যদি তুমি চাও পর্ব-২৫+২৬+২৭

0
295

#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা

২৫.
বেশ কয়েকদিন হলো আবির অন্তিকে নিয়ে এসেছে কিন্তু আসার পরে থেকে আজ অবধি অন্তি তার সাথে কোনো প্রকার কথা বলেনি। অন্তির জানতে ইচ্ছে করে আবির কেনো ওকে মিথ্যে বললো কিন্তু প্রশ্ন করে ওঠা আর হয় না। দিনের পর দিন যায় এক ছাদের তলায় দু’টো মানুষ একে অপরের সাথে কোনো প্রকার কথা না বলেই কাটিয়ে দেয়। আবির কথা বলার চেষ্টা করলে হয়তো কিছু একটার সম্ভবনা থাকে এরপরেও সে চুপ রয় কারণ এখন সঠিক সময় নয়। অন্তির প্রশ্নগুলো সে জানে তবুও একটু খানি অপেক্ষা যে করতেই হবে তাকে। এ যে কারো জীবনের প্রশ্ন।

আবির সকালের খাবার নিয়ে বসেছে টেবিলে। অন্তিকে আর ডেকে খাওয়াতে হয় না এখন, সে নিজে এসেই বসে তারই পাশে তবে খাবার সময়টুকুই তাকে পাশে পাওয়া যায়। মেয়েটা নিরব থাকে হয়তো কষ্ট লুকোয়। জানা নেই। কিছুটা সময় পেরিয়ে যায়। আবিরের খাবার তখন হয়ে এসেছে প্রায়। অন্তি আসে, ঠিক আগের মতোই তার পাশে বসে। আজ ভিন্ন কিছু একটা ঘটে যা দেখে আবির প্রশ্ন করে,
-কোথাও বেরোবে?
অন্তি উত্তর না দিয়ে খেতে থাকে। খাবারটা দারুণ হয়েছে তবে এখন সে প্রশংসা করার অবস্থাতে নেই তাই চুপচাপ খেতে থাকে। আবির আবারও প্রশ্ন করে,
-অন্তরা, আ’ম আস্কিং ইউ সামথিং। উত্তর কী দেবে না?
-আমাকে দেখে নিশ্চয়ই বুঝেছেন আমি বাইরে যাওয়ার জন্যই এই পোশাক পরেছি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দেয় অন্তি। আবির বলে,
-কোথায় যাবে? আমার তো দেরি হয়ে যাচ্ছে অন্তরা। আগেই বলতে পারতে তুমি বেরোবে তাহলে তাড়াতাড়ি যেতে না পারলেও অন্তত অফিসে জানিয়ে দিতে পারতাম।
-কী জানাতেন?
অবাক চাহনি অন্তির। আবির নড়েচড়ে বসে বলে,
-তোমায় রেখে আবার আমার যেতে যে দেরি হবে সেই কথা।
-ওহ, এতোই চিন্তা আমার প্রতি! জানা ছিল না তো। সে যাই হোক আমি একাই যেতে পারবো আবির। আপনি চিন্তা না করলে খুশি হবো।
-আমি চিন্তা করবো না! তুমি আমার স্ত্রী অন্তরা।
-মানেন?
-অবভিয়াসি।
-ওহ। জেনে কৃতার্থ হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
-অন্তরা, এইভাবে কথা বলো না প্লিজ।
-কীভাবে বলবো কথা আপনিই বলে দিন না আবির সাহেব।
-আবির সাহেব!
-অবাক হওয়ার কিছু নেই আর এসব আবেগী ভাব দেখিয়ে আর আমায় ভুলাতে পারবেন না আপনি। আজ যদি আমি আমার মা’কে কষ্ট দিয়ে বেরিয়ে না আসতাম তবে আপনার সাথে এইভাবে এক ছাদের নিচে থাকা দূরে থাক সেটা ভাবতামও না। এনিওয়ে আমি আর এইসব নিয়ে আলোচনা করতে চাই না, গিভ মি আ ব্রেক। আজ থেকে আমি আমার ক্লাসগুলো প্রতিদিন এটেন্ড করবো এবং একাই যাওয়া আসা করবো।
আবির বলতে চাইলো কিছু কিন্তু অন্তি তো আর শোনার পাত্রী নয়। সে নিজের মতো বেরিয়ে গেল আর বলে গেল,
-চিন্তা করবেন না, আমি পালিয়ে যাচ্ছি না।

অন্তি যাচ্ছে একের পর এক সিগন্যাল ছাড়িয়ে এগোচ্ছে তার রিক্সা কখনো বা লাল বাতি জ্বলতে দেখে সেটা থামছে আবারও এগোচ্ছে। তার জীবনের পথটা তার কাছে কেমন যেনো বিষক্ত বলে মনে হচ্ছে। তবে সে এখনো অজানা, এই যে এইটুকুতেই তার এমন অবস্থা সেই তার সামনে যখন আরও কিছু সত্য বেরিয়ে আসবে তখন তার অবস্থা থেকে সে সত্যিই অজানা।

