাপের লাস্ট ডেট দিয়ে দিয়েছে।হাতে যা টাকা ছিলো সবটাই খরচ হয়ে গেছে।সুমাইয়ার স্কুল ফী আর খাতা পত্র কিনতে খরচ হয়ে গেছে সবটাই।আর এই বাসায় কাজ করছে এক মাস ও হয়নি। এক্ষনি টাকা চাওয়া কতটা যুক্তি সংগত হবে?তাছাড়া লিপা ম্যাম তাকে খুব একটা পছন্দ করে না।হাজারো চিন্তার মাঝে অসাবধানতা বশত গরম পাতিলে লেগে হাত কিছুটা পুড়ে যায় লামিয়ার।লামিয়া হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠে।তখনই নাস্তার জন্য টেবিলের কাছে এসেছিল ফুয়াদ।লামিয়ার চিৎকার শুনে দৌড়ে রান্না ঘরে চলে আসে।দেখে লামিয়া হাতে বার বার ফু দিচ্ছে।ফুয়াদ দ্রুত তার হাত পর্যবেক্ষণ করে দেখে অনেকটা জায়গায় ফোস্কা পড়ে গেছে।সে লামিয়াকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো বেসিনের কাছে।পানির টিউব ছেড়ে হাত ধরে রাখলো।আর ধমক দিয়ে বললো

-“এই মেয়ে দেখে কাজ করতে পারো না?হাতের কি অবস্থা হয়েছে দেখেছো?আছিয়া খালা!আছিয়া খালা!”

আছিয়া খালা ফুয়াদের ডাক শুনে হন্তদন্ত হয়ে আসলো।তিনি প্রায় অনেক বছর ধরে ফুয়াদের বাসায় কাজ করেন।তিনি বাকি কাজে বেশ পারদর্শী হলেও তার রান্নার হাত খুবই বাজে।তাইতো ফুয়াদের মা রান্নার জন্য অন্য সেইফ রেখেছিলেন।কিন্তু তার রান্না ফুয়াদ পছন্দ করছিলো না তাই তাকে বাতিল করে লামিয়াকে নিয়োগ করা হয়েছে।প্রথমে লামিয়াকে দেখে আছিয়া খালা অবাক হয়েছিলেন।এতো ছোট মেয়ে রান্না করতে পারবে বলে আশা করে নি।কিন্তু পরবর্তীতে তিনি নিজেও শিকার করেছেন লামিয়ার রান্নার হাত বেশ ভালো।মেয়েটার হাতে যেনো মধু আছে।

ফুয়াদ আছিয়া খালাকে দেখে বললো
-“খালা দ্রুত ফ্রিজ থেকে আইস ব্যাগ নিয়ে আসেন।”

তারপর লামিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“কাজের সময় মন কোথায় থাকে?এই ভাবে হাত পুড়িয়ে বসে থাকলে পরীক্ষা দিবে কি করে?”

লামিয়া অবাক দৃষ্টিতে ফুয়াদকে দেখছে।মানুষটা কেমন যেনো।সচরাচর বড়ো ঘরের ছেলে মেয়েরা তাদের মতো নিম্নবিতদের সাথে সহজে কথা বলতেও চায়না।সেখানে এই মানুষটি তার জন্য মায়ের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে।তার রান্নার প্রশংসা করে।তাকে একটা কমফোর্ট যোন তৈরি করে দেয়।এই মুহূর্তে তার ফুয়াদ নামক মানুষটিকে ভীষণ আপন মনে হচ্ছে।কারণ বর্তমানে ছোট বোনটিকে ছাড়া কেউ নেই তার।লামিয়ার ঠোঁটে হালাক হাসির আভাস দেখা যায়।যেখানে আছে সন্তুষ্টি।

**************
সকাল থেকেই জারার মেজাজ ভীষণ খারাপ।খুব ভোরেই কেউ কল করে তার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।কল করে কিছুই বলছে না।জারা হ্যালো হ্যালো করতে করতে গলা ফাটিয়ে ফেলেছে।কল কেটে দিলে আবারও কল করে চুপ করে থাকছে।প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে জারা কলের বিপরীতের মানুষটিকে বেশ কিছু গালি দিয়ে ফোন বন্ধ করে রেখেছে। এর পর আর ঘুম আসেনি।অনেকক্ষণ শুয়ে থেকে বিরক্ত হয়ে শেষে রিমিকে কল করেছে।তার ধারণা রিমিকে একমাত্র এই সময় পাওয়া যাবে।তার রাফ অ্যান্ড টাফ মেজর বাবা নিশ্চই তার ছেলে মেয়েকে ভোরে ঘুম থেকে তুলে বলে

“এক্ষনি উঠে মর্নিং ওয়াকের জন্য বের হও। গো ফাস্ট।”

বেশকিছুক্ষন রিং হওয়ার পর রিমি কল রিসিভ করে। ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে বলে

-“ওই কে রে?”

জারা মনে মনে ভাবলো আসলেই গুরু জন ঠিক বলে “সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে” এই মেয়েটা কয়েক বছর আগেও কল রিসিভ করে সালাম দিতো।নম্র আর নরম ভাষায় কথা বলতো।কিন্তু তাদের মতো বাঁদর গ্রুপের পাল্লায় পড়ে ওই শান্ত,ভদ্র মেয়েটার কি করুন দশা!আহা!!রিমির মেজর বাপ মেয়ের এই দশা দেখলে তাদের গ্রুপের সকলের ইন কাউন্টার করে দিবে।জারা বললো

-“তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস আমি ভাবলাম এতক্ষণে তো মর্নিং ওয়ার্ক শেষ হয়ে গেছে।”

-“মর্নিংওয়াক! কিসের মর্নিং ওয়াক? সেটা তো আমি আরো বছরখানেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। তুই কি আমাকে মর্নিং ওয়ার্ক এর কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য এই ভোরবেলা কল করেছিস? সিরিয়াসলি!!”

