শখের সাদা শাড়ি পর্ব-১১+১২

0
252

#শখের সাদা শাড়ি
#ফাতেমা তুজ
#পর্ব-১১+১২
১১.
বান্দরবান থেকে ফিরে আসার পর এক টা সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। উর্মি চোখ বন্ধ করলেই কিছু স্মৃতি ভাসে। সমীরের থেকে পাওয়া লাল শাড়ি, সেই সন্ধ্যা, সেই লাজুক হাসি। সব কিছু মিলিয়ে যে সুখ অনুভব হয় তা আগে কখনোই হয় নি। মৃদু হাসে উর্মি। বিছানা গুছিয়ে মেঘনার নিকটবর্তী হয়। উঁচু পেট টা তে চুম্বন করে। মেঘনা শুষ্ক হাসে। সত্যি বলতে উর্মির দেওয়া এই সকাল বিকাল নিয়ম করে চুমু টা অন্য কারো দেওয়ার কথা ছিলো। আজ ও অপেক্ষায় আছে মেঘনা। যদি একবার ফোন করে নয়ন। তবে সে আশা ফুরিয়ে যায় তবু কল আসে না। হয়তো আর আসবে ও না। তবে মেঘনা অপেক্ষায় থাকবে। হয়তো চিরদিন, চিরকাল। তবে অপেক্ষা করবেই। উর্মি ব্যস্ততা দেখায়–
” চট জলদি খেতে দে আপা। ছোট ভাবি জীবনে ও দিবে না। ”

” তুই বোস আমি ভাত নিয়ে আসি। ”

” সাবধানে আপা। ”

চেয়ার টেনে বসে উর্মি। কোথা থেকে উদয় হয় অন্তু। ছেলেটার জন্য অনেক কিছু এনেছে উর্মি। আর ও অনেক কিছু নিয়ে আসার ইচ্ছে ছিলো। তবে সৌমেন স্যার এর যে কি হলো। সাত দিনের প্ল্যান পাঁচ দিনেই ইস্তেফা। এতে অবশ্য ভালো টাই হয়েছে। উর্মি যাওয়া তে মেঘনার যত্ন যে হয় না সে খুব ভালোই জানে। বড় ভাবি কে ফোন করলেই বড় ভাবি বলেছে খুব ক্লান্ত হয়ে পরেছি রে। মেঘনার যত্ন তো হয় ঠিক ঠাক। জিজ্ঞাসা কর বিশ্বাস না হলে। ভুলে ও মেঘনা কে প্রশ্ন করে নি উর্মি। সে জানে মুখের উপর মিথ্যে বলবে ওকে। হতাশার পাঠ চুকিয়ে খাবারে মনোযোগ দিলো। অন্তু কে খুশি দেখাচ্ছে!
” কি হয়েছে রে। এতো খুশি লাগছে কেন। মনে হচ্ছে নেচে কুদে এসেছিস। ”

” ছোট ফুপি। নাচতে তো হবেই। ”

” কোন খুশি তে রে? আমার তো বিয়ে লাগে নি এখনো। তাহলে বিষয় কি। ”

” উফ ফুপি। ”

” আচ্ছা বাবা, বল কেন এতো খুশি। ”

উর্মি এবার সিরিয়াস। অন্তুর গাল দুটো লাল। লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আবার সেই ভুল করে বসলো না তো! চিন্তিত হয়ে পরে উর্মি। অন্তু কতো গুলো পেপার বের করে আনে।
” এক্সাম কপি?”

” হুম। ”

উর্মি চেইক করতে থাকে। অন্তু গর্বের সাথে বলে–
” নব্বই শতাংশ নাম্বার পেয়েছি। ”

” আমি খুব খুশি রে অন্তু। বল কি চাই তোর। ”

” কিছু চাই না ফুপি। ”

” কেন রে? ”

ঠিক তখনি ঘাম মুছে ছুটে আসে জোৎস্না। চোখে মুখে উৎকন্ঠা। অন্তুর কান টা মুলে দেয়।
” ফুপি কিছু দিতে চাইলেই না না করিস। বেয়াদব হয়েছে একটা। আচ্ছা শোন রে উর্মি। ”

