মুগ্ধতার ভিরে পর্ব-০৪

0
4909

#মুগ্ধতার_ভিরে🥀
#পর্ব__০৪
#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

বাসায় এসে দেখি ফ্লাটের মেইন দরজায়টা খোলা। অদ্ভুত তো আম্মু এই দিন দুপুরে গেট খুলে রাখসে কেনো!বাই এনি চান্স এই দিন দুপুরে কোনো চোর টোর আবার আসলো না তো বাসায়! আম্মুউউউউ ভিতরে হন্তদস্ত হয়ে এসে দেখি আম্মু পাশের বাসার জাবেদা আন্টির সাথে ডরিং রুমে ছোট সোফাটায় বসে টিভির কোন সিরিয়াল নিয়ে কি বিষয় জানি কথা বলছে। তাদের গবিরতম সিরিয়াসনেস আলোচনা মুগ্ধ থাকায় আর উল্টো হয়ে বসায় থাকার জন্য আমার দিকে এখনো তাদের নজর এসে পরেনি। আমি সেই সুযোগে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে নিঃশব্দে আস্তে আস্তে বাসায় ভিতরে প্রবেশ করলাম। পায়ে থেকে জুতা দুটো চট করে খুলে শব্দবিহীন আস্তে করে জুতোর বাক্সে রাখলাম।আম্মুর দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে উঠে দ্রুত নিজের রুমের দিকে এক ছুট দিলাম।আমার জামার এমন বেহাল অব্যস্থা দেখলে নিশ্চয় আম্মু এই নিয়ে আমার উপর একঝাক প্রশ্ন টনেডো ট্যাগ করতেন। রুমে এসে পড়ার ছোট টেবিলে কাধের ব্যাগটা রাখলাম। আলমারি থেকে হাল্কা গোলাপি ক্লারের একটা কামিজ নিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম শাওয়ার নেওয়ার জন্য।
এই মুহূর্তে লম্বা এক শাওয়ার নেওয়া খুব দরকার ঘা কেমন গুলিয়ে আসছে সাথে মাথাও ঘুরছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আগে হাতের কাপড়গুলো বারান্দায় গিয়ে টানটান করে ঝেড়ে ভালো করে মেলে দিলাম।জামার দাগ গুলো উঠাতে আমার অনেক হেসপেস করতে হয়েছে।আম্মু যাতে কিছু বুঝতে পারে তার জন্য শুধু এত কষ্ট করা।হাত দুইটো প্রচণ্ড লাল হয়ে আছে জামার থেকে ঘষে ঘষে দাগ উঠানোর ফলে।মাথার টাওয়ালটা খুলে ভেজা চুলগুলো মুছতে মুছতে ডেসিং টেবিলে সামনে এসে থোমকে দাঁড়ালাম আয়নায় নিজের প্রতিছবি দেখে। নাক অদ্ভুত ভাবে কেমন লাল হয়ে আছে। সকালে সে ভিজা জামায় ক্লাস করায় করুন ঠান্ডা লেগে গেছে ইতিমধ্যে।মাথাটা কেমন ফাকা ভার ভার লাগছে। ঠান্ডায় কিছু ভালো ও লাগছে না। এই ঠান্ডায় জ্বর বাবাজি আগমন আবার না রটলেই হবে।বিছানায় গিয়ে কাথাটা টেনে ঘা এলিয়ে দিলাম আর সাথে সাথে চোখে একঝাক ঘুম চোখে এসে ভর করলো।

______________
ভার্সিটির ক্লাসে শেষে জায়ান মাঠে এসে একবার ভালো করে আশেপাশে চোখ বুলালো। কিজানি মনে করে ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টর দিকে পা বাড়ালো। কিন্তু আশেপাশে খালি তেমন কোলাহল নেই এই দিকে।ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে দুইটো বাজতে আরো দশ মিনিটের মত আছে।এত তাড়াতাড়ি তো ভার্সিটি থেকে বাসা যাওয়ার কথাও না। তাহলে কোথায় গেলো মেয়েটা!একজন ছেলে তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো জায়ান ভ্রু কুঁচকে থামিয়ে হাতের ইশারায় তাকে কাছে আসতে বলল।

_জ্বী ভাইয়া।কিছু বলবেন!

