মুগ্ধতার ভিরে পর্ব-০৬

0
5943

#মুগ্ধতার_ভিরে🥀
#পর্ব_০৬
#লেখিকাঃফাতেমা জোহরা নাভিলা

সিঁড়ি দিয়ে বেখেয়ালি ভাবে উঠতে নিতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে কয়েক ধাপ সিঁড়ি থেকে নিচে পরে গেলাম।হাতে কিছুটা ব্যাথা ও পেলাম। বাম হাতটা কনুইতে প্রচণ্ড জ্বালা করছে হয়তো ছিলে গেছে। হাত ঝাড়তে ঝাড়তে সামনে বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই একটা ছেলেকে দেখতে পেলাম..

-সরি সরি..আমি আসলে খেয়াল করিনি..সরি..আপনি মনে হয় হাতে অনেক ব্যাথা পেয়েছেন!!(হন্তদস্ত হয়ে বলে উঠল আর আমার দিকে এক হাত বারিয়ে দিলো )

আমি তার হাত না ধরে নিজে থেকেই‌ ধীরে সুস্থে উঠে বললাম,,,

-ইটস ওকে ভাইয়া, আমারও দোষ ছিলো‌ কিছুটা, আমি কিছুটা অন্যমস্তিকে ছিলাম তাই উঠতে গিয়ে আপনাকে একদমই খেয়াল করিনি।তাই ধাক্কা লেগে গেলো। সরি কিছু মনে করবেন না।

-আপনি প্লিজ সরি বলবেন না।আমারও‌ খেয়াল রাখা উচিত ছিলো।যাই হোক নতুন মনে হচ্ছে!!ফাস্ট ইয়ার?

-জ্বী..

-ওহ হাই,আমি আবরার সিনিয়র ব্যাচ।সম্পর্কে তুমি আমার থেকে অনেক ছোট তাই তুমি করেই বললাম।কিছু মনে করো না কিন্তু আবার(মুচকি হেসে)

তার কথায় আমিও হালকা হেসে বললাম,,,

-অসুবিধা নেই ভাইয়া আপনি আমাকে তুমি করেই বলতে পারেন। আই ডোন্ট মাইন্ড যাই হোক আমি ফাতেমা জোহরা নাভিলা

-নাইস নেম।

-থ্যাংক্স ভাইয়া।আমি এখন আসি তাহলে আমার ক্লাস অলরেডি শুরু হয়ে গেছে..

-ওহ সিউর..

আমি তাড়াতাড়ি তার পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম।আর মনে মনে বললাম এই ছেলের সামনে আর ভুলে ও দ্বিতীয় বার আসা যাবে না। ছেলেটাকে আমি কুফা দলের লিডারের সাথে দেখেছিলাম নিশ্চয় অই খাটাশের বন্ধু হবে,,
.
.
ক্লাসে বসে আছি আমি পাশে রিয়া নেই।হুট করে মেয়েটা কোথায় যে গেলো কে জানে ! আপাতত আমার দৃষ্টি সামনে দাঁড়ানো হামির মেডিসিন অরফে আরাফাত রহমান স্যার এর দিকে।স্যার দেখতে উজ্জ্বল শ্যাম বর্নের অধিকারি। কিন্তু তার চেহারা কিছুটা চাকমাদের মত টানা টানা সেই সরু চোখ বোঁচা ছোট নাক চিকুন ঠোটঁ জোড়া কিন্তু সব মিলিয়ে মাশাল্লাহ্। তাইতো ক্লাসের অধিকাংশ মেয়েরা তার উপর ক্রাশিত। অবিবাহিত আর কম বয়সি প্রফেসর হলে যায় হয় আরকি। কিন্তু আমার কেন জানি স্যারকে একদমই ভাল্লাগে না।স্যার যখন ক্লাস করে সবায় তার দিকে কেমন ড্যাবড্যাব ভাবে হ্যা করে তাকিয়ে থাকে ইনফেক্ট রিয়া ও ব্যাতিক্রম আলাদা নয়। আর আমার তখন প্রচুর ঘুম পায়। বেটার লেকচার শুনলেই আমার চোখে যেতো রাজ্যে সব ঘুম এসে এক মিনিটে ভর করে ফেলে।ঘুমের জ্বালায় চোখ জেনো খুলে রাখতে পারিনা।এখন ও রিতিমত তাই হচ্ছে। তাইতো স্যারকে গোপন সূত্রে একখানা নিক নেম দিয়েছি আমি কুম্ভকর্ণের হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলার সেই ছোট ভাই।কুম্ভকর্ণ যেমন সারাদিন ঘুমায় আর এনি পড়ার ছলে বলে ঘুম পাড়ায় এই আরকি। এফবিতে কিছুদিন আগে একটা পেইজ দেখছিলাম।অইখানে মোটাগাটা অক্ষরে লিখাছিলো এই খানে সল্প মূল্য জ্বীনদের দ্বারা কাজ সব করা হয়।আর এইখানে আপাতত হবে, এইখানে ফ্রিতে ঘুমের রাজ্য বিতরন করা হয়।যার লাগবে এসে নিয়ে যান অফার কিন্তু সিমিতো সময়ের জন্য।