” বলো ভাবি। ”

” ওর কথায় কান দিবি না। তুই যখন গিফ্ট দিতে চাস তাহলে একটা ফোন কিনে দে ওকে। ”

” একদম না ভাবি। ”

উর্মির তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ। বড় ভাবি ঠোঁট বাকায়। উর্মি বলল–
” এই বাচ্চা বয়সে ফোনের থেকে দূরে থাকাই ভালো। আমি বরং ওকে ভালো দেখে একটা স্যুট কিনে দিবো। গত বছর খুব শখ করেছিল ছেলেটা। ”

ইয়ে বলে লাফিয়ে উঠে অন্তু। গতবার ঈদে খুব বড় শপিং মলে গিয়েছিল। যদি ও দাম শুনে খালি হাতেই ফিরে আসতে হয়েছিল। তবে একটা স্যুট দেখে খুব চোখে লেগে যায় অন্তুর। দাম ছয় হাজার টাকা। এতে করে অমর রিজেক্ট করে দেয়। কারণ বাজেট ছিলো তিন হাজার। সেই সময় টা তে অমরের কাজ কর্ম আরও খারাপ যাচ্ছিলো। উর্মি সেদিন ভেবেই নিয়েছিল টাকা হলে অন্তু কে গিফ্ট করবে। মাঝে এতো ঝামেলা এলো গেল যে খেয়াল ই ছিল না। অন্তুর গালে চুমু খায় উর্মি। কেন যেন ভাতিজা টা কে একটু বেশিই ভালোবাসে। হয়তো বা তার প্রতি অন্তুর আলাদা মায়া থেকেই মায়া জন্মেছে।

ঘেমে নেয়ে অস্থির সৌমেন। পর পর গ্লাস শেষ করলো। মাইশা দ্রুত ছুটে এলো। ইনহেলার এগিয়ে দিলো। সেটা নিয়ে প্রাণ এলো সৌমেন এর। মাইশার দিকে তাকিয়ে কাঠ গলায় বলল সৌমেন–
” কাজে মনোযোগ নেই কেন মাইশা! দিন কে দিন ভুল করেই চলেছো। ”

” স্যরি স্যার। আসলে — ”

” নো মোর এক্সকিউজ। ”

” স্যরি। ”

” গো। ”

মাথা নুইয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলো ঠিক তখনি সৌমেন বলল–
” উর্মি কে পাঠিয়ে দিও। ”

” কেন? ”

” আমায় প্রশ্ন করছো? ”

” স্যরি। ”

পা চালিয়ে বের হয়ে যায় মাইশা। আজ বার বার সৌমেন স্যারের নিকট বকা খেতে হলো তাকে। সব দোষ কল্লোল এর। এই ছেলের জন্য কাজে গড়মিল করে ফেলেছে। উর্মির কেবিনে গেল মাইশা। উর্মি কম্পিউটারে সিডিউল তৈরি করছে। কাজ টা কে যতো টা সহজ মনে হয় সত্যি বলতে এই কাজ ততো টা সহজ নয়। খুব ই কঠিন।
” উর্মি শুনেন। ”

” ইয়েস ম্যাম। ”

” স্যার আপনাকে ডাকছে। ”

” এখন? ”

” হুম। ”

” কিন্তু আমি যে সিডিউল তৈরি করছিলাম। ”

” ইটস ওকে আমি করে দেই। আপনি গিয়ে দেখা করে আসেন। ”

” থ্যাংকস ম্যাম। ”

মাইশা মুচকি হাসে। একটু পরেই কল্লোল আসে। মুখ টা ফ্যাকাশে। মাইশা চোখ পাকায়। কল্লোল উদাসীন ভাবে তাকিয়ে থাকে।

এক সপ্তাহ পর আজ আবার সমীর এর সাথে দেখা। বিষয় টা যদি ও অফিসিয়ালি, প্রজেক্ট নিয়েই তবু ও মনে আলাদা এক শীতল সমীরণ যায়। সমীরের হেংলা পাতলা দেহ টা খুব করে টানছে উর্মি কে। যতো দিন যাচ্ছে ততোই পাগল হয়ে যাচ্ছে দুজনা। তবে মাঝে ভালোবাসি কথা টা বলা হচ্ছে না কেন যেন। উর্মি ছটফট করে।
” উর্মি তুমি অসুস্থ? ”

