মেঘে ঢাকা তারা পর্ব-১৭+১৮

0
500

#মেঘে_ঢাকা_তারা
#পর্ব_১৭
#আয়াত_আফরা

“কনগ্রেচুলেশন স্যার।” হাসিমুখে নীলাদ্রির পাশে দাড়িয়ে বললো তুলয়।

“কিসের কনগ্রেচুলেশন?”

নীলাদ্রি তখন বিজনেসের ফাইলগুলো দেখছিল। তুলয়ের কথায় তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে সে কথার কথা হিসাবে প্রশ্নটা করলো।এটাই তার অভ্যাস।সব কিছুতে অতিরিক্ত কৌতূহল সে দেখায়না। অতিরিক্ত কৌতূহল বিপদ ডেকে আনে কিনা।

“আরে স্যার আমাদের কোম্পানির সিলভার জুবিলী চলে এলো যে।আমি জানতাম আপনি ভুলে যাবেন।”

“ওহ ইয়াহ।”এতক্ষণে বিষয়টাতে গা লাগে নীলাদ্রির।”একটা ভালো কথাই মনে করিয়েছো।

“জি, স্যার।তো সেই খুশিতে কিছু হবেনা।”

“কেনো নয়। অ্যারেঞ্জ করো।”

“ভেন্যু কোথায় হবে?”

“আমার বাড়িতে।”

“বাড়িতে কেনো স্যার?চলুন না ফাইভ স্টার কোনো হোটেল বা পার্টি সেন্টারে অ্যারেঞ্জ করি।”

“না।আমার বাড়িতেই অ্যারেঞ্জ করবো।আর ফাইভ স্টারের থেকে আরো ভালোভাবে অ্যারেঞ্জ করবো। ডেকরেটরদের ডাকো, শেফদের আনো।আর কাকে কাকে ইনভাইট করতে হবে লিস্ট করে আমাকে দেখাও।”

“ওকে স্যার।”

তুলয়ের ইচ্ছে ছিলনা নীলাদ্রির বাড়িতে পার্টি হোক।যদিও নীলাদ্রির বাড়ি কোনো প্রাসাদের থেকে কম নয়। কিন্তু বাড়িতে পার্টি হওয়া মানেতো তন্দ্রাও থাকবে পার্টিতে আর এটাই চায়না তুলোয়।এমনিতেই নীলাদ্রির ওই মেয়ের প্রতি দুর্বলতা আছে।

“শুনো!” অন্যমনস্ক তুলয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো নীলাদ্রি।

“জি স্যার!”

“একটা ভালো ডিজাইনের পার্টি গাউন আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিও।”

তুলয় অবাক হলো।স্যার হঠাৎ মেয়েদের জামা কেনো চাইছেন।

“কার জন্য স্যার?”

“তোমার জানার কোনো প্রয়োজন আছে?”
নীলাদ্রি জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তুলয়ের দিকে।

তুলয় আর কিছু বলতে সাহস পেলনা।তবে মনে মনে ঈর্ষায় জ্বলতে লাগলো।নিশ্চই এ জামা স্যার ওই মেয়ের জন্যই নেবেন। স্যার এতটা বদলে গেছেন!যেখানে কোনো মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাতেন না সে এখন ওই মেয়ের জন্য এতটা পাগল!সে একটু ভেবে বললো

“স্যার!”

“বলো।”

“স্যার আমি কয়েকটা জামা পাঠিয়ে দেই ওরা চয়েস করে নেবে নাহয়।”

“হুঁ ঠিক আছে। সন্ধ্যার ভেতরে পাঠিয়ে দিও।”

“ওকে স্যার।”

*****

সন্ধ্যায় পার্টি ড্রেসগুলো দিয়ে আসার জন্য নীলাদ্রির বাড়ি গেলো তুলয়।ড্রেসগুলো বললে ভুল হবে।তার কাছে কেবল একটিই ড্রেস ছিল।নীলাদ্রি এখন অফিসেই রয়েছে।তুলয় ড্রেসগুলো দিয়েই আবার ফিরে যাবে অফিস।ইতিমধ্যেই সে তন্দ্রা আর তাকে নিয়ে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা লোক লাগিয়ে জেনে নিয়েছে।বেশ স্বস্তি পেয়েছে সে।যাক স্যার তাহলে ভালোবেসে বিয়েটা করেন নি।তবে বলা তো যায়না কখন কি ঘটে যায়!

বাড়িতে গিয়ে তুলয় প্রথমে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে নিলো।কাউকেই দেখতে পেলো না।তাই সে গলা বাড়িয়ে হাক দিল,

“বিনতি এই বিনতি।”

বিনতির জ্বর তখন কমেছে।সে তুলয়ের গলা পেয়ে ছুটে এলো ।

“ম্যাডাম আপনি!”

“হ্যাঁ।নতুন মেয়েটা কোথায়?”

