মেঘে ঢাকা তারা পর্ব-১৯+২০

0
487

#মেঘে_ঢাকা_তারা
#পর্ব_১৯
#আয়াত_আফরা

৬ মাস পর,

কেটে গেছে ছয় মাস।প্রায় অনেক কিছু অপরিবর্তিত থাকলেও কিছু জিনিস বদলেছে।তুলয় আর সৃষ্টি মিলে যতটা সম্ভব দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করেছে নীলাদ্রি আর তন্দ্রার মধ্যে। নীলাদ্রির দিক দিয়ে দূরত্ব বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও দূরত্বটা বেড়েছে তন্দ্রার দিক দিয়ে। নীলাদ্রির প্রতি তার যতটুকু অনুভূতি ছিল তা এবার শেষ হয়েছে।

“তন্দ্রা!”
পেছন থেকে তন্দ্রাকে জাপটে ধরলো তাসনোভা।

“আরে তাসনোভা তুই!”

“ইয়াহ ম্যাম আমি।তো কোথায় যাওয়া হয়েছিল?”

“একটা জিনিস কিনতে গিয়েছিলাম। দাড়া তোকে দেখাচ্ছি।”
তন্দ্রা তার ব্যাগ থেকে একটা ঘড়ি বের করে দেখালো তাসনোভাকে।

“দেখতো এটা কেমন।”

“খুব সুন্দর।কার জন্য?”

“ইভানের জন্য।জানিস আমি কোনোদিন মামার পরিবারের কাছ থেকে কোনো ভালোবাসা পাইনি।ছোটবেলায় বাবা মায়ের কাছ থেকেও খুব অল্প সময়ের ভালোবাসা পেয়েছিলাম।এরপর থেকে শুধু লাঞ্ছনা আর অপমান।”

তন্দ্রার সামনে ভেসে উঠলো নীলাদ্রির থেকে পাওয়া প্রতিটা অপমানের স্মৃতি।

“কিন্তু তুই জানিস একমাত্র ইভান আমাকে কোনো স্বার্থ ছাড়াই ভালোবেসেছে।আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে।”

তাসনোভা ঘড়িটা নেড়েচেড়ে দেখে বললো,
“তোর কি মনেহয় এটা ইভান পছন্দ করবে?”

“আমি জানি ইভানের অনেক টাকা আছে আর এটা খুবই কমদামী।কিন্তু আমি জানি ইভান কখনোই আমার দেয়া কোনোকিছু তুচ্ছ মনে করবেনা।”

“বহুত পেয়ার হ্যায় দোনোমে হা!তো শেষমেশ ইভানকেই ভালোবাসতে হলো তো?আগে আমি বললে তো এমনভাবে তাকাতি যেনো তোদের মাঝে আমি ভিলেন।”

হাসলো তন্দ্রা।
“সময় যে পাল্টেছে।আর তাছাড়া ইভান আমার মামার পরিবারকেও ওই নীলাদ্রির হাত থেকে ছাড়িয়েছে।”

“ওয়েট ওয়েট ওয়েট! ঠিক বুঝলাম না।ইভান তোর মামার পরিবারকে ছাড়িয়েছে মনে?আর নীলাদ্রির সাথেই বা এসবের কি সম্পর্ক?তুই তো আমাকে কিছুই বলিসনি।”

“বলব অন্যদিন।”

“তুই আমার কাছ থেকে কিছু লুকচ্ছিস তন্দ্রা।তুই বলেছিলি যে তোর মামা মামী তোকে রেখেই শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল তাই নীলাদ্রি তোকে তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে।কিন্তু এর মধ্যে নীলাদ্রি আর তোর মামার কানেকশনটা কি বুঝলাম না।”

“উফ তুই সবকিছুতে বড্ড জলদি জলদি করিস।বলছি তো সব বলবো তোকে।কিন্তু আজ না।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

“হ্যাঁ বুঝলাম, তুমি এখন প্রেম করছো। এখন তোমার বান্ধবীর জন্য সময় থাকবে নাকি?যাও যাও।”

“আরে তুই রাগ করছিস নাকি!”

“না রাগ করছি না।বললাম, যা ইভান তোর জন্য অপেক্ষা করছে তো!”