_কোন ইয়ার!

_ফাস্ট ইয়ার।

_তোমাদের ক্লাস কি এখন শেষ না?

_ নাহ্ ভাইয়া।ক্লাস তো শেষ হয়েছে আরো দুই ঘন্টা আগে লাস্টের দুইটো ক্লাস আজ অফ ছিলো তাই আমাদের বারোটার দিকেই ক্লাস শেষ হয়ে গিয়েছে।

-ওহ্।

“জায়ান বিরক্তি নিয়ে বাইকের সামনে এসে পকেট থেকে বাইকের চাবিটা বের করে স্টার্ট দিলো বাসায় যাওয়ার জন্য ”

___________________________
আজ রবিবার নাফিজের ব্যাংক বন্ধ। ম্রিস্টার সাদাফ হোসেইনের স্কুলে পরীহ্মা চলছে। সকালে দিকে তার ডিউটি ছিলো, দুপুরের দিকে নেই তাই সে আপাতত এই সময় বাসায় আছে।খাবারে টেবিলে, ম্রিস্টার সাদাফ,নাফিজ নাভিলা,মিসেস উম্মে এক সাথে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছে।

“মিসেস উম্মে কপাল গম্ভীর খাদ করে নাভিলার দিকে তাকিয়ে আছে চেহারাতে এক দুশ্চিন্তার ছাপ তার।মেয়েটা নাক টেনে খাচ্ছে চোখ দুইটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে।গালগুলো কেমন ফোলা ফোলা সাদামাটা ফেকাসা হয়ে আছে, মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার চেহারায় হুট করে বিশ্বের এক চিন্তারাজ্য এসে ভর করলো। ম্রিস্টার সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,,

_আচ্ছা কালা মুনশি এখন কোথায় বসে বলতে পারবে!!

ম্রিস্টার সাদাফ ভাতের লোকমাটা মুখের সামনে এনে থেমে গেলেন নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে ভ্রুত্রুটি কুঁচকে বিপরীতে বললেন,,,

_হঠাৎ তার কথা জিগ্যেস করছো যে!

_এত কথা কেন বলো,, দরকার আছে বলেই তো জিগ্যেস করছি বিনা কারনে তো আর করছিনা এখন বল জানো কি জানো না?
মিসেস উম্মের চটমট উত্তর,,

_আগে যেখানে বসতো এখন সেইখানেই বসে।

-ঠিক আছে,
গম্ভীর হয়ে বলল,,

– তা হঠাৎ তোমার তার কি এমন দরকার পরলো বললা না যে!

– ভাবছি আজ তার কাছে যাবো সাথে তুমিও যাবা আমার সাথে।

– তা কি কারনে যাবো শুনি।

_নাভিলার জন্য পড়া পানি আনতে যাবো। সাথে জেনো আসবো মেয়েটার উপর কেউর বাজে কুনজর পরেছে কিনা।মেয়েটার দিকে একবার ভালো করে তাকিয়েছো।মেয়েটা যে দিনদিন কেমন রোগা হয়ে যাচ্ছে।প্রথমদিন ভার্সিটিতে গিয়ে এত জ্বর বাধালো আর আজ গিয়ে ঠান্ডা ও বাধালো।

নাভিলা খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। থমথম হয়ে মার দিকে একবার তাকালো তার এমন আজগুবিকথা শুনে।জ্বর, ঠান্ডা সাথে হজুরের কি সম্পর্ক! সে এইখানে এটাই বুঝে উঠতে পাচ্ছেনা।

__আম্মু এমনটা সিজেন চেঞ্জের জন্য ও তো হতে পারে ।কালা মুনশির কাছে না গিয়ে অকে ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও এতে অর ভালো হবে।

_তুই চুপ থাক নাফিজ।কোনো সিজেন টিজেন চেঞ্জের জন্য এমন হয়নি। আমি ভালো করেই তা জানি।ছোট থেকেই অর সাথে এমন অনেক হয়েছে কেউ একটু সুন্দর বললে অদ্ভুত ভাবে তাকালে অমনেই পরেদিন অসুস্থ হয়ে পড়তো মেয়েটা।আজ ও তেমনটা হয়েছে।নাহলে ভার্সিটি থেকে আসার পর পরই দুইদিন কেন এত অসুস্থ হয়ে পরবে।নিশ্চয় কেউ বদ কুনজরে তাকিয়ে ছিলো।

