মেঘের উল্টোপিঠ পর্ব-২১

0
536

#মেঘের_উল্টোপিঠ
#সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা
#পর্ব_২১

থমথমে চারিপাশ! অদ্ভুতুরে দৃষ্টিপাত ফেলে তাকিয়ে আছে অরণ্য ভাইয়ারা। হোটেলে প্রবেশ করতেই তাদের করা অতর্কিত দৃষ্টি হামলা দেখে আমি হতভম্ব। পূর্বের পানে তাকাতে দেখা গেলো সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে সম্মুখে। অতএব এই রাতে সকলের হটাৎ আগমন সম্পর্কে পূর্ব নিজেও জানতেন না কিন্তু তা স্পষ্টত বোধগম্য হলো!

হটাৎ অরণ্য ভাইয়া চোখমুখ কুঁচকে অসহায় কন্ঠে বলল,

‘ ড্যাম…! এই পূর্ব এতো রাতে বাহিরে কি করিস তুই দোলকে নিয়ে? আমাদের প্রায় দুই ঘন্টার পরিশ্রমে সব পানি ঢেলে দিলি ব্যাটা। ‘

পূর্ব তীক্ষ্ণতর ভাবে সবাইকে অবলোকন করে বললেন,

‘ কি বলতে চাচ্ছিস?’

শুভ ভাইয়া ঠোঁট খুলে কিছু বলতে নিলে সামাদ ভাইয়া তার মাথায় চাপড় দিয়ে বলে, ‘ তুই চুপ থাক! অরণ্য? ‘

অরণ্য ভাইয়া নেত্র দ্বারা ইশারায় কিছু বলতেই উপস্থিত সকলে মাথা নাড়ে! ভাইয়া এগিয়ে এসে ঠেলেঠুলে পূর্বকে নিয়ে লিফটের দিকে যেতে থাকলো! এরমধ্যে পিছন ফিরে ফের বলল,

‘ লিটল প্রিন্সেস? দাঁড়িয়ে কেনো?জলদি আসো। তোমাদের জন্য সারপ্রাইজ আছে। ‘

লিফটে আমি পূর্বসহ অরণ্য, শুভ আর সামাদ ভাই উঠলেন। কাঙ্ক্ষিত রুম! পূর্বের রুমের সামনে এসে দাঁড় করায় তারা আমাদের দু’জনকে। অতঃপর পূর্বকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘ শোন পূর্ব! যা করছি তার জন্য থ্যাংক্স দিতে হবে না ওকে? এটা আমার তরফ থেকে তোর বিয়ের উপহার। তবে, চাইলে এই উপলক্ষে সকালে ট্রিট দিতে পারিস। ‘

বলা শেষে চোখ টিপ দিলেন অরণ্য ভাইয়া। তারপর তারা সবাই এক প্রকার দৌড়ে চলে যান। শেষোক্ত কথাগুলো কানে অল্পবিস্তর আসলেও আমি সব কথা স্পষ্টত শ্রবণ করেছি। পূর্বের মুখোশ্রীর প্রতি অবলোকন করতেই তিনি ফট করে বললেন,

‘ দাঁড়িয়ে আছো কেনো? রুমে ঢুকো! ঘুম পাচ্ছে না এখনো?’

আমি শ্লেষের গলায় প্রতুত্তরে বলি, ‘ ঘুম এসেছে! কিন্তু অরণ্য ভাইয়ারা কি কারণে আসলেন কিছুই তো বুঝলাম না। কেনো এসেছিলো জানেন?কোন সারপ্রাইজ এর কথা বলছিলো?’