হেসে তাসনোভা বিদায় জানালো তন্দ্রাকে।

তন্দ্রা দ্রুত চলে এলো পার্কে।ইভানের সাথে সে প্রায় সময় এখানেই দেখা করে।ইভান পার্কের একটা বেঞ্চে বসে তন্দ্রার জন্য অপেক্ষা করছিল।অপেক্ষা অপেক্ষা অপেক্ষা!অনেক অপেক্ষা করেছে সে।এবার তাকে আসল কাজটা করতেই হবে।

“মিস তন্দ্রা অনেক অপেক্ষা করেছি আমি তোমার জন্য আর আজও তুমি আমাকে অপেক্ষা করিয়ে যাচ্ছ। কোথায় রয়ে গেলে তুমি তন্দ্রা!” ধীর গলায় বললো ইভান।

“সরি সরি সরি! খুব লেট করে ফেললাম তাইনা?”
ইভানের সামনে এসে কান ধরে বললো তন্দ্রা।

ইভান তন্দ্রার কান থেকে তার হাত নামিয়ে বললো,
“মিস তন্দ্রা,আপনাকে হাসলে সুন্দর লাগে, কাঁদলে সুন্দর লাগে,রাগ করলেও সুন্দর লাগে।কিন্তু এই কান ধরলে না একদম হাট্টিমাটিম মনেহয়।”

ইভানের কথায় হেসে উঠলো তন্দ্রা।কথাটা অবশ্য ইভান তন্দ্রাকে হাসানোর জন্যই বলেছিল। তন্দ্রা হাসছিল কিন্তু তার মনে ভয় হচ্ছিল।ইভান সেটা বুঝতে পেরে জিজ্ঞাসা করলো,

“তন্দ্রা,কি হয়েছে?তোমাকে নার্ভাস দেখাচ্ছে কেনো?”

“আসলে,আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই ইভান।” আমতা আমতা করে বলল তন্দ্রা।

“হ্যাঁ বলো কি বলবে?”

তন্দ্রা এবার হাটু মুড়ে বসলো ইভানের সামনে।হাতে থাকা ঘড়ির বক্সটা খুলে ইভানের দিকে বাড়িয়ে বললো,

“আই লাভ ইউ ইভান।আমি তোমাকে সবসময় আমার পাশে চাই।আমি থেকে আমরা হতে চাই।”

ইভান স্তম্ভিত হয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো তন্দ্রার দিকে।এরপর দুহাতে মুখ চেপে ধরলো।তার চোখে বিস্ময় আর খুশি ঝিলিক দিচ্ছে।

“তন্দ্রা!আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা অবশেষে তুমি আমাকে ভালবেসেছ!”

“হ্যাঁ ইভান সেদিন আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।আজ সেই আমিই তোমাকে চাই।”

ইভান তন্দ্রার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।তন্দ্রা ঘড়িটা পরিয়ে দিল ইভানের হাতে।তন্দ্রা উঠে দাঁড়ালে ইভান তাকে বললো,

“তন্দ্রা তুমি না সবার চেয়ে অন্যরকম।মানুষ প্রপোজ করে আংটি দিয়ে আর তুমি প্রপোজ করছো কিনা ঘড়ি দিয়ে!”

তন্দ্রা মাথা নিচু করে বললো,
“আসলে ঘড়িটা এতটাও দামী……”

ইভান তন্দ্রার ঠোঁটে হাত রেখে তাকে চুপ করিয়ে দিল।
“তোমার দেয়া সবকিছুই আমার জন্য অমূল্য তন্দ্রা।তুমি নিজেই জানোনা তুমি আমার জন্য কি!”

“তোমাকে ধন্যবাদ ইভান,তুমি আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছো।”

“এবার আমি তোমার সাথে বাঁচতে চাই।তুমি ওই নীলাদ্রিকে বলে দাও যে তুমি আমাকে ভালবাস আর আমার সাথেই থাকতে চাও।”

“কিন্তু ইভান ও কি মেনে নেবে?ও তো একটা পিশাচ।”

“তন্দ্রা তুমি কেনো ভয় পাচ্ছো?ও যদি মেনে নাও নেয় আমি তো আছি।আমি তোমাকে ওর থেকে ছিনিয়ে আনবো।সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকাতেও হয়।তুমি একদম ভয় পাবেনা।”

“ঠিক আছে।তুমি যখন বলছো তখন আমি চেষ্টা করে দেখবো।”

“এইতো গুড গার্ল।”

“আচ্ছা আমি আসি।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।নীলাদ্রি যেকোনো সময় ফিরে আসতে পরে।”

“আমি কি তোমাকে পৌঁছে দেবো?”

“না প্রয়োজন নেই।ও বাড়ির সামনে গেলে তোমার সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না।”

“ঠিক আছে সাবধানে যেও।”

তন্দ্রা বাড়ির পথে পা বাড়ালো। ইভান মনে মনে হাসলো,

“মিসেস তন্দ্রা চৌধুরী,নীলাদ্রি ঠিকই বলে,তুমি অনেক বোকা একটা মেয়ে।নিজে এসেই জালে ধরা দিলে! নীলাদ্রি চৌধুরী এবার দেখো কি করে তোমাকে আমি সেই কষ্ট দেই যে কষ্ট তুমি আমাকে দিয়েছো!”

