মেঘের উল্টোপিঠ পর্ব-২২

0
563

#মেঘের_উল্টোপিঠ
#সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা
#পর্ব__২২

গ্রীষ্মের প্রথমভাগ আজ হতে শুরু। ঝড়ের দাপটে আশপাশে দমকা হাওয়ার তান্ডবলীলা চলছে। হসপিটালের শুভ্র রঙের পর্দা গুলো অবিন্যস্ত ভাবে উড়ছে অনিলের প্রভাবে।শীতল অনিলে কেমন শীত শীত করছে। আমার পূর্ণবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পূর্ব নিজের স্থান থেকে উঠে গিয়ে কেবিনের থাই গ্লাস গুলো লাগিয়ে দেন। শেষে নিজ স্থানে ফিরে এসে বসলেন। আমার এক হাত টেনে ফের টেনে নিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় মুঠোবন্দি করে নিলো। তার দৃষ্টি শীতল তবে তার বর্তমান মুখোশ্রী দশা এমন যেনো ঝড় বাহিরে না পূর্বের ওপর দিয়ে বইয়ে গিয়েছে।

পূর্ব আমার মাথায় আলত হাত রেখে কোমল কন্ঠে বললেন,

‘ ঠিক আছো? কোনো সমস্যা হচ্ছে তোমার? ‘

আমি এপাশ – ওপাশ মাথা নাড়িয়ে ‘ না ‘ বলি। কেবিনের কোণায় বসে থাকা সায়ান ভাইয়ার পানে আমার দৃষ্টিপাত গিয়ে স্থির হয়। ভাইয়ার বিষন্ন চাহনি। আমি তাকাতেই সে উঠে এসে আমার পাশে দাঁড়ায়। মাথায় আদুরে ছোঁয়া দিয়ে নম্র কন্ঠে বলে,

‘ কি হয়েছে? কিছু বলবি? খিদে পায়নি তোর?খাবার আনি?’

আমি ওষ্ঠাধর প্রসারিত করে ধরা গলায় বলে উঠি,

‘ ভাইয়া! আমি সায়াশ ভাইয়াকে দেখেছি। সায়াশ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো জানো?সেই আগেরকার প্রানবন্ত হাসি! আমায় হাত নাড়িয়ে ইশারা করে ডাকছিলো। আমি যেতে পারিনি ভাইয়া। সেন্সলেস হয়ে গিয়েছি। আমায় তুমি আবার নিয়ে যাওনা ওখানে। আমি ভাইয়ার সাথে দেখা করবো। বড় ভাইয়া বেঁচে আছে। বিশ্বাস করো তুমি! ‘

ভাইয়া নাক টানলেন। নেত্র কার্নিশে জমে থাকা অশ্রুকণা নিজ হাত দ্বারা আলত হাতে মুছলেন। শেষে শ্লেষের গলায় বললেন,

‘ এটা তোর হ্যালোসিনেশন দোল। বোঝার ট্রাই কর। তুই প্রতেকবার পাহাড়ে উঠলে ভাইয়াকে দেখিস কল্পনায় কারন তোর কল্পনায় তখন ভাই থাকে। ডাক্তার কি বলেছিলো মনে নেই আগের বার? পাহাড় থেকে সায়াশ ভাই পড়ে গিয়েই তো আমাদের থেকে দূরে চলে গিয়েছিলো। তার ওপর তোর চোখের সামনে থেকে তাই তুই এখনো ভুলতে পারিস নি ঘটনাটা। আমারই ভুল! পূর্বকে বলে রাখা উচিত ছিলো। আর হবেনা বোন। তোর এই অধম ভাইটাকে মাফ করে দে! আমি তোর প্রোপার কেয়ার করতে পারিনি। ‘

