মুগ্ধতার ভিরে পর্ব-০৮

0
5340

#মুগ্ধতার_ভিরে🥀

#পর্ব__০৮

#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

রিক্সা বাসার সামনে থামতেই নেমে পরলাম।ভাড়া মিটিয়ে পিছু তাকাতেই চোখ পরলো আমাদের বিল্ডিং পর পর দুই বিল্ডিং এর চারাতালার বারান্দা দাঁড়ানো রিয়ার দিকে। ও এখনো আমাকে খেয়াল করেনি। ওর দৃষ্টি আপাতত বারান্দার ফ্লোরে কিজানি হাত নাড়িয়ে করছে।ওর দিকে হঠাৎ চোখ পরতেই একঝাক অভিমানগুলো মনে এসে বড্ডো গ্রাস করলো। অর থেকে চোখ ফিরিয়ে দ্রুত বড় বড় পায়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলাম।

একের পর এক কলিংবেল ভাজিয়ে চলছি খোলার কোনো নামই নেই দরজা। বাসায় কি তাহলে কেউ নেই! না থাকবে না কেনো! না থাকলে তো বাহিরে তালা ঝুলানো থাকতো।উফফফ এই আম্মুটা কি যে করছে!নিশ্চয় অই স্টার জলসা আলতু ফালতু কোনো একটা সিরিয়াল দেখছে বসে বসে তাইতো দরজায় খুলার নাম নিচ্ছে না। এখন নিশ্চিয় দরজায় খুলে সর্বপ্রথম আমাকে এভাবে ভিজা অবস্থায় দেখেই একঝাক প্রশ্ন ছুড়বে। তার সাথে ইচ্ছে মত ঝাড়বে,,, এই কিরে ভিজলি কি করে! তোকে না আমি কতবার বারণ করেছি এমন অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজবি না!তারপরও ভিজেছিস?
.
পাক্কা বিশ মিনিট পর আমার ধর্য্যের পরম পরীহ্মা নিয়ে। আমার পরম আদরের গুনোধর ভাই হেলেদুলে এসে দরজায় খুললো। দরজার সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমো ঘুমো চোখে আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে হাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে প্রশ্ন করলো,
.
_এই নাবু তুই এত ভিজলি কি করে?

_আসলেই তো আমি এত ভিজলাম কি করে ভাইয়া!একটু বলবা!

_মাইর চিনিস কত প্রকার ও কি কি?না তোকে আমি চিনাবো! কোনটা বল।
নাফিজ চোখ রাঙিয়ে বলল,

_ এই সাইড দাওতো। আমাকে ভিতরে আগে আসতে দাও।দেখছো বাহিরে ক্ষনে ক্ষনে থেমে একটু পর পর বৃষ্টি হচ্ছে। তার উপর ভিতরে না আসতে দিয়ে বাহিরে দাঁড় করিয়ে এমন প্রশ্ন ছুড়ছো। আবার উত্তর দিতে গেলে বলে মাইর চিনিস।এই কেমন বিচার রে ভাই! আর এসময় তুমি বাসায় কেন!আম্মু কই!দেখছিনা যে?
ছোট জুতার বাক্সে সামনে দাঁড়িয়ে জুতা খুলে রাখতে রাখতে জিগ্যেস করলাম,

_আম্মু নানির বাসায় গিয়েছে আসতে আসতে রাত হবে বোধহয়। আজ দুপুরের পর থেকে হঠাৎ শরীলটা বড্ডো খারাপ লাগছিলো তাই হাফ দিনের ছুটি নিয়ে চলে এসে পরেছি বাসায়।

_ঠিক আছো তো ভাইয়া! জ্বর আসে নি তো!কই দেখি,
নাভিলা উত্তেজিত হয়ে ভাইয়ের কাছে গিয়ে কপালে হাত বুলিয়ে বলল,

_জ্বর তো আসেনি তাহলে?বেশী খারাপ লাগছে তোমার! ডাক্তারের কাছে যাবা! চল যাই।

_আমি একদমই ঠিক আছি।চিন্তার কিছু নেই।শান্ত হও তুই। সকাল থেকে শুধু আমার মাথাটা প্রচণ্ড ব্যাথা করছিলো এই আরকি।এখন তুই জলদি করে রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নে নাহলে তোর কিছু হয়ে যাবে । তার পর কিন্তু আম্মু আবার ও সেই কালা না সাদা মুনশির কাছে দৌড়াবে পড়া পানি আনতে।
লাস্টে কথাটা নাফিজ মজা করে বলল,

_এইই নাহ্ যাচ্ছি আমি আর তুমি ও রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।আমি ফ্রেশ হয়ে এসে গরম গরম কফি করে নিয়ে আসছি তোমার জন্য।

_আচ্ছা যাহ্ এখন

“নাভিলা ছোট ডরিং রুমে থেকে নিজের রুমের দিকে কয়েক পা দিতেই নাফিজ পিছু থেকে ডেকে বলে উঠল,,”

_এইই এক মিনিট দাঁড়ায়

“নাভিলা পিছু ভাইয়ের দিকে প্রশ্নবিন্দুতে তাকাতে নাফিজ কপালটা কুঁচকে আবার ও বলে উঠল,,

_ তোর হাতে এই জ্যেকেট কার!