-“না আমার আসলে ঘুম আসছে না।এক ছাগল কল করে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে ।তাই ভাবলাম হয়তো তোর মেজর বাপ তোকে এতক্ষণে উঠিয়ে মর্নিং ওয়ার্ক শেষ করে ফেলছে তাই তোকে কল করলাম। আমি কি জানতাম তুই এভাবে মরার মত ঘুমাচ্ছিস।”

-“উফফ!! জারা তোর সাথে ভার্সিটিতে এসে কথা বলব। এখন একটু ঘুমাইতে দে প্লিজ।”

জারা কল কেটে কিছুক্ষণ বসে রইলো।তারপর চট করে উঠে গেলো। সে মনে মনে ঠিক করেছে আজ মর্নিং ওয়াকে বের হবে।

পার্কে বেশ কিছুক্ষন দৌড়িয়ে জারা হাপিয়ে গেলো।এই কঠিন কাজ ভোর বেলায় উঠে তার পক্ষে সম্ভব না।হাঁটুতে ভর দিয়ে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে সামনে তাকাতেই চমকে গেলো।জাহিদ দৌড়ে এই দিকেই আসছে।কানে হেডফোন গুজে দৌড়াচ্ছে।তার ফোলা পেশী বেয়ে ঘাম ঝরে যাচ্ছে।জারা শুকনো ঢোক গিললো।মানতে হবে অসভ্যটা ভীষণ হ্যান্ডসাম।কিন্তু এই বেয়াদব এই জায়গায় কি করে?
হঠাৎ দুজনের দৃষ্টি মিলিত হলো।জাহিদ অবাক হয়ে চোখ কুচকে জারার দিকে তাকিয়ে আছে।জারাকে দেখে তার দিকে এগিয়ে এসে জাহিদ হেসে বললো

-“আরে আপনি এখানে?আমি তো রোজ আসি।কই আপনাকে কখনো দেখিনি?”

-“কেনো আমি আসতে পারি না?এই পার্ক কি তোমার বাপের?”

জাহিদ হো হো করে হাসলো।যেনো ভীষণ মজার জোক্স বলেছে জারা।জারা এতে বেশ বিরক্ত হলো।দমকের সুরে বললো

-“এই ছেলে বেকুবের মতো হাসছো কেনো?”

-“এমনি।আজ ঠিক মতো ঘুম হয়নি বুঝি?”

জারা চমকালো।এই ছেলে কি করে জানলো?
-“হবে না কেনো? অবশ্যই হয়েছে।”

-“না আমি ভাবলাম সেদিনের পর আপনার ঘুমের হয়তো বেঘাত ঘটছে।”

জারা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।সেদিনের পর আজ জাহিদের সাথে তার দেখা।সত্যি সেই ঘটনার জন্য তার ঘুমের বেঘাত ঘটেছে।ঘুমের মাঝে মনে হতো কেউ তার গালে শক্ত করে চুমু খাচ্ছে।হঠাৎ জারার সেদিনের কথা মনে করে ভীষণ রাগ হল।সে রেগে জাহিদের কলার ধরে বললো

-“আমি সেদিন কিছু বলিনি বলে কি আমাকে সস্তা মেয়ে ভেবেছিস?তোর বাপ যত ক্ষমতাধর হোক না কেনো ইভটিজিং এর মামলা ঠুকে দিলে না জেলে পচে মরতে হবে।চিনিস আমাকে?”

জাহিদ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
-“আপনি আমার জন্য কোনোদিনই সস্তা হতে পারেনা জারা।আপনি আমার জন্য অমুল্য কিছু।যাকে একটি বার দেখতে পারাটাও সৌভাগ্যের।”

জারা কিছুটা থমকালো।জাহিদের কলার ছেড়ে রেগে বললো
-“খবরদার আমার সাথে ফ্লার্ট করবে না।নাহলে এক ঘুষিতে নাক ফাটিয়ে দেবো।”

-“রাগলে আপনাকে কতটা মোহনীয় লাগে সেটা কি কখনো কেউ আপনাকে বলেছে?আমার সামনে এই ভাবে রাগবে না।ঠিক এই জায়গায় এসে আঘাত করে।”

বলেই জাহিদ বুকের বা পাশে হাত রাখে।জারার সারা শরীরে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায়।এই ছেলে কথায় বেশ পটু।জারার মতো কঠিন মেয়েকেও ভেবাচেকা খাইয়ে দিচ্ছে।জারা নিজেকে ধাতস্থ করলো।জাহিদকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললো

-“স্টুপিড!”

জাহিদ টাউজারের পকেটে হাত রেখে জারার যাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।আর বির বির করে বললো

-“হৃদয়হরিণী আমার এই হৃদয়ের ক্ষত পূরণে আপনাকেই চাই।একমাত্র আপনাকে চাই।”

**************
অবনি আরজুর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।আরজু নাক টেনে ক্ষিপ্ত চোখে অবনির দিকে তাকালো।অবনির তাতে বিশেষ কোনো হেলদোল নেই।আরজু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় রাখা আকাশী রঙের শাড়ি টির দিকে দৃষ্টিপাত করলো।সকাল বেলা অফিসে যাবার আগে আরজুর বিছানায় খালামণি রেখে গেছেন।আর আরজুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছেন

-“খালামনির উপর রাগ করেছিস?আমাকে ভুল বুঝিস না।খালামণি তোর জন্যে সর্বোচ্চ ভালোটাই চিন্তা করি।ছেলেটাকে একবার দেখ।অপছন্দনীয় কিছু খুজে পাবি না।তবুও যদি তোর তাকে ভালো না লাগে তবে তোর উপর জোর করবো না।”

আরজু মুচকি হেসেছিল শুধু।কিছুই বলেনি।
আরজুর বুক ফেটে কান্না আসছে। ওই লেজকাটা বাঁদরের সাথে দেখা করতে তাকে শাড়ি পড়তে হবে?

