রঙতুলির ক্যানভাস পর্ব-০২

0
304

#রঙতুলির_ক্যানভাস

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পর্ব_০২

ক্লাসে মুখ গোমড়া করে বসে আছে রোদেলা।

তুলি: কিরে?

রোদেলা: সরি!না জেনে শুনে ওই বেয়া’দব এর সাফাই গাইলাম!

তুলি: সরি তো রোদ্দুর ভাইয়ার পাওনা!

রোদেলা কিছু বললো না,চুপ করে রইলো!

ক্যান্টিনে বসে খোশ গল্পে মেতে ছিল রোদেলা,তুলি, নিহা!

রোদেলা: সরি ইয়ার,আমি একটু বেশি ই বাড়াবাড়ি করলাম ওই সানিকে নিয়ে!

তুলি: আরে থাম না!সেই কখন থেকে বলছি ব্যাপার না!

ওদের কথার মাঝেই শব্দ করে বসলো নিশাত!
নিশাত: ওর গিল’টি ওখানে নয়!রোদ্দুর ভাইয়ার প্রতি!

রোদেলা ভ্রু কুঁচকে তাকালো!

নিশাত: ভার্সিটিতে ঢুকতেই শুনে ফেলেছি সব!

তুলি: তুই এত লেট লতিফ কেনো?

নিহা: লতিফা হবে!

নিশাত: কারেক্ট! কিরে তুই বুড়িদের মত তাকিয়ে আছিস কেনো?

রোদেলা: কেউ যদি রানু মন্ডল এর মত ফাটা গলায় ঘেউ ঘেউ করে এমনে তাকানো স্বাভাবিক!

নিশাতের এবার ভ্রু কুচকে গেলো!

নিশাত: বুঝালি কি?

তুলি: একই সাথে রানু মন্দ, টেপ রেকর্ডার আর কু’ত্তা!

নিশাত: সে ও যাই বলুক না কেন!আমি সব জানি!

রোদেলা টেবিলের ওপর থেকে পানির বোতল নিয়ে নিশাতের মাথায় একটা বাড়ি দিলো।

রোদেলা: এখন বল কি জানিস!

নিশাত মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,

নিশাত: তোর মত গু’ন্ডির কপালে রোদ্দুর ভাইয়া ছাড়া আর কেউ নাই!সারাদিন মা’রস কেন ছে’রি!

রোদেলা: উল্টাপাল্টা কথা কইলে এমনই হবে!আর আমার কপালে রোদ্দুর ছাড়া কেউ নাই মানে কি?ওই উগা’ন্ডার মিনিস্টার আর আমি?ছি!তুই ভাবলি কেমনে?

নিশাত ঝুঁকে বললো,”এত ছি ছি করো না বেবী! যার সাথে ঝগড়া হয় তার সাথেই প্রেম হয়!”

বলেই চোখ টিপি দিলো!..
তুলি: ওহ তার মনে তুষার ভাইয়ার সাথে তোর চলছে!

নিশাত পানি খাচ্ছিল,তুলির এহেন কথা শুনে কাশি উঠে গেলো ওর!যেই সেই কাশি না!যক্ষ্মা রোগীর কাশি!অনেক্ষণ পর নিজেকে সামলে বললো,”আমি আর ওই ঝগ’ড়ুটে?ছি!ভাবলি কেমনে?”

তিনজনই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।নিশাত ভরকে গেল!কিছু বলবে তার আগেই সানি এসে বসলো ওদের মাঝে।তুলি সানিকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে রোদেলার দিকে চেপে বসলো!

সানি: কিরে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?

রোদেলা: তুই কোন সাহসে আমার মুখোমুখি হলি?

সানি ভরকে গেল!

সানি: মানে?

রোদেলা হাতের কাছে থাকা কোকের ক্যান এ থাকা সব কোক ওর গায়ে ছুড়ে মারলো!

সানি: স্টু’পিড! এটা কি করলি!

রোদেলা: মেয়েদের টি’জ করার আগে মাথায় ছিল না?

সানি রাগী চোখে তুলির দিকে তাকালো।তুলি তা দেখে রোদের হাত শক্ত করে ধরলো!

রোদেলা: একদম ওকে এভাবে দেখবি না!পায়ের জু’তা খুলে মা’রবো!

সানি: রোদ!(ধমকে)

রোদেলা: একদম চুপ!

সানি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই ওর এই অবস্থা দেখে হাসছে!

রোদেলা: এখনও দাড়িয়ে আছিস কেনো যা!

সানি: তোকে আমি পরে দেখে নিবো!

রোদেলা: আমার সামনে আসলে তুই এখন যা সম্মান পাচ্ছিস ঐটার এক বিন্দুও পাবি না!

সানি শাসানোর চোখে তাকিয়ে চলে গেলো!

নিশাত: তো কই ছিলাম যেনো?

রোদেলা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো!নিশাত এক ঢোক গিলে বললো,”থাক কালকে বলবো!”

ক্যান্টিনে আপাতত অত কেউ নেই!রোদেলা,তুলি আর নিশাত ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বসে আছে!

রোদ্দুর ওর ফ্রেন্ডস দের নিয়ে আসতেই রোদেলা কে দেখলো!ওর মাথায় থা’প্পড় দিয়ে পাশের টেবিল থেকে আরেক চেয়ার নিয়ে বললো,” ফাঁকি বাজ মাইয়া!ক্লাস নেই তোর?”

রোদেলা রোদ্দুরের চুল টেনে বললো,”তোর ক্লাস নাই!”

রোদ্দুর: আমি তোর মত না!ক্লাসে টিচার নেই!তাই এসেছি!

তুষার পাশ থেকে ফোড়ন কেঁটে বললো,”কিন্তু তুই তো আজাদ স্যার এর ক্লাস করবিনা বলে এসেছিস!”

রোদ্দুর আহত চোখে তাকালো।রোদেলা বাঁকা হেসে বললো,”চো’র আবার আরেক চো’রকে বলছে চু’রি করা মহাপাপ!হাহ”

রোদ্দুর: বাহ তাইলে তুই স্বীকার করিস তুই চো’র!

রোদেলা রোদ্দুরের পায়ে পাড়া মেরে বললো,”ফা’জিল পোলা,লজ্জা নাই তোর?”

রোদ্দুর: আমাকে তোর মেয়ে লাগে?লজ্জা তোর পাওয়ার কথা।কিন্তু তোর মধ্যে তো মেয়েলি কোনো আচরণ ই নেই!

রোদেলা: রোদের বাচ্চা!

রোদ্দুর: নিজেকে নিজে ডাকিস কেনো?

রোদেলা কপালে হাত দিয়ে বললো,”কেনো যে সবাই তোর আর আমার নাম মিলিয়ে রাখলো!”

নিশাত: দুইটার বিয়ে দিবে তাই!

রোদেলা আর রোদ্দুর: ইম্পসিবল!

তুলি ফিক করে হেসে দিল!

রোদেলা: তোর সাথে কথা বলার ইচ্ছে নাই আমার!

রোদ্দুর: আমারও না!

রোদেলা: হাহ!

রোদ্দুর: যাহ!

রোদেলা: তুই যা!

রোদ্দুর: তুই যা!

রোদেলা: আম্মু!

রোদ্দুর: আব্বু!

রোদেলা রেগে ব্যাগ নিয়ে উঠে গেলো!সাথে নিশাত, তুলিও!

কিছুদূর যেতেই সানি ওদের সামনে আসলো।

রোদেলা: তুই আবার!

সানি: খুব তেজ না তোর?এই সানিকে অপমান করিস!তোর হাল বেহাল করতে আমার দশ মিনিট ও লাগবে না!
তুলিকে ইশারা করে বললো,”তোরে আমি একদিনের জন্য হলেও নিমু!”

রোদেলা সঙ্গে সঙ্গে ওকে থাপ্প ড় মারলো।

সানি রেগে ওর হাত চেপে ধরলো!

সানি:খুব তেজ না!!

ওর হাত মুচড়ে ধরলো!

রোদেলা: হাত ছাড়!

সানি: না ছাড়লে কি করবি?

রোদেলার চোখ ছল ছল করে উঠলো,ব্যাথা লাগছে ওর!একটু পরে অনুভব করলো সানি ওর হাত ছেড়ে দিচ্ছে।
ওদের থেকে একটু দূরে গাড়ির গ্লাসে চোখ যেতেই নজর পড়ল রোদ্দুরকে!বুকে হাত গুজে খেয়ে ফেলা লুক নিয়ে সানির দিকে তাকিয়ে আছে ও ।রোদেলা সানির দিকে তাকিয়ে দেখলো ও ঠিক পিছে তাকিয়েই হাত ছেড়ে দিয়েছে!কিছু না বলেই দৌড় মারলো ও!রোদেলা বাঁকা হেসে সামনে এগিয়ে গেলো!তুলি কে বিদায় দিয়ে রিকশা নিয়ে নিশাত সহ উঠে গেলো!

নিশাত: এখনও বলবি তোদের কিছু হবে না?

রোদেলা ভ্রু কুঁচকে তাকালো!

নিশাত হেসে বললো,”তোর হাত ধরেছে বলে র’ক্ত লাল চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে ছিল সানির দিকে।আর রোদ্দুরকে দেখেই তোর মুখে হাসি ফুটলো!কানেকশন নেই এখনও বলবি?”

রোদেলা কিছু বললো না ,চুপ করে রইলো!

ওদের এক্সাম শেষ!এখন রোদ্দুর বাবার সাথে অফিস জইন করেছে…রোদেলা এনজিও চালায়!ক্লান্ত হয়ে দুইজন বাড়ি ফিরলো।ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো রোদ্দুর!রোদেলা এখনও আসেনি!
রোদ্দুর খাওয়া শুরু করতেই রোদেলা এসে পাশে বসলো।ভাত এর সাথে তরকারি নিতে গেলেই রোদ্দুর বলে উঠলো,”বেশি নিস না!”

রোদেলা ভ্রু কুঁচকে বললো,”কেনো?”

রোদ্দুর কিছু না বলে নিজের প্লেট থেকে এক লোকমা ভাত ওর মুখে দিল। রোদেলা খাওয়ার পর বুঝতে পারলো তরকারি ঝাল বেশি!আর ও ঝাল খেতে পারে না!রোদ্দুর ওকে পানি এগিয়ে দিল।আর পুরো কাহিনী বসে থাকা সকলে দেখে মিট মিট করে হাসছে।এরা ঝগড়া করলেও একে অপরের প্রতি যথেষ্ট কেয়ারিং!

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে রোদেলা আর রোদ্দুর উঠে যেতে নিলেই রোদ্দুরের বাবা দুইজনকে বসতে বললেন!

রোদ্দুরের বাবা: তোমাদের সাথে কথা আছে!

রোদেলা রোদ্দুর উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে।রোদ্দুরের বাবা গলা ঝেড়ে বললো ,”আমি আর তোর (রোদেলার ) বাবা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী বুধবার তোদের বিয়ে দিবো।”

রোদেলা না বুঝেই বললো,”পাত্র কে?”

নোভা: তোর পাশে যে দাড়িয়ে আছে ।

রোদেলা পাশে তাকাতেই রোদ্দুরকে পেলো দেখতে।

দুইজন চোখ বড় বড় করে একে অপরের দিকে তাকালো।

রোদেলা আর রোদ্দুর: ইম্পসিবল!

রোদেলা: আমি মানি না।

রোদ্দুর: আমিও না।

রোদ্দুরের বাবা: আমরা ডিসিশন জানিয়েছি। মত চাইনি!

বলেই উঠে গেলো।

রোদ্দুর ,রোদেলা একসাথে: এ কেমন ধারা বিচার!

নোভা হেসে বললো,”ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক,’ ছল ছল নয়নে,হাসি মাখা বদনে!’,সুন্দর না?”

দুইজন দাত কির মির করে তাকালো!

রোদ্দুর,রোদেলা: একদমই না!

দুইজন দুইজনার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো!তাই দেখে নোভা ফিক করে হেসে দিল!

#চলবে