********

রাতে খাবার সময় নীলাদ্রির পাশে দাড়িয়ে রইলো তন্দ্রা।এই ছয় মাসে এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।নীলাদ্রি না আসা পর্যন্ত রাত জেগে বসে থাকে তন্দ্রা।নীলাদ্রি এলে তার খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার পাশে দাড়িয়ে থাকে।আজ নীলাদ্রির পাশে দাড়িয়ে উশখুস করছিল তন্দ্রা।সে ভেবে পাচ্ছিল না কিভাবে নীলাদ্রিকে ব্যাপারটা জানাবে।নীলাদ্রি এতদিনে তন্দ্রার চোখ পড়তে শিখে গেছে।সে নিজেই তন্দ্রাকে জিজ্ঞাসা করলো,

“কি ব্যাপার কিছু বলবে?”

“জি।” নিচু স্বরে বললো তন্দ্রা।

“বলো।”

“স্যার আসলে…”

“কি আসলে?”

“আসলে স্যার আমি ইভানকে বিয়ে করতে চাই।আপনার অনুমতি দরকার।”

এবার নীলাদ্রির হাত থেমে গেলো।বালু আর তৌসিফও খেতে বসেছিল।তারা খাওয়া থামিয়ে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। নীলাদ্রি গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“তুমি কি আমাদের মধ্যে হওয়া সব চুক্তি ভুলে গেছো?”

“স্যার আমি ওকে অনেক ভালবাসি।আমরা এক সাথে থাকতে চাই।”

চুপ করে রইলো নীলাদ্রি।সে কিছু ভাবছে।তন্দ্রা ,বালু আর তৌসিফ তাকিয়ে রইলো তার মুখের দিকে।তারা যেন বিচারকের রায় শোনার প্রতীক্ষায় আছে।কিছুক্ষণ চুপ থেকে নীলাদ্রি বললো,

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

নীলাদ্রির কথায় হকচকিয়ে গেল তারা তিনজনই।তন্দ্রা বিশ্বাস করতে পারছেনা নীলাদ্রি তার কথায় রাজি হয়ে গেছে!

“দেখো তন্দ্রা হয়তো তোমার মনে নেই যে তোমার মামা একটা নকল বিয়ের মাধ্যমে তোমাকে আমার বাড়িতে পাঠিয়েছিল।তো ওই বিয়েটা নকল হলেও কিছু কাগজপত্র আছে।ওগুলোতে সই করে দিতে হবে তোমাকে।যাতে তোমার আমার মধ্যে আর কোনো সম্পর্ক না থাকে।”

“ঠিক আছে স্যার।” খুশি হয়ে জবাব দিল তন্দ্রা।

নীলাদ্রি খাবার শেষ না করেই হাতে জল ঢেলে দিলো।তবে খাবারের উপর নয়।এখন তন্দ্রা আগে থেকেই বোল এনে রাখে তার সামনে।নীলাদ্রি টেবিল ছেড়ে চলে যেতেই বালু আর তৌসিফও খাওয়া ফেলে উঠে চলে গেলো নীলাদ্রির সাথে।নীলাদ্রি ড্রিঙ্কসের বোতল আর গ্লাস নামিয়ে আনলো।বালু উত্তেজিত হয়ে বললো,

“ভাই এটা আপনি কি বললেন?আপনি কি করে ওর প্রস্তাবে রাজি হলেন?”

তৌসিফ বললো,
“ভাই আমি প্রথমবার দেখছি যে কেউ নিজে তার স্ত্রীকে অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছে।”

নীলাদ্রি গ্লাসের তরলে চুমুক দিয়ে বললো,
“দেখো এটাই কথা ছিল,যেদিন তন্দ্রা নিজে এসে আমাকে ওর মনের কথা বলবে সেদিন আমাকে সেটা মেনে নিতে হবে।তন্দ্রা আমার আর ইভানের মধ্য থেকে ইভানকে বেছে নিয়েছে।আমি ওকে ওর ভালোবাসার কাছ থেকে আলাদা করতে পারিনা।”

“ভাই এসব আপনি ভুলভাল কি যুক্তি দিচ্ছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।” উত্তেজিত হয়ে বললো বালু।
“আপনি যে ওর জন্য এত কিছু করলেন,সব কি বৃথা?এর পরিবর্তে ও আপনার ভালোবাসার কোনো দাম দিলনা?”