অবনি মনে মনে হাসছে।সারা রাত না ঘুমিয়ে তার বোন চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।এতে করে তার বোনটিকে আরো মিষ্টি লাগছে।ওই এমবিবিএস ডক্টর আপুকে দেখেই কট খেয়ে যাবে।

অথচ তার বোনের ওই মেয়রের বিরহে নাজেহাল অবস্থা।আজব প্রেম।একপাক্ষিক প্রেম গুলো মনেহয় এমনি হয়।কেউ একজন করো জন্য নির্ঘুম রাত পার করে অথচ সেই মানুষটা জানেই না।সে দিব্যি নিজের জীবনে ভালো থাকে।শান্তিতে ঘুমায়।

হঠাৎ অবনির মন খারাপ হয়ে গেলো।আরজুর মনের অবস্থা সে বুঝতে পারলো।তার ইচ্ছে করছে ওই মেয়রকে তুলে এনে আরজুর সামনে দার করিয়ে বলতে

“এই মিষ্টি মেয়েটিকে কাদানোর কোনো রাইট আপনার নেই।ঝটপট কবুল বলে আমার দুলাভাই হয়ে যান।মিষ্টি বউয়ের সাথে দুষ্ট শালী একদম ফ্রি পেয়ে যাবেন।”

আরজু রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হবার সময় অবনি পেছন ডেকে বললো

-“আপু তোমাকে আজ বউ বউ লাগছে।আকাশী বউ।মেঘ ছাড়া ফকফকা আকাশ যেমন সুন্দর আর নির্মল ঠিক তেমন।ওই মেয়র তোমাকে হারালে জীবনসঙ্গী নির্বাচনে বাজেভাবে হেরে যাবে।তোমার মত জীবনসঙ্গী পাওয়া যে কোনো পুরুষের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার।তাহলে তুমি ওই মেয়র সাহেবের মাঝে আটকে আছো কেনো?”

আরজু অশ্রুসিক্ত নয়নে অবনির দিকে তাকালো। ছোট অবনীকে তার এই মুহূর্তে ভীষণ মেচিউর মনে হচ্ছে।আরজু অবনীকে ঝাপটে ধরে কাপা কাপা কন্ঠে বললো

-“নির্দিষ্ট একজনের মুগ্ধতায় আটকে গেলে আর কাউকে ভালোলাগে না।তখন সেই মানুষটা ব্যতীত অন্য কাউকে চিন্তা করা যায়না।যেদিন করো প্রেমে বাজে ভাবে ফেঁসে যাবি সেদিন বুজবি।”

***********
পাঁচতারকা রেস্টুরেন্টের দরজায় দাড়িয়ে আছে আরজু।এই মুহূর্তে তার মনের পরিস্থিতি সে কাউকে বুঝাতে পারবে না।আরজু বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলো।কিছুদূর এগুতেই একটি টেবিলে বেশ সুদর্শন একজন পুরুষকে দেখতে পেলো।ফরমাল ব্লু শার্ট আর চুলে জেল করা সুদর্শন পুরুষটিকে দেখে যে কোনো মেয়ের চোখ ধাঁধিয়ে যাবে।তার খালামণির এই ছেলেকে পছন্দ হবার কারণ আরজু বুঝতে পড়লো।কিন্তু এই সৌন্দর্য আরজুকে তেমন মুগ্ধ করতে পারলো না।তাকে তো একজন পুরুষই মুগ্ধ করতে পারে।তার মন যে একজনের মাঝেই আটকে আছে।
রওশান আজ সকাল থেকে একজন রোগীকেও মনোযোগ দিয়ে দেখতে পারেনি।ভীষণ অস্থির লাগছিলো।যেমনটি আরজুর ছবি দেখে লেগেছিলো।আরজুর সাথে মিট করার এক্সাইটমেন্টে দুই ঘণ্টা আগেই ছুটি নিয়ে বাসায় চলে গেছে।ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে ঘণ্টা খানেক আগেই রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেছে। বিয়ে নিয়ে এই মুহূর্তে সে মোটেও ভাবছিল না।কিন্তু বাবার জোরাজুরিতে আরজুর ছবি দেখে সে থমকে যায়।তখন থেকেই সে অস্থির হয়ে আছে।আরজু নামক অদ্ভুত মায়াবী নারীটিকে দেখতে।

হঠাৎ রেস্টুরেন্টের দরজায় তার দৃষ্টিপাত হয়।মুহূর্তেই রওশানের বুক ধড়ফড় করতে থাকে।তার ভেতরের অস্থিরতা আরজুকে দেখার পর টর্নেডোতে রূপ নেয়।সে বহু কষ্টে চেয়ার ছেড়ে উঠে আরজুর দিকে এগিয়ে যায়।

রওশান আর আরজু মুখোমুখি বসে আছে।আরজুর বেশ সংকোচ বোধ হচ্ছে।আর রওশান বার বার আড়চোখে আরজুকে দেখছে।আহা!কি মায়াবী চোখ।চোখের কাজল কিছুটা ঘেঁটে গেছে। এতে করে এই মায়াবিনীর দিকে চোখ তুলে তাকানো দায় হয়ে পড়েছে।রওশান বুজলো এই নিরবতা তাকেই কাটাতে হবে।তাই বললো

-“কেমন আছেন মিস আরজু?”

আরজু চমকে তাকালো রওশনের দিকে। এই নামে কেনো ডাকছে লোকটি?এই নামে তো তার নেতা সাহেব ডাকেন।আরজুর বেশ বিরক্ত লাগলো।তবুও সৌজন্য বজায় রেখে বললো

-“ভালো আছি।”

রওশান কিছুটা আশাহত হলো।হয়তো সে কেমন আছে এমন প্রশ্ন আশা করেছিলো।তারপর বললো

-“আমরা বরং কিছু অর্ডার করি কি খাবেন বলুন?”

-“আমি কিছুই খাবো না আপনি আপনার জন্য অর্ডার করতে পারেন।”

-“তা কি করে হয়।প্লিজ কিছু একটা নিন।”

-“আচ্ছা আমার জন্য ক্যাপাচিনো অর্ডার করতে পারেন।”

রওশান খুশি হয়ে দুই কাপ ক্যাপাচিনো অর্ডার করল। আরজু কফিতে একটা চুমুক দিয়ে রেখে দিলো।কারণ এই মুহূর্তে তার কাছে সব কিছুই বিষাদ লাগছে।সামনে বসা সুদর্শন পুরুষটি ও তার মন স্থির করতে পড়ছে না।এই মুহূর্তে আরজুর মনে হচ্ছে সে ওই ভন্ড নেতার মায়ায় বাজে ভাবে ফেঁসে গেছে।নাহলে সামনের এই সুদর্শন পুরুষটি তাকে দেখে যে অস্থির হয়ে পরেছে এমন কি এই পুরুষটির হাত পা কাপছে দেখেও তার মন এই পুরুষটির দিকে ধাবিত হতে পারছে না।স্বাভাবিক ভাবে মেয়েরা অ্যাটেনশন পেতে পছন্দ করে।কোনো ছেলের চোখে নিজের জন্য মুগ্ধতা দেখে পুলকিত হয়।কিন্তু আরজুর এমন কিছুই হচ্ছে না। সে যার সামান্যতম অ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে সেই পুরুষটি তার কাছে ধোঁয়াশার মতো। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তাকে চুমু খেতে পারে কিন্তু তার দিকে ভালো করে তাকাতে পারে না।কেমন অদ্ভুত না?