“নাভিলা বিষ্মত নয়ণে তাকিয়ে আছে ভাইয়ের দিকে। ভাইয়ের এমন প্রশ্নে এখন সে কি বলবে! অসহায় ভাবে একবার নিজের হাতের দিকে চাচ্ছে তো একবার ভাইয়ের দিকে। জিভ দিয়ে হাল্কা ঠোটঁ মৃদু ভিজিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠলে,”

_ ই ই ইয়ে মানে ভাইয়া বলছিলাম কি,

_হ্যাঁ বল! শুনছি।
নাফিজ বাজ করা কপালটা আরো খাদ করে তিক্ষো নজরে তাকিয়ে বলে উঠল,,

_ আজীব আর কার হতেই বা যাবে এটা রিয়ার

_ আমাকে কি বোকা মনে হয় তোর!রিয়া হঠাৎ ছেলেদের জ্যেকেট পরতে যাবে কেন ! শুনি।

_ কেন পরতে যাবে মানে। ছেলে আর মেয়ে কি ভাই?জ্যেকেটের গায়ে কি কোথাও ট্যাগ করে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা আছে। যে ইহা একটি সম্পূর্ণ ছেলেদের জ্যেকেট যা মেয়েরাদের পড়া একদমই নিষিদ্ধ ।জ্যেকেট জ্যেকেটই বুঝলা।

কথাটা বলেই দ্রুত জোড়ে জোড়ে পা ফেলে খানিকটা শব্দ তুলে নিজের রুমে প্রবেশ করলাম। জানি ভাইয়া হয়তো আমার এমন অবিশ্বাস যোগ্য আজগুবি কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ।নাহ্ করলে ও কিছু করার নেই আমার কাছে।রুমে এসে ভিজা জামা কাপড় ছেড়ে শুকনো জামা কাপড় জড়িয়ে নিলাম গায়ে।
বাইরে বৃষ্টি থেমে গিয়েছে । বৃষ্টি পর পরিবেশটা এখন বেশ ঠান্ডা লাগছে। এমন পরিবেশ আমার বরাবরই ভালো লাগে।আকাশে এখনো মেঘলা মেঘলা হয়ে আছে। চারপাশে মেঘ গুলো কেমন দল বেধে ছুটা ছুটি করছে।এই পরিবেশে একটা ঘুম দিলে ব্যাপারটা মন্ধ হয় না।যে ভাবা সেই কাজ রান্নাঘরে গিয়ে চটপট ভাইয়ার জন্য এক কাফ কফি বানিয়ে রুমে দিয়ে আসলাম। কিছু আর খেলাম না টেবিল থেকে খাবার গুলো গুছিয়ে সব ফ্রিজে তুলে রেখে দিলাম।রুমে এসে কাথা জড়িয়ে আরামে এক ঘুম দিলাম।

_________________________
জানালা পর্দা ভেদ করে কিছুটা রোদ আমার রুমে প্রবেশ করেছে। রোদের তাপে চোখে মুখে আছড়ে পরতেই কাচা ঘুমটা নিমিষেই ভেংগে গেলো।কিছুক্ষন বাইরের দিকে বিরক্তি নিয়ে দৃষ্টিপাত করে ঘড়ির দিকে তাকালাম। চারটা ত্রিশ বাজছে মাত্ররো। বিছানায় কিছুক্ষন আড় মুড়ামুড়ি করতে করতে বালিশের নিচ থেকে ফোনটা নিলাম।ফোন অন করতেই কিছুটা অবাক হলাম। আননোন নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আর রিয়ার সাতাইশটা মিসডকল। আমি এতোই বেগোড় ঘুমে ডুবে ছিলাম যে একটা ফোনেও আমার ঘুম ভাঙেনি। ভাবা যায়😦।আগ্রহ নিয়ে মেসেজ অফসেনে আসলাম কেই বা আমাকে মেসেজ দিলো দেখার জন্য,,

“আজ অবেলা অসময়ের এক পশলা বৃষ্টি করেছে বড্ডো হতাশ আমায় জানো তো?