আমি নিস্তব্ধ হয়ে রইলাম! ভাইয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে নিশ্চুপতা ধরে রাখলাম। আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম তখন আমি এবং আমার বড় ভাই! সায়ান ভাইয়ার জমজ বড় জন যিনি, সেই ভাইয়া’সহ কক্সবাজার গিয়েছিলাম পরিক্ষা শেষে। সায়াশ ভাইয়া তখন অর্নাস ফার্স্ট ইয়ারে পড়তো। সেদিন খুব ভোরে আমার জেদের জোরে আমি, ভাই পাহাড়ে উঠি! পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখার ছলে চোখ যায় আমার পাহাড়ি গাছের ফুলের দিকে। অনাবশ্যক জেদ ধরে বসি ফুলগুলো চাই আমার। গাছ একদম কিনারে হলেও ভাই ফুল আনতে যায়। কিন্তু খানিক এগোতেই আমি ভীতি নিয়ে বারণ করেছিলাম ভাইকে। তিনি শুনেননি! তার মতবাদ ছিলো, ‘ তার বোনের করা আবদার সে অপূর্ণ রাখবেনা৷ ‘

অপূর্ণ রাখেননি! ফুলগুলো কোনোরকম নিয়ে ফিরে আসার পথে পিচ্ছিলো জায়গায় স্লিপ করে তিনি পড়ে যান নিচে। আমার দম ফাটানো চিৎকারে সেদিন আকাশ – বাতাসে ছেয়ে গিয়েছিলো। পাহাড়ে যিনি আমাদের উঠতে সাহায্য করছিলেন তিনি ঘাবড়ে নিচে ঝুঁকে দেখলেন। সেই লোকটাও বারংবার নিষেধ করছিলো ওখানে যেতে। ভাই শুনেনি! আমার এক উদ্ভট জেদের জোরে সে আজ আর বেঁচে নেই। পাহাড়ের নিচটায় পানি ছিলো। ভীষণ গভীর! লাশ আজ অব্দি পাইনি আমরা। খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থ হয়েছে সকলে। ভাইয়ের মৃত্যুর কারণটা আমি আমার ওপরই আরোপ করে নিয়েছি। আমিই দায়ী!

নেত্র দ্বারা বর্ষিত হয় ক্ষুদ্র অশ্রকণা। অশ্রুসিক্ত নয়নে সায়ান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ সায়াশ ভাইয়ার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী। তোমরা কেনো আমায় জেলে দিচ্ছো না। জ্বলজ্যান্ত একটা মানুষকে হত্যা করেছি আমি। ‘

ডুকরে কেঁদে উঠতেই ভাইয়া ধমকে বললেন,

‘ একদম নিজেকে দোষারোপ করবিনা দোল। মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো তবে। এখানে তোর বিন্দুমাত্র দোষ নেই। ভাইয়ার মৃত্যু এভাবেই লিখা ছিলো। তাই এভাবে হয়েছে। পূর্ব বোঝা ওকে! অযথা কান্নাকাটি করে লাভ নেই। ‘

ভাইয়া তড়িৎ বেগে কেবিন থেকে প্রস্থান করলেন। নিঃশব্দে ক্রন্দনরত কালীন আমার গালে কারো ধীর স্পর্শ পড়ে। স্পর্শকারী ব্যাক্তি যে পূর্ব তা বুঝতে কিঞ্চিৎ সময় লাগেনি। তিনি দুই হাতে গালে বহমান অশ্রুকণা সুদক্ষ হাতে মুছে ফেললেন। অশ্রু কণা গুলো যেনো তার শত্রু সমেত। হাত দ্বারা মুছে’ও ক্ষ্যান্ত হলেন না তিনি। পকেট থেকে রুমাল বের করে গালে স্পর্শ করিয়ে বললেন,

‘ অযথা কাঁদছো এখন। সম্পূর্ণ অযথাই! সায়াশ তোমার কান্না দেখছে কিন্তু। কষ্ট পাচ্ছে প্রচুর। কান্না থামাও দোল। সায়াশের জন্য দোয়া করো যেনো ও জান্নাত লাভ করে। এভাবে কেঁদে লাভ আছে?’

তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বেডে বসলেন। আমার হাত দুটো কোমল ভাবে ধরে কাছে টেনে নিজের বক্ষঃস্থলের সাথে চেপে ধরে মৃদু কন্ঠে বললেন,

‘ স্টপ ক্রায়িং! আমার কষ্ট হচ্ছে বুঝোনা? সর্বদা তুমি আমাকে কষ্ট দাও কেনো বলোতো? হুঁশশশ! আর কাঁদেনা। ‘

তার তুমুল আবেদনের নিকট আমার জোরালো কান্না খানিক মিইয়ে আসে। ক্রন্দনের খাদ নেমে আসার পরও হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়নি। নাক টেনে বললাম,

‘ আমার চোখ। আমি পানি ঝড়াবো! আমি কাঁদবো। এখানে আপনার কষ্ট পাওয়ার কি হলো?’

‘ আমার কষ্ট পাওয়ার কি হলো? এটা যদি বুঝতে তাহলে আমি নিশ্চয়ই তোমাকে ডাফার বলতাম না? ‘

ছিটকে দূরে সরে মুখোশ্রী পাংশুটে করে নিয়ে বলে উঠি, ‘ আপনি বদ! অত্যান্ত পরিমাণে বাজে লোক।’

পূর্ব হাসলেন। নিঃশব্দে। প্রানবন্ত হাসি। হুট করে আমার মুখোশ্রীর প্রতি কিয়ৎ পরিমাণ ঝুঁকে নিয়ে নেত্রযুগলের উল্টোপিঠে নিজের অধরের স্পর্শ দিলেন আলত রূপে। শেষে উঠে দাঁড়িয়ে কেবিন হতে বের হতে হতে বললেন,

‘ তুমি আমায় বদ বলো আর বাজে লোকই বা বলো আমার কাছে মিষ্টি লাগে শুনতে। আরো কিছু বলার থাকলে বলতে পারো। আই ডোন্ট মাইন্ড! ‘

পূর্ব চলে যেতেই হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ অরিনের। অরিন দম নিয়ে বলল,

‘ দেখ দোল! আর যাই কর এমন হুটহাট সেন্সলেস টেন্সলেস হইস না। তুই জানস?তুই যখন সেন্সলেস ছিলি তখন পূর্ব ভাইয়ের পাগলপ্রায় অবস্থা ছিলো। হসপিটালে তোরে নিয়া আইসা পুরা হসপিটাল মাথায় তুলে ফেলছে। বাপড়ে! কি একটা অবস্থা। আমি তো ভাবতেছিলাম পূর্ব ভাই কখন জানি সেন্সলেস হয়ে ধপাস করে পড়ে।’

অরিনের কথা শ্রবণ করা মাত্র মৃদু হাসি। আমার জানা আছে তার কিরূপ প্রতিক্রিয়া ছিলো আমার এই অবস্থায়। জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পূর্বেই তা বিন্দু খানেক দর্শন হয়েছে।
___

ফোন স্ক্রিনে ভেসে থাকা তথ্যগুলো দেখে কপালের চামড়া কুঁচকে এলো। তীক্ষ্ণতর দৃষ্টি প্রখরে রূপ নিলো। অন্তরালে চেপে রাখা ক্ষোভ দ্বিগুণে পরিণত হলো। শোভনের কু-কান্ড সম্পর্কে আগ হতে আমি কিয়ৎ পরিমাণ অবগত ছিলাম। আজ যা সন্দেহ আকারে ছিলো তা স্পষ্টত হয়ে সত্যিতে প্রমাণিত হলো। আমার অচঞ্চল নেত্রযুগল হটাৎই চঞ্চলতায় পরিণত হয়। সেদিন শোভন পূর্বকে যে যেই খারাপ কথা বলে গালমন্দ করেছিলো তা নেত্র সম্মুখে জ্বলজ্বল করছে। নিজের গালে নিজেরই আঘাত করার সুপ্ত বাসনা জন্ম নিলো। নেত্র যুগলের কার্নিশে জমে থাকা ক্ষুদ্র অশ্রু গাল বেয়ে পড়লো। নিদারুণ কষ্ট হচ্ছে! কেনো সেদিন পূর্বকে আমি শোভনের সেই ধারালো কুরুচিপূর্ণ কথা শ্রবণ করার আগ মাত্র কোনো প্রতিবাদ করতে পারলাম না?কেনো?