‘ ঐটা তো রুমে গেলে দেখতে পাবো। রুমে চলো। ‘

আমি ঘাড় কাত করে সম্মতি জানিয়ে দরজার নব ঘুরিয়ে রুমে প্রবেশ করি। রুম খোলাই ছিলো! লক নেই। হয়তো শুভ ভাইয়ারা খুলে রেখেছেন। রুমে পা ফেলতে থমকে চমকালাম! কয়েক কদম সামনে গিয়ে বুঝলাম আসল কাহিনি। শুষ্ক গলা সিক্ত করতে ঢোক গিলি কয়েকবার। পুরো রুম বাসর ঘরের মতোন করে সজ্জিত। রুম জুড়ে শোভা পেয়েছে গোলাপ রাণী। লাল, কালো গোলাপে আচ্ছাদিত পুরো চারপাশ! সাড়ি সাড়ি করে সাজানো মোমবাতি জ্বলছে নিজ অনলে! বেডের ঠিক মাঝখানটায় আমার আর পূর্বের নাম লাভ শেপের মধ্যে কালো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লিখা। সবকিছু দেখা শেষে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত তা লঘু মস্তিষ্ক ভুলে গেলো।

দু’হাতের মুঠোয় ওড়না চেপে ধরে পিছন তাকাতে দৃশ্যমান হলো পূর্বের মুখোশ্রী। তার প্রতিক্রিয়া ঠিক কেমন? তা আর বোধগম্য হলো না! সবসময়কার মতোই মুখোশ্রীতে গাম্ভীর্যতা বহমান। আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে নেলাম। তৎক্ষনাৎ খেয়াল হলো পূর্ব বকের মতোন লম্বা পা ফেলে বেডের দিকে এগোলেন। উৎসুক, জরতাপূর্ণ দৃষ্টি আমার! সে এক টানে বেডশিট তুলে বেডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গোলাপের পাপড়িগুলো ফেলে দিলেন। পাশে থাকা যত ফুল আছে তা নিজ দায়িত্বে ছিঁড়তে শুরু করলেন। কর্মের ইতি টেনে পরিশেষে বললেন,

‘ নার্ভাস হওয়ার কোনো দরকার নেই। আমি তোমার অনুমতি ব্যাতীত তোমায় কখনো পূর্ণ রূপে চাইবো না দোল। ভরসা রাখো। ফুল সরিয়ে দিয়েছি ঘুমিয়ে পড়ো! ‘

মনের গুপ্তকোণে পূর্বের জন্য জমিয়ে রাখা বিশাল অনুভূতির রাজ্যে আজ তার জন্য সম্মানজনক অনুভূতিটা দ্বিগুণতর ভাবে যুক্ত হলো। পূর্ব যে সম্পূর্ণ আলাদা তা আগেই বোঝা শেষ। তার সব কিছু আলাদা। ভালোবাসার ধরনও আলাদা। ইউনিক!

তিনি হাতের বেডশিট পরিপাটি রূপে বেডে বিছিয়ে দিলেন ফের। হাতের ফুলগুলো রুমের কোণায় রেখে আমার পানে অবলোকন করে বললেন,

‘ দাঁড়িয়ে আছো কেনো এখনো?যাও ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমাও। অনেক রাত হয়েছে। মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যাবে তোমার। ‘

আমি সায় জানিয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রুম অন্ধকার। বেড খালি সম্পূর্ণ! পূর্ব কোথায় তা জানার জন্য পুরো রুমে অবলোকন করতে রুমে শূন্যতা বিরাজমান তা লক্ষ্য করলাম। এতো রাতে ইনি আবার কোথায় গেলো অদ্ভুত? ত্রস্ত পায়ে বেডে এসে ডানপাশে শুয়ে পড়ি। পূর্ব বাম পাশ ছাড়া কোনো ঘুমাতে পারেননা। সেই সম্পর্কে অবগত আমি! তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই কর্ম।

নেত্রযুগল বদ্ধতে পরিণত করতেই দরজার নব খোলার ‘ক্যাচক্যাচ ‘ শব্দ কর্ণপাত হলো। নেত্র উন্মুক্ত করিনি আর। কিয়ৎ বাদে উপলব্ধি হয় পূর্ব আমার পাশে এসে শুয়েছেন। খানিক বাদে ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,

‘ ঘুমিয়ে পড়েছো দোল?’