-অন্তি।
ছায়া দ্রুত হেঁটে এসে অন্তির পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করলো। এইটুকু জোরে হেঁটেই মেয়েটা হাঁপিয়ে উঠেছে দেখে অন্তি বললো,
-তোকে কতবার বলেছি এক্সারসাইজ করবি তাহলে এই একটুতে হাঁপিয়ে ওঠার বিষয়টা আর ফেস করতে হবে না। ম্যাডাম আমার কথা শুনলে তবে না!
ছায়া ওই প্রসঙ্গে না গিয়ে সরাসরি জানতে চাইলো,
-সেইদিন যে গেলি আর দেখা দিলি না। কেমন আছিস তুই?
-ভালো।
-এতোগুলো দিন মিস দিলি কেনো?
-বর ছাড়তেই চাইছিল না তাই…
ছায়া কান ঢেকে নিয়ে বললো,
-উফফফ… এসব সিরিয়াস টপিক আমার সামনে আনবি না তো প্লিজ।
-তুই তো আমায় প্রশ্নই করলি এসব টপিকে জানার জন্য।
-ইশ, মোটেও না।
-বুঝি বুঝি।
-ধ্যাত।
বলেই ছায়া ওর থেকে একটুখানি এগিয়ে গিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। অন্তি ওর পানে চেয়ে বললো,
-মাফ করিস দোস্ত। তোকে ভাগানো ছাড়া আমার কাছে আর কোনো পথ খোলা ছিল না, আমার যে নিজেকে লুকোতে হবে আর একমাত্র তুইই আমার মাঝের লুকোনো আমিটাকে খুঁজে পেতে সক্ষম তাই তোকে এইভাবে পাঠানোটা জরুরি হয়ে পড়েছিল।

অন্তির চোখ তখন ছায়াতে আবদ্ধ থাকায় আশেপাশের কিছুতেই তার ধ্যান ছিল না আর সেই সুযোগটাই কেউ কাজে লাগায়। তার হাতটা ধরে সাইডে নিয়ে গিয়ে দাঁড়ায়। অন্তি যখন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির মুখ দেখতে পায় তখন বিরক্তি নিয়ে বলে,
-আপনি এখানে!
-এখন আপনি হয়ে গেলাম আমি। বাহ!
-আপনার এখানে আসা উচিৎ হয়নি, নিহাল।
নিহাল ভ্রু-জোড় একত্রে করে তাকায় এতে তার কপালে ভাঁজ পড়ে। সে বলে,
-অন্তু ফিরে চলো। দেখো তোমায় দেখে যে কেউই বুঝবে তুমি ওই ছেলেটার সাথে সুখী নও।
-আমার সুখ কী এখন লোক দেখিয়ে ভোগ করতে হবে!
-রেগে যাচ্ছো কেনো?
অন্তি একবার আশেপাশে তাকিয়ে সবটা পরোখ করে নেয়। যা ভেবেছিল তাই, এখানে তার উপর নজর রাখার জন্য কয়েকজনকে আগে থেকেই সেট করে রাখা হয়েছে। কাজটা আবিরের হতে পারে আবার তার মাথার উপর থাকা সেই ব্যক্তিরও হতে পারে। আসলে যে এটা কার কাজ সেটা ভাবার সময় নেই অন্তির, ও শুধু এইটুকু ভাবতে ব্যস্ত যে আবারও নিহালের কোনো ক্ষতি করে না বসে ওই লোকগুলো।

নিহাল অন্তির অস্থিরতা দেখে কিন্তু বুঝতে পারে না আসলে এর পেছনের কারণ কী আর ঠিক সেই সময়ই সেখানে রিধি এসে পড়ে। সে এসে পড়ায় নিহাল কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। অন্তির বুঝতে অসুবিধে হয় না বিষয়টা। আসলে ওদের সম্পর্কের কথাটা রিধির জানা ছিল না তাই আজ এইভাবে দেখায় মেয়েটা শকিং রিয়েকশন দেয় আর তাতেই নিহাল অপ্রস্তুত হয়ে যায়। রিধি কোনো রকমে হেসে এগিয়ে এসে বলে,
-আরে নিহাল ভাইয়া আপনি!
-হ্যা, ওই ভাইয়া তোর খোঁজেই এসেছিল। তুই এসে পড়েছিস এবার কথা বল।
অন্তি কথাটা শেষ করেই সেখান থেকে সরে পড়ে। মনে মনে রিধিকে ধন্যবাদ জানায় সে এবং ঠিক করে আজ আর থাকবে না এইখানে নইলে নিহাল আবারও তার সামনে এসে দাঁড়াবে।

অন্তি ভার্সিটির পেছনের গেট পেরিয়ে একটা রিক্সা নিলো তারপর ঠিকানা বলে দিলো। রিক্সা সেইদিকে চলতে শুরু করলো ঠিকই কিন্তু কিছুদূর গিয়েই রিক্সার দিক পরিবর্তন হলো। এটা অন্তি নিজেই করতে বলেছে তাই রিক্সা চালক তার কথা মতো বামে না গিয়ে সোজা চললো। কিছুদূর গিয়ে অন্তি বললো,
-মামা এখানেই রাখেন।
রিক্সা থামলো সাথে অন্তিও নামলো। ভাড়াট কোনোমতে মিটিয়ে দিয়ে সে ছুঁটলো সামনের দিকে। রাস্তা পেরিয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো। তার থেকে কিছুটা দূরে সামনেই আরেকজনকে দেখা গেল। তারই পিছু নিয়েছে অন্তি। খুব সাবধানতার সাথে পিছু করে অনেকটা দূর এসেও গেল সে। সামনে একটা হাসপাতাল। এছাড়া অন্য কোনো জায়গা নেই এইখানে যেখানে সামনের মানুষটি যেতে পারে। অন্তি ভাবতে শুরু করলো আসলে কী হচ্ছে! সে কেনো এসেছে এই জায়গায়! অন্তি যখন নিজের মনে প্রশ্নের জগতে হারিয়ে যেতে ব্যস্ত তখনই সেই ব্যক্তি পেছন ফিরে তাকায়।

চলবে…..

লেখনীতেঃ অনামিকা

২৬.
আবির পেছন ফিরে যখন কাউকেই দেখতে পেল না তখন সবটা নিজের মনের ভুল বলে উড়িয়ে দিয়ে সামনে এগোলো। ও এগিয়ে যেতেই অন্তিও আড়াল থেকে বেরিয়ে ওর পেছনে এগোতে থাকলো। অন্তি যত এগিয়ে যাচ্ছে ততোই কেমন একটা অদ্ভুত রকম অনুভূতি হচ্ছে তার মাঝে। সে লুকিয়ে দেখছে আবিরকে, আবির একটা ঘরে ঢুকলো যার বাইরে বড় বড় অক্ষরে লিখা রয়েছে ‘DR. Kabir’. অন্তির কপালে ভাজ পড়ে। সে ভাবতে থাকে, আবিরের এইখানে কী কাজ থাকতে পারে! একবার গিয়ে দেখা উচিৎ তার, তবে আবির তাকে দেখে ফেললে সমস্যা হবে। এইটুকু ভাবনা আসতেই হাসে অন্তি। তাচ্ছিল্যপূর্ণ সেই হাসি। হয়তো ও ভাবছে ওর এখানে আসার কারণে আবির ওর সাথে আর কীই বা করবে, এখন তো শুধু গায়ে হাত তোলাটুকুই বাকি রেখেছে সে। এটাও না-হয় পূর্ণ হবে। সে যাই হোক অন্তি ভয় পেয়ে পিছিয়ে থাকবে না আর।

আবিরের সাথে সাথে ডাক্তারও বেরিয়ে আসেন তার রুম থেকে। এখন দু’জনে এই দিকটাতেই এগিয়ে আসছেন। উনিই সেই ডাক্তার সেটা তার এপ্রনের সাথে থাকা ব্যাচ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অন্তি সাইডে লুকিয়ে পড়লো এবং তার সামনে দিয়েই আবির ডাক্তারের সাথে হেঁটে চলে গেল। তারা সম্ভবত কোনো পেশেন্টকে নিয়ে কথা বলছে। অন্তির জানার আগ্রহ বাড়ে সেও এগিয়ে যায় তাদের পিছু নিয়ে। একটা কেবিনের বাইরে দাঁড়ালো ওরা, অন্তিও দাঁড়িয়ে গেল। এই জায়গা থেকে স্পষ্ট শোনা যাবে তাদের সমস্ত কথাবার্তা। এবং হলোও তাই। একজন নার্স এসে ডাক্তারকে কিছু একটা বললো যা অন্তি স্পষ্ট শুনতে পেল।
-স্যার মেডিকেল টিম রেডি আছে।
-সবকিছু রেডি তো?
-ইয়েস স্যার। অপারেশনের সবকিছু রেডি আছে এখন শুধু আপনাদের ফাইনাল ডিসকাশন হয়ে গেলেই…
-ওকে ওকে। বুঝেছি, আপনি এগোন আমি আসছি।
নার্স চলে গেল আর তার যাওয়ার সাথে সাথেই ডাক্তার আবিরের দিকে ফিরে বললেন,
-আমরা আর ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই মিসেস রহমান কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবো আপনি যদি চান এখন দেখা করে নিতে পারেন। এক্স কিউজ মি।
বলেই ডাক্তার চলে গেলেন। আবিরও গেল তবে এইবার তার পথ ভিন্ন। অন্তি বুঝতে পারছে না আসলে কে এই পেসেন্ট যার জন্য আবির এইভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে এই হাসপাতালে এসেছে!

আবির সেই পেসেন্টের হাত ধরে বসে আছে ঠিক সেই সময় অন্তি সেইখানে এসে উপস্থিত হয়। এইবার আর লুকিয়ে নয় একেবারে সামনাসামনি এসে দাঁড়ায় সে। আবির অন্তিকে দেখতে পেয়েই ঘাবড়ে যায় তবে নিজের চেহারায় সেই ছাপ ফুটে উঠতে দেয় না। প্রশ্ন করে,
-তুমি এইখানে?
-আশা করেননি?
অন্তি এইবার বেডে আধশোয়া হয়ে বসে থাকা সেই মহিলার দিকে তাকায়। অন্তি যা ভাবছে তা যদি সত্যি হয় তবে…. উহু সিওর না হয়ে আর কিছুই ভাবতে চায় না অন্তি। এতোবড় ধাক্কা আবারও সে সামলে উঠতে পারবে না কখনোই পারবে। মনে মনে চাইছে তার ভাবনা যেনো মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয় কিন্তু সত্য কী আর মিথ্যে হয়! সত্য তো সত্যই।

-আবির, এই মেয়েটা কে? তুই ওকে কী করে চিনিস?
-এই প্রশ্ন তো আমারও আন্টি। স্যরি আপনাকে আন্টি বললাম আসলে আপনি আমার মায়ের বয়সিই হবেন তাই…
-সমস্যা নেই তুমি বলো তবে তোমায় তো আমি চিনলাম না মা। তুমি কী আবিরের বন্ধু! নাহ, তা কী করে হয়? তুমি তো ওর অনেক ছোট।
নিজে প্রশ্ন করে নিজেই উত্তর দিলেন উনি। অন্তি এবার সাহস করে প্রশ্নটা করেই বসলো,
-আবির আপনার কে হয় আন্টি?
মহিলা হাসলেন হেসে হাতের ইশারা করে অন্তিকে কাছে আসার জন্য বললেন। এগিয়ে গেল অন্তি। উনি আবিরকে বললেন,
-ওঠ, ওকে বসার জায়গা করে দে।
আবির উঠে দাঁড়ালো আর অন্তি সেই জায়গাটা দখল করে নিলো। বসে থাকা অবস্থায় অন্তি একবার আবিরকে দেখার চেষ্টা করলো যা থেকে এতটুকু বোঝা গেল যে আবির এই মুহুর্তে খুব নার্ভাস হয়ে পড়েছে। রীতিমতো তার ঘাম ঝরছে।

মহিলা মানে মিসেস রহমান প্রশ্ন করলেন,
-তোমার নাম কী মা?
-অন্তরা।
-ভারী মিষ্টি নাম তো তোমার! তা আমার ছেলেকে কী করে চেনো তুমি?
-আপনার ছেলে!
-হ্যা, এই যে আবির। আমার ছেলে।
অন্তরা যেনো আরও একবার নিজের মন ভাঙার আওয়াজ শুনলো যা অন্যকেউ টেরও পেলো না। চোখদুটো তার ভিজে এলো তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
-ওহ আচ্ছা। আসলে আমি জানতাম না তো উনার মা হাসপাতালে আছেন তাই একটু…
কথাগুলো ভেঙে আসছে। আর এইখানে বসে থাকা সম্ভব নয় তার। সে বললো,
-আমি আসি আন্টি। আল্লাহ্ আপনাকে দ্রুত সুস্থতা দান করুক।
-চলে যাবে?
-জী আন্টি। বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে তো সময়মতো না গেলে সমস্যা হবে।
-আচ্ছা, তুমি বরং আবিরকে সাথে নিয়ে যাও ও তোমায় নিয়ে যাবে।
-না আন্টি।
অন্তি মাথা নিচু করে চোখ লুকোলো সাথে মুখ খুলে নিজের নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বললো,
-আপনার এমন অবস্থা আর আমি আপনার ছেলেকে সাথে নিয়ে যাবো এ হয় না। আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন তারপর একবার দেখা করতে আসবো। আসছি।
অন্তি উঠে ছুঁটে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। যাওয়ার সময় তাকে খেয়াল করলেন রহমান সাহেব। তিনি বুঝে গেলেন কী হয়েছে। এসে আগে ছেলেকে বললেন,
-তুই যা।
-কিন্তু বাবা, মা এইভাবে…
-আহা, আমি আছি তোর মা’কে দেখার জন্য। এইখানে তোর থাকার প্রয়োজন নেই। মিথ্যে বলতে আগেই না করেছিলাম আমি তুইই শুনিসনি এবার বোঝ।

আবির বেরিয়ে যায় সেখান থেকে। অন্তি হয়তো অনেকটা পথ চলে গিয়েছে। আবিরের জানা নেই আসলে অন্তি এইসবের পরেও ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠবে কি না। না উঠলেও সেটাতে অবাক হবে না আবির, সে এমনই কাজ করেছে যে অন্তির এখন তার সাথে থাকতে না চাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার তো কোনো পথ ছিল না এ ছাড়া। সেদিন তার মায়ের চিকিৎসার জন্য তার বাবা হাত পেতেছিলেন বলেই তাকে এমন একটা কাজ করতে হয়েছে। রাজি হচ্ছিলো না সে কিন্তু মা.. ছেলে হয়ে মা’কে এইভাবে মরতে দিতে সে পারতো না। অন্তিকে সে ভালোবাসে এটা যেমন সত্য তেমনই তার উপর অধিকার ফলাতে পারবে না সেটাও সত্য।

একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে যার সামনে তার মায়ের প্রাণ বাঁচানোর পথ হিসেবে রাখা হলো একটা মেয়েকে বিয়ে করার শর্ত সাথে আরও কিছু শর্ত লাগিয়ে দেওয়া হলো, স্বামী নামে পরিচয় পেলেও সেই অধিকার সে কখনোই চাইতে পারবে না। তার স্ত্রী হয়ে একটা মেয়ে তারই সাথে একই ছাদের নিচে থাকবে কিন্তু তাকে ভালোবাসার অধিকার এই স্বামী নামক ব্যক্তিটির থাকবে না। এরপর একটা সময় মেয়েটাকে নিজের জীবন থেকে বের করে ফেলে দিতে হবে। লোকে জানবে মেয়েটা ডিভোর্সি। লোক মুখে একটা কথাই ঘুরবে, রুবি খানের একমাত্র মেয়ে ডিভোর্সি। আবির প্রশ্ন করেছিল সেইদিন।
-এতে আপনার লাভ কোথায়?
-লস কোথায় সেইটা আগে দেখাও?
-অবশ্যই লস, এইভাবে টাকা খরচ করছেন আবার শুধু মেয়েটাকে কিছুদিনের জন্য রেখে ছেড়ে দিতে বলছেন। এতে আবার শর্ত দিচ্ছেন তার সাথে কোনোকিছুই করা যাবে না। এখানে লাভটা কোথায়?
সেই সময় মানুষটা পৈশাচিক হাসি হেসেছিল। বলেছিল,
-মনের সুখ বুঝলে, মনের সুখ। আমার একমাত্র শত্রু রুবি খান তার পরিবারে দাগ লাগবে। মেয়ে তার পবিত্র থেকেও সবার চোখে বাজবে।
কথাটা বলে খুব হেসেছিল লোকটা। আসলে হেসেছিল নাকি অন্য কোনো কারণ লুকিয়ে ছিল সেটাই আবির বুঝতে পারেনি এই পর্যন্ত। এসব প্রশ্ন মাথায় আসাটাই স্বাভাবিক কারণ তার মুখে বদলার কথাটা বললেও চোখে অন্যকিছু ছিল। মেয়েটাকে নিয়ে এমন বাজেভাবে কথা বলতে হয়তো তার কষ্টই হচ্ছিলো। কিন্তু ওই সময় আবিরের ওসব ভাবার মতো অবস্থা ছিল না। তাকে যে কোনো একটা পথ বেছে নিতেই হতো এবং সে তার মায়ের জীবনটা বেঁছে নিয়েছে ব্যস।

চলবে…..

লেখনীতেঃ অনামিকা

২৭.
আবির তার ফ্ল্যাটের গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে অনেকটা সময় হয়ে এলো। ভেতরে যে অন্তি আছে তা আর বুঝতে অসুবিধে হয়নি তার তবে মেয়েটার মুখোমুখি গিয়ে যে সে দাঁড়াবে সেটারও সাহস হচ্ছে না। ওদিকে এতক্ষণে হয়তো তার মা’কে অপারবশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কে জানে মা এখন কী অবস্থায় আছে! কথায় আছে না টাকা থাকলেই সব হয় না ঠিক তেমনটাই ঘটেছে ওদের সাথেও। মেঘ তাদের টাকা তো দিয়ে দিয়েছে এমনকি এখনও দিয়েই যাচ্ছে তারপরেও মায়ের অপারেশন সম্ভব হয়নি। ডোনার খুঁজে পেতে পেতে এই কিছুদিন আগে তা পাওয়া গেছে এরপর থেকেই দ্রুত সকল প্রসিজিয়র চলছে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আবির, এছাড়া হয়তো তার করার কিছুই নেই।

অন্তি বসে আছে তবে তাকে দেখে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে হয়তো একের পর এক ধোঁকা পেয়ে পেয়ে সে আজ এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আবির কখন থেকে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তবুও সে তার দিকে ফিরে তাকায়নি। এই মুহুর্তে তার ইচ্ছে করছে না আবিরের সাথে কথা বলার, তার দিকে ফিরে দেখার। একবার যদি সে তার কঠিনতা ত্যাগ করে তাকিয়ে বসে তবেই বিপদে পড়ে যাবে সে। আবির তাকে ঠিকই মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে, কোনো না কোনো কারণ দেবে আর অন্তিও বিশ্বাস করে বসবে তাই সে আবিরকে একটাও কথা বলার সুযোগ দেবে না বলে ঠিক করে রেখেছে।

অন্তি ভেবেছিল আবির হয়তো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে তারপর চলে যাবে কিন্তু এমন কিছুই ঘটলো না। উলটো আবির এসে তার সামনে হাঁটুর উপর ভর করে বসলো। আবির মায়া নিচু হয়ে আছে। অন্তি একবার তার দিকে দেখলো, এসব সহ্য হচ্ছে না তার। বুকের ভেতরটা কেমন জ্বালা করছে। খুব জ্বালা করছে। আবির হঠাৎই বললো,
-আমার কিছু কথা শুনবে প্লিজ!
-ইচ্ছে নেই। আপনি যেতে পারেন, এই সময় আপনার মায়ের কাছে থাকাটা প্রয়োজনীয়।
অন্তি খুব করে চাইছিল আবিরকে কঠিনভবে কিছু শোনাতে কিন্তু পারলো না সে। পারলো না শোনাতে। উল্টো তার মায়া হচ্ছে, কেনো হচ্ছে? অন্তি নিজের কাছে প্রশ্ন করেও উত্তর পেলো না। তার হঠাৎ করেই মনে হতে শুরু করে এই মুহুর্তে আবিরের তাকে প্রয়োজন, তার একটুখানি সাথে থাকার প্রয়োজন। তাকে সামলানোর একজন থাকা প্রয়োজন, যেই একজন শুধুমাত্র অন্তিই হতে পারে। অন্তি আবারও প্রশ্ন করে নিজের কাছে, “এমন একজন প্রতারকের জন্য তোর মন কেনো কাঁদে অন্তি?” উত্তর আসে। মন থেকেই আসে। মন বলে, “মানুষটাকে ভালোবাসিস যে তাই। তাই ই তো এমন হয়।”

আবির বললো,
-আমার কথাগুলো বলা খুবই প্রয়োজনীয় অন্তরা। না বললে যে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না আমি।
-আমার আর শক্তি নেই আরও একটা বানানো গল্প শোনার।
-একবার, শেষবার, শুধুই একবার আমায় বিশ্বাস করো অন্তরা।
আবির থামে, ঢোক গেলে সে। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে ঠিক সেই মুহুর্তে অন্তি উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আবির বসে থাকে সেখানেই, ও বুঝে গেছে অন্তি আর ওর কোনো কথাই শুনবে না। আজ হয়তো সে নিজের মনের সব কথা তার সামনে রাখতো কিন্তু অন্তিটা শুনলো না। চলে গেল! মায়ের অবস্থাও ভালো নয়। একজন প্রিয় মানুষকে ধরে রাখার চেষ্টায় আরেকজনকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে মাঠে নেমেছিল সে এরপর সেই মানুষটাও তার প্রিয়র খাতায় নাম লেখালো আর এখন দু’টো মানুষই হয়তো হারিয়ে যাবে তার কাছ থেকে। রইলো কী বাকি আর! কিছুই তো নয়। আবির তবে সব হারালো! না, এ হতে পারে। আজ ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। অন্তি, অন্তি সে কোথায় গেল। আটকাতে হবে তাকে যে করেই হোক আটকাতেই হবে।

অনেক কষ্টে নিজের মনে জোর ফিরিয়ে আনে আবির। এগিয়ে যায় বাইরের দিকে। আর তখনই অন্তির সামনে পড়ে সে। এদিকেই এগিয়ে আসছিল অন্তি। কাঁপা স্বরে আবির বলে,
-ক..কো..কোথায়….
অন্তি বুঝতে পেরে হাতে থাকা পানির গ্লাসটার দিকে ইশারা করে দেখিয়ে বলতে চায় সে পানি নিতে গয়েছিল তারপর এগিয়ে এসে আবিরের হাতটা ধরে ঘরে ফিরে যায় আবারও। আবিরকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে তার পাশে। ঘরের এক কোণে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে দু’জনে। অন্তি আবিরের দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
-পানি।
আবির হাত এগোয়। হাত তার কাঁপছে, সে অস্বাভাবিক কাঁপুনি হাতের। অন্তি আর গ্লাসটা তাকে ধরালো না নিজেই হাত বাড়িয়ে আবির ঠোঁট বরাবর ধরলো। এক চুমুক দিয়ে আবির মাথা নাড়িয়ে জানালো তার আর প্রয়োজন নেই। অন্তি পাশেই রেখে দিলো গ্লাসটা, হয়তো সে জানে এখনও এই পানির কাজ ফুরোয়নি। প্রয়োজন হবে আরও।
-বলুন আমি প্রস্তুত আছি শোনার জন্য।
আবির একবার অন্তির দিকে চেয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নেয়। সে ভাবছে এই একটুখানি আগেও যেই মেয়েটা শোকে পাথর হয়ে বসে ছিল সেই মেয়েটা কী করে এতো স্বাভাবিক আচরণ করছে!
-হাতে কিন্তু সময় অনেক কম, যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন পরে আবার আফসোস করবেন না যেনো যে, মেয়েটা আমার কথা না শুনেই ডিসিশন নিয়ে ফেললো।
আবিরের মুখভঙ্গি বুঝতে পেরেই অন্তি তাকে তাড়া দেয়। এমন স্বাভাবিক আচরণ করতে তার ভেঙে যাওয়া হৃদয়টা থেকে যে কী পরিমাণ বেদনার অগ্নি নিসৃত হচ্ছে ভেতরে সেটা একমাত্র সেই জানে।