সেদিনকার ঘটনা শোভন ইচ্ছাকৃত ভাবে হাজির করেছে। নয়তো গ্রামের সেই ২০ কয়েক জন আর যাইহোক স্বামী স্ত্রীর এক রুমে থাকা নিয়ে কোনো রূপ মতবিরোধ করবে না। নানু বাড়িতে থাকা আমার রুমটি ছিলো বদ্ধাকার। কিন্তু সেদিন! সেদিন আমার রুমটায় রঙের কাজ চলছে বলে অন্য এক খোলামেলা রুমে পাঠিয়ে দেয় আমাকে। রুমটায় বেশ কয়েক জানালা ছিলো। পর্দা ছাড়া। ৩ তলার উপরে হওয়াতে আমি সেদিন পর্দা নিয়ে কোনো রকম মাথা ঘামায়নি। পূর্ব এবং বাকিদের ইচ্ছাকৃত ভাবে মদ খাওয়ানোর কাজটা হাসিল হয়েছে শোভনের আদেশে। অতঃপর পূর্ব যখন আমার রুমে আসে গোপনে লোক দিয়ে ভিডিও করা। গ্রামবাসীর মধ্যে মিথ্যা গুজব ছড়ানো আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি। সকাল – সকাল গ্রামের অর্ধেকাংশ মানুষকে এই গুজব দিয়ে ডেকে আনা হয়েছে শুধুমাত্র আমরা স্বামী, স্ত্রী না। এতোটা দূর যেতে পারতো না শোভন। ওর অতো সাহস নেই। এর পিছনে যে নানুর হাত আছে তা আমার ভীষণ বড় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণ। শোভনের সাথে বিয়েতে সটান ‘ না ‘ বলে দেয়ায়, সিহা মামী, নানু এবং শোভন মিলে এই পরিকল্পনা তৈরি করেছে।

গ্রামের ব্যাক্তিবর্গ’রা হয় সাধাসিধে। তারা কোনো প্যাচ বুঝে না। এইযে, তারা যখন কাঙ্খিত স্থানে উপস্থিত হলো তখনই জেনে গেলো আমি, পূর্ব হ্যাজবেন্ড – ওয়াইফ! তারা তখনই চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে শোভন এবং তার চেলা -পেলার কড়া দৃষ্টি উপেক্ষা করে ওখানেই থেমে যায় ভীতিতে। শোভনের এক অদৃশ্য দাপট আছে গ্রামে। ওর দাপটে যেই মানুষগুলো কুপোকাত তাদেরই ধরে ধরে ডেকে আনা হয়েছে। নয়তো গ্রামে থাকা শিক্ষিত কোনো ব্যাক্তিবর্গকে আনলে তারা নিশ্চিত এই কান্ডে চুপ থাকতেন না। মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলতেন শোভনকে। কিন্তু শোভন বুদ্ধিমত্তার সাথে গ্রামে থাকা মূর্খ, সাধাসিধে মানুষ দের ধরে এনেছে দাপট এবং হুমকি দিয়ে। বাকিরা যদিও পরবর্তীতে এসে বিচার বসিয়েছিলো এমন উদ্ভট কর্ম সম্পাদনের জন্য। কিন্তু ফলাফল শূন্য এসেছে। নানা চেয়ারম্যান পদে থাকায় সেদিন শোভন শাস্তির হাত থেকে সুরসুর করে সরে গিয়েছিলো।

দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলি! রাগে দেহ কাঁপছে রীতিমতো। আমার কাছে এই তথ্য সমূহ প্রদান করেছে শোভনের এক চ্যালা। টাকা দিয়ে তাকে হাতের মুঠোয় এনে অতিকষ্টে সব তথ্য জোগাড় করেছি। এবার শুধু সবকিছু প্রকাশিত করার পালা। ফোনের কর্কশ ধ্বনি কর্ণপাত হতে সেদিকে দৃষ্টিপাত ফেলি। শোভনের ফোন। বিগত কয়েক দিন যাবৎ ফোন দিচ্ছে। ধরিনি! কিন্তু আজ ধরার তুমুল ইচ্ছা জাগ্রত হলো। ফোন রিসিভ করে কানের বহির্ভাগে ধরতেই ওপাশ হতে গমগম সুরে শোভন বলল,

‘ ফাইনালি ডার্লিং! ফোনটা ধরলে তবে? এতো কিসের ব্যাস্ততা তোমার? কবে থেকে ফোন দিচ্ছি। নাকি পূর্ব! তোমার সো কল্ড কু** স্বামী আমার ফোন রিসিভ করতে দেয়নি?’

