মেঘে ঢাকা৷ তারা পর্ব-২১ এবং শেষ পর্ব

0
672

#মেঘে_ঢাকা_তারা
#অন্তিম_পর্ব
#আয়াত_আফরা

নীলাদ্রি হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে ছিল বিছানায়। অফিস যেতেও ইচ্ছা করছেনা আর। বাড়িতে যেনো নেমেছে অদ্ভুত শীতলতা।সব কেমন যেন নিশ্চুপ।এ বাড়ি তো এমনি ছিল।শুধু মধ্যে একবার গ্রীষ্ম এসেছিল।এখন আবার শীত নেমেছে। হঠাৎ ফোনের শব্দে চমকে উঠলো নীলাদ্রি।অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাত বাড়িয়ে দিল ফোনের দিকে।অপরিচিত নাম্বার। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে পরিচিত গলা শুনতে পেলো নীলাদ্রি।

“হ্যালো মিস্টার নীলাদ্রি।”

“ইভান!তুই আমার কাছে কেনো ফোন করেছিস?”

“ওহ রিলাক্স।আমি তো তোকে একটা খবর দেয়ার জন্য ফোন করেছি।তোর প্রাণ প্রিয় প্রেয়সী তন্দ্রা এখন আমার কাছে আছে।যদি ওকে বাঁচাতে চাস তাহলে পনেরো মিনিটের মধ্যে মল রোডের পেছনের বাংলোবাড়িতে চলে আয়।”

বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠলো নীলাদ্রি।
“এই তুই আমার তন্দ্রার কোনো ক্ষতি করবিনা।আমি আসছি।”

ফোন কেটে কোনো রকমে শার্ট গায়ে পরে গাড়ির দিকে ছুটে গেলো নীলাদ্রি।সাথে নিল তার রিভলবারটা।আজ ওই ইভানের সাথে সব হিসাব চুকাতে হবে। ফোন কেটে দিয়ে হাসতে লাগলো ইভান।

“এসো এসো।মরণবীণের ডাকে সাপ এমনিভাবে ছুটে আসে। ওয়েটিং ফর ইউ নীলাদ্রি।”

***********

বিছানার উপর অকাতরে ঘুমিয়ে আছে তন্দ্রা।ওকে হাই ডোজ ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়েছে।সেটার অবশ্য বেশ কয়েক ঘন্টা কেটে গেছে।তন্দ্রাকে জোর করে তুলে আনেনি ইভান।এর অবশ্য প্রয়োজনও ছিল না।চকোলেটের মধ্যে ঘুমের ওষুধের গুঁড়ো মিশিয়ে দিয়েছিল শুধু।তাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে।বিছানার পাশে রকিং চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে ইভান।মাঝে মাঝে চোরা চোখে দেখে নিচ্ছে তন্দ্রাকে।না, এই মেয়ের সাথে তার কোনো শত্রুতা নেই।তার শত্রুতা কেবল নীলাদ্রি চৌধুরীর সাথে।

“ইভান,এই ইভান।বেরিয়ে আয় বলছি।”

নিচ থেকে নীলাদ্রির উত্তেজিত গলা শুনতে পেলো ইভান।সে চেয়ারে থেকে উঠে গিয়ে দাঁড়ালো সিড়ির মাথায়।

“এখানে আমি।ইউ আর ওয়েলকাম মিস্টার নীলাদ্রি চৌধুরী।”

ইভানকে দেখে শান্ত হয়ে গেলো নীলাদ্রি।চোখগুলো অদ্ভুতভাবে শীতল হয়ে গেলো।সেখানে ঝিলিক দিচ্ছে একটা ব্যাঙ্গের হাসি। হঠাৎ তার এই পরিবর্তনের কোনো কারণ খুঁজে পেলনা ইভান।দুহাত পেন্টের পকেটে রেখে নীলাদ্রি সরাসরি তাকালো ইভানের দিকে।ইভানের মনে হলো নীলাদ্রি তাকে চ্যালেঞ্জ করছে। নীলাদ্রি শান্ত অথচ গম্ভীর সরে বললো,

“মিস্টার ইভান সিংহের সম্রাজ্ঞীকে ছিনিয়ে এনে তুমি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছো কিন্তু ওকে একা ভেবে তুমি বোকামি করেছো ।”

“নীলাদ্রি চৌধুরী,তোমার সিংহী এতই বোকা যে ও নিজের সিংহকেও চিনতে পারেন।ওকে ছিনিয়ে আনা খুব একটা সাহসিকতার পরিচয় নয় আমার কাছে।”

“ওর চেয়েও বেশি বোকা হলে তুমি।আমার রাজত্বের মধ্যে গিয়ে আমাকেই চ্যালেঞ্জ করেছ?”