-আমার মা’কে তো দেখলেই, খুব সাধারণ আর ভালো মনের অধিকারী একজন হলেন আমার মা। কখনো কারো ক্ষতি করার কথা চিন্তাও করেনি যেই ব্যক্তি তারই উপর হঠাৎ করে কষ্টের পাহাড় ভেঙে পড়লো। জানতে পারলো তার কিডনি দু’টোই কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এসব জানার পরে মা তো ভেঙে পড়েছিলেনই সেই সাথে বাবাও দূর্বল হয়ে পড়লেন। আমি তখন হন্যে হয়ে চারিদিকে ঘুরছি একটা চাকরির খোঁজে। জানি না ভাগ্যটা ভালো ছিল নাকি খুবই খারাপ, চাকরি আমার হলো তাও আবার বখতিয়ার খানের অফিসে। বাবাও তারই অফিসের স্টাফ ছিলেন তো সেই দিক থেকে একটা লাভ হয়েছিল বলতে পারো।
এইটুকু বলেই থামলো আবির। তারপর জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে আবারও বলতে শুরু করলো,
-বাবা-মা’য়ের মধ্যে কেউই আমায় জানায়নি আমার মায়ের এমন অবস্থার কথা। আমি তখন নিজের লাইফে ব্যস্ত, বলতে পারো পুরোপুরি ব্যস্ততায় ডুবে থাকা এক ব্যক্তি আমি। একদিন হঠাৎ বসের ডাক পড়লো। গেলাম দেখা করতে। সামনে একটা পেপার রাখা ছিল দেখে আমার গলা শুকিয়ে এসেছিল। পেপারটা ছিল আমার রিজাইন লেটার। উনি বললেন তার একটা কাজ আমায় করতে হবে নয়তো এই রিজাইন লেটারে সাইন করে দিতে হবে সাথে আরও একটা পেপার এগিয়ে দিলেন সেখানে আরও একটা রিজাইন লেটার যাতে অলরেডি আমার বাবার সিগনেচার নেওয়া হয়ে গেছে। আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম তার দিকে। কী হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করলাম কিছুক্ষণ তারপর মাথায় প্রশ্ন এলো, কী এমন কাজ হতে পারে যাতে বাবা রাজি না হয়ে এমন একটা পদক্ষেপ নিলেন। ভেবে নিলাম যেহেতু বাবা রাজি হননি সেহেতু আমার আর সেই কাজ সম্বন্ধে জানার কোনো প্রয়োজন নেই। সাইন করার জন্য কলমটা হাতে নিলাম আমি। আর তখনই উনি বললেন, “তোমার বাবার তো তোমার মায়ের প্রতি কোনো মায়া নেই এখন দেখছি তোমারও নেই!” আমি মায়ের কথা শুনে অবাক হলাম। এইখানে মায়ের কী কাজ সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলাম আর তখনই উনি আমার সামনে আমার মায়ের অসুস্থতার কথাটা বলেন। এরপর আমার সামনেও সেই শর্ত রাখেন যা আমার বাবার সামনে রেখেছিলেন। উনি বাবাকে বলেছিলেন, “আপনার একটা ছেলে আছে না, কী যেনো নাম আমার আন্ডারেই তো কাজ করছে সে। উফফ নামটা মনেই পড়ছে না। সে যাই হোক, বড্ড ভালো ছেলে আপনার। মাকেও নিশ্চয়ই ভালো বাসে।” বাবা প্রশ্ন করেন, “এখানে আমার ছেলের কথা আসছে কেনো স্যার।” উনি বলেন, “আহা, রহমান সাহেব এইভাবে এতোটা গভীরে গিয়ে ভাবার মতো এখনও কিছুই হয়নি। শুনুন, আপনার ছেলেকে গিয়ে বলুন তৈরি থাকতে। কাল তার বিয়ে বলে কথা।”
বাবার রিয়েকশন কেমন হতে পারে এরপরে তা আমি বুঝেছিলাম। স্যার বলেছিলেন, “রুবি খানকে তো চেনেনই, তার একটা মেয়ে আছে বুঝলেন রহমান সাহেব। আপনার ছেলের সাথে খুব মানাবে।” বাবা আবারও প্রশ্ন করেন, “স্যার আপনি ঠিক কী চাইছেন বলুন তো!”
এতে উনার উত্তর ছিল, “রুবি খানের নামে কালি মাখাতে চাই আমি। তার মেয়েকে আপনার ছেলে বিয়ে করে কয়েকমাস একসাথে কাটাবে এরপর ছুঁড়ে ফেলে দেবে রাস্তায়। ব্যস এইটুকুই। এর বাইরে আর কিছুই চাই না আমি।”
বাবা সেদিন রাজি হননি নিজের স্ত্রীর প্রাণ বাঁচাতে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করার চুক্তিতে তবে আমি হয়েছিলাম, আমার মা’য়ের জীবন বাঁচাতে আমায় রাজি হতেই হয়েছিল। আমি আমার মায়ের জন্য যা কিছু করতে প্রস্তুত ছিলাম বুঝলে।
হাসলো আবির তারপর দুই হাতের আঙুল দিয়ে চুলের ভেতর দিয়ে সামনে থেকে পেছনের দিকে টেনে নিয়ে একটা হাত মুঠো করে দেওয়ালে মারে সে। বলে,
-আমার কাজ ছিল তোমাকে বিয়ে করার আমি করেছি। তোমার খেয়াল রাখার দ্বায়িত্ব ছিল আমার রেখেছি। তোমায় মিথ্যে বলেছি যাতে করে তুমি মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে না পারো সেটাও করেছি। তোমার মনে আমার প্রতি ঘৃণাও জিন্মেছে জানি আমি সেটাও সফল কিন্তু হঠাৎ এসব যে কেনো বললাম তোমায়! এসব বলার কোনো মানে ছিল না কোনো কথা ছিল। তুমি হার্ট হবে এইতো প্ল্যান ছিল। হার্ট হয়ে আমার কাছে ডিভোর্স চাইবে এইতো প্ল্যান ছিল। তুমি আমায় ভালোবাসবে এটাও তো প্ল্যান ছিল তবে এসবের বাইরে যা হওয়ার কথা ছিল না সেটাও হলো। ভালোবেসে ফেললাম তোমায়। উফফফফ, ভাবতেই নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে। কেনো করলাম আমি এমন! আমার এমন করায় যদি ওই লোকটা আমার মায়ের কোনো ক্ষতি করে তখন কী হবে বলতে পারো?

আবিরকে পাগল পাগল লাগছে এই মুহুর্তে। মানুষের মন কখনো পরিকল্পনা মাফিক চলে না এখানে এমন কিছুও ঘটে যাওয়া সম্ভব যা মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। সেটাই হয়েছে আবিরের সাথে। তার মাঝে এই মুহুর্তে গিলট, দ্বিধা, ভয় সবকিছুই একসাথে বিরাজ করছে। অন্তি কোনো কিছু না ভেবেই হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসে আবিরের দিকে ফিরে তাকে জড়িয়ে ধরে। বলে,
-আবির, ডোন্ট ক্রাই।
আবির কাঁদছে! হ্যা, কাঁদছেই তো। আবির বলে,
-আমি এখন কী করবো অন্তরা? আমি তোমায় ছাড়া কোনোকিছুই ভাবতে পারি না এখন। আমায় ক্ষমা করবে প্লিজ।
অন্তি কাঁদে। আবিরের এমন অবস্থা তার সহ্য হচ্ছে না। কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না।

চলবে……