মুগ্ধতার ভিরে পর্ব-০৫

0
4617

#মুগ্ধতার_ভিরে

#পর্ব_০৫

#লেখিকাঃ ফাতেমা জোহরা নাভিলা

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে করে রুমে এসে আমি ব্যাগ গুছাচ্ছি। কাল ক্যাম্পাস যেতে হবে গত তিনদিন ধরে যাই না। কালতো যেতে হবে। অনেক হয়েছে শান্তির দিন কাটানো এখনতো এটলিস্ট পড়ায় মন দিতে হবে। নাহলে রেজাল্ট একটু ঊনিশ থেকে বিশ হলেই আমার প্রান প্রিয় আদরের ভাইয়া আমার টাইটাই ফিস করে দিবে।সব রেডি করে এভার আয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে কোনো রকম চুলে দুই বেনি করে নিলাম। ঘুমে চোখ দুইটো টলমল করছে কেমন তাকাতেই পারছিনা ঠিক করে।রাতে আমার আবার দুই বেনি করে ঘুমানোর অভ্যাস । বেনি ছাড়া ঘুমাতে ভালো লাগে না । তাই কষ্ট করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে করছি। দুই বেনি করে পড়ার টেবিল থেকে ফোনটা হাতে নিলাম।রুমের লাইট অফ করে ডিম লাইটটা অন করে বিছানা এসে ঘা এলিয়ে দিলাম।

সকাল সাড়ে সাতটা । নীল আর কালো ক্লারের কম্বিনেশনে কাজিম পড়ে নিলাম।এই গরমের মধ্যে চুল গুলো উঁচু করে একটা ঝুটি করে নিলাম। সামনের ছোট চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে কোনোরকমে আটকে নিলাম। নাহলে কিছুক্ষন পর পর কপালে এসে বিরক্ত করবে। মুখে বিশেষ কিছু মাখার ইচ্ছা নেই। তাই আপাতত হালকা পাউডার হাতে নিয়ে মুখে মিশিয়ে নিলাম। ব্যাগটা কাধে নিয়ে ডরিং রুমে ছোট বাক্সে থেকে জুতা নিয়ে পড়তে পড়তে আম্মুকে জোর গলায় বললাম,

— আম্মু আসি।

__এই এই দাঁড়ায় আসি মানে কি! নাস্তা করবি না!
রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে বললেন আম্মু,,

__নাহ্ আম্মু ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিবো এখন নাস্তা করতে বসলে বাস ছেড়ে দিবে। আর বাস মিস হলে প্রথম দুই একটা ক্লাস মিস হয়ে যাবে।

_ সেই তো, ক্যান্টিন থেকেই যেহেতু নাস্তা করবি তাহলে আমি সকাল ছয়টা থেকে উঠে এত কষ্ট করে নাস্তা কাদের জন্য বানাচ্ছি । বস আমি নাস্তা দেই।চুপচুপ খেয়ে যাহ্ গরম গরম পরটা মাত্ররো চুলায় থেকে নামিয়েছি। নাস্তা করতে আর কতোটুকুই বা সময় লাগবে তোর।

_রাগ করো না আম্মু প্লিজ হাতে টাইম নেই রিয়া নিচে এসে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিবো মনে করে তুমি চিন্তা করো না।

_তাহলে পরটা একটা রোল করে পেঁচিয়ে দেই বাসে বসে খেয়ে নিস।

_লাগবে না আম্মু আমার এখন মোটেও খিধে নেই বিশ্বাস কর।

_আচ্ছা সাবধানে যাস আর শুন মনে করে পরে কিছু খেয়ে নিস।

__আচ্ছা আচ্ছা মেরি মা আমি যাই এখন আল্লাহ্‌ হাফেজ

_আল্লাহ্‌ হাফেজ।

___________
ভার্সিটি এসে ক্যাম্পাসে আশেপাশে ডানে বামে সব ভালো করে খুঁটিয়ে দেখে নিলাম ।পরিবেশ আমার জন্য খুব নিরব দূর দূরান্ত আহান্ত থুক্কু নিহান্তকে আপাতত দেখা যাচ্ছেনা। যাক বাবা বাচা গেলো। ম্রিস্টার কুফার দল আজ তাহলে আসেনি। না আসলে আমার জন্যই ভালো। এখন ক্লাসে গিয়ে শান্তি ভাবে ক্লাসটা করতে পারলেই চলে।

ব্যাগের ব্যান্ডেল চেপে হাটা দিলাম নিশ্চিন্তভাবে নিজের ডিপার্টমেন্ট উদ্দেশ্য,

_এই দাঁড়ায় দাঁড়ায়!!(রিয়া)

_কিহ্

_আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছিস!