নতুন মেয়ে বলতে এ বাড়িতে যে সবাই তন্দ্রাকে বুঝায় সেটা বিনতি ভালই জানে।সে বললো,

“ম্যাডাম ও তো নিজের ঘরে আছে।”

বিনতি তুলোয়কে ইশারায় তন্দ্রার কামরাটা দেখিয়ে দিল।তুলয় বিনতিকে কিছু বলার প্রয়োজন মনে না করে সোজা এগিয়ে গেলো তন্দ্রার কামরার দিকে।

তন্দ্রা তখন বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিলো।সহসা তুলয়কে ভেতরে ঢুকতে দেখে সে চমকে উঠে দাড়ালো।তুলয়কে সে আগে কখনো দেখেনি।তবে পোশাক দেখে আন্দাজ করলো সে নীলাদ্রির অফিসের কেউ হবে।তুলয়ও তন্দ্রাকে আগে দেখেনি।সে কেবল নামটাই শুনেছিল।একবার পা থেকে মাথা অবধি তন্দ্রাকে জরিপ করে নিল তুলয়।এই সেই মেয়ে যার জন্য নীলাদ্রি ইভানের মধ্যে এত ঝামেলা! কি আছে এই মেয়ের মধ্যে?

“তুমিই তন্দ্রা?”একটু দেমাকি চালে প্রশ্নটা করলো তুলয়।

তন্দ্রা সভয়ে জবাব দিলো,
“জি ম্যাডাম।”

তুলয় হাতে থাকা জামাটা সজোরে ছুঁড়ে দিলো তন্দ্রার দিকে।

“এই নাও নীলাদ্রি স্যার তোমার জন্য পার্টি ড্রেস পাঠিয়েছেন।কাল একটা পার্টি আছে।পার্টিতে এটাই পড়বে।”

তন্দ্রা ড্রেসটা খুলে অবাক হয়ে গেলো।এটা কোনো পোশাক!ছোটো ছোটো হাত,পিঠের দিকটা পুরো খালি।কেবল দুটো দড়ি দেয়া।পেটের দিকটায়ও প্রায় একি ডিজাইন। ছিঃ এত নোংরা ড্রেস পরে সে কি করে যাবে সবার সামনে? তন্দ্রা ড্রেসটা গুছিয়ে আবার তুলয়ের দিকে বাড়িয়ে বললো,

“মাফ করবেন ম্যাডাম আমি এটা পরতে পারবো না।”

তন্দ্রার দুঃসাহস দেখে তুলয় অবাক হলো।তাকে মুখের উপর না করছে এই মেয়ে!

“এটা কিন্তু নীলাদ্রি স্যারের আদেশ।”

“তবুও আমি এটা পরতে পারবোনা ম্যাডাম।”

“তন্দ্রা আমি জানি তুমি খুব ভালো মেয়ে।তবে তুমি কি জানো নীলাদ্রি স্যার ভালো মানুষদের সহ্য করতে পারেন না।”

“ম্যাডাম আপনি আমাকে যতই ভয় দেখান আমি এটা পরবো না।” দৃঢ় স্বরে বললো তন্দ্রা।

তুলোয় বুঝলো এভাবে কাজ হবেনা।তাই সে তার মোক্ষম অস্ত্রটা প্রয়োগ করলো।

“তুমি কি জানো তন্দ্রা,তোমার মামা এখন নীলাদ্রি স্যারের কাছে বন্দী!”

“কি!” চমকে উঠলো তন্দ্রা। “কি বলছেন আপনি ম্যাডাম?কেনো নীলাদ্রি স্যার আমার মামাকে বন্দী করেছেন?”

তুলয় ভালো মানুষের মতো মুখ করে বললো,
“সে বাবা আমি জানিনা।আমি শুধু জানি তোমার মামা, মামী আর আদরের মামাতো বোনকে নীলাদ্রি স্যার তুলে নিয়ে গেছেন।যদিও আমার এগুলো গোপন রাখার কথা ছিল কিন্তু তোমার মত একটা অসহায় মেয়ের জন্য আমার সত্যিই মায়া হলো।তাই না বলে থাকতে পারলাম না।তুমি না স্যারের কোনো কথার বিরোধিতা করো না।নয়তো স্যার তোমার মামার পরিবারের ক্ষতি করতে পারেন।তবে তুমি বাধ্য হয়ে থাকলে হয়তো উনিও কিছু করবেন না।”

“কিন্তু কেন? স্যারের সাথে মামার কিসের শত্রুতা?”

“আমি কি অত শত জানি বলো?”

“স্যার কোথায় রেখেছেন ওদের?”

“সে তো আমি জানিনা।কেবল শুনলাম যে ওরা স্যারের কাছেই আছে।তাই বলছি স্যারের সব কথা মেনে চলবে কেমন?”

তন্দ্রা দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলো।তুলয় ড্রেসটা তন্দ্রার বিছানায় ছুড়ে দিয়ে হাসিমুখে বেরিয়ে এলো তন্দ্রার ঘর থেকে।তার ঢিল ঠিক নিশানাতেই লেগেছে।ড্রইংরুমে এসে সে আবার বিনতিকে ডাকলো।বিনতি ছুটে এলো,

“জি ম্যাডাম!”

“কাল স্যার বাড়িতে একটা পার্টি রেখেছেন।বাড়িটাকে সুন্দর করে গুছিয়ে পরিষ্কার করে রেখো।আর কাল সকালে ডেকোরেশনের লোকেরা আসবে।”

“ওকে ম্যাডাম।”

চলে যাবার আগে তুলয় সৃষ্টির সাথেও নিচু স্বরে কি যেন কথা বলে গেলো। মুখে বিজয়ের হাসি নিয়ে বেরিয়ে এলো তুলয়।এবার দেখা যাক স্যার কি করে ওই মেয়েকে সহ্য করেন!