আমি নড়েচড়ে উঠলাম। ওষ্ঠাধর প্রসারিত করে নমনীয় গলায় বলে উঠি, ‘ উঁহু! কিছু বলবেন?’

‘ তোমার হাতটা.. হাতটা একটু এগিয়ে দাও তো। ‘

আমি চমকাই কিছুটা। নিরুত্তর থেকে হাত বাড়িয়ে দেই পাশ ফিরে। তিনি আমার হাত টেনে নিজের বক্ষঃস্থলের বাম পাশে আলত করে রাখলেন। শেষে নিজ হাত স্থাপন করলেন আমার হাতের ওপর৷ পূর্বের হৃদপিণ্ডের স্পন্দন করার ‘ধুকপুক’ শব্দে আমার হাত – পা অব্দি কেঁপে উঠলো। আমি কিছু বলার পূর্বেই তিনি থমথমে কন্ঠে বললেন,

‘ হাত সরানোর চেষ্টা করলে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে আসবো। বুঝেছো?সো, এভাবেই ঘুমাও। ‘

প্রথমত নম্র ব্যাবহার অতঃপর কঠোরতা। থতমত খেয়ে পূর্বের মুখোশ্রীর প্রতি অবলোকন করি। তিনি তার নেত্রযুগল তৎক্ষনাৎ প্রায় বন্ধ করে ফেলেছেন। আর কিছু বললাম না। আমাদের দুজনের মাঝে দূরত্ব ঘুচিয়ে পূর্ব আগেই আমার সন্নিকটে এসে পড়েছেন তা সবেমাত্র খেয়াল হলো। মেদহীন গালে লালাভ আভা আস্তেধীরে যে চার পাশটায় ছড়িয়ে পড়ছে তা বোধগম্য হলো সেকেন্ড খানেকের মাঝেই। অতঃপর প্রায় কয়েকক্ষণ! গাঢ় ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার ইতিপূর্বে হুট করেই কর্ণপাত হলো পূর্বের ঘোরলাগা কণ্ঠস্বর! তিনি বিনম্র কন্ঠে বললেন,

‘ স্নিগ্ধময়ীর মেয়েলি ঘ্রাণ যে আমায় পদে পদে উন্মাদ করে তুলে তা কি সে জানে? ‘

লাজুকলতা বুঝি এবার ঘাপটি মেরে ধরলো। লজ্জার ফলস্বরূপ কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে বলে মনে হলো। নিশ্চুপ থেকে ঘুমের ভান ধরে পড়ে থাকি। পূর্ব আমার হাতটা নিজ হাতের পাঁচ আঙুল দ্বারা আঁকড়ে নিয়ে নিজের ওষ্ঠাধর স্পর্শ করালেন। হিসহিসিয়ে বললেন,

‘ মৃত্যুর আগ অব্দি আমি তোমায় নিজের রাজ্য থেকে যেতে দিচ্ছিনা স্নিগ্ধময়ী! প্রাণনাশিনী আমার। আমৃত্যু অব্দি তুমি শুধু আমার। ‘
___

ভোরবেলা! ঠান্ডা আবহাওয়া। মিষ্টি বাতাস এসে সর্বাঙ্গে এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে। গভীর ঘুমে মগ্ন থাকলেও ভোরের স্নিগ্ধ রূপটি একবার চোখ খুলে চট করে দর্শন করে নিয়েছি। কিয়ৎক্ষণ বাদে, স্পষ্টত টের পেলাম কেও আমার ঘাড়ের কাছটায় ধাক্কাধাক্কি করছে। ঠিক ধাক্কা ধাক্কি না ঘাড়ের কাছের পরণের পোশাকের অংশ ধরে টানছে কেও। নেত্রযুগল কুঁচকে খুলতেই দৃশ্যমান হয় সম্মুখে পূর্বকে। সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি পরিহিত। চুল গড়িয়ে পানি পড়ছে কয়েক ফোঁটা। ওষ্ঠাধরের কোণে মৃদু সতেজ হাসি বহমান। শুভ্র পাঞ্জাবিতে তার সৌন্দর্যতা যেনো তর তর করে দ্বিগুণ হয়েছে। সবকিছু ঠেলে চটে গিয়ে বললাম,

‘ কি সমস্যা? ঘুমাতে দিচ্ছেন না কেনো। এখন তো মাত্র ভোরও হয়নি বলা চলে। এতো সকাল সকাল ডাকাডাকি কিসের?’

