মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৩

0
983

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ৩
#saiyara_hossain_kayanat

সারাদিন ধরে অর্ক ভাইকে অনেক রিকুয়েষ্ট করার পর আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করালাম। রাতে রেডি হয়ে ড্রইংরুমে যাবো তখনই পেছন থেকে অসভ্য লোকটা বলে উঠলো-

— ”কোথায় যাওয়া হচ্ছে ঘুমন্ত প্রিন্সেস?”

— “দেখুন আপনি আমাকে এসব নামে ডাকবেন না বলে দিচ্ছি।”

শুভ্র ভাই পকেটে হাত দিয়ে একটু ভাব নিয়ে বললেন-

— “শুভ্রের যা ইচ্ছে হয় শুভ্র তা-ই বলে এতে কারও পারমিশন নেয় না।”

— হুম ভালো।

আমি আর শুভ্র ভাইয়ের সাথে কথা না বারিয়ে অর্ক ভাইয়ার কাছে চলে আসলাম। আমি আর ভাইয়া বের হব তখনি বাধা হলো ওই অসভ্য শুভ্রটা আমাদের সাথেই উনি ঘুরে বের হবে। উফফ….আমাদের সাথেই কেন যেতে হবে ওনাকে!!!

আমি আর ভাইয়া কথা বলতে বলতে সামনে হাটছি আর শুভ্র ভাইয়া পিছন পিছন ফোনের দিকে তাকিয়ে হাটছে। বেশ কিছু সময় সোডিয়ামের আলোর ফাঁকা রাস্তায় রাত ১১টা পর্যন্ত হেটে বাসায় চলে আসলাম। কিন্তু আইসক্রিম পার্লার বন্ধ থাকায় মুড অফ হয়ে আছে। তাই কারও বেশি একটা কথা বললাম না

ডিনার করে রুমে গিয়ে বিছানার পাশের টেবিলে চোখ পরতেই মুহুর্তের মধ্যেই মন খারাপ চলে গেল। টেবিলের উপরে আমার প্রিয় দুটি আইসক্রিম রাখা হয়তো অর্ক ভাইয়া রেখে গেছে কিন্তু কখনো!! ভাইয়া তো আমার সাথেই ডাইনিং রুমে ছিল।
যাইহোক এসব চিন্তা না করে আগে আমার আইসক্রিম খাই।

————————

সকালে কিছু মানুষের হাসাহাসি আর কথার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। মাথায় ওড়না টা কোনো রকম পেচিয়ে ড্রয়িং রুমে দিকে পা বারালাম। ড্রয়িং রুমে তাকিয়ে দেখি সোফায় বেশ কিছু মানুষ বসে আছে। তার মধ্যে আমার কাজিনের সংখ্যাই বেশি। বড় মামার ছেলে সাইফ ভাই আমাকে দেখেই বলল-

—“কিরে অনি কেমন আছিস? এদিকে আয়।” (সাইফ ভাইয়া আমাকে অনি বলে ডাকে। উনি আমার থেকে বেশ বড় হলেও আমার সাথে খুব ফ্রেন্ডলি কথা বলে।)

আমি ভাইয়ার পাশে গিয়ে বসে বললাম –

— ”আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি… তোমার সবাই কেমন আছো? আর আমাকে বলোনি কেন তোমরা আজ আসবে? আর এসেছো ভালো কথা আমাকে ডাক দাওনি কেন??”

সাইফ ভাইয়া আমাকে এক হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে বললেন-

— “আরে বাবা এতো প্রশ্ন করছিস কেন থাম এবার। আর সরি আমরা মাত্রই এসেছি তুই নাকি ঘুমিয়ে ছিলি তাই ডাক দেইনি।”

— “আচ্ছা বুঝলাম।”

তারপর স্মরণ আর আবিরের দিকে তাকিয়ে বললাম-
— “কিরে তোরা এভাবে চুপ করে আছিস কেন? কেমন আছিস তোরা?”

(স্মরণ আর আবির বড় মামার ছেলে। দুজন জমজ হলেও দেখতে একদমই আলাদা। আমার থেকে একবছরের বড় হওয়ায় তুই করেই বলি)

—” আমরা আর কি বলবো তুই আর সাইফ ভাই তো সব কথা বলছিস।”

রান্না ঘর থেকে মামামি এসে বললেন-

—”এই তোরা সবাই যা এখন ফ্রেশ হয়ে আয় নাস্তা করবি।”

মামানির কথা শুনে সবাই যার যার রুমে যাওয়া জন্য উঠে পরলাম তখনই চোখ পরল পাশের সোফায় বসে থাকা শুভ্র ভাইয়ের দিকে। উনি কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রুমে চলে গেলাম।

———–————

গোধূলি বিকেলের পশ্চিম আকাশে সূর্যের রক্তিম আভাটা যেন মন ছুয়ে যায়। বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি একা হাতে কফির মগ নিয়ে। বিকেলের পরিবেশ আমার খুব ভালো লাগে। ছাদে দাঁড়িয়ে বাহিরের পরিবেশ দেখছি সূর্যের শান্ত হয়ে লাল হয়ে ওঠা, রাস্তায় মানুষের আনাগোনা, দূরের মাঠে বাচ্চাদের খেলা করা সব কিছুতেই যেন মুগ্ধতা ছেয়ে আছে।