“চ্যালেঞ্জ শুধু করিনি। চ্যালেঞ্জ জিতেও গেছি।তোমার রানী এখন আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।”

“প্রেম? প্রেম নয়। অ্যাট্রাকশন।আমার রানীর মনে জাস্ট একটু সস্তা ফিলিংস হয়েছিল তোমার জন্য।ওই মোহটা কেটে গেলে ও আমার কাছেই ফিরে আসবে।”

“সেটা আমি কখনো হতে দেবো না।তুই আমার থেকে আমার প্রেমকে কেড়ে নিয়েছিস।আমি কখনোই তোর ভালোবাসাকে তোর হতে দেবো না।”

“নাউ ইউ কাম টু দা পয়েন্ট।বলে ফেল কেনো আমার আর তন্দ্রার মধ্যে থার্ড পারসন হয়ে এন্ট্রি নিয়েছিস তুই?”

এবার ইভান এসে দাড়ালো নীলাদ্রির সামনে।

“ইউ আর এ মার্ডারার মিস্টার নীলাদ্রি আহনাফ চৌধুরী।এ কোল্ড ব্লাডেড মার্ডারার।”

“কোয়াইট ইন্টারেস্টিং!তো কাকে খুন করেছি আমি?আমার তো কিছু মনে পড়ছেনা।”

“তুই ,তুই আমার পিয়াকে মেরেছিস।” উত্তেজিত হয়ে নীলাদ্রির কলার ধরলো ইভান।

“পিয়া!লেট মি রিমেমবার।তুই মে বি ধিরাজনগরের হোটেল মার্ডার কেসটার ব্যাপারে বলছিস তাইনা?”

“হ্যাঁ হ্যাঁ! তুই আমার পিয়াকে গুলি করে মেরে ফেলেছিস।”

“এক মিনিট এক মিনিট।তুই জানিস আমি কে?আমি নীলাদ্রি অহনাফ চৌধুরী।এই দেশের সেরা বিজনেস ম্যান।যেহেতু আমার দিকে আঙুল তুলছিস তাহলে নিশ্চই তোর কাছে প্রমাণ আছে।”

ইভান রাগী চোখে তাকিয়ে থাকে নীলাদ্রির দিকে।তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই।সে কেবল নীলাদ্রিকে ওই রুম থেকে বেরুতে দেখেছিল।প্রমাণ থাকলে সেটা ও আগেই থানায় জমা দিত।প্রতিশোধের নেশায় এত পরিকল্পনা করতো না। নীলাদ্রি মুচকি হাসলো,

“নেই প্রমাণ! থাকবে কি করে?ওখানে কেবল তিনজন ছিল।পিয়া,আমি আর হাওয়া।পিয়া তো মরে গেছে,আর আমিতো অপরাধী।তো সাক্ষী রইলো কেবল হাওয়া।তুই হাওয়াতে কান পাত না।দেখ যদি আমার নাম বলে।”
হেসে উঠলো নীলাদ্রি।

“চুপ কর তোকে আমি শেষ করে দেবো শয়তান।”

ইভান রিভলবার তাক করলো নীলাদ্রির দিকে।নীলাদ্রি হাতের এক আঘাতে সেটা ফেলে দিল ঘরের কোনায়।

“ইভান খান! রিভলবার শক্ত হাতে ধরতে হয়।”

ক্রোধে অন্ধ হয়ে আবার ইভান ঘুষি মেরে বসলো নীলাদ্রি কে।নীলাদ্রি চোখ দপ করে জ্বলে উঠলো।সে পরিবর্তে আঘাত করলো ইভানকে। ঘুষির পর ঘুষি মেরে ইভানকে ফেলে দিল মেঝেতে।ইভান আবার উঠে দাড়ালো।নীলাদ্রি বললো,

“মিস্টার ইভান,তুই বক্সিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারিস কিন্তু নাউ ইউ আর সো ইমোশনাল।তুই ভাবছিস মন দিয়ে আর আমি ভাবছি বুদ্ধি দিয়ে।তাই তুই আমার সাথে এখন জিততে পারবি না।”

ইভান তার মুখে লেগে থাকা র’ক্ত মুছে নিলো।
“বৃথা র’ক্তপাতে কোনো ফল নেই নীলাদ্রি।”

ইভান কিছু কাগজ ছুড়ে দিল নীলাদ্রির দিকে।
“সাইন কর।আই ওয়ান্ট ইউর অল প্রপার্টি অ্যান্ড বিজনেস।”

নীলাদ্রি হাসলো।
“ভিক্ষা চাইছিস?”

“নট এট অল।অর্ডার করছি।”

“ইন্টারেস্টিং!”

নীলাদ্রি তার বা হাতের পাঞ্জা তুলে ধরলো ইভানের চোখের সামনে।
“বাঘ শক্তিশালী হয়।কিন্তু তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয় সিংহ।সিংহের মৌনতাকে তার দুর্বলতা ভাবিস না।”

“তোর এইসব ফাঁকা বুলি বন্ধ কর।পেপারে সাইন কর নয়তো…”

“আমি সাইন করবোনা।”

“ওকে।তাহলে তোর তন্দ্রাকে আমি শেষ করে দেবো।” বলে তন্দ্রার ঘরের দিকে পা বাড়ালো ইভান।

নীলাদ্রি সাথে সাথেই তার রিভলবারটা বের করে তাক করলো ইভানের দিকে।

“ডোন্ট মুভ।স্ট্যান্ড রাইট দেয়ার।একটা পা ফেললে আর পরবর্তী শব্দ বলার সুযোগ পাবিনা তুই।”

“ড্রপ দা গান মিস্টার নীলাদ্রি চৌধুরী!”
একটা মেয়েলি কণ্ঠ শুনে নীলাদ্রি ইভান দুজনেই চমকে দেখলো তন্দ্রা এসে দাড়িয়েছে সেই কক্ষে।তার হাতে ধরা আছে ইভানের সেই রিভলবারটা।সেটা দুহাতে আঁকড়ে সে তাক করে আছে সোজা নীলাদ্রির দিকে।

“তন্দ্রা!”