******

“তন্দ্রা!”

তুলোয় বেরিয়ে যেতেই বিনতি ছুটে এলো তন্দ্রার ঘরে।তন্দ্রা তখনও মেঝেতে বসে কেঁদেই যাচ্ছিল।বিনতি হঠাৎ তাকে এ অবস্থায় দেখে হকচকিয়ে গেলো।একটু আগেই যে মেয়েকে হাশিখুশি দেখেছিল হঠাৎ সে কাঁদছে কেনো? বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে বিনতি তাকে জিজ্ঞাসা করলো,

“কিরে তন্দ্রা,হলো কি তোর? কাঁদছিস কেনো?”

তন্দ্রা বিনতিকে খেয়াল করেনি এতক্ষণ।এবার তার গলা পেয়ে দ্রুত চোখের জল মুছে নিয়ে হেসে বললো,
“কাদঁছি! কই না তো।কি যে বলো না। কাঁদবো কেনো।আমার ভারি বয়েই গেলো।”

“আমি যে স্পষ্ট দেখলাম তোর চোখে জল।”

“ওসব কিছু না।ছাড়ো তো।কিছু বলবে?”

“হ্যাঁ।কাল তো একটা পার্টি আছে বাড়িতে।”

“হ্যাঁ শুনলাম।তুলয় ম্যাডাম বললেন।”

“শোন না তোর তো ভালো জামা নেই চল স্যার আসার আগে আমরা গিয়ে একটা ভালো জামা নিয়ে আসি তোর জন্য।টাকার কথা তুই একদম ভাবিস না।আমার কাছে আছে।আমি এ বাড়িতেই থাকি, খাওয়ার খরচও নেই।দেদার টাকা বাঁচে।চল চল।”

তন্দ্রা স্মিত হেসে বললো,
“না বিনতি দি।স্যার আমার জন্য জামা পাঠিয়ে দিয়েছেন।”

“তোর জন্য!” অবাক হলো বিনতি।

তন্দ্রা বিছানায় পরে থাকা পোশাকটির দিকে ইশারা করে বললো,
“হ্যাঁ বিনতি দি।ওই দেখো।ওটা স্যার পাঠিয়েছেন।”

বিনতি বিছানার উপর পড়ে থাকা পোশাকটি দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো।এটা কি ধরনের পোশাক!এটা সত্যিই স্যার পাঠিয়েছেন! স্যারের সম্পর্কে এতদিন যে ভালো ধারণা পোষণ করে আসছিল সে সব কি মিথ্যে!

“এটা তুই পরবি তন্দ্রা!”

তন্দ্রা কপট হাসলো।
“হ্যাঁ পরবো। না পরার কি আছে?”

তন্দ্রার কথায় বিনতি আরো অবাক হলো।তন্দ্রা কি করে এই পোশাক পরতে রাজি হলো? তবে কি স্যার ওকে জোর করেছেন?কিন্তু স্যার তো আসেন নি।তাহলে তুলয় ম্যাডামকে দিয়েই নিশ্চই বলে পাঠিয়েছেন।তাই মেয়েটা ওভাবে কাঁদছিলো! না না এসব পোশাক পরে কি লোকের সামনে যাওয়া যায় নাকি।স্যারকে একবার বলতেই হবে।

****

নীলাদ্রি প্রায় রাত একটার দিকে ফিরলো।বিনতি জেগেই ছিল।নীলাদ্রি ফিরতেই সে খাবার কথা জিজ্ঞাসা করলো।এত রাতে ফিরলে বেশিরভাগ সময়ই নীলাদ্রি বাইরে থেকে খেয়ে আসে।তবে আজ খাবার সাজাতে হুকুম করলো।বালু আর তৌসিফ খাবেনা বললো।তারা নীলাদ্রির অনুমতি নিয়ে বাইরে খেয়ে নিয়েছিল।অবশ্য ঠিক অনুমতি নয়।দেরি হচ্ছে দেখে নীলাদ্রিই ওদের খেয়ে নিতে বলেছিল।বালু আর তৌসিফ নীলাদ্রিকেও অনেক জোরাজুরি করেছিল।কিন্তু নীলাদ্রি রাজি হয়নি।তার আগে কাজ পরে অন্য কিছু।নীলাদ্রি খাবার খেতে এলে বিনতি মনে মনে সাহস যুগিয়ে কথাটা পাড়লো।

“স্যার!”

“বলো।”

“স্যার তন্দ্রার জন্য যে জামা পাঠিয়েছিলেন…..”

“কাল পার্টিতে ও তাই পরবে যা আমি পরতে বলেছি।”

“কিন্তু স্যার জামাটা ওর পছন্দ হয়নি।ও পারবেনা বলছে।” সাহস করে কথাটা বলেই ফেলল বিনতি।

“জামা ওর পছন্দ হোক আর না হোক ওকে এটাই পরতে হবে।এ ব্যাপারে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।”

এরপর আর কোনো কথা বাড়ালে হিতে বিপরীত হতে পারে বিধায় চুপ করে যায় বিনতি।খাওয়ার মাঝখানে নীলাদ্রি বললো,

“তন্দ্রা কোথায়?”

“আছে স্যার ওর ঘরে।”

“ঘুমিয়ে পড়েছে?”

