#রঙতুলির_ক্যানভাস
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_০৩
” পায়চারি করা বন্ধ করবি? ” বিরক্ত সহিত বললো রোদ্দুর।
“তোর কথা শুনতে বাধ্য নই আমি।” দ্বিগুণ বিরক্ত হয়ে বললো রোদেলা।
রোদ্দুর বির বির করে বললো, “ঘাড় ত্যাড়া”
রোদেলাঃ জানি!
নিশাতঃ এত ঝগড়া কেমনে করিস?
তুষার: টম এন্ড জেরি দুটো!
রোদেলাঃ কথা কম বলে ভাব কিভাবে বিয়ে আটকাবি।
নিশাত পায়ের উপর পা তুলে বসে বললো,”আটকানোর কি দরকার?বিয়ে করে নিলেই হয়।”
রোদেলা নিশাতের পায়ে ল্যাং মেরে বললো,”এই উগান্ডার মহারাজকে আমি বিয়ে করবো না।”
রোদ্দুর: আমারও শখ নেই খ্যাপাটে বুড়িকে বিয়ে করার।
রোদেলাঃ কি বললি আমায় ?
রোদ্দুর: যা শুনলি।
রোদেলাঃ খচ্চর ব্যাটা।
রোদ্দুরঃ কি বললি ?
রোদেলা : যা শুনলি ।
নিশাত আর তুষার: ঘাড় ত্যাড়া গুলো!
রোদ্দুর,রোদেলা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো!
রোদ্দুর: পালাতে হবে!
নিশাত: কি!
রোদেলা: হুমম বিয়ের আগেই পালাতে হবে!
রোদ্দুর: এখনও মেলা টাইম আছে!তাই নো টেনশন!বিয়ে ভাঙ্গা কনফার্ম!
নিশাত বাঁকা হেসে ফোন ডিসকানেক্ট করলো। ওপারে নোভা দীর্ঘশ্বাস ফেললো!
নোভা: দেখলে বাবা?
করিম(রোদ্দুরের বাবা) বাঁকা হেসে বললো,”আমাদেরই ছেলেপুলে!কিন্তু ডাবল গেম আমরাও খেলতে জানি!”
বাড়ি ফিরে রোদ্দুর ,রোদেলা অবাকের চরম পর্যায়!পুরো বাড়িটা এমন ভাবে সাজানো যেনো কোনো বিয়ে বাড়ি!বিয়ে শব্দটা মাথায় আসতেই দুইজনের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো!
নোভা: তোরা এসে গেছিস?আয় আয়,তৈরি হয়ে নে!
রোদেলা: এখানে কি হচ্ছে নোভাপি?
নোভা হেসে বললো,”আজ তোদের বিয়ে!”
দুইজন এবার অবাকের শেষ প্রান্তে পৌঁছে বললো,”হোয়াট?”
করিম আর রফিক(রোদেলার বাবা) এর সামনে দাড়িয়ে আছে রোদেলা আর রোদ্দুর!দুইজনের অভিযোগ তারা এই বিয়ে করবে না!
করিম: এটা তোমাদের ফাইনাল ডিসিশন?
দুইজন সম্মতি দিলো!
রফিক: বেশ তাহলে,বাড়ির বাইরে চলে যাও!
দুইজন অবাক হয়ে তাকালো!
রোদ্দুর: মানে কি?
করিম: বিয়ে না করলে সম্পত্তির এক অংশও তোমরা পাবে না!সেই সাথে এই বাড়িও ছাড়তে হবে!বাকিটা তোমাদের ব্যাপার!
বলেই দুইজন বাইরে চলে গেলো!
রোদেলা,রোদ্দুর একসাথে,”এ তো নাইন সাফি হে”
দুইজন এখন নিজেদের রুমে বসে আছে!বিয়েটা আটকানো যাচ্ছে না কিছুতেই!কি করবে ভেবে পাচ্ছে না কেও!
তখনই রোদেলার ঘরে রহিমা এলো!রোদেলা এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো!রহিমা দীর্ঘশ্বাস ফেললো!
রহিমা: জানি এখন তোর মনে হচ্ছে জোর জবরদস্তি করছি!কিন্তু মা রে!তোর মা আকাশের তারা হওয়ার পর তোর বাবার শেষ সম্বল তুই যে!সেই সম্বল টুকু অন্যকে না দিয়ে নিজের কাছে রাখার এই একমাত্র পথ!তুই ছাড়া যে তোর বাবার কিছু নেই!বুঝতে হবে তো!
রোদেলার এতক্ষণে টনক নড়লো!আসলেই তো,বাবার যে ও ছাড়া কেউ নেই!
ওদিকে
রোদ্দুর: তো এইজন্য আমি ই কেনো নোভাপু!!
নোভা: বুঝিস না কেনো?তোর থেকে ভালো কেয়ার কেউ রোদেলার করতে পারবে না।
রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে বললো,”কিভাবে?”
নোভা মুচকি হেসে বলল,”বুঝতে পারবি একটা সময়!”
রোদ্দুর আর কিছুই বললো না।অবশেষে দুইজনের অমতে বিয়েটা হয়েই গেলো।
নিজের রুমে পা রাখতেই রোদ্দুর চমকে উঠলো।
রোদ্দুর: তুই আমার রুমে কি করছিস?
রোদেলা বিরক্তসহিত বলল,”মুড়ি খাই, খাবি?”
রোদ্দুরের একটু পর মনে পড়লো আজ ওর বাসর রাত..
রোদ্দুর: ছি..
রোদেলা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
রোদ্দুর ওর দিকে একবার তাকিয়ে ব’মি করার ভান করলো।
রোদেলা: সমস্যা কি তোর?
রোদ্দুর: তুই আমার বউ ভাবতেই ব’মি পাচ্ছে।
“তুই আমার বউ” শুনে রোদেলার শরীরে অজানা শিহরণ খেলে গেলো।কিন্তু ব’মি পাচ্ছে শুনে মুহূর্তেই খেপে গেলো।
রোদেলা দাত কিরমির করে বললো,”তোর তো শুধু পাচ্ছে,আমি তো করেই ফেলেছি!
রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।
রোদ্দুর: নিয়ম নীতি শিখিস নাই?আয় আমায় সালাম কর!
রোদেলা: পারবো না!
রোদ্দুর: ফা’জিল!
রোদেলা: তুই!
রোদ্দুর: ব’জ্জাত!
রোদেলা: তুই!
রোদ্দুর: জামাই!
রোদেলা: তুই!
বলেই মুখ চেপে ধরলো।রোদ্দুর পেট ধরে হাসতে লাগলো!রোদেলা পাশ থেকে বালিশ ছুড়ে মারলো!
ওদিকে নিচে!
সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছে ভিতরে কি হচ্ছে!কিন্তু বোঝার জো নেই!
নোভা: এই শান্ত পরিবেশ , ঝড় আসার পূর্বাভাস!
করিম: নো চিন্তা,দেখ কি হয়!
দশ সেকেন্ডের মাঝেই রুমে ভাঙচুর শুরু হলো।সবাই অবাক!জলদি করে রুমে গেলো ওরা! যা দেখলো তাতে প্রত্যেকের অবস্থা খারাপ।পুরো রুম বালিশের তুলায় ভর্তি।সেই সাথে এদিক ওদিক নানান রকম ফুল দানির টুকরো!মনে হচ্ছে টর্নেডো এসেছিল!রুমের এক কোনায় রোদেলা আর রোদ্দুর একে অপরের চুল টানছে!
নোভা অসহায় চোখে বাবার দিকে তাকালো!
নোভা: এই তুমি কাদের একসাথে থাকার জন্য বিয়ে দিলে?
করিম কি বলবে?তার মনে এখন প্রশ্ন!ভুল করেনি তো?
রহিমা: তোরা দুইটা করিস কি?
দুইজন সবাইকে দেখে চট জলদি সোজা হয়ে দাঁড়ালো!
রফিক: এসব কি রোদ মা?
রোদেলা: বাবা ও আমায় সোফায় ঘুমাতে বলে?
রোদ্দুর: আঙ্কেল ও আমায় প্রথমে সোফায় ঘুমাতে বলেছে!
রোদেলা: তোর সাথে আমি বিছানা শেয়ার করবো নাকি?
রোদ্দুর: ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন এটা আমার রুম!
রোদেলা: বাবা!
রোদ্দুর: আঙ্কেল!
নোভা: চুপ!বাবারে!কোন বাসর রাত জামাই বউ এমন মারপিট করে?
রোদ্দুর,রোদেলা: জানি না!
নোভা হতাশ হলো!প্রশ্ন করার আগেই এদের উত্তর রেডী থাকে!
__________
ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আছে তুলি,নিশাত!
নিশাত মন খারাপ করে বসে আছে!
তুলি: তোর কি হলো?
নিশাত কাঁদো স্বরে বললো,”নোভা আপু এটা কেমনে করলো?”
তুলি: কোনটা?
নিশাত: বিয়ে হয়ে গেলো ,অথচ বললো ও না!
তুলি: আমাকেও তো বলেনি!
নিশাত: আরে তোর টা আলাদা!আমি তো উনাকে রোদুর প্ল্যান জানালাম!তাইতো ওরা বিয়েটা দিয়ে দিল!কিন্তু আমায় দাওয়াত দিলো না!
রোদেলা: এবার বুঝলাম আসল কাহিনী!
নিশাত টুকুস করে উঠে দাড়ালো!
নিশাত: তুলি পিছনে কে রে?
রোদেলা: তোর য’ম!
নিশাত আস্তে করে নিজের ব্যাগ টা কাঁধে নিলো।
নিশাত: তুলি দোস্ত, চল্লিশায় আসিস আমার,আপাতত জীবন বাঁচানো ফরয!
বলেই দৌড়!
রোদেলা: তোরে আজকে হাতের কাছে পেলে খুন করবো! দাড়া তুই!
রোদেলাও ওর পিছু দিলো দৌড়!
তুলি আর কি করবে? সেও গেলো পিছু পিছু!
তুষার: যেতে যেতে পথে পূর্ণিমা রাতে চাঁদ উঠেছিল গ…
পুরোটা গাইতে পারলো না!তার আগেই ধপাস করে কারো সাথে নিচে পড়ে গেল!
নিশাত: ও মা আমার কোমর!
তুষার: ইউ পটলের বস্তা!এরকম ম্যারাথন দৌড় দৌড়াচ্ছিলে কেনো?
নিশাত: আমি ম্যারাথন দৌড় দেই বা হাতির দৌড় আপনার কি?
তুষার: আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে আমাকেই বলো আমার কি?
নিশাত উঠে দাড়ালো!
নিশাত পিছে ঘুরে দেখলো রোদ এসে গেছে প্রায়!
নিশাত: আপাতত জীবন বাঁচানো ফরয!
বলেই দৌড়!
তুষার উঠে দাড়ালো,কিন্তু আবার স্থায়ী না হতেই আবারও ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলো।
ওদিকে রোদ ধাক্কা খেলেও পড়া থেকে নিজেকে সামলে নিলো!
তুষার কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো,”দুই বান্ধবী মিলে আমার পিন্ডি চটকাচ্ছে কেন?”
রোদেলা: দেখতে তো দেখা যায় সিক্স প্যাক বডি!সামান্য মেয়ের ধাক্কা খেয়েই পরে গেলেন!ছি!
বলে আবারও ছুটলো!
তুষার: এমনে অপমান!
তুষার আবার উঠে দাড়ালো।দেখলো তুলি আসছে!চোখ বন্ধ করে নিল।
তুষার : আবার আরেকখান!
কিন্তু এবার তেমন হলো না,তুলি পাশ দিয়ে চলে গেলো।
তুষার উপস্থিতি না পেয়ে চোখ খুলে দেখলো চলে গেছে তুলি! শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে সামনে এগিয়ে যেতেই কলার খোসায় স্লিপ কেটে পরে গেলো!
এবার উপরে তাকিয়ে বললো,”খোদা,তোমার কাছে বিচার দিলাম!এই অবলা শিশু থুক্কু পুরুষ নির্যাতনের বিচার চাই!”
#চলবে…