” নো স্যার। আম টোটালি ফাইন। ”

” ওয়েল এদিকে আসো। আমার ল্যাপটপ নিয়ে বসো আমি একটু আসি। ”

” ঠিক আছে স্যার। ”

সৌমেন চলে যায়। উর্মি মাত্র ই কিবোর্ডে হাত লাগিয়েছে ওমনি করে উপস্থিত হয় সমীর।
” হে উর্মি। ”

” তুমি। এখন এলে? ”

” লেট করে ফেলেছি। বাট আই ক্যান ম্যানেজ। সৌমেন ভাই আর আমি ভাই ভাই হা হা। ”

” হয়েছে, বসো পাশে। ”

” বাহ পাশে বসতে বলছো। কি ব্যপার হু। ”

রহস্য হাসে সমীর। ভেঙ্চি কাঁটার মতো করে উর্মি বলে–
” ভাবলাম আমায় আবার ভুলে টুলে যাও নি তো। খোঁজ খবর নেই। ”

” হু, হু, ভালো কথা বলেছো। আমি তিন দিন পর ইন্ডিয়া যাচ্ছি। ”

” ইন্ডিয়া! ”

ল্যাপটপ নিয়ে বসলে ও এখন মুখ টা ঘুরালো সমীর এর নিকট। দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো সৌমেন। সমীর গিয়ে হাত মিলিয়ে বসলো। উর্মি ভ্যাবলার মতো দেখছে সেসব। দুজন কি যেন কথা বলে। সেসব উর্মির কানে আসে না। উর্মি ভীষণ চিন্তিত! অথচ চিন্তার কারণ নেই।

বিকেলে হঠাৎ ই ফোন করলো মেঘনা। এ সময়ে ফোন করার কথা না। উর্মি কাজের মাঝেই বলল
” আমি একটু বের হচ্ছি। ”

” উর্মি একটু পর যাও। ”

” আর্জেন্ট। ”

” ওকে দ্যান ইউ ক্যান গো। ”

” থ্যাংকস। ”

সমীর তাকিয়ে থাকে। উর্মি দ্রুত প্রস্থান করে। মেঘনার কন্ঠ কাঁপা। চাপা ভয়ে মেয়েটার অন্তর অব্দি কুকরে উঠে।
” আপা। ”

” বোন। ”

দুজনেই চুপ। উর্মি ভয়ে শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট টা ভিজিয়ে নেয়।এবার মেঘনার ক্রন্দনের শব্দ আসে। উর্মির বুক কেঁপে যায়।
” আপা কি হয়েছে। ”

” বোন নয়ন। ”

” দুলাভাই কি? ”

” নয়ন। ”

” হ্যাঁ আপা দুলাভাই কি। বল আপা, কথা বলোস না ক্যান। এই আপা। ”

” নয়ন ফোন করেছিল। ”

উর্মি এক সেকেন্ড থমকায়। তারপর ই আবার ভয় জাগ্রত হয়। মেঘনা কাঁদছে।
” কি বলেছেন তিনি। ”

শক্ত গলা উর্মির। ওপাশ থেকে কথা আসে না। মেঘনা কেঁদে প্রতিযোগিতা করছে যেন। উর্মির হাত পা ঠান্ডা হবার মতো। এবার মেঘনা থামে। আর উর্মি মনোযোগ দেয়। নিজেকে দৃঢ় করে কঠিন কিছু শোনার জন্য। যা হয়তো কখনোই কল্পনা করে নি।

চলবে….

