#রঙতুলির_ক্যানভাস
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_০৬
“রাস্তার বাচ্চা কই তুই?”
চিল্লিয়ে পুরো বাড়ি মাথায় তুলছে রোদ্দুর!রোদেলা ঘাপটি মেরে বসে আছে স্টোর রুমে।আজ ও রোদ্দুরের ফেভারিট পারফিউম এর বোতল ভেঙ্গে ফেলেছে।তবে ইচ্ছে করে নয়!আচমকা হাত লেগে পরে গেছে।আর বোতলটা ছিল কাচের! হাতে ওড়না পেঁচিয়ে লুকিয়ে আছে। কাচের বোতল এর দফা রফা করতে গিয়েই এই অবস্থা!চেয়েছিল রোদ্দুর জানার আগে সব সাফ করে ফেলতে ।কিন্তু কাচ লেগে হাত কেঁটে গেছে।কাজের কাজ আর হয়তো না ই,সাথে রোদ্দুর ও খেপে যাবে।তাই স্টোর রুম শেষ আশ্রয়।
“কিরে এত চিল্লাচ্ছিস কেনো?”
জিজ্ঞেস করলো নোভা!
“রাস্তা কই?”
“ব’ল’দ রাস্তা কি ঘরে থাকে নাকি বাইরে?”
“আমি ঘরের রাস্তার কথা বলছি”
তখনই চম্পার এন্ট্রি!
“ওমা সাহেব!ঘরে তো টাইলস দেয়া।আমনে রাস্তা কই দেহেন?”
রোদ্দুরের এখন চুল ছিঁড়তে মন চাচ্ছে।
“রোদ কই?”
চম্পা অবুঝ চাহনিতে জিজ্ঞেস করলো,”কোন রোদ?আমনে রোদ নাকি আফামুনী রোদ নাকি সূর্যের রোদ?”
“ময়দা আর্টিস্ট মাথা গরম করাবি না!”
“ওমা,মুই কি আমনের মাথায় আগুন লাগাইছি যে গরম করমু?”
রোদ্দুর এর মাথায় হাত।
“তুই রোদেলা কে খুঁজছিস?”
“হ্যাঁ,আপু কই ও?”
“আফামুনিরে দেহলাম ইস্টোর রুমে যাইতে!”
নোভা বিরক্ত হয়ে বলল ,”ইস্টোর না স্টোর!”
“ওই একই, ইস্টোর”
তখনই রুবি আসলো।
“এই সামান্য উচ্চারণ করতে পারো না। স্ঠোর!”
নোভা ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,”তোমার থেকে চম্পার টাই বেটার!”
“হোয়াট ডু ইউ মিন?”
রোদ্দুর বির বির করে বললো, “এ কোন আজব লোক এ বাড়িতে ভাই!”
“রোদ্দুর তুমি কিছু বলবে না?”
রোদ্দুর ভ্রু কুচকে বললো,”ফার্স্ট অফ অল আমি তোর বড়, সেকেন্ড অফ অল আমাকে নাম ধরে ডাকবি না আর ভাইয়া বলবি!”
বলেই স্টোর রুমের দিকে গেল।রুবি ওখানেই ফুসতে থাকলো।
স্টোর রুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে রোদেলা নিজেকে আরেকটু আলনার পিছে আড়াল করলো।
“আমি জানি তুই এখানে ,দেরি না করে বেরিয়ে আয়।আমি কিছু বলবো না।”
রোদেলা মনে মনে বললো,”ইহ,কিছু বলবে না।না বললে আমায় খুজতি না!”
রোদ্দুর এবার আলনার কাছে যেতেই রোদেলা ওপর পাশ থেকে দৌড়ে বের হয়ে গেলো।যাওয়ার আগে দরজা টেনে দিল।রোদ্দুর ওর পিছু নিতেই দরজায় বারি খেলো। নাক আর কপাল চেপে ধরে বলল,”রাস্তার বাচ্চা!”
রোদ্দুর বেরিয়ে এলো।পুরো বাড়ি খুঁজেও রোদেলাকে পেলো না!নোভা পানি খেতে খেতে বললো ,”নিজের রুমে গিয়ে আগে খোঁজ!সব খুজলি অথচ নিজের রুম ই দেখলি না!”
রোদ্দুর যা বুঝার বুঝে গেলো।এক দৌড়ে নিজের রুমে গেলো। কাবার্ড এর ভিতরে বসে চিপস খাচ্ছে ।ভিতরে ঢুকার আগে নিয়ে এসেছিলো। কাবার্ড কেও খুলছে বুঝতে পেরে দু হাতে মুখ ঢাকলো ও।
“তোরে আমি…”
আর কিছু বলার আগেই রোদেলা বললো,”আমি ইচ্ছে করে করিনি,ওটা আপনা আপনি ই হয়ে গেছে!”
রোদ্দুর কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে ওকে কোলে তুলে নিলো।রোদ এখনও চোখ মুখ দু হাতে ঢেকে রেখেছে।রোদ্দুর ওকে খাটের উপর বসিয়ে ড্রয়ার থেকে ওষুধ আর ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ নিলো।রোদেলার কাছে বসে ওর হাত টেনে নিলো।ওড়নার প্যাচ খুলে আঙুলে মেডিসিন আর ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিল।
রোদেলা এতক্ষণ ভ্রু কুচকে সবটা দেখছিল।
“নিজের খেয়াল কবে রাখতে শিখবি?হাত কেটেছে, মেডিসিন না নিয়ে তুই লুকিয়ে বেড়াচ্ছিস! কাচের টুকরায় র’ক্ত না দেখলে তো এটা নিয়েই ঘুরতি!”
রোদেলা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,”এই জন্য খুঁজছিলি আমায়?”
“তোর মত কি’পটা না আমি,যে সামান্য পারফিউম নিয়ে ঝগড়া লাগবো!নিজের খেয়াল রাখতে শিখ!”
রোদেলা মুচকি হেসে হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,”তুই আছিস তো,তুই থাকতে আমি কেনো নিজের খেয়াল রাখবো!”
ওষুধ ড্রয়ারে রাখতে গিয়ে রোদেলার কথা শুনে থমকে দাড়ালো ও।
“আমি সবসময় থাকবো না তোর সাথে রোদ!”
হাসি মিলিয়ে গেলো রোদেলার!হুট করেই বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলো ও।কারণ কি রোদ্দুরের না থাকা?
রোদ্দুর বেরিয়ে গেলো। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ওর।নিজেরও কেমন একটা লাগছে ওই কথা বলার পর।
দুটি মানুষ,একই অনুভূতি!কিন্তু বুঝতে পারছে না কিছুই!
“রোদ্দুর!”
নোভার ডাকে ঘুরে দাড়ালো ওর দিকে!হেসে বললো,”কিছু বলবে আপু?”
নোভা মিষ্টি হেসে বললো,”রোদ কে খুব ভালোবাসিস তাই না?”
আবারো থমকে গেলো ও।মেকি হাসি দিয়ে বললো,”হটাৎ এই প্রশ্ন!”
নোভা হেসে বললো,”তোদের বিয়েটা ছোট থেকেই ঠিক করা!আমি তো আরিফিন দেশে ফিরে আসলে বিয়ে করবো।তোদের এক করার কারণ হলো,তোরা একে অপরের প্রতি যতটা কেয়ারিং অন্য কেউ ততটা হবে না।ঝগড়া করলেও,তোদের অজান্তেই তোরা একে অপরকে ভালোবেসে যাচ্ছিস! হ্যাঁ,এখনও!একটা সময় ঠিক উপলব্ধি করবি!”.
নিজের রুমে কাপড় ভাঁজ করছিল রোদেলা।
“ভাও!”
“বিরক্ত করবি না নিশাত!”
“কথা বলবি না আমার সাথে?”
রোদেলা ওর দিকে ঘুরল।তুলি আর নিশাত তাকিয়ে আছে।এখানে আসার মূল কারণ রোদ এর খোঁজ নেয়া!
“জীবনটা অদ্ভুত!কোনো কিছু না চেয়ে করে পেয়ে গেয়ে আবার নিজের দোষে হারাচ্ছি!”
নিশাত তুলি কিছুই বুঝলো না।কিছু বলতে নিবে তার আগেই রোদেলার ফুফাতো ভাই ঋদ্ধ হাজির।
“মে আই কাম ইন!”
রোদেলা ভ্রু কুঁচকে বললো,”ইংরেজি কু’ত্তা হটাৎ এই বাড়িতে?”
ঋদ্ধ রোদের রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,”আমার মামার বাড়ি,যখন খুশি আসবো!”
নিশাত দাত কেলিয়ে বললো,”কেমন আছেন ঋদ্ধ ভাইয়া!”
“আমি তো অলওয়েজ বিন্দাস!তোমাদের কি খবর?মিস তুলি!”
তুলি আড় চোখে তাকিয়ে বললো,”ভালো!”
নিশাত আরো দাত কেলিয়ে বললো,”আপনি এসে গেছেন,তো আরো ভালো থাকবে!”
তুলি ওর পায়ে পাড়া দিলো।
“মারিস কেনো?”
“এই তুই বের হ তো আমার রুম থেকে,মেয়েদের সাথে তোর কি?ভাগ!”
“ওই এটা রোদ্দুরের রুম!”
“আমি ওর বউ!”
“ইয়ার্কির আর জায়গা পাস না!”
“তোর বোন রুবি বললে তো বিশ্বাস করবি?”
ঋদ্ধ এবার নড়ে চড়ে বসলো।
“সিরিয়াসলি বলছিস?”
“জি স্যার!”
নিশাত মাঝ থেকে বলে উঠলো,”হাফ ক্রেডিট আমার!”
রোদেলা রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।চুপসে গেল ও।
তখনই নিচে চিল্লা চিল্লি শুনা গেল।সবাই নিচে গেলো।
“আমার ভাইজান রা আমায় পর করে দিছে রে।বিয়ে হয়ে গেলো,অথচ জানালো ও না।”বলেই মরা কান্না জুড়লেন কাকলী ফুফি!
“আহ..তুই তো জানতিস ওদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।”
“তাই বলে এভাবে হুট করে বিয়ে?”
সবাই অনেক বলে কয়ে উনাকে বুঝালো।
________
রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে রোদেলা।তখনই নোভা এলো।
“রোদ!”
“বলো!”
“কি হয়েছে তোর?”
“কিছু না তো!”
“ইদানিং কেমন একটা হয়ে থাকিস!”
রোদেলা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
“জানি না আপু,হুট করেই মন খারাপ হয়ে যায়।কেনো হয় কার জন্য হয় কিছুই বুঝে উঠতে পারি না।”
“বুঝলাম,তোদের সম্পর্ক কি স্বাভাবিক হয়েছে!”
“স্বাভাবিক ই আছে আপু তবে আগের মতই!”
“এখনও মেনে নিতে পারিস নাই ওকে?”
“সময় চাই আমার আপু!নিজেকে বুঝতে চাই!”
“বেশ,খেতে আয়!”
রোদেলা সম্মতি জানিয়ে নিচে চললো।
খাবার টেবিলে রোদেলা বসতেই রোদ্দুর ওর প্লেট নিয়ে খাওয়ানো শুরু করলো। রোদেলাও কিছু বললো না।যেহেতু ওর হাত কাঁটা!
কাকলি মাঝে জ্বলে উঠে বললো,”এভাবে রঙ তামাশা করে বউকে সবার সামনে খাওয়াতে লজ্জা করে না তো রোদ্দুর?”
রোদেলা মাথা নিচু করে রইলো।ছোট থেকেই ফুফি আর রুবি ওকে একদম দেখতে পারে না।।
“প্রথমত আমি কোনো রঙ তামাশা করছি না।দ্বিতীয়ত রোদ কে আমি আগেও খাইয়ে দিয়েছি।আর ফাইনালি ও আমার বউ হওয়ার আগে আমার ফ্রেন্ড হয়।এটা মাথায় রাখবে।এবার আমাদের দিকে না তাকিয়ে খাও তুমি।নাহলে আমাদের পেট ব্যাথা করবে।”বলেই ডোন্ট কেয়ার ভাবে রোদেলা কে খাইয়ে দিল।
রোদেলা মুচকি হাসলো!
#চলবে