“বালু ভালোবাসায় কখনো ‘পরিবর্তে’ শব্দটা থাকেনা।এটা ভালোবাসা, ব্যাবসা নয়।আর তিনজনের ভালোবাসায় একজনকে হারতেই হয়।”

“কিন্তু কেনো ভাই?আপনি ওকে সত্যিটা বলে দিন। তাহলে হয়তো ও আবার আপনার কাছে ফিরে আসবে।”

“না।ও আসবে না।ও এখন ইভানকে ভালোবাসে।”

“ভাই যদি আপনি ওকে বুঝিয়ে বলেন….”

“না বালু,বোঝানোর প্রয়োজন নেই।ও তাকেই বেছে নিয়েছে যাকে ওর মন চেয়েছে।বুঝিয়ে কি আর ভালোবাসা পাওয়া যায়?আমি সবসময় চেয়েছিলাম যাতে তন্দ্রা জিতে যায়।ও বার বার হেরেছে।কেনো জানো?কারণ ও কখনো মনের কথা মুখে আনতে পারেনি।ও প্রতিবাদ করতে পারেনি।আমি ওকে এটাই শিখাতে চেয়েছিলাম।যদি সেই প্রথম দিন ওর মামীর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও করতো তাহলে ওকে কখনো আমার বাড়ি আসতে হতোনা।যদি ও আমার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে বলতো আমি আপনার স্ত্রী দাসী নই,তাহলে ওকে এত কষ্ট পেতে হতনা।যদি ও সত্যিটা প্রথমেই বলে দিত তাহলে ওকে আমার প্রতিশোধের আগুনে পুড়তে হতনা।”

“কিন্তু ভাই যখন আপনি জেনেছিলেন যে ও নির্দোষ তখন….”

“হ্যাঁ তখন থেকেই আমি ওর উপর প্রতিশোধ নেয়ার ইচ্ছেটা ঝেড়ে ফেলেছিলাম।এর বদলে ওকে ওর স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম।ছোটবেলায় শার্লক হোমস্ ,এরকুল পোয়েরো বা মিস মার্পেল পড়ার পর অনেকের মনেই সাধ জাগে একজন ডিটেকটিভ হওয়ার।কিন্তু কজন হতে পারে?ঝোঁকের বশে তন্দ্রা ক্রিমিনোলজি তো নিয়ে নিয়েছে কিন্তু ও যেমন মেয়ে ছিল তাতে ওই রাস্তায় ক্যারিয়ার গড়া ওর পক্ষে সম্ভব ছিল না।আর আমি চাইনি এতদূর এসে ও হার মেনে যায়।তাই ওকে শিখাচ্ছিলাম কিভাবে প্রতিবাদ করতে হয় ধর্য্য ধরতে হয়।”

“কিন্তু ওকে অপমান কেনো করতেন ভাই?এর জন্যই তো এখন ওর মনে আপনার জন্য একটুও জায়গা নেই।”

“ওকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি।তাতে ও সহনশীলতা শিখেছে।কিন্তু প্রতিবাদ করেনি।তাই ভাবলাম অপমান করে দেখি।যদি কিছু হয়।কিন্তু তবুও ও চুপ রইলো।ওটা এখনো ও শিখেনি।আশা করছি ইভান শিখিয়ে দেবে।”

“ভাই আপনি এসব ভালোবেসেও তো শিখাতে পারতেন।”

“যদি ভালোবেসেই শিখানো যেত তবে আমার ওর জীবনে কোনো কাজ ছিল না।তুমি কখনো সিক্রেট এজেন্ট ট্রেনিং নিয়েছ?ওখানে ভালোবেসে শিখানো হয় না।আদেশ করা হয়।আর সময়ের মধ্যে ওই কাজ সম্পন্ন করতে হয়।অনেক কষ্ট করতে হয় সাফল্যের চূড়ায় যেতে।ও সেই কষ্ট নিতে পারতোনা।ভেঙে যেতো।তাই আমি আগে থেকেই ওকে প্রস্তুত করে রাখলাম।শেকড় মজবুত হলে উপরে উঠা খুব সহজ।”

“আপনি তো আপনার নিজের নায়িকার কাছেই ভিলেন হয়ে গেলেন।”

“তাতে ক্ষতি বিশেষ নেই।ইভান ওকে ভালই রাখবে আশা করি।”

“আর আপনি কি ভালো থাকবেন?”

নীলাদ্রি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“তোমরা হয়তো ভুলে যাচ্ছ সাত মাস আগে আমি ওকে ছাড়া ভালোই ছিলাম।”

বালু আর তৌসিফ বুঝলো যুক্তি দিয়ে নীলাদ্রির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা যাবেনা।ওর মর্জির মালিক একমাত্র ও।

“ডিভোর্স পেপার তৈরি করো।আমার আর তন্দ্রার বৈবাহিক জীবনের এখানেই ইতি হবে।”

চলবে………….