_________________________
মাঝে দুই তিন দিন কেটে গেলো নাভিলা অসুস্থ থাকায় ভার্সিটি আসেনি।ঠান্ডায় গলায় ফুলে টন্সিল হয়ে গেছে গলারশুর ও অনেকটা বসে গেছে।যার কারনে কথা বলতে তার খুব কষ্ট হয়।

” জায়ান গত দুই তিন ধরে ভার্সিটিতে এসে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে এবং ক্লাস শেষে নিয়মমাফিক করে একবার হলে ও চোখ বুলিয়ে এত এত সবার মাঝে নাভিলাকে সে খুঁজে । কেন খুঁজে তা সে জানে না কিন্তু বিরক্তি নিয়ে মেয়েটাকে খুঁজে । নাভিলার হঠাৎ কোনো খোজ খবর নেই। রিয়াকে ভার্সিটিতে আসতে দেখে কিন্ত তার সাথে নাভিলাকে আর দেখে যায়না।কাউকে জিগ্যেস ও করতে পারছেনা। জিগ্যেস করলে কে কিনা মনে করে বসে এই ভেবে। এই প্রথম সে কোনো মেয়েকে এত খুঁজছে এটাও কিসের জন্য? তার সাথে পায়ের উপর পা দিয়ে ঝগড়া করার জন্য। এটাই ভাবাছে খুব করে জায়ানকে।যে জায়ান কোন মেয়েকে একচুল ও পাত্তা দিতো না সে জায়ান এখন এত ভিরের মাঝে একটা মেয়েকে খুঁজছে। জায়ন আনমনে অন্যমস্তিকে থাকায় বন্ধু আড্ডামহলের মাঝে বলে উঠে,,,

“মেয়েটা আসলেই এক নাম্বার ফাঁকিবাজ তাই তো আসছে না”

_কি ভাজ। (রাফি)

_ফাঁকিবাজ।

_তো মাইয়াটা কিঠায়? কার কথাই বা বলছিস!আমরা ও একটু শুনি হু ইজ দ্যা ল্যাকি গার্ল(শিহাব)

হঠাৎ শিহাবের এমন কথা জায়ানের হুস আসে সে কিছুটা থতমত খেয়ে যায় আড়চোখে তাকিয়ে দেখে, রাফি,আকাশ, শিহাব তার দিকে কেমন বাকা চোখে তাকিয়ে আছে যা তার চোখে কোনো ভাবেই ভালো ঠেকাচ্ছে না।তার এখন নিজের উপরই নিজেরই খুব রাগ লাগছে। কেন যে সে ভুল জায়গায় মুখ ফসকে ভুল কথাটা বলতে গেলো।কপাট রাগ নিয়ে জায়ান বলে উঠল,,,

_মাইয়া পাইলি কই(জায়ান)

_তুইতো কইলি(শিহাব)

_ সব জায়গায় খালি যে মাইয়া মাইয়া করস তাই মাইয়া মাইয়া শুনবি ভালো কথাতো আর শুনবিনা। কানে নিচে দুইটা কষে দিলে ঠিকই শুনবি।

_সে দিস এখন চল ক্যান্টিনে যাই খুব খুধা লেগেছে আমার।ক্যান্টিন থেকে এসে একটা কেন দুইটা দিস। তোর জন্য আজ শিহাবের গালকে লাল করার অফার দিলাম আমি।(আকাশ)

শিহাব রেগেমেগে আকাশের পিঠে ধুম করে দুই তিন কিল বসিয়ে দিলো এতে জায়ান রাফি হো হো করে হেসে দিলো।