আমি নেত্রযুগল বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে আগত রাগ দমন করি। এখন আমার অবগত কিছু কোনো মতে প্রকাশ করা সঠিক হবেনা। তবুও শেষে রুষ্ট কন্ঠে বলে উঠি,

‘ আমার স্বামীকে তুই এ যাবৎ যতগুলো বাজে কথা বলে তার সম্মানে হানি এনেছিস! তার এক একটা জবাব আমি কড়ায় – গন্ডায় মিটিয়ে দিবো।বি প্রিপ্রেয়ার’ড! ‘

অপর পক্ষ হতে কোনো জবাব আসার পূর্বেই ফোন ছুঁড়ে ফেলি ফ্লোরে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন দুই ভাগ হয়ে দু’পাশে ছড়িয়ে পড়ে। রাগের মাত্রা কিয়ৎ কমাতে বেলকনিতে চলে আসি। হসপিটাল থেকে রিলিজ কালই দিয়েছে। আসার পর ঘুমে কুপোকাত ছিলাম। পূর্বকে দেখা হয়নি। ঘুম থেকে উঠেও না! এই মানব কোথায় আসলে?

বেলকনিতে স্থির হয়ে দাঁড়ানোর কিয়ৎক্ষন পর উপলব্ধি হয় পিছন হতে এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত আমায় আলত করে জরীয়ে ধরছে। হাত এসে ঠেকে তার রেলিঙ। আমি আলত সুরে বলি,

‘ কোথায় ছিলেন সকাল থেকে?’

পূর্ব আমার ঘাড়ে নিজের থুতনি স্থাপন করলেন আলত করে। তার এবং আমার মধ্যকার সম্পর্ক এখন আস্তেধীরে অনেকটাই স্বাভাবিক হচ্ছে। বলা চলে পূর্বের দিক দিয়ে! আমি এখনো থম। পূর্ব ভরাট কন্ঠে বললেন,

‘ ছিলাম আশপাশেই। কেনো মিস করছিলে আমায়?’

তার বলা কথাটি কাঁটায় কাঁটায় সত্য হলেও আমি তা অন্যত্রে সরিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বললাম,

‘ উঁহু! একটুও না। আপনি কে যে আপনাকে মিস করবো? ‘

পূর্ব আদুরে কন্ঠে বললেন, ‘ তোমার একমাত্র স্বামী আমি। মিস করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ‘

‘ আপনি আমার স্বামী। এটা আমার কোনো ক্ষেত্রে মনে হয়না। সর্বদা আপনার গম্ভীর চেহারা দেখলে টিচার টিচারই ফিলিং’সই আসে। স্বামী হিসেবে মানবো কিভাবে? স্বামী হিসেবে কি কাজ করেছেন
যে আপনাকে হ্যাজবেন্ড মানবো?হুহ্?’

কথা সমাপ্ত হতেই চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নেই। অধর কামড়ে নিভৃতে বলি, ‘ এটা কি বললাম? এই কথাটা বলা আদও ঠিক হলো?’

পূর্ব হুট করে আমার ঘাড় চেপে আমায় তার মুখোশ্রী সম্মুখে টেনে আনলেন। চিবুক স্পর্শ করে থাকাকালীন হটাৎ তিনি আমার গাল ধরে উঁচু করে তার ওষ্ঠাধর দ্বারা আমার অধর জোড়া কোমল ভাবে আঁকড়ে ধরলেন। আমি হাত দিয়ে তার বক্ষঃস্থলে যতোটা তেজে ধাক্কা দিচ্ছি, তিনি তার অধরের ছোঁয়া ততটাই গভীর করছেন। শেষে নেত্রযুগল অনায়াসে বন্ধ করে নেই। দমকা হাওয়া দাপটের সহিত আমাদের দু’জনের সর্বাঙ্গ ছুঁয়ে যায়।

চলবে..