#মেঘে_ঢাকা_তারা
#পর্ব_২০
#আয়াত_আফরা

“হ্যালো মিস্টার নীলাদ্রি, অবশেষে সেটাই তো হলো যেটা আমি চেয়েছিলাম।”

“মিস্টার ইভান আমি আমার কথার খেলাপ করিনা।আমি যা বলেছিলাম আমি তাই করবো।”

“হ্যাঁ এর জন্যই বোধহয় আপনি এতটা উপরে যেতে পেরেছেন।আশা করছি তন্দ্রাকে দ্রুত ডিভোর্সটা দিয়ে দেবেন।”

“সে ব্যাপারে আপনাকে ভাবতে হবেনা।আমি আমার কাজটা খুব ভালো করে জানি।”

“দেটস গ্রেট। ডিভোর্স পেপারে সই করা হয়ে গেলে ওকে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দেবেন।”

“না, বিয়েটা এই বাড়িতেই হবে।”

“ওহ রিয়েলি! আপনি আপনার প্রাক্তনের বিয়ে নিজে দাড়িয়ে থেকে দিতে চান নাকি?”

“সেই কৈফিয়ত আপনাকে দেয়ার প্রয়োজন বোধ করিনা।”

“ঠিক আছে।তাই হবে নাহয়।বাই।”

দুপাশ থেকেই ফোন কেটে গেলো।ইভান মনে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব করলো।অবশেষে সে তার লক্ষ্যের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

“ওহ ডিয়ার,তাহলে তুমি সত্যিই বিয়ে করতে যাচ্ছে?” ইভানের কোলে এসে বসলো এক যুবতী।

“হুঁম, জেলাস?”

“নাহ, এটা তো কেবল খেলনা বিয়ে।”

ইভানের শার্টের কলার চেপে তার ঠোঁটে ঠোঁট রাখার চেষ্টা করলো যুবতীটি।কিন্তু ইভান তড়িৎগতিতে তার মুখ সরিয়ে নিলো।

“তুমি কখনোই আমাকে তোমার কাছে আসতে দাওনা।” আহত গলায় বললো যুবতীটি।

“মীরা তুমি কেবল আমার সেক্রেটারি।আমার প্রেমিকা নও।মাথায় রেখো বিষয়টা।”

যুবতীটিকে সরিয়ে দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো ইভান।

*******

এদিকে ইভানের ফোন কেটে যেতেই ফোনটাকে মেঝেতে আছড়ে ফেললো নীলাদ্রি।বালু নীলাদ্রির ঘরে ঢুকতেই যাচ্ছিলো। ফোনটা গিয়ে পড়লো ঠিক তার পায়ের কাছে। বালু খানিকক্ষণ হকচকিয়ে সেভাবেই দাড়িয়ে রইলো।এরপর ফোনটা হাতে তুলে নিল।সেটা স্ক্রিন ফেটে গেছে।অসংখ্য স্ক্র্যাচ দেখা দিয়েছে তাতে।নীলাদ্রি মাথা চেপে ধরে বসে ছিল।বালু ফোনটা নিয়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

“ভাই এখনো সময় আছে।”

“যে কাগজগুলো তৈরি করতে বলেছিলাম তৈরি করেছ?”

“জি ভাই।”

“বিনতিকে ডাকো।”

“কেনো ভাই?”

“ডাকো বিনতিকে।”

বালু বিনতিকে ডেকে আনলো। নীলাদ্রি বালুকে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই বালু ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে দিল বিনতির হাতে।

“বিনতি,যাও তন্দ্রাকে বলো এটাতে সাইন করে দিতে।”

গম্ভীর গলায় বললো নীলাদ্রি।তবে তার স্বর বারকয়েক কেঁপে গেলো।বিনতি বুঝলোনা এগুলো কিসের কাগজ।সে কেবল সেগুলো নিয়ে বাড়িয়ে দিল তন্দ্রার দিকে।

“তন্দ্রা, স্যার বলেছেন কাগজগুলোতে সই করে দিতে।”

তন্দ্রা জানে কাগজগুলো কিসের।এতেই তার মুক্তি আছে।কিন্তু সই করতে গিয়ে হাত কেঁপে গেলো তার।সে কোনো ভুল করছে না তো!মন থেকে কে যেন বাধা দিচ্ছে তাকে। অবশেষে মনের সাথে যুদ্ধ করে কাগজগুলোতে সই করে দিলো সে।

বিনতি এসে কাগজগুলো রেখে দিলো নীলাদ্রির সামনে।এবার তার সই করার পালা।বালু নীলাদ্রির কাঁধে হাত রেখে বলল,

“আর একবার ভেবে দেখলে হয় না?”