___________________________
আকাশে আজ অনেক শুভ্র মেঘ জমেছে চারপাশে কেমন ছুটাছুটি করছে তার মাঝে বিদুৎগুলো হঠাৎ করে কিছুক্ষন পর পর চিলিক দিয়ে উঠছে।চারপাশে মৃদু হাল্কা বাতাস ও বয়ছে হয়তো মাঝ রাতে বা শেষ রাতের দিকে বৃষ্টি আসবে।সন্ধায় দিকে ভাইয়ের সাথে নাভিলা হাটতে বের হয়েছে। বাবার, ভাইয়ার সাথে তার হুটহাট এমন বিনা প্লানে রাতে হাটতে বের হওয়া খুব ভালো লাগে। আর আবহাওয়া যদি এমন হয় তাহলে তো কথাই নেই।হাটতে হাটতে তারা বাসার কাছে চাশাড়া শহিদ মিনারে এসেছে। শিহদ মিনারের টং এর দোকানের সামনে এসে নাফিজ বোনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

_ তা কিছুমিছু খাবি?

_ হুম্ম,,,এক কাপ কড়া জলপাই চা।
চোখগুলো ছোট করে হেসে বলল,,

“নাফিজ বোনের নাক টেনে সামনের ছোট কাটা চুলগুলো হাত দিয়ে আলতোভাবে এলোমেলো করে দিলো সে জানতো তার বোন এই কথাটাই বলবে তার যে জলপাই চা খুব পছন্দ সেটা আর কেউ না জানলে ও নাফিজ ভালো করেই জানে,,”

_বস আমি অর্ডার দিয়ে আসছি।

“নাভিলা টং এর সামনে ইট দিয়ে যে উঁচু জায়গায়টা সেখানে এসে বসলো নাফিজ টং এর দোকানে দাঁড়িয়ে আছে চা নিয়ে বোনের কাছে আসবে।আশেপাশে আরো অনেকেই সারি সারিতে বসে আছে কেউ প্রিয়তমা সাথে, কেউ বা বন্ধুমহলের সাথে, আবার কেউ একা।”

“জায়ান আজ বাবার সাথে অফিসের এক কাজে বিকালের দিকে নারায়ণগঞ্জ এসেছে।অফিসের কাজ মাত্ররো শেষ হল সবে মাত্ররো বাসায় ফিরবে। কিন্তু হঠাৎ মাঝ রাস্তায় তার বাবা সাথে এক বয়স্ক লোকের সাথে দেখা হয়ে গেলো। তখন থেকেই দুইজন তাদের কথার মাঝে এতোই হারিয়ে গেছে জায়ান যে তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।কথার ধরন শুনে মনে হচ্ছে অনেকদিনের পুরানো পরিচয় হবে তাদের। জায়ান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাদের থেকে কিছু দূরে চাশাড়া শহিদ মিনারের পাশে যে শপিংমল আছে সেখানে ফাকা একটা জায়গায় দেখে চুপ করে গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।তার কাছে একঝাক মানুষের কোলাহল ভির এইসব কোনো কালেই ভালো লাগেনা। যতসম্ভব এইসব থেকে নিরিবিলি জায়গায় থাকতে পছন্দ করে।বিরক্তি নিয়ে বাবার দিকে একবার তাকালো এখনো তার বাবা গল্পে মেতে আছে। জায়ান যে তার সাথে আছে তা জেনো ভুলেই গেছে । চোখ ফিরিয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলো জায়ান হঠাৎ একঝাক ভিরের মাঝে কালো কামিজ পরিহত একটি মেয়েকে দেখে কিছুটা থোমকে গেলো।চোখ দুইটো ফিরিয়ে নিচে তাকালো আবার ও কিজানি ভেবে তাকালো। ভিরের মধ্যে সেই মেয়ের দিকে, চুলগুলো উঁচু করে আধ খোঁপা করা, চোখে জোড়াতে গোল ফ্রেমের চিকুন চশমা পরা,ছোট কাটা কাটা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কিছুক্ষন পর পর হাল্কা বাতাসে উড়ছে।ঠোটঁ কামড়িয়ে আশেপাশে বার বার তাকাচ্ছে আর বাম হাত দিয়ে এলোমেলো চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিচ্ছে। জায়ান কুঁচকে থাকা ভ্রুটা আরো খাদ করে হাতের ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে গম্ভির হয়ে বলে উঠল,,মিস ফাঁকিবাজ নারায়ণগইঞ্জা এখানে এই সময়,,,,
চলবে,,