“না স্যার।”

“ঠিক আছে ,ওকে ডেকে দাও আর তুমি যাও।”

তন্দ্রাকে কখনোই খাবার সময় ডাকেনা নীলাদ্রি।আজ তন্দ্রাকে ডাকছে দেখে অবাক হলো বিনতি।তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়।আজকাল স্যারের অনেক কাজেই অবাক লাগছে তার।অন্যের উপর কোনো কারণ ছাড়া অত্যাচার,তন্দ্রার জন্য যেচে নতুন আর অশালীন কাপড় পাঠানো ,তার প্রতি নির্দয় ব্যাবহার! স্যার তো কখনো এমন ছিলেন না! বিনতি তন্দ্রাকে ডেকে দিল।

তন্দ্রা তখন হাঁটুর উপর মুখ গুজে আকাশ পাতাল ভাবছিল।তার মন মোটেই ভালো ছিল না। নীলাদ্রির ডাকে সে তার কাছে গিয়ে মুখ নিচু করে দাড়ালো। নীলাদ্রি খাওয়ার সময় সচরাচর কথা বলা পছন্দ করে না।তবে আজকাল তার স্বভাবই যেনো বদলে যাচ্ছে।নীলাদ্রি তন্দ্রাকে জিজ্ঞাসা করলো,

“তুমি নাকি আমার দেয়া জামা পরবেনা বলেছ?”

কথাটা শুনে চমকে উঠলো তন্দ্রা।সর্বনাশ! কথাটা কে বলেছে স্যারকে?স্যার কি রাগ করেছেন?এবার কি তার মামা মামীকে কিছু করে ফেলবেন!

“তুমি কি দেখাতে চাও বলতো?”

তন্দ্রা জুলুজুলু চোখে তাকিয়ে রইলো।সে আবার কি দেখাবে?দেখানোর মত আছেটাই বা কি তার কাছে?সে তো এ ঘরে নীলাদ্রির দয়াতেই বেঁচে আছে।

“আমাকে তুমি অহংকার দেখাচ্ছো?”

“না স্যার!”

“যা বলবো তাই করবে।এর থেকে বেশী বুঝার চেষ্টা করবেনা।ফল ভালো হবেনা।”

নীলাদ্রি খাবার অর্ধেক রেখেই তার উপর পানি ঢেলে হাত ধুতে যাচ্ছিল।কিন্তু তন্দ্রা তাকে আটকে দিলো,

“স্যার!”

“কি হয়েছে?”

“স্যার খাবারে জল ঢালবেন না।আমি অন্য বোল নিয়ে আসছি।”

তন্দ্রা দৌড়ে একটা বোল এনে বাড়িয়ে দিল নীলাদ্রির দিকে।নীলাদ্রি মুচকি হেসে সেটার উপর পানি ঢেলে হাত ধুলো।এরপর একটা ন্যাপকিনে হাত মুছতে মুছতে উপরে চলে গেলো।

নীলাদ্রি চলে গেলো তন্দ্রা তার এটো করা প্লেটের খাবার নিয়ে খেতে বসল।খাবার নষ্ট করা তার পছন্দ নয়।বড়লোকরা কি করে জানি এত খাবার নষ্ট করে।ছোটবেলা থেকেই সে বুঝেছে খাওয়ার কষ্ট কি হয়।সবার খাওয়া শেষ হলে তাকে খেতে হতো ওই বাড়িতে।কখনো খাবার থাকতো কখনো থাকতো না।তখন অভুক্তই থাকতে হতো তাকে।কতরাত কেবল জল খেয়ে ঘুমিয়েছে সে!যতই অত্যাচার করুক নীলাদ্রির কাছে সে কৃতজ্ঞ।খাবার কষ্ট এ বাড়িতে তাকে কখনোই পেতে হয় না।তার উপর তাকে পড়তেও দিচ্ছে।

কিন্তু নীলাদ্রি যে মানুষ নয়।একটা পিশাচ!মানুষদের উপর এত অত্যাচার করা সে কোথায় শিখল? তন্দ্রা বা হাতের অপর পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে নীলাদ্রির প্লেটের এটো শেষ করতে থাকে।খাবার অবশ্য অনেক আছে রান্নাঘরে।কিন্তু এ খাবারগুলো শুধু শুধু ফেলে দিতে তার ইচ্ছা করলোনা।হতে পারে নীলাদ্রির পাতের খাবার।তবে বিষ তো নয়! তন্দ্রা খেয়াল করেনা উপর থেকে তাকে লক্ষ্য করছে নীলাদ্রি।তন্দ্রা পাতের শেষ দানাটুকু পর্যন্ত নিঃশেষ করে টেবিল গুছিয়ে শুতে চলে গেলো।বিনতি দির শরীর ভালো না বলে তাকে আগে খেয়ে নিতে বলেছিল তন্দ্রা।স্যার তো এমনিতেই আজ দেরি করে এসেছেন।কেবল স্যারের জন্যই বিনতি দি অত রাত অবধি জেগে ছিল।অথচ নীলাদ্রি স্যারের এসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা হয়না কখনো।যে মানুষগুলো তার ব্যাপারে ভাবে সে সেই মানুষগুলোকেই আগে কষ্ট দেয়।অদ্ভুত!