#শখের_সাদা_শাড়ি
১২.
দমকা হাওয়ার মতো মেঘনার জীবন টা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। তবে আবার সব কিছু ঠিক ঠাক হতে চলেছে। যদি ও বা গর্ভধারণকালে মেয়েরা মায়ের বাড়ি তে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তবে মেঘনা স্বামীর বাড়ি তে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব। মেয়েটার কাপড় গুছিয়ে দিচ্ছে উর্মি। সত্যি বলতে কল্পনা ও করতে পারে নি মেঘনার জীবন টা আবারো ক্যানভাসে রঙ তুলি তে ফুটে উঠবে। মেঘনার চোখে জল নেই যেটা আছে সেটা খুশি। প্রচন্ড খুশি দেখায় তাকে। কিন্তু উর্মির মন টা খুব একটা ভালো নেই। সে চেয়েছিল বাচ্চা হলেই মেঘনা স্বামীর বাড়ি যাবে। তবে নয়নের অনুরোধ আর মেঘনার জোড়াজুড়ি তে না রাজি হয়ে ও পারে নি। মেঘনা আচানাক বুকে টেনে নিলো উর্মি কে। মেয়েটা স্থির থেকে প্রশ্ন করে–
” কি হয়েছে আপা? ”

” তুই আমার মায়ের অভাব পূরণ করে দিলি বোন। যে কাজ টা আমার করা উচিত ছিল সেই কাজ টা তুই করেছিস। আমি হয়তো ভালো বোন হতে পারি নি তবে আমি গর্বিত আমার ভালো বোন আছে। আই মিস ইউ অল টাইম। ”

উর্মি কাঁদছে খুব কাঁদছে তবে মুখ থেকে না কোনো শব্দ বের হলো আর না বের হলো চোখের জল। মেয়েটি কে আলগা হাতে জড়িয়ে ধরলো।
” অন্তু এসেছে আপা। ”

” কই দেখি, কি রে মন খারাপ কেন? ”

” তুমি সত্যিই চলে যাচ্ছো বড় ফুপি? ”

” চলে যাচ্ছি আবার আসবো তো। এতে মন খারাপের কি আছে। দেখি আয় তো।”

খুব করে আদর করে দিলো অন্তু কে। বলা বাহুল্য নয়নের আদর টা এই বাড়ি তে বর‍াবর ই একটু বেশি। এই যে বড় ভাইয়া সে নিজ থেকে বাজার করলো আজ। বড় মাছ, খাসির পা। সেই খাসির লেগ রোস্ট করলো বড় ভাবি। তুলি অবশ্য এতো তেল মাখে নি। শুধু হেসে খেলে কথা বলেছে দু দন্ড। উর্মি একটু নিশ্বাস ফেললো। নয়নের নিকট গিয়ে বসলো। কেন যেন উর্মি কে বেশ বুঝে চলে নয়ন। খুব সাবধানী ছোট শালিকার ব্যপারে।
” কেমন আছেন নয়ন ভাই? ”

” ভালো তো। তোমার আপা কে নিয়ে যাচ্ছি যে। ”

” হুম। এত দিন পর এলেন। আমি তো ভেবেই রেখেছিলাম মন মালিন্য সপ্তাহের বেশি যাবে না। ”

” দেখো উর্মি ভুল সবার ই থাকে। তোমার আপা আর আমি দুজনেই ভুল করেছি। ভুল হয়তো আমার বেশি ছিল। আর সেই জন্য আমি ক্ষমা ও চেয়েছি। ”

উর্মি তাকিয়ে রইলো। এক টা সময় নয়ন খুব প্রিয় মানুষ ছিল ওর। খুব সম্মানের স্থানে ছিলো দুলাভাই নামক ভাই টি। ভাব ও ছিল। মেঘনার প্রতি যে ভালোবাসা নয়ন দেখিয়েছে এতে করে নয়নের প্রতি শ্রদ্ধা আসা দোষের ছিল না।

” আপা এসেছিস। বোস একটু। আমি আসি। ”

নয়নের পাশে রেখে উর্মি চলে যায়। নয়ন মাথা টা নিচু করে বলে–
” স্যরি মেঘনা। ”

” ঠিক আছে। তুমি প্লিজ বার বার স্যরি বলো না। ”

” আমি বুঝতে পারি নি। ”

” আরে বাবা ঠিক আছে তো। ”