হামি দিতে দিতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বেল বাঁজতে আরো পাক্কা দশ মিনিট বাকী আছে।মানে আমাকে আরো মিনিট ঝিমাতে হবে এই বেটার ঘ্যানঘেনের জন্য🥱।

জায়ান আর শিহাব স্যার থেকে অনুমতি নিয়ে নাভিলাদের ক্লাসে রুমে আসলো। শিহাবের হাতে সাদা কাগজের মুড়ানো কিসের জানি নোটিশ। জায়ান আর শিহাব ক্লাসের ঢুকতেই সবাই উঠে দাঁড়ালো।কিন্তু আমাদের নাভিলা সে তো আপাতত তার ঘুমের রাজ্যে পারি জমিয়েছে তাই তার এই দিকে আপাতত কিছু খেয়াল নেই।

জায়ান মুচকি হাসি দিয়ে হাতের ইশারায় সবায়কে বসতে বলল। নিভ্রনীল চোখের জোড়া উপরে সানগ্লাস থাকায় সবার চোখের আড়ালে ক্লাসে আশেপাশে একবার ভালো করে চোখ বুলালো কাউকে খুঁজার জন্য। কিন্তু তাকে বেশী কষ্ট করতে আর হলো না।দ্বিতীয় সারিতে চতুর্থ বেঞ্চে ঘুমন্ত অব্যস্থা নাভিলার দিকে তার নজর এসে পরলো। ক্লাসের মাঝে কেমন দুই হাত দিয়ে ব্যাগ আঁকড়ে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। কপালের ছোট ছোট চুলগুলো ছরিয়ে ছিটিয়ে কপালে এলোমেলো হয়ে বাতাসে উড়ছে।জায়ান নাভিলাকে দেখে ঠোটঁ কামরিয়ে হেসে দিলো ক্লাসে ও যে কেউ এভাবে ঘুমাতে পারে তার জানা ছিলো না।নাভিলা থেকে নজর সরাতে তার পাশে একটি ছেলেকে বসা দেখলো। আপাতত ছেলেটির দৃষ্টি তার দিকে নাভিলার দিকে না কিন্তু জায়ানের এটা দেখে প্রচুর রেগে উঠলো,

জায়ান পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে গম্ভীর হয়ে নাভিলা যে বেঞ্চে বসেছে বেঞ্চটির সামনে গিয়ে স্টান হয়ে দাঁড়ালো।
রাগে বেঞ্চে সজোরে শব্দ করে একটা বারি মারলো। হুটহাট বেঞ্চে এমন ভূমিকম্প হওয়াতে নাভিলার কাঁচা ঘুম ভেঙে যায় ও থরথর করে কেপে উঠে। ভয়ার্ত হয়ে বুকে এক হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে উঠে দাঁড়াতেই হঠাৎ জায়ানের চোখে চোখ পরাতে নাভিলা কিছুটা থোমকে গেলো। জায়ান অর দিকে কেমন তিক্ষো নজরে তাকিয়ে আছে।নিভ্রনীল চোখ জোড়া কেমন ভয়াংকর লাল হয়ে আছে, কপালের দুইদিকের রগ গুলো ও ফুলে আছে।জায়ানের রাগার কারন নাভিলা ঠিক বুঝতে পারলো না।কিন্তু তাকে দেখতে আপাতত কোনো হিংস্র প্রানী থেকে কম ও লাগছেনা।নাভিলার কেন জানি খুব ভয় করছে। ও জায়ান থেকে দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলো।

কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,, আ আ প নি এই এ এইখানে,,

_এটা ক্লাসরুম না তোমার বেডরুম! কোনটা!আনসার মি ডেমেড!

জায়ান ধমকের শুরে বলে উঠল,,

“নাভিলা জায়ানের ধমকে কিছুটা কেপে উঠল,ক্লাসরুমে সবায় এখন তাদের দিকে কেমন করে জেনে বাকা নজরে তাকিয়ে আছে। অনেকে মিটমিটে হাসছে ও নাভিলা আড়চোখে আশেপাশে সবার দিকে তাকিয়ে ভয়ে এভার কাঁদোকাঁদো হয়ে সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললো ”

_সারা রাত বাসায় কি কর! বসে বসে মশা মারো! যে ক্লাসরুমে এসে এমন ঘুমাচ্ছো ইডিয়েট । ক্লাসে যে একটা ইম্পরট্যান্ট টপিকে উপর ক্লাস চলছে সেখেয়াল কি আছে তোমার! অহ সরি থাকবে বা কি করে তুমিতো আপাতত ক্লাসে বসে ঘুমাতে ব্যস্ত।”

“নাভিলার এখন চিৎকার করে বলতে মন চাচ্ছে আমি সারা রাত মশা মারি না হাতি, মাশি মারি তাতে তোর কিরে!কে তুই ! যে আমি তোরে কৈফিয়ত দিমু। আর এত চিল্লাচ্ছিস কেন বেয়াদব। আমাকে দেখে তোর কোন এংগেলে বয়ড়া মনে হয়!কিন্তু আফসোস নাভিলা ভয়ে কথাগুলো বলতে আর পারলো না তাই নিতান্ত মনে মনে বলল”