চলবে…………

#মেঘে_ঢাকা_তারা
#পর্ব_১৮
#আয়াত_আফরা

আচমকা ঘুমটা ভেঙে গেলো তন্দ্রার।একি সে কোথায় আছে?এ তো নীলাদ্রির বাড়ি নয়।অথচ তার স্পষ্ট মনে আছে সে তো নীলাদ্রির বাড়িতে তার কামরায় ঘুমিয়ে ছিল।তাহলে সে এখানে কি করে এলো? এই কক্ষটা বেশ বড় তবে টিমটিমে একটা আলোয় পুরো ঘরটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছেনা।হঠাৎ টিমটিমে বাতিটিও নিভে গেলো।তার বদলে জ্বলে উঠলো একটা ঝাড়বাতি।এবার পুরো কক্ষটি স্পষ্ট হলো তার কাছে।কিন্তু আলো জ্বলতেই সে চমকে উঠলো।সে যে বিছানায় শুয়ে আছে সেটা ভেসে যাচ্ছে র’ক্তে! এত র’ক্ত কোথা থেকে এলো! তড়াক করে বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠলো তন্দ্রা।পায়ে ভেজা একটা স্পর্শ পেলো সে। মেঝেতেও গড়িয়ে চলছে র’ক্ত।নিজের হাত দুটো চোখের সামনে তুলে ধরলো সে । সেগুলোও র’ক্তে মাখামাখি।ও ওই ওখানে ওটা কে পড়ে আছে? একটা মানুষ বলে মনে হচ্ছেনা?তন্দ্রা ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলো সেদিকে।মেঝে উপুড় হয়ে পড়ে আছে একটা মানবদেহ।সেটাকে সোজা করতেই ভয়ে আঁতকে উঠলো তন্দ্রা!এ আর কেউ নয় এ তো তার নিজের দেহ! প্রচন্ড ভয়ে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো তন্দ্রা।আর নিজের চিৎকারে নিজের ঘুমটা ভেঙে গেলো তার।

ঘুম থেকে উঠেই সে হাঁপাতে লাগলো।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।এ কি ধরনের স্বপ্ন দেখলো সে!কি ভয়ঙ্কর! ঢক ঢক করে এক গ্লাস জল গলায় ঢেলে দিলো তন্দ্রা। জানালার পাশে গিয়ে কপাটগুলো খুলে পর্দা সরিয়ে দিল সে।সকাল হয়ে গেছে।ঘরে হু হু করে প্রবেশ করছে সকলের মিষ্টি বাতাস।সে বাতাসের আলিঙ্গন তার মন থেকে একটু একটু করে মুছে দিতে লাগলো গত রাতের স্বপ্নটা।

সকালে খাওয়া শেষ করে কিছু ফুল কিনতে বেরুলো তন্দ্রা।খাবার টেবিলের দিকটা সে ফুল দিয়ে সাজাতে চায়।ডেকোরেশনের লোকেরা ফুল নিয়ে এসেছে।সব আর্টিফিসিয়াল।তার চাই তাজা ফুল।সকালের ফুরফুরে হাওয়া তার মন চাঙ্গা করে দিচ্ছে।কেবল থেকে থেকে একটাই চাপা অস্বস্তি হচ্ছে তার।চিন্তা হচ্ছে তার মামাকে নিয়ে।ওই নরপিশাচটা না জানি তাদের কি হাল করেছে।আচ্ছা তাদের কি খুঁজে বের করা যায়না?কিন্তু কথায় খুঁজবে তাদের তন্দ্রা?নীলাদ্রি কোথায় লুকিয়ে রেখেছে তাদের?

“হ্যালো ম্যাম!”

পুরুষ কন্ঠে ঘোর কাটলো তন্দ্রার।ইভান এসে দাড়িয়েছে তার সামনে।আজকাল রাস্তায় বের হলেই ইভানের সাথে দেখা হয়ে যায় তার। ইভানও কি তার উপর নজর রাখে?

“ফুল কিনতে বেরিয়েছিলেন নাকি?”

তন্দ্রা একটু বিরক্তির স্বরে বললো,
“হাতে ফুল দেখে তো নিশ্চই বুঝতে পারছেন তাইনা?”

“ম্যাম কি আমার উপরে রেগে আছেন?”

কোনো জবাব না দিয়ে হাঁটতে লাগলো তন্দ্রা।

“আপনি কি এখন এটা ভাবছেন যে,এর কোনো কাজ নেই আমার উপর নজর রাখা ছাড়া?”

“আমি সত্যই এটাই ভাবছিলাম।”

“তন্দ্রা সত্যি বলতে আমি আপনাকে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকি।”

“আমার সাথে দেখা না হলেই আপনার মঙ্গল।”

“যাকে মনে মনে ভেবেছিলাম সে যদি হঠাৎ সামনে এসে যায় তাকে ভুলে থাকা কি সত্যিই সম্ভব?”

“চাইলে সবই সম্ভব।”

তন্দ্রা রেগে আছে দেখে সে ব্যাপারে আর কথা বাড়ালো না ইভান।

“বাই দা ওয়ে আজ আপনাদের বাড়িতে একটা পার্টি আছে তাইনা?”