আরজুকে অমনোযোগী হয়ে থাকতে দেখে রওশান চিন্তায় পড়ে গেলো।আরজুর কি তাকে ভালো লাগেনি?সে বললো

-“আজকে আমাদের মিটিংয়ের কারণটা নিশ্চই জানেন?”

-“হুম।”

-“আপনার কি কোন কারণে মন খারাপ?”

-“জি না।”

-“আপনি কি জানেন রূপবতী মেয়েদের মন খারাপ করতে নেই।”

আরজু মুচকি হাসলো।আর বললো
-“আপনি কখনো প্রেমে পড়েছেন?”

রওশান একটু চমকালো।হয়তো এমন প্রশ্ন আশা করেনি।সে গলা পরিষ্কার করে মুচকি হাসলো।আরজুর মনে হলো এই হাসি অনেক পবিত্র।কিন্তু তার নেতা সাহেবের হাসিতে পবিত্রতা নেই।আছে এক সমুদ্র রহস্য।

রওশান কফিতে চুমুক দিয়ে বললো

-“প্রেম কি, ঠিক বলতে পারবো না।কারণ আমার সব প্রেম ছিলো বইয়ের সাথে।বই পোকা মানুষ আমি।তবে মেডিকেল কলেজে থার্ড ইয়ারে থাকা কালীন একটা মেয়েকে ভীষণ ভালো লেগেছিলো।সে ছিলো বেশ জলি মাইন্ডের।মেয়েটা আমাকে বেশ আকৃষ্ট করেছিলো।তার সাথে কিছুদিন রিলেশনে যাওয়ার পর আমি দুই সাবজেক্টে ফেল করি।সেদিন বুঝেছিলাম,আমি যেই কাজটাই করিনা কেনো সেটাই সেই মুহূর্তে আমার প্রায়োরিটি লিস্টের সর্বোচ্চে থাকে।সেই সময়টায় আমি আমার রিলেশনে বেশি ঝুঁকে পড়েছিলাম।তবে মজার বিষয় সেই মেয়েটা আমার এই খারাপ রেজাল্ট দেখে ব্রেকআপ করেছে।তার ধারণা ছিল আমি ডক্টরী পাস করতে পারবো না। আমার ক্যারিয়ার ভালো হবে না।অথচ সেই মেয়েটার জন্যই আমার রেজাল্টের এই নাজেহাল অবস্থা।তার পর থেকে আর প্রেমে পড়ার সাহস পাইনি।”

আরজুর মনে হচ্ছে তার সামনে বসা মানুষটি ভীষণ ভালো মনের মানুষ।এই মানুষটি দেখতেও সুন্দর আর তার মনটা আরো সুন্দর।খালামনির চয়েস বরাবরই বেস্ট।কিন্তু এতো পারফেক্ট মানুষটি তার হৃদয়কে ছুটে পারছেনা কেনো?মানুষটিকে তার ভালো লাগছে কিন্তু সে মুগ্ধ হতে পারছে না।যেমনটা নেতা সাহেবকে দেখে হয়েছিল। তার হৃদয়কে দখল করে নিয়েছে সেই গম্ভীর,বদরাগী,নিরামিষ,রহস্যময়,আর জটিল মানুষটি।এতো খারাপে ঘেরা মানুষটি আরজুর সমস্ত সত্তা কে ঘিরে বসে আছে।আরজু দীর্ঘশ্বাস ফেললো।আরজু আর কিছুই ভাবতে পারছে না।নাহিদ কি কখনোই তার হবে না?

হঠাৎ পাশে পরিচত কণ্ঠস্বর শুনে আরজু চমকে গেলো। এই কণ্ঠস্বর চিনিতে আরজুর কোনোদিন ভুল হবে না।আরজু চোখ তুলে সামনে তাকালো।সামনে তার কাঙ্খিত পুরুষটি সেই চিরো চেনা সাদা পাঞ্জাবি পরে পকেটে হাত রেখে রিসেপসনিস্টের সাথে কথা বলছে।এতদিন পর নাহিদকে দেখে আরজুর বক্ষস্থলে মৃদু কম্পন সৃষ্টি হল।আরজুর নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসলো। আরজু চোখ পিট পিট করে তাকালো।সে ভুল দেখছে না তো?মানুষটি কি আসলেই তার সামনে?পুরো পৃথিবীতে হয়তো এটি একমাত্র পুরুষ যে আরজুকে মুহূর্তেই এলোমেলো করে দেয়।

আরজুকে বিচলিত হতে দেখে তার দৃষ্টি লক্ষ্য করে রওশান পেছন ফিরে তাকালো।নাহিদকে দেখে কপাল কুচকে কয়েক পলক দেখে উঠে দাড়ালো।আর নাহিদকে ডাকতে লাগলো। রওশানের কাজে আরজু ঘাবড়ে গেল।রওশান কি কিছু বুঝে গেলো?সে নাহিদকে এই ভাবে কেনো ডাকছে?তারা কি পূর্বপরিচিত?

নাহিদ হঠাৎ নিজের নাম শুনে আসেপাশে তাকালো।রওশান কে দেখে ব্রু কুচকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সামনের দিকে এগুলো।কিন্তু কিছুটা এগিয়ে যেতেই চেয়ারে আরজুকে দেখে অনেকটা চমকালো।দুজনের দৃষ্টির মিলিত হতেই নাহিদ দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো।রওশনকে দেখে সৌজন্য হেসে হ্যান্ডশেক করলো। রওশান মিষ্টি হেসে বললো

-“কেমন আছিস মেয়র সাহেব?”

-“এইতো ভালো তোর কি খবর?”

