মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৪

0
791

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ৪
#Saiyara_Hossain_Kayanat

হঠাৎ করেই কেউ আমাকে হেচকা টান দিয়ে আমার ডান হাতটা পিছনের দিকে মুচড়ে ধরলো। মাথা ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র ভাই। কিন্তু উনি কেন এমন করছেন!! আর কিছু ভাবার আগেই শুভ্র ভাই শক্ত গলায় বললেন-

—”সাইফের থেকে একটু দূরত্ব বজায় রাখতে পারিস না?? কোন ছেলে যেন নেক্সট টাইম তোর গায়ে হাত দেওয়ার সুযোগ না পায় মনে রাখিস।”

আমি এক ঝাটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে মৃদু চিৎকারে বললাম-

—”আজব আপনি আমার সাথে এমন কেন করছেন? একটা মেয়ের সাথে এমন বিহেভ করতে আপনার বিবেকে বাধে না!!”

শুভ্র ভাই আমার কিছুটা সামনে এসে একটু ঝুকে আমার মুখোমুখি হয়ে বললেন-

—”এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর তোর এখন না জানলেও হবে আপাতত আমি তোকে যা বলেছি তা মেনে চল না হলে নেক্সট টাইম থাপ্পড় খাওয়ার জন্য রেডি থাকিস।”

কথা গুলো বলে শুভ্র ভাই সাথে সাথেই চলে গেলেন। আমি ভাবতে লাগলাম একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটার কথা। শুভ্র ভাই আমার সাথে এতো বাজে ব্যবহার কেন করেন সব সময়। আমিও কেন যেন ওনাকে কিছুই বলতে পারি না। তবে কেন যেন ওনার কথা গুলো আগেও শুনেছি বলে মনে হলো কিন্তু কখন আর কার কাছ থেকে কিছুই মনে পরছে না।

——————

দুইদিন পার হয়ে গেল ওই ঘটনার পর শুভ্র ভাইকে যতটা পারছি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছি কিন্তু হচ্ছে একদম তার উল্টো। যেখানই যাই সেখানেই শুভ্র ভাইয়ের সামনে পরি। আর কথায় কথায় শুভ্র ভাইয়ের ধমক খাওয়া যেন এখন আমার প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে। না চাইতেও ওনাকে এখন প্রচুর ভয় পাচ্ছি। আর অর্ক ভাইয়ের সামনে ধমক দিলেও অর্ক ভাই কিছুই বলে না বরং এমন একটা ভাব নিয়ে থাকে যেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এদের কাউকেই আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।

বিয়ের আর মাত্র পাঁচদিন বাকি মেহমান আসা শুরু হয়ে গেছে। আম্মু আর ভাইয়াও চলে আসছে আর আব্বুর কাজ থাকায় বিয়ের দু’দিন আগে আসবে৷

আম্মু আর ভাইয়ার সাথে শুভ্র ভাইয়ের একদম গলায়া গলায় ভাব মনে হয় যেন পরিবারেরই একজন। ওনারা আগে থেকেই চিনে একে অপরকে শুধু মাত্র আমিই চিনতাম না কি অদ্ভুত ব্যাপার। শুভ্র ভাই আম্মুর সাথে কথা বলছে তখন আমি অর্ক ভাইয়ার পাশে দাঁড়িয়ে শুভ্র ভাইকে দেখিয়ে বললাম-

—”আচ্ছা ভাইয়া ওনারা সবাই একে অপরকে আগে থেকে কিভাবে চিনে?”

—”আরিয়ানকে চিনিস?? তোর আব্বুর ফ্রেন্ডের ছেলে”

—”হ্যাঁ চিনি ছোট বেলা দেখেছিলাম তেমন একটা মনে নেই এখন। তবে আব্বুর ফ্রেন্ডের সাথে আমাদের খুব সম্পর্ক। কিন্তু তুমি এখন ওদের কথা কেন বললে?”

অর্ক ভাই সামনের সোফায় বসে থাকা শুভ্র ভাইকে দেখিয়ে বললেন-

—”ওই যে আরিয়ান হাসান শুভ্র এবার বুঝতে পেরেছিস নাকি আরও সহজ করতে হবে।”

আমি ভাইয়ের কথা শুনে থ মেরে বসে রইলাম অবাক লাগছে খুব। অর্ক ভাই আমার মাথায়া একটা টোকা দিয়ে আবার বলা শুরু করলেন-

—”তোকে কি আমি শুধু শুধুই পিচ্ছি ডাকি!!! তুই কি জানতি না আমার মামা তোর আব্বুর খুব ভালো ফ্রেন্ড? তাহলে এটা কেন বুঝতে পারলি না আমার মামতো ভাই মানেই তোর আব্বুর ফ্রেন্ডর ছেলে!!! আর তুই আরিয়ানকে চিনতে পারলি না এটা কেমন কথা। তোর এতো বড় মাথায় এই ছোট্ট একটা বিষয় কেন ডুকলো না!!!