“হ্যাঁ।”

“নীলাদ্রি আমাকেও পার্টিতে ইনভাইট করেছে।”

“আশা করছি আপনি যেচে অপমানিত হতে যাবেন না।”

“কথাটা বেশ বলেছেন।নীলাদ্রি যে আমাকে অপমান করতেই ডেকেছে সেটা আমি জানি।”

“ভালো আপনার সেন্স অফ হিউমার আছে তাহলে।”

তন্দ্রা যে সেদিনের ব্যাপারগুলো নিয়ে রেগে আছে সেটা পরিষ্কার বুঝতে পারলো ইভান।কিন্তু যে করেই হোক এ রাগ যে তাকে ভাঙ্গতেই হবে।রাস্তার পাশের একটা চা দোকান দেখিয়ে ইভান তন্দ্রাকে প্রস্তাব করলো,

“চলুন এক কাপ চা হয়ে যাক।”

“আমার ইচ্ছে নেই।”

“আরে চলুন তো।”

তন্দ্রাকে একরকম টেনে চা দোকানে নিয়ে গেলো ইভান।

“এক কাপ চিনি ছাড়া আরেক কাপে এক চামচ দুধ এক চামচ চিনি।”

দোকানিকে অর্ডার দিতেই কিছুক্ষণের মধ্যে সে দুটো মাটির ভাড়ে দুকাপ চা ধরিয়ে দিল ইভানের হাতে। তন্দ্রা এক কাপ তন্দ্রার দিকে বাড়িয়ে দিতেই সে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

“আপনি আমার চায়ে দুধে চিনির পরিমাপ জানলেন কিভাবে?”

“যাকে চাই তার ব্যাপারে ছোটখাটো জিনিস তো জানতেই হবে।”

“ধন্যবাদ আপনাকে।”চা শেষ করে বললো তন্দ্রা।

“চায়ের জন্য?”

“হ্যাঁ।আমি এখন আসি।”

“আবার কবে দেখা হবে?”

“জানা নেই।”

“আমি অপেক্ষা করবো।”

ইভানের কথার প্রতিউত্তর না করে ফুল নিয়ে সেখান থেকে চলে এলো তন্দ্রা।তন্দ্রা চলে যেতেই ইভানের পাশে আসে দাড়ালো আরেক যুবতী।সে ইভান এর কাধে হাত রেখে বলল,

“শি ইজ শাইনিং।”

ইভান মুচকি হেসে বলল,
“ইজ শি বিউটিফুল?”

“ইউ থিঙ্ক সো, মিস্টার রোমিও?” ব্যাঙ্গ করে জিজ্ঞাসা করলো যুবতীটি।

“আই থিঙ্ক শি ইজ এ প্রোডাক্ট!”

“এ স্ট্রং সেন্স অফ হিউমার হা?”

হেসে উঠলো ইভান আর যুবতীটি।

******

সন্ধ্যা থেকেই পুরো বাড়িটা আলোয় সেজে উঠেছে।বিকেলে বাড়ি ফিরেও তন্দ্রা অন্যদের সাথে হাত লাগিয়ে সব জিনিস পরিষ্কার করে রেখেছে।সোনালী আর নীল আলোতে ঝলমল করছে বাড়িটা।নীলাদ্রি একটা নীল স্যুট পড়েছে।তার অফিসের কর্মচারী আর অন্যান্য বড় বড় বিজনেস কোম্পানির সিইওরা এসেছে। নীলাদ্রির সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছে তারা।চাকররা ড্রিংকস কেক সার্ভ করছে।চাকরানীদের এ দায়িত্বটা সে দেয়নি।পার্টিতে একেক পুরুষের নজর একেক রকম। হাই ক্লাস মহিলাদের তেমন সুবিধা করতে না পারলেও এসব চাকরানীদের সহজ সরল পেয়ে তারা যা খুশি করে বসতে পারে।আর নীলাদ্রি চায়না এমন কিছু ঘটুক।তাই চাকরানীদের আড়ালে থাকতে বলেছে।তবে তন্দ্রাকে পার্টিতে জয়েন করতে বলেছে।কেনো,তা সে নিজেও জানেনা।তন্দ্রাও তো কেবল একজন চাকরানী।অথবা তার চেয়েও বেশি,যে না থাকলে পার্টিটা বিষন্ন মনে হবে নীলাদ্রির।

তুলয় একটা ড্রিঙ্কসের গ্লাস হাতে নিয়ে নীলাদ্রির কাছাকাছি দাড়িয়ে আছে।সে একটা রেড হট পার্টি গাউন পড়েছে।অন্য পুরুষদের এতে চোখ টাটালেও নীলাদ্রির একবার চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিয়েছে।তুলয়ের বেশ রাগ হয়েছে তাতে।সে তো নীলাদ্রিকে পাবার জন্যই এভাবে সেজেছিল। পার্টিতে কাপল ড্যান্স হবে।তুলোয় আশা করে আছে নীলাদ্রি নিশ্চই তার সাথেই নাচবে।কিন্তু নীলাদ্রি যেভাবে চোখ ফিরিয়ে নিলো তাতে আর একটা সূক্ষ্ম দুর্ভাবনাও উকি দিয়েছিলি তার মনে।কিন্তু পরক্ষণেই সেটা ঢেকে দিয়েছিল একটা বিশ্রী কৌতূহল।একটু পর একটা নাটক শুরু হতে যাচ্ছে।