মেঘনা কেঁদে দিলো এবার। নয়নের বুকে মাথা রেখে একদম ই শান্ত হয়ে গেল। এই সময় টা প্রিয় মানুষ কে কাছে পাওয়া ঠিক কতো টা জরুরি সেসব ভাষায় প্রকাশ একে বারেই অসম্ভব।

সমীরের মায়ের নাম মিষ্টি। সেই জন্য সমীর আবার ভালোবেসে ডাকে মিষ্টি মা। মায়ের নাম ধরে ডাকা টা নিশ্চয়ই অশুভ লাগলে ও বস্তুত সমীর নাম হিসেবে নয় মিষ্টি হিসেবেই ডাকে। এই যে সকাল সকাল ডেকে উঠলো।
” মিষ্টি মা, কোথায় গেলে তুমি। আমার লেট হচ্ছে তো। ”

মা সাড়া দিলেন না। তবে সাড়া দিলো ছোট ভাই সিয়াম। ছেলেটা এবার খুব একটা ভালো রেজাল্ট করে নি। সেই জন্য রেগে আছে সমীর।
” মিষ্টি মা, মিষ্টি মা। ”

” মা বাসায় নেই। ”

“কোথায় গেছে? ”

” বাজারে। ”

সমীর কিছু বলতে নিয়েছিল তবে সিয়াম দ্রুত বলল–
” আমি বলেছিলাম আমি যাই। তবে মা যেতে দিলো না আমায়। ”

কথা বললো না সমীর। শার্ট গায়ে দিলো। সিয়াম পিছু ঘুরছে। বার বার সাফাই গাইছে।
” সত্যি বলছি মা নিলো না আমায়। তোর জন্য নাকি নিজে বাজার করবে। ”

” সর। ”

” ভাইয়া শোন না। ”

” কি বলবি? ”

” স্যরি। ”

” বলা শেষ? আমি যাচ্ছি এখন। ”

” এই ভাইয়া। ”

সমীর শুনছে না কোনো কথা। সিয়াম পেছন থেকে জাপটে ধরলো। বাচ্চা দের মতো টেনে ধরলো। সমীর এর মন গলছে না। ফোন এলো। উর্মির নাম টা ভেসে বেড়াচ্ছে। বিরক্ত হয়ে দ্রুত বলল–
” যা মাফ করে দিয়েছি। ”

উর্মির সাথে কথা বলছে সমীর। মেয়েটা দেখা করতে চাইছে। সমীর খুশি হলো। সত্যি বলতে সে নিজেই বলতো দেখা করার কথা। তবে উর্মিই বলে দিলো। হেসে উঠে উর্মি।
” তাহলে কাল দেখা করছো? ”

” হুম। যাওয়ার আগে দেখা করেই যাবো। ”

” ওকে। তাহলে সেই কথাই রইলো। ক্যাফে তে অপেক্ষা করবে। ”

” ঠিক আছে বাবা। ”

” আমার লেট হলে ও অপেক্ষা করবে বুঝেছো। ”

” করবো রে। এখন বলো কি করছো। ”

” কি করছি আবার। কথা বলছি। ”

” এটা বাদে কি করছো। ”

” হাটছি, হাসছি। আর বকা দিচ্ছি। ”

” বকা? ”

” হুম। ”

” কাকে? ”

” তোমাকে। এই গাঁধা টাইপ প্রশ্ন করার জন্য। ”

গগন কাঁপিয়ে হাসলো সমীর। উর্মি ঠোঁট চেপে সেই হাসি শুনতে লাগলো। এতো সুন্দর হতে হয় বুঝি!