পূর্ব তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আমাতে ছুঁড়ে বললেন, ‘ জলদি উঠো! বাহিরে যাচ্ছি আমরা। ‘

‘ এতো সকালে? কেনো?’

‘ কারণ আছে নিশ্চয়ই। তাই! ফ্রেশ হতে যাও। ‘

‘ আমি যাবোনা। আমার ঘুম পাচ্ছে। ‘

‘ এসে ঘুমিও। এখন উঠে ফ্রেশ হও। ‘

সটান ‘ না ‘ বলতেই হটাৎ নিজেকে শূন্যে আবিষ্কার করি। আমার মাথা ঠেকে আছে পূর্বের বক্ষঃস্থলে। চমকে অজান্তেই হাতদুটো গিয়ে পড়লো তার কাঁধের ওপর। অস্ফুটস্বরে বলি, ‘ এমন করছেন কেনো?’

পূর্ব নিরুত্তর! ওয়াশরুমের সামনে নামিয়ে দিয়ে আমার হাতে তোয়ালে ছু্ড়ে দিলেন। তাড়া দিয়ে বলে উঠলেন,

‘ দ্রুত যাও। আমরা সূর্যদয় দেখতে যাচ্ছি। এটা দেখার জন্য তো লাফাতে। এখন এমন ত্যাড়ামো করছো। ‘

আমি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলি, ‘ আগে বললেই তো পারতেন, হুহ্! আসছি আমি। ‘

‘ ফার্স্ট! ‘

___

সূর্যোদয় দেখা হবে পাহাড়ের ওপর থেকে। ওখান থেকে চমৎকার দেখতে লাগে। কিন্তু সূর্য উঠতেই বেশি সময় নেই। পাহাড়ের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গেলে কমপক্ষে ১৫ মিনিট লাগবে। অথচ সূর্য উঠবে আর ৫/১০ মিনিট পর। আমি কাঁদো কাঁদো চাহনি পূর্বের ওপর ফেলে বলি,

‘ আরেকটু তাড়াতাড়ি ডাক দেয়া গেলো না? এখন পৌঁছাবো কি করে? ‘

পূর্ব আয়েশী ভঙ্গিতে পকেটে দু’হাত গুঁজে নিয়ে বললেন,

‘ তোমাকে আমি ৮ মিনিট টানা ডেকেছি। কোনো রেসপন্স করোনি। শেষে বাধ্য হয়ে তোমার ড্রেস ধরে টান দিতে হয়েছে। ঘুম থেকে ওঠার পর আরেক কাহিনি করলে! ‘

সিঁড়ি দিয়ে উঠে আমতা আমতা করে বলি, ‘ কাল অনেক লেটে ঘুমিয়েছি। তাই হয়তো ডাক শুনিনি।আচ্ছা, এখন জলদি চলুন। ‘

খুব দ্রুত আসার কারণে অনেকটা উঠে পড়েছি বলা যায় পাহাড়ের ওপর। আর কিছুটাই পথ বাকি। উত্তেজনায় লাফ দিয়ে দুই সিঁড়ি উঠতে নিলেই হোঁচট খেয়ে পিছন পড়তে নেই। নেত্র যুগল ভীতির কারণে বন্ধ করতেই অনুভব হয় কেও তার দু’হাত দিয়ে আমায় আঁকড়ে ধরে আছে। এটা যে পূর্ব তা সেই কাঙ্খিত হাতে থাকা কালো চকচকে ঘড়িটা দেখেই বুঝে যাই। আমায় সোজা দাঁড় করিয়ে তিনি পেছন থেকে সামনে আসলেন। মুখোশ্রী কঠিনাকার! থমথমে! দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

‘ ষ্টুপিড! ডাফারের মতো কাজকর্ম করে বসো কেনো বারংবার? সিঁড়িতে দাঁড়িয়েও লাফালাফি! কনমসেন্স নেই?’