নিজের হাত থেকে রিভলবারটা তন্দ্রার পায়ের কাছে ফেলে দিল নীলাদ্রি।

“মাই লায়নেস!তোমার আমাকে প্রোটেক্ট করার কথা ছিল আর তুমি কিনা ওকে প্রোটেক্ট করছো!হাউ ফানি!”

ইভান তন্দ্রার কাছে গিয়ে বলল,
“তন্দ্রা এই নীলাদ্রি তোমাকে তুলে এনেছে।আমি তোমাকে বাঁচানোর জন্য এসেছিলাম।ও আমাদের মারতে যাচ্ছিল। আমরা দুজন ওর নোংরা সত্যিটা জেনে গেছি।ও যে একটা খুনি।ওকে মেরে ফেলো।নয়তো ও আমাদের মেরে ফেলবে।শ্যুট হিম।শ্যুট!”

নীলাদ্রি তন্দ্রাকে বোঝানোর চেষ্টা করলো,
“কাম ডাউন তন্দ্রা,হি ইজ এ চিটার, ডোন্ট বেলিভ হিম।”

“নো তন্দ্রা,হি ইজ এ চিটার।ও তোমাকেও মেরে ফেলতো।দেখো ও আমাকে মেরে কি অবস্থা করেছে।” ইভান তার যেখানে যেখানে নীলাদ্রি ঘুষি মেরেছিল সেগুলো দেখতে থাকে তন্দ্রাকে। “তুমি উঠে না এলে ও এতক্ষণে আমাকে শ্যুট করে দিত। ফায়ার তন্দ্রা,ফায়ার!”

হ্যাঁ তাইতো, ইভানই তো আহত হয়েছে।মিথ্যে বলছে নীলাদ্রি। নীলাদ্রির কোনো কথা আর তন্দ্রার কানে প্রবেশ করেনা।

“তন্দ্রা তুমি ভুল করছো,আমি কিছু করিনি।এসব …..আআআআআ!”

নীলাদ্রির কথা শেষ হওয়ার আগেই তন্দ্রা শ্যুট করে দিলো তার বুকে। নীলাদ্রি প্রচন্ড যন্ত্রণায় মাটিতে পড়ে যায়।বুকের ক্ষতস্থানটা চেপে ধরে।আঙুলের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসছে টাটকা র’ক্তের ধারা।তন্দ্রা মূর্তির মত দাড়িয়ে থাকে।এটা সে করেছে!কি করে!ও কি করে নীলাদ্রির মত নিষ্ঠুর হতে পারে!

তন্দ্রার ভাবনায় ছেদ ঘটে প্রচন্ড হাসির শব্দে।সে দেখে পিশাচের মত হাসছে ইভান।

“হা হা হা হা,হা হাহাহা!”

তন্দ্রা বুঝতে পারেলোনা কি হচ্ছে এসব।ইভান নীলাদ্রির পাশে গিয়ে হাটু মুড়ে বসলো,

“ওহ মিস্টার নীলাদ্রি চৌধুরী!কেমন লাগলো নিজের প্রেয়সীর দেয়া আঘাত?হা হা হাহা!”

আবারো কানে তালা লাগানো শব্দে হেসে উঠলো ইভান।
“আমারও আঘাত লেগেছিল যেদিন তুই আমার প্রেমিকাকে ঠিক এভাবে মেরেছিলি।”

“ইভান দেট মাস্ট বি এ মিস-আন্ডারেস্ট্যান্ডিং। আমি কোনো খুন করিনি!”কোনরকমে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো নীলাদ্রি।

তন্দ্রা এগিয়ে এলো ইভানের দিকে।সে তাকে ঝাঁকুনি দিয়ে বললো,
“এসব তুমি কি বলছো?কে তোমার প্রেমিকা?”

“পিয়া,পিয়া আমার প্রেমিকা ছিলো।আমার ভালোবাসা ছিলো।কিন্তু এই নরপিশাচ ওকে শেষ করে দিয়েছে।”

মাথায় যেনো বাজ পড়লো তন্দ্রার।
“তার মানে?তুমি তো বলেছিলে আমিই তোমার প্রথম ভালোবাসা!”

“ভালোবাসা মাই ফুট!আমি কেবল তোমাকে ব্যাবহার করেছি।এই নীলাদ্রির থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য।ইউ আর নথিং বাট এ প্রোডাক্ট ফর মি।”

“আমি বিশ্বাস করিনা।তুমি তো খুব ভালো মানুষ!”

“ভালো মানুষ! হাহ্।হ্যাঁ আমি ভালো মানুষ।আমার পরিবারের জন্য,আমার ক্লায়েন্টদের জন্য সবার জন্য।শুধু একজনের জন্যই আমি খারাপ। অনলি ফর দিস নীলাদ্রির চৌধুরী।ওর উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমি সব করছি।আমি ভাবছিলাম কি করে বদলে নেয়া যায়। পুলিশ তো ওকে ধরবেনা তাই ভাবলাম ওর কাছের মানুষদেরই সরিয়ে দেই।যেমন ওর দাদুকে সরিয়েছিলাম তোমার মামার মাধ্যমে ওর সম্পর্কে মিথ্যে বলিয়ে।”

“কি!আমার মামাকে দিয়ে?”

“হ্যাঁ।তোমার মামা আসলেই অনেক লোভী।বলেছিলাম যা হক করে নীলাদ্রির দাদুকে ওর থেকে দূরে করে দিতে।টাকার লোভ দেখাতেই ধেই ধেই করে ও রটিয়ে দিল তোমার বর একজন গ্যাংস্টার!এরপর এলে তুমি।তোমাকে অবশ্য প্রথম দেখাতে আমি নিজেই পছন্দ করে ফেলেছিলাম।এরপর মম গোঁ ধরলেন তোমাকে বিয়ে করতে হবে।এতটুকু পর্যন্ত সব ঠিকই ছিলো।তোমাকে নিয়ে আমার তেমন মাথা ব্যাথা ছিলনা।কারণ তোমাকে তো নীলাদ্রি এমনিতেই অপছন্দ করে।কিন্তু পরে যখন শুনলাম তুমি ওর ওয়াইফ আর ওর সবচেয়ে বড় সফট কর্নার তখন সব ভালোবাসা বদলে গেলো প্রতিশোধের আগুনে।”

“তুমি একটা প্রতারক ইভান!একটা পাপী!” চিৎকার করে উঠলো তন্দ্রা।

“পাপ, পাপ, পাপ!হ্যাঁ আমি পাপী।আমার মনে আছে পাপ আর মুখে আছে মুখোশ।আমি দিনে দিনের মত আর রাতে রাতের মত।আর তুমি নিজেও তো এখন একটা পাপী।নিজের স্বামীকে নিজেই শ্যুট করেছ!”

তন্দ্রা এবার রিভলবারটা তুলে ধরলো ইভানের দিকে,
“পাপ যখন করেছি তার প্রায়শ্চিত্তও করে যাবো।”

“হাহ্!”
ইভান তন্দ্রার হাত থেকে রিভলভারটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ডান হাত দিয়ে তার গলাটা পেছন থেকে চেপে ধরলো।
“বিড়াল মারতে পেরেছো দেখে ভেবোনা তুমি সিংহ শিকারি!”

তন্দ্রা তার গলা থেকে ইভানের হাত ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করলো। নীলাদ্রি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ব্যার্থ হলো,

“ছেড়ে দে আমার তন্দ্রাকে।তোর শত্রুতা সব আমার সাথে। লিভ হার।”

“মোটেও না মিস্টার নীলাদ্রি। মরার আগে নিজের প্রেমিকার মৃত্যুটা নিজের চোখে দেখে যা।তবে তো বুঝবি কত কষ্ট লাগে!”

তন্দ্রার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। জোরে জোরে কাশছিল।হ্যাঁ মৃত্যুই তার উপযুক্ত শাস্তি।তবে আফসোস নীলাদ্রির কাছে পাপের ক্ষমা চাওয়া হলনা তার।নীলাদ্রি মেঝেতে ছটফট করছে।মেঝেটা ভেসে যাচ্ছে র’ক্তে।তার মুখে যন্ত্রণার অভিব্যক্তি স্পষ্ট।তবে তার নিজের চেয়েও বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে তন্দ্রার জন্য।

“আহঃ!”

হঠাৎ আর্তনাদ করে তন্দ্রার গলা ছেড়ে দিলো ইভান।তার হাতে গুলি লেগেছে।তন্দ্রা কাঁশতে কাঁশতে গলা ধরে মেঝেতে বসে বসে পড়লো।বালু,তৌসিফ আর জুলফিকার এসে দাড়িয়েছে।গুলিটা ছুঁড়েছে বালু।তাদের সাথে এসেছে মানিক হালদার আর তার পরিবার।বালু দ্রুত গিয়ে নীলাদ্রিকে জড়িয়ে ধরলো ,

“ভাই!ভাই আমি আপনাকে এক্ষুনি হসপিটলে নিয়ে যাচ্ছি।কিছু হবেনা আপনার।”

নীলাদ্রি একবার আঙ্গুল তুলে তন্দ্রার দিকে ইশারা করে বললো,
“ওকে নিয়ে….”

আর কিছু বলা হয়ে উঠলোনা নীলাদ্রির।সে অজ্ঞান হয়ে গেলো। বালু তাকে দ্রুত গাড়িতে উঠিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা হলো। তন্দ্রার মামা মামী আর মাইশা গিয়ে তাকে সামলে নিলো। জুলফিকার আর তৌসিফ গিয়ে ধরলো ইভানকে।

“ইউ ব্লাডি!ছাড় আমাকে ওই নীলাদ্রিকে আমি শেষ করে দেবো।”

“কেনো?কি ক্ষতি করেছে ও তোর?” জিজ্ঞেস করলো জুলফিকার।

“ও একটা খুনি,খুনি ও।ও আমার গার্লফ্রেন্ডকে মেরে ফেলেছে।”

“ভাই কোনো খুনি নয়।ভাই একজন সি বি আই এজেন্ট।একজন আন্ডারওয়ার্ল্ড কপ।”

“কি!”

“মিথ্যে!”
চিৎকার করে উঠলো ইভান।
“সব মিথ্যে।ও নিজের পরিচয় কেনো গোপন করেছিল তাহলে?”

“আমাদের রুলস্ আমাদের নিজের পরিচয় প্রকাশ করার অনুমতি দেয়না।তাই ভাই কাউকে সত্যিটা বলতে পারেনি।সবার দেয়া মিথ্যে দোষারোপ মেনে নিয়েছে।ওই,ওই মানিক হালদার ও সবাইকে রটিয়েছিল ভাই নাকি গ্যাংস্টার।ভাই সেই কথার প্রতিবাদও করেতে পারেনি।” এতটুকু বলে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য থামলো তৌসিফ।

সে থামতেই জুলফিকার বললো,
“আমরা দেখেছি কি করে স্যার নিজের মধ্যে সব কষ্ট চেপে রেখেছেন। স্যারের দাদুর মৃত্যুশয্যায় পর্যন্ত স্যারকে যেতে দেয়া হয়নি।প্রতিমুহূর্তে সেই পাপের বোঝা স্যার বয়ে বেড়িয়েছেন যে পাপ উনি কখনো করেনই নি।”

“এসব মিথ্যে! আমি নিজ চোখে ওকে আমার প্রেমিকার রুম হতে বের হতে দেখেছি যেখানে ওর লাশ পড়ে ছিল।”

“দেখেছিস ঠিক কিন্তু ভেবেছিস ভুল।কোনো অপরাধ হলে পুলিশের আগে সেই খবর আমাদের কাছে এসে পৌঁছে।আমাদের গোপনে সেখানে গিয়ে ইনভেস্টিগেশন করতে হয়।”

“কেনো?কেনো তোদের গোপনে যেতে হয়?কেনো পুলিশদের সাথে যাসনা?আমরা কিছু বুঝিনা ভেবেছিস?”

“আমদের ওখানে গিয়ে সার্ভে করে আসতে হয় কি প্রমাণ আছে কিভাবে খুন হলো সবকিছু।তার একটা সূক্ষ্ম রিপোর্ট আমরা তৈরি করে উপর মহলে জমা দেই।আজকাল অনেকে আছে ঘুষ খেয়ে প্রমাণ লোপাট করে মামলা ধামাচাপা দিয়ে দেয়।এসব বন্ধ করতেই উপরমহল থেকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমাদের।”

“তাহলে আমার পিয়াকে কে খুন করেছে? কে!”

“ওটা এখনও ইনভেস্টিগশনের আন্ডারে রয়েছে।”

“কিন্তু আমি নিজে দেখেছি তোমরা ধনঞ্জয়কে তুলে নিয়েছ।”ধরা গলায় বললো তন্দ্রা।

“ওই ধনঞ্জয় একটা ট্রিপল মার্ডার কেসের সাক্ষী ছিল।কিন্তু সেই কেসের অপরাধীরা ওকে অনেক টাকার লোভ দেখিয়েছিল।তাই ও আর কোর্টে সাক্ষী দিতে রাজি হচ্ছিল না।আমরা ওকে কেবল ভয় দেখানোর জন্য তুলে এনেছিলাম।কাজ হয়ে গেলে ছেড়েও দিয়েছিলাম।কিন্তু ওই অপরাধীরাই ওইদিন ওকে মেরে দিয়েছিল।ব্যাপারটা একচুয়ালি কাকতালিয়ো।”

এবার কান্নায় ভেঙে পড়লো তন্দ্রা,
“আমি আমার স্বামীকে খুন করেছি!খুনি আমি।খুনি!

তার কথায় ইভান ছাড়া বাকিরা চমকে গেলো।তারা ভেবেছিল ইভান নীলাদ্রিকে গুলি করেছে। তৌসিফ রাগান্বিত হয়ে এগিয়ে গেলো তন্দ্রার দিকে

“তুমি এটা কিভাবে করতে পারলে?যে মানুষটা তোমার জন্য এত করলো তাকে তুমি..?এই তুমি কি ভাইয়ের উপর প্রতিশোধ নিয়েছ?আরে ভাই তো তোমার সাথে এমন ব্যাবহার করতো কারণ ভাই চাইতো যাতে তুমি স্ট্রং হও।যাতে কোনো কষ্ট তোমাকে আর ছুঁতে না পারে।আর তুমি কিনা তাকেই!”

“আমি হসপিটলে যেতে চাই।আমি ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব।”

“নো।তুমি কোথাও যাবেনা তন্দ্রা।ভাইয়ের আশেপাশে তো নয়ই।যতদিন না ভাই সুস্থ হচ্ছে ততদিন তুমি চৌধুরী ম্যানশনে আমাদের নজরবন্দি হয়ে থাকবে।ক্লিয়ার?”

মানিক হালদারের দিকে আঙুল তুললো তৌসিফ।
“আর তোমরা,ভাই ফিরে আসলে উনি সিদ্ধান্ত নেবেন তোমাদের সাথে ঠিক কি করা হবে।আর ভাইয়ের যদি কিছু হয় তাহলে তোমাদের প্রত্যেকের ব্যাবস্থা আমি করবো।”

” অ্যান্ড ইউ মিস্টার ইভান খান,ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট।অ্যাটেম্পট টু মার্ডার কেসে তোমাকে গ্রেফতার করা হলো।”

ইভান আর দ্বিতীয় কথা বললো না।সত্যিই সে অপরাধী।একটা হাসি খুশি মেয়ের জীবন সে নষ্ট করে দিয়েছে।আজ যা হয়েছে তা তারই জন্য হয়েছে।না জেনে শুনে ভুল বুঝে এত কিছু করলো সে।নিজের পরিবারকেও আর মুখ দেখাতে পারবেনা কখনো।ইভান আর কোনো কথা না বলে তৌসিফের সাথে বেরিয়ে গেলো। জুলফিকার তন্দ্রদের নিয়ে গেলো চৌধুরী ম্যানশনে।

******

৪ দিন পর হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরলো নীলাদ্রি।সে এখন অনেকটা সুস্থ।তবে বুকে এখনও ব্যান্ডেজ বাঁধা।বিনতিও ফিরে এসেছে।তবে সবটা শুনে সে যেনো বিশ্বাসই করতে পারছেনা।এ কয়েক দিন তন্দ্রা ছটফট করেছে।কখন নীলাদ্রির সাথে দেখা করবে।তাকে নীলাদ্রির সাথে দেখা করতে দেয়া হয়নি।আজ বাড়ি ফিরতেই সে ছুটে গেলো নীলাদ্রির ঘরের দিকে।সে দরজায় টোকা দিতেই যাবে এমন সময় তাকে আটকে দিল বালু,

“তুমি এ ঘরে যেতে পারবেনা তন্দ্রা।”

“কেনো?”

“আমরা তোমাকে আর বিশ্বাস করিনা।যদি আবার তুমি ভাইয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা করো তখন?”

“বিশ্বাস করুন আমি শুধু উনার কাছে ক্ষমা চাইবো।”

“সব ভুলের ক্ষমা হয় না তন্দ্রা।আর তুমি যা করেছ তা ভুল নয়,অপরাধ।কেবল ভাইয়ের ওয়াইফ বলে তোমাকে এখনও আমরা গ্রেফতার করিনি।”

“প্লিজ আমাকে একবার উনার সাথে দেখা করতে দিন।এরপর আপনারা আমাকে যে শাস্তি দেবেন আমি মাথা পেতে নেব।”

“নো ওয়ে তন্দ্রা!”

“মিস তন্দ্রা কি এখানেই থাকেন?”
একটা ভারী গলায় বালু তন্দ্রা চমকে দেখলো ইন্সপেক্টর প্রনবেন্দ্র তার ফোর্সের সাথে এসে দাড়িয়েছেন প্রধান দরজায়।তন্দ্রা ভয়ে ভয়ে নিচে নেমে এলো,

“জি আমি এখানেই থাকি।”

“ওহ ম্যাডাম আপনি।ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট। নীলাদ্রি চৌধুরীকে হত্যা প্রচেষ্টার অপরাধে আপনাকে গ্রেফতার করা হলো।”

বালু জিজ্ঞাসা করলো,
“আপনাকে কে বলেছে এসব?”

“দেখুন মিস্টার বালু পুলিশের কাছে কিছু গোপন থাকেনা।আর এত বড়ো বিজনেসম্যানের উপর হামলা হয়েছে এটা তো সারা শহর জানে।”

তন্দ্রা তাকালো বালুর মুখের দিকে।বালু চুপ হয়ে গেছে।প্রণবেন্দ্র হ্যান্ডকাফ তুলে ধরলো তন্দ্রার সামনে।

“আপনাকে কে বললো তন্দ্রা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে?”

সবাই চমকে দেখলো সবার অলক্ষে নীলাদ্রি আসে দাড়িয়েছে তাদের পেছনে।

“স্যার আপনার পি.এ তুলয় ম্যাডাম।”

নীলাদ্রি এগিয়ে এসে চোখ রাখলো প্রণবেন্দ্রর চোখে,
“ব্যাড,ভেরি ব্যাড।ওটা উড়ো খবর ছিল।আপনি কি জানেন আপনি কাকে গ্রেফতার করতে এসেছেন ইন্সপেক্টর প্রণবেন্দ্র?সে ইস মাই ওয়াইফ মিসেস তন্দ্রা চৌধুরী।”

“ও আপনার ওয়াইফ!” বিস্মিত হলো প্রণবেন্দ্র।
“কিন্তু স্যার আপনি যে আগে বলেছিলেন ও…”

“পরিচয় পরিবর্তনশীল।”

“ওকে স্যার।তবে আপনার উপর কে হামলা করেছিল?”

“আমি তাদের দেখিনি।আততায়ী ছিল। উল্টো পাল্টা মানুষদের সন্দেহ না করে আসল অপরাধীকে খোঁজার চেষ্টা করুন।”

“ওকে স্যার। সরি ম্যাম।আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম।আসি।” ফোর্স নিয়ে বেরিয়ে গেলো প্রণবেন্দ্র।

“সত্যিটা কেনো লুকালেন?” জিজ্ঞাসা করলো তন্দ্রা।

“আমি সত্যি লুকোই না ,সত্যি তৈরি করি।আমি বলেছি তুমি নির্দোষ মানে এটাই সত্যি।” মুচকি হেসে বলল নীলাদ্রি।

“হয়তো আপনি বাইরের মানুষদের কাছে মিথ্যাটাকে সত্যি বানিয়ে দিতে পারেন কিন্তু আপনিও জানেন যে সব আমিই করেছি।”

তন্দ্রা নিজের দুহাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে তুলে ধরলো নীলাদ্রির সামনে,
“আমি আপনার আদালতে আত্মসমর্পণ করছি।আমাকে গ্রেফতার করুন।”

নীলাদ্রি বাঁকা হাসি দিয়ে তন্দ্রার দুহাত নিজের দুহাতে আবদ্ধ করে বললো,
“এর থেকেও কঠিন হ্যান্ডকাফের প্রয়োজন আছে কি?”

কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল তন্দ্রা,
“আমাকে ক্ষমা করুন।আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।”

“তন্দ্রা,এখানে আমরা সবাই অপরাধী।আমি তোমার উপর অন্যায় করেছি,ইভান আমাদের দুজনের সাথে অন্যায় করেছে।আর তুমি,আমার উপর অন্যায় করেছ আবার নিজেও কষ্ট পাচ্ছো।আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থানে সঠিক আবার ভুল।”

“কিন্তু সবচেয়ে বেশি পাপ আমি করেছি স্যার।আমি খুবই লজ্জিত।”

“ওকে।”

তন্দ্রা তার ঝাপসা হয়ে যাওয়া দৃষ্টি নিয়ে তাকালো নীলাদ্রির দিকে।

“ও সব ওকে মানে কিন্তু ঠিক আছে নয়,আমি তোমাকে ততদিন ক্ষমা করবোনা যতদিন না তুমি আমাকে জয়েনিং লেটার দিয়ে বলবে,’ ইন্সপেক্টর তন্দ্রা, রিপোর্টিং অন ডিউটি স্যার।’ আমি তোমাকে আমার ডিপার্টমেন্টের একজন ডেডিকেটেড লেডি কপ হিসাবে দেখতে চাই।”

“আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো স্যার।”

“দেটস লাইক মাই লায়নেস।”

নীলাদ্রি পাশে দাড়িয়ে থাকা বালুকে ডেকে বললো,
“বালু ওই মানিক হালদারকে নিয়ে এসো।”

“ওকে ভাই।”

বালু মানিক হালদার বীণা বেগম আর মাইশাকে হাজির করলো নীলাদ্রির সামনে। নীলাদ্রি সোফায় বসে তাদের দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকালো একবার।মাইশাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলো সে,

“মাইশা ডার্লিং,কাম হিয়ার।”

তন্দ্রা অবাক হলো।এতক্ষণ যে পুরুষ তার সাথে এত ভালো আচরণ করছিল সে হঠাৎ কেমন যেন বদলে গেছে।

“কাম হিয়ার!” ধমকে উঠলো নীলাদ্রি।

মাইশা ভয়ে ভয়ে নীলাদ্রির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।নীলাদ্রি এক টানে তাকে সোফায় বসিয়ে দিলো।

“তো তুমিই সেই মেয়ে যার আমার বধূ হওয়ার কথা ছিল! হুম বিউটিফুল!তোমার কি আফসোস হচ্ছেনা যে তুমি আমার বধূ হতে পারোনি?”

মাইশা চুপ করে রইলো।নীলাদ্রি তার গাল দুটো চেপে ধরলো,
“আরেন্ট ইউ জেলাস?”

বীণা বেগম কেঁদে উঠলো।
“নীলাদ্রি,নীলাদ্রি ওকে ছেড়ে দাও।ও কিছু করেনি।সব দোষ আমার।আমিই তন্দ্রাকে ফাঁসিয়ে তোমার সাথে বিয়ে দিয়েছিলাম।আমার মেয়ের কোনো দোষ নেই।”

“ইন্টারেস্টিং,কোয়াইট ইন্টারেস্টিং!” নীলাদ্রি মাইশার গাল ছেড়ে দিল।
“তো এই অপরাধের শাস্তিও তো পেতে হবে তাইনা?”

তন্দ্রা এবার নীলাদ্রির পায়ে পড়ল,
“স্যার,স্যার ওদের সবাইকে ছেড়ে দিন।ওরা মিথ্যে বলছে।ওরা কিছু করেনি।আমি সব করেছি।আমিই আপনার টাকা দেখে আপনাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। দে আর ইনোসেন্ট।”

নীলাদ্রি অবাক হয়ে তাকালো তন্দ্রার দিকে।ও এত সুন্দর করে মিথ্যা বলে কিভাবে?

“পা ছাড়ো তন্দ্রা।আমি সত্যিটা জানি।” কঠিন গলায় বললো নীলাদ্রি।
“আমার অপরাধীদের শাস্তি আমি নির্ধারণ করে থাকি।এতে আর করো সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হয়না।তোমারও হবেনা।”

তাদের তিনজনের দিকে ইশারা করলো নীলাদ্রি,
“তোমাদের চাইলেই এখন আমি শেষ করে দিতে পারি।বাট করবোনা।তাহলে আমার লায়নেস আবার কেঁদেকেটে সাগর বানিয়ে ফেলবে।তোমরা এখনি ওর পায়ে ধরে ক্ষমা চাও।”

তন্দ্রা চমকে উঠলো।ওরা যে তার গুরুজন।যতই অন্যায় ওরা তার সাথে করুক,তারা পা ছুলে তো তারই পাপ হবে।

“স্যার!”

“নট মোর এ সিঙ্গেল ওয়ার্ড তন্দ্রা।তোমরা দাড়িয়ে মুখ কি দেখছো?কুইক!নয়তো…”

নীলাদ্রির হুংকার শুনে তারা তিনজন ঝাঁপিয়ে পড়লো তন্দ্রার পায়ে।

“আমাদের ক্ষমা করে দে তন্দ্রা।আমাদের ভুল হয়ে গেছে।”

তন্দ্রা দ্রুত তাদের টেনে তুললো।
“আমার কাছে তোমাদের কোনো ভুল নেই।তোমরা অন্যায় করেছ নীলাদ্রি স্যারের কাছে।তার কাছে ক্ষমা চাও।”

মানিক হালদার নীলাদ্রির সামনে হাত জোর করে বললো,
“স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি জানতাম আপনি একজন কপ। কিন্তু আমি ইভানের দেয়া টাকার লোভে পড়ে গিয়েছিলাম।তাই সত্যিটাকে মিথ্যা করে দেখিয়েছিলাম।আমি ইভানকেও এই সত্যিটা জানাইনি।আর আমার আরো টাকার দরকার ছিল।কিন্তু আপনি আপনার দাদুর আশেপাশে থাকলে আমি টাকাটা সরাতে পারতাম না।তাই আমি মিথ্যে বলেছিলাম আপনার দাদুর কাছে।”

নীলাদ্রি এক ঝটকায় মানিক হালদারের গলা চেপে ধরলো,
“হালদার,আমার মন চাইছে তোকে খুন করে ফেলতে।এখনি আমার দৃষ্টির বাইরে চলে যা।নয়তো আমি কি করবো আমি নিজেও জানিনা।”

মানিক হালদার তার পরিবারকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। নীলাদ্রি শান্ত হয়ে বসলো চেয়ারে।পাশে দাড়িয়ে থাকা বালুকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“তুলয়কে জানিয়ে দাও,সি ইজ ফায়ার্ড।”

তন্দ্রা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিলো।নীলাদ্রি তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“তন্দ্রা,ব্ল্যাক কফি প্লীজ!”

**********
৪ বছর পর,

“আবার বিছানায় তোয়ালে!আপনাকে এত বার করে বলার পরও আপনি বিছানায় কেনো ফেলে রাখেন এটা? বিছানা ভিজে যায় তো!”

রাগ করে নীলাদ্রির উদ্দেশ্যে বললো তন্দ্রা। নীলাদ্রি তখন অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলো।তন্দ্রা বিছানা থেকে তোয়ালে সরিয়ে তার দিকে এগিয়ে যেতেই নীলাদ্রি তার কোমর ধরে তাকে কাছে টেনে নিয়ে এলো। ফু দিয়ে তার কপালের উপর থাকা চুলগুলো সরিয়ে বললো,

“তুমি তো আমার সব অভ্যাস বদলে দিয়েছো, এটা নাহয় আগের মতই থাকুক।”

“জান,ছাড়ুন না!”

“স্যার!”

“জান!”

“স্যার!”

“আরে আপনি আমার জান!”

“নো কল মি স্যার!” নীলাদ্রি একটা কাগজ বের করে দিল তন্দ্রার হাতে।

একটু অবাক হয়ে কাগজটা হাতে নিল তন্দ্রা।সেটা পড়েই আনন্দে লাফিয়ে উঠলো সে,

“আমার জব…!”

“ইয়াহ!নাউ ইউ আর এ সিবিআই কপ অফ মাই ডিপার্টমেন্ট!অবশেষে তোমার স্বপ্ন সত্যিই হয়েছে।”

“আমাদের স্বপ্ন সত্যিই হয়েছে।আমি যা কিছু পেয়েছি সব আপনার জন্য।”

এমন সময় ফোন বেজে উঠলো নিলাদ্রির।

“ইয়াহ নীলাদ্রি চৌধুরী স্পিকিং।”
এক মিনিট বিরতির পর নীলাদ্রি বললো,
“ওকে।আই অ্যাম কামিং।”

ফোন কেটে নীলাদ্রি তাকালো তন্দ্রার দিকে,
“নতুন কেসের ইনভেস্টিগশনে যেতে হবে।আর ইউ রেডি?”

তন্দ্রা মুচকি হাসলো,
“অলওয়েজ রেডি, স্যার!”

সমাপ্ত