নীলাদ্রি কিছু না বলে কলমটা হাতে তুলে নিল।

“ভাই তুমিও তো ওকে ভালোবাসো।তুমি ওর জন্য এত করেছ তবুও ও ইভানের কাছে গেলো?”

“বালু মরুভূমিতে পথ হারানো একজন অনভিজ্ঞ পিপাসার্ত ব্যাক্তি প্রথমে বালু খুঁড়ে জল বের করার চেষ্টা করে।তাতে ব্যার্থ হলে সে ছুটে যায় মরীচিকার দিকে।আমি তন্দ্রাকে ভালোবেসেছি সেটা প্রকাশ করতে পারিনি।ইভান প্রকাশ করেছে।তন্দ্রা ছোটকাল থেকে কারো ভালোবাসা পায়নি।তাই একটু ভালোবাসার জন্য ও সব করতে পারে।তুমি ওর জায়গায় থাকলে তুমিও এটাই করতে।আর এটাতো সত্যিই যে আমি ওর স্বপ্ন পুরোনের জন্য ওর ছোট ছোট ইচ্ছেগুলোকে মেরে ফেলেছি।”

বলে নীলাদ্রি সই করতে যেতেই ঝড়ের গতিতে তৌসিফ এসে ঢুকলো তার ঘরে।তার হাতে ধরা ছিল কিছু কাগজ আর ছবি।সেগুলো সে নীলাদ্রির দিকে বাড়িয়ে বললো,

“ভাই সই করার আগে এগুলো একবার দেখে নিন!”

নীলাদ্রি একটু অবাক হয়ে কাগজগুলো হাতে নিলো।একটার পর একটা কাগজ উল্টে দেখতে লাগলো সে।তার মুখের বিষন্নতা ক্রমে বদলে গেলো ক্রোধে।কাগজগুলো একদিকে ছুড়ে ফেলে ডিভোর্স পেপারটা ছিঁড়ে কুচিকুচি করে হাওয়ায় ছুঁড়ে দিয়ে গর্জে উঠলো নীলাদ্রি।

“ইভান!স্কাউন্ড্রেল!”

****

দুপুরে নীলাদ্রি বেরিয়ে যাবার পর বালু এসে তন্দ্রাকে জানিয়েছে তার বিয়েটা আর হচ্ছেনা।তখন থেকেই থমথমে মুখে বসে আছে সে।ইভান ফোন করেছিলো। সে তুলেনি। সে কেবল বসে আছে নীলাদ্রির ফেরার প্রতীক্ষায়।নীলাদ্রি ফিরলো অনেক রাতে।নীলাদ্রি ফিরতেই সে ছুটে গিয়ে দাঁড়ালো তার কাছে।আজ তন্দ্রার হারানোর মত কিছুই নেই।তাই তার সব ভয় কেটে গেছে।সে সরাসরি নীলাদ্রির চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

“আপনি কেনো বলেছেন বিয়ে হবেনা?”

নীলাদ্রি তার ফোন স্ক্রীনে চোখ রেখে বললো,
“আমার ইচ্ছে।”

“ইচ্ছে মানে?”

“তুমি ভুলে যাচ্ছ চুক্তিমত তুমি আজীবন আমার দাসী হয়ে থাকবে।”

এতদিনে প্রথমবার নীলাদ্রির উপর চেপে রাখা রাগটার বহিঃপ্রকাশ করলো তন্দ্রা,
“আমি আপনার দাসী তাইনা?আপনি আমার এই শরীরটাকে কিনে নিয়েছেন।কিন্তু মিস্টার নীলাদ্রি চৌধুরী আপনি আমার আত্মাকে কিনে নিতে পারেন নি।”

“তার কোনো প্রয়োজন আমার নেই।”

“তাই নাকি?ঠিক আছে।তাহলে আমি এবার দেখবো আমার আত্মা ছাড়া শরীর নিয়ে আপনি কি করেন!” বলেই ছুটে গিয়ে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল তন্দ্রা।

এবার তন্দ্রার বলা কথার অর্থ বুঝতে পেরে কেঁপে উঠলো নীলাদ্রি।তাহলে কি তন্দ্রা..! নীলাদ্রি ছুটে গিয়ে তন্দ্রার দরজায় জোরে ধাক্কা দিতে লাগলো,

“তন্দ্রা দরজা খুলো,পাগলামি করোনা তন্দ্রা।দরজা খুলো।”

নীলাদ্রির চিৎকার তন্দ্রার কানে না পৌঁছালেও ঘরের অন্যরা ছুটে এলো।বালু আর তৌসিফ এতক্ষণে ঘটনা আন্দাজ করতে পেরেছে।অন্যরা কিছু বুঝতে না পেরে হতভম্বের মত এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। নীলাদ্রি তখনও চিৎকার করে চলছে,