বলতে বলতে হাঁটু গেড়ে বসলেন তিনি। পা*য়ের এক কোণায় ইঁটের গুঁতো লেগে হালকা লাল হয়ে আছে। সেদিকটাতে নেত্র এলিয়ে পর্যবেক্ষণ করে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকান। আমি কৃত্রিম হেঁসে কিছু বলবো তৎক্ষনাৎ সে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হুট করে কোলে তুলে শূন্যতায় ভাসিয়ে নেন আমায়। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে বলি,

‘ আপনি পাগল?নামান প্লিজ! মানুষ দেখলে কি বলবে?’

তিনি রাশভারী কন্ঠে জবাব দিলেন, ‘ কেও নেই এখানে ষ্টুপিড! ‘

অতঃপর আকাঙ্খিত স্থানে এসে আমায় নিচে নামিয়ে দেন। কয়েক জোড়া উৎসুক নেত্র আমাদের পানে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সেদিক হতে দৃষ্টি ফিরিয়ে পূর্ব’দিকে তাকাই। আজকের দিনের সূর্য ধীরে ধীরে হলদেটে রোদ মেলে পৃথিবী পৃষ্ঠে আসছে। অপূর্ব দৃশ্য হিসেবে নিজ সৃতিচারণের খাতায় এই দৃশ্যটা আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে দিলাম।

হুট করে কানের পিঠে শীতল স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলাম। ঠান্ডায় কেঁপে পিছনে ফিরতে নিলেই পূর্বের গলা। রাশভারী কন্ঠে বললেন,

‘ নড়াচড়া করো না। কাজ করতে দাও। ‘

‘ কি করতে চাচ্ছেন?’

উত্তর পেলাম না। তার হাতে শুভ্র ফুল। ফুলটার নাম জানা নেই তবে বেশ সুন্দর এবং অনেকটা পদ্মফুলের মতো। কানের পিঠে ফুলটা গুঁজে দিয়ে বললেন,

‘নাউ পার্ফেক্ট! ‘

আমি অন্তরালে হাসি। ফুলে আলত ছুঁয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠি, ‘ ফুলটা কোথায় পেলেন?’

‘ উঠে আসার সময়। পাশেই গাছ ছিলো। ‘

আমি চুপ রইলাম। কিছু বলার জন্য শব্দগুচ্ছ খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম নিভৃতে। শেষে মাথা তুলে ভীড় এর মধ্যে নেত্রযুগল এলিয়ে দিতেই ভীষণ চমকে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম! অস্ফুটস্বরে কিছু বলার চেষ্টা ব্যার্থ হলো। নেত্রযুগল থেকে অশ্রুকণা পড়তেই পূর্ব ব্যাকুল হয়ে বললেন,

‘ কাঁদছো কেনো?কি হয়েছে? দোল! লুক এট মি!হোয়াট হ্যাপেন্ড?’

আমি নিস্তব্ধ। দৃষ্টিপাত সামনে বহমান। অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ব্যাক্তিকে দেখে মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। জ্ঞানশূন্য হয়ে আচানক পূর্বের বক্ষঃস্থলে পড়ে যাই। জ্ঞান হারানোর আগ দিয়ে দৃশ্যমান হলো পূর্বের ভীতি,বিচলিত’তায় আচ্ছাদিত মুখোশ্রী! শ্বাস রুখে বারংবার একাধারে ডেকে বলছেন চোখ খুলে রাখতে। কিন্তু আমি অনুভূতি শূন্য। নেত্রযুগল অনায়াসে সেই ব্যাক্তিকে শেষবার পরখ করে বন্ধ হয়ে গেলো!

চলবে…

[ রি-চেইক করা হয়নি।😐]