_তাহলে কি তোরে কোলে করে নিয়া আমি যামু! বেয়াদব মাইয়া হাটতে পারিস না কচ্ছপ এর মত দিন্তানা দিন্তানা ভাবে হাটছিস কেন। এমনে কোনো ভালা মানুষ হাটে?

_তুই কিন্তু আমাকে অপমান করছিস নাবুর বাচ্ছি।

_একদমই না।এখন পায়ের গতি দ্রুত করে চল।নাহলে তোর যমের দল এসে অপমান কত প্রকার ও কি কি আমার থেকেও ভালো করে ব্যাখা বুঝিয়ে শুনিয়ে দিবে।
সামনে হাটতে নিতেই,

_এক মিনিট দাঁড়াও!

_আবার কি! 🙄(বিরক্তি নিয়ে)
পিছে তাকিয়ে,

_আমার দিকে না ডানে দিকে তাকাইয়া দেখ মাইয়া।

রিয়ার পাশে তাকিয়ে দেখি একটা চিকনা চাকনা হ্যাংলার মত ছেলে আমার দিকে কেমন এক গাল হাসি দিয়ে ক্যাবলাকান্তর মত এগিয়ে আসছে। তার এত হাসি দেখে আমার ঘা জ্বলে যাচ্ছে

_হ্যালো, আমি রাজ

_আপনি রাজ না তাজ তা আমি কি করবো ভাই!তা আপনার সিমরানকে না খুঁজে আমার কাছে কি?আমি কিহ্ আপনাকে কোনো ভাবে চিনি!

ছেলেটা আমার কথা শুনে হাসলো জেনো আমি তাকে এইমুহূর্তে কোনো জোকস বলেছি।মুখের ভাব গম্ভির এমন তার 🙄

_তুমি চিনোনা মিস কিন্তু আমি তোমাকে চিনি।নাভিলা রাইট?তোমার সাহস আছে বলতে হবে।আই এম ইমপ্রেস।

__যেমন!(বিরক্ত নিয়ে বলল)

_ তুমি যেভাবে জায়ান ভাইকে চড় দিয়েছো ভার্সিটি কম বেশী সবার মুখে এখন তুমি চর্চায় আছো।

_এখন কি আপনার জায়ান ভাইয়ের মত সেই চড় খেয়ে সবার মুখে চর্চায় হতে মন চাচ্ছে!আপনি যদি চান আমি ইচ্ছা পূরন করতে পারি সমস্যা নেই।

ছেলেটা আমার কথা শুনে আবার ও হো হো করে হাসলো তার হাসি দেখে আমার এখন পাগল মনে হচ্ছে এত হাসার মানে কি!আমি কি হাসির কথা বলেছি!হাসি থামিয়ে বলে উঠল,

_তুমি কি সব সময় এমন তিত্ত হয়ে কথা বল।

_মুড আর মানুষের উপর ডিপেন্ড করে আপাতত আমার ক্লাস জন্য লেইট হচ্ছে। আমি যাই আল্লাহ্‌ হাফেজ।

_এই মাইয়া জলদি করে এখান থেকে চল
কানে ফিসফিস করে,
_কেন!(রিয়া)
_ছেলেটার মাথায় মনে হয় কোনো সমস্যা আছে

_কিহ বলছিস

_ঠিকই বলছি

♣️
লাইব্রেরিতে ফাকা একটি টেবিলে দুইটো চেয়ারে বসে আছে নাভিলা আর রিয়া। এই সময় লাইব্রেরিতে তেমন কোনো স্টুডেন্ট নেই।যারা আছে তারা নিজেদের মত বই নিয়ে আপাতত খুব ব্যস্ত। কাউকে দেখার মত এখানে কাউরই সময় নেই। রিয়া ফোনে কিসের জেনো একটা ভিডিও দেখছে আর হেসে হেসে কিছুক্ষন পর পর নাভিলার উপর হেলেদুলে এসে পরছে।নাভিলা এতে খুবই বিরক্ত হচ্ছে বার বার রিয়ার দিকে চোখ গরম করে পাকিয়ে তাকাচ্ছে।আশেপাশে মানুষ ও কিছুক্ষন পর পর বই থেকে চোখ উঠিয়ে রিয়ার দিকে তাকাচ্ছে আর হাতের ইশারায় বিরক্তি নিয়ে চুপ থাকতে বলছে তাকে।

__অই ছেমড়ি চুপ করবি তুই। নাহ থাপ্পড় খাইবি কোনটা!কেরানি মামা দেখছিস কেমন করে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে! এখন তোর জন্য আমাকে ও ঘাড়ধরে বের করে দিবো মনে হচ্ছে। তার পর তোর ক্রাস থুক্কু বাশ সিনিয়র এসে ফ্রিতে জ্যাগ করবো আমাগো এটা কি তুই চাস!