অর্ক ভাইয়ের কথা শুনে আমার নিজের উপরই রাগ হচ্ছে আসলেই তো আমার মাথায় কেন আসলো না এই কথা গুলো। নিজেকে খুব বোকা মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে। আরিয়ানকে আমি দেখেছি প্রায় দশ এগারো বছর আগে হয়তো এর বেশিও হতে পারে। আর ওনার নাম শুভ্র এটা তো আমি জানতাম না। শুভ্র ভাইয়ের ছবিও কখনো দেখিনি শুধু ছোটবেলার ছবিই দেখতাম। আংকেলের বাসায় আসা যাওয়া হতো তবে কখনো কেউ আমার সামনে শুভ্র ভাইকে নিয়ে কথা বলেনি শুধু জানতাম বিদেশে থাকে। আস্তে আস্তে এখন সব বুঝতে পারছি। এই জন্যই শুভ্র ভাইয়ের ধমক শুনে মনে হয়েছিল আগে এমন ধমক শুনেছি।
আমার যতটুকু মনে পরছে শুভ্র ভাই ছোটবেলাও আমাকে অনেক বকা দিতেন। তাকে আমি প্রচন্ড ভয় পেতাম। বিদেশ চলে গেছে এটা শুনে তখন খুব খুশি হয়েছিলাম। দেশে এসে এখন আবার শুরু করেছেন আমাকে ধমকানোর কাজ। নাহ এসব নিয়ে আর ভাবতে ইচ্ছে করছে না সবকিছু অসহ্যকর লাগছে।

————————

বিকেলে ছাদে গিয়ে দেখি শুভ্র ভাই দাঁড়িয়ে আছে। আমি আর সামনে না গিয়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বারাতেই শুভ্র ভাই আগের মতো সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললেন-

—”পালিয়ে যাচ্ছিস নাকি ভয়ে?”

উনি পিছনে না তাকিয়েই কিভাবে বুঝলেন আমি এসেছি!!! আমি ওনার পাশে দাঁড়িয়ে বললাম-

—”ভয় পাবো কেন! আমি তো এমনিই চলে যাচ্ছিলাম। আচ্ছা যাইহোক আপনি আমাকে আগে কেন বলেন নি আপনি আব্বুর বন্ধুর ছেলে??”

শুভ্র ভাই আমার দিকে ফিরে বললেন-

—”বাসে তুই আমাকে দেখেও চিনতে পারিস নি তাই আমিও তখন আর কিছু বলিনি। কিন্তু বাসায় এসেও যখন আমার পরিচয় দিলাম তখনও তুই আমাকে চিনতে পারলি না। আচ্ছা তুই কি শুধু হাতে পায়েই বড় হয়েছিস নাকি??? মাথায় কি বুদ্ধি বলতে কিছু নেই??? এই সহজ ব্যাপারটা বুঝতে তোর এতো দিন সময় কেন লাগলো? আমি আগেই বলে দিয়েছিলাম আমি অর্কের মামাতো ভাই। আর অর্কের মামা তো একজনই সেটা হলো তোর বাবার বন্ধু সেই হিসেবে আমি হলাম তোর বাবার বন্ধুর ছেলে।”

—”আমি আসলে এতো কিছু ভেবে দেখি নি।”

শুভ্র ভাই ছাদ থেকে চলে যেতে যেতে বললেন-

—”তুই আমার ব্যাপারে এতো কিছু না ভাবলেও আমি তোর ব্যাপারে সব জানি। তোর প্রিয় আইসক্রিম থেকে শুরু করে তোর প্রাক্তন সবই আমার জানা আছে।”

এতো টুক বলে একটু থামলেন পিছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললেন-

—”অতীত যেন অতীতই থাকে বর্তমান বা ভবিষ্যতে যেন কোনো প্রভাব না ফেলে। আর একটা কথা ভবিষ্যতে যেন কখনও কারও সামনে ঘুমন্ত অবস্থায় আসতে না দেখি। যদি আবার কখনো দেখি ঘুম থেকে উঠেই কারো সামনে এসেছিস ওইদিন তোকে কি শাস্তি দিব সেটা আমি নিজেও জানি না এটা আমার হুমকি বা আদেশ যা ইচ্ছে হয় ভাবতে পারিস।”

এই কথা বলেই শুভ্র ভাই ছাদ থেকে সাথে সাথেই চলে গেলেন। আর আমি এখনো থ মেরে দাঁড়িয়ে আছি। কি বলে গেলেন শুভ্র ভাই এইসব আমাকে এভাবে হুমকি দিয়ে গেলেন আর উনি আমার প্রাক্তনের কথাই বা জানলেন কি করে। আমার এই সম্পর্কে কথা তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আর অর্ক ভাই ছাড়া কেউ জানে না। উনি যদি সবাইকে জানিয়ে দেয় তাহলে আমার কি হবে??? আম্মু তো আমাকে মেরে আধমরা বানিয়ে দিবে। আর আইসক্রিম!! শুভ্র ভাই তাহলে ওইদিন আমার রুমে আইসক্রিম রেখে এসেছিল??? উফফফ এই লোক তো খুব সাংঘাতিক মানুষ। ওনাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই আমি পাগল হয়ে যাব।

——————

রাতে বারান্দার দোলনায় বসে ভাবতে লাগলাম অতীতের সেই প্রাক্তনের কথা।

কলেজে ভর্তি হওয়ার কিছু দিন পর পরই আহনাফ নামের এক ছেলে আমাকে প্রপোজ করে। প্রথমে রাজি না হলেও একটা সময় আহনাফের পাগলামো দেখে আবেগের বশে রাজি হয়ে যাই। প্রথম ভালো লাগা, প্রথম অনুভূতি সবই ছিল আহনাফ। সম্পর্কে এক মাস পর আহনাফ কেমন যেন অন্যরকম হয়ে গেল। একদিন কলেজে যেয়ে কেন্টিনে আহনাফ কে বসে থাকতে দেখে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। কেন্টিনের সামনে গিয়ে আহনাফ আর ওর বন্ধুদের কথা শুনে যেন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। আহনাফ এতো বড় ধোকা দিল আমাকে??

চলবে…..

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর কোনো ভুল বা মন্তব্য থাকলে বলতে পারেন।)