-“এইতো ভালো।”

নাহিদ আরজুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো
-“এখানে কি করছিস?আমি তো জানি ডক্টর দের ব্যস্ততা আমাদের মত নেতাদের চাইতেও বেশি।”

রওশান হেসে বললো
-“ঠিক বলেছিস।তবে আজ অন্য একটা পারপাসে এসেছি।মিট কর।উনি হচ্ছে আরজু।”

আরজু অপ্রস্তুতভাবে নাহিদের দিকে তাকালো। নাহিদের চোখে মুখে গাম্ভীর্যতা বিরাজমান।আরজুর মন চাইছে নাহিদকে ঝাপটে দরে বলতে

“আমি আপনাকে ভীষণ মিস করি নেতা সাহেব।আপনার কি আমাকে একবারো মনে পড়ে না?আমার হৃদয়ে ধাড়ালো তলোয়ার চালিয়ে কোথায় গায়েব হয়ে যান?আপনাকে সব কিছুর জবাবদিহিতা করতে হবে।”

#মিষ্টি_রোদের_হাতছানি
#israt_jahan_arina
#part_22

মধ্য দুপুরের তপ্ত রোদের মধ্যে রাস্তার কর্নার ঘেসে হাঁটছে আঞ্জুমান আরা।আজ বৃহস্পতিবার বলে স্কুল হাফ ডে ছিলো।তাই দ্রুত বাসায় যেতে পারছে।আসার সময় ভ্যান থেকে কিছু তাজা সবজী কিনে নিয়েছে।আজ দুপুরে সবজি খিচুড়ি করবে বলে ভেবে রেখেছে।তীব্র রোদের উত্তাপ তার মুখে এসে পড়ছে।তাইতো ফর্সা মুখ খানায় রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে।আঞ্জুমান আরার মাথা ধরে আসছে।ছাতাটা ভুল করে আজ বাসায় ফেলে এসেছে।এক হাতে বাজারের ব্যাগ আর অন্য হাতে কপালের ঘাম মুছে সামনে অগ্রসর হচ্ছে।

তীব্র জ্যামে আটকে সাবিহার বিরক্ত লাগছে।গাড়ির এসি বাড়িয়ে দিতে বলে সে স্থির হয়ে বসলো।জানালার বাইরে তাকিয়ে আশেপাশে দেখতে লাগলো।হঠাৎ চোখ পড়লো আঞ্জুমান আরার দিকে।সাবিহা দ্রুত গাড়ি থেকে বের হয়ে ড্রাইভারকে বাসায় চলে যেতে বললো।

পেছন থেকে কারো ডাকে পেছন ফিরে তাকালো আঞ্জুমান আরা।দেখলেন সাবিহা রীতিমতো দৌড়ে তার কাছে আসছে।সাবিহা এসেই আঞ্জুমান আরার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বললো

-“এতো ভারী ব্যাগ নিয়ে আপনি হাঁটছেন কেনো আন্টি?আপনার গুণধর ছেলে কোথায়?”

-“আরে সাবিহা মা তুমি ব্যাগ নিলে কেনো?আমি পারবো।তোমার এসব অভ্যাস নেই।তাছাড়া বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি।আর রামিম টিউশনিতে গেছে। ওর ছাত্রীর নাকি সামনের সপ্তাহে পরীক্ষা।”

-“আন্টি মেয়েদের কিছু করতে অভ্যাস লাগে না।মেয়েরা সব পরিস্থিতিই নিজেকে মানিয়ে নিতে জানে।”

আঞ্জুমান আরা মুগ্ধ চোখে সাবিহার দিকে তাকালো।মুচকি হেসে বললো
-“সব মেয়েরা পারেনা মা।তবে আমার বিশ্বাস তুমি পারবে।”

-“আন্টি চলুন আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেই।”

সাবিহা বসে আছে সোফার রুমে।আঞ্জুমান আরা সাবিহাকে এক গ্লাস শরবত এগিয়ে দিয়ে বললেন
-“শরবতটা খেয়ে নাও মা অনেক গরম পড়েছে তো।”

সাবিহা মৃদু হেসে শরবতে ক্লাসটি হাতে নিল। আঞ্জুমান আর বললেন

-“আজকে দুপুরে খাওয়া দাওয়া না করিয়ে তোমাকে ছাড়ছি না। এই গরিবের বাসায় দুটো খেয়ে তবেই যেতে হবে। রামিমের পছন্দের সবজি খিচুড়ি রান্না করবো।তুমি বসো।”

সাবিহা লাজুক হেসে বললো
-“আন্টি আপনি যদি কিছু মনে না করেন আজকের রান্নাটা আমি করি। আপনি আমাকে হেল্প করুন।”

আঞ্জুমান আরার অন্তরটা জুড়িয়ে গেল। তার মন চাইছে এই মেয়েটিকে সারা জীবনের জন্য এ বাসায় নিয়ে আসতে।
বেশকিছুক্ষন পর রামিম আসলো বাসায়।বাসায় পৌঁছেই নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে বললো

-“মা খাবার দাও।ভীষণ খুদা লেগেছে।”

-“ফ্রেশ হয়ে আস দিচ্ছি।”

রামিম নিজের রুমের চলে আসলো।গায়ের শার্ট ঘামে ভিজে গায়ের সাথে মিশে আছে।রামিম দ্রুত বোতাম গুলো খুলে শার্ট গা থেকে ছাড়িয়ে নিলো।ওয়াসরুমে যাবার উদ্দেশ্য পা বাড়াতেই দেখলো সাবিহা মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। রামিম স্তব্ধ হয়ে সে দিকে তাকিয়ে রইল। কোন কারনে সাবিহাকে হ্যালুসিনেশন করছে না তো? সাবিহা এখানে আসবে কি করে?

সামনে মূর্তিওমান দাঁড়িয়ে থাকা রামিমকে দেখে সাবিহা প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গেল। পরম মুহূর্তেই চোখ পিটপিট করে তাকালো রামিমের দিকে। ঘামে ভেজা উন্মুক্ত পৌরশালী দেহখানি ভীষণভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।রামিম কে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচাইতে সুদর্শন পুরুষ মনে হচ্ছে।সাবিহার ভীষণ অস্থির লাগতে শুরু করলো। নিজেকে ধাতস্থ করে হালকা মুচিকি হেসে রামিমের উদ্দেশ্যে বললো

-“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?ভুত দেখেছিস নাকি?”