ভেবেছিলাম প্রচণ্ড বজ্র বেড়াবে দাপিয়ে ঐ উদার আকাশটায়।

সেই প্রিয় অচেনা অনুভূতির অনুভবে বৃষ্টির ফোঁটা নাচবে মনের গৃহিনী আবডালে আনাচে কানাচে ধরণীর মায়াবী স্পর্শে উথাল পাতালে।

দেবে ভিজিয়ে আমায় সতেজতার তরে,যাবে উল্লাসে মিশে।

আজ এমন অসাধারন মেঘলার দিনে,

কাটবে কেমনে প্রতিটি মুহূর্তে এই এক রাশ #মুগ্ধতার_ভিরে তুমি বিহীনে আমায়”

বলতে কি পারো! ৩:১৩pm

(সংগ্রহীত+ তার উপর একটু আমার এক্সটা ঢালাই দেওয়া🙃)

“আমি মেসেজটি পড়ে চট করে শুয়া থেকে বসে উঠালাম। চোখ থেকে নিমিষেই ঘুম গুলো উড়ে গেলো। বড় বড় চোখ করে দাঁত দিয়ে নক খাচ্ছি আর বার বার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রতি লাইন পড়তে লাগলাম। আমাকে এই আবেগমাখা মেসেজ বা কেই দিলো!😐 আমার জানার মতে আমার এমন দূর বৃক্ষ কপালে আদৌ দূর দূরান্তে কোনো আশিক টাশিক নেই । আর নেই কোনো প্রেম বীরপুরুষ। তাহলে হুটহাট এমন মেসেজ কেই বা দিতে যাবে! নাম্বার টায় কি একবার ডায়ল করে দেখবো ? ভুল করে কেউ দেই নি তো আবার? হ্যাঁ সেই বরং হবে।আমাকেই বা এই বৃষ্টির দিনে কেই বা মনে করে এমন এক রাশ আবেগমাখা #মুগ্ধতার_ভিরে মেসেজ দিবে। মাথায় আর মেসেজ নিয়ে বেশী একটা ঘামালাম না। ফোনটা খাটের উপর আগের নেয় পূর্নরায় রেখে দিলাম। খুধায় পেটে ইঁদুর গুলো বড্ডো নাচানাচি করছে। আপাতত এদের শান্ত করতে হবে।তাই ওয়াশরুমে থেকে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে ছুটলাম পেট ভোঁজন করতে।


রিয়ার নম্বরে ডায়াল করলাম।প্রথম রিং এ কলটা রিসিভ হতেই অইপাশ থেকে কিছু বলার সুযোগে না দিয়ে বলে উঠলাম,

-ছাদে আয় কথা আছে।

_আরে শুন,,,,টুট টুট

কথাটা বলেই ফোনটা রেখে দিলাম।রিয়ার উপরের রাগ গুলো এখনো কমেনি আমার।রুম থেকে বের হয়ে আগে ভাইয়ার রুমে একবার উক্কিঝুক্কি দিলাম ভাইয়া ঘুমিয়ে আছে।

বৃষ্টি হওয়ার ফলে চারপাশটা এখন বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।তাই গায়ের ওরনাটা ভালো করে শরীরে জড়িয়ে নিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালাম।
ছাদে গিয়ে দেখি আজ অনেকই বসে আড্ডামত্ত হয়ে আছে।বাচ্চারা ছুটা ছুটি করে খেলা করছে।আমি ছাদের রেলিং এ কিণার ঘেঁষে দাঁড়ালাম। আর অনুভব করতে লাগলাম গোধূলি শেষ বিকালের এই পরিবেশটা। মিনিট পাচঁ পর রিয়া আমার পাশে এসে দাঁড়াল।আমি অর দিকে না তাকিয়ে ও এই মুহূর্তে বুঝতে পারলাম ও ঠিক আমার দিকে তাকিয়ে আছে। শুধু অপেক্ষা আছে আমার কিছু বলার।আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম।

_এই সবের মানে কী রে?

আমার কথায় রিয়া মাথা কিছুটা নত করলো কিন্ত কিছু বললো না।আমি আবার ও বলে উঠলাম।

_কিছু কি বলবি না এইভাবে চুপ থাকবি। ঠিক আছে তাহলে তুই থাক। চুপ যেহেতু থাকবিই ঠিক করেছিস তাহলে আমিই বা কি বলবো। আমি নিচে গেলাম।

রিয়া আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে কাঁদোকাঁদো হয়ে এভার বললো,

-দোস্ত আজ আমি তাকে দেখছি সে এসে পরেছে।

আমি উৎসুক দৃষ্টিতে রিয়ার দিকে তাকাতেই আবার বলতে শুরু করলো।

_বেটা মনে হয় এভার আমাকে ছাড়খাড় করেই দিবে আমি তার সাথে যা করেছি।

_তুই কার কথা বলছিস!কে এসে পরেছে?

_আবরার,,,,,
চলবে,