রিয়া ভয়ার্ত হয়ে এক ঢক গিললো দ্রুত ডানে বামে দুইদিকে মাথা দুলালো। যার অর্থ না।

_রিয়ার বিপরীতে চোখ দিয়ে সবায়কে অসহায় হয়ে সরি বলছে। এভার সে ফোন রেখে সিরিয়াস হয়ে উঠে তাক থেকে একটা বই নিয়ে বসছে পড়তে।

নাভিলা রিয়া থেকে চোখ সরিয়ে নোট করায় মন দিলো। আজ তিন দিন পর ভার্সিটিতে এসেছে এমনেই অনেক পড়া মিস হয়ে গেছে। এগুলো এখন সব কালেক্ট করতে হবে তার ।

এটিটিউড ও নিজ পার্সনালিটি নিয়ে লাইব্রেরিতে প্রবেশ করলো জায়ান হাতে তার মোটাগাটা একটা বই । জায়ান আজ ব্লাক প্যান্ট, সাদা টি-শার্টের উপর কালো জ্যাকেট পরেছে,স্ফট সিল্ক চুলগুলো সেট করা, ফর্সা এক হাতে কিছুটা ব্যাস্লেট পরা আর এক হাতে নাম না জানা কোনো দামি ব্যান্ডের ঘরি। বুকের কাছে ঝালানো কালো ক্লারের সানগ্লাসটা চিকচিক করছে। এতেই তাকে দেখতে বেশ লাগছে।নাভিলার টেবিলে বরাবর সিটে এসে দাঁড়াল জায়ান। এখন লাইব্রেরির কম বেশী অনেকের বই থেকে নজর উঠিয়ে জায়ানের উপর দিয়ে রেখেছে। সিনিয়র বড় ভাই আর ভার্সিটির ক্রাস বলে কথা।জায়ান মুঠোফোনে অফিসের ম্যানাজারের সাথে খুব গম্ভীর হয়ে একটা মিটিং নিয়ে কথা বলছে। আপাতত তার আশেপাশে তেমন খেয়াল নেই। জায়ান এবার ফোনে কথা শেষ করে ফোন পকেটে রাখলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অনেকেই তার দিকে কেমন করে জেনো তাকিয়ে আছে। এতে জায়ানের মেজাজ গেলো কিছুটা বিগড়ে এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কি!কখনো কি কোনো ছেলে দেখেনি, জায়ান বিরক্তি নিয়ে হাতের বইটি টেবিলে উপর কিছুটা শব্দ করে আওয়াজ করে রাখলো।

হুটহাট এমম কিছু হওয়াতে নাভিলা কিছুটা কেঁপে উঠল খাতা থেকে মাথা উঠিয়ে একবার রিয়ার দিকে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকালো কিছু বলার জন্য। কিন্তু রিয়াকে উল্টো ভয়ার্ত হয়ে সামনে থতমত হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ নিয়ে রিয়ার দৃষ্টি অনুসরন করে নাভিলা তাকিয়ে থ তার সামনে কুফা দলের লিডার অরফে জায়ানকে দাঁড়িয়ে আছে। এভার চোখে চোখ পরাতে জায়ান ও কিছুটা অবাক হয়ে যায় নাভিলাকে লাইব্রেরিতে দেখে।নাভিলা জায়ান থেকে চট করে দ্রুত চোখ নামিয়ে আবার ও নোট করায় মন দিলো। মুখের হাবভাব মুহূর্তে এমন করে রেখেছে জায়ানকে সে একদমই চিনে না। তার সামনে যে জায়ান সয়ং দাঁড়িয়ে আছে তাকে ও দেখেনি।

জায়ান কিছুটা তিক্ষো নজরে নাভিলার কার্যকলাপ গুলো পর্যবেক্ষণ করলো। এতে সে কিছুটা অপমান বোধ করলো। নাভিলার এমন আচারনে জায়ানের খুব রাগ উঠছে মনে চাচ্ছে তাকে ঠাটিয়ে আর একবার চড় দিতে । কোথায় সে ভাব দেখাবে আর কোথায় এই মেয়ে তাকেই উল্টো ভাব দেখাচ্ছে। ভাব দেখে মনে হয় সে সিনিয়র আর আমি জুনিয়র। জায়ান দাঁতে দাঁত চেপে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে টেবিলের উপর হাত দিয়ে জোড়ে এক বারি দিয়ে হনহন করে চলে গেলো লাইব্রেরি থেকে।

_ নাবুরে এটা কি ছিলোরে ভাই!
রিয়া মাথা হাত দিয়ে বলল,,

_এটা ছোটখাটো মাইন্ডের ফালুদা এট্টাকের ব্লাস্ট ছিলো রে ভাই।
দাতঁ কেলিয়ে বলল,,

চলবে,