রৌদ্র দ্বীপের রুদ্রাণী পর্ব-৪০ এবং শেষ পর্ব

0
819

#রৌদ্র_দ্বীপের_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৪০(অন্তিম পর্ব)
#Saiyara_Hossain_Kayanat

বউ সাজে আরশিকে সিড়ি দিয়ে নামতে দেখেই রৌদ্র থমকে গেল। কয়েক মুহুর্তের জন্য আশেপাশের সব কিছুই যেন স্থির হয়ে গেল। তার হার্টবিটও মনে হচ্ছে কয়েকটা মিস হয়ে গেছে। চোখের পলক ফেলছে বলেও মনে হচ্ছে না। আরশিকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসতেই রৌদ্র সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। কেন যেন তার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। হয়তো তার রুদ্রাণীকে বউ সাজে দেখে অথবা তার ভালোবাসার পূর্নতা পাওয়ার আনন্দে। আরশিকে রৌদ্রর পাশে বসিয়ে নীলা নির্বানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে রইলো। রৌদ্র বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলিয়ে নেয়। নিঃশব্দে আরশির পাশে বসলো। বেশ কিছুক্ষন পর কাজি সাহেব আরশিকে কবুল বলতে বলে। ঠিক তখনই আরশির বুকটা ধক করে কেঁপে উঠল। অজানা কারনেই ভীষণ ভয় পেতে লাগলো। মেহেদী রাঙানো হাত দুটো অনবরত কচলাতে শুরু করলো মাথা নিচু করে। উপস্থিত সবাই তাড়া দিচ্ছে কবুল বলার জন্য। যেন যত দ্রুত কবুল শুনতে পারলেই বাঁচে। ধ্রুব খানিকটা বিরক্ত হলো। কবুল বলা কোনো তুচ্ছ বিষয় তো নয় যে হুটহাট করেই বলে ফেলবে। মেয়েদের জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা মুহুর্ত এটা। তাহলে এত তাড়াহুড়ো কেন করতে হবে!! ধ্রুব সকলের উদ্দেশ্যে শান্ত গলায় বলল-

“সবাই এভাবে তাড়া দিতে থাকলে আদ্রলিকা আরও নার্ভাস হয়ে পরবে। কবুল বলা কোনো সামান্য বিষয় না যে হুট করেই বলে দিবে। তার নিজেরও কিছুটা সময়ের প্রয়োজন নিজেকে সামলিয়ে নেওয়ার জন্য।”

ধ্রুবর কথায় সবাই শান্ত হয়ে গেল। রৌদ্র আরশির হাতের দিকে তাকিয়ে আছে পলকহীনভাবে। আরশির হাত কচলানো কিছুটা কমেছে। ধ্রুব আরশির কাধে হাত রেখে নরম গলায় বলল-

“আদ্রলিকা কবুল বলে দে। সবাই অপেক্ষা করছে তো।”

আরশি মাথা উঁচু করে ধ্রুবর দিকে একঝলক তাকালো। ধ্রুব চোখের ইশারায় আরশিকে আশ্বস্ত করলো। আরশি তার দৃষ্টি সরিয়ে রৌদ্র দিকে স্থির করলো। মিহি কন্ঠে পর পর তিনবার কবুল বলেই পাশে থাকা মানুষটার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিলো সারাজীবনের জন্য। অদ্ভুত এক মুহুর্ত আর অদ্ভুত এক শব্দ। ছোট একটা শব্দেই যেন পুরো জীবন বদলে যাচ্ছে। কাছের মানুষ গুলো থেকে দূরে যাচ্ছে আর ভালোবাসা মানুষের খুব কাছে এসে পরছে এই তিন অক্ষরের শব্দে।

———————————

বিদায় বেলা আরশি তার বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কেঁদে উঠলো। বাচ্চাদের মতো হিচকি তুলতে কান্না করছে। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে সবার। বেশ কিছুক্ষন পর আদিব হাসান তার মেয়েকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আরশির চোখের পানি মুছে দিয়ে আদুরে গলায় বললেন-

“কান্না করে না আম্মু। আমাদের সাথে তো দেখা হবেই। বেশি দূরে যাবে না তো এই তো দশ মিনিটের দূরত্ব। যখন ইচ্ছে হবে আমাদের কাছে এসে পরবে।”

আরশি তার বাবার গাল মুছে দিতে দিতে কান্না জড়িত গলায় বলল-

“তুমিও তো কান্না করছো আব্বু।”

আরশি এবার তার বন্ধুদের দিকে এগিয়ে গেল। সবাই এক সাথে মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে। সবার মুখে বিষন্নতার ছায়া। আরশি কাছে আসতেই সবাই এক সাথে তাকে জড়িয়ে ধরলো। নীল দূরে সরে দাঁড়ালো। সিক্ত চোখে আরশির দিকে চেয়ে নাক ছিটকে বলল-

“শুধু শুধু ভ্যা ভ্যা করে আমাদের মুড নষ্ট করিস না তো। কলেজে তো প্রতিদিন প্রতিদিন দেখা হবেই তাহলে এতো কান্নাকাটির কি দরকার অদ্ভুত!! কতগুলো টাকা নষ্ট করে তোর মেকআপ করিয়েছে হিসেব আছে!!”

আরশি সবাইকে ছেড়ে দিয়ে হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়। কন্ঠে কৃত্রিম রাগ নিয়ে বলল-

“হারামি আজকেও আমার সাথে এমন করবি!!”

রৌদ্রর পাশ থেকে নির্বান ক্লান্ত গলায় বলল-

“ভাবি আর কত কান্নাকাটি করবে? চল এবার। তোমার কান্না দেখে আমারও কান্না করতে ইচ্ছে করছে।”

আরশিকে গাড়িতে বসার জন্য তাড়া দিচ্ছে সবাই। কিন্তু আরশি অস্থির চোখে বার বার আশেপাশে তাকাচ্ছে। চাতক পাখির মতো কিছু খুঁজে যাচ্ছে। নীলের দিকে চেয়ে মলিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করল-

“ধ্রুব কই? আর ভাইয়া! কোথায় ওরা?”

নীলসহ উপস্থিত সবাই আশেপাশে তাকালো কিন্তু ধ্রুব আর শাকিলকে দেখতে পেল না। আরশি খানিকটা জোরে ডাকলো-

“ধ্রুব! ভাইয়া…”

কারও কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। আরশি ধ্রুবকে ডাকতে ডাকতে সবাইকে রেখেই গেইটের ভেতরে যাচ্ছে। তখনই গেইটের এক পাশে শাকিল আর ধ্রুবকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। আরশি তাদের সামনে এসে ক্ষীণ গলায় জিজ্ঞেস করল-

“এখানে কি করছিস তোরা! আমার সঙ্গে দেখা করবি না! বিদায় দিবি না আমাকে?”

শাকিল মাথা তুলে তাকালো আরশির দিকে। কোনো জবাব না দিয়ে নিঃশব্দে দু’হাত ছড়িয়ে দিল। কখনো তার বোনটাকে বলা হয়নি কতটা ভালোবাসে৷ কখনো ভালোবেসে বুকে জড়িয়ে ধরা হয়নি। কিন্তু আজ যখন চলে যাচ্ছে তখনই তার বুকটা হাহাকার করে উঠলো একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য। একবার মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা বলার জন্য অস্থির হয়ে উঠলো তার মন। আরশি শাকিলকে জড়িয়ে ধরেই চোখের পানি ছেড়ে দিলো। শাকিল এই প্রথম পরম যত্নে জড়িয়ে ধরলো তার ভালোবাসার আদুরে বোনটকে। আরশির মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে জড়ানো কন্ঠে বললো-

“কখনো তোর সাথে ভালো করে কথা বলিনি। কখনো ভালো ব্যবহার করিনি। সব সময় শুধু ঝগড়া-ই করে গেছি। কিন্তু দু’দিন ধরে মনে হচ্ছে তোর সাথে ঝগড়া করার অভ্যাসটা না করলেই বোধহয় ভালো হতো। তুই চলে গেলে আমি কার সাথে ঝগড়া করবো আরু! কাকে বিনাকারণেই রাগাবো! তোর রাগী মুখটা না দেখে আমি থাকবো কি করে! তোর মুখে হারামি বকা না শুনে আমার দিন শুরু হবে কিভাবে আরু! কখনও বলিনি আমি তোকে কতটা ভালোবাসি কিন্তু আজ খুব বলতে ইচ্ছে করছে। আমি তোকে খুব ভালোবাসি আরু।”

শাকিল কথা গুলো বলেই আরশির মাথায় চুমু দিলো। আরশির কান্নার বেগ এবার আরও বেড়ে গেল। শাকিলের পাঞ্জাবির বুকের দিকটা ভিজে যাচ্ছে তার চোখের চোখের পানিতে। আরশি শাকিলকে ছেড়ে দিয়ে ধ্রুবর সামনে এসে দাঁড়ালো। ধ্রুবর কোনো কথা বলছে না। আরশি অভিমানী কন্ঠে বললো-

“আজকে আদর করবি না তোর বাচ্চাকে! তোর আদ্রলিকা চলে যাচ্ছে তুই চুপ করে থাকবি!”

ধ্রুব নির্মল হেসে দু-হাত ছড়িয়ে দিলো। সাথে সাথেই আরশি ধ্রুবর বুকে আছড়ে পরলো। একদম ছোট বাচ্চাদের হিচকি তুলে তুলে কান্না করছে। ধ্রুব আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল-

“কান্না করিস না মাথা ব্যথা করবে। আমরা তো আছি। প্রতিদিন দেখা করবো তোর সাথে। নিয়মিত তোকে আইসক্রিম কিনে দিবো প্রমিজ। একদম কান্নাকাটি করবি না। রৌদ্র ভাই তোকে খুব ভালোবাসে। তোকে অনেক ভালো রাখবে তাই কান্নাকাটি না করে হাসি মুখে ওনার সাথে যা।”

আরশি কান্না থামার কোনো লক্ষন দেখা গেল না। এক প্রকার জোর করেই আরশিকে রৌদ্রর পাশে গাড়িরে বসিয়ে দেওয়া হলো। আরশি ধ্রুব আর শাকিলের হাত ধরে বাচ্চাদের মতো অনুরোধ করে বলল-

“আমাকে ভুলে যাবি না তো!”

ধ্রুব আর শাকিল কোনো কথা না বলে আরশির কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার সাথে সাথেই গাড়ি ছেড়ে দিল। ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে চিরচেনা মানুষ গুলোর কাছ থেকে দূরে।

“আরু তোমাকে তো একবারের জন্য নিয়ে যাচ্ছি না। তুমি যখন ইচ্ছে তাদের সাথে দেখা করবে, কথা বলবে আমি তো বাধা দিবো না। তবুও কেন কান্না করছো বল তো!”

আরশি এখনো কান্না করছে। রৌদ্র তপ্ত শ্বাস ফেলে। টিস্যু দিয়ে আরশির চোখের পানি মুছে দিয়ে আরশিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। নরম গলায় বললো-

“আচ্ছা যত ইচ্ছে কান্না করো কিন্তু আজকের পর আর কখনো কান্না করতে পারবে না।”

——————————

সকালে আরশির ঘুম ভাঙলো পাখির চেচামেচির শব্দে। আড়মোড়া ভেঙে আরশি ঘুম জড়ানো চোখে আসেপাশে তাকালো। নতুন রুম আর নতুন জায়গায় দেখেই খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। পুরো রুম সরু চোখে দেখতে লাগলো। দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় আরশির পেন্টিং ঝুলানো। রুমের কোথাও রৌদ্রকে দেখাচ্ছে না। আরশি বিছানা থেকে উঠে ধীর পায়ে বারান্দার দিকে আসলো। পাখির শব্দ এখান থেকেই আসছে। খুব বড়সড় একটা বারান্দা। বেশ কিছু ফুলের গাছ লাগানো। আর এক পাশে দুটো খাঁচা ঝুলিয়ে রাখা। একটার মধ্যে দুটো লাভবার্ড আর অন্যটায় দুটো ময়না পাখি। আরশি ময়না পাখির খাঁচায় রাখতেই পাখিগুলো অস্পষ্ট স্বরে চেচিয়ে উঠলো ‘ভালোবাসি রুদ্রাণী’ আরশি চমকে কয়েক পা পিছিয়ে গেল। কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পেছন ফিরে তাকাতে নিলেই রৌদ্র আরশিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আরশির কানের কাছে মুখ এনে রৌদ্র ফিসফিস করে বলল-

“এতক্ষণে ঘুম ভেঙেছে আপনার মিসেস আরু? গাড়ির মধ্যে কান্নাকাটি করে বেশ আরামের ঘুমি-ই তো দিয়েছিলেন। সেই সাথে আমার বাসর রাতেও এক বালতি পানি দিয়েছেন। সকালে রুমের বাহিরে যাওয়ার পর থেকেই নির্বান আমাকে পঁচাচ্ছে। আমি কত করে বললাম তোর ক্রাশ ভাবি আমার বাসরে বাঁশ দিয়ে সারারাত ঘুমিয়ে কাটিয়েছে অথচ নির্বান আমার কোনো কথাই বিশ্বাস করলো না। ও তো ভেবেই নিয়েছে আমি সারারাত তোমার সঙ্গে রোমান্স করেই কাটিয়েছি।”

রৌদ্রর লাগামহীন কথায় আরশি রেগে যায়। চোখেমুখে ভয়ংকর বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে। আরশি রৌদ্রর পেটে কনুই দিয়ে গুতা মা’রে। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল-

“ছাড়ুন আমাকে। সকাল সকাল অসভ্যের মতো এসব কি লাগামহীন কথা বলছেন? লজ্জা করে না এসব বলতে! মুখে কি কিছু আটকায় না?”

রৌদ্র আরশিকে তার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সন্দিহান কন্ঠে বললো-

“অসভ্য হলেও তোমার আর লাগামহীন নির্লজ্জ হলেও তোমার-ই।”

আরশি হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে ক্লান্ত গলায় বলল-

“পাখিগুলোর কথা তো আমাকে আগে বলেননি! আর কত কি লুকিয়ে রেখেছেন বলুন তো!”

“এটা তো সারপ্রাইজ দিবো ভেবে তোমাকে বলিনি। আর কিছু লুকিয়েছি বলে মনে পরছে না। আর তুমি তো এসেই পরেছো এখন যা যা জানার তুমি নিজেই জেনে নিও।”

“আচ্ছা সরুন আমি ফ্রেশ হতে যাবো।”

আরশি রৌদ্রকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই রৌদ্র আরশির হাত ধরে ফেলে। আরশি পেছন ফিরে রৌদ্রর দিকে তাকানোর সাথে সাথেই রৌদ্র ঝড়ের বেগে আরশির ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলল-

“ভালোবাসি রুদ্রাণী। আমি স্বার্থক। অবশেষে তোমাকে নিজের করে পেলাম।”

রৌদ্র রুমে চলে গেল। আরশি এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। রৌদ্র করা কাজে আরশি স্তম্ভিত হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগের কথা ভেবেই তার দম আটকে আসছে। লজ্জায় আরশির গাল দুটো লাল হয়ে যাচ্ছে।

“লজ্জা না পেয়ে রুমে আসো। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও।”

রৌদ্র কথায় যেন আরশির লজ্জার পরিমান আরও বেড়ে গেল। রুমে এসে দেখে রৌদ্র বিছানায় বসে বেশ মনোযোগ দিয়ে ফোন টিপছে। আরশি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলো। “ভালোবাসি রোদ।” বলেই দ্রুত ওয়াশরুমে চলে যায়। রৌদ্র বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে ওয়াশরুমের দরজার দিকে। আরশির মুখে ভালোবাসি রোদ শুনলেই তার হুশ হারিয়ে যায়। মেয়েটা ঠিক মতই তাকে বশ করার পদ্ধতি জেনে গেছে। আস্ত এক বাঘিনী।

———————

ধ্রুব লাইব্রেরির ঠিক সেই টেবিলটায় বসে আছে যে টেবিলটার সাথে জড়িয়ে আছে আরশির সকল স্মৃতি। হুমায়ূন আহমেদের ‘দারুচিনির দ্বীপ’ বইটা আলতো হাতে ছুঁয়ে দিচ্ছে। কত হাসিঠাট্টা আর মন খারাপের স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই লাইব্রেরিতে৷ ধ্রুবর হাত ধরেই আরশি এসেছিল এই লাইব্রেরিতে। প্রথম প্রথম ধ্রুবর পড়ায় ডিস্টার্ব করা ছিল আরশির কাজ। তারপর ধীরে ধীরে গল্প উপন্যাসের বইয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিল। এই লাইব্রেরির মাধ্যমেই যে আরশি তার জীবনসঙ্গী খুঁজে পাবে তা কি ধ্রুব বুঝতে পেরেছিল কখনো!! আরশির কথা মনে পরতেই ধ্রুবর বুক মরুভূমির মতো খাঁ খাঁ করে উঠলো। আদ্রলিকা হীন জীবন যেন মরুভূমি মতোই রুক্ষ, প্রানহীন হয়ে উঠেছে গত দুদিন ধরে। মেসেজের শব্দে ধ্রুব তার ঝাপসা দৃষ্টি রাখলো ফোনের দিকে। চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিয়ে আবারও তাকালো। আরশির মেসেজ দেখেই একটা মলিন হাসি দিলো। ইনবক্স ওপেন করতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো বড় একটা মেসেজ আর একটা বিড়ালের ছবি।

“ধ্রুব দেখ বিড়ালটা কি কিউট। আমি ভাবিছিলাম তোকে এই বিড়ালটা কিনে দিবো। আমি তো এখন আর তোর সাথে নেই তাই তোর মন খারাপ ভেবে এটা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেন যেন বিড়ালটা দিতে ইচ্ছে করছে না৷ তুই যদি আবার বিড়াল পেয়ে আমাকে ভুলে যাস তখন কি হবে? আমার থেকে যদি বিড়ালটাকে বেশি ভালোবাসিস তখন তো আমার হিংসা লাগবে। তাই মনে হলো বিড়ালটা আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে। আর আমি নিজের ইচ্ছায় খাল কেটে বিড়াল আনতে চাই না। আচ্ছা যাইহোক কাসফির বাসায় ঠিক সময় এসে পরিস আমি অপেক্ষা করবো। আজকেই হয়তো কাজি দিয়ে বিয়ে পরিয়ে ফেলবে। আমার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। কাল আদ্রাফের কাছ থেকে ট্রিট নিতে হবে মনে রাখিস।”

ধ্রুব হাসলো। মনে মনে বলল- “তুই কখনোই বড় হবি না আদ্রলিকা। এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলি।” ধ্রুব তৃপ্তির হাসি দিয়ে আরশিকে মেসেজ দিল-

“আমার আদ্রলিকা একটা-ই সেটা হলি তুই। তোর জায়গায় সব সময় তোরই থাকবে। তোর ভালোবাসার ভাগ অন্য কোনো বিড়াল কিংবা মানুষ কেউ-ই পাবে না বাচ্চা।”

আচমকাই তীর্যক রশ্মি এসে ধ্রুবর চোখে পরলো। ধ্রুব কপাল কুচকে সামনের টেবিলে তাকালো। নীল রঙের কলেজ ড্রেস পরা এক মেয়ে বসে আছে। জানালা বেধ করে আসা একফালি মিষ্টি রোদ মেয়েটার মুখে আছড়ে পরেছে। ঠোঁটের উপরের ছোট তিলটা-ও যেন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মেয়েটা বেশ মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে। হাতের ঘড়িতে সূর্যের আলো পরায় সেখানে থেকেই তীব্র আলো ধ্রুবর চোখে এসে লাগছে। ধ্রুব অদ্ভুত গলায় ডাকল মেয়েটাকে-

“এক্সকিউজ মি সানসাইন।”

মেয়েটা বই থেকে দৃষ্টি তুলে সরু চোখে তাকালো তার দিকে। সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-

“কি বললেন?”

“Sunshine…”

মেয়েটা তীক্ষ্ণ গলায় বলল-

“আমি অনন্যা। সানসাইন না।”

ধ্রুব বাঁকা হেসে নরম গলায় বলল-

“সে যাইহোক তোমার নাম৷ কিন্তু তোমার থেকে তীর্যক রশ্মি এসে আমার উপর পরছে।”

মেয়েটা ভ্রু জোড়া ঈষৎ উঁচু করে ক্ষীণ গলায় বলে,

“তো!!”

ধ্রুব তার বাঁকা দাঁত বের করে হাসলো। ফোন পকেটে রেখে সামনের টেবিলের দিকে এসে শীতল কন্ঠে ধীরে ধীরে বলল-

“তো…. You are my Sunshine.”

~সমাপ্ত🌻