হঠাৎ করে পিছনে কারও অস্তিত্ব অনুভব করলাম। পিছন ফিরে তাকাতেই দেয়ালের মতো কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেলাম। উপরে তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র ভাই দারিয়ে আছে আর আমি ওনার বুকের সাথে ধাক্কা খেয়েছি। আমি ওনার থেকে কিছুটা দূরে সরে দাড়ালাম। উনি আমার পাশে একটু দূরত্ব বজায় রেখে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বললেন-

— “এই সন্ধ্যায় এখানে দাঁড়িয়ে একা একা কি করছিস? ভূতের সাথে গল্প করছিস বুঝি!!”

শুভ্র ভাইয়ের মুখে তুই সম্বোধন শুনে আমি বেশ অনেকটাই অবাক হলাম। মাত্র দু’দিনের পরিচয়ে কেউ তুই সম্বোধন করে আমার জানা ছিল না। আমি অবাকের রেশ কাটিয়ে বললাম-

— “আপনি আমাকে তুই করে বলছেন কেন? মাত্রই তো দু’দিন হলো পরিচয়ের।”

— “তুই করে বলতেই পারি কারন আমি কম করে হলেও তোর থেকে ছয় বছরের বড় হব। আর তোকে কে বললো আমাদের পরিচয় মাত্র দু’দিনের!! বাড়ির সবাই তোকে তুই করে বলে তাহলে আমি বললে কি সমস্যা? আর সমস্যা থাকলেও সেটা মানিয়ে নিতে শিখ।”

আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি ঝড়েরবেগে ছাদ থেকে চলে গেলেন। আমি দাঁড়িয়ে থেকে শুভ্র ভাইয়ের বলা কথা গুলো ভাবতে লাগলাম। কি বলে গেলেন উনি এই গুলা!! সব আমার মাথার দশ হাত উপর দিয়ে গেল। হঠাৎ করে শুভ্র ভাই ছাদের দরজার সামনে এসে আদেশের সুরে বললেন-

— “সন্ধ্যা নেমে এসেছে এখন আর ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা লাগবে না। পাঁচ মিনিটের মধ্যে রুমে যাবি এক সেকেন্ড সময়ও যেন দেরি না হয়। আর হ্যাঁ কেউ আমার কথার অবাধ্য হলে তা আমার একদমই পছন্দ না।”

এই কথা বলেই আবার সেকেন্ডের মধ্যেই গায়েব হয়ে গেলেন। ওনার কথা শুনে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না সাথে সাথেই রুমে এসে পরলাম। বসে বসে ভাবতে লাগলাম কি হলো শুভ্র ভাইয়ের!! হঠাৎ করেই এতটা পরিবর্তন হলো কিভাবে?? বাসের সেই মানুষটা থেকে এই মানুষটাকে একদমই আলাদা মনে হচ্ছে। আর আমার সাথেই বা এরকম করে কথা বললেন কেন আমার যতটুকু মনে পরে আমি ওনাকে আগে কখনো দেখিনি।

——————————

বাড়ির কিছু অংশ ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো হয়ে গেছে। ঝাড়বাতির আলোয় বাহির টা বেশ আলোকিত হয়ে আছে। বিয়ের আরও আটদিন বাকি মামুর একমাত্র ছেলে তা-ই ওনার ইচ্ছে অনেক আগে থেকেই বাড়ি যেন বিয়ের আমেজে মেতে থাকে। তাই তো বিশেষ করে আমাদের সব কাজিনদের দশ আগেই আসার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এই মুহূর্তে আমরা কাজিনরা মিলে ছাদে আড্ডা দিচ্ছি। বিকেলে খালু আমাদের সবার থেকে ছোট্ট খালাতো ভাইকে দিয়ে গেছিলেন। আদনান ঝাড়বাতির আলো দেখে এখানে ওখানে ছুটোছুটি করছে। আবার একটু পর পর হাপিয়ে উঠছে। আমার কোলে কিছুক্ষণ বসে থেকে আবার চলে যাচ্ছে।

আমি সাইফ আর অর্ক ভাইয়ের মাঝে বসে আছি। শুভ্র ভাই ভাই ঠিক আমার সামনেই বসে আছে। উনি আমার দিক তাকিয়ে আছে আমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি।

আড্ডার এক পর্যায় সাইফ ভাই আমার মাথায় হাত রেখে বললেন-

— “অনি অনেক রাত হয়ে গেছে তুই যা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পর। ঠিক মতো না ঘুমালে আবার মাথার যন্ত্রণায় কাল সারাদিন ভুগতে হবে তোর।”

আমি সবাইকে গুড নাইট বলে নিচে চলে আসলাম। আমি রুমে যাবো ঠিক তখনই কেউ ঝড়ের গতিতে এসে আমাকে হেচকা টান দিয়ে ডান হাতটা খুব শক্ত করে পিছন দিকে মুচড়ে ধরলো।

চলবে….

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর কোনো ভুল বা মন্তব্য থাকলে বলতে পারেন।)