“দরজা খুলো তন্দ্রা। ইটস মাই অর্ডার।”

কিন্তু আজ তন্দ্রার কারো অর্ডারের পরোয়া নেই।ওরা কেবল এই দেহের উপর হুকুম চালাতে পারে।কিন্তু এই আত্মা?এই আত্মা সে কাউকে বিক্রি করেনি। তন্দ্রা দরজা খুলছেনা দেখে বালু বললো,

“ভাই দরজা ভাঙতে হবে কুইক।”

বালু আর নীলাদ্রি সজোরে দরজায় দুবার লাথি মারতেই সেটা দড়াম করে ভেঙে পড়লো।নীলাদ্রি দেখলো ঘরের ভেতর ফ্যানের সাথে ওড়না ঝুলিয়ে সেটা গলায় পরতে যাচ্ছে তন্দ্রা।সে সাথে সাথে গিয়ে তন্দ্রাকে ধরে গলা থেকে ওড়না সরিয়ে সেখান থেকে নামিয়ে আনলো।বালু ওড়নাটার গিট খুলে দিল।নীলাদ্রি ওড়নাটা জড়িয়ে দিল তন্দ্রার গায়ে।তন্দ্রা তখনো চিৎকার করে চলেছে,

“ছাড়ো আমাকে ছেড়ে দাও।আমি তোমাকে ঘৃনা করি নীলাদ্রি চৌধুরী,আই হেইট ইউ! মুক্তি চাই আমি,মুক্তি।”

ব্যাপার দেখে বিনতি কেঁদেই ফেলেছে।হঠাৎ কি হয়ে গেলো যে তন্দ্রা এমন করতে যাচ্ছিলো! নীলাদ্রি তন্দ্রার কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে বললো,

“মুক্তি চাই তাইনা তোমার? ঠিক আছে আমি তোমাকে মুক্তি দিয়ে দিচ্ছি।” বলে নীলাদ্রি দ্রুত তার ঘরে উঠে গিয়ে একটা কাগজ নিয়ে এলো।
“এই সেই কাগজ যাতে সারাজীবনের জন্য আমার দাসী হবে বলে সই করেছিলে তুমি।”

নীলাদ্রি কাগজটা কয়েক টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে ছুঁড়ে দিল তন্দ্রার দিকে।

“নাও মুক্তি দিলাম তোমায়।তুমি এবার চিরদিনের জন্য মুক্ত।এবার তুমি যেখানে খুশি যেতে পরো।আর ডিভোর্স পেপার?সেটাতে আমি সই করে পাঠিয়ে দেবো।আজ হতে আমি তোমার কেউ না আর তুমিও আমার কেউনা।” নীলাদ্রি তন্দ্রাকে টেনে নিয়ে ঘরের বাইরে বের করে দিল।

“চলে যাও। মুক্ত তুমি।চিরদিনের জন্য মুক্ত।এই নীলাদ্রি নামের কালো মেঘ আর তোমার জীবনে আসবেনা।”

কিছুক্ষণের জন্যে তন্দ্রাও থমকে গিয়েছিল।এরপর সে নীলাদ্রির কথার পরোয়া না করে ধীরে ধীরে চলে এলো সেখান থেকে।তন্দ্রা চলে যেতেই নীলাদ্রি বিনতিকে বেশ কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললো,

“তন্দ্রার সাথে যাও।ও একা থাকতে পারবেনা।তুমি আমাকে সবসময় বড় বোনের মতো আগলে রেখেছিলে।আমার তন্দ্রাকেও আগলে রেখো।ও খুব বোকা।খুব বোকা।”

বিনতি চোখের জল মুছতে মুছতে এগিয়ে গেলো তন্দ্রার গমনপথের দিকে।কোনোদিন ভাবতে পারেনি যে বাড়িতে সে একদিন আশ্রিতা হয়ে এসেছিলো,যে বাড়িতে থেকে তার এতবছর কেটে গেছে সে বাড়ির মায়া একদিন ত্যাগ করতে হবে।নীলাদ্রিকে সে বড়ো স্নেহ করতো।তাকে ছেড়ে যেতে বড্ড কষ্ট হচ্ছিল তার।সেই পনেরো বছরের ছেলেটিকে বড়ো করায় কোথাও না কোথাও তারও তো হাত আছে।সব শান্ত হয়ে গেলে বালু নীলাদ্রির কাছে এগিয়ে এসে বললো,

“ভাই ওকে আটকাবেন না?”