_কিহ্ হলো মিস কথা বলছো না যে! চুপ কেন বল কিছু!সারাদিনতো মুখে অনেক খই ফুটে তোমার তা এখন চুপ কেন।

নাভিলা লজ্জায় অপমানে মাথা নিচু করে আছে ঠোটঁ ফুলিয়ে ফুঁপিয়ে এভার নিঃশব্দে কান্না করছে। জায়ান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এক নজর নাভিলার মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু না বলে এভার সোজা হয়ে চলে আসলো শিহাবের সামনে এসে তার পাশে দাঁড়ালো।

তারপর শিহাব তার হাতে কাগজের বাজ খুলে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে নিয়ে আলোচনা করতে লাগে। আগামী পরশু দিন তাদের নবীন বরণ।যেহেতু তারা নবীন তাই মেয়েদের
শাড়ি আর ছেলেদের পাঞ্জাবি পড়ে আসতে হবে । যার যে ক্লার ইচ্ছে সে সে ক্লার পড়ে আসতে পারবে এখানে কোনো ক্লার আনমিক ভাবে নিদিষ্ট করে দেওয়া হয়নি কাউর জন্য।আর কেউ যদি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে চাই যেমন নাচ গান, কবিতা, আবৃতি, অভিনয় সবকিছুই আছে। দিতে চাইলে ক্লাস শেষে সিনিয়রদের কাছে হোলরুমে এসে নাম দিতে।

মেয়েগুলো তো হা করে জায়ান আর শিহাবের দিকে তাকিয়ে আছে। আর জায়ান তিক্ষো নজরে নাভিলার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শিহাবের কথা শেষ হতেই তারা স্যার থেকে অনুমতি নিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে আসে।

জায়ান যেতেই নাভিলা রেগে তেলেবেগুনে জ্বলে পাশে বসা ছেলেকে বলে উঠে,

_অই বেয়াদব ছেলে আমাকে আগে ডাক দেওনি কেনো!

_বিশ্বাস করো,আমিতো খেয়ালই করিনি তুমি যে ঘুমিয়ে ছিলে তাই,,

_আর বিশ্বাস তোমাকে আমার পাশে বসতে দেওয়া টাই আমার সব থেকে বড় ভুল হয়েছে।না তুমি পাশে বসতে আর না আমি এমনে ঘুমাতাম আর না অই অসভ্য ছেলে আজকে আমাকে ফ্রিতে এতগুলো বদ হজম টাইপ কথা শুনাতো।

_বারে, আমি কি করলাম যে তুমি আমাকে ঝাড়ছ।

_চুপ একদম আর একটাও কথা বলবা নাহ্।

ক্লাস রুম থেকে বেড়িয়ে কডিডোরে হাঁটতে হাঁটতে রিয়াকে ফোন দিলাম মেয়েটা আসি বলে কোথায় গায়েব হয়ে গেলো। প্রথম দুই রিং হওয়ার পর পর অই পাশ থেকে ফোন ধরতেই,,

_ অই ফাজিলের হাড্ডি কই তুই!

_ক্যান্টিনে আর কই,ক্লাস কি শেষ রে!

_আসি বলে যে ভাসি হয়েছিস সেখেয়াল কি আসে তোর! এখন আসছে বলতে ক্লাস কি শেষরে।হ্যাঁ শেষ তোর জন্য কি বসে থাকবে তোর সেই ক্যাবলাকান্তর অরফে কুম্ভকর্ণের ছোট ভাই।

_এইইইইই স্যারকে কিছু বলবি না বলে দিলাম।

_তোর এত কেন জ্বলেরে বন্ধু তোর এত কেন জ্বলে!

_১০২ নাম্বার ক্রাশ বলে কথা জ্বলবেই তো তা তুই বুঝবি না।এখন তুই জলদি করে ক্যান্টিনে আয় তো বইন খুব ইম্পরট্যান্ট একটা কথা বলা আছে আমার ।

_আসছি দ্বারা।

_হ্যাঁ জলদি করে আয় বইন ।
.
.
.
.
.
ক্যাম্পাস পেরিয়ে ক্যান্টিনে আসতে নিতেই নাভিলা কিছুটা থমকে দাঁড়ালো। কৃষ্ণচূড়া
গাছের নিচে জায়ানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। জায়ানের দৃষ্টি নজর আপাতত সামনের দিকে কানে ফোন গুঁজে আবার ও কার সাথে জেনো কথা বলছে। চেহারার ভঙ্গি বলছে কারো সাথে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে।
এই অল্ড সিটিজেন তো দেখি সারাক্ষণ কানে ফোন গুঁজেই রাখে।ব্যাপার কি! কার সাথে এত প্রেম আলাপ করে? দূর তাতে আমার কি? আমি কেন বা এত ভাবছি।হঠাৎ কিছুক্ষন আগের ক্লাসে রুমের অপমানের কথা মনে পরতেই নাভিলা এভার তিক্ষো নজরে জায়ানের দিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে হনহন করে সেখান থেকে চলে গেলো

চলবে