রামিম চোখ ফিরিয়ে আশেপাশে তাকালো। নিজেকে স্থির করে সাবিহার দিকে তাকিয়ে বললো

-“তুই এখানে?”

-“কেন আসছে মানা আছে।”

-“না মানা নেই। তবে এই মুহূর্তে তোকে এই জায়গায় এক্সপেক্ট করিনি।”

-“মানুষের এক্সপেক্টেশন অনুযায়ী সবকিছু হবে এমন তো কোনো কথা নেই।”

রামিম আর কিছুই বলার সাহস পেলনা।সাবিহার স্নিগ্ধ মুখখানা তার হৃদয়ে আঘাত করছে।সাবিহার গলায় জমা বিন্দু বিন্দু জলরাশি তার পুরুষ মন কে নিষিদ্ধ আহব্বান জানাচ্ছে।রামিম খেয়াল করলো সাবিহার হাতে তার ব্যবহার করা জীর্ণশীর্ণ গামছাটা।রামিম আর কিছু না বলে ওয়াশরুমের দিকে যেতে গেলেই সাবিহা তাকে পিছু ডেকে গামছাটা দিয়ে দেয়।রামিম সেটা হতে নিয়ে কিছু না বলে ওয়াসরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে হাতের গামছাটা নাকে গুজে দেয়।আহা!কি মিষ্টি মেয়েলি ঘ্রাণ।এই গামছা আজকের পর আর কোনোদিন সে ব্যাবহার করবে না।খুব যত্ন করে রেখে দিবে।এই সুগ্রান সে বার বার নিবে।তার সাবিহার গ্রান।

অনেকক্ষণ পর ফ্রেস হয়ে টেবিলে এসে দেখে তার মা আর সাবিহা টেবিলে বসে গল্পঃ করছে।রামিম কে দেখে তার মা খাবার এগিয়ে দিলো।

রামিম খাবার মুখে দিয়েই মায়ের দিকে তাকালো।তিনি মুচকি হেসে বললেন

-“কীরে কেমন হয়েছে?”

রামিম খুব ভালো করেই জানে এই খিচুড়ি তার মা রাধেনি।কারণ মায়ের রান্না তার চিনতে ভুল হবে না।তাহলে কে করলো?কোনো ভাবে সাবিহা কি?”

রামিম খাওয়ায় মনোযোগ দিয়ে বললো
-“ভালো হয়েছে মা।”

-“আজ কিন্তু আমি রান্না করিনি সব সাবিহা করেছে।”

রামিম আড়চোখে সাবিহার দিকে তাকালো।যা ভেবেছে তাই।সাবিহার লাজুক মুখকানা দেখে খাওয়ায় মনোযোগ দিয়ে বললো

-“তোকে কে বলেছে এসব করতে?হাত পুরে গেলে কি হতো?”

সাবিহা মুখখানা মলিন করে বললো
-“আমার কিছুই হয়নি।”

-“এমনটা আর করবি না সাবিহা।কিছু হলে তোর বাবাকে কি জবাব দিতাম?তার মেয়েকে দিয়ে রান্না বান্না করিয়েছি?তোকে কে বলেছে এইসব করতে?তুই কি এই বাড়ির ঝি নাকি বউ?তাছাড়া যার বাড়িতে দুই চারটা ঝি থাকে তাকে এইসব কাজ শোভা পায়না।আমাদের গরিবখানায় এসে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে যাস।কিন্তু নেক্সট টাইম রান্না করতে যাসনা।”

সাবিহার বুক ফেটে কান্না আসতে চাইলো।রামিম টা এমন কঠোর হৃদয়ের কেনো?আঞ্জুমান আরা ছেলেকে ধমকে বললেন

-“রামিম ওকে বকছিস কেনো?ওর কিছুই হতো না।আমি ছিলাম পাশে।মেয়েটা আগ্রহ নিয়ে রান্না শিখতে চাইলো।তুই খামোখাই মেয়েটার মন ভেঙে দিচ্ছিস।”

-“মা বাবার আদরের মেয়েদের প্রায়শই এমন নানান ধরনের শখের উন্মোচন হয়।তাই ওকে সাবধান করছি যাতে নিজের সখ অন্য জায়গায় পুরুন করে।পড়ে কিছু হলে ওর বাবা আমাকেই জেলে পাঠাবে।তাছাড়া এইসব কাজ ওদের জন্য শখের হলেও আমাদের জন্য নিত্য দিনের কাজ।”

সাবিহার দুচোখ বেয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।সে সোফায় রাখা ব্যাগ কাধে নিয়ে রামিম এর বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো

-“আন্টি ওকে বলে দিবেন আমার জন্য ওর কোনো সমস্যা হবে না।আর আমি নিজের শখ পুরুনের জন্য না বরং মন থেকে রান্না করেছিলাম।মেয়েরা আপনজনদের মন খুশি করতে সব করতে পারে।বাবার বাড়ির সবচাইতে আদুরী মেয়েটাও স্বামীর জন্য রোজ সকালে উঠে নাস্তা তৈরি করে। শখ পূরণ করতে না প্রিয় মানুষটিকে ভালোবেসে করে।”

সাবিহা আর এক মিনিটও দাড়ালো না।চলে গেলো বাসা থেকে।আঞ্জুমান আরা বোকার মতো দাড়িয়ে রইলেন।রামিম দিকে তাকাতেই দেখলেন রামিম বেশ তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে।তার মাকে উদ্দেশ্য করে বললো

-“বসো মা। খেয়ে দেখো বড়োলোকের মেয়ের হাতের রান্না আসলেই মজা হয়েছে। আঙ্গুল চেটে খাওয়ার মত। তোমার কাছে তো ম্যাজিক আছে।একদিনেই ওকে পাকা রাধুনী বানিয়ে ফেলেছ।”

আঞ্জুমান আরা ধপ করে চেয়ারে বসে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন।ছেলের মাঝে নিজের স্বামীর প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেলেন।সেই মানুষটি এমন কঠোর মনের ছিলেন।তাকে অসম্ভব ভালো বাসলেও মুখে কখনোই স্বীকার করতেন না।