নীলাদ্রি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“না।ও একটা পতঙ্গ হয়ে গেছে।আগুনে ঝাঁপ দেয়াই এখন ওর নিয়তি।”

****

হাঁটুর উপর মাথা রেখে বসে ছিল তন্দ্রা। আজ খুব মনখারাপ হচ্ছে তার।কেনো সে তা বুঝতে পারছেনা।এতদিনে সে মুক্তি পেয়েছে।কিন্তু তবুও কেনো সেই মুক্তির কোনো স্বাদ অনুভূত হচ্ছেনা।ওঘরে ধড়াম করে কি যেনো একটা পড়ার শব্দে চমকে উঠলো তন্দ্রা।বিনতি দি রান্না করছে।হয়তো সেই কিছু একটা ফেলেছে।ইভান বলেছিল ওর বাড়িতে গিয়ে উঠতে।কিন্তু তন্দ্রা রাজি হয়নি।বিনতি দি একটা ছোট বাড়ি ভাড়া নিয়েছে তাদের দুজনের জন্য।কিন্তু এই ছোট্ট বাড়িটা যেনো বিশাল মনে হচ্ছে তন্দ্রার কাছে।সব কিছু যেনো শূন্য ফাঁকা।করো চিৎকার নেই চেঁচামেচি নেই। এতটা নিস্তব্ধতা কোনো বাড়িতে কি করে থাকে?মাঝে মধ্যে যা একটু শব্দ ওঘর থেকে ভেসে আসছে তাতে যেনো কানে জ্বালা ধরছে তন্দ্রার।

নীলাদ্রি তো তার কেউ ছিলনা।সে তো ইভানকে ভালোবাসে।তাহলে নীলাদ্রির কথা কেনো মনে পড়ছে?নীলাদ্রি ডিভোর্স পেপারে সই করে পাঠিয়ে দিয়েছে।সেটা এখন পড়ে আছে ঠিক তার সামনে।সে সেটা ছুঁয়েও দেখেনি।সইও করেনি।সই কি করতেই হবে?নীলাদ্রি কি আবারও এসে কাগজটা ছিঁড়ে ফেলবে না?বিয়ের দিন সে আসেনি।আজ ডিভোর্সের দিনও সে এলোনা।এতদিনে তন্দ্রার উপলব্ধি হয় তার বিয়ে হয়েছিল।কিন্তু সেই সম্পর্কটা হয়তো একটু অন্যভাবে গড়ে উঠেছিল।তাতে কেউ সার দেয়নি,জল দেয়নি।তাই সেটা পূর্ণতা পায়নি।কেবল আগাছা হয়ে একটা বন্ধন সৃষ্টি করেছিল। অদৃশ্য মায়ার বন্ধন। সেটা জড়িয়ে নিয়েছিলো তাদের দুজনকেই।হয়তো তারা বুঝতে পারেনি।তন্দ্রা আপাতত বিয়ের জন্য না করে দিয়েছে ইভানকে।ইভান বার বার কারণ জিজ্ঞাসা করেও কোনো সদুত্তর পায়নি।

“খেয়ে নে তন্দ্রা।”

তন্দ্রার সামনে খাবারের থালাটা বাড়িয়ে ধরেছে বিনতি।এই বিনতি দি আছে বলেই এ দুদিন রান্না খাওয়া হচ্ছে।একা থাকলে হয়তো না খেয়েই দিন কাটিয়ে দিত সে।কেনো সে এমন করছে?মুক্তি তো সে পেয়ে গেছে।তবে আর কি চাই তার?নিজের কাছে প্রশ্ন রেখে কোনো উত্তর পায়না সে।

“কিরে খাবিনা?” তন্দ্রাকে ঝাঁকি দিল বিনতি। “না বিনতি দি।আমার খিদে নেই।এগুলো ফেলে দাও তুমি।”

“ফেলে দিবো!তুই খাবার ফেলে দিতে বলছিস!”

“আমার কিছু ভালো লাগছেনা বিনতি দি।নিয়ে যাও এসব আমার সামনে থেকে।”

তন্দ্রা পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। ডিভোর্স পেপারটা উড়ে গিয়ে পড়লো জানালার বাইরে।

********

“কি মিস্টার ইভান,পরিকল্পনা ব্যার্থ হলো নাকি?” ইভানকে ব্যাঙ্গ করে জিজ্ঞাসা করলো মীরা।

“ওহ জাস্ট শাট আপ।ইভান কখনো এত সহজে হারে না।ওই তন্দ্রা পল্টি খেয়ে গেছে।ওই মেয়ে দু নৌকায় পা দিয়ে চলার চেষ্টা করছে।কিন্তু আমি তো ওকে আমার পরিকল্পনায় জল ঢালতে দেবো না।”

“তবে কি করবে তুমি?”

“দরকার হলে ওকে তুলে আনবো।ওকে বুঝতে হবে তো ইভানের সাথে ধোঁকাবাজি চলেনা। খেলা এখনও অনেক বাকি!”

চলবে…….