মুগ্ধতার ভিরে পর্ব-০৭

0
5593

#মুগ্ধতার_ভিরে🥀

#পর্ব_০৭

#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

ক্যান্টিনে এসে রিয়াকে খুঁজতে লাগলাম।কিন্তু ক্যান্টিনে কোথাও মেয়েটা নেই। গেলো কোথায়!ওর তো এখানেই থাকার কথা ছিলো ।তাহলে!আমাকে আসতে বলে এখন নিজেই উধাও। ও কি আবার আমাকে খুঁজতে ডিপার্টমেন্টে চলে গেলো নাতো! দূর কি একটা উটকো ঝামেলা। একবার চারতালা থেকে নামো তো আবার উঠো।লোও ঠেলা দূর ভাল্লাগেনা কিছু।বিরক্তি নিয়ে কাধ ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কল লিস্টে গিয়ে চট করে রিয়ার নাম্বারে ডায়ল করলাম।কিন্ত অপর পাশ থেকে সে চেনা জানা অতি বিরক্তিকর একটা মেয়েলী আওয়াজ ভেশে আসলো কানে বার বার

“এই মুহূর্তে আপনার ডায়ল ক্রতি নাম্বার সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না অনুগ্রহ করে কিছুক্ষন পর আবার চেষ্টা করুন”

এভাবে ফোন বন্ধ করে রাখার মানে কি ভাই? এভার আমার রাগ চরম লেভেলের সাত আসমানে উপরে উঠে গেলো। রাগে গজগজ করতে করতে বিরক্তি নিয়ে আমি ভার্সিটিতে রিয়াকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু অবাক করার বিষয় ও কোথাও নেই! পুরো আধা ঘন্টা ধরে আমি ওকে ক্যাম্পাসের অলিগলি জুড়ে সব জায়গায় খুঁজে চলছি কোথাও নেই।তাহলে কি মেয়েটা চলে গেলো! আমাকে এভাবে না বলে যাওয়ার মানে কি। মন তো চাচ্ছে এই মুহূর্তে অকে হাতে সামনে পেলে খুন করে ফেলতাম😡।বেয়াদব মেয়ে কোথাকার। রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। কপালের জমে থাকা ঘাম মুছতে গিয়ে আকাশের দিকে খেয়াল করে দেখি অব্যস্থা কেমন গুমোট হয়ে আছে।যেকোনো মুহুর্তে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। কপাল মন্ধ থাকলে সব দিক দিয়েই মন্ধ হতে হয়!

এইমুহূর্তে একটা রিকশা পেয়ে গেলে আর সমস্যা হবে না। কোনরকম ভাবে বাস স্টান পর্যন্ত যেতে পারলেই হবে।আর দেরি না করে দ্রুত পা চললাম ভার্সিটি বাহিরে।বাইরে এসে পায়ে গতি বারিয়ে হাঁটতে লাগলাম আর আশেপাশে রিক্সা খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু সমস্যা হলো রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। এই ঢাকা শহরে একটাই সমস্যা আবহাওয়া একটু পান থেকে চুন হলে মানে খারাপ দেখলেই সব রিক্সা উধাও হয়ে যায়। যারা থাকে তাদের মুহূর্তে আবার ডিমান্ড বেড়ে যায়। এই যেমন হাতের সামনে আপাতত যাদের পাচ্ছি তারা বাস স্টানের অই দিকে যেতে চাইছে না। কেন একটু গেলে কি সমস্যা হবে তাদের! এখন আমার প্রচুর কান্না আসছে। মন চাচ্ছে রাস্তায় বসেই হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কান্না করে দেই।একেতো রিয়া এমন বাজে কাজ করলো আমার সাথে।দ্বিতীয় তো এদিকে আকাশও আস্তে আস্তে তার গম্ভীর ভাবটা আরো গম্ভীরতম করে আসছে।যেকোনো মুহুর্তে টুপ‌ করে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে এসে সবাইকে ভিজিয়ে দিয়ে চলে যাবে।

মুহূর্তে মধ্যে আমার ভাবনাকে সত্য করে দিয়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এসে আমাকে মুহুর্তেই‌ ভিজিয়ে কাকভেঁজা করে দিলো। ডানে বামে তাকিয়ে কোনো রকমে এক দৌড় দিয়ে ল্যাম্পপোস্ট নিচে চায়ের টং এর দোকানে ছাউনির নিচে দাঁড়ালাম । অনেকটাই‌ ভিজে গেছি। টং এর দোকানটা আপাতত বন্ধ।আর আশেপাশে ও দূর দূরান্ত এই দিকটায় তেমন কেউ নেই আমাকে দেখার মত।এটা দেখে ভিতর থেকে একটা চাপা সস্তি নিশ্বাস ত্যাগ করলাম।হাত দিয়ে উড়না কোণা গুলো ঝাঁড়তে নিতে খেয়াল করলাম‌‌ দূর থেকে জায়ান মাথায় উপর এক হাত উঁচু করে ধরে দৌড়ে আসছে এই দিকটায়।অকে হঠাৎ এইভাবে আসতে দেখে কেনো জেনো আমার বুকের ভিতর ধুক করে উঠলো।