***********
রেস্টুরেন্টে মৃদু আওয়াজের রোমান্টিক গান চারিদিকের পরিবেশকে আরো রোমাঞ্চকর করে তুলেছে।কিন্তু আরজুর কানে সেই শব্দ কিছুতেই পৌঁছাচ্ছে না।অনেকক্ষণ যাবত সে থম মেরে বসে আছে।বুকের ভিতর অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে।
তখন রওশান নাহিদকে সবটা বললে নাহিদ বলে

-“কনগ্রাচুলেশন।নতুন লাইফের জন্য শুভকামনা রইলো।তোর পাশে মিস আরজুকে বেশ মানাবে।একদম “মেড ফর ইচ আদার।”

তারপর আরজুর উদ্দেশে বললো
-“আপনাকেও শুভকামনা রইলো মিস আরজু।রওশান আমার দুই বছরের জুনিয়র হলেও ওর সাথে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল।রওশান কিন্তু ভীষণ ভালো ছেলে।মেয়র হিসেবে ওর কেরেক্টার সার্টিফিকেট ও আপনাকে দিতে পারি।আমার এই বন্ধু আপনাকে ভীষণ ভালো রাখবে।ডক্টর বলে কসাই ভাববেন না।স্কুল জীবনে একবার আমরা বন্ধুরা মারামারি করে রক্তারক্তি অবস্থা হলে এই রওশান সেখানে সেন্সলেস হয়ে গেছিলো।আমরা তখন বেশ হাসাহাসি করেছি।কারণ তার ইচ্ছা ডক্টর হওয়ার।কিন্তু দেখুন এই ছেলে তখন রক্ত দেখেই কুপোকাত।তবে বর্তমানে কিন্তু সে বেশ সুনাম ধন্য সার্জন।

তাছাড়া আপনার মতো রূপবতী মেয়েরা এমন সুদর্শন ছেলেই ডিজার্ভ করেন। আশা করি খুব জলদি সুখবর শুনতে পারবো।রওশান তোদের হানিমুন প্যাকেজ কিন্তু আমার তরফ থেকে থাকবে।”

নাহিদের কথায় রওশান বেশ লজ্জা পেলো।নাহিদকে সে চেনে স্কুল লাইফ থেকে।তাদের চাইতে দুই বছর জুনিয়র ছিলো ওরা।পুরো স্কুলে নাহিদ ও তার বন্ধুমহল ছিলো বেশ পরিচিত।স্কুলের যে কোনো ঝামেলায় নাহিদদের অবস্থান বরাবরই থাকতো।রওশান প্রথমে নাহিদ দের কাছ থেকে দূরেই থাকতো।এই গ্রুপটিকে সে বাজে গ্রুপ বলে জানতো। রওশান ছিলো পড়ুয়া ছেলে।ঝামেলা করা মানুষ তার পছন্দ ছিলো না।

একদিন কয়েকটা ছেলে রওশান কে অকারনেই মেরেছিল।সেদিন নাহিদ ও তার বন্ধু মহলের সবাই তাকে বেশ সাপোর্ট করে।সেই ছেলে গুলোকে নাহিদ সেদিন বেধম মেরেছিল।রওশানকে হসপিটালে নিয়ে তার বেশ সেবা করেছিলো।রওশান বুঝতে পারে এতদিন সে নাহিদ সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করেছে।তারপর ধীরে ধীরে সে এই গ্রুপের সাথে বেশ ভালো ভাবেই মিশে যায়।তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়।

ভাবনা থেকে ফিরে রওশান হেসে বললো
-“নাহিদ তুই অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছিস।এটা আমাদের জাস্ট ফার্স্ট মিটিং।আমাকে মিস আরজুর পছন্দ হয়েছে কিনা সেটাও জানিনা।”

বলেই লাজুক হেসে আড়চোখে আরজুর দিকে তাকালো।আরজু তখন থম মেরে বসে ছিল।
নাহিদ বাঁকা হেসে বললো

-“মিস আরজু নিশ্চই বুদ্ধিমতী মেয়ে।ভুল ডিসিশন নিশ্চই নিবে না।”

বলে আরজুর দিকে তাকালো।দেখলো আরজুর ফর্সা মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।আরজুর নাকের ডগা বায় বার ফুলে ফুলে উঠছে।আরজু ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে।মনে হচ্ছে সে নিজের রাগ সংবরণ করছে।

নাহিদ একটা শুকনো ঢোক গিললো।কপাল চুলকে রওশান কে বললো

-“আমি আসছি।একটা জরুরী কাজে এসেছি।তোদের প্রাইভেসি নষ্ট করতে চাই না।তোরা এনজয় কর।আসি।”

রওশান সম্মতি জানালো।নাহিদ আর ফিরে তাকালো না।দ্রুত সামনের দিকে চলে গেলো।আরজু এতক্ষণ বহু কষ্ট নিজের রাগ সামলে রেখেছে।আরজুর ভীষণ ইচ্ছে করছিল উঠে নাহিদের গালে কষিয়ে কয়টা থাপ্পর মারতে। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সামলে নিয়েছে। এর মাঝে বেশ কয়েক ফোটা অশ্রু তার গাল বেয়ে নেমে গেছে। সেই অশ্রু যে তার দুর্বলতা।তাই খুব সাবধানে সে অশ্রু আড়াল করে নিয়েছে ।

বুকের ভিতর অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে। ভালোবাসার মানুষটি কত সহজেই তাকে অন্য কারো হওয়ার জন্য শুভকামনা জানাচ্ছে। নাহিদ নামক তুখোড় বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষটি হঠাৎ এতটা অবুঝ কি করে হলো? এই মানুষটা আরজুর অনুভূতি বোঝেনা সে কথা আরজু কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এই মানুষটা সব বোঝে কিন্তু বুঝেও না বোঝার ভান করছে।
সে নাহিদের যাবার দিকে চোখ তুলে তাকালো।ঝাপসা চোখে দেখলো নাহিদ সেখানে দাড়ানো এক মেয়েকে নিয়ে সামনের টেবিলে বসেছে।মেয়েটির পরনে শাড়ি।আরজুর ভীষণ রাগ হলো।এই লোক না মেয়েদের দিকে ঠিক মতো তাকে না।তাহলে সে কি দেখছে? এই লোক এক মেয়েকে চুমু খাচ্ছে,অন্য মেয়েকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

রওশান অনেকক্ষণ যাবত আরজুকে লক্ষ্য করছে। আরজু এক দৃষ্টিতে নাহিদের দিকে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে।রওশান একবার পেছনে তাকিয়ে দেখলো নাহিদ মনোযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছে।রওশান মুচকি হেসে সামনে বসা আরজুর দিকে তাকালো।তার যা বুঝার সেটা সে বুজে গেছে।রওশান হঠাৎ বলে উঠলো

-“নাহিদ কে ভালোবাসেন?”