তুলির সাথে বোধহয় সৌজন্যের ঝগড়া চলছে। বিষয় টা টাকা পয়সা নিয়েই। উর্মি কিছু কথা শুনতে পেল। এক পর্যায়ে চলে এলো করিডোর থেকে। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করলো। বাবার স্বপ্ন ছিলো পুরো পরিবার কে নিয়ে সুখে বাস করার। তবে ভদ্রলোক জীবনে সুখ পেলেন না। উর্মির হাত দুটো প্রায় বুকে চেপে ধরে বসে থাকতেন। শেষ বেলায় এসে খুব করে বলেছিলেন আমার সোনা মেয়ে তুই। আমি জানি তুই পারবি। তোকে বাঁচাতে হবে আমার পরিবার কে। দুজন রাক্ষসী এনেছে সংসারে। এরা ভালো থাকতে দিবে না এই সংসার কে। তুই বাঁচিয়ে রাখিস মা। উর্মি স্থির নয়নে চেয়ে থাকতো। বাবা কে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি ভাই ভাবি দের নিয়ে সাফাই গাইতো। বলতো ওরা খুব ভালো বাবা। তবে তিনি শুধুই চোখের পানি ঝরাতেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন তোর ভাই দুটো বউ সোহাগী। এটা দোষের না। তবে বাবার কথা ভুলে যায়। তোদের বোন দুটো কে ও মনে রাখবে না দেখিস। তবে আমি বলছি তুই কখনো ওদের ঠকাবি না। ওদের জন্য জান দিবি সব সময়। আমার সোনা মেয়ে থাকবি তুই। ওরা তোকে কোলে পিঠে করে বড় করেছে এটা মনে রাখবি। ঠোঁট দুটো কামড়ে চোখের জল আটকালো উর্মি। বাবার কথা খুব মনে পরছে আজ। এলাম বাজলো। উর্মি উঠে গেল। খুব দেড়ি হয়ে গেল যে। রান্না ঘরে গেল দ্রুত। পায়েস আর চিড়ার পোলাও রান্না করলো। সমীর এর প্রিয় খাবার। মাছ মাংস নিলো না। তবে ফুলের চপ বানালো কয়েক টা। সমীর খেতে খুব পছন্দ করে। ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে সাত টা। একটু লেট হয়ে গেল। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো বেটারি লো। ইসস একদম মনে নেই চার্জ দিতে। রিক্সা পাওয়া ও যাচ্ছে না। একি অবস্থা!

ওয়েটার এসে বললেন–
” স্যার অর্ডার। ”

” কফি দিয়ে যান। ”

” ওকে স্যার। ”

গালে হাত রেখে বসলো সমীর। মেয়েটা ফোন ধরছে না কেন। আবার কল করতেই সুইচ অফ বলে। এই সকাল সকাল উর্মির ফোন বন্ধ কেন বলে। উর্মির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। তখনি মা কল করলেন। সময় সাড়ে নয় টা। দশ টায় এয়ারপোর্ট পৌছাতে হবে। সমীর আর ও কিছু সময় অপেক্ষা করলো। তবে উর্মি কে দেখতে পেল না। লাগাতার কল করছে সিয়াম। রিসিভ করে ধমকে উঠলো। যদি ও বা কোনো দোষ ছিলো না। দশ টা বাজার পাঁচ মিনিট আগে বের হলো সমীর। হতাশ তার চেহারা। গাড়ি তে উঠে ও পেছনে তাকিয়ে রইলো। যদি একবার উর্মির দেখা মিলে।

ভীড় ঠেলে বের হলো উর্মি। পুরো পথ হেঁটে এসেছে। যানবাহন নেই। রাস্তা ছিলো পুরো ব্লক। ঘেমে যা তা অবস্থা। দরজা ঠেলে প্রবেশ করে দেখল সমীর নেই। ঘড়ি ঢং ঢং করে জানান দিলো এগারো টা। সাড়ে আট টার সময় দেখা করার কথা ছিলো। উর্মি উদাসীন। হাতে সব খাবার দাবার আর এক টা গোলাপ ফুল। একদম লাল টকটকে গোলাপ। ভালোবাসি বলার জন্য এতো আয়োজন করেছিল। অথচ কোনো কিছুই হলো না। উর্মি দ্রুত কল করলো। সমীরের ফোন সুইচ অফ বলছে। চুপচাপ বেরিয়ে এলো ক্যাফ থেকে। হাতের ফোন টা কে আছাড় মারতে ইচ্ছে হয়। সাথে রাগ হয় নিজের প্রতি। কাল কোন আক্কেলে ফোন চার্জ করে নি।

চলবে…