নীলাদ্রি কথার মাঝখানে কয়েকবার এদিক ওদিক তাকিয়েছিল।কিন্তু তার প্রত্যাশিত ব্যাক্তিকে সে দেখতে পায়নি। বয়- রা দুবার তার কাছে ড্রিংকস নিয়ে এসেছিল।সে ফিরিয়ে দিয়েছে।এসব রুচিতে বাঁধে তার।তবে যখন অতিরিক্ত কষ্টে থাকে তখন নিজের অজান্তেই এটা ঢেলে দেয় গলায়।ক্ষণিকের শান্তি আসে তাতে।এ ছাড়া তাকে শান্তনা দেয়ার মত যে কেউ নেই।

তন্দ্রা জামাটা পড়ে দাড়ালো আয়নার সামনে। ছিঃ কি বিশ্রী লাগছে তাকে।এ কি সে!মনে মনে বললো, হে ধরণী দ্বিধা হও।এ অপমানের থেকে মৃত্যু যে আরো বেশি গ্রহণযোগ্য! কিন্তু এ যে তার মৃত্যুর প্রশ্ন নয়।এ যে তার মামা মামী আর তার মামাতো বোনের মৃত্যুর পরোয়ানা।যে পরিবার তাকে মাথা গোজার ঠাঁই দিয়েছিল,দুমুঠো খেতে দিয়েছিল সে কি করে পারবে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে?

তন্দ্রা ড্রেসটা পরে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে প্যাসেজের মুখে এসে উঁকি দিয়ে হলঘরের দিকে তাকালো।বিশাল হলঘরটা উজ্জ্বল আলোয় ঝলমল করছে।তার থেকেও বেশি চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে আমন্ত্রিতদের পোশাকের চাকচিক্য।তন্দ্রার চোখ গেলো নীলাদ্রির দিকে।নীলাদ্রি ভ্রু কুঁচকে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।তন্দ্রা ছোট ড্রেসটাকে টানাটানি করে আর একটু ভালো করে দেহ ঢাকার চেষ্টা করলো। কুঁচকে থাকা নীলাদ্রির ভ্রুযুগল এবার ক্রোধে তীক্ষ্ণ হয়ে উঠলো। তন্দ্রাকে তখনও কেউ লক্ষ্য করেনি। নীলাদ্রি সবার চোখ এড়িয়ে তন্দ্রাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল নিজের ঘরে।সবার নজর এড়ালেও বিষয়টা দৃষ্টি এড়ালোনা তুলয়ের। যাক স্যারের চোখে পড়েছে তাহলে।এবার যে ওর কপালে কি আছে! ভেবেই নেচে উঠলো তুলয়ের মন।

নীলাদ্রি তন্দ্রাকে ঘরে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিল।ক্রুদ্ধ কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

“এসব ছাইপাশ কি পড়েছ তুমি?”

তন্দ্রা বুঝে উঠতে পারলোনা সে কি ভুল করেছে।এটা তো নীলাদ্রি স্যারই পাঠালেন।তাহলে আবার তাকে কেনো বকছেন?

“তোমার মধ্যে বিন্দুমাত্র শালীনতা বলতে কিছু নেই?এটা কি ধরনের পোশাক? এটা পড়ে তুমি লোকের সামনে যাচ্ছিলে!”

“স্যার এটাতো আপনিই পাঠালেন।”

“আমি পাঠিয়েছি!”

“হ্যাঁ স্যার।ওই ম্যাডাম তো এটাই বললেন।”

নীলাদ্রি বুঝতে পারলো কোথাও একটা সমস্যা হয়েছে।সে তার আলমারি খুলে একটা জামা বের করে সেটা তন্দ্রার দিকে বাড়িয়ে বললো,

“এটা আমার মায়ের জামা ছিল।আপাতত এটা পরে পার্টিতে আসো।আর হ্যাঁ এটার যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।”
বলে নীলাদ্রি ঘর থেকে বের হয়ে পার্টিতে চলে গেলো।

তন্দ্রা জামাটা খুলে দেখলো।একটা গাউন।খুব সম্ভবত নীলাদ্রির মায়ের মেহেন্দি অনুষ্ঠানের গাউন হবে।এই জামাটা পরে স্বস্তি পেলো সে।একেই বলে জামা।যে জামা দেহ ঢাকতে পারেনা সেটা আবার কিসের জামা।

তন্দ্রা তৈরি হয়ে নেমে এলো নিচে।তাকে অপূর্ব সুন্দরী লাগছিল।নীলাদ্রি পর্যন্ত তার দিকে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য হলো।কিন্তু তাকে দেখে ঈর্ষায় জলে উঠলো তুলয়।এটা কি করে হলো! এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।তাহলে কি স্যার কিছু করলেন? মেয়েটা কি স্যারকে সব বলে দিলো! না যে করেই হোক স্যারের থেকে দূরে রাখতে হবে মেয়েটাকে।

পার্টিতে সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছিল তন্দ্রাকে। মেয়েটা কে?আগে তো একে কখনো এ বাড়িতে দেখেনি তারা। নীলাদ্রির বোন নাকি?কিন্তু নীলাদ্রির বোন আছে এমন কথা তো তারা জানতোনা! কয়েকজন তন্দ্রার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে কাপল ড্যান্সের জন্য অনুরোধ করলো।বালু নীলাদ্রির খুব কাছেই দাড়িয়ে ছিলো।নীলাদ্রি তাকিয়ে ছিল তন্দ্রার দিকে।তার মনে যে হিংসা হচ্ছিল সেটা বুঝতে পেরেছিল বালু।সে নীলাদ্রির কানের কাছে মুখ এনে বললো,

“ভাই মনে হচ্ছে যেনো তন্দ্রার স্বয়ংবর হচ্ছে তাইনা?”