আরজু চমকে রওশানের দিকে তাকালো।
-“কাউকে ভালোবাসা কিন্তু অপরাধ না। তবে আমি বলব আপনি যাকে ভালবেসেছেন সে ভীষণ চাপা স্বভাবের।নাহিদের প্রতি বরাবরই মেয়েদের আকৃষ্ট হতে দেখেছি।তবে নাহিদকে কখনোই কোনো মেয়ের প্রতি দূর্বল হতে দেখিনি।যদিও ওর সাথে আমার অনেকদিন যাবত যোগাযোগ নেই।আমি মেডিকেলে আর নাহিদ রাজনীতি নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে।তবে আপনারা হয়তো পূর্বপরিচিত সেটা আমি আগেই ধরতে পেরেছি।”

আরজুর দুচোখ ভিজে উঠলো।মুহূর্তেই আরজু ফুপিয়ে উঠলো।রওশান মুচকি হেসে বললো
-“এতটা ভালোবেসে বসে আছেন অথচ তাকে বলেননি?”

আরজু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
-“কি করে বলবো? উনি আমার দিকে কোনদিন ভালো করে তাকায় না অব্দি।মানুষটি আমার অনুভূতিকে আবেগ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।”

-“আমার মনে হচ্ছে আপনি ভুল চিন্তা করছেন।নাহিদ অনেক কঠোর ব্যাক্তিত্বের মানুষ।ওর মনে কি চলে সেটা কেউ বলতে পারবে না।আমি নিজেও না।তবে আপনাকে একটা সাজেশন দেই।নাহিদকে পেতে হলে আপনাকে শক্ত হতে হবে।এমন কিছু করতে হবে যেটা নাহিদ হয়তো চিন্তা করতে পারবে না।”

আরজু পিট পিট চোখে রওশানের দিকে তাকালো।রওশান সানগ্লাস চোখে পড়ে চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো

-“যেখানে ভালোবাসা আছে সেখানে সংশয় বা দ্বিধার কোন জায়গা নেই। এবার দেখার বিষয় নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার জন্য আপনি কি করতে পারেন।আসি আরজু।ভালো থাকবেন।অল দ্যা বেস্ট।”

আরজু অবাক চোখে রওশানের যাবার দিকে তাকিয়ে রইলো।আরজু বুঝতে পারলো সে এই কিছু মুহূর্ত অদ্ভুত একটি মানুষের সাথে কাটিয়েছে।তার মনে নাহিদ নামক মানুষটি বাধা না পড়লে রওশান নামক মানুষটিকে অনায়াসেই সে বিয়ে করে ফেলত।খালামণি ঠিক বলেছে এই মানুষটিকে অপছন্দ করার মতো একটি কারণ ও নেই।খালামণিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে এই সুন্দর মনের মানুষটির সাথে দেখা করানোর জন্য।

আরজু এবার নাদিদের দিকে ক্ষিপ্ত চোখে তাকালো।নাহিদ সেই মেয়েটির সাথে কথা বলছে।আর মেয়েটি খিল খিল করে হাসছে।আর নাহিদ মাঝে মাঝে বাঁকা চোখে মৃদু হাসছে।মুহূর্তেই আরজুর সারা শরীর জ্বলে উঠলো।নিজের মনকে কিছুতেই সে শান্ত করতে পারছে না।সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগছে।কিছুতেই নিজেকে সংযত করতে পারছে না।নাহিদ কি শেষ পর্যন্ত তাকে পাগল করেই ছাড়লো?দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।আরজু ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেললো।আরজুর বিক্ষিপ্ত মন মুহূর্তেই একটা কঠিন সিদ্বান্ত নিয়ে ফেললো।এবং এই সিদ্ধান্তে আরজু অটল।

আরজু চোখ তুলে নাহিদের দিকে তাকালো।নাহিদ আর মেয়েটি খাবার খাওয়া শেষ করে ফেলেছে।আরজু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো।বড়ো বড়ো পা ফেলে নাহিদের টেবিলের সামনে দাড়ালো।নাহিদ কিছুটা ভরকে গেলো।আরজু দুই হাত টেবিলে রেখে নাহিদের দিকে ঝুঁকে বললো

-“আপনার সাথে আমি কথা বলতে চাই।”

নাহিদ কপাল কুঁচকে তাকাতেই আরজু ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে বললো
-“আপনার সাথে আমি এক্ষুনি কথা বলতে চাই।একান্তে।”

কথাটা বলে আড়চোখে পাশের মেয়েটির দিকে তাকালো।মেয়েটা অবাক চোখে আরজুকে দেখছে।নাহিদ গম্ভীর হয়ে বললো

-“সিমি আমি তোমার সাথে পড়ে কথা বলছি।বাইরে আমার গার্ডরা আছে।তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিবে।”

মেয়েটা আর কিছুই বললো না।উঠে চলে গেলো।নাহিদ পেছনের চুলে হাত বুলিয়ে নিজেকে স্থির করে বললো
-“বসুন মিস আরজু।”

আরজু ঘন ঘন শ্বাস ফেলে বললো
-“আমি বসতে আসিনি।”

নাহিদ চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে টেবিলে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বুকে হাত গুজে দিলো।গ্লাসের বাইরে দাড়ানো বডিগার্ডের ইশারা করলো।গার্ডটি মুহূর্তেই পুরো ফ্লোর ফাঁকা করে দিলো।এই সব বিষয়ে নাহিদ কে সব সময় খেয়াল করতে হয়।আরজু দিকে তাকিয়ে নাহিদ বললো

-“আপনাকে বেশ বিক্ষিপ্ত লাগছে আরজু।আপনি ঠিক আছেন?”

প্রশ্নটি শুনে আরজুর সারা গা জ্বলে উঠলো।এই মুহূর্তে তার সব কিছু শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।এমনকি নির্লিপ্ত ভাবে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটিকেও।