শখের সাদা শাড়ি পর্ব-০৯+১০

0
246

#শখের সাদা শাড়ি
#ফাতেমা তুজ
#পর্ব-০৯+১০

৯.
মেঘনার প্রেগন্যান্সির সাত মাস পেরোলে। মাঝে চলে গেছে তিন টে মাস। উর্মি ভেবে পায় না সময় এতো দ্রুত কেন যায়! নিজ কর্ম কে আরও জোড়ালো করতে হবে না হলে সময় চলে যাবে অথচ কাজের কাজ কিছুই হবে না। চার দিক সামলাতে প্রথম প্রথম বেগ পেতে হলে ও এখন স্বাভাবিক লাগে। সৌমেন কে দেখে বিশেষ শক্তি পায় উর্মি। মানুষ টার কাজের গতি দেখলে হিংসে ও হয়। কোম্পানির কাজে বান্দরবান যাবে সকলে। এক সপ্তাহের কাজ। আগে শেষ হলে ঘুরাঘুরিও হবে। ব্যাগ প্যাক করছে মেঘনা। উর্মি উদাস ভঙ্গিতে চেয়ে আছে। বড্ড চিন্তা হয় মেঘনার জন্য। তবে মেঘনা শক্তিশালী। ইদানিং তাকে দেখলে মনেই হয় না রোজ রাতে স্বামীর জন্য লুকিয়ে চোখের জল ফেলে। হাসে উর্মি। বোন কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
” বাচ্চামো শুরু হয়ে গেল? ”

” মাত্র ই তো শুরু করলাম রে আপা। এই যে পেটের ভেতর পুচকে পাখি টা ঘুমিয়ে আছে এটা বের হোক তখন দেখবি দুজন মিলে কি বাদরামো করি। অন্তু কে ও সাথে নিবো। ”

” হয়েছে, এবার সরেন ম্যাডাম। কাপড় গুলো গুছিয়ে দেই। ”

” তুই সর আমি করে নিচ্ছি। ”

মেঘনা সরেই যাচ্ছিলো ওমনি করে ফোন টা বেজে উঠলো। সমীর কল করেছে এই অসময়ে। মেঘনা তীঘ্ন দৃষ্টি তে দেখে। একটু পর ই হেসে দেয়।
” লজ্জা পাওয়ার দরকার নেই,কথা বল। ”

” না রে আপা। তেমন কিছু না। ”

” আমি কি বলেছি তেমন কিছু? ”

ধরা পরে যায় উর্মি। নিজেকে বাঁচানোর বৃথা চেষ্টা করে না আর। মেঘনা হেসে বলে–
” ফিরে আয় তারপর সব টা শুনবো কিন্তু। ”

লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসে উর্মি। মনে মনে বলে কি বলবো তোকে, গাঁধা টা তিন মাসে ও পারলো না ভালোবাসি বলতে। কল কেঁটে যাওয়া তে কল ব্যাক করলো উর্মি।
” উর্মি কখন আসবে? ”

” এই তো হয়েই গেছে। ”

” সেই কখন থেকে আমি অপেক্ষা করছি। এবার কিন্তু সত্যিই লেট হচ্ছে। ”

” আসছি বাবা। ”

” হুম আসো। আর সাবধানে এসো। ”

” আচ্ছা রাখছি এখন। ”

কল কেঁটে মুঠোফোন বুকে চেপে রাখে উর্মি। এই তিন মাসে বহু কাজ এক সাথে করা হয়েছে। সেই জন্য বন্ধুত্ব গড়েছে। তবে ভালোবাসা টা অব্যক্ত। উর্মি মনে মনে স্থির করে এই ছেলে ভালোবাসার কথা জানান না দিলে ও উর্মি জানিয়ে দিবে স্বীয় মনের অনুভূতির কথা।

উঁচু পেট টায় হাত বুলায় উর্মি। মেঘনার চোখ হাসে। এই ছোট বোন টা আছে বলেই কি না আজ বেঁচে আছে। না হলেই সেই কবেই শিয়াল কুকুরে টেনে হিচড়ে নিতো। অন্তু পেছন পেছন আসে। উর্মি একটু ঝুঁকে ছেলেটার কপালে চুমু আঁকে। অন্তু ও একি কাজ করে।
” আমার সোনা বাবা। বড় ফুপি কে দেখে রাখবি কেমন? ”

” ঠিক আছে ফুপি। তুমি কিন্তু সাবধানে যাবে। ”

” যাবো বাবা। আর তোর জন্য গিফট ও নিয়ে আসবো এবার। ”

” ওকে আমি এখন যাই। ”

অন্তু চলে যায়। তুলি আঁচল মুরিয়ে বের হয়। সচরাচর শাড়ি পরে না সে। তাই একটু অবাক হয় উর্মি।
” কোথাও যাবে ছোট ভাবি? ”

” হুম ঘুরতে যাচ্ছি। ”

” ছোট ভাইয়া ও যাচ্ছে? ”

” অবশ্যই। সে না গেলে আমি একা যাবো নাকি? ”

” না এমনিই বললাম। ”

ইদানিং তুলির ব্যবহার ভালো ঠেকছে না। উর্মির সাথে ও কেমন যেন ব্যবহার করে। উর্মি চুপচাপ বের হয়। বড় ভাবি, তুলির যাওয়ার পর থেকেই বকবক শুরু করে দিয়েছেন। দুজনে একে অপরের পুরনো শত্রু। কেউ কাউ কে এক চুল ও ছাড়বে না। অথচ দিন শেষে এরা একি সংসারে। তুলি যে সংসার ভাগের চিন্তায় বুদ হয়ে গেছে তা আরও দু মাস আগেই বুঝেছে উর্মি। না হলে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কেউ ঝগড়া করে?

বুকের মাঝ খানে সানগ্লাস রেখে বেশ এক ভাব ধরেছে সমীর। উর্মি পাশে এসে বসলো। সমীর লুকিং গ্লাস টা ঘুরিয়ে দিয়ে বলে–
” বড্ড লেট করে ফেললে। ”

” সব সামাল দিতে হয়। ”

” তা ও ঠিক। চলো তাহলে যাত্রা শুরু করি। ”

” সৌমেন স্যার ফোন করেছিল? ”

” হুম। তুমি আরেকবার কথা বলে দেখো। ”

” আচ্ছা। ”

সৌমেন কে কল করে কথা বলে উর্মি। আর তারপর কল করে মেঘনা কে। সে জানিয়ে দেয় গাড়ি তে উঠে গেছে। নিশ্চিত হয় মেঘনা। বোন টা তার খুব বড় নয়। সবে তেইশ এ পা রেখেছে। এর ই মাঝে অনেক পরিশ্রম করলো। শেষ টা যেনো ভালো হয় সেটাই চায় মেঘনা।

গাড়ি চলছে। উর্মি বললো গ্লাস খুলে দিতে। সমীর তাই করলো। কোমর সমান চুল গুলো খুলে দিলো উর্মি। ভালো লাগে এভাবে। সমীর অবশ্য হাসলো।সে ভেবেছে কোনো ভাবে উর্মি জেনে গেছে মেয়েটির খোলা চুলে সমীরের এক রাশ দূর্বলতা। গাড়ির স্ট্রেয়ারিং এ হাত রেখে আড়চোখে তাকায়। তৎক্ষণাৎ উর্মি ঘুরে যায় যার ফলে চোখাচোখি হয়। দুজনেই বেশ লজ্জা পায়। সমীর এর দম বন্ধ হয়ে আসে। পুরুষ মানুষ হয়ে ও কেমন যেন লজ্জা পাচ্ছে! প্রেমের অনুভূতি এমন হয় বুঝি? এর আগে ও দুটো প্রেম করেছে সমীর। একটা কলেজ লাইফ এ আর একটা ভারসিটির শেষ বর্ষে এসে। তখন তো এমন লাগে নি। তাহলে সেগুলো কি ছিলো? শুধুই কি সময় কাটানোর চেষ্টা। ঘেমে উঠলো সমীর। অসুস্থ লাগছে। উর্মি তাকায় নি এ দিকে। ঝটপট গাড়ি থামায়। উর্মি বলল
” কি হলো? ”

” একটু চোখ মুখে পানি দিয়ে আসি। ঘুমে চোখ টা জড়িয়ে আসছে। ”

” আচ্ছা। ”

বোতল ভর্তি পানি। সেটা মুহুর্তেই খালি করে ফেললো। এবার সব টা ঠিক লাগছে। হালকা গলা ভিজিয়ে নেয়। মেয়েটির নজরে ধরা পরা যাবে না। এতে করে আড়ালে হাসতে পারে উর্মি। নিজের পছন্দের মানুষের কাছে সব পুরুষ ই বীর থাকতে চায়। কখনোই এদের কে নিজের দূর্বলতা দেখানো যাবে না।

সকাল সাত টায় রওনা হয়েছিল। এখন বাজে দুপুর দেড় টা। বেলা হয়েছে। পেটে ক্ষিদে ও প্রুচর। জ্যাম ছিলো অনেক টা পথ। সকালের নাস্তা সব পানি হয়ে গেছে। পাশ ফিরে দেখলো উর্মি ঘুম। ডাকলো না সমীর। বান্দরবান এখনো নব্বই কিলো। ধরা যায় বিকেলের আগেই পৌছে যাবে। নিজে গিয়ে লাঞ্চ করে এলো।আর উর্মির জন্য প্যাকেটে খাবার নিয়ে এলো। যদি ও উর্মির ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন তবু ও ডাকে না সমীর। মেয়েটির ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছেই করলো না। একটু নিচু হয় সমীর।গোলাপি ঠোঁটে নিজের উষ্ণতা লেপনের ইচ্ছে জাগে। তবে এ যে অন্যায়। নিজের ইচ্ছে কে প্রতিহত করে সমীর। মুখ টা বাংলার পাঁচের ন্যায় বেকিয়ে ড্রাইভ করে আবার।
আধ ঘন্টার মাঝেই ঘুম ভেঙে যায় উর্মির। টুলুটুলু চোখ ডলে নিয়ে বলে–
” স্যরি আসলে কাল রাতে একদম ঘুম হয় নি। ”

” ইটস ওকে। তুমি কি ফ্রেশ হবে? ”

” হুম। লাঞ্চ ও করা দরকার। ”

” সামনে তেমন কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে নেই। আমি খাবার এনে রেখেছি। দেখি ফ্রেশ হওয়ার জন্য আশে পাশে কোথায় দাঁড় করানো যায়। ”

একটা ছোট ওয়েটিং জোনে গাড়ি থামায় সমীর। উর্মি ফ্রেশ হয়ে এলে খাবার দেয়। খাবার খায় উর্মি। এই ফাঁকে বাড়ির লোক দের সাথে কথা বলে সমীর। মা আর এক ভাই ছাড়া এই দুনিয়ায় কেউ নেই। নেই বললে অবশ্য ভুল ই হবে। আছেন বাবা, যিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বছর দশেক আগে। সেই থেকেই মা ভাই নিয়ে ঘর ছেড়েছে সমীর। মায়ের সাথে কথা চলা কালীন ফোনে ভাইব্রেশন হয়। সৌমেন ভাই কল করেছে। রাখছি বলে সৌমেন এর কল রিসিভ করলো।
” উর্মি কে সাথে এনেছো? ”

” হ্যাঁ ভাই। ”

” ভালো করেছো। এমনি তে ও অনেক ইমপ্লয়ি বাসে অসুস্থ হয়ে পরেছেন। ”

” যা গরম,অসুস্থ হওয়া স্বাভাবিক। ”

” আচ্ছা তোমরা লাঞ্চ করে নিও। আবার অসুস্থ হয়ে যেও না। তোমার ভরসা তেই এই আয়োজন। ”

” অসুস্থ হবো না ভাই। রাখছি তবে। ”

” হু। রিসোর্ট এ এসে মনে করে কল করিও। ”

” আচ্ছা। ”

ফোন রেখে গাড়ির কাছে আসে সমীর। বলে–
” খাওয়া শেষ? ”

” হুম। তুমি খেলে না? ”

” আমি আগেই খেয়েছি। তুমি ঘুমে তাই ডাকি নি। ”

” ও। আর কতোদূর? ”

” নব্বই কিলোমিটার এর মতো। ”

” এতোদূর!”

” তা তো একটু হবেই। ”

হতাশ ভঙ্গিতে গা এলিয়ে বসে উর্মি। সমীর পানির বোতল কিনে নিয়ে গাড়ি তে বসলো। প্রায় তিন ঘন্টা পথ পাড়ি দিয়ে রিসোর্ট এর কাছে প‍ৌছায়। পাহাড়ি পথে খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হয়েছে। উর্মি যেন কাহিল হয়ে পরেছে। শরীর টাকে টেনে নিয়ে স্বীয় কক্ষে উপস্থিত হয়। ঘুমে টুলুটুলু দেহ। বেডে শুয়ে আচানাক উঠে বসে। আপা কে একটা কল করতে হবে। পুরো রাস্তা তে এক বার ও খোঁজ নেওয়া হয় নি।

চলবে….

#শখের_সাদা_শাড়ি
১০.
প্রায় চার ঘন্টা মরার মতো ঘুমিয়ে ঘুম ভাঙলো উর্মির। এই দীর্ঘ সময়ে কেউ তাকে জ্বালাতন করে নি। ফ্রেস হয়ে নামতেই চোখ পরে সমীরের ওপর। ধূসর রঙের গেঞ্জি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক। হাতে ড্রয়িং পেপার। পেন্সিলের কোন দিয়ে একটু একটু করে আঁকি বুকি করে। পেছনে থেকে ভাউ করে উঠে উর্মি। ভয় পায় না ছেলেটা।
” কি হলো? ভয় পেলে না কেন? ”

” পুরুষ মানুষ ভয় পায় না এসবে। ”

” আহারে, তাহলে নারী রা বুঝি ভীতু? ”

” সেটা ও না। ”

” তাহলে? ”

” বাদ দাও। এখন দেখো ডিজাইন টা। ”

আঁচলের এক অংশ দেখেই উর্মি হা হয়ে যায়। চোখ দুটো উজ্জ্বল।
” খুব সুন্দর হয়েছে। ”

” সত্যি বলছো? ”

” হ্যাঁ। তুমি একটা সুযোগ পেলে খুব নাম করবে। ধরো তোমার এই ডিজাইন এক দিন ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে ও চলে যেতে পারে। আর ন্যাশনালে তো যাবেই। ”

শুকনো হাসলো সমীর। মনে মনে বললো ন্যাশনালে তো গিয়েছিলোই উর্মি। তবে সেসব এখন ভাবতে ও চাই না। বাইরের পরিবেশ টা উপভোগ করার মতো। টুকটাক কথা বলে ভেতরে এলো। রিসোর্ট এর একটা সাইট বুক করেছে সৌমেন। ওদের দুজন কে দেখে মাইশা এগিয়ে আসে।
” সমীর ভাইয়া আপনি আমার সাথে আসেন। আমি ডিজাইন গুলো সেট করে দিচ্ছি। ”

” চলেন। সৌমেন ভাই আসবে না? ”

” স্যার একটু বিজি। আর উর্মি আপনি দেখেন সবাই এসেছে কি না। ”

” ঠিক আছে ম্যাম। ”

উর্মি চলে যায়। মাইশার সাথে আলোচনায় বসে সমীর। মাঝ পথে আসে সৌমেন।
” সব রেডি মাইশা? ”

” জী স্যার। সমীর ভাইয়ার কাজ গুলো এবার আরও দারুণ হয়েছে। ”

” হতে তো হবেই। আফটার অল এই প্রজেক্ট এর মূল মাথা সে। ”

” কি যে বলো ভাই। ”

” সত্যিই বলছি সমীর। তোমার কাজের প্রশংসা না করলে পাপ হবে। ”

একটু হাসে সমীর। পাশেই ছিল উর্মি। বুক ভরে শান্তির শ্বাস নেয়। সৌমেন আর মাইশা কি যেন কথা বলে আর তার পর পর ই ডাকা হয় উর্মি কে। উর্মি সাধারণ ভাবেই বলে–
” জী স্যার। ”

” তোমাকে অভিনন্দন উর্মি। ”

” জী? ”

” তোমার জব কনফার্ম। এর সাথে বাইশ থেকে বেতন হলো ত্রিশ। ”

খুশি তে চোখে জল চলে আসে উর্মির। এতো টা শান্তি লাগে যে বলার বাহিরে। সমীর মেয়েটির কাছে এসে দাঁড়ায়। হালকা করে মাথা স্পর্শ করে বল‍ে–
” ব্রেফ গার্ল। মাস্টার্স কমপ্লিট করো দেখবে অনেক ভালো পজিশন পাবে। ”

” আমি কিছু বলতে পারছি না সমীর। তুমি জানো এই জব টা কতো টা দরকার ছিল আমার। আমি– ”

” কাঁদে না বোকা। ”

” এক সেকেন্ড আপা কে জানিয়ে আসি। ”

নিরবে সম্মতি জানায় সমীর। উর্মি চটপট কল করে মেঘনা কে। ওপাশ থেকে মেঘনা কেঁদে নাক চোখ লাল করে ফেলে। ধমকে উঠে উর্মি।
” পাগল হলি? বাবু অসুস্থ হয়ে যাবে না। বোকা মেয়ে তোকে সুস্থ থাকতে হবে। যা এখন রেস্ট নিবি। ”

” বোন! ”

” বল। ”

” আই লাভ ইউ। ”

ফোন হাতে কেঁপে উঠে উর্মি। চোখ দুটো জলে টুইটুম্বর। রাখছি বলে কল কাঁটে। ঝমঝমে কেঁদে উঠে। সমীর দ্রুত এগিয়ে আসে। উর্মির মাথা টা আলগোছে বুকে টেনে নিয়ে বলে ” পাগলি মেয়ে। ”

চোখের পলকে কেটে গেল তিন টে দিন। কাজের চার ভাগের তিন ভাগ ই কমপ্লিট। সবাই পরিশ্রম করাতেই সম্ভব হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আসা কিছু গেস্ট ইতোমধ্যেই চলে গেছেন। কাপড়ের ব্যবসা টা খুব ই জাকজমক এখন। একজন ব্যবসায়ী বিদেশে বাঙালি কস্টিউম সেল দিয়ে, বেশ সফল। সে যেন সকলের জন্য সুসংবাদ। স‍ৌমেন এর কোম্পানি এর অংশ হতে পেরে আপ্লুত প্রায়। কাজের মাঝে সতেজতার ও প্রয়োজন। সৌমেন নিজ থেকেই জানালো থানচি ঘোরার কথা। সমীর একটু আপত্তি করতে চেয়েছিল তবে উর্মির খুশি দেখে দমে যায়। মেয়েটার মনে যেন স্বস্তি লেপন হয়েছে। সমীর তাকিয়ে থাকে। মাঝে এক বার ও পলক ফেলে না। যখন বুঝে উর্মি তাকাবে তখনি চোখ সরিয়ে নেয়। তবে উর্মি দেখেছে বিষয় টা। লাল হয়ে উঠে গাল। সমীর এর থেকে দুরত্ব রেখে অন্য কলিগ দের সাথে আলাপে মগ্ন হয়। সমীর একবার শুকনো ঢোক গিলে। ছেলেটা ইশারা করে ডাকে উর্মি কে। উর্মি স্বাভাবিক ভাবেই আসে।
” কি হলো? ”

” থানচি না গেলে হয় না? ”

” কেন? ”

” একটু দরকার ছিলো। ”

” সৌমেন স্যার–”

” তুমি বলবে রেস্ট নিতে চাও। আর আমি কাজের বাহনা দিবো। ”

” ওকে। ”

এক গাল হাসে উর্মি। সমীর মৃদু স্বরে কি যেন আওড়ায়। এতে করে প্রশ্নবিদ্ধ হয় উর্মির মুখ। কোনো মতে সামাল দেয় সেসব। সমীর এর কথা অনুযায়ী রেস্ট এর বাহানা দিয়ে থেকে যায় উর্মি। সবাই বেরিয়ে পরে। সমীর কে কোথাও না পেয়ে কল করে। সমীর জানায় আধ ঘন্টার মাঝেই চলে আসবে। উত্তেজনায় পাগল হয়ে যাচ্ছে উর্মি। রিসোর্ট এর এপাশ টা ঘুরে দেখে একবার। এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে যেন আরও অস্থির হয়ে পরলো। সব কিছু এতো সুন্দর লাগে কেন?
সমীরের লেট হচ্ছে বিধায় রিসোর্ট এর পেছনের দিকে আসে। বাতাসের সাথে ভেসে আসে প্রকৃতির সুঘ্রাণ। ভিজে মাটির গন্ধে উর্মির যেন ঘোর লেগে আসে। হঠাৎ ই পা কেঁপে উঠে। চোখের সামনে কল্লোল আর মাইশা কে অপ্রত্যাশিত দৃশ্য তে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। পিছিয়ে যায় উর্মি। কানের লতি রক্তিম। মুঠো ফোন বেজে উঠে। ধুরমুরিয়ে চলে আসে। মাইশা ম্যাম যে যান নি এটা জানতোই না উর্মি। রাগ হয় নিজের প্রতি। ইস এমন এক দৃশ্য চোখে পরতে হলো!

সমীরের হাতে ফুল। লাল টকটকে এক শাড়ি ও দেখা যায়। উর্মি অবাক স্বরে বলে–
” শাড়ি? ”

” কিনে নিয়ে এলাম, আসার পথে একটা দোকানে দেখেছিলাম। তুমি কেমন করে যেন তাকিয়ে আছো। ”

লজ্জা পায় উর্মি। সুন্দর শাড়ি টা। শখ হয়েছিল কিনে নিয়ে যাওয়ার। তবে কেন যেন হয়ে উঠে নি। তবে সেটা যে সমীর নিয়ে আসবে তা কল্পনায় ও আসে নি। সমীর শাড়ি টা তুলে দেয় সাথে সাদা এক থোকা ফুল। উর্মির ভালো লাগলো। সমীর কিছু টা কাছে এসে ফু দিলো।
” কি? ”

” অগোছালো চুল! ”

” তো? ”

বুকের বা পাশে হাত রেখে নাক কুচকায় সমীর। উর্মি মুখ টিপে হাসে। কিছু বলতে যাচ্ছিলো তবে গাড়ির হর্ণে থেমে যায়। সমীরের মুখ টা কালচে মেঘের রূপ নেয়। সৌমেন চোখ মুখ শক্ত করে ফিরে এসেছে।
” কি হলো ভাই ফিরে এলে কেন? ”

” ভালো লাগছে না সমীর। তোমাদের মতো আমার ও বোধহয় রেস্ট প্রয়োজন।”

” বাকি রা? ”

” ঘুরতে বলেছি। ”

ক্লান্ত মুখে ভেতরে যায় সৌমেন। উর্মি ছোট চোখ করে তাকিয়ে থাকে। বিষয় টা ভালো লাগে না একদম। পর পর রিসোর্ট এর পেছন থেকে ছুটে আসে মাইশা আর কল্লোল। সমীর ভ্রু কুঞ্চিত করে বলে–
” মাইশা আপনি থানচি যান নি? ”

” একটু পরে যাওয়ার কথা ছিল আমার। স্যার চলে এসেছেন? ”

” হুম। ”

মাইশা লম্বা লম্বা পা ফেলে ভেতরে যায়। কল্লোল ও চিন্তিত। মাইশার পিছু ছুটে। সমীর হতবাক হয়ে যায়। একটু পরে না বোঝার সুরে বলে–
” কি হলো এটা! মাইশার পেছনে এমন করে চিপকে আছে কেন কল্লোল। ”

উর্মি শুকনো গলা টা ভিজিয়ে নেয়। সেই দৃশ্য মনে হতেই শরীর কাপুনি দেয়। অসুস্থ বোধ করে। সমীর তৎক্ষণাৎ ভেতরে নিয়ে আসে। উর্মির হাত পা ঠান্ডা হবার জোগাড়। লাইভে এমন অপ্রত্যাশিত দৃশ্য আশা করে নি।

বিকেল টা এমনি এমনিই পেরিয়ে যায়। মা কে ফোন করে খোঁজ খবর নিলো সমীর। পুরো দিন টাই এক প্রকার মাটি। প্ল্যান টা ভেস্তে গেল। কি হতো সৌমেন ভাই ফিরে না এলে। হতাশ ভঙ্গিতে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। কাজ নেই। তাই মন টা ও ঠিক লাগছে না। ফেসবুকিং করার সময় দেখে সৌমেন এর একটা হার্ট ব্রোকেন পোস্ট। বিষয় টা কেমন লাগে। যদি ও বা সৌমেন আর সমীর অনেক টা ক্লাইন্ট এর মতো তবু ও দুজনার সম্পর্ক অন্যরকম। সে ম্যাসেজ করে ” কি হয়েছে ভাই? ”

রিপলের অপেক্ষা না করে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকায়। পাশের কটেজেই উর্মি। চুল গুলো খুলে রেখে এক মনে চোখ বুঝে আছে। সুন্দর লাগে দেখতে। মৃদু হাসে সমীর। প্রিয়তমার ওমন রূপে হার্ট ব্রেক না ঘটে।

নোটিফিকেশন এর আওয়াজ। সৌমেন রিপলে দিয়েছে–
” কিছু সময় বড্ড অগোছালো মনে হয় সমীর। শখের জিনিস সত্যিই সুখের নয়।”

কেন? কি হয়েছে ভাই। এই কথা টা লিখে ও সেন্ড করে না সমীর। পাছে যদি সৌমেনের পার্সোনাল বিষয়ে নাক গলানো হয়ে যায়। একটা স্যাড ইমুজি দিয়ে ফোন রেখে দেয়। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে উর্মি নেই। উদাস হয় আরও একবার। ঝটপট বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। উর্মি ও বারান্দায় এসেছে। সমীর কে দেখে অল্প হাসে। দুজনেই নিশ্চুপ থাকে।
” তখন কিছু বলতে চেয়েছিলে? ”

” কখন? ”

” ঐ যে শাড়ি দিলে– ‘

আলতো হাসে সমীর। এখন সঠিক সময় না। তার থেকে ভালো ঢাকায় ফিরে নিজ অনুভূতি জানিয়ে দিবে। প্রসঙ্গ বদল করে বলে–
” এখন কেমন লাগছে? ”

” ভালো আছি এখন। সন্ধ্যা হয়ে এলো। পরিবেশ টা সুন্দর লাগে। ”

” ঘুরতে চাও আশ পাশ টা? ”

চলবে….