জায়ান যত কাছে আসতে লাগলো হৃদপিন্ডের কম্পন ততোই জোড়ে বাড়তে লাগলো। হার্টবির্ট গুলো কেমন ডাক ঢোল বাজাছে।জায়ান দৌড়ে এসে আমার একদম পাশে এসে দাঁড়ালো।সেও অনেকটা বৃষ্টিতে ভিজে গেছে।তার পরনে ড্রাক কফি ক্লারের টি-শার্টটা ভিজে একেবারে তার শরীরের বাজের সাথে লেপ্তে আছে ।আমার থেকে এক হাত দ্রুতে দাঁড়িয়ে জায়ান চোখ বুজে এক হাতের সাহায্য তার ভেজা চুলে হাত বুলাতে লাগলো।শুভ্র বিন্দু বিন্দু জমে থাকা পানিগুলো চুল থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঝড়তে লাগলো । এই মুহূর্তে জায়ানকে দেখতে অনেকটা স্নিগ্ধ লাগছে আমার কাছে কেন জানি।আমি তার দিকে কিছুক্ষন অপলক ভাবে তাকিয়ে থেকে চট করে চোখ সরিয়ে নিলাম। আর জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলাম।আমি এতো নিলর্জ্জ হলাম কবে! সকালে সে আমাকে এতগুলো কথা শুনালো আর সেই আমি তার দিকেই এতক্ষন ড্যাবড্যাব ভাবে তাকিয়ে ছিলাম! ছ্যে ছ্যে মানিজ্জত পাঞ্চার আমার ছিহ। চোড়া চোখে আবার ও তাকিয়ে দেখি সে এখনো আমার দিকে তাকায় ও নি। তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে সে আমাকে চিনেই না🙄। আমি যে এখানে দাঁড়িয়ে আছি এটাও সে দেখেনি। তার এমন ঘা জ্বালানো এ্যাটিটিউড দেখলে আমার বড্ডো বমি পায়। আমি কি তারে সাধে আর খাটাশ বলি।তার সব দোষে গুনে বলি বেটা খাটাশ।

জায়ান কিছুক্ষন চুলে হাতে বুলিয়ে পাশে থাকা পিলারের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল।বিরক্তি নিয়ে এভার ছাউনির উপরে তাকালো। ছোট ছাউনির উপরের দিকটা কিছুটা ফুটো । সেই ফুটোর ফাঁকে ফাঁকে পানি জমে এসে কিছুটা আবার ভিজিয়ে দিচ্ছে। আড়চোখে এই বার নাভিলার দিকে পরোক্ষ করলো। টসটস ফোলা গালগুলো ফুলিয়ে কেমন ঠোটঁ উল্টিয়ে কোণায় গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। এক হাত দিয়ে বাচ্চাদের মত ব্যাগের বেল্টটা কেমন আঁকড়ে চেপে ধরে আছে। আর এক হাত মুঠো করে আছে।কপালের অবাধ্য চুলগুলো ভিজে লেপ্টে আছে । নাকের ঢকাটা হাল্কা লাল হয়ে আছে। আজ কি অদ্ভুত মায়াময়ী না লাগছে । চোখের পানি জমে পাপড়িগুলো কেমন আবেগময় দেখাচ্ছে জায়ানের কাছে।আচ্ছা মেয়েটা যখন বকবক করে কই তখন তো এত সুন্দর লাগে না তার কাছে। এখন চুপ চাপ আছে বলেই কি তার কাছে এত আবেগময় দেখাচ্ছে! জায়ান ঠোটঁ কামড়িয়ে চোখ বুঝে মুগ্ধতা নিয়ে হাসলো। আচ্ছা বৃষ্টিতে ভিজলে কি সব মেয়েদের এমন স্নিগ্ধ দেখায়! হয়তো দেখায় আবার হয়তো না।জায়ান হঠাৎ করে চোখ খুলে আবিষ্কার করলো। উঁহু এই মেয়েকে শুধু স্নিগ্ধ দেখায় না, এই মেয়েটার মধ্যে জেনো কত শত #মুগ্ধতার_ভিরে লুকিয়ে আছে এক রাশ মুগ্ধতা।মেয়েটাকে দেখলে তার কাছে কেমন রহস্যময় লাগে।মনে হয় এর দেখার শেষ নেই। চোখে চোখ পড়ার আগে জায়ান দ্রুত চোখ গুরিয়ে নিলো আগের নেয় ।

না চাইতেও বারবার চোখ চলে যাচ্ছে আমার জায়ানের উপর।বৃষ্টিতে ভিজার ফলে তার গায়ের রঙটা আরো চকচক উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। হাতের কালো পশোম গুলো ফর্সা হাতে কেমন লেপ্টে আছে এতে করে তার সৌন্দর্য জেনো আরো হাজার গুন বারিয়ে তুলেছে। নিভ্রনীল চোখ জোড়াতে আজ কোনো সানগ্লাস নেই। দেখতে সব মিলিয়ে তাকে আজ বিদেশী বিলাতি ইঁদুর লাগছে। হাহাহাহা এই ছেলেটা এতটা সুন্দর কেন! ছেলেদের কি এত সুন্দর হলে চলে!একদমই না। সুন্দরের অধিকারী তো থাকবে শুধু মেয়েরা। যাদের দিকে হ্যাঁ করে থাকিয়ে থাকবে শত ছেলেরা।আর এখানে উল্টো কি হচ্ছে?একটা মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছি ভাবতেই জোর করে অবাধ্য চোখটা সরিয়ে নিলাম তার থেকে।এদিকে বৃষ্টির থামার নামগন্ধ নেই।
ভাব দেখে মনে হচ্ছে সহজে থামার নয় এই বৃষ্টি।কিছুক্ষন আশে পাশে চোখ বুলিয়ে খেয়াল করলাম‌ সামনে মাঠে দশ বারো জনের মত বাচ্চারা কাদামাটিতে লাফালাফি করে খিলখিল করে হেসে খেলা করছে। দৃশ্যটা দেখতে এই মুহূর্তে কত সুন্দরই না লাগছে।

প্রায় পনেরো মিনিট পর বৃষ্টি হাল্কা থামলো।এখনো হচ্ছে কিন্তু অতোটা না। এতোটা সময় আমার আর জায়ানের মধ্যে কোনো রকম টু শব্দ কথা ও হয়নি।শুধু কয়েকবার চোখাচোখি হওয়া ছাড়া।বৃষ্টি থামতেই আমি বেরিয়ে পরি।আর ভাগ্যক্রমে বি আর টি সি বাসের ও দেখে মিলে যায় রাস্তায় । আমি দ্রুত বাসের দিকে ছুটে বেরিয়ে যাই। আমাকে বেরুতে দেখে জায়ান পিছু থেকে আমাকে ডেকে থামতে বলে।এতক্ষনে তার কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে আমি থমকে দাঁড়াই।

জায়ান ছাউনির নিচ থেকে দ্রুত বেরিয়ে এসে আমার পাশে খানিকটা দ্রুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ায়। হাত থেকে তার কালো জ্যেকেট টা বাজ খুলে আমার পিঠে জড়িয়ে দেয়। আমি হাত দিয়ে খুলতে নিতেই সে চোখ পাকিয়ে তাকায় আমার দিকে।

_আরে কি করছেন কি! এই গরমের মধ্যে আপনার এমন ভারি বস্তা জ্যেকেট আমাকে দিচ্ছেন কেনো!

_কারন আপাতত এটা আমার থেকে তোমার দরকার বেশী তাই।
গম্ভীর হয়ে বলল,

_মোটেও না। আমার উড়না আছে লাগবেনা আপনার জ্যেকেট। এই নিন। কি হলো দরুন!
ঘায়ে থেকে নামিয়ে তার হাতে দিতে নিতেই,,

_ আমি এখন এটা নিতে পারবোনা কারন এর মধ্যে তোমার ঘাম লেগে গেছে।আপাতত এটা আমার কোনো কাজের ও না।তাই বাসায় গিয়ে এটা সার্ফেক্সসেল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে দেন কাল আমাকে ভার্সিটিতে দিবে।
নাক ছিটকে বলল,

“আমি ক্যাবলার মত তার রিয়েকশন দেখে তাকিয়ে আছি কি ভাব হুহ দেখলেই ঘা জ্বলে যায়।আমি কথা আর না বারিয়ে চট করে তার হাত থেকে জ্যেকেট টা নিয়ে ঘায়ে দিয়ে বাসে উঠে গেলাম”

_ সাবধানে যেও।
পিছু থেকে জায়ান বলে উঠল,,

“আমি পিছে তাকাতে কপাল কিছুটা খাদ করে বলে উঠল আবার ও ”

_আমার জ্যেকেট তোমার সাথে তাই বলছি।আর কাল মনে করে ধুয়ে সাথে করে নিয়ে আসবা মনে জেনো থাকে।
চোখ ছোট করে পাকিয়ে বললেন,

_ এতোই যেহেতু চিন্তা তাহলে দিয়েছেন কেনো! আর আপনি চিন্তা করেন না আমি ভিম দিয়ে ধুয়ে নিয়ে আসবো। ভিমের একশো লেবুর শক্তিতে আপনার জ্যেকেট চকাচক নতুন হয়ে যাবে।
দাঁতে দাতঁ চেপে কথাটা বলে বাসে উঠে গেলাম,

বাস তার আপন গতিতে চলতে লাগলো।বাস কিছুদুর সামনে যেতেই আমি বাসের জানালা ফাঁকা দিয়ে উঁকি দিয়ে পিছে দেখতে গেলেই জায়ানের নিভ্র চোখের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়,
চলবে