বালুর কথায় দপ করে জ্বলে উঠলো নীলাদ্রি।সে সবাইকে সরিয়ে দিয়ে তন্দ্রার হাত নিজের হাতে নিয়ে তাকে ড্যান্স ফ্লোরে নিয়ে গেলো।নীলাদ্রি যা যা করছিল তার সাথী তাল মিলাচ্ছিলো তন্দ্রা। নীলাদ্রির মর্জিমত চলা ভালো।রেগে গেলে যদি কিছু করে বসে!

তন্দ্রা নাচতে জানতোনা। পদে পদে তার স্টেপ ভুল হচ্ছিলো।কয়েকবার নীলাদ্রির পায়ের উপর পা-ও পড়ে গেলো তার। নীলাদ্রির শীতল চোখের দিকে তাকিয়ে সে সামলে নিলো নিজেকে।একটা স্লো মিউজিক বাজছে।পার্টির অন্য পুরুষরাও এতক্ষণে একজন করে নারী সঙ্গী বেছে নিয়ে নাচতে শুরু করেছে। নাচতে নাচতে তন্দ্রার চোখ গেলো তুলয়ের দিকে।সে একদৃষ্টিতে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।সেই দৃষ্টি যেনো এখনই ভষ্ম করে দেবে তাকে।তন্দ্রা বুঝলো সেটা ঈর্ষার দৃষ্টি।নিশ্চই তুলয় নীলাদ্রি স্যারকে পছন্দ করে।পুরুষদের জন্য বিষয়গুলো বোঝা কঠিন হলেও একজন নারীর কাছে অন্য একজন নারীর এ হেন মনের ভাব বোঝা মোটেও কঠিন কিছু নয়।

নীলাদ্রি তন্দ্রার কোমর চেপে ধরে আরো কাছে নিয়ে এলো তাকে। নীলাদ্রির গরম নিঃশ্বাস পড়ছে তন্দ্রার মুখের উপর।তন্দ্রা অনুভব করলো শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত চলছে নীলাদ্রির। মিউজিকটা না চললে হয়তো তার দ্রুতগামী হৃৎপিণ্ডের শব্দও শুনতে পেত তন্দ্রা।

পার্টি শেষে খাওয়ায় সময় তন্দ্রার জামায় ইচ্ছে করেই একটু ড্রিঙ্কস ফেলে দিল তুলয়।এমন ভাব করলো যেন সে দেখতেই পায়নি। তন্দ্রা কিছু বলতেই যাচ্ছিল কিন্তু নীলাদ্রি তাকে চোখের ইশারায় থামতে বললো।বিষয়টা তার চোখ এড়ায়নি মোটেও।

নাচ খাওয়াদাওয়া শেষ হলে একে একে বিদায় নিল সবাই।আস্তে আস্তে সব শান্ত হয়ে এলো।রয়ে গেলো কেবল তুলোয়।নীলাদ্রি তাকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।ঘরে আগে থেকেই ছিল বালু আর তৌসিফ।নীলাদ্রি সোফায় বসলে তুলয় জিজ্ঞাসা করলো,

“স্যার আমাকে কিছু বলবেন?”

“বলবো বলেই তো এখানে নিয়ে এসেছি।তন্দ্রার ঐরকম পোশাক কেনো ছিল?”

প্রশ্নটার মুখমুখি যে হতে হবে সেটা জানতো তুলয়।উত্তর সে ভেবেই রেখেছিল। নিপুণভাবে মিথ্যা বললো সে,

“স্যার আমিতো অনেকগুলো ড্রেস এনে ওকে দেখিয়েছিলাম।কিন্তু ওই তো এই জামাটা পছন্দ করলো।এখন আমি কি করে জানবো ওর পছন্দ এমন হবে?”

“তাই বুঝি?ও নিজে এই জামাটা পরতে চেয়েছে?”

“আমি কি আপনাকে কখনো মিথ্যা বলেছি স্যার?”

“হুঁ।আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এখন যেতে পারো।সাবধানে যাবে অনেক রাত হয়েছে।”

“আচ্ছা স্যার।”

খুশিমনে নীলাদ্রির বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো তুলোয়।এত সহজে সে ছাড়া পেয়ে যাবে এটা সে ভাবতেই পারেনি।তুলোয় বেরিয়ে যেতেই তৌসিফ নীলাদ্রিকে বললো,

“ভাই ওকে ছেড়ে দিলেন?ও তো মিথ্যা কথা বলছে।ওকে শাস্তি দিয়ে কাজ থেকে বের করে দিন।”

“তৌসিফ শত্রুর অলক্ষ্যে যত তার কাছাকাছি থাকা যায় ততই তার পরবর্তী চাল বুঝতে সুবিধা হয়।বুঝেছো?”

তৌসিফ মাথা দুলালো।

“যাও শুয়ে পরো।অনেক রাত হয়েছে।”

বালু আর তৌসিফ বেরিয়ে যেতেই নীলাদ্রি দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।সে বেশ জানে তন্দ্রা এখন জামা থেকে ড্রিঙ্কসের দাগ আর গন্